Ranil Shriyan Wickremasinghe

কর্মের আকুতি ও তার বেতাল প্রত্যুত্তর

রনিল বিক্রমাসিংহে

২০১৫-০৫-১৫ ইং

মিল-অমিল দুই-ই রয়েছে তরুণ সমাজ আর রাজনীতিকদের কর্মকাণ্ডে। পার্থক্যটা হলো, কর্মক্ষেত্রে তরুণদের লড়তে হয় এমন মার্কেট শেয়ারের লক্ষ্যে, যেটি বৈচিত্র্যময় এবং পরিপূর্ণ না হলেও সেখানে সিংহভাগ প্রতিযোগীর সংকুলান সম্ভব। অন্যদিকে রাজনীতির ময়দানে মার্কেট শেয়ার সীমিত। ফলে নিজের ভাগ রক্ষা ও বৃদ্ধির মধ্যেই করতে হয় দিনাতিপাত। এখানে ক্লান্তির সুযোগ নেই। কেননা বিরতিহীনভাবে খেলা চলতে পারে রাউন্ডের পর রাউন্ড। বহু বছর আগে রাজনীতিতে হাতেখড়ির সময় সকাল-সন্ধ্যা এত বেশি প্রশিক্ষণ নেয়া হয়েছে যে, ঘটনাগুলো সামলাতে তেমন সমস্যা হয় না আজ। যাক, তরুণ ও রাজনীতিকদের ভাবনায় একটা মতৈক্যের জায়গা হলো কর্মের সংস্থান।

বয়সে ৩০ না পেরোনো শ্রমবাজারে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা অনেকে মাঝে মধ্যে জিজ্ঞেস করেন, পড়াশোনা শেষে ভালো কাজ পাব তো? তাদের চাওয়াটা বিরাট কিছু নয়। একটু উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা আর নির্ভরযোগ্য চাকরির নিশ্চয়তা। বিবাহিত ত্রিশোর্ধ্বদের দুশ্চিন্তার বিষয়বস্তু আবার ভিন্ন। তারা জানতে চান, কর্মীর যথাযোগ্য মজুরি নিশ্চিত হচ্ছে কিনা। এদের একদল হয়তো সুবিধাজনক স্থানে আপন বাড়ি নির্মাণের চেষ্টা করছেন কিংবা সন্তানকে অপেক্ষাকৃত উন্নততর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াতে চান। ফলে কিছুটা ‘ভালো’ বেতন না পেলেই নয়। কর্ম প্রত্যাশীদের এসব প্রশ্নের উত্তর আমি তৃতীয় পক্ষ তথা বেসরকারি খাতের নিয়োগদাতাদের মধ্যে খুঁজি। তাদের ঝটপট জবাব আরো বিমর্ষ করে আমাকে, কাজ করানোর মতো উপযুক্ত কর্মী কই?

কর্মসংস্থান সৃজন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু যে যার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখবেন— সেটাই স্বাভাবিক। ফলে আমার মতামতের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের বক্তব্যে পার্থক্য থাকবে। তবু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান ধরে এগোতে চাই। স্পষ্টত জনশক্তি রফতানির ওপর ক্রমেই বাড়ছে শ্রীলংকার কর্মসংস্থান নির্ভরতা। অর্থাত্ অভিবাসী শ্রমিকের পাঠানো রেমিট্যান্সের তাত্পর্য বাড়ছে অর্থনীতিতে। এক্ষেত্রে উন্নতির চিত্রই লক্ষণীয়। দেখা যাচ্ছে, ২০০০ সালে অভিবাসীরা পাঠিয়েছেন ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স। সংখ্যাটি ৬ বিলিয়ন ডলার দাঁড়ায় ২০১২ সালে। কার্যত গত দেড় দশকের কম সময়ে শ্রীলংকার রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে আনুমানিক পাঁচ গুণ। নিঃসন্দেহে তা বিরাট বৃদ্ধি। এদিকে ২০০০ সালে কিন্তু আমাদের সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী খাত ছিল তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্প। ওই সময়ে এটি আয় করত ৩ বিলিয়ন, যা বর্তমানে ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। তার মানে, এখানেও বৃদ্ধি প্রায় ২৫ শতাংশ। অবশ্য জিএসপি স্ট্যাটাস না হারালে এবং বৈশ্বিক আর্থিক সংকট সৃষ্টি না হলে তৈরি পোশাকে আরো প্রবৃদ্ধি হতো আমাদের। শ্রীলংকার রফতানি আয়ের তৃতীয় নির্ভরযোগ্য উত্স হলো চা। শিল্পটি থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম আয় হয়েছে গত বছর। চায়ের পর রাখতে হবে কাঁচা ও মূল্য সংযোজিত রাবার পণ্যকে। সেখান থেকে আয় হচ্ছে ১ বিলিয়ন ডলারের মতো। ২০০০ সালের পর এখন পর্যন্ত এখানেও রফতানি আয় বেড়েছে প্রায় চার গুণ। আমি বিশ্বাস করি, উপযুক্ত পদক্ষেপ নিলে এসব খাতের সম্ভাবনার অধিক সদ্ব্যবহার সম্ভব।

মূলত এ ক’টিই শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত। বলতে দ্বিধা নেই, হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের (এবং আরো অনেক দেশের) প্রধান রফতানিসামগ্রী ছিল ধান, মসলা, চা, রাবার, নারকেল প্রভৃতি কৃষিপণ্য। ম্যানুফ্যাকচারিং পণ্য রফতানির উপলব্ধি জাগ্রত হয় সত্তরের দশকে এসে। খেয়াল করার মতো বিষয়, উন্নয়ন মইয়ে শ্রীলংকার যাত্রারম্ভ একেবারে তলানি থেকে; যার ভালো নাম তৈরি পোশাক শিল্প। তা থেকে দ্রুত বাড়ছিল রফতানি আয়। পরবর্তীতে এর সঙ্গে যুক্ত হয় জনশক্তি রফতানি। ১৯৮৩ সালের ওই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির মধ্যে রেমিট্যান্স আগমনের ঘটনা ছিল দেশবাসীর কাছে খুবই সমাদৃত। তবে এরই মধ্যে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের অন্ধকার দিকের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে ১৯৯০ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সূচনায়। আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার লংকান শ্রমিক ফেরত পাঠানো হয় কুয়েত থেকে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের বিকল্প অনুসন্ধান কেমন কঠিন, সেটি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি তখন। একপর্যায়ে প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসা ড. এএস জয়বর্ধন ও আমাকে জাপান পাঠালেন। দেশটির সরকার সে সময় যেভাবে হাত বাড়িয়েছিল, আজো তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।

কথা হলো, রেমিট্যান্স এখন বৈশ্বিক ঘটনা। শুধু শ্রীলংকা কেন, অনেক দেশের সুখসমৃদ্ধি ইদানীং ব্যাপকভাবে রেমিট্যান্সনির্ভর, কেউ কেউ অতিনির্ভরশীল। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, রেমিট্যান্সের ওপর অতিনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে শ্রমঘন ও নিম্ন মজুরির শিল্পোদ্যোগের পাশাপাশি পুঁজিঘন আধা-দক্ষ মানবসম্পদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয়, যেন এর সহায়তায় পর্যায়ক্রমে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলা যায়। ভারতের ও প্রযুক্তি খাতকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করতে পারি সেক্ষেত্রে। লক্ষণীয়, নিম্ন মজুরির শ্রমঘন শিল্পের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির ওপর তীক্ষ দৃষ্টি রেখেছে ভারত। আর আমরা? উন্নয়নের কোন মডেল অনুসরণ করছে শ্রীলংকা?

দেশের অর্থনীতির দিকে যখন তাকাই, এক দশক আগের চেয়ে তেমন কোনো পার্থক্য চোখে পড়ে না। এখনো আমাদের রফতানি আয়ের বিপুলাংশ জুড়ে আছে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয়। তৈরি পোশাক ঘিরে নির্ভরশীলতা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য রাসায়নিক পণ্য তৈরি হচ্ছে আগের মতো। বিশ্ববাজারে যাচ্ছে লংকান খাদ্যপণ্য ও পানীয়। এসবের বাইরে সেভাবে কোনো প্রযুক্তি পণ্য উত্পাদন ও রফতানি করি আমরা? উত্তর হলো, না। গাড়ির যন্ত্রাংশ বানাই? না। তাহলে তো আগের অবস্থানেই আছি আমরা। জানি, অনেকের কাছে অনেক রকমের যুক্তি আছে। কিন্তু চলমান বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না। এগোচ্ছে ভারত-চীন-সিঙ্গাপুর; এদিকে আমরা স্থির। অনেকের মূল ফোকাস স্থানীয় অর্থনীতির সেবা খাতে। সরকারের তীক্ষ দৃষ্টি আবার স্টক এক্সচেঞ্জের ওপর। এরই মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) থেকে অর্জিত হয়েছে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, চূড়ান্ত বিচারে শ্রীলংকার প্রাপ্তি কী? সার্বিকভাবে এখনো আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো সরকারি ব্যয়। প্রায় দুই দশক (মাঝখানে সম্ভবত ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৫ সাল বাদে) বরাদ্দের বেশির ভাগ গেছে প্রতিরক্ষা খাতে। আর বর্তমানে প্রথম স্থান অধিকার করেছে অবকাঠামো নির্মাণ। এতে বেসরকারি খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ পর্যাপ্তভাবে জোগানো যাচ্ছে না।

আমাদের আর্থিক খাত এখনো তেমন গভীর নয়, দুর্বলতা রয়েছে বেশকিছু। অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম বেশি উপরে উঠতে না দেয়া, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রভৃতি ছাড়া সামগ্রিক উন্নয়ন মজবুত হবে না। ওসব গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে হয়তো নিম্নমুখী হচ্ছি আমরা। তবে আসল কথা হলো, সেগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর সেটি করা জরুরি এজন্যও যে, নইলে শ্রীলংকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চল হয়ে পড়বে; পরবর্তী ধাপে উন্নীত হতে পারবে না সমৃদ্ধি। ঠিক আছে মানছি যে, পুঁজিঘন আকর্ষণীয় কিছু শিল্পে আপাতত আমরা নামতে পারব না নানা কারণে। কিন্তু ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাতে বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিরাট সুযোগ তো বিদ্যমান। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলতে চাই, ৪০০ মিলিয়ন কেন, শ্রীলংকার আইসিটি খাতের আকার হওয়া উচিত কমপক্ষে ২ বিলিয়ন ডলার। তৈরি পোশাক খাতে আরো ৬ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় বাড়ানো যায়। কাজটি করা গেলে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। ফলে নিরুপায় তাকিয়ে থাকতে হবে না বৈদেশিক কর্মসংস্থানের প্রতি।

আরেকটি বিষয়ের আলোচনা এখানে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সেটি হলো, দক্ষ শ্রীলংকানরা থাকছেন না দেশে। দেখা যাচ্ছে, কলম্বোর নামি কোনো হোটেলে ক’বছর দক্ষতা অর্জনের পরই সার্টিফিকেট নিয়ে অনেকে ছুটছেন দুবাইয়ের মতো পর্যটন নগরে। তাদের অভিবাসনের কারণ অযৌক্তিক বলা যায় না। সেখানে বেশি মজুরিতে কাজ পাচ্ছেন তারা! তবে এতে দেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা হলো, কাজের উপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ পাচ্ছে না স্থানীয় বেসরকারি খাত। কেননা অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে থাকছে প্রধানত অদক্ষরা। এখানকার দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিকের বিশাল অংশই কিন্তু বর্তমানে প্রবাসী। এ ধরনের অব্যাহত মেধা পাচার আমাদের জন্য কত বড় দুশ্চিন্তার তা বলে বোঝানো যাবে না। দলে দলে উপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এমন প্রবণতা ঠেকাতে দ্রুতই ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সামাজিক ব্যয় জোগাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হতে পারে আমাদের।

করণীয় বিষয়বস্তু অনেকগুলোই। নিঃসন্দেহে আমাদের চ্যালেঞ্জ বিপুল, দুর্বলতাও অনেক। তা সত্ত্বেও আমি বিশ্বাস করি, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক বা দক্ষিণ কোরিয়ার চেয়ে অনেক বেশি ভাগ্যবান শ্রীলংকা। ভারতীয় মহাসাগরের মাঝখানটায় আমাদের অবস্থান। কৌশলগত দিক থেকে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি আমরা সহিষ্ণু জাতি। সহনশীলতা না থাকলে তিন দশকের যুদ্ধক্ষত ও দুই দশকের পুঁজি লোকসান নিয়ে কোনো দেশ আজ এভাবে আমাদের মতো দাঁড়াতে পারত না। কথা হলো, এখান থেকে অবস্থার দ্রুত ও ক্রমশ উন্নয়ন আবশ্যক। সেজন্য রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দেশের উন্নয়নের প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের একমত হতে হবে যে, উন্নয়নের স্বার্থে জরুরি আর্থসামাজিক ইস্যুতে আমরা কেউই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করব না; ভোটাভুটি কিংবা এ ধরনের মূল রাজনৈতিক কার্যক্রমে স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রেখেই। সেজন্য সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় প্রথমে তাকাতে হবে দলীয় রাজনীতির প্রতি এবং এর পর কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো অত্যাবশ্যকীয় আর্থসামাজিক চাহিদার জন্য স্থান সৃষ্টি তথা পরিবর্তন আনতে হবে দলীয় রাজনীতির রূপরেখায়।

লেখক: শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী

ওয়ার্ল্ড নিউজ থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তর জায়েদ ইবনে আবুল ফজল

Interview with Mr. Jesper Toft

একক মুদ্রার ওপর অধিক নির্ভরশীলতা বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে

জেসপার টফট গ্লোবাল কারেন্সি ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা। কোপেনহেগেন বিজনেস স্কুল থেকে উচ্চশিক্ষা নেয়া জেসপার ডেনমার্কের অন্যতম সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। ওভারসিজ মার্কেটের চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়েব ইন্টেলিজেন্স টেকনোলজিতে। চায়না নেটওয়ার্ক মিডিয়া ইনকরপোরেশন পরিচালনা করেছেন ২০১২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। কর্মদক্ষতার স্বীকৃতি পেয়েছেন ডেনিশ ডিপার্টমেন্ট অব কমার্স ও ডিপার্টমেন্ট অব রিসার্চ থেকে। ব্লুমবার্গ বিজনেসের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, তার বড় দক্ষতা স্ট্র্যাটেজি ও বিজনেস ডেভেলপমেন্টে। সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা ঝুঁকি, গ্রিস-ইউরোর মুদ্রা সমস্যা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন জায়েদ ইবনে আবুল ফজল ও সাকিব তনু

 JT foto 2a

সুদূর ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশ— কেন?

আসলে এসেছি আমার প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল কারেন্সি ইউনিয়ন প্রদত্ত সেবাগুলো নিয়ে আপনাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলতে। কেননা আমরা বিশ্বাস করি, মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থার ম্যাথমেটিক্যাল প্লাটফর্ম থেকে প্র্যাকটিক্যালি ব্যাপক সুবিধা তুলে নিতে পারে বাংলাদেশ। মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতায়ও যথেষ্ট কার্যকর এটি।

আমাদের বৈদেশিক বিনিময় হার তো বর্তমানে স্থিতিশীল…

কথাটা আংশিক বাস্তব। বড় বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে এবং বিনিময় হারের দিক থেকে আপনাদের মুদ্রা টাকার প্রায় পুরোপুরি স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে মার্কিন ডলারের সঙ্গে। অথচ বাংলাদেশের একক বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হলো ইউরো অঞ্চল; তার পর চীন, ভারত ও চতুর্থ নম্বরে যুক্তরাষ্ট্র। এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারের প্রতিযোগিতার প্রতি লক্ষ করুন। ইউরোর বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ফলে ডলার ব্যবহারের মাধ্যমে বাণিজ্য সম্পন্ন হওয়ায় বাংলাদেশী রফতানিকারকদের এ সুবিধা সাময়িক। চূড়ান্ত বিচারে তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা খানিকটা কমেছে বরং। বিনিময় হারের ওঠানামায় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা এখনো যে সমস্যা অনুভব করছেন না, সেটির আরেকটি কারণ হতে পারে— বিদেশী ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের সম্পন্নকৃত চুক্তিগুলো বিনিময় হার পরিবর্তনের আগের। তবে আগামী মৌসুমে ক্রেতাদের সঙ্গে নতুন চুক্তি করার সময় সমস্যা সৃষ্টি হলে অবাক হব না। তখন উৎপাদন ব্যয় আরো কমাতে বলতে পারেন ক্রেতারা। ইত্যবসরে ইউরোপে যদি পণ্যটির চাহিদা না কমে এবং বাংলাদেশ যদি ওই শর্ত মানতে নারাজ হয়, সেক্ষেত্রে এখান থেকে চলেও যেতে পারে কিছু চুক্তি। কেননা বিনিময় হার ও বাণিজ্য বিন্যাস পরস্পর তাল মিলিয়ে চলে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। মুদ্রা-সংক্রান্ত বৈশ্বিক ঝুঁকি মোকাবেলায় এটিই কি পর্যাপ্ত নয়?

অবশ্যই বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা যে কোনো অর্থনীতির একটা শক্তিশালী দিক। কিন্তু এর ব্যবহারটা একেবারে সাদামাটা ভাষায় বলতে গেলে রাবার ব্যান্ডের মতো। একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত একে অনায়াসে টানা যায়। কিন্তু তার বেশি টানতে গেলে হয় ছিঁড়ে যায়, নয়তো সমান শক্তিতে আঙুলে আঘাত করে। এর আগ পর্যন্ত হয়তো কিছুই অনুমান করা যায় না। ফলে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা বিনিময় হারে উদ্বায়িতা (ভোলাটিলিটি) বলে কয়ে তৈরি হয় না। আর পূর্বপ্রস্তুতি না থাকলে ও সতর্ক না হলে বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ক্রিয়া (ইমপ্যাক্ট ইফেক্ট) পড়াও খুবই স্বাভাবিক। সেজন্যই আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বলছি ট্রেড-ওয়েটেড মাল্টি কারেন্সি বাস্কেট রাখতে।

বৈদেশিক বিনিময় হারের ঝুঁকি বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলবেন কি?

দেখুন, বাংলাদেশ গার্মেন্ট পণ্য রফতানি করে। এখানে টাকার সঙ্গে বিনিময় ঘটে ডলার-ইউরো প্রভৃতির। আমরা দেখেছি, পণ্য রফতানির বেলায় মুদ্রার যতবার বদল হয়, বিনিময় হারের বদল ঘটে তার প্রায় দ্বিগুণ বেশি। আরো মজার বিষয়, বৈদেশিক বিনিময় হারের ওই উত্থান-পতন প্রকৃত অর্থনৈতিক বিনিময়ের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্কহীন; সেটা মূলত স্পেকুলেশন-ড্রাইভেন (অনুমান নির্ভর লেনদেন)। আমি মোটেই স্পেকুলেশনের বিরোধী নই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, স্পেকুলেটিভ কারেন্সি মার্কেট (অনুমান নির্ভর মুদ্রাবাজার) ও রিয়েল ট্রেড মার্কেটের (প্রকৃত বাণিজ্য বাজার) মধ্যে সুসমন্বয় ও সুসামঞ্জস্য থাকা উচিত। কেননা বাস্তবে বাণিজ্য না থাকলে বিনিময় হার বাজার হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। অন্যদিকে বিনিময় হার বাজারের অলীক বৃদ্ধি অনেক সময় প্রকৃত অর্থনীতির ঘাড়ে বিপদ চাপিয়ে দেয়।

সেক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কেমন হতে পারে?

আমি পরামর্শ দেব, অন্তত বড় বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে বাণিজ্য বিন্যাস (ট্রেড প্যাটার্ন) বিশ্লেষণপূর্বক বিনিময় হার ঝুঁকি হ্রাসের কৌশল নির্ধারণ করুক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেক্ষেত্রে ট্রেড ভলিউম (বাণিজ্যের পরিমাণ) অনুপাতে তৈরি গ্লোবাল কারেন্সি ইউনিয়নের কারেন্সি বাস্কেট (মুদ্রা বাক্স) ব্যবহার করতে পারে তারা। এটি নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক ব্যবস্থা। আমার মনে হয়, এটা একবার ট্রাই করা উচিত। যদি দেখা যায় কাজ হচ্ছে না, তখন বাদ দিলেই হলো। নিঃসন্দেহে দ্রুত ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশেরও কাম্য। কেননা উন্নয়নের বৃহৎ নিয়ামক হচ্ছে এ প্রবৃদ্ধি। আবার তা কিন্তু বাণিজ্য বৃদ্ধি ছাড়া সম্ভব নয়। আমার প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে সহায়তা জোগাতে চায়, যাতে জাতীয় পর্যায়েই অধিক দক্ষ ও সুপরিচালিত বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা থেকে নিজ বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা থেকে সুযোগ উসুল করতে পারে বাংলাদেশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আপনাদের চুক্তি হয়েছে?

এখনো হয়নি। তাই আমি নিজে এখানে এসেছি শুধু এটা বোঝাতে যে, সেতু ও বিদ্যুেকন্দ্রের মতোই বিনিময় হারে ঝুঁকি হ্রাসমূলক আর্থিক অবকাঠামো আপনাদের উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য দরকার। বাংলাদেশ যতই বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে অঙ্গীভূত (ইন্টিগ্রেট) হবে, ততই এগুলোর প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে। আর এসব ব্যাপারে ঐকমত্যের ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়াই উত্তম। সে লক্ষ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ীদের সংগঠন সবার সঙ্গে ইস্যুটি নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত।

আমাদের বিনিময় হার ব্যবস্থাপনার বর্তমান হাল কেমন?

বর্তমানে মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে। অথচ সক্রিয় ও আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতিতে এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা। বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ অকার্যকর কিংবা নেতিবাচক, সে কথা বলছি না। কিন্তু কথা হলো, এ ধরনের ব্যবস্থা সাধারণত অনমনীয়। ফলে আচমকা অভিঘাতে ভঙ্গুরতা দেখা দেয়। তাছাড়া যে কোনো একক মুদ্রার ওপর অতিনির্ভরশীলতা কিছু ঝুঁকি তৈরি করে। ফলে একাধিক মুদ্রায় ঝুঁকি বণ্টনই বুদ্ধিমানের কাজ।

আইএমএফ স্থাপিত আর্থিক অবকাঠামোর সঙ্গে এতক্ষণ আলোচ্য ব্যবস্থাটির সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা কতটুকু?

ট্রেড-ওয়েটেড মাল্টি-কারেন্সি বাস্কেট অন্য দেশের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক কিংবা সমন্বয় ছাড়া স্থাপন করা যায়। আইএমএফের বিদ্যমান অবকাঠামোর মধ্যেই এর প্রয়োগ সম্ভব। আবার ব্যবস্থাটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম যেমন— দেশী মুদ্রা সরবরাহ অথবা সুদের হার নিয়ন্ত্রণের মতো পদক্ষেপে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের ওপরও এর প্রতিক্রিয়া নেই।

একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বা চ্যালেঞ্জ কী কী?

উন্নয়নশীল থেকে উন্নত হওয়ার পথে প্রচলিত ধাপগুলো সবাই জানেন। বাংলাদেশকেও হয়তো সেই ক্লান্তিকর সিঁড়ি বেয়েই উঠতে হতো, যদি না তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) বৈপ্লবিক ছোঁয়া এখানে লাগত। আমি মনে করি, বাংলাদেশের উন্নয়নের শর্টকাট প্লাটফর্ম হতে পারে আইসিটি। এটি একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের একটা বড় শক্তি। আর অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো, সিস্টেমকে আপগ্রেড (ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী) করা। আপনাদের বিনিময় হার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই এখনো প্রচলিত ধারায় চলছে। এখানে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কেননা পরস্পর সহযোগী দেশগুলো এখন অনেক বেশি কাছাকাছি আর সেক্ষেত্রে ম্যাজিক গ্লু হলো ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রেশন (আর্থিক একীভূতকরণ)।

এখানকার ব্যাংকিং খাত সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

এ বিষয়ে আমার জানাবোঝা খুব বেশি দিনের নয়। ফলে ধারণাও ভাসা ভাসা। তবু ইউরোপের অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু বুঝি— স্থানীয় ব্যাংকিং খাতের বিস্তার ও গভীরতা বাড়াতে গ্রাহকের আরো আস্থা অর্জনের দরকার আছে। সে লক্ষ্যে গ্রাহক-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে যত্নবান ও সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি বাস্তবায়ন করতে হবে বাসেল-২-এর মতো বৈশ্বিক অনুশীলন। বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় দুটো বিষয়— রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স। এর সুব্যবস্থাপনায় এগিয়ে আসা উচিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহিত হচ্ছে, তা অসম্পূর্ণ স্থানান্তর। সঠিক চ্যানেলের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে এর অধিকতর ব্যবহার সম্ভব। তাতে ব্যাংকগুলোর করণীয় কম নয়।

গ্রিসের বর্তমান পরিস্থিতি কী? কিছুদিন আগে শোনা যাচ্ছিল, একক মুদ্রা ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে যেতে পারে তারা। ওদিকে রাশান রুবলের দাম পড়েছে সম্প্রতি…

ইউরোপে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে এ মুহূর্তে। আর গ্রিক বাণিজ্য হিসাবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি। ২০১৩ সালের অফিশিয়াল হিসাবেই তা ছিল প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। গ্রিস যদি ইউরো পরিত্যাগ করতে চায়, ডলার ও ইউরোকে নিয়েই থাকতে হবে তাকে। সেক্ষেত্রেও ঝুঁকি প্রভাব ও বিনিময় হারের বিপদ রয়েছে, যা অগ্রাহ্য করা অসম্ভব।

রুবলের দাম ৫০ শতাংশ কমেছে এক মাসে। অর্থাৎ ৩০ দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে তার অর্ধেক ক্রয়ক্ষমতা হারিয়েছে রাশিয়া। ফলে বিপাকে পড়েছে সেখানকার কোম্পানিগুলো। ওদিকে সুইস ফ্রাংকের কিন্তু দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশ। তার প্রভাবও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বহু প্রতিষ্ঠানকে। মুদ্রাবাজারের এমন উদ্বায়িতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যেও রয়েছে বেশ।

বিশ্বের মুদ্রাবাজারের ভবিষ্যৎ কী?

গত ৪০ বছরে আপনারা ভেহিকল টেকনোলজির পরিবর্তন, টেলিফোনি ধারণার রূপান্তর দেখেছেন; আমি কিন্তু দেখেছি বিনিময় হার ব্যবস্থার পরিবর্তিত রূপ। আমার বিশ্বাস, এর উন্নয়ন হবে পর্যায়ক্রমে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং আমাদের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কিছুটা হলেও পরিচিতি ঘটেছে। তাদের ব্যাপারে আপনার ধারণা জানতে পারি?

আমার ফার্স্ট ইম্প্রেশন হলো, ব্রিকসের পর নেক্সট-১১-এর সদস্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জন এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভাবনাময়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা অব্যাহতভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে চললে এটা ঘটত না। সেন্ট্রাল ব্যাংকিং, ট্রেজারি ম্যানেজমেন্টের কিছু কর্মকর্তাকে বেশ কোয়ালিফাইড মনে হয়েছে। আর বেসরকারি খাত সম্পর্কে শুধু এটুকু বলব, আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশীরা আন্তরিকভাবেই ভাগ্যকে বদলাতে চায়; নিজ অবস্থার উন্নতি চায়।

বিশেষ কোনো পরামর্শ আছে কি?

বদ্ধ অবস্থায়ও সংরক্ষিত অর্থনীতির উন্নয়ন হয়। তবে সে পরিস্থিতিতে কাঙ্ক্ষিত গতি মেলে না। আর এ গতির নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে ডেভেলপমেন্ট প্রসেসের (উন্নয়ন প্রক্রিয়ার) ওপর। ফলে উন্নয়নের গতি বাড়াতে বিশ্বের সঙ্গে আরো উন্মুক্ত হওয়া উচিত বাংলাদেশের।

আলোকচিত্রী: ডমিনিক হালদার

২০১৫-০৫-০৭ ইং