Published in Bonik Barta, April 2015

প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট

উৎকণ্ঠা দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

কোনো কোনো সূত্রমতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশীর সংখ্যা এখন ৯১ লাখের কিছুটা বেশি। এক হিসাবে, বর্তমানে আমাদের ৬০ শ্রমিক নিযুক্ত আছেন আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে। উল্লেখযোগ্য খবর হলো, হাতে লেখা পাসপোর্টের কার্যকারিতা শেষ হয়ে যাবে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর। অর্থাৎ আর মাত্র কয়েক মাস পর হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ অথবা বিদেশে অবস্থান করা যাবে না। সেটাই আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইকাও) নিয়ম। সমস্যা হলো, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সিংহভাগই এখনো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) হাতে পান নি বলে গতকাল বণিক বার্তার এক শঙ্কিত প্রতিবেদনে প্রকাশ। আরো চিন্তার বিষয়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাতে লেখা পাসপোর্টের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়েছিল। সেখানে দুই বছরে ২৫ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশীর হাতে এমআরপি পৌঁছানোর তথ্য জানিয়ে বাকি ৭৫ শতাংশের জন্য ২০১৮ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে কিছু করার নেই বলে অপারগতা জানিয়েছে আইকাও। সুতরাং আলোচ্য সময়ের মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের এমআরপি দেয়া না গেলে সত্যই ঝামেলায় পড়তে হবে আমাদের। ফলে এ ইস্যুতে কোনো রকম উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ নেই। একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত আমাদের প্রতিবেদকের কাছে মত দিয়েছেন, যেহেতু আরো ক’মাস সময়ে রয়েছে, এর মধ্যে এমআরপি প্রদানের গতি পর্যাপ্তভাবে বাড়াতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে। সবাই প্রত্যাশা করেন, তেমন পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব করবে না সরকার। কেননা বাংলাদেশের জিডিপিতে বিশাল অবদান রেখে চলা জনশক্তি রফতানি খাতে ২০১৩ সাল থেকেই কিছুটা ভাটা পড়তে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কারণে। ফলে ২০১২ সালে যেখানে বার্ষিক গড়ে ৫ লাখ শ্রমিক বিভিন্ন দেশে যেতেন, আজ জনশক্তি রফতানির হার তার চেয়ে বেশ কম।

রেমিট্যান্স অর্জনকারী এ খাতে স্থিতিশীলতা ও উন্নতি নিশ্চিতকরণে ২০০৭ সাল থেকেই অব্যাহত পদক্ষেপ দেখা গেছে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়ায় সরকারিভাবে শ্রমিক প্রেরণ এবং সৌদি আরবের শ্রমবাজার নতুন করে আমাদের সামনে খুলে যাওয়াটা আমাদের জন্য সাফল্য বটে। কিন্তু তার পরও বিকল্প শ্রমবাজার অন্বেষণ এবং বিদ্যমান শ্রমবাজারে নিজ অবস্থান অধিক শক্তিশালী করে তোলার গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। খুবই দুঃখজনক হবে, যদি সেক্ষেত্রে সময়মতো এমআরপি না পাওয়াটা এক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে আশ্বাস বাণী শুনিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী। তার কথায় আস্থা রাখতে চাইবেন সবাই। পাশাপাশি এও দেখতে চাইবেন, এমআরপি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব সুসমন্বিতভাবে পালিত হচ্ছে। এখানে সমন্বয়ের অভাব থাকলে দৈনিক ৪০ হাজার এমআরপি প্রিন্ট দিয়েও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে। এরই মধ্যে কিছু অভিযোগ উঠেছে এমআরপি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এক বিদেশী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সেসব অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখা দরকার। আরেকটি বিষয়, শুরুতে বাংলাদেশী দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের এমআরপি দেয়া হতো। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পাসপোর্ট প্রদান শুরু হয়। উভয় পদ্ধতিরই সুবিধা-অসুবিধা আছে। দ্রুত এমআরপি প্রদানের কৌশল নির্ধারণে বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক অনিয়ম

ব্যয়ে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক শাখার আয়-ব্যয় এবং প্রাপ্ত সম্পদ ব্যবহারের হিসাব নিরীক্ষাপূর্বক সরকারের স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদফতর কর্তৃক উত্থাপিত অর্ধশতাধিক আপত্তির খবর ছাপা হয়েছে গতকালের বার্তায়। আগ্রহী পাঠকের নজরে তার বিস্তারিত বর্ণনাও এসে থাকবে। খেয়াল করার মতো বিষয়, আপত্তিগুলোর প্রায় দু’ডজনই প্রথম বর্ষ সম্মানে ভর্তি সংক্রান্ত। ২০১৩-১৪ সালের নিরীক্ষা প্রতিবেদন মতে, প্রাপ্য না হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন অনুষদকে দেয়া হয়েছে অর্থ; আর সে বরাদ্দে শিক্ষা উপকরণ থেকে শুরু করে রয়েছে সীমানাপ্রাচীরের পূর্ত কাজ পর্যন্ত। উপরন্তু অনিয়মের ধরনে দেখা যাচ্ছে, তালিকায় শিক্ষকদের শ্রান্তি ও বিনোদন, গবেষণা, জ্বালানি, যোগাযোগ, পোশাক ও সেলফোন ভাতাকে। প্রাপ্য না হওয়া সত্ত্বেও সরকারি আদেশ অমান্য করে সেসব ভাতা প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সামনে আসা অভিযোগগুলোর একটির জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এক দায়িত্বশীল ব্যক্তি আমাদের প্রতিবেদককে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড়ে বিলম্ব প্রভৃতি ইস্যুর দিকে ইঙ্গিত। একে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সে কথা বলা যাবে না অবশ্য। তা সত্বেও জোর দিয়ে বলা দরকার, সামরগিক প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬১ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম একেবারে ছোট ঘটনা নয়। তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির প্রশ্নও অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে উপার্চায যেমনিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন, তার সঙ্গে দ্রুততা ও স্বচ্ছতার প্রত্যাশাই করবেন সবাই।

লক্ষ্যণীয়, দেশের সব পর্যায়ে শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধাদি সন্তোষজনক নয়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এ বৃত্তের মধ্যেই পড়েন। আবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তুকি দেয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে বেতন-ভাতাদি বৃদ্ধির সহজ উত্তর অনেক সময়ই থাকে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে। স্পষ্টত একদিকে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক আকর্ষণ কমছে; অথচ অন্যদিকে দায়িত্বরতদের ওপর বাড়ছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের চাপ। সেজন্যই নাকি অনেক সময় বিভিন্ন তহবিল একটু এদিক-ওদিক করে শিক্ষকদের ‘নানা চাহিদা’ মেটানোর চেষ্টা করা হয়। খুবই দুঃখজনক যে, যাদের প্রতিটি প্রজন্মের সামনে অনুপ্রেরণা ও আদর্শ নিয়ে দাঁড়াবার কথা, তাদের মধ্য থেকেই একশ্রেণীর ব্যক্তিরা আজ জড়িয়ে পড়ছেন আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন দুষ্কর্মে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের উচিৎ হলো, তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা। নইলে ঘটনাটি একটি নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

ইয়েমেনে আটকে পড়া বাংলাদেশী

দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিন

ইয়েমেনের পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে গড়াতে পারে সে আভাস মিলেছিল কয়েক সপ্তাহ আগেই। কিন্তু গত সপ্তাহের আগে বোধকরি বোঝা যায় নি, কতদূর নামতে পারে ঘটনা। উপরন্তু জটিলতা হলো, অবস্থা আরো মন্দ হতে পারে বলে শঙ্কা। এর মধ্যে দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। সেখানকার বাংলাদেশীদের অবস্থা শোচনীয়ই বলে উঠে এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বাইরে বেরুনোর সুযোগ কম। রান্নায় ব্যবহার্য গ্যাস মিলছে না; তাই অনেককে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে শুকনো খাবার খেয়ে। স্বভাবতই বন্ধ রয়েছে অফিস-আদালত ও আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশীদের জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তা হলো, ইয়েমেনে আমাদের কোনো দূতাবাস নেই। একজন অনারারি অনারারি কাউন্সিলর থাকলেও যুদ্ধের পর থেকে নাকি তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফলে সেখানকার বাংলাদেশীদের দেখভাল করা হচ্ছে বাংলাদেশের কুয়েতস্থ দূতাবাস থেকে। এর মধ্যে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ একটি খবর অত্যন্ত হতাশাজনক- দেশটিতে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাবই নেই সরকারের কাছে! হিসাবটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমানে তিন হাজার ছাড়ায় নি। তবে সেখানে অবস্থানরত অনেকের মতে, সংখ্যাটি দশ হাজারের কম হবে না। কথা হলো, সংখ্যা যা-ই হোক, ইয়েমেন থেকে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে সরকারের অধিক সক্রিয় দেখতে চাইবেন সবাই।

এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নি, সে কথা অবশ্যই বলা যাবে না। কিন্তু ঝুঁকির দিকটি বিবেচনায় নিয়ে যতটা সক্রিয়তার সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ ছিল, তা ঘটে নি বলে অনেকের অভিযোগ। খেয়াল করার মতো বিষয়, পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে ভারত তার নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশীদের যেতে হচ্ছে ভারতীয় দূতাবাসে! যেখানে আমাদের নিকটস্থ দূতাবাস কুয়েতে, সেখানে গোড়া থেকেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তা নিলে কী এমন অশুদ্ধ হতো- প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। জানা কথা, সৌদি আরব ও ওমানে মানব পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয় ইয়েমেন। মধ্যপ্রাচ্যে জঙ্গিবাদ বিকাশের কুখ্যাত প্রডাকশন লাইনও এটি। এদিকে সাদ্দাম হোসেন কর্তৃক কুয়েত দখল ও তার পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব-ইয়েমেন সম্পর্ক এবং বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান সচেতন পাঠকের দৃষ্টির সামনেই আছে। সেসব যুক্তি আপাতত তুলে রেখে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হোক।

ওসমানী বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট

নিরবচ্ছিন্ন সেবার নিশ্চয়তা চাই

প্রবাসীঅধ্যুষিত সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থানীয়দের কাছে স্বপ্ন বৈকি। প্রধানত তাদের এ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করা হয় ওসমানী বিমানবন্দরকে। তবে বাস্তবায়নের পথে স্বপ্নটি ঝুলে ছিল প্রায় ১৭ বছর; বিমানবন্দরে রিফুয়েলিং ব্যবস্থা না থাকায়। ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন তৎকালীন মহাজোট সরকার তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রকল্পের কাজ সম্পন হওয়ার কথা ছিল; ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে; অর্ধশতাধিক কোটি টাকায়। নির্দিষ্ট সময়ে প্রাক্কলিত ব্যয়ে এ দেশে প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘটনা খুবই কম। এক্ষেত্রেও সময় ও ব্যয় দুটোই বাড়াতে হয়। সুবিধাটি চালুর পর প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও গত ১ এপ্রিল এক বিদেশী এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ অবতরণ-উড্ডয়ন পর বিমানবন্দরটিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে খবর গতকালের বণিক বার্তার। এমন পরিস্থিতিতে সচেতন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তবে কি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছিল একবার উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য? এ প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া জরুরি- শুধু সিলেটবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণে নয়; সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্যও।

খেয়াল করার মতো বিষয়, ওসমানী বিমানবন্দরে বারবার ব্যাহত হয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের চলাচল। কুয়াশার কারণে সিলেট-লন্ডন সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হয়ে যায় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। জানা যায়, পরবর্তীতে লন্ডন থেকে কিছু ফ্লাইট সিলেটে এলেও সিলেট থেকে কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ছেড়ে যেতে পারে নি। কেউ কেউ বলছেন, এবার যে অজুহাতে সেবাটি বন্ধ হলো তার নাম ‘গ্রাউন্ড সার্ভিস’। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ সেবা প্রদানের ক্ষমতা নাকি একমাত্র বাংলাদেশ বিমানের। যে এয়ারলাইনসটি ১ এপ্রিল ফ্লাইট চালুর করেছিল, তাদের জন্য সমস্যা হলো- বাংলাদেশ বিমানের কাছে গ্রাউন্ড সার্ভিস চেয়েও নাকি তা পায় নি তারা। এতে করে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস তো বটেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিপাকে পড়ে সিলেট থেকে বিদেশগামী সিংহভাগ যাত্রীকে সড়ক পথে ঢাকায় এসে ধরতে হচ্ছে ফ্লাইট। আবার বিদেশ থেকে আগমনেচ্ছু যেসব যাত্রী ভেবেছিলেন সরাসরি সিলেট নামবেন, ঢাকায় এসে তাদের করতে হচ্ছে যানবাহন বদল। এক্ষেত্রে আইনগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাংলাদেশ বিমানের অবস্থান পরিষ্কার- চুক্তি ছাড়া কখনোই গ্রাউন্ড সার্ভিস দেয়া সম্ভব নয়; বিদেশী এয়ারলাইনসটিও কোন ভরসায় অনুমতি না নিয়েই ফ্লাইট চালু করতে গেলো বোধগম্য নয়। উপরন্তু একদিন (অর্থাৎ ১ এপ্রিল) নিয়ম ভেঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা করতে দেয়ায় তাদের অনেকে হয়তো ধন্যবাদও প্রত্যাশা করে থাকবেন। ষড়যন্ত্র তত্ব শোনা যায়, ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি বিদেশী ফ্লাইট বন্ধের ব্যাপারে নাকি বাংলাদেশ বিমানের একশ্রেণীর কর্মকর্তার হাত রয়েছে; স্বার্থ উদ্ধার না হওয়াতেই নাকি এমন কাজ করেছেন তারা। ১৭ বছর পর শুধুমাত্র এমন একটি কারণে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সেবা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে তা হবে আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সিলেটের প্রচুর প্রবাসী রয়েছেন। এদের সুবিধা-অসুবিধার দিকটি এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই। জানা যায়, আরেকটি এয়ারলাইনস নাকি গ্রাউন্ড সার্ভিসের অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ বিমানের কাছে। উদ্ভূত জটিলতার দ্রুত নিষ্পত্তি শেষে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পুনরায় চালু হোক, এমনটাই এখন দেখতে চাইবেন সবাই।

ফাইলবন্দী মাস্টারপ্ল্যান!

পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলম্ব নয়

সর্বশেষ ২০১০ সালে আয়োজিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচনের ক’দিন আগে নাকি জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরী। সেজন্যও (অনেকের মতে) নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে তীব্র হয়ে ওঠে জলাবদ্ধতা নিরসন নামক ইস্যুটির ভূমিকা। চলতি মাসের শেষে পরবর্তী সিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এরই মধ্যে প্রার্থীরা জলাবদ্ধতা দূরীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব রেখে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন; নানা প্রতিশ্রুতি-অঙ্গীকারের কথা শোনা যাচ্ছে। একে অস্বাভাবিক বলা যায় না এ কারণেও যে, জলাবদ্ধতা চাটগাঁবাসীদের বহুদিনের সমস্যা। সমুদ্র, পাহাড় ও নদী ঘনিষ্ঠ অঞ্চল হওয়ায় স্বাভাবিক জোয়ারেই সেখানকার অধিকাংশ অঞ্চলে দীর্ঘ সময় পানি আটকে থেকে জন ও পণ্য চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সালে ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কথা বলছে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ৩ হাজার কোটি টাকা বাস্তবায়ন ব্যয় ধরে সেটি অনুমোদিতও হয় ১৯৯৯ সালে। ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছর। গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে এখন পর্যন্ত তার কিছুই হয় নি বলা যাবে না। তবে সেটির অগ্রগতি ৫ শতাংশের বেশি নয় বলে জানাচ্ছেন আমাদের প্রতিবেদক। এমন পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেবেন বলেও আমাদের বিশ্বাস।

নিঃসন্দেহে মাস্টারপ্ল্যানটি বাস্তবায়নের জন্য যে বিপুল অর্থের প্রয়োজন সেটি এককভাবে সিসিসির পক্ষে বহন করা কঠিন। কিন্তু এতগুলো বছরে যথাযথ প্রচেষ্টা নেয়ার পরও চট্টগ্রামের মতো একটি বাণিজ্য নগর কর্তৃপক্ষ ৫ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন করতে পারল না, সে কথাও মানা শক্ত। অথচ পরিকল্পনাটি সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়নের তাগিদ অনুভব করেন না এমন নগরবাসী নেই বললেই চলে। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময়ে একশ্রেণীর ব্যক্তি সিসিসি’র পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নিয়ে প্রচারণা চালান- মাস্টারপ্ল্যানের আংশিক বাস্তবায়ন; অথচ সেগুলোর সিংহভাগই পরিকল্পনাটির অংশ নয়। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হন নিশ্চয়ই। আসছে সিসিসি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বিষয়টি স্মরণে রয়েছে বলে প্রত্যাশা। কথা হলো, এ অবস্থায় শুধু নগর কর্তৃপক্ষের ওপর মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের ভার ছেড়ে না দিয়ে সরকারের বিশেষ কিছু করণীয় রয়েছে কিনা দেখা উচিৎ। এর সুফল নগরবাসী তো বটেই, অর্থনীতিও পাবে বলে মনে হয়। তাছাড়া ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যানটি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান) অংশ। সেদিক থেকেও সিসিসি পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে অধিক মনোযোগ দেবে, এমনটাই কাম্য সবার।

বাংলাদেশের অবস্থান শেষ দশে!

পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ান

হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস (এইচঅ্যান্ডপি) নামক যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রণীত ভিসা রেস্ট্রিকশন্স ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান বিষয়ে যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায় তা অত্যন্ত হতাশাজনক। বিশেষত ইস্যুটির সঙ্গে রেমিট্যান্স উপার্জনে বাংলাদেশের সক্ষমতাকে মিলিয়ে দেখলে দুঃখ আরো বাড়ে বৈকি। বৈশ্বিক শ্রমবাজার থেকে রেমিট্যান্সের অন্তর্মুখী প্রবাহ বিবেচনায় আমাদের অবস্থান শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যেই রয়েছে বলে জানা যায়। ওদিকে আলোচ্য সূচক অনুসারে, ৯৩টি দেশের মধ্যে আমাদের অবস্থান উত্তর কোরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ৮৫ তম। আর আমাদের নীচে উল্লেখযোগ্য দেশের মধ্যে রয়েছে, পাকিস্তান, সোমালিয়া ও আফগানিস্তান। খেয়াল করার মতো বিষয়, এ সূচক তৈরিতে এইচঅ্যান্ডপি’র সঙ্গে ছিল ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। প্রতিষ্ঠানটির মতামতের গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে সারা বিশ্বের ধনী শ্রেণীর মধ্যে। উপরন্তু জানা যায়, প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বা এফডিআই) প্রবাহের ওপরও এইচঅ্যান্ডপি প্রণীত সূচকের মূল্য রয়েছে যথেষ্ট। ফলে সবাই প্রত্যাশা করবেন, ইস্যুটিকে যথাযথভাবে আমলে নিয়ে তদানুযায়ী কর্ম সম্পাদনে সক্রিয় হবে সরকার।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরও অবস্থা এতটা শোচনীয় ছিল না বলে আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত। সুতরাং ঘটনার কারণ অনুসন্ধান প্রয়োজন। দেখার বিষয়, সূচকটি প্রণয়নে দেশগুলোর ভ্রমণনীতি, সাময়িক ভিসা অব্যাহতি, ভিসার মেয়াদ, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি ভ্রমণকারীদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত স্থানীয় আরেক বিশেষজ্ঞ সেজন্য ব্যাপকভাবে দায়ী করেছেন দেশে সুশাসনের অভাবকে। স্পষ্টত পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশে নির্ভর করে বহির্বিশ্বে ওই দেশের রাজনৈতিক-বাণিজ্যিক অংশগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির ওপরও। আর সেক্ষেত্রে কোনো দিককার পরিস্থিতিই সন্তোষজনক নয়। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিদেশে গিয়ে অবৈধভাবে থেকে যাওয়া বাংলাদেশীদের ওপর এর বিরাট দায় চাপিয়েছেন। বিষয়টি বোধকরি এতটা সরল নয়। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসে প্রশিক্ষণরত এক বাংলাদেশী কূটনীতিকের বিরুদ্ধে আনীত ইলেকট্রনিক যন্ত্র চুরির ঘটনা এরই মধ্যে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত। সেগুলোর কোনো প্রভাব আমাদের পাসপোর্টের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার ওপর পড়ছে না, তা হলপ করে কে বলবেন? আবার এ বাস্তবতাও অনস্বীকার্য, অনেক ক্ষেত্রে বুঝে না বুঝে অন্যদের দুষ্কর্মের ভাগিদারও হতে হয় বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের। এ থেকে উত্তরণে সম্মিলিতভাবে কৌশলপূর্ণ উপায়ে অগ্রসর হওয়া চাই যেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল তথা আমাদের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।

ফিটনেসহীন ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান

ভেসেল ও রুটের ওপর নজরদারি বাড়ান

নদীর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ভোলা জেলায় বিপজ্জনক মৌসুমে নৌরুটের ‘ডেঞ্জার পয়েন্ট’-এ ট্রলার-ছোট লঞ্চের মতো নৌযান ওপর চলাচল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এটি স্বাভাবিক পদক্ষেপ বৈকি। অস্বাভাবিক হলো, এর বিপরীতে একশ্রেণীর নৌযান মালিকের বেপরোয়া আচরণ। তারা শুধু ওসব পয়েন্টে ট্রলার ও লঞ্চই চালাচ্ছেন না, সেগুলোর সিংহভাগ ফিটনেসবিহীন তথা ঝুঁকিপূর্ণ বলে গতকালের বণিক বার্তার খবর। তা যাত্রী ও পণ্যের জন্য কতটা বিপদজনক, সে কথা বলাই বাহুল্য। আর এমন চিত্র যে সারা দেশের জন্যই বাস্তব, সেটিও সহজে অনুমেয়। খেয়াল করার মতো বিষয়, একটা সময় পর্যন্ত নৌদুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চোখ বুজে দায়ী করা হয়েছে ঝড়ো হাওয়াকে। সম্প্রতি ঝড় ছাড়াই শুধু ‘প্রবল স্রোতে’ও লঞ্চডুবির খবর মিলছে। নৌদুর্ঘটনা সংঘটনের পর সরকারের পক্ষ থেকেকোনো পক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না, তাও নয়। বরং অতীতের অনেক প্রেক্ষাপটই আজ পরিবর্তিত। এ সত্ত্বেও বাস্তবতা হলো- নৌদুর্ঘটনা ঘটছে, তদন্ত হচ্ছে কিন্তু ফল শূন্য। এ পরিস্থিতির অবসান প্রয়োজন। নিঃসন্দেহে নৌপথের গুরুত্ব অতীতের মতো নেই; এর উন্নয়নে মনোযোগও সেভাবে দেখা যায় না। তবু যতটা নৌচলাচল বজায় রয়েছে, তার সুষ্ঠু নিরাপত্তা বিধানে সরকারকে অধিক সক্রিয় হয়ে উঠতেই দেখতে চাইবেন সবাই।

অনেকের ধারণা ১৯৮৪ সালের নৌযান আইনে বিদ্যমান দুর্বলতার সুযোগে দেশজুড়ে দ্রুত বেড়ে ওঠে ফিটনেসবিহীন নৌযান। সেসব ত্রুটিপূর্ণ নৌযানের গাঠনিক আদল অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ। তাতে যাত্রীদের আসন বিন্যাস ব্যবস্থাও বিপদ বাড়ায় বিশেষত ঝুঁকিপূর্ণ আবহাওয়ায়। যাত্রীবাহী নৌযানে আবার ভারসাম্যপূর্ণভাবে পণ্যের সুষম বণ্টন হয় কমই। তদুপরি নৌযানের আকার সঙ্গে ইঞ্জিনের অশ্বশক্তির যে একটা সামঞ্জস্য রাখা দরকার সে প্রয়োজনও নাকি বোধ করেন না অনেক মালিক। চালক ও সহায়তাকারীর অদক্ষতা ও গাফিলতির কথা না হয় এখানে উহ্যই থাকুক। সমস্যা হলো, নৌপথের ট্রাফিক ও রুট ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। আরো কাহারাপ অবস্থা নৌযান তদারকির। নৌমন্ত্রী আশ্বাস দেয়ার পরও (অবৈধ নৌযান বাদ রেখে) বৈধগুলোর এক-দশমাংশ বার্ষিক নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষার আওতায় আসে না বলে অভিযোগ। অথচ এক্ষেত্রে তার অধিক সক্রিয়তাই প্রত্যাশিত। তিনি রাতারাতি সব বদলে দেবেন, এমনটা অবশ্যই অপ্রত্যাশিত। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে দেশের নৌব্যবস্থা উন্নয়নে তার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকাই কি কাম্য নয় সবার?

চসিক সেবার মান

দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন

পরিকল্পিত নগর বাস্তবায়নে রাজধানীতে যে অসুবিধা, তার অনেকগুলোই নেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক’)।শুরুর দিকেও এর সুনাম বৈ দুর্নাম শোনা যায় না। বরং এক সময় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় চসিক’কে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হত অন্যদের সামনে। চসিক’র নিজস্ব ওষুধ কারখানা, বর্জ্য দিয়ে জ্বালানি প্রস্তুতের মতো কার্যক্রমের কথাও অনেকে জেনে থাকবেন। আরো জানা যায়, বন্দর নগরী চট্টগ্রাম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকল্পের অধীনে ১৯৯৫ সালে পেয়েছিল ‘হেলদি সিটি’র মর্যাদাও। তবে এখন নগরীর যে অবস্থা তার সঙ্গে পূর্ব-রূপের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া কঠিন। ক’দিন আগে চালুর অপেক্ষায় থাকা চট্টগ্রামের ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে খবর প্রকাশ করে বণিক বার্তা। গতকাল ছাপা আরেক প্রতিবেদনে দুরবস্থায় বিশদ বর্ণনা মেলে। অনেকের মতে, চট্টগ্রাম এখন আবর্জনার স্তুপ ও ময়লার ভাগাড়! সেখানে নগর স্বাস্থ্য সেবার মানেও ব্যাপক অবনতি ঘটেছে এরই মধ্যে। যথারীতি এক্ষেত্রেও ‘উপযুক্ত যুক্তি’ খাঁড়া করার চেষ্টা চলেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকে বলেছেন, চসিকর সেবার মানে হ্রাসের প্রধান কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। পাশাপাশি নগর ব্যয়ের প্রতিও কারো কারো ইঙ্গিত রয়েছে বলে প্রতীয়মান।

অনস্বীকার্য, নগরায়ন দ্রুততার সঙ্গেই ঘটেছে এখানে। কিন্তু সেজন্য এ কথা বলা আবার অসমীচীন হবে যে, গতিটি অস্বাভাবিক ছিল। খেয়াল করার মতো বিষয়, নগর সম্প্রসারণের চিন্তা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করা হয় ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ। আর এর বাস্তবায়নের প্রতি দৃষ্টি দিলেই চিহ্নিত হবে চসিক’র সেবার মান কমে যাওয়ার কারণগুলো। লক্ষ্যণীয়, এক্ষেত্রে নগর ব্যয়ের অপ্রতুলতার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করাও সঙ্গত নয়। কেবল ২০০০-০৫ সাল বাদ দলে ১৯৯০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বারই উন্নয়ন খাতে বেড়েছে চসিকের ব্যয়। কোথায় কোথায় খরচ হয়েছে তার ঠিকানাও মেলে- বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, গার্মেন্ট পল্লী, বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট প্রভৃতি কর্মসূচি রয়েছে তার মধ্যে। তবু কারো কারো ধারণা, উল্লিখিত সময়ে ব্যয় বৃদ্ধির পরও ধারাবাহিকভাবে কমেছে বিশেষত স্বাস্থ্যসেবা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে অগ্রগতি। সংশ্লিষ্ট এক পদস্থ কর্মকর্তা সেজন্য নাগরিক সচেতনতার ঘাটতিকেই অধিক দায়ী দেখাতে চেয়েছেন, দেখা গেলো। নিঃসন্দেহে নাগরিক সচেতনতার অভাব চসিকের দুরবস্থায় পেছনে অন্যতম কারণ। কিন্তু এটিকে একমাত্র কারণ বলা যাবে না। বরং এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে দায়িত্বশীল যারা তাদের মধ্যে একশ্রেণী মানুষের গাফিলতি ও দক্ষতাই অধিক ভূমিকা পালন করেছে বলে ধারণা। এদের জবাবদিহিতার আওতায় না এনে চসিকের উন্নয়ন ঘটানো কঠিন হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর মহাপরিকল্পনা

দ্রুত প্রণয়ন ও অনুসরণ দরকার

আমাদের অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের ভূমিকা ও গুরুত্ব কেমন, তা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। তবে প্রসঙ্গত এ তথ্যটুকু যোগ করা যেতে পারে যে, ওই বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। দুর্ভাগ্যজনক যে, গত প্রায় ৫ বছর ধরে এখনো বন্দরটি মহাপরিকল্পনা ছাড়াই চলছে বলে গতকালের বণিক বার্তার প্রতিবেদন। অভ্যন্তরীণ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা শেষবার এর মহাপরিকল্পনা যুগোপযোগী করা হয় ১৯৯৫ সালে। তার সময়সীমা নাকি ২০১০ সালের মে পর্যন্ত বহাল ছিল। পরবর্তীতে ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও আন্তর্জাতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধি লক্ষ্যে করে এক খ্যাতনামা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় তিন দশকের জন্য নতুন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রতিষ্ঠানটি তা সময়মতো সম্পন্ন করতে পারে নি বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক। এক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে দেরি হয়ে গেছে সে কথা বলা যাবে না। তবে অধিক বিলম্ব যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে।

তথ্য মতে, ১৯৭৭ সালে মাত্র ৬টি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে কনটেইনার হ্যান্ডলিং পোর্ট হিসেবে বন্দরটির যাত্রা শুরু। সংখ্যাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ১০ লাখের নীচে নামে নি। অবশ্য যে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি নতুন মহাপরিকল্পনার দায়িত্বে নিয়োজিত, তাদের পূর্বাভাস হলো- ২০৩৬ সালে এখানে প্রমাণ সাইজের অন্তত ৫৬ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে। তার মানে বর্তমান সক্ষমতার ব্যবহার ৩ গুণ বাড়াতে হবে তখন। সেগুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে, তেমন ভরসা কিন্তু মেলে না এখনকার অগ্রগতি দেখে। কর্তৃপক্ষের উচিৎ এর প্রতি মনোযোগ বাড়ানো। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বন্দরের নানা কাজে সমন্বয় বৃদ্ধি। সমন্বয়হীনতার কারণেও কিছু ক্ষেত্রে বন্দর সক্ষমতার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় নি এবং যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। লক্ষ্যণীয়, নতুন মহাপরিকল্পনায় এর ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের কথা রয়েছে। বন্দর উন্নয়ন কার্যক্রমে ভাটা পড়ার পেছনে একশ্রেণীর প্রভাবশালীদের দ্বিধাও কাজ করে থাকতে পারে বলে কারো কারো ধারণা; সেজন্যই নাকি অজুহাতের অভাব হয় না। কেউই চাইবেন না, এ ধরনের মনোভাবের প্রভাব নতুন মহাপরিকল্পনার ওপর পড়ুক। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর কবে চালু হবে, হলে তখন চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং কতটা হ্রাস পাবে- সে হিসাব আগাম কষাটা এক্ষেত্রে সেভাবে প্রাসঙ্গিকতা বহন করে না। গভীর সমুদ্র বন্দরটির তাৎপর্য কমিয়ে দেখানোর সুযোগ নেই। তবু কয়েক বছরের মধ্যে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র চালু হয়ে যাবে বলে মনে হয় না। অথচ উল্লিখিত সময়ে ব্যাপকভাবে বাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব। সংশ্লিষ্টদের স্মরণ থাকার কথা, ক্রমে বাড়ছে বন্দরটির আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিকতা। একে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে চীন ও মিয়ানমারের। আমাদের আরেক বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকেও ইস্যুটি ভাবায় নিশ্চয়ই। এ অবস্থায় বন্দর উন্নয়নে অবহেলা স্থানীয় অর্থনীতির ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে নতুন মহাপরিকল্পনা যত দ্রুত প্রণয়ন ও অনুমোদন হয় ততই মঙ্গল। কেননা এর পরই তো প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি অনুসারে কনটেইনার, কার্গো ও শিপ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে চট্টগ্রাম বন্দরকে।

ক্রেডিট রেটিং ব্যবসা

পরিদর্শন ম্যানুয়াল দ্রুত চূড়ান্ত করুন

ঋণমান সনদ নির্দেশ করে, কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির ব্যাংকঋণ পরিশোধের ক্ষমতা আছে কিনা এবং থাকলে কতটুকু। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির শর্ত হিসেবে প্রয়োজন হয় এ প্রতিবেদন। বাজারে বন্ড ছাড়ার প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্তকরণের এক ভালো উপায় এটি। তা বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিদেশী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুসন্ধান করা নথিপত্রের মধ্যেও অন্যতম। তদুপরি অনেকে এর সহায়তা নেন নিজ কোম্পানির অভ্যন্তরীণ অবস্থা বুঝতে। এর পর আর বলার অপেক্ষা রাখে না, আর্থিক বাজার তথা অর্থনীতির ওপর ক্রেডিট রেটিংয়ের গুরুত্ব কতটুকু। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট আরো উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, স্থানীয় বাজারে বর্তমানে আটটি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ক্রিয়াশীল। অভিযোগ রয়েছে, আমাদের অর্থনীতিতে ক্রেডিট রেটিং কর্মকাণ্ডের চাহিদার তুলনায় সংখ্যাটি পর্যাপ্তের চেয়ে বেশি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক প্রতিযোগিতা অসুস্থতার দিকে যাওয়াটা বিরল নয়। এখানে সে কারণেই ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলোর কাজের মান পড়ছে বলে অনেকের শঙ্কা। উদ্বেগ আরো বাড়ে, গতকাল বণিক বার্তায় ছাপা এক প্রতিবেদন পড়ে; ‘দুই বছরেও চূড়ান্ত হয় নি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির পরিদর্শন ম্যানুয়াল’- সেটির শিরোনাম। বিষয়টির তাৎপর্য অনুধাবনপূর্বক কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, এমনটাও কাম্য সবার।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ক্রেডিট রেটিং ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাজে জবাবদিহিতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই দু’বছরের বেশি সময় আগে পরিদর্শন ম্যানুয়াল তৈরির উদ্যোগ নেয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি এখনো আলোর মুখে দেখে নি। আর তাতে বাজারে যেসব অপচর্চা শুরু হয়েছে তার একটি নমুনাই সচেতনদের সতর্ক করতে যথেষ্ট বলে ধারণা। সেটি হলো, একশ্রেণীর নতুন কোম্পানি বাজার ধরতে গিয়ে মাত্র কয়েক হাজার টাকায় ঋণমান প্রতিবেদন তৈরি করে দিচ্ছে দেখা যায় ইদানীং। নিজের পকেট থেকে যদি অর্থ ব্যয় না হয়ে থাকে, ওসব প্রতিবেদনের পেশাগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবে সহজবোধ্য কারণেই। লক্ষ্যণীয়, এ দেশে ক্রেডিট রেটিং ব্যবসা শুরু হয়েছে এক যুগেরও বেশি। আলোচ্য সময়ের মধ্যে দেশে ক্রেডিট রেটিংয়ের চাহিদা বেড়েছে বৈকি কমে নি। আবার একই সঙ্গে একশ্রেণীর প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিম্ন মানের অনুশীলনের কারণে ক্রেডিট রেটিং সংক্রান্ত ঝুঁকিও বেড়েছে অর্থনীতিতে। এটি অত্যাসন্ন বলবেন না কেউ। কিন্তু এ ঝুঁকি জিইয়ে না রেখে নিয়ন্ত্রণের জন্য সত্বর পরিদর্শন ম্যানুয়াল চূড়ান্তের প্রতি মনোযোগ বাড়ানো উচিৎ বিএসইসি’র।

মাতারবাড়ী প্রকল্পের ক্ষতিপূরণ ব্যয়

নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের কোনো ছাড় নয়

মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়ীতে বাস্তবায়নাধীন ব্যয়বহুল ১২০০ মেগাওয়াটের আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি আলোচিত স্বভাবতই। প্রাক্কলন অনুসারে কেন্দ্রটির কর্মদক্ষতা হবে ৪২ শতাংশের কাছাকাছি যা স্থানীয় অন্যান্য তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের গড় কর্মদক্ষতা থেকে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। আনুমানিক ৩৬ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকাই সহায়তা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এত বিপুল ব্যয়ের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রত্যাশিত মাত্রায় থাকবে কিনা সে নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অবশ্য। তবু খেয়াল করার মতো বিষয়, কেবল বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, প্রকল্পটির আওতায় আরো কিছু অবকাঠামো কর্মসূচি রয়েছে। তাছাড়া জাইকার ঋণ পরিশোধ করতে হবে ১০ বছর বাড়তি গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে; দশমিক শূন্য ১ শতাংশ সুদ হারে। লক্ষ্যণীয়, মোটামুটি পরিকল্পনার শুরু থেকেই পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ইস্যুসহ বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রকল্পটির সমালোচনা হয়েছে নানা পক্ষে। অথচ এক্ষেত্রে সরকারের যে সতর্কতা ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা দেখানোর প্রয়োজন ছিল সেটি দৃশ্যমান হয়েছে কমই। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ প্রতিবেদনটি আকস্মিক কিছু নয় বলা চলে। তাতে দেখা যায়, গত বছর আগস্টে প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিসহ অন্যান্য খাতে ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তা পরিশোধের হার মাত্র ২৯ শতাংশ! উপরন্তু এগুলো প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। অথচ জাইকা নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, অধিগ্রহণকৃত জমির মালিক ও ক্ষতিগ্রস্ত পেশাজীবিদের সময়মতো পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা। এ অবস্থায় নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার এবং সেটি গ্রহণে সরকারকে বলিষ্ঠ ভূমিকায়ই দেখতে চাইবেন।

অনেক পাঠকের মনে রয়েছে নিশ্চয়ই, প্রাথমিক পর্যায়ে মাতারবাড়ী প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের জন্য অস্বাভাবিক বরাদ্দের সুপারিশ এসেছিল। পরে তা হ্রাস করা হয়। বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যার ছোট উন্নয়নশীল দেশে জমি অধিগ্রহণের জটিলতা জাইকার মাথায় ছিল বোধকরি। সেজন্যই তাদের প্রতিনিধিরা কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গেছেন ধারাবাহিকভাবে। তার পরও কোথায় গাফিলতি ছিল খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণই প্রত্যাশিত। একে তো পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না, তদুপরি ক্ষতিপূরণ হচ্ছে আত্মসাৎ। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে আসা খবরাখবর অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সেখানে নাকি দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ‘উপদেশ’ মোতাবেক ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছেন একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা। আবার প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে ‘কমিশন’ নেয়া হচ্ছে ৫-১০-১৫ শতাংশ হারে। আরো মারাত্মক জুলুমকারীদের এমন মনোভাব যে, নিচ্ছি জাইকারটা; সরকারের টা তো আর নিচ্ছি না! এক্ষেত্রে শক্তিশালী রাজনৈতিক সদিচ্ছা ব্যতীত উদ্ভূত সমস্যার সুরাহা সম্ভব নয় বলে ধারণা। মাতারবাড়ী প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণে নানা কথা ওঠায় এর আগে একজন জেলা প্রশাসককেও বদলী করা হয়েছে জানা যায়। তা থেকে বিদ্যমান পরিস্থিতি সংশ্লিষ্টদের উপলব্ধিতে আসতে হবে। সেজন্যও নীতি লঙ্ঘনকারীদের কোনো রকম ছাড় দেয়া যাবে না। সবাই এখন চাইবেন আলোচ্য বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব না হোক।

বিদ্যালয়ের পাঠদানে আধুনিক প্রযুক্তি

সবার জন্য সমানভাবে নিশ্চিত করতে হবে

‘মাল্টিমিডিয়া সুবিধার বাইরে ৯০% মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ শিরোনামে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। খবরটির ভিত্তি বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইজ) ২০১২ সালের তথ্য। তাতে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আরো খারাপ অবস্থা লক্ষ্যণীয়। সেগুলোর ৯৭ শতাংশতেই নাকি এখনো পাঠদান করা হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিতে। আরো উল্লেখ করার মতো বিষয়, পাঠদানে মাল্টিমিডিয়ার মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে বৈকি। কেননা কয়েকটি মৌল উদ্দেশ্য নিয়ে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় কর্মসূচিটি চালু হয়। সেসবের প্রয়োজনীয় ফুরিয়ে গেছে সে কথা বলা চলমান বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। উদাহরণ হিসেবে পাঠদানকে যুগোপযোগীকরণের প্রসঙ্গ উঠতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া হ্রাস এবং সে উদ্দেশ্যে পাঠদান আনন্দময় করে তোলাও আলোচ্য কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। ফলে জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়ায় শিক্ষা প্রদানের যে বিরাট উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে, লক্ষ্য পূরণে তাকেই উদ্যোগী হতে হবে অন্যদের চেয়ে বেশি। অন্যথায় কর্মসূচিটির কার্যকারিতা হ্রাসের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

সরকার, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা- এদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত ক’দশকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশে। তার ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের পর থেকে শিক্ষা খাত উন্নয়নে সরকারের বাড়তি প্রচেষ্টা স্পষ্ট। তা থেকে সুফল কেমন মিলছে, সেটি নিয়ে অনেকের সমালোচনা রয়েছে অবশ্য। পাশাপাশি অস্বীকার করা যাবে না, পাঠদানে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার পরিকল্পনার মতো সহজ নয়। বরং ক’বছরের মধ্যে রাতারাতি পরিবর্তবনের প্রত্যাশা করাটা অসঙ্গত। তবে একইভাবে উক্ত সময়ের মধ্যে ৯০ শতাংশ বিদ্যালয় মাল্টিমিডিয়া সুবিধার বাইরে থাকাটাও কর্মসূচি বাস্তবায়নের দুর্বলতাই নির্দেশ করে। ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিৎ এদিকে মনোযোগ বাড়ানো। ব্যানবেইজের তথ্যানুসারে আমাদের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোয় মাল্টিমিডিয়া সুবিধার ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম। এর কারণ হিসেবে এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দায়ী করা হয়েছে নজরদারির অভাবকে। কার্যত সরকারি বিদ্যালয়গুলোয় পরিদর্শনসহ বিভিন্ন মনিটরিং কর্মকাণ্ড প্রায় নিয়মিতভাবে সম্পন্ন হয়ে বিধায় সেখানে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার সুবিধা তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে একে প্রকৃত চিত্রের খণ্ডাংশ বলা চলে। কেননা প্রথমত মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের সুবিধা এবং মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার এক কথা নয়। দ্বিতীয়ত. অবকাঠামগত, আর্থিক প্রভৃতি সুবিধাদি আমলে নিলে সরকারি বিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারিটির ব্যবধান সহজেই তুল্য। খেয়াল করার মতো বিষয়, একশ্রেণীর বিদালয়ে মাল্টিমিডিয়া যায় নি; অনেকের মাল্টিমিডিয়া সুবিধা থাকার পরও ব্যবহার করতে পারছে স্বতন্ত্র শ্রেণীকক্ষ, কম্পিউটারসহ নানা উপকরণের অভাবে। তদুপরি আমাদের এমন বিদ্যালয়গুলোও আমলে নেয়া উচিৎ যাদের বিদ্যুৎ সুবিধা এবং মাল্টিমিডিয়ায় শিক্ষা প্রদানের উপযুক্ত শিক্ষক নেই। সেদিক থেকে দেখলে শুধু নজরদারি বাড়িয়েই বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার বাড়ানো যাবে বলে মনে করেন না কেউ কেউ। মনিটরিং নিশ্চিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তার সঙ্গে কর্মসূচি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা বিদ্যালয়গুলোর অন্যান্য সমস্যার সমাধানেও এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইস্যুটি সার্বিকভাবে দেখে সমাধানের উদ্যোগ নিক, এমনটাই সবার প্রত্যাশা।

বীমা খাতে পেশা বেছে নিতে উচ্চশিক্ষিতদের অনাগ্রহ

বড় দায় নিতে হবে কোম্পানিকেই

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উচ্চশিক্ষিত তরুণদের কাছে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অথচ গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ খবর অনুযায়ী, পেশা বেছে নেয়ার বেলায় বীমা খাতকে তেমন আকর্ষণীয় মনে করছেন না তারা । মূল কারণ স্পষ্টই বলা চলে। মোটামুটিভাবে সেগুলো হলো আকর্ষণীয় বেতনের অভাব ও সুষম সাংগঠনিক কাঠামোর দুর্বলতা। আজকাল ব্যাংকগুলোয় ২০ হাজার টাকার নীচে তেবন নেই বললে চলে। অন্যদিকে সম পর্যায়ে বীমা খাতে একজনের বেতন ১০ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ বলে আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক উদ্যোক্তা। বীমা কোম্পানির বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোও খুবই নাজুক এবং কিছু দিক বিবেচনায় তা আর্থিক খাতের মধ্যেও সমাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ অবস্থায় তরুণরা বীমা খাতে চাকুরি নিতে উৎসাহ বোধ করবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। কথা হলো, এটা সুলক্ষণ নয়; বরং তা এ খাতে সুশাসন ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধির প্রতিকূল। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে দেরী করা চলবে না।

বীমা খাতে কাঙ্ক্ষিত জনবল আকর্ষণের দায়িত্ব প্রধানত বীমা কোম্পানিগুলোর। সে দায়িত্ব এড়িয়ে গেলে চলবে না। আর এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো যথাযথভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা সেটি তদারকি করতে হবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ)। উল্লেখ করা দরকার, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অনুশীলনের মাধ্যমে বীমা খাতের তদারকি এবং এর উন্নয়নে গতিশীলতা আনায়ন আইডিআরএ গঠনের অন্যতম প্রতিশ্রুতি। সে দায়বদ্ধতা থেকে সব বীমা প্রতিষ্ঠানের অভিন্ন সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি কমিটিও গঠন করা হয় ২০১২ সালে। জানা যায়, মডেল উপস্থাপন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশও করেছিল ওই কমিটি। কিন্তু সার্ভিস রুল পেশের পর তার আর কোনো অগ্রগতির খবর মেলে না। অথচ সুষম অর্গানোগ্রাম ছাড়া বীমা কোম্পানিগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা কঠিন। চাকরি বিধিমালা এলোমেলো থাকলে এবং কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট না হলে এর প্রতি উচ্চশিক্ষিতদের আগ্রহ বৃদ্ধিও কঠিন হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, সেক্ষেত্রে সর্বাধিক ক্ষতির শিকার হবে বীমা ব্যবসা। কার্যত ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়ন ভিন্ন বীমা খাতের উন্নয়ন তথা অর্থনীতিতে এর অবদান বৃদ্ধি কঠিন। এজন্য নিজ দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে কাঙ্ক্ষিত জনবল বাড়াতে বীমা কোম্পানি যেন মনোযোগ দেয় তার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে আইডিআরএকে।

Leave a comment