From 2011-15

বাংলাদেশকে নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ

অর্থনীতির স্বার্থে রাজনীতিতে কিছুটা ছাড় দিন

গতকালের বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায় প্রকাশ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) উদ্বেগের খবর এরই মধ্যে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে থাকবে। দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সংস্থাটির আহ্বান, তারা যেন সংযম প্রদর্শন করে এবং অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগ নেয়। তার সঙ্গে সর্বশেষ রাজনৈতিক সংঘাতের নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্তের ব্যবস্থা নিতে সরকারকেই বলেছে তারা। বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতারে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় বর্জনের দাবি রয়েছে বিবৃতিতে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া পদক্ষেপসমূহে যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন না হয়, সে বিষয়েও তাদের দুশ্চিন্তা স্পষ্ট। কার্যত গত কয়েকদিন ধরে ‘গণতান্ত্রিক কর্মসূচি’ নামে দেশে যা চলছে তার নিন্দা সচেতন মানুষ না করে পারেন না। গাড়িতে পেট্রোল ছুঁড়ে ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও কিছু ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বৃদ্ধির উপায় হিসেবে নেয়া হয়েছে কষ্টকর কৌশল। আরো দুঃখজনক হলো, সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার পরও নাকি এখনো বিরোধী দল অনড় আর সরকার কঠোর। দেশে মানুষ এ স্থবিরতার অবসান চায়। সেজন্য দ্রুতিই উভয় পক্ষ সমঝোতায় আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

অবরোধ-হরতালে ব্যবসাবাণিজ্যে আনুমানিক ১৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে সহযোগী এক দৈনিকে। পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম বলে অনেকের অভিমত। এদিকে রাজধানীর চালের মজুদ ফুরিয়ে আসার খবর রয়েছে শুক্রবারের বণিক বার্তায়। এরই মধ্যে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা দফায় দফায় জানিয়ে দিয়েছেন, চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে অসহায় হয়ে পড়ছেন তারা। ব্যবসায় ক্ষতি হয় এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি না দেয়ার পক্ষেই মত তাদের। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অবস্থান এর চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, বিদেশিরা যেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত সেখানে আমরাই কেবল উপলব্ধি করতে পারছি না- বিশেষত কৃষির ক্ষুদ্র উৎপাদকদের কী হাল দাঁড়াবে টানা এ সহিংস কর্মসূচিতে? রাজনীতি তাহলে কাদের জন্য? খেয়াল করার মতো বিষয়, বিদেশিরা যেখানে আমাদের সম্ভবনা নিয়ে প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে, সে আশার মৃত্যু ঘটছে আমাদের হাতেই। অভ্যন্তরীণ পর্যটন প্রায় বন্ধ। একাধিক দেশ তাদের নাগরিকদের সতর্কবার্তা দিয়েছেন, নিয়মিতভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করলেও এবারকার অস্থিতিশীলতার মাত্রা খানিকটা বেশি। এমন পরিস্থিতি আমাদের রাজনীতিকদের বোধোদয় হোক; জাতিসংঘের আহ্বানে অন্তত সাড়া দিয়ে আত্মঘাতী সহিংসতা থেকে তারা ফিরে আসুন- এমনটাই প্রত্যাশিত। এক্ষেত্রে জাতিসংঘের সঙ্গে আমাদের প্রত্যক্ষ অর্থনৈতিক স্বার্থটিও মাথায় রাখা প্রয়োজন।

অজানাকে জানতে যাত্রা

ছোটবেলায় মেরি-গো-রাউন্ডে চড়তে পারতেন না নীল আর্মস্ট্রং। মাথা ঘুরাতো; বমি হতো। একবার তো অজ্ঞানও হয়ে গিয়েছিলেন। সহপাঠীরা গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে এক ধরনের খেলা খেলতো। এটিও অংশ নিতে পারতেন না তিনি। দীর্ঘদিন এসব শৈশবানন্দ থেকে বঞ্চিত থাকার পর রোখ চেপে গেলো। সিদ্ধান্ত নিলেন যত সমস্যাই হোক, মেরী-গো-রাউন্ডে চড়বেনই। শুরুতে কষ্ট হতো। তবে ধীরে ধীরে ভারসাম্যহীনতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিলেন আর্মস্ট্রং। শিখলেন এমন পরিস্থিতিতে শারীরিক কসরত দেখানোও। শিক্ষাটি কাজে আসল টাইটান২-তে চড়ার পর। টাইটান২ হলো চন্দ্রজয়ী স্পেস শাটল অ্যাপোলো ১১ বহনকারী রকেট। চড়ার সময় নীল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন ও মাইকেল কলনিসের রক্ত চাপ ছিলো ১১০-১১৫’র মধ্যে। রকেট ছাড়ার কিছু পর কাঙ্ক্ষিত গতির তারতম্য মিলল। শাটলে সৃষ্টি হলো কিছুটা বাড়তি ভারসাম্যহীনতা। প্রচন্ড মাথাব্যথাসহ বমি করতে লাগলেন সবাই; আর্মস্ট্রং ছাড়া। ওই অবস্থায়ও নাসার কন্ট্রোল প্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন তিনি।

আগেই নির্ধারিত ছিল চাঁদের কক্ষপথে কোথায় থামবে অ্যাপলো ১১। টাইটানের গতিজনিত সমস্যায় নির্দিষ্ট সময়ে হেরফের হয়ে গেলো দুই সেকেন্ড। এতে যেখানে নির্ধারিত স্থান পড়ে গেলো শ’খানেক মাইল পেছনে। এখানে নামার প্রশ্নই আসে না। এখানে লুনার মডিউল ঈগল নামলে পৃথিবীতে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। ঘটল আরেক বিপত্তি। বাজ অলড্রিন ‘আবিষ্কার’ করলেন লুনার মডিউল কম্পিউটার ঠিকমতো কাজ করছে না। এখানে বলে রাখা দরকার, যে কম্পিউটারটি দিয়ে অ্যাপোলো ১১ চালানো হয় সেটি ছিল আজকের একটি কম দামী অ্যান্ড্রেয়ড সেটের চেয়েও কম দক্ষ। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব একটা উন্নত ছিল না তখন। এসব কারণে নভোচারীদের কাছে চন্দ্রাভিযান ২০১২ সাল থেকে দেখলে এক ধরনের ডেথ মিশনই ছিল। যাহোক, ত্রুটিটি জানানো হলো নাসাকে। সেখান থেকে জবাব এলো, তাদের করার কিছু নেই। পৃথিবীতে ফিরে আসো- এ কথাটা বলতে গলায় বাধছিল নাসার। কিন্তু আর্মস্ট্রং এত দূর এসে চাঁদে না নেমে ফিরে যেতে রাজি নন। নাসার সঙ্গে যোগাযোগ করলেন তিনি। বললেন, নাসা অ্যাপোলোর কন্ট্রোল ছেড়ে দিক; তিনি একে ম্যানুয়ালি কন্ট্রোল করবেন। ৯৯ শতাংশ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এটি। অবশ্য কিছুই করার ছিল না তখন। শেষ পর্যন্ত মিনিট দশেক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মাঝে লুনার মডিউল চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার পর নাসার কাছে বার্তা এলো, ঈগল হ্যাজ ল্যান্ডেড অন দ্য মুন। নাসার আনন্দময় মুহূর্তগুলোর অন্যতম এটি। তবে সমস্যা ছিল, কে প্রথম চাঁদে নামবে? কলিন্সের নামার সুযোগ ছিল না। গুজব রয়েছে, সামরিক বাহিনীর লোক হওয়ারই নাকি আর্মস্ট্রংকে প্রথমে নামার সুযোগ দেয়া হয়। বাস্তবতা হলো, তাৎক্ষণিকভাবে ওই সময়ে নাসার দুজন যুক্তিবিদকে (এথিসিস্ট) জিজ্ঞেস করা হয়, কাকে আগে নামতে দেয়া উচিৎ। তারা দুজনেই রায় দেন আর্মস্ট্রংয়ের পক্ষে। এ যুক্তিতে যে, তিনিই অপেক্ষাকৃত বেশি বিনয়ী; মানবজাতির এত বড় সাফল্যের কৃতিত্ব ‘গর্বিত’ ব্যক্তিকে দেয়া যাবে না। সিদ্ধান্ত হলো, আর্মস্ট্রংই নামবেন।

আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গেই যেন চাঁদের মাটিতে নেমেছিল কয়েকশ’ কোটি মানুষ। অন্যদের মতো তার স্বপ্নও ছিল, মানুষ একদিন অন্যান্য গ্রহও জয় করবে। ফলে ‘হিরো’ হয়ে পৃথিবীতে নামার পরই তাকে দেখা গেছে মঙ্গলসহ অন্যান্য গ্রহাভিযানমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে। ভয়েজার-১ উৎক্ষেপণ নিয়েও প্রবল উৎসাহ ছিল তার। ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর টাইটান ৩-তে চড়ে প্রকৃতপক্ষেই অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ভয়েজার-১। চলতি ৫ সেপ্টেম্বর খবর রয়েছে, এটি জায়ান্ট প্লাজমা বাবল (সৌরজগতের সীমানা) পেরিয়ে মিল্কিওয়েতে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে শীঘ্রই। এও আরেক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মিল্কিওয়েতে ‘পা রাখা’র সঙ্গে সঙ্গেই সৌরজগত ত্যাগকারী প্রথম মানসৃষ্ট বস্তু হবে ভয়েজার-১। আর্মস্ট্রং মারা গেছেন গত মাসে। বেঁচে থাকলে উচ্ছ্বলতা প্রকাশ করতেন তিনি। তবে সেটি না করলেও সমস্যা নেই। তার তো বটেই মানবজাতিরও এক বড় স্বপ্ন তো সৌরজগত পার হয়ে এগিয়েই চলেছে। দুর্ঘটনা না ঘটলে এটি চলবে আরও বহু বছর। একই সঙ্গে ফেরি করবে মানব সভ্যতার কিছু স্যাম্পল, শিশুর কান্না, নীল তিমির ডাক; যদি কোনো অ্যালিয়েন এসবে সাড়া সেয়। তবে এ ক্ষেত্রে ‘অনেকে’র জন্য দুঃসংবাদ হলো, ভয়েজার-১ এ দুই ব্যক্তির ভয়েস রেকর্ড রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিব (তৎকালীন)। অ্যালিয়েনরা যদি ভয়েজার-১-র দেখা পায় সম্ভবত এদের কন্ঠস্বরই শুনবে প্রথমে।

ফাহমিদা ফেরদৌস

সুবিচারের প্রত্যাশায়

ফাহমিদা ফেরদৌস

বাংলাদেশের সমকালীন অর্থনৈতিক ইতিহাস লেখা হলে তাতে নিশ্চয়ই দুই শ্রদ্ধেয় অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ সাইফুর রহমান ও শাহ আবু মোহাম্মদ শামসুল (শামস) কিবরিয়া সাহেবের কর্মের একটা নিরপেক্ষ মূল্যায়ন হতো। তাতে এও উল্লেখ্য থাকতো, উভয়েই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রয়াত। একজন মারা গেছেন মোটরগাড়ি দুর্ঘটনায়; আরেকজন নিহত হয়েছেন হীন গ্রেনেড হামলায়। তাও প্রথমোক্তের মৃত্যুর একটা সান্ত্বনা পাওয়া যায়। কিন্তু দ্বিতীয়জনকে যেভাবে মেরে ফেলা হয়েছে তাতে সহানুভূতি প্রকাশের আগেই তুলতে হবে সুবিচারের প্রশ্ন। কিবরিয়া সাহেব নিহত হয়েছেন ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারী। আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে। তাকে হত্যায় কারা যুক্ত ছিল, হত্যার উদ্দেশ্যই বা কী ছিল- সেসব নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে; নানা তথ্য জানা গেছে। তবে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায় নি হন্তারকদের। হয়নি তাদের বিচার- এমনকি উনি যে দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতার থাকার পরও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও শামস কিবরিয়া কর্মের পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়নের ভার অর্থনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দেয়াই ভালো। তবে দূর থেকে উভয়ের জীবন ও কর্মের একটা মূল্যায়ন করাই যায়। দু’জনেই তরুণ বয়সে বাংলা ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন। এর মাঝে বেশ কিছুদিন জেলও খাটেন কিবরিয়া সাহেব। স্পষ্টত তার শিক্ষা জীবন ছিল সাইফুর রহমান সাহেবের চেয়ে উজ্জ্বলতর। স্নাতক, স্নাতোকোত্তর উভয় পর্যায়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। এর আগে কোনো পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন কিনা, জানা যায় না। অবশ্য দুজনের জীবন বা কর্ম কোনোটিকেই একই তুলাদণ্ডে মাপার সুযোগ নেই। একজন অর্থনীতি, আরেকজন ছিলেন ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র। হয়তো এর প্রতিফলনই আমরা দেখতে পাই পরবর্তী সময়ে। ভিন্ন পথে হাঁটা সত্ত্বেও একটি বৈশিষ্ট্য দুজনের মাঝে দেখা যায়। সেটি হলো, রাজনীতিক হয়েও অর্থনীতিকে যথাসম্ভব দলীয় প্রভাবের বাইরে রাখার চেষ্টা করা।

নীতি গ্রহণে সাইফুর রহমান সাহেব মুক্ত বাজার অর্থনীতির অনুসারী ছিলেন, এ কথা বলা যায় নিশ্চয়ই। সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় তার ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতাও লক্ষ্যণীয়। অন্যদিকে কিবরিয়া সাহেব ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চাইতেন বলে ধারণা। তাই নীতি গ্রহণে তাকে আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায় নি কখনো। সবাইকে পেছনে ফেলার চেয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার একটা প্রবণতা ছিল তার মাঝে। দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধারণার বাস্তবায়নে তার উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলার ইতিহাস লিখতে গিয়ে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা যে দিকটির পুনঃ পুনঃ উল্লেখ করেছেন, তাহলো এটি ঐতিহ্যগতভাবে কৃষি পণ্য উৎপাদনে ঘাটতিতে থাকা অঞ্চলে। আজ বিশেষত আমাদের কৃষি উৎপাদনে অগ্রগতি ও সামাজিক উন্নয়নের সাফল্য উন্নয়নশীল এমনকি অনেক উদীয়মান অর্থনীতির সামনেও দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। এর পেছনে শামস কিবরিয়া, বেগম মতিয়া চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের অবদান অস্বীকার করা যাবে না।

হৈ চৈ ফেলে নিজ কর্ম জাহিরের জন্য যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন তা ছিল কিবরিয়া সাহেবের মাঝে অনুপস্থিত। সেজন্যই বোধহয় এক মার্কিন সিনেটরও তারবার্তায় কিবরিয়া সাহেবকে উল্লেখ করেছিলেন ‘সফট-স্পোকেন বাংলাদেশী ডিপ্লোম্যাট (মৃদুভাষী বাংলাদেশী কূটনীতিক)’ বলে। মেরেই ফেলতে পারে এমন শত্রু তিনি সারা জীবনে তৈরি করেন নি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে হত্যা করা হবে- এমন ধারণাও বোধকরি ছিল না সচেতন-সতর্ক কিবরিয়া সাহেবের। এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য মেলে তাতে মনে হয়, ঘাতকরা আওয়ামী লীগের ওপর একটা বড় আঘাত হানতে চেয়েছিল আর সেক্ষেত্রে তারা সহজ শিকার হিসেবে বেছে নেয় কিবরিয়া সাহেবকে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক, গত ৯ বছরেও মামলাটির কোনো সুরাহা হয় নি; সুবিচার পায় নি তার পরিবার। প্রত্যাশা থাকবে, অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দেবে সরকার। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কিবরিয়া সাহেবের মতো মানুষের হত্যা মামলার বিচার দীর্ঘায়িত হওয়াটা কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্যও খুবই হতাশাজনক।

লেখকঃ নিবন্ধকার

amazingoshin.ff@gmail.com

দেশে বায়ু বিদ্যুতের ভবিষ্যত

নবায়নযোগ্য শক্তি উৎসের মধ্যে ইদানীং বেশ সমালোচিত হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ। রাশিয়ার চেরনোবিলে ভয়াবহ পারমানবিক দুর্ঘটনার পর এ নিয়ে আতংকিত হয়ে ওঠেন সবাই। বিশ্বজনমত হয়ে পড়ে নেতিবাচক। মানুষের এমন মনোভাব অবশ্য এক দশকের বেশী ছিল না। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের থ্রিমাইল আইল্যান্ডে ছোট একটি দুর্ঘটনা ঘটলেও ক্রমবর্ধমান শক্তি চাহিদা মেটাতে ঝুঁকতেই হয় পারমাণবিক শক্তির দিকে। কিছুদিন আগে দুর্ঘটনা ঘটে জাপানের ফুকুশিমায়। এতে আবার জনমত গেছে পারমাণবিক শক্তির বিপক্ষে। ফলে বিভিন্ন দেশ এটির বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য অন্যান্য শক্তি উৎস যেমন সৌর, বায়ু ও সমুদ্র শক্তির ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সম্ভাবনাময় মনে হচ্ছে সৌর শক্তিকে। কোনো কারণে আকাশ আচ্ছন্ন না থাকলে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু ছাড়া অন্যত্র প্রাচুর্য রয়েছে সৌর শক্তির। একসময় সমুদ্র শক্তির প্রতি মানুষের আগ্রহ জন্মেছিল বেশ। পরে দেখা গেলো একে বাগে আনা কঠিন। সমুদ্র শক্তিকে কাজে লাগানোর মতো বেশ কিছু প্রযুক্তি বর্তমানে বাজারে এলেও এগুলো অনেক কম অর্থসাশ্রয়ী। তাছাড়া এসবের ব্যবহারও সীমিত। বায়ুশক্তির ইদানীং আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেক দেশই। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কাঙ্খিত হারে বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল থাকতে হয়। যে দেশে এ ধরনের প্রযুক্তি প্রচলন করা হবে সেখানে নদী বা সমুদ্রের উপস্থিতি এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য খোলা জায়গায়ও লাগে অনেকটা। এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। অনেক ক্ষেত্রেই এসব স্থানে থাকে ট্যুরিস্ট স্পট। নদীবহুল দেশের সংখ্যাও প্রচুর নয় আবার। তাছাড়া অনেক দেশে প্রবল তুষারপাতের কারণে বায়ুবিদ্যুত প্ল্যান্ট স্থাপন করা যায় না। কারণে সে ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কিছুটা বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তবে এসব দিক বিবেচনা করলে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ এবং আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোয়। আফ্রিকার বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলেই বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি কৃষিতে সেচ জোগাতেও ব্যবহার করা হয় বায়ুকল।

বায়ুকলের প্রতিটি পাখাকে বলা হয় টারবাইন। এ বিদ্যুৎ ব্যক্তিগতভাবেও ব্যবহার করা যায়। আবার বিচ্ছিন্ন-অবিচ্ছিন্নভাবে গ্রীডেও যুক্ত করা যেতে পারে এটি। তবে জাতীয় গ্রীডের মত বড় ক্ষেত্রে যুক্ত করতে চাইলে বেশ উঁচুতে ২ মেগাওয়াটের বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন যুক্ত করতে হয় যন্ত্রটিতে। একটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে বায়ুতে, যেটি সৌর বিদ্যুতে নেই। সৌর বিদ্যুতের প্যানেলে পর্যাপ্ত সরবরাহ পেতে এটিকে সূর্যের দিকে সারাক্ষণ মুখ করিয়ে রাখতে হয়। এ সমস্যা বায়ুকলে নেই। এ ক্ষেত্রে বায়ুগতির দিকের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রটির মুখ এমনিতেই ঘুরে যায়।

বায়ুচালিত এ ধরনের যন্ত্রের ধারনাটি কিন্তু ভারতীয়দের উদ্ভাবন। বিভিন্ন শিলালিপিতে প্রাপ্ত ছবি ও লেখা দেখা ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দীতে এখানেই আবিষ্কৃত হয়েছিল বায়ুকল। অবশ্য তখন এর সাহায্যে কেবল সেচকার্য চালানো হতো। পরবর্তীতে বায়ুকল বিস্তৃতি লাভ করে চীনে। বর্তমানেও বিশ্বের সবচেয়ে বায়ু শক্তি ব্যবহারকারী দেশ এটি। দেশটি চলতি বছর প্রায় ৪৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করেছে এর সাহায্যে। প্রতিবেশী ভারতও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ২০১১ সালের তাদের বায়ুবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়েছে আনুমানিক ১৩ হাজার মেগাওয়াট। শুধু এরা কেন, বায়ুবিদ্যুতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে বিশ্বের সর্বত্রই। বিশ্বে ২ লাখ মেগাওয়াট বিদুত এভাবেই উৎপন্ন হচ্ছে এখন। মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ২ দশমিক ৫ শতাংশ এটি। ২০১৮ সাল নাগাদ বিশ্বে বায়ুবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হবে ৮ শতাংশ, বলে আশাবাদ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশে প্রথম বড় আকারে বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হয় ২০০৫ সালে ফেনীর সোনাগাজীতে। ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকায় দশমিক ৯ মেগাওয়াটের এ কেন্দ্রটি বিকল হয়ে যায় অচিরেই। পরে কক্সবাজারেও প্রচুর টাকা ব্যয়ে আরেকটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। তবে এখান থেকেও আশানুরুপ ফল পাওয়া যায় নি। প্রকৃতপক্ষে সাশ্রয়ী খরচে বড় আকারে এ ধরনের কেন্দ্র স্থপন করতে চাইলে এগিয়ে আনতে হবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকেই। এটি উন্নত প্রযুক্তি নয় এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করতে পারবে না। এভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে ব্যাপকভিত্তিতে আমাদের অববাহিকা অঞ্চলে বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা গেলে ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি কিলোওয়াট-ঘন্টা হিসেবে বিদ্যুতের দাম কমে যাবে অনেক।

ফাহমিদা ফেরদৌস

সালফারযুক্ত কয়লা

ইটভাটায় ব্যবহারোপযোগী প্রতি টন দেশী কয়লার দাম ৯ হাজার ৭০০ থেকে ১০ হাজার টাকা। এ টাকায় ইট তৈরী হলে দাম খানিকটা বাড়ে। তবে ভারত থেকে আমদানী করলে টনপ্রতি খরচ কমে ১ হাজার টাকার মতো। এতে পরিবেশের কথা ভুলে গিয়ে সেখান থেকেই কয়লা আমদানি করছে বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি বছর আমদানি করা হচ্ছে আনুমানিক ১২ লাখ টন কয়লা। তবে নিয়ম মেনে সেটি আমদানি করা হলে পরিবেশবাদীদের অভিযোগ হয়তো কিছুটা কমত। সমস্যা হলো, ভারত থেকে যে ধরনের কয়লা আমদানি করা হচ্ছে তাতে সালফারের পরিমাণ সরকার নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক বিধান রয়েছে, ব্যবহৃত কয়লায় দশমিক ৫ শতাংশের বেশি সালফার থাকতে পারবে না। আমাদের দেশে নির্দিষ্ট সীমাটি কিছুটা শিথিল। পরিবেশ অধিদফতরের নিয়মানুসারে সেটি ১ শতাংশ। লিগনাইট, ফ্লেম, গ্যাস ফ্লেম, গ্যাস, ফ্ল্যাট, ফোর্জ, নন ব্যাংকিং, অ্যানথ্রাসাইট- এসব বিভিন্ন প্রকারের কয়লাতে অবশ্য ১ শতাংশের বেশি কয়লা পাওয়াও যায় না প্রাকৃতিকভাবে। এর মধ্যে লিগনাইটে থাকে আরও কম- দশমিক ৫ শতাংশের নীচে সালফার। বলা হচ্ছে ভারত থেকে যে ধরনের কয়লা আমদানি করছে ইটভাটার মালিকরা তাতে সালফারের পরিমাণ নাকি ৫ থেকে ৭ শতাংশ। তথ্যটি দিয়েছে স্থানীয় একটি পরিবেশবাদী সংগঠন। এটি সত্য হলে, তা একাধারে পরিবেশের জন্য বিপর্যয়কর। আবার উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া গেলে সেটি এক ধরনের সুবিধাও বটে।

দুশ্চিন্তার কারণ হলো, আমদানিকৃত এ কয়লা পোড়ানোর ফলে বাতাসে সালফারজাত (বিশুদ্ধ সালফার যাকে এলিমেন্টাল সালফারও বলা হয় তা একবারেই বিষাক্ত নয়। বরং ডিএনএ গঠনের অপরিহার্য উপাদান এটি।) যৌগ মিশে যাচ্ছে। সেটি বায়ুমণ্ডলে থাকা বাষ্পীভূত পানিতে (জলীয় বাষ্প) মিশে প্রথমে সালফার মেঘ (সালফিউরাস এসিড) সৃষ্টি করে। ঝড়-বৃষ্টির সময়ে বজ্রপাতে সালফিউরাস এসিড পানিতে মিশে তৈরি করে ক্ষতিকর সালফিউরিক এসিড। আপেক্ষিক গুরুত্ব কিছুটা বেশি হওয়ায় সালফার উৎস থেকে বেশি দূরে যায় না। এতে দেখা যায়, নির্গমন স্থান থেকে অল্প দূরেই এসিড বৃষ্টি ঘটাচ্ছে এ সালফারজাত যৌগটি। আরেকটি ক্ষতিকারণ দিক রয়েছে এর। বাতাসে ভেসে থাকা সালফার যৌগ মানুষের শ্বাসকষ্টসহ কয়েকটি ফুসফুসের রোগের জন্য দায়ী এর মধ্যে ক্যান্সারও রয়েছে। আয়ুষ্কাল কমিয়ে দেয় সালফার। এ কারণে কয়লা খনির শ্রমিকদের গড় জীবনকাল অন্য শ্রমিকদের চেয়ে কম। পানিতে সালফার যৌগ মিশলে, সেটি জলজ পরিবেশকেও দূষিত করে ব্যাপকভাবে। আরেকটি বিষয় হলো, গভীরতর খনি থেকে তোলা কয়লায় মিশ্রিত থাকতে পারে ইউরেনিয়াম, থোরিয়ামের মত ভারী তেজস্ক্রিয় মৌল। এগুলো অনেকটা অদৃশ্য থেকেই প্রভাব ফেলে মানবদেহে।

এখন ভারত থেকে আমদানিকৃত কয়লায় ন্যূনতম ৫ শতাংশ সালফার পাওয়া গেলেও সেটিকে সুযোগ হিসেবে নিতে পারেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। কয়লা থেকে সালফার বিশোধনের মাধ্যমে তা দিয়ে সালফিউরিক এসিড, সার, ঔষধ প্রভৃতি তৈরী করা সম্ভব। বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুসারে আমরা প্রতি বছর ভারত থেকে প্রায় ১২ লাখ টন এ ধরনের কয়লা আমদানি করি। এতে ৫ শতাংশ হারে থাকা সালফার পরিশোধন করলে পাওয়া যাবে আনুমানিক ৬৮ হাজার টন সালফারজাত যৌগ। এ থেকে ১ লাখ টন সালফিউরিক এসিড তৈরি করা কঠিন হবে না। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে সেটি আমদানি করতে হয়। দেশেই তা করা গেলে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব। তাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সালফিউরিক এসিড আমদানিও কমে যাবে অনেক।

ফাহমিদা ফেরদৌস

লন্ডনে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বেহাল অবস্থা

আটলান্টিক মহাসাগরের দুই তীরে ইউরোপ এবং আমেরিকা রাষ্ট্রীয় ঘাটতি ও ঋণভারে জর্জরিত। সমস্যা দূর করতে স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা হিসেবে এসব দেশ নিয়েছে প্রণোদনা, ভর্তুকি ও সরকারি খাতে ব্যয় সংকোচনের নীতি। সমস্যা হল, যেখানে এমন বৈষম্যমূলক সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে সেখানেই দেখা দিচ্ছে প্রতিবাদ। সাধারণ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট নামে অভিনব বিক্ষোভ করছে, সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের প্রতিবাদে। ইউরোপ জুড়ে চলছে বিক্ষোভ। গ্রীসে ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে। ছোট-বড় বিক্ষোভের খবর পাওয়া যাচ্ছে ফ্রান্স, স্পেন, তুরষ্ক ও পর্তুগালে। শান্ত নয় বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানীও। মাঝে মাঝে সেখানেও বিক্ষোভ-সমাবেশের খবর পাওয়া যায়। ২০১০ সালের শেষ দিকে বড় ছাত্র বিক্ষোভ হয়ে গেলো সেখানে। ওই আন্দোলনের পেছনে দেশটির বড় দুই রাজনৈতিক দল ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রাটিক ইউনিয়ন ও ফ্রী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ইন্ধনের কথা শোনা যায়। এঙ্গেলা মের্কেলের সরকার আন্দোলনটি দমন করতে সক্ষম হলেও, যেকোন সময় বিক্ষোভের শংকা রয়েছে তাদের। গত বছর জার্মানীর সঙ্গে প্রায় একই সময়ে লন্ডনের রাস্তায় নামে ব্রিটিশ শিক্ষার্থী। উভয় আন্দোলনের কারণ ছিল একটি- টিউশন ফী বাড়ানো ও বিশ্ববিদ্যালয় বাজেটের সংকোচন। তবে জার্মানীর আন্দোলনটি শান্তিপূর্ণ থাকলেও ব্রিটিশ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষ পর্যন্ত সহিংসতায় পর্যবসিত হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। কয়েকজন বেপরোয়া শিক্ষার্থী প্রিন্স চার্লসের গাড়িতেও হামলা চালায়।

গত বছরের মত একই কারণে আবারও বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডনে। অবশ্য এবারের বিক্ষোভটি বেশ শান্তিপূর্ণই বলা চলে। তবে এতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ থেকেও অনেকে এসে যোগ দেয় এতে। লন্ডন পুলিশের ভাষ্যমতে বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ছিল ‘মাত্র আড়াই হাজার’। তবে এর বিপরীতে চার হাজার পুলিশ মোতায়েনের ঘটনা উক্তিটির সত্যতা সম্বন্ধে সন্দিহান করে তোলে। মিডিয়ায় অবশ্য এসেছে বিক্ষোভকারী ছিল বার থেকে পনের হাজার। এদের মধ্যে অনেকেই এসেছিলেন অকুপাই লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ আন্দোলনে যোগ দিতে। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হন এরা। বিক্ষোভ শুরু হয় লন্ডনের মুলেট স্ট্রীট থেকে; শেষ হওয়ার কথা ছিল ওয়াট স্ট্রীটে। তবে পুলিশের বাধার মুখে বেশি এগুনো যায় নি; শেষ হয়ে যায় ট্রাফালগার স্কয়ারেই।

লন্ডনে উত্তাল ছাত্র আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের স্বজনরাও। শহরটিতে এ ধরনের কিছু ঘটলে দুশ্চিন্তা না হওয়ার কারণ নেই। পুরো ইংল্যান্ডে যতজন বাংলাদেশী বাস করেন তাদের প্রায় ৫৫ শতাংশই থাকেন লন্ডনে- বিশেষত পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেট, ক্যামডেন, হ্যারিঞ্জি, হ্যাকনি, নিউহ্যাম, ওয়েস্টমিনিস্টার ও রেডব্রিজ এলাকায়। এদের অনেকে দেশটিতে এসেছেন উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে; এর সঙ্গে আয়-উপার্জনের বিষয়টি থাকছেই।   সরকারি হিসেবে, ইংল্যান্ডে মোট বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ পঞ্চাশ হাজারের মত। এর মধ্যে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী রয়েছে আনুমানিক পনের হাজার। তবে বেসরকারি বিভিন্ন জরিপ সংস্থার মতে, ব্রিটেনে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে মোট বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লাখ। এ সংখ্যাটি থেকে সরকারি হিসাব বিয়োগ করলে দেখা যাচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী রয়েছে দেশটিতে; যার মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যাও প্রচুর। শিক্ষার্জন এদের উদ্দেশ্য নয়। এদের অধিকাংশই চায় নির্দিষ্ট সময়ে কাঙ্ক্ষিত সীমায় অর্থকড়ি উপার্জন করে দেশে ফিরতে। সমস্যা হল, এমনিতেই বিশ্বমন্দায় পড়ে দেশটিতে বেকারত্বের হার অনেক বেড়ে গেছে। এর ওপর বসবাসরত বাংলাদেশীদের বেকারত্বের হার ব্রিটিশ নাগরিকদের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। বেকারত্ব আবার যুবকদের মধ্যে বেশি। এক জরিপে দেখা গেছে, ইংল্যান্ডে অবস্থানরত ২৫ বছরের কম বয়সী বাংলাদেশীদের মধ্যে আনুমানিক ৩৫ শতাংশই বেকার। এরা পার্কিলট, হোটেল ও অন্যান্য স্থানে কম মজুরীর (সপ্তাহে প্রায় ১৫০ পাউন্ড; যেটি অন্যদের তুলনায় খুবই কম) পার্টটাইম চাকুরী করে জীবন নির্বাহ করেন। যারা পড়াশুনার পাশাপাশি চাকুরী করেন, তাদের অনেককে দেখা যায় পরবর্তী সময়ে দুটি বিষয়ের যেকোন একটি বেছে নিয়েছেন। কেউ কেউ পার্টটাইম চাকুরী করেই পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যান। এদের সংখ্যা অবশ্য কম। খরচ বাঁচিয়ে দেশেও অর্থকড়ি পাঠাতে হয় কাউকে কাউকে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার আগের এক হাজার পাউন্ড বাৎসরিক টিউশন ফী বাড়িয়ে কোন কোন কোর্সের ক্ষেত্রে সেটি ধার্য করা হয়েছে নয় হাজার পাউন্ড হারে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়রা কিছু সুবিধা পেলেও বিদেশী ছাত্রদের ব্যাপারে ছাড়া কম। তাছাড়া কিছু দিন ধরে গবেষনাকাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থও হ্রাস করা হয়েছে। এ অবস্থায় পড়াশুনা দূরে থাক, অনেকের পক্ষে টিকে থাকাই কঠিন। আশার কথা, হ্যামলেট টাওয়ারের বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মেয়র উদ্যোগ নিয়েছেন, ক্লাসে উপস্থিতি হারের ভিত্তিতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়ার। কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে লন্ডনস্থ বাংলাদেশী হাই কমিশন থেকে। চাপে পড়ে এরই মধ্যে বৈধ-বিদেশি শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা বলেছে সেখানকার সরকারও। সংশয় অবশ্য রয়ে গেছে, অবৈধ শিক্ষার্থীদের নিয়ে।

জায়েদ ইবনে আবুল ফজল

শুরু হলো, শেষও যেন হয় বাংলাদেশের খেলায়

দশম নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ২০১৩ সালে। তৃতীয়বারের মত স্বাগতিক দেশ হিসেবে এতে থাকছে ভারত। এরই মধ্যে চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে চারটি দল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত ও নিউজিল্যান্ড। তবে খেলা হবে আটটি দল নিয়ে। ফলে বাকি রয়েছে চারটি দল বাছাই করা। তা শুরুও হয়ে গেলো ঢাকায় ১৪ নভেম্বর ২০১১ থেকে। এতে শেষ চারে উন্নীত হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দশটি দল- দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড, জাপান ও বাংলাদেশ। পুরুষদের বেলায় এদের অনেকেই আন্তর্জাতিক টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া। সেখানে এদের পারফরম্যান্স সম্বন্ধে ক্রীড়ামোদীরা অবগত। এ ক্ষেত্রে নারীরাও তুলনামূকভাবে সমান শক্তিশালী তা নির্দ্বিধায় বলা যায় না অবশ্য।

শুরু হওয়া টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ঘিরে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে অনেকের মাঝে। একে তো বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ; তাও পাকিস্তানের সঙ্গে। রাজনৈতিক বৈরিতা নয়, বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল এ ক্ষেত্রে ভুলতে পারছে না গত বছর চীনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হারের ঘটনা। দলটির অধিনায়ক জানিয়েছেন, প্রতিশোধ নিতে উদগ্রীব তারা। প্রতিযোগি পাকিস্তান দলের মনোভাব কী, সেটি অবশ্য জানা যায় নি সংবাদ সম্মেলনে। তবে বাংলাদেশকে হারানোর বদলে তাদের অধিক মনোযোগ বোধকরি, যে করেই হোক নকআউট পর্বে খেলা। টুর্নামেন্টটির দ্বৈত তাৎপর্য আছে যে! এতে যারা কোয়ালিফাই করবে তারা কেবল ২০১৩ সালে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপই খেলবে না, তারা খেলার সুযোগ পাবে ২০১২ সালে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিতব্য আইসিসি নারী ক্রিকেট টি২০ বিশ্বকাপেও। প্রতিযোগী দশজনের দু-একটি বাদে সব দলের শক্তি ও মান কাছাকাছি পর্যায়ের; প্রচুর অনুশীলনও করেছে প্রত্যেকে। যে কোন খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সঙ্গে ভাগ্যও কিছুটা জড়িত থাকে; কথাটি বেশি করে সত্য ক্রিকেটের ক্ষেত্রে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের মূল লক্ষ্য স্থির করা উচিৎ নকআউট পর্যন্ত। তাহলে প্রত্যাশার চাপ অন্তত সামলানো যাবে।

পুরুষ ক্রিকেটের ইতিহাস শুরু হয়েছে ১৫৯৮ সাল থেকে, ইংল্যান্ডে। নারী ক্রিকেটকেও নতুন ভাববার কারণ নেই। প্রথম নারী ক্রিকেট ম্যাচের খবর পাওয়া যায় ব্রিটেনের দ্য রিডিং মার্কারি পত্রিকায় প্রকাশিত ২৬ জুলাই ১৭৪৫ সালের এক প্রতিবেদনে। সেটি হয়েছিল ব্রামলি ও হামবলডনের মধ্যে। মজার ব্যাপার হল এটি কিন্তু টেস্ট ম্যাচ ছিল না। কার্যত নারীরা টেস্ট ম্যাচ খেলতে আরম্ভ করেন ১৯৩৪ সালে। নারীদের জন্য ১৯৫৮ সালে গঠিত হয় ইন্টারন্যশনাল উইমেন্স ক্রিকেট কাউন্সিল (বর্তমানে আইসিসির আন্তর্ভুক্ত)। এর বিপরীতে দেখা যায়, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কনফারেন্স যে সংস্থাটিই পরবর্তীকালের আইসিসি, তা ১৯০৯ সালে গঠিত হয়। প্রথম নারী ক্রিকেট ক্লাব ‘অরিজিনাল ইংলিশ লেডি ক্রিকেটারস’ গঠিত হয়েছিল ১৮৯০ সালে। প্রায় একই সময়ে দেশভিত্তিক নারী ক্রিকেট দল ছিল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও সাউথ আফ্রিকায়ও। অবশ্য এমন তুলনা পাওয়া যায় না ভারতীয় উপমহাদেশে। এ দেশে পুরুষ ক্রিকেটের সূচনা অনেক আগে হলেও ২০০৭ সালে গঠিত হয় প্রথম জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল। সূচনা দেরিতে হলেও দলটির সাফল্য ছিল তাৎক্ষণিক। একই বছর এসিসি (এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল) কাপের ফাইনালে মালয়েশিয়ার জহর স্টেডিয়ামে নেপালকে পরাজিত করে তারা। কাকতালীয় বলা যায়, একই দেশ থেকে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল আমাদের পুরুষ ক্রিকেটের।

২০০৮ সালে ইউমেন্স এশিয়া কাপ-২০০৮ এ চতুর্থ স্থান দখল করে বাংলাদেশী নারীরা। তখন থেকে পর্যন্ত দলটির কয়েকটি বড় অর্জন ছিল। এসবের মধ্যে আলোচিত ঘটনাটি ছিল, ২০১১ সালে ফেভারিট হিসেবে ফাইনালে উঠেও পাকিস্তানের কাছে হেরে যাওয়া। এবারে বাছাই পর্বে খেলতে গিয়ে সেখান থেকেই নতুন করে শুরু করার কথা হয়তো ভেবেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। তবে প্রতিশোধের সঙ্গে চূড়ান্ত সাফল্য অর্জনের কথাও বলেছেন তিনি। অবশ্য বর্তমান দলটির শক্তিতে নির্ভর করে এমনটি বলা ভুল হবে না। পেসার নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বোলিংয়ের আমাদের মূল শক্তি স্পিন। এ ছাড়া ব্যাটিং লাইনআপও শক্তিশালী। ফিল্ডিংয়ের মান খারাপ নয়। এ অবস্থায় প্রত্যাশা নিয়েই তাকিয়ে থাকবে সারা দেশ। সবাই চাইবে, বাংলাদেশের খেলা দিয়ে শুরু হয়েছে টুর্নামেন্ট, আমাদের দিয়েই যেন তা শেষ হয়।

ফাহমিদা ফেরদৌস

অনুমান করা যায় নি সমস্যাটি

গত ৭০ বছরের মধ্যে প্রলয়ংকরী বন্যা হয়েছে থাইল্যান্ডে। মারা গেছেন চারশ জনের মতো। রাজধানী ব্যাংক কয়েক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী। বন্যার পানি ঢুকেছে বিমানবন্দরে। শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি সামনেও নাকি হাঁটু পানি। এ বন্যা নিয়ে বাংলাদেশের অনেকেই ছিলেন উদ্বিগ্ন। তাদের দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ- দেশটি থেকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করি আমরাসহ অনেক দেশ। এ অবস্থায় সেখানে উৎপাদন ব্যাহত হলে আন্তর্জাতিক চালের বাজার অশান্ত হয়ে পড়বে। চালে দৃষ্টি রাখতে গিয়ে অনেকেই ভুলে গিয়েছিলেন দেশটি থেকে বিভিন্ন কম্পিউটার যন্ত্রাংশও রফতানি করা হয়। ১৫ নভেম্বর বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন দেখে এটি মনে পড়ল। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, থাইল্যান্ডের বন্যায় ঈদের পর থেকে এ দেশের কম্পিউটার বাজারে হার্ডড্রাইভের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। যন্ত্রাংশটির চাহিদা মাসে প্রায় ৫০ হাজার পিস। আমদানি কমে যাওয়ায় এখন দাম বেড়েছে স্বাভাবিকভাবে। মজুত যা ছিল সেটি শেষ হয়েছে অক্টোবরেই। এখন যেসব ব্যবসায়ীর কাছে পণ্যটি আছে, তারা হাঁকাচ্ছেন চড়া দাম।

মোট হার্ডড্রাইভের ৪৫ শতাংশ তৈরী হয় থাইল্যান্ডের বিভিন্ন কারখানায়। বাজারের হার্ডড্রাইভ ৩১ দশমিক ২ শতাংশ হার্ডড্রাইভ তৈরী করে ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল। অন্যান্যদের মাঝে সিগেট ২৯ দশমিক ২, হিটাচি ১৮.১ (এটি আবার সম্প্রতি কিনে নিয়েছে ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল), তোশিবা ১০.৮, স্যামসাং ১০.৭ (চলতি বছরের এপ্রিলে স্যামসাংয়ের হার্ডড্রাইভ ডিভিশন কনে নেয় সিগেট) শতাংশ হার্ডড্রাইভ তৈরী করে। মূলত এদের কাছ থেকেই ডেল, অ্যাপল, এইচপি, আইবিএম, ফুজিতসু মাইক্রোসফটের মত প্রতিষ্ঠানগুলো কিনে নেয় যন্ত্রাংশটি। এর মধ্যে ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল ও সিগেটের অধিকাংশ কারখানা থাইল্যান্ডে। সিগেটের ক্রয়কৃত স্যামসাংয়ের কিছু কারখানা অবশ্য রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। বিক্রি না করলে এ সময় টেক্কা দিতে পারত স্যামসাং। যাক, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত আরেক বড় জাপানি প্রতিষ্ঠান তোশিবার পক্ষে হঠাৎ করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে না। এতে করে আমদানিকারক সব দেশেই হার্ডড্রাইভের দাম বেড়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যন্ত্রাংশটির হার্ডড্রাইভের দাম ৩০ শতাংশের মত বাড়বে এতে। বিশেষজ্ঞদের অনুমানের ধারেকাছেও না গিয়ে বাংলাদেশে হার্ডড্রাইভের দাম বেড়েছে ১৬৩ শতাংশ! আঁতকে ওঠার মত। বাজারে ৫০০ গিগাবাইট (জিবি) হার্ডড্রাইভের বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার টাকায়। এক টেরাবাইটের (টিবি) দাম ৭ হাজার টাকা। ৩২০ জিবি হার্ডড্রাইভ নাকি পাওয়াই যাচ্ছে না। অথচ গত মাসের প্রথম দিকেও দাম কমছিল। শেষের দিকে কিছুটা বাড়লেও সেটি এখনকার মতো ছিল না। তখন ৩২০ জিবি হার্ডড্রাইভ বিক্রি হয়েছিল ৩৬০০ টাকায়। হিটাচি কোম্পানীর তৈরী ১ টিবির দাম নেয়া হচ্ছিল ৫৬০০; ৫০০ জিবি ৪২০০ ও ২ টিবি ৮৭০০ টাকা। ২ টিবির হার্ডডিস্কটি নতুন এসেছে ও এর সরবরাহ কম- সে হিসেবে এর দাম ৮৭০০ টাকা হতে পারে। তাই বলে ৫০০ জিবির দাম ৮০০০ টাকা হয় কি করে! আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য; তবুও অধিকাংশ স্থানেই সেটি ২৮ শতাংশের বেশি বাড়ে নি। কেবল বাংলাদেশে এটির দাম বেড়েছে ১৬৩ আর ভারতে ১৫০ শতাংশের কাছাকাছি। দাম বৃদ্ধির প্রভাব এখন বেশি করে পড়বে ল্যাপটপ কম্পিউটারের ওপর। তবে সরকারি তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতকৃত ‘দোয়েলে’র ওপর এ প্রভাব কেমন হবে সেটি অনুমান করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে দ্রুত অনুসন্ধান করা দরকার, অন্যদেশের তুলনায় এখানে দাম এত বেশি বাড়ার কারণটি।

এ ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি ল্যাপটপ উৎপাদনকারীদের। বাজারে এটির দাম কমছিল। এখন দাম বাড়ানো হলে বিক্রি পড়ে যাবে। আবার না বাড়ালে তা বেচতে হবে লোকসান দিয়ে। অবশ্য বিপদ বুঝতে পেরে ডেলের মতো বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রচলিত ইলেক্ট্রোমেকানিক্যাল ড্রাইভের বদলে তারা সলিড স্টেট (এসএসডি) হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করার। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এতদিন এসএসডি থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। অবশ্য এদের ধারণা পরিমাণ বাড়লে কমে আসবে উৎপাদন খরচ।

নিয়াজ মাখদুম

বিমানবন্দরে নিরাপত্তা

গোড়ার দিকে তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বিমানবন্দরে। এটি ছিল অনেকটাই বাস সার্ভিসের মতো। শিথিল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাটি চোখে পড়লো ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর। এ সময় বার্বাডোজ থেকে জ্যামাইকাগামী একটি কিউবানা বিমানে কয়েক জন সন্ত্রাসী লাগেজে বোমা ও হালকা অস্ত্র নিয়ে ওঠেন সুযোগ পেয়ে। সে হামলায় মারা যান ৭৩ জন বেসামরিক যাত্রী। এরপর বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটু উন্নত করা হলো। শুরু হলো লাগেজ চেকিং। যাত্রীদের হাতব্যাগ চেক করা হতো না তখনও। তবে আধুনিক স্ক্রিনীং সিস্টেম না থাকায় খুব একটা কঠিন ছিল না কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দেয়া। নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনীকিকরণের তাগিদ প্রথম অনুভব করল ভারত ১৯৮৫ সালে। দুর্বল বন্দর নিরাপত্তার সুযোগে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালালো এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২’তে। এতে মারা গেলেন যাত্রীসহ ৩২৯ জন। সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরালো করা হয় এ ঘটনার পর থেকে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ৯/১১। ছিনতাইকরা বিমানের আঘাতে ধ্বংস হলো যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার। এ ঘটনার পর থেকে আরও সতর্ক হয়ে গেছে বিশ্বের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষগুলো।

কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন ডিপার্টমেন্ট বিমান বন্দরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই বলে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমানচলাচল কর্তৃপক্ষকে তাদের তালিকায় ‘এ’ থেকে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নামিয়ে আনে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনস্ট্রেশনের (টিএসএ) অনুমতি না মেলায় কয়েকটি আধুনিক বোয়িং বিমান কেনা হলেও চালু করা যাচ্ছে না নিউইয়র্ক টু ঢাকা ফ্লাইট রুটটি। সতর্ক করে দেয়ার পরও পদক্ষেপ না নেয়ায় সিগনিফিকেন্ট সেফটি কনসার্নের (এসএসসি) তালিকায় চলে গেছে এ দেশের নাম। বলা হচ্ছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে আগামীতে সিগনিফিক্যান্ট সিকিউরিটি কনসার্নের (এসএসইসি) আওতায় পড়তে পারি আমরা। এসএসইসির তালিকায় নাম চলে গেলে আন্তর্জাতিক যাত্রীরা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তবে এ ক্ষেত্রে সুখবর হলো, সম্প্রতি বিমানবন্দরে মানসম্মত নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে কানাডাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিজ্যুয়াল ডিফেন্স ইনকরপোরেশন (ভিডিআই)। তাদের দেয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশে বায়োমেট্রিক স্বয়ংক্রিয় প্রবেশনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপনের কথা। স্পর্শকাতর এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে সীমানা প্রাচীরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে স্থাপন করা হবে পেরিমিটার ইন্ট্রুডার ডেকেটশন সিস্টেম (পিআইডিএস)। এতে অ্যালার্ম সিস্টেম ও ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কাউকে হয়রানি না করে হাতব্যাগ ও লাগেজ তল্লাশির আধুনিক কেবিন স্ক্যানিং, প্যাসেঞ্জার স্ক্যনিং ডিটেকশন, বিশেষত ধাতব-অধাতব বিস্ফোরক এবং বিপদজনক বস্তু চিহ্নিত করার ব্যবস্থা রাখা হবে এতে। এর সঙ্গে বিদ্যমান নিরাপত্তা কর্মসূচীর উন্নয়ন ও সমন্বিত পরিচালনা পদ্ধতির কথাও বলেছে তারা। ভিডিআইয়ের পক্ষে থেকে বলা হয়েছে, যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হলে এগুলো পরিচালনার জন্য স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। এ ক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগ করবে ৩০০ কোটি টাকা। এ অর্থ তোলা হবে ২৫ বছরে। এয়ারলাইন্স থেকে বহির্গমন যাত্রীর ক্ষেত্রে মাথাপিছু আড়াই হাজার টাকা হারে ফি নেয়া হবে। প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, আদায়কৃত ফির ১৫ শতাংশ নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তাহলে বর্তমানে যে হারে এ বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রী চলাচল করে, তাতে প্রতি বছর এখান থেকে রাজস্ব আহরণ করা যাবে আনুমানিক দেড়শ’ কোটি টাকা। যাত্রী বাড়লে সংখ্যাটিও বাড়বে অবশ্য।

যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে ছাড়া বিমানের যাত্রীদের অনেক সময় হয়রানির শিকার হতে হয় অন্য দেশেও। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জেদ্দা এয়ারপোর্টে এমন একটি ঘটনা ঘটে জেএমজি এয়ারলাইন্সের বেলায়। নানা দিক বিবেচনা করলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ভিডিআইয়ের দেয়া প্রস্তাবটি যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রশ্ন হলো, এ ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান করা হলো না কেন? এ ধরনের নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপে আপত্তি থাকার কথা নয় কারো। অথচ দুর্নীতির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এখন উচিৎ হবে এ ক্ষেত্রে সরকার যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তাতে স্বচ্ছতা যেন বজায় থাকে।

ফাহমিদা ফেরদৌস

পরিবর্তনশীল মাদক ব্যবসার কৌশল

কয়েক মাস আগে কেরানীগঞ্জ থেকে চুড়িওয়ালা ছদ্মবেশে এক পাইকারি ফেনসিডিল ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করল র‍্যাব। তিনি চুড়ির বদলে ঝোলাতে করে বিক্রি করছিলেন ফেনসিডিল। তাতে একেবারে চুড়ি ছিল না, তা নয়। কিছু চুড়ি ছিল ওপরের কার্টনে। মোট ১৫০ বোতল ফেনসিডিল ছিল এর নীচে। দেশের সীমান্তবর্তী একটি জেলায় প্রতি বোতল ফেনসিডিল তিনি কিনেছিলেন এক থেকে দেড়শ’ টাকায়। ঢাকায় এসে ক্রেতার কাছে ১২ থেকে ১৪শ’ টাকায় বিক্রি করছিলেন এটি। ক্রেতাদের অধিকাংশই ছিল স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে কেবল ফেনসিডিল নয় গাঁজা-হেরোইন-ইয়াবাও ছড়িয়ে পড়ছে এভাবে। নিম্নবিত্তের অনেকে আসক্ত হয়ে পড়ছে জুতা তৈরীর সলিউশন ডান্ডিতে। মনে হয় জড়িত ব্যবসায়ীরা তাদের সবটুকু উদ্ভাবনী ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন মাদক পরিবহনে। বড় গ্যাস সিলিন্ডারের তলা কেটে তাতে পাওয়া গেলো ফেনসিডিল গত মাসে। মোটা বৈদ্যুতিক তারের রোলের ভেতরে, গাড়ির সিটের নীচেও বহন করা যায় এটি। সড়কে বেশি চেকিং থাকলে অনেক সময় ভোজ্য ও জ্বালানি তেলের বড় ড্রামও ব্যবহার করা হয় এ ক্ষেত্রে। তবে ফেনিসিডিলের তুলনায় ইয়াবা ও হেরোইন পরিবহন করা সহজ। বিশেষভাবে কাটা মিষ্টিকুমড়া, নারকেল ও লাউয়ের মাঝে এ দুই বস্তু প্রাপ্তির খবর আগে পাওয়া যেতো মাঝে মাঝেই। শার্টের কলার, মোজার ভেতর ও বাজারের ব্যাগেও বহন করা হতো এগুলো। হেরোইন গুলিয়ে দইয়ের মতো করে নিরাপদেই আনা হতো রাজধানীতে। এভাবে বিভিন্ন সৃজনশীল কৌশলে পরিবহন হয় মাদক। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের জয়দেবপুরে। এম্বুলেন্সে করে, কফিনের মধ্যে ৪০০ বোতল ফেনসিডিল পরিবহন করছিলেন মাদক ব্যবসায়ীরা। তাতে রোগীর ভান ধরে একজন শুয়েও ছিল। স্বভাবতই সিরিয়াস কেস মনে করে আশেপাশের গাড়িগুলো একে রাস্তাও ছেড়ে দিচ্ছিল। ড্রাইভারের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এম্বুলেন্সটি তল্লাশি করে র‍্যাব। শেষে কফিনে পেয়ে যায় ফেনসিডিল। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় ভূয়া রোগীসহ বাকিদের।

বাংলাদেশ একই সঙ্গে মাদকের রুট ও বাজার। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তঘেঁষা অনেক এলাকায় রাতে প্রকাশ্যেই মাদকের হাট বসে। জড়িদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত। এরা মাদক পরিবহন ও বিপণন করে থাকে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এ দেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ। এদের মাঝে নারী ও শিশুর সংখ্যা ৩৫ হাজার। মাদকসেবীদের ব্যাপারে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায় কম। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুসারে, বাংলাদেশে মাদকাসক্তদের সংখ্যা ৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন। ৭৫ শতাংশ মাদকসেবী ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী। মাদক গ্রহণের ক্ষেত্রে এরা সবাই মিলে বছরে খরচ করে আনুমানিক ৪৭০ মিলিয়ন টাকা।

এ দেশে অধিকাংশ মাদক আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। ফেনসিডিল আসে ভারত থেকে। অভিযোগ রয়েছে, সীমান্তে বেশ কয়েকটি ফেনসিডিল কারখানা থাকার ব্যাপারে সতর্ক করা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ভারত। থাইল্যান্ড সীমান্তে মিয়ানমারের সান প্রদেশে বেশ কয়েকটি ইয়াবা তৈরীর কারখানা রয়েছে। সেখান থেকে নাফ নদী হয়ে মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারে এ দেশে প্রবেশ করে ইয়াবা। ভারতের মতো মিয়ানমারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে, তারা নাফ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ইয়াবা তৈরীর কারখানা স্থাপন করেছে। সম্প্রতি এটির পাচার বন্ধে মিয়ানমারের ২৫ জন মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা মিয়ানমার সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। দেশটিতে থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশে অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ীই আকস্মিকভাবে ধরা পড়ে যান; শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সৌভাগ্যক্রমে ধরে ফেলেন। মাদক ব্যবসা একটি সংগঠিত অপরাধ। এ ক্ষেত্রে চক্র ধ্বংস না করে কেবল মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের ধরে তেমন লাভ হবে না। এ জন্য সীমান্তে নজরদারি কঠোর করা চাই। যাতে করে উৎস থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে দেশময় ছড়িয়ে দিতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করতে হবে সীমান্তেই এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে দ্রুত।

নিয়াজ মাখদুম

আমাদের নারীদের জন্য পৃথক বাহন

মালয়েশিয়া সরকার তাদের কর্মজীবি নারীদের সুবিধার্থে আলাদা ট্রেনের ব্যবস্থা নিয়েছিল অনেক আগে। মুসলিম দেশ হিসেবে অগ্রাহ্য করা যায় না সেখানকার সমাজ ব্যবস্থায় রক্ষণশীলতার বিষয়টিকে। তবে এটি ছাড়াও পুরুষদের ভীড়ে কষ্ট করে যেন ট্রেনে উঠতে না হয় ও নির্যাতনের সুযোগ কমে যায়- মূলত এমন ধারণা থেকেই দেশটির নারীদের জন্য চালু করা হয় গোলাপী ট্রেন। অবশ্য নারীদের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধ, শিশু ও অক্ষম যাদের পক্ষেও ভীড় ঠেলে ওঠা কঠিন, তারাও গোলাপী ট্রেনে চড়ার সুযোগ পেতেন। এ ব্যবস্থাটি অপ্রতুল মনে হওয়ায় কয়েক বছর আগে গোলাপী বাস সার্ভিসও চালু করে মালয়েশিয়া সরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছিল এও যথেষ্ঠ নয়। যেসব নারীদের একাকী ভ্রমণ করতে হয় ও যাদের নিজস্ব গাড়ি নেই, তাদের অনেককে গন্তব্যে পৌঁছাতে গিয়ে নানা রকম নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এ কারণে সম্প্রতি দেশটি উদ্যোগ নিয়েছে নারীদের পৃথক ট্যাক্সি ব্যবস্থাও চালু করার। প্রাথমিকভাবে বলা হচ্ছে, এর আওতায় আপাতত রাজধানী কুয়ালালামপুরের রাজপথে নামানো হবে ৪০০ ট্যাক্সি। এগুলোর চালক হিসেবেও থাকবেন নারীরা। এরই মধ্যে ৫০ জন চালক পাওয়াও গেছে। আগ্রহী নারীরা ফোন করে প্রাপ্যতার ভিত্তিতে এসব ট্যাক্সিতে চড়তে পারবেন। অবশ্য বেশি রাত পর্যন্ত এ ট্যাক্সি পাওয়া যাবে না- নারী চালকদের নিরাপত্তার স্বার্থে।

১৯১২ সালে নারীদের পৃথক ট্রেনব্যবস্থা প্রথম চালু হয় জাপানে। তখন কমিউটার ট্রেনে করে কর্মজীবি নারী ও ছাত্রীরা আসতেন রাজধানী টোকিওতে। তারা পুরুষ যাত্রীদের হাতে নির্যাতিত হতেন নানাভাবে। অনেকে লজ্জায় কাউকে কিছু বলতেও চাইতেন না। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করতেন পুলিশের কাছে। তাতে লাভ হতো খুবই কম। এর প্রথম কারণ, নির্যাতনকারীরা ট্রেন থেকে নেমে কোথায় চলে যাচ্ছেন তা অভিযোগকারী বা পুলিশের পক্ষে খুঁজে বের করা কঠিন ছিল। ওই সময় সংখ্যা কম থাকায় অধিকাংশ ট্রেনে সারাক্ষণ ভীড় লেগে থাকত। এতে করে নির্দিষ্টভাবে দোষীকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ছিল প্রায় অসম্ভব বিষয়। আসলেই নারীরা নির্যাতিত হচ্ছেন কিনা, সে ব্যাপারে একটি জরিপ চালায় টোকিও মেট্রোপলিটান পুলিশ ও ইস্ট জাপান রেলওয়ে যৌথভাবে। ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যায় তাতে। জরিপটিতে দেখা যায়, নারী যাত্রীদের ৬০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সে সময় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে সচেতনতামূলক কর্মসূচী গ্রহণ করে টোকিও পুলিশ। তাতে আশানুরুপ ফল না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে আলাদা ট্রেনের ব্যবস্থা করে জাপান সরকার। ট্রেনটির নাম ছিল হানা-ডেনশা (ফ্লাওয়ারট্রেন)। পরবর্তীকালে সেখানে নারীদের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পৃথক যানবাহন সরবরাহের আইন প্রণয়ন করা হয়। জাপানকে অনুসরণ করে এ ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা বর্তমানে চালু রয়েছে মিশর, ভারত, ইরান, তাইওয়ান, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিফাইন এবং দুবাইতেও।

বাংলাদেশে কর্মজীবি নারীদের সংখ্যা বাড়ছেই। এর মাঝে কয়েক লক্ষ নারী শ্রমিক রয়েছে গার্মেন্টস শিল্পে। এ ক্ষেত্রে যারা অফিস-আদালতে কাজ করেন, তাদের বেলায় অনেক সময় অফিস থেকে পৃথক যানবাহনের ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে গার্মেন্টসের নারীশ্রমিকদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাটি অপ্রতুল। তারপর রাতের শিফটে যারা কাজ করেন তাদের নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা দেয়া হয় না বললেই চলে। অথচ নিম্নবিত্ত ও নারী হওয়ায় এরা নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। সাধারণত রাতের বেলা কাজ শেষ করে দলবেঁধে বাড়ি ফেরেন তারা। তবে কোনো কারণে একাকী যেতে হলে প্রায়শই শোনা যায় বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের কথা। সাধারণ পরিবহনে চড়তে গেলেও নানা বিড়ম্বনা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয় এদের। অথচ সদিচ্ছা থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সহজেই এ ব্যবস্থাটি করে দিতে পারেন।

পুরুষদের ঠেলে নারীরা সিট দখল করছে- এ দৃশ্য মেনে নেয়ার মানসিক্তা কমই থাকে রক্ষণশীল সমাজে। নারী-পুরুষে শ্রদ্ধাশীল সম্পর্ক থাকলে না হয় কথা ছিল। পূর্বে ইংল্যান্ডেও নারীদের জন্য পৃথক ‘লেডিস অনলি’ বাস ও ট্রেনের বগি ছিল। এটিও করা হয়েছিল ইভটিজিং থেকে ব্রিটিশ নারীদের রক্ষা করতে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তিত হয়েছে, এটা নিশ্চিত করে ও জোরদার নারী আন্দোলনের মুখে ‘লেডিস অনলি” যানবাহন লন্ডনে বন্ধ করে দেয়া হয় ১৯৭৭ সালে। এশিয়ার অন্যত্র অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, আমাদের দেশে বিষয়টিকে দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের ওপর ছেড়ে দেয়া চলে। তাই বলে সেটি গুরুত্বহীন, তা নয়। তবু এর সঙ্গে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন ও আলাদা ট্রেন-বাস-ট্যাক্সির ব্যবস্থা রাখা ছাড়া নারী নির্যাতন রোধ করা কঠিন এখানে।

ফাহমিদা ফেরদৌস

Leave a comment