From 2011-15

সাইবার ওয়ার!

সম্প্রতি সাইবারস্পেসে সক্রিয় হয়ে উঠছে ভারত ও বাংলাদেশের হ্যাকাররা। ভারতীয়রা নিজেদের অভিহিত করেছে ইন্ডিশেল গ্রুপ। আর বাংলাদেশী হ্যাকারদের দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ সাইবার আর্মি, বাংলাদেশ ব্ল্যাকহ্যাট হ্যাকারস, এক্সপায়ার সাইবার আর্মি প্রভৃতি নামে। এরা বলছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গুলিবর্ষণের প্রতিবাদেই আক্রমণ চালানো হয়েছে ভারতের সাইবারস্পেসে। ছোটরা কিছু করে দেখালে আমরা যেমন মজা পাই ও উৎসাহ দেই, এ ক্ষেত্রেও অনেকের মাঝে দেখা গেছে তেমন মনোভাব। বাংলাদেশী হ্যাকারদের দাবি, অ্যানোনিমাসসহ কয়েকটি পাকিস্তান, সৌদি আরবভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপও সমর্থন জানিয়েছে তাদের কাজে। এ বিষয়ে অবশ্য নিঃসন্দিহান নয় অনেক আন্তর্জাতিক হ্যাকারই। তাদের মতে, বিএসএফের সাইট বিকল করেছে বটে, কিন্তু এটির ম্যাট্রিক্সের কোনো ক্ষতি করতে পারে নি বাংলাদেশী হ্যাকাররা। নির্বিচারে প্রায় ২০ হাজার ভারতীয় সাইট অচল করেছে তারা। এ দিকে ইন্ডিশেল বাছাই করে আক্রমণ চালিয়েছে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সাইটে। চেষ্টা করেও এ আক্রমণ নাকি ঠেকাতে পারে নি বাংলাদেশ সাইবার আর্মি।

কথা হলো, যে উদ্দেশ্যে বাংলাদেশী হ্যাকাররা ভারতীয় সাইবারস্পেসে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেটি রাজনৈতিক সমস্যা। এভাবে চাপ দিয়ে ভারতীয় রাজনীতিকদের কাছ থেকে দাবি আদায় কঠিন। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ভিন্ন এ সমস্যা দূর করার বিকল্প নেই। আইন অনুসারে হ্যাকিং অপরাধের কাতারে গণ্য। আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়াও বেশ কঠোর এ ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশকেই প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়ে থাকে। তাছাড়া নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিচার করলে এসব হ্যাকররা নিজ দেশের জন্যই বড় হুমকি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আক্রমণ করার মতো সুবিধাজনক টার্গেট না পেলে এরা স্থানীয় নেটওয়ার্কেই আক্রমণ চালায়। বাংলাদেশে এর আগে র‍্যাব ও হাইকোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাইটগুলোয় সাইবার অ্যাটাক হয়েছিল। ই-কমার্স, এম-কমার্সের পরিধিও বাড়ছে দেশে। এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনলাইনেই কর আহরণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার সুবিধাও চালু হয়েছে সম্প্রতি। এ অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ও অভিভাবক হিসেবে সরকারের দায়িত্ব বাংলাদেশের হ্যাকারদের সামলানোর। আমাদের হ্যাকারদের আক্রমণের ধরন দেখলে বোঝা যায়, এরা প্রফেশোনাল নয়; এখনো অ্যামেচার। তবে প্রফেশনাল হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে না হ্যাকিংয়ে। দ্রুত আইন করে এদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেয়া না হলে, ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে পড়বে বিষয়টি। তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য কিছু খাতে যে সুনাম আমরা কুড়িয়েছি বহির্বিশ্ব, তাও ম্লান হবে খানিকটা।

আইন প্রণয়নের আগে চিহ্নিত করা প্রয়োজন এসব হ্যাকারকে। দেখা দরকার, এরা আবাসী না পরবাসী বাংলাদেশী। অনেকের মতে, প্রবাসীরা এতে যুক্ত থাকতে পারে; তবে এরই মধ্যে স্থানীয় গ্রুপও রয়েছে যারা নেটওয়ার্ক হ্যাকিংয়ে সক্ষম। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, সাইবার ফরেনসিক টেস্টে দেখা যায় বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট ও মালদ্বীপের ভারতীয় হাইকমিশনের সাইটে আক্রমণ চালিয়েছিল একই হ্যাকার গ্রুপ। সাইবার ওয়ারফেয়ারে বহুল উচ্চারিত শব্দ মার্সেনারি হ্যাকার। অর্থাৎ কেউ কোনো একটা নেটওয়ার্ক হ্যাক করতে চান, কিন্তু সে ক্ষমতা তার নেই। এমন পরিস্থিতিতে অর্থের বিনিময়ে মার্সেনারি হ্যাকার ভাড়া করা যায় ইন্টারনেটে। সাম্প্রতিক সাইবার ওয়ারে এমনটি ঘটেছে কিনা, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

হ্যাকার চিহ্নিতকরণের পরে কাজটি হবে, এদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন। মেধাবী এ জনসম্পদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উপকৃত হতে পারি আমরা। তার সঙ্গে অবশ্য আইন প্রণয়নের কাজটিও চালিয়ে যেতে হবে দ্রুত। পাশাপাশি গড়ে তুলছে হবে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কামরুজ্জামান অভি

ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের যাত্রা

সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস। এটি পরিচালিত হবে দিল্লী স্কুল অব ইকোনোমিকস (ডিএসই), আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকসের (এলএসই) আদলে। অর্থনীতি নিয়ে পড়াশুনা করেছে অথচ এলএসই’র নাম শুনেন নি, এমন মানুষ বিরল। এলএসই প্রতিষ্ঠার ইতিহাসটা কিন্তু মজার। এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ’। তার কৌতুহল ছিল বিচিত্র সব বিষয়ে। আর এসব শিখতে তিনি বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ বন্ধুদের। অর্থনীতি সম্বন্ধে শ’র শিক্ষক ছিলেন সিডনি ও বিয়াট্রিস ওয়েব। ১৮৯৪ সালের কথা। ওয়েব দম্পতির সঙ্গে তিনি আড্ডা দিচ্ছিলেন- বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতকরণ নিয়ে। শ’র শৈশবটা আনন্দের ছিল না। এ জন্য প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকেই দায়ী করে এসেছেন আজীবন। তার মতে ব্রিটেনের শিক্ষা ব্যবস্থা কারা আইনে চলে যেখানে শিক্ষকরা হলেন ছাত্র পেটানো কেরানি। তারওপর এসব শিক্ষক যা শেখান, অধিকাংশ সময়ে তুলে ধরা হয় না তার বাস্তব দৃষ্টান্ত। এতে শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা বিকশিত হতে পারে না। তিনি উদাহরণ টানলেন, রেলইঞ্জিন সম্বন্ধে ব্রিটেনের শিক্ষকরা যা শেখান, তাতে মনে হয় ওটি ভিনগ্রহের কোনো বস্তু। তাদের বদলে কোনো রেলইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে এ ক্লাস নেয়া হলে ঢের ভালো শিখতে পারবে শিক্ষার্থীরা। কথাগুলো মনে ধরেছিল ওয়েব দম্পতির। কয়েক মাস পর তারা শ’র কাছে আসেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স নামে ভিন্ন ধারার বাস্তবমুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রস্তাব নিয়ে। সারা জীবন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করলেও শ’ বন্ধুর পীড়াপীড়িতে রাজী হন। তাদের তিনজনের দান করা অর্থে ১৮৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এলএসই।

একই শিক্ষাদর্শনের ভিত্তিতে ১৯৪৯ সালে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গড়ে তোলা হয় ডিএসই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর অনেক বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদেরও স্বপ্ন ছিল এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। শেষ পর্যন্ত কয়েক বছর আগে ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর স্বীকৃতিও নেয়া হয়। সম্প্রতি অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়েই শুরু হলো এর কার্যক্রম। এটি আমাদের জন্য সুখবর। প্রতিষ্ঠানটিতে আপাতত স্নাতক পর্যায়ের কোর্স রাখা হচ্ছে না; থাকছে স্নাতোকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ।

আশা করা যায়, প্রতিষ্ঠানটি মান ধরে রাখতে রাখলে অর্থনীতিতে উচ্চতর শিক্ষার জন্য অনেকেই বিদেশে যেতে নিরুৎসাহিত হবেন এখন। এতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে উন্নত দেশগুলোর মতো খন্ডকালীন ভিত্তিতে। শিক্ষক হিসেবে বাংলাদেশীদের পাশাপাশি থাকবেন বিদেশী অর্থনীতিবিদরাও। এভাবে ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিকস জমিয়ে তুলতে পারলে রোধ হবে এ দেশ থেকে মেধাপাচার। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এলএসই’র আদলে সুপরিসর কনফারেন্স হলও থাকছে এতে। এ ধরনের বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই জরুরি একটি বিষয় হলো, সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। অনেক বিষয়ে অনলাইনে ব্যাপক তথ্য-উপাত্ত মিললেও এমন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যে কারণ বৃহৎ ডিজিটাল আর্কাইভের পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে অর্থনীতি ও রাজনীতি বিষয়ক বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার এলএসই’তে। অনেকের শঙ্কা, দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিদ্যমান রাজনীতির প্রভাব পড়তে পারে এখানে। একে রাজনীতি থাকবে কিনা, এ বিষয়ে এখনো কিছু জানান নি ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের গভর্নিং কাউন্সিল। তবে এ ধরনের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে দেশে ছাত্র রাজনীতির নামে যা চলছে সেটিকে রোধ করা দরকার।

ঢাকা স্কুল অব ইকোনোমিকসে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে, অর্থনীতির প্রায়োগিক দিকের প্রতি। দেশে যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে এ ধরনের অর্থনীতি শিক্ষার। প্রত্যাশা রইল, এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি অগ্রদূতের ভূমিকা নেবে। এভাবে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা গেলে প্রতি বছর সাশ্রয় হবে বিভিন্ন প্রকল্পের বিদেশি অর্থনৈতিক পরামর্শদাতাদের বিপুল কনসাল্টেশন ফী। তাছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ রফতানিতে ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশের। প্রতিষ্ঠানটি তা পুষিয়ে উঠতেও সহায়তা জোগাবে, সবার প্রত্যাশা।

ফাহমিদা ফেরদৌস

মাঝখানে লাভ হলো আমেরিকার

কয়েকদিন আগে হরমুজ প্রণালীতে রাডার বিধ্বংসী মাঝারি পাল্লার ব্যালাস্টিক মিসাইল মেহরাবের পরীক্ষা চালায় ইরান। সামরিক-রাজনৈতিক কোনো চোখ রাঙ্গানিই তাতে ছিল না প্রাথমিকভাবে। প্রধানত যৌথ মহড়ার অংশ হিসেবে ডজনখানেক মেহরাব ওড়ানো হয় সে সময়। তবে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায় কিনা, সে ভাবনা বোধকরি ছিল কোনো কোনো ইরানী রাজনীতিকের। যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুটা চাপে রাখতেই তারা বলে ফেললেন, আক্রান্ত হলে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়া হবে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ একবার ইরানকে উল্লেখ করেছিলেন, শয়তানী শক্তি হিসেবে। এ ক্ষেত্রে ওবামা প্রশাসন খানিকটা নমনীয় হলেও ইরানের ওপর চাপ কিন্তু কমে নি। কয়েক মাস আগে তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, পরমাণু অস্ত্র রয়েছে তেহরানে। তবে ধোপে টেকে নি এটি। প্রমাণ দেখাতে না পেরে, পিছু হটেছে মার্কিনীরা। মাঝে ব্রিটেন বলেছিল, পড়াশুনা শিখে দেশে গিয়ে মিসাইল বানায় আর হ্যাকিং করে ইরানীরা; ইউরোপে তাদের অভিবাসন বন্ধ করা হোক। এরই মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি দূতকে হত্যার ‘ইরানী নীলনকশা’ ফাঁস করে দিলো মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর। তবে উভয় পক্ষ থেকে সংযত মন্তব্য করায় খেই হারায় বিষয়টি। এসবের বিপরীতে ইরানীরা জবাব দিতে পারে নি বলা চলে। সফলতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- মাসখানেক আগে একটি মার্কিন ড্রোনকে ধরাশায়ী করতে পারাটা। ইরানীরা দাবি করে গোপনে ছবি তুলতে এলে তাকে হ্যাক করে মাটিতে নামানো হয়। আমেরিকানরা অবশ্য বলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বিকল হয়ে পড়ে ওটি। অবশ্য মহাকাশে ইরানের স্পাই স্যাটেলাইট আইরিশের বিষয়টি চেপে যান তারা। ড্রোন ভূপতিত করার আনন্দেই হয়তো, হরমুজ বন্ধের অতিউৎসাহী ঘোষণা দিয়েছিল দেশটির সরকার। ওবামাকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্য ছিল সম্ভবত। তবে হুঁমকিতে তিনি না পেলেও বেশ ভীত হন মার্কিন তেল (জ্বালানি) ব্যবসায়ীরা। এর প্রতিফলন দেখা যায় ওয়ালস্ট্রীটে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীগুলোর দরপতনে। বিশ্ব বাজারেও হরমুজ পয়েন্ট দিয়ে আসা তেলের দাম বাড়ে ব্যারেলপ্রতি ২-৩ ডলার। মোট সরবরাহকৃত তেলের ২৫ শতাংশ যায় এখান দিয়ে (যার মধ্যে সিংহভাগ ইরানী তেল রয়েছে)। নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টে তেল প্রবাহ এটিই সর্বাধিক। তবে ইরান সমস্যায় পড়েছে ভিন্ন কারণে। লিবিয়াও অন্যতম বৃহৎ তেল রফতানিকারক দেশ। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট উঠছে দেশটি। দৈনিক তেল উৎপাদনও স্বাভাবিক হয়ে আসছে সেখানে। বিশ্বে প্রতিদিন সরবরাহকৃত তেলের পরিমাণ ৮৫ মিলিয়ন ব্যারেলের মতো। হরমুজ পয়েন্ট হয়ে যায় আনুমানিক ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল। এদিকে ৭ মিলিয়ন ব্যারেলের কাছাকাছি উৎপাদন করছে সংকটপরবর্তী লিবিয়া। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় সেটির দামও কম। এতে বেশি দামের ইরানী তেলের ব্যাপারে খানিকটা আগ্রহ হারিয়েছেন অনেক ক্রেতা। ইউরোপ বা আমেরিকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকলে কী হতো বলা যায় না। তবে এটা স্পষ্ট ভয় দেখাতে গিয়ে বিপদে পড়ে ইরান। হরমুজ দিয়ে তার তেলও তো যায়! মজার বিষয় হলো, এটিকে সুযোগ হিসেবে নেয় আমেরিকা। ইরান তাকে যে ভয়টি দেখাতে চেয়েছিল, সেটিই সে দেখায় ওমান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। আমেরিকানরা এ দেশগুলোকে বোঝা সক্ষম হয়, সত্যিই যদি ইরান হরমুজ বন্ধ করে দেয়- তেল সরবরাহ ব্যাহত হলে এসব দেশের উপায় হবে কী? এ ক্ষেত্রে একটি উপায় ছিল ট্রান্স-অ্যারাবিয়া পাইপলাইন বসানো। কিন্তু তাতে ঝক্কি-ঝামেলা অনেক; সময়ও লাগবে কয়েক বছর। সৌদি আরব, ওমান ও আরব আমিরাত হয়ে (অভ্যন্তরীণ লাইন বাদে) ৭৪১ কিলোমিটার মূল পাইপ স্থাপন করতে হবে লোহিত সাগর পর্যন্ত। কথা হলো, এটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আগে কিছু একটা তো করা দরকার স্বল্পমেয়াদেই। এ দ্বিতীয় পছন্দটা বেশ সহজ। উপসাগরে নিজেদের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধি করলেই হলো। ইরানের হুমিক্তে বেশি ভয় পেয়েছিল বোধকরি আমিরাত। খানিকটা তড়িঘড়ি করেই তারা ৩৫০ কোটি ডলারের একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেও ফেলল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। এরই মধ্যে ভয় দেখাতে গিয়ে মার্কিনীদের উপকার হচ্ছে, বুঝতে পেরে ইরান নতুন করে ঘোষণা দিলো- হরমুজ প্রণালী চালু থাকবে। আমিরাতও বোধকরি নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে এতক্ষণে। অবশ্য কিছু করার নেই এখন। আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিয়ে মাত্র কয়েক শত ব্যালাস্টিক মিসাইল কিনেছে; যেখানে ইরানের শুধু কোস্টাল ডিফেন্স ক্রুজ (সিডিসি) মিসাইলই রয়েছে কয়েক হাজার। আমিরাতের মাথায় রাখা উচিৎ ছিল, যথেষ্ট কারণ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ইরান আক্রমণ করে নি কেন। আসলে এ ক্ষেত্রে আমেরিকানরা ষোড়শ শতাব্দীর একটি ঘটনার কারণেই হয়তো সতর্ক পদক্ষেপ ফেলতে চায়। ওই সময় সমুদ্রের পরাশক্তি একটি পর্তুগীজ নৌবহর হরমুজ প্রণালী হয়ে বন্দর আব্বাস দখল করতে গিয়ে বন্ধী হয় নিজেরাই।

ফাহমিদা ফেরদৌস

Leave a comment