জ্বালানি পরিবহনে ত্রুটিপূর্ণ ট্যাংকার
দ্রুত ব্যবহারোপযোগী করে তোলা হোক
প্রচলিত উপায়টা হলো, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে উড়োজাহাজের জেট ফুয়েল আসবে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। সেখান থেকে সড়কপথে ট্যাংক-লরির মাধ্যমে জ্বালানি পৌঁছানো হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সমস্যা হলো, ব্যয় তো আছেই এভাবে তরল পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে অপচয়ও হয় বেশ। জ্বালানি তেল চুরির ইস্যুটি এখানে আর নতুন করে উত্থাপনের দরকার নেই। সচেতন পাঠক মাত্র জানেন, এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জ্বালানি তেল অবৈধভাবে সংগ্রহ ও বিক্রি হচ্ছে। যাহোক, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) উদ্যোগে জেট ফুয়েল অপচয় রোধ ও এর পরিবহন ব্যয় হ্রাসের উদ্দেশ্যে রেলপথ ব্যবহারের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। সে লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারকও সই হয় ২০১০ সালে এবং ২০১৩ সালে ভারতের ঋণে ৮১টি তেলবাহী ওয়াগন ট্যাংকার (প্রতিটি ৪০ হাজার ৭৫০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন) কেনা হয়। পরিকল্পনা প্রণয়নকালে অনুমিত হয়, ৮১টি ওয়াগনে মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা আয় হবে। সে বিচারে গত ১৯ মাসে রাজস্ব সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়েছে ১৯ কোটি টাকার। কেননা কেনার পর থেকেই পড়ে রয়েছে ওগুলো। রেলওয়ের পক্ষ থেকে তা ব্যবহারের অনুরোধ জানানোর বিপরীতে ট্যাংকারের ত্রুটি মেরামতে উল্টো চিঠি নাকি দিয়েছে তিন জ্বালানি বিপণনকারী কোম্পানি- পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা!
খেয়াল করার মতো বিষয়, রেলওয়ের পক্ষ থেকে একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত থেকে আনা ট্যাংকারগুলো আন্তর্জাতির মান ও নকশা অনুযায়ী প্রস্তুত। এতে তেল চুরি সহজে বন্ধ হওয়ার ভয়েই অপপ্রচার চালাচ্ছেন একশ্রেণীর ব্যক্তিরা। এদিকে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ মূলত কারিগরি। তাদের ভাষ্য হলো, লোডিং পয়েন্ট তেল লোডের হোলের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তদুপরি ম্যানহোল কভারে সিলের ব্যবস্থা নেই; ফলে পথিমধ্যে ঝুঁকি রয়েছে তেল চুরির! সুলক্ষণ যে, উভয় পক্ষই তেল চুরি নিয়ে চিন্তিত। পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এটা বড় নিয়ামক হতে পারে। সেজন্য উভয়ের কাজে অধিকতর সমন্বয় আনা প্রয়োজন। একই উদ্দেশ্যে একে অন্যের প্রতি অভিযোগের আঙুল তোলাও বন্ধ করতে হবে। ট্যাংকারগুলো ত্রুটিমুক্ত নয় বলেই অনেকের অনুমান। সেক্ষেত্রে ওগুলো কোন বিবেচনায় ক্রয় করা হলো, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি দ্রুত মেরামত করে এবং অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে না জড়িয়ে তা যত তাড়াতাড়ি ব্যবহারোপযগী করে তোলা যায় ততই মঙ্গল।
এনার্জি ড্রিংকসে মাদকের উপাদান
রোধে মনোযোগ দিতেই হবে
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এনার্জি ড্রিংকস বিষয়ে যে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে তা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সেখানে একজন সাংসদ তথ্য পরিবেশন করেন যে, বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স নিয়ে বাজারে বিক্রি হওয়া ৮০ শতাংশেরও বেশি এনার্জি ড্রিংকসে রয়েছে মাদকের উপাদান। এক্ষেত্রে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিল্পমন্ত্রী জানান, এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদন বা বাজারজাতে মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ইতিবাচক দিক হলো, এ মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে ঘটনাটিকে সমস্যা বলে মেনেছেন শিল্পমন্ত্রী। আরো খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, স্থানীয় খাদ্য বাজারের এমন পরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয় নি; একে রাতারাতি দূর করাও সম্ভব নয়। তবু সাধারণ ভোক্তাদের পক্ষ থেকে দাবি থাকবে, এনার্জি ড্রিংকস-সহ সব রকম খাদ্য উপাদানে ভেজাল ও ক্ষতিকর উপাদানের সংমিশ্রণ রোধে সদা প্রশাসনিক তৎপরতা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেবে সরকার। অস্বীকার করা যাবে না, বর্তমান শাসনামলে আমাদের কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। এখন মানুষের কাছে পর্যাপ্ত নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দিতে না পারলে কিন্তু বলিষ্ঠ খাদ্য নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি বেমানান।
লক্ষ্যণীয়, খাদ্যে ক্ষতিকর উপাদান মেশানো নিয়ে গত কয়েক মাসে একাধিক আলোচিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বণিক বার্তায়। সেখান থেকে, ‘জুস ও ফ্রুট ড্রিংকস ১০০% ভেজাল!’ শিরোনাম থেকে পরিস্থিতি আঁচ করা সম্ভব। ক্ষতিকর খাদ্য উপাদানগুলো জনস্বাস্থ্যের কেমন ক্ষতি করে আসছে সেটি নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। বহু দুরারোগ্য ব্যাধির জন্ম হতে পারে এখান থেকে। আরো বড় বিষয়, এ ধরনের খাবারে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে বয়স্ক ও শিশুরা। ফলে আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন ইস্যুতে শক্ত অবস্থা নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এমন নয় যে, সেজন্য নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। বরং এক্ষেত্রে প্রয়োগোপযগী একাধিক আইন রয়েছে, যার মধ্যে শুধু নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ কার্যকর করে তোলা গেলেও খাদ্য বাজার বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে অনেকের অভিমত। তবে আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে সমন্বয় আরো বাড়াতে হবে। এসব পদক্ষেপ সুসম্পন্নের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে বর্ধিত উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তবে ক্ষতিকর খাদ্যপণ্য নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক দায়িত্ব সরকারের ওপরই পড়ে। তাই এদিকে তাদের বাড়তি মনোযোগ দিতেই হবে।
অবৈধ ইটভাটার আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি
কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে
পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী গত মৌসুম পর্যন্ত দেশে মোট ইটভাটা ছিল ৫ হাজার ৮৭৯টি। তার মধ্যে প্রায় ৪ হাজারটি চলছে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই। তবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) অনুসন্ধান মতে, স্থানীয় ৬৭ শতাংশ ইটভাটাই চলছে অবৈধভাবে। গতকালের বণিক বার্তায় এ সংক্রান্ত খবরে আরো প্রকাশ, তার মধ্যে অনেকগুলোয়ই আবার ব্যবহার হচ্ছে না নির্ধারিত প্রযুক্তি। তদুপরি বিপুল সংখ্যক ইটভাটা ক্ষতিকর ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট যা কিছু অঞ্চলে ‘বাংলাভাটা’ নামে পরিচিত। অপরিকল্পিত ইটভাটা যে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে, সে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি থেকে নির্গত কাঠ পোড়া কালো ধোঁয়া নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ফুসফুসে। সেসব বিবেচনায়ই পরামর্শ দেয়া হয় পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের। একই উদ্দেশ্যে জ্বালানি হিসেবে নির্ধারিত মাত্রার সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহারেও উৎসাহ দেয়া হয়েছে সময়ে সময়। তার পরও কেন অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। একই সঙ্গে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা চাই। নইলে ইটভাটার দূষণ রোধ করা কঠিন হবে।
ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও ফলের বাগান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ নিয়ম ব্যাপকভাবে ভঙ্গ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেক্ষেত্রে আবাসিক এলাকা পরের কথা কিছু অঞ্চলে আইনের তোয়াক্কা না করে বনের কাছাকাছি স্থাপনা করা হচ্ছে ইটভাটা। ক’দিন আগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন জঙ্গলে ইটভাটা বসানোর খবর রয়েছে এক জাতীয় দৈনিকে। এমন প্রবণতা পুরোপুরি নির্মূল করতে চাইলে এখন যারা অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। খেয়াল করার মতো বিষয়, এগুলো উচ্ছেদে মাঝেমধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে; তাতে দণ্ডও পান একশ্রেণীর ভাটা মালিকরা। তবু তাদের ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করা গেছে বলে মনে হয় না। অথচ এ কাজটিই দ্রুত করা দরকার। সেজন্য ভাটা সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বৃদ্ধিরও প্রয়োজন রয়েছে। অনেকে মনে করেন, মুনাফার প্রতি বেশি ঝোঁক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বিরত রাখছে একশ্রেণীর ভাটামালিককে। অবশ্য এরও আগে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণই প্রত্যাশিত।
শিল্প-কারখানা পরিদর্শন নীতিমালা
শ্রমাধিকার রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তুলুন
দেশের ৪৫টিরও বেশি শিল্প খাতের জন্য আধুনিক ও কার্যকর সমন্বিত শ্রম পরিদর্শন নীতিমালা প্রণয়নে সরকার কর্তৃক গুরুত্ব প্রদানের কথা এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত। সেটির আওতায় সব খাতের জন্য প্ররথক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও জানা যায়। তবে এ আশাবাদ থেকে চলমান বাস্তবতায় কিছু পার্থক্য রয়েছে বৈকি। তার একটি দিক উঠে এসেছে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধ্বসের মতো ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনার পর মূলত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এখন মূলত পোশাক কারখানায় চালু রয়েছে পরিদর্শন। সেদিক থেকে শিল্প খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অনেকাংশে সরকারি নজরদারির বাইরে বলে অভিযোগ। এটি যে কেউ সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? অন্যদিকে নিজস্ব নীতিমালা না থাকায় বিদেশী ক্রেতারাও কিন্তু সুযোগ পাচ্ছেন তাদের মানদণ্ড আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার। স্থানীয় শিল্প-কারখানা তথা শ্রমিক ও মালিকের স্বার্থ সুরক্ষায় এর প্রভাব কেমন পড়বে, তা খতিয়ে দেখার দাবি তোলে বটে।
আমরা নিজেরা যথাযথভাবে কল-কারখানানা পরিদর্শন করতে পারলে অন্য কাউকে করতে দিতে হতো না বলে আমাদের প্রতিবেদকের কাছে মন্তব্য করেছেন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক। এ বক্তব্য প্রতিধ্বনিত করে বলা যায়, অভ্যন্তরীণ পরিদর্শন সক্ষমতা সন্তোষজনক থাকলে বহির্বিশ্বের ক্রেতারাও হয়তো চাপ দিতেন না আর। কথা হলো, সরকারের সামর্থ্যের ঘাটতি এবং শ্রম কল্যাণ নিশ্চিতে একশ্রেণীর মালিকের গাফিলতি অনেক আগে থেকেই আলোচিত। তা সত্ত্বেও পরিদর্শন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দৃষ্টি না দেয়াটা দুঃখজনক। তবু সুখবর হলো, এক্ষেত্রে সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের খবর। খসড়াটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় প্রস্তুত হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পরই তা গৃহীত হবে বলে আশ্বাস পেয়েছি আমরা। প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। কেননা এর ধারাবাহিকতায় ইনস্পেকশন ম্যানুয়াল তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো সম্পন্ন করতে হবে। সুতরাং নীতিমালা সুষ্ঠুভাবে কার্যকরের স্বার্থেও হাতে পর্যাপ্ত সময় রাখা জরুরি। কাজটি সুসম্পন্ন হলে বিদ্যমান আইনের আরো দক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করা সহজ হবে। পাশাপাশি অনেকের প্রত্যাশা হলো, শিল্প-কারখানায় শ্রম অধিকার রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখুক আলোচ্য নীতিমালা। ওমন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেলে কিন্তু আইনের বাস্তবায়নও সহজ হবে বেশ।
কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা
রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার অবসান কাম্য
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব নিয়ে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ খবরটি এরই মধ্যে অনেকের নজরে এসে থাকবে। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ব্যবসায় মন্দা বিরাজ করায় ঠিকমতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। পরিসংখ্যানও বলে একই কথা। একাধিক ব্যাংকের তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের বৃদ্ধি। তার সঙ্গে কমে এসেছে নতুন ঋণ আবেদনকারীর সংখ্যা; এমনকি ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন পাওয়ার পরও ঋণ গ্রহণ করছেন না উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক। খেয়াল করার মতো বিষয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৌসুমী ব্যবসা। আবার সামনে পয়লা বৈশাখের মতো বৃহৎ সামাজিক উৎসব। এটি ঘিরে প্রতিবারই বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন বুটিক, কারুশিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা। উৎসব উপলক্ষ্যে বাড়তি ঋণ নিতে দেখা যায় তাদের। এবার তাদের অনেকেই উৎসাহহীন। নিকট অতীতে সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হলেও কিন্তু তা বর্তমানের মতো নির্বিচার ছিল না। আর এখনকার পরিস্থিতি সে তুলনায় ব্যতিক্রম। এ অবস্থায় দেশ ও অর্থনীতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে- সে আশাবাদ ব্যক্ত করা ছাড়া উপায় কী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের।
লক্ষ্যণীয়, ব্যবসায়ীরা শুধু ঋণের কিস্তি পরিশোধেই ব্যর্থ হচ্ছেন না, অনেকেই হারাচ্ছেন পুঁজি। লোকসান পোষাতে কেউ কেউ কমিয়ে দিচ্ছেন উৎপাদন। তাতে সমাজে বেকারত্ব বাড়ছে বৈ কমছে না। এতে স্বভাবতই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠছে মেয়াদি ঋণের বেলায় শ্রেণি বিন্যস্ত না করে পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ প্রদানের জন্য- বড় ঋণ গ্রহীতাদের মতো। কিছু ব্যবসায়ী নাকি বলছেন নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের কথাও। সেসব যুক্তি অস্বীকারের প্রশ্ন না তুলেও বলা যায় এভাবে প্রণোদনা দিয়ে দিয়ে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক পথে ফেরানো কঠিন। ফলে ইস্যুটির একটি রাজনৈতিক সমাধান হওয়া শ্রেয় এবং তা দ্রুতই। চলতি বছর এসএমই খাতে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। চলতি অবস্থার ধারবাহিকতায় সেটি অর্জনে বেগ পেতে হবে বলে অনেকের শঙ্কা। অন্যদিকে অচিরেই পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) কারিগরি-প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আনুমানিক সাড়ে চার লাখ কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা প্রদানের কথা। পরিস্থিতির উন্নতি ছাড়া ওসব উন্নয়ন কর্মসূচি থেলে কাঙ্ক্ষিত ফলের প্রত্যাশা করা কঠিন।
তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মপরিবেশ
পরিস্থিতি উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ভাবনাই হোক বিবেচ্য
গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক খবরে দেখা যাচ্ছে, পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রম পরিস্থিতি উন্নয়নে সংশোধনমূলক কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ইউরোপীয় অ্যাকর্ড বা উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্স- কেউই। আমাদের প্রতিবেদক আরো জানাচ্ছেন, নির্ধারিত সময়ে উক্ত কার্যক্রম সম্পন্ন না হলে জোটের অন্তর্ভুক্ত ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের কারখানা মালিকদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছেদ করতে পারে বলে ইঙ্গিত মেলে, যা কারো কাম্য হতে পারে না। ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন। উল্লেখ্য, অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের পরিদর্শন আওতায় রয়েছে আনুমানিক ১ হাজার ৭০০ পোশাক কারখানা। তার মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ কারখানার বিস্তারিত প্রকৌশল মূল্যায়ন (ডিইএ) এখনো অসম্পন্ন। সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, নির্ধারিত সময়ে এগুলোর সংস্কার সম্পন্ন হবে না। এ অনুমানের বিরুদ্ধে পরিসংখ্যান তুলে ধরা কঠিন। কেননা দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক মূল্যায়ন শেষে যেসব তৈরি পোশাক কারখানায় সংশোধনমূলক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি গত নয় মাসে ১ থেকে ২০ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে বণিক বার্তাকে দেয়া বিজিএমইএ’র সহসভাপতির বক্তব্য মাথায় রাখা উচিৎ, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাই দ্রুত কারখানার ত্রুটি সংশোধন।
খেয়াল করার মতো বিষয়, সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহায়তায় অ্যাকর্ডের পাশাপাশি আড়াইশ’ কোটি টাকারও বেশি ঋণ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে অ্যালায়েন্স। এ থেকে সংশোধনমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ক্রেতাদের সিরিয়াসনেস প্রকাশ পায়। তার বিপরীতে ওই চিত্রটাও দ্রষ্টব্য যে, সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়- সে অজুহাতে কিছু কারখানার ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছেন কয়েকজন ক্রেতা। এখানে সব পক্ষের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝির শঙ্কাও আবার একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দেশ, শ্রমিক তথা ব্যবসার স্বার্থে কর্মসূচিটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। একাধিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, কারখানায় অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও স্থান বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনো পর্যাপ্তভাবে উপযুক্ত কর্মসূচি গৃহীত হচ্ছে না। এর অন্তর্নিহিত কারণ অনেকের বিস্ময়ের উদ্রেক করবে বৈকি। কেননা স্থানীয় প্রেক্ষাপটে সঠিক নকশায় কারখানা নির্মাণের ইস্যুটি সহজে বোধগম্য; কিন্তু এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ প্রবাহের ওভারলোড-সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ঝুঁকি দূরীকরণে একশ্রেণীর মালিক নির্দেশিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তার কারণ উদ্ঘাটন কঠিন। আবার৪ আলোচ্য শঙ্কা দূরীকরণে এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণও জরুরি।
জুস-কোমলপানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত এসিড!
নিয়ন্ত্রণে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা কাম্য
ব্রোমিনেটেড ভেজিটেবল অয়েল (বিভিও) ‘নিরাপদ খাদ্য উপাদান’ তালিকা থেকে বাদ পড়ে ১৯৭০ সালেই। অবশ্য কোমল পানীয় তৈরিতে এর ১৫ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) মাত্রা পর্যন্ত ব্যবহার করা যেত। পরবর্তীতে এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কিনা তা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা যায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। আর অবস্থাদৃষ্টে এ বিতর্কিত উপাদান বাদ দেয়ারই সিদ্ধান্ত নেয় কোকাকোলা ও পেপসি। কয়েক মাস আগে এ খবর ছাপা হয়েছে বণিক বার্তাতেই। অভিযোগ মেলে, এ দেশে ব্যবসারত অনেক কোম্পানিরই ভোক্তার প্রতি অতটা প্রতিশ্রুতি নেই যে তারা নিজ থেকে কোমলপানীয়তে সম্ভাব্য ক্ষতিকর উপাদানের মিশ্রণ রোধে আগাম ব্যবস্থা নেবেন। বরং কিছু ক্ষেত্রে এমনো দেখা যায় যে, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কর্তৃক হুঁশিয়ারি জানানো সত্ত্বেও নেয়া হচ্ছে না ব্যবস্থা। তেমনই আরেক প্রতিবেদন রয়েছে গতকাল প্রকাশিত বণিক বার্তায়। সেখানে বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক সাম্প্রতিক গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়েছে যে, স্থানীয় বাজারে বিদ্যমান সব কোমলপানীয়, জুস, এনার্জি ড্রিংকসে পিএইচ মাত্রা লক্ষ্যণীয়ভাবে কম। তার মানে এসব পানীয়তে অতিরিক্ত এসিডের উপস্থিতি বিদ্যমান। সব বয়সীরা ওসব পণ্যের ক্রেতা হলেও তরুণ ও যুবকরাই এর প্রধান ভোক্তা। পানীয়তে এসিডের উপস্থিতি বাড়ায় এদের দাঁতের সমস্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়ানি নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে নিঃসন্দেহে। এমন পরিস্থিতিতে কোমলও পানীয়, জুস ও এনার্জি ড্রিংকসে সঠিক মাত্রায় এসিড লেভেল বজায় রাখতে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকাই প্রত্যাশা করবেন সবাই।
আমাদের দেশের ভোক্তারা তেমন সচেতন নন, সংগঠিত নন- সেসব পুরনো কথা। সেজন্য পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। কথা হলো, কোমল পানীয়তে এসিডের মতো কৃত্রিম রাসায়নিক উপাদান সহনীয় মাত্রায় বজার থাকছে কিনা, সেটি ভোক্তাদের পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে কর্তৃপক্ষকেই। আর এখানেই নিয়ন্ত্রণগত দুর্বলতা প্রতিভাত হয় মাঝে মধ্যে। অথচ চলমান পরিস্থিতিতে এক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই কোনোক্রমেই। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ক্রমে বড় হচ্ছে। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে কোমল পানীয়, জুস ও এনার্জি ড্রিংকসের বাজার। দুর্ভাগ্যজনক হবে, যদি এখনই বাজারটিকে সুনিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ না নেয়া হয়। তাতে দেশী বাজারে ভোক্তার আস্থা তো কমবে, বাড়তি জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হবে এবং একই সঙ্গে কমবে রফতানি সম্ভাবনা। ফলে ব্যবস্থা নিতে দেরী নয়।
দূষণকারী চিহ্নিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান
আইন বাস্তবায়নে দেরি নয়
‘৭ শতাধিক শিল্প কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই’ শিরোনামে গতকাল বণিক বার্তায় ছাপা খবরটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক প্রকাশিত ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত শিল্পকারখানাগুলোয় বর্জ্য শোধনাগারও (ইটিপি) নেই। এখানে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করার মতো। প্রথমত. দূষণকারী অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য দেখা যাচ্ছে ঢাকা বিভাগ এবং সর্বনিম্নে রয়েছে খুলনা। দ্বিতীয়ত. ওসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই বস্ত্রখাত সংশ্লিষ্ট; তার পাশে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্যানারি। তৃতীয়ত. কয়েকটি খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে তালিকায়। এসবের মধ্যে বেশিরভাগেরই নেই পরিবেশগত ছাড়পত্র। কতগুলোর ছাড়পত্র থাকলেও মেয়াদ নেই। সিংহভাগ শিল্পকারখানায় দেখা যাচ্ছে না ইটিপি। যে কয়জনেরওবা রয়েছে তাদের কেউ কেউ আবার ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বন্ধ রাখেন ইটিপি। বিভিন্ন শিল্প বর্জ্য সরাসরি নদীতে চালান করে দিচ্ছেন এরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের অবস্থান এখন আর শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে নয় বলে কারো কারো ধারণা। ফলে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। তারা যেন দায়িত্বশীল আচরণ করেন, সেটা নিশ্চিতের দায়িত্ব অবশ্য সরকারেরই।
জানা যায়, অর্থ আইন, ২০১৪-এর ৬৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী- পরিবেশে দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাংলাদেশে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্যের ওপর মূল্যভিত্তিক ১ শতাংশ হারে পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আরোপ করা হবে। আলোচ্য তালিকা সেটি চূড়ান্তকরণেরই অংশমাত্র। তবে স্বাভাবিকভাবেই কোনো প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করলে তার নাম বাদ পড়ব ওই কালো তালিকা থেকে। এর অন্যথা হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে দেরি করবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। পরিবেশ অধিদফতর থেকে এনবিআরে পাঠানো তালিকাটি নাকি সংশোধন হয়েছে একবার। এ থেকে সহজে অনুমেয়, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সিংহভাগই মারত্মক পরিবেশ দূষণকারী। ফলে তালিকা অনুযায়ী অর্থ আইন বাস্তবায়নে দেরি হলে বা আইন অমান্যকারী কেউ সারচার্জ থেকে রেহাই পেয়ে গেলে তা অন্যদের সামনে মন্দ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এমনিতেই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তদুপরি আইন বাস্তবায়নে দুর্বলতা বাড়তি দায় হয়ে দেখা দিতে পারে। তাছাড়া পরিবেশ সুরক্ষা বিধিমালা সংশোধনপূর্বক দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ক্রমে অন্যরাও সারচার্জের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও এক্ষেত্রে সরকারের জোরালো ভূমিকাই দেখতে চাইবেন সবাই।
কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা
কঠোর নজরদারিতে রাখুন কৃষি উপকরণের বাজারকে
জানা যায়, বৈশ্বিক বীজের বাজার যেখানে প্রতি বছর সম্প্রসারিত হচ্ছে গড়ে ১৩ শতাংশ হারে সেখানে বাংলাদেশের বেলায় সংখ্যাটি আনুমানিক ১০। এদিকে আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়ছে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। ইদানীং আবার দৃষ্টি দিতে হচ্ছে কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংক্রান্ত প্রভাবের ওপরও। বলা বাহুল্য, উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদন ও বিপণন এ সমীকরণের বাইরে নয়। সেক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএ) দেয়া তথ্যটি উল্লেখ্য যে, সারা দেশে কমবেশি সব ফসল মিলিয়ে বীজের বার্ষিক চাহিদা মোটামুটি সাড়ে ১১ লাখ টন। তার মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী আলু ও ধানের পরই রয়েছে অন্যান্য ফসল। সমস্যা হলো, মাত্র দেড় লাখ টন বীজ সরবরাহ করতে পারে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। বাকিটা আসে ১৭৬টি প্রতিষ্ঠিত ও সনদপ্রাপ্ত কোম্পানি। তদুপরি জটিলতা হলো, চাহিদার বেশিরভাগ বীজের উৎপাদন ও বিপণনের উৎস অপ্রাতিষ্ঠানিক। উপযুক্ত বীজ পর্যাপ্তভাবে কৃষকের কাছে সরবরাহের এ দুর্বলতা কীভাবে দেশের কৃষি সাফল্য ম্লাণ করে দিতে চাইছে তার এক খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। সেখানে দেখা যায়, দেশজুড়েই কৃষি উপকরণের বাজারে বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের বীজ, সার ও কীটনাশক। আর নজরদারির অভাবে এসব কিনে ব্যাপকভাবে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষক। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি উপকরণ বাজারের ওপর কর্তৃপক্ষ কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে দ্রুত উদ্যোগী হয়েছে, তেমনটাই দেখতে চাইবেন সবাই। এর হাত থেকে কৃষককে রক্ষায় কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না, সে কথা বলা যাবে না। প্রশাসনের সহায়তায় বিভিন্ন বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা শোনা যায় মাঝে মধ্যেই। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর সেসব প্রচেষ্টাও যথেষ্ট নয় বলে প্রতীয়মান।
কেবল বীজ নয়, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সারের সঙ্গে লবণ, মাটি, ইটের গুঁড়া প্রভৃতি মিশ্রিত করে বিক্রি করছেন বাজারে। কথিত ‘চায়না’ সার ক্রয়ে কৃষকের ঠকার কথা জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক। কীটনাশক বিষ বলেই কিনা কে জানে, এক্ষেত্রে প্রতারণার মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে মনে হয়। তবে আরো মারাত্মক একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর এমন চিন্তাভাবনা, প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কীটনাশকে মুনাফার সুযোগ কম, ফলে ভেজাল কীটনাশকই বিক্রি করা শ্রেয়। খেয়াল করার মতো বিষয়, অনেক কৃষকই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উপকরণ ক্রয় করে থাকেন বাকিতে। এতে করে ওই বিক্রেতার সঙ্গে স্বভাবতই হ্রাস পায় তার দর কষাকষি ক্ষমতা। অপ্রাতিষ্ঠানিক বাজারটি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে এসব ইস্যুর দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে বৈকি। শুধুমাত্র ভেজাল, বীজ, সার ও কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে তাই নয়, কিছু ভূয়া কোম্পানি সেসব বিক্রি করছে অবৈধভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে। কৃষি উপকরণের বাজারে দুর্বল নজরদারির কারণ হিসেবে অনেকে দায়ী করছেন জনবলের অভাবকে। সেটি বড় প্রতিবন্ধকতা সন্দেহ নেই। তা কাটিয়ে ওঠার জোরালো প্রচেষ্টাও কিন্তু দৃশ্যমান নয়। কৃষকের স্বার্থে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সক্রিয়তা বাড়াবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এ ধরনের ঘটনা এখনই সুনিয়ন্ত্রণে না গেলে পরবর্তীতে তা বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ভোক্তার অধিকার
নিশ্চিতের প্রাথমিক দায় সরকারের
‘স্বাস্থ্যকর খাদ্য ভোক্তার অধিকার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি গতকাল বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এটি এমন সময়ে উদযাপিত হলো, যখন দেশের ৪০ শতাংশেরও বেশি খাদ্য ভেজালযুক্ত বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলেটিন। অনেকের শঙ্কা, পরিমাণটি আরো বেশি। কার্যত সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উদঘাটিত নানা ঘটনা বিবেচনায় শঙ্কিত ভোক্তার অভিযোগকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। প্যাকেটজাত পণ্য থেকে বাজারের আম-জাম-মাছ কীসে মেলে নি বা মিলছে না ফরমালিন? আখের গুঁড়ে হাইড্রোজের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানোর খবর এখনো বিরল। আবার মুড়ি ভাজতে ইউরিয়া ব্যবহারও ব্যতিক্রমে পরিণত হয় নি। কয়েক মাস আগে দেশের নামকরা এক কোম্পানির মশলার চালান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়। কোনো কোনো কোম্পানির ভগ্যপণ্য বিশেষত গুঁড়া মরিচে ইটের গুঁড়া মেশানোর বিষয়টি কিন্তু আজ আর নিছক অভিযোগ নয়। খেয়াল করার মতো বিষয়, স্বাস্থ্যকর খাদ্য দূরের কথা সাধারণ ভোগ্যপণ্য কিনতে গিয়েই নানা পর্যায়ে নাজেহাল হচ্ছেন আমাদের দেশের ভোক্তারা। ফলে অনেককে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে কেবল দাম নিয়েই, তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় যেন মান নিশ্চিতকরণের ইস্যু!
অগ্রসর ও উন্নয়নশীল অনেক দেশই নিজেদের মতো করে ভোক্তার অধিকার সুরক্ষায় দৃষ্টি দিয়েছে এমন বিবেচনা থেকেও যে, সব নাগরিকই কোনো না কোনোভাবে ভোক্তা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হলো, এখানে বিষয়টি যেহেতু দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল, সুতরাং এখন তাতে প্রত্যাশিত ফল লাভ করতে চাইলে বাড়তি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন এবং সেটি কেবল ভোক্তা সচেতনতা বাড়িয়ে নিশ্চিত করা যাবে না। ভোক্তা সচেতনতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু লক্ষ্যণীয়, তথ্য জানার অধিকার ভোক্তার অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম- একমাত্র নয়। এদিকে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। সেজন্য লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রতিযোগিতামূলক দামে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর খাবারের সরবরাহ বজায় থাকে; পণ্য তো বটেই সেগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়াও যেন পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর না হয়। সাধারণ বাংলাদেশী ভোক্তাদের পক্ষে মানসম্পন্ন পণ্য বাছাই ক্রমে কঠিন হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। অস্বীকার করা যাবে না, কিছু ক্ষেত্রে ভোক্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায় কর্তৃপক্ষকে। তবু সেসব যথেষ্ট নয় বলে প্রতীয়মান। এক্ষেত্রে কার্যকর সুফল পেতে বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার। বিষয়টি নীতিনির্ধারকরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।
বিমসটেকে অভিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনে সমঝোতা
দ্রুত বাস্তবায়নে জোর দিন
ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করা বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) সক্রিয় রয়েছে ১৯৯৭ সাল থেকে। এ সময়ের মধ্যে তার কোনো অর্জন নেই, সে কথা বলা যাবে না। আবার এও অনস্বীকার্য, সম্ভাবনা অনুযায়ী এ থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। তেমন প্রেক্ষাপটে একটি সুখবর অবশ্য এসেছে গতকালের পত্রপত্রিকায়। সেটি হলো, সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তঃবিদ্যুৎ বিনিময় ও উন্নয়ন বিষয়ক টাস্কফোর্সের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত-দেশীয় এ জোটের সদস্যদের মধ্যে অভিন্ন সঞ্চালন লাইনের সংযোগ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়া। এতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের নীতিমালা ও নির্ধারিত সময়সীমার পথনকশা। সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বিদ্যুৎ বিনিময়ের জন্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কারিগরি সহযোগিতা। খেয়াল করার মতো বিষয়, বিমসটেকভুক্ত একাধিক দেশের রয়েছে সস্তা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা। উদাহরণ হিসেবে ভারতের দেড় লাখ, মিয়ানমার ৪০ হাজার এবং নেপাল ও ভুটান প্রত্যেকে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা বলা যায়। এর বিপরীতে বাংলাদেশসহ একাধিক দেশ রয়েছে বিদ্যুৎ ঘাটতিতে। সৌরবিদ্যুৎ, পরমাণুবিদ্যুৎসহ নানা প্রযুক্তির ওপর আমাদের নজর বেড়েছে বটে। তবে দীর্ঘমেয়াদে শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব সস্তা জলবিদ্যুৎ ভিন্ন পালন করা কঠিন। সে লক্ষ্যে সম্প্রতি সামনে আসা সমঝোতা স্মারক ধরে ধারাবাহিক অগ্রগতি বাস্তবিকই দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম। ফলে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তারা বিমসটেক অভিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দ্রুত স্থাপনে এবং তা চালু করার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেবেন।
বিদ্যুৎ বাণিজ্য সমঝোতার খুঁটিনাটি নিয়ে অনেক সময় নানা প্রশ্ন তৈরি হয় জনমনে। সেদিক থেকে আলোচ্য স্মারক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ কম বলেই ধারণা কারো কারো। তাদের যুক্তি হলো, আইনগত দিক থেকে সমঝোতাটি অনেকটা ২০১৪ সালের নভেম্বরে কাঠমান্ডুতে সাক্ষরিত সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কোঅপারেশন-এর মতো। তবু সম্ভাব্য মতোবিরোধ এড়িয়ে চলাই ভালো। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, সদস্যদের ভেতর একমাত্র মিয়ানমারের ভিন্ন অবস্থান দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে। তারা নাকি বলছে, সমঝোতার মূল বিষয় নিতে তাদের আপত্তি নেই। তবু অভ্যন্তরীণ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারবে তারা। নিঃসন্দেহে এ ধরনের স্বাধীনতা রয়েছে তাদের। কিন্তু মাথায় রাখা দরকার, ডজনের অধিক অগ্রাধিকার খাতের ওপর ফোকাস করে এগোচ্ছে বিমসটেক আর এর শক্তি-জ্বালানি খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে মিয়ানমার। ফলে আলোচ্য উদ্যোগের শেষ পর্যন্ত অন্যান্যদের পাশাপাশি মিয়ানমারের সক্রিয় সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। উদ্দেশ্য পূরণে যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণেও দৃষ্টি থাকা চাই। কয়েক মাস আগে জাতীয় গ্রীড বিপর্যয়ে দেশজুড়ে টানা কয়েক ঘণ্টার বিদ্যুৎ সংকট দেখেছি আমরা। একই ধরনের ত্রুটি আন্তঃসীমান্ত গ্রীডের বেলায় ঘটলে কিন্তু তার প্রভাব হবে আরো বিস্তারিত। তাছাড়া অনেকে মনে করেন, উক্ত সমঝোতা চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপ যতই দৃশ্যমান হবে ততই ত্বরান্বিত হবে সার্ক রূপরেখা চুক্তি। ফলে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে যথেষ্ট যত্নবান হবেন, এমনটাই কাম্য।
মেট্রোরেলে গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল
বিস্তারিত নকশা ছাড়াই দরপত্র!
আলোচিত মেট্রোরেল প্রকল্পে নকশা চূড়ান্তের আগেই রেললাইন নির্মাণে দরপত্র আহ্বানের যে কথা প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, সেটি সচেতন পাঠককে ভাবিত না করে পারে না। তবে এক্ষেত্রে প্রকল্পে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ খুবই কম। বরং এটা হতে পারে যে সার্বিক নির্মাণকাল কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই তারা জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজগুলো সেরে ফেলতে চাইছেন। নিঃসন্দেহে সেসব কাজ আগে থেকে সম্পন্ন করা হলে মূল অংশ বাস্তবায়নে সময় অপচয় রোধ হবে। কথা হলো, বিস্তারিত নকশা ব্যতীত দরপত্র আহ্বান জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে তা অগ্রাহ্য করা কিন্তু কঠিন। খেয়াল করার মতো বিষয়, মেট্রোরেল প্রকল্পের আওতাধীন ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার রেললাইনের গোটাটাই থাকবে উড়ালপথে। জানা যায়, এরই মধ্যে উল্লিখিত রুটের প্রায় অর্ধেক পথের নমুনা মাটি সংগ্রহিত হয়েছে। সেসব প্রতিটি নমুনা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফল বিশ্লেষণপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে সময়ে লাগবে কয়েক মাস। আবার সয়েল টেস্টের প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে প্রকল্প ব্যয় অনুমান করা সহজ নয়। ফলে উক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই সঙ্গত। কেননা এর সঙ্গে সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রশ্নটি চলে আসে অবধারিতভাবে। তার সঙ্গে আরেকটি বিষয় চিন্তা করা দরকার। সেটি হলো, রাজধানীতে ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরস্থ নানা পরিষেবার লাইন রয়েছে। সেগুলো সুসমন্বিতভাবে সম্পন্ন হয়েছে তেমন কথাও বলা যাবে। এক্ষেত্রে মগবাজার ফ্লাইওভার প্রকল্পটিই দৃষ্টান্ত হিসেবে যথেষ্ট। ভূগর্ভস্থ নানা পরিষেবা লাইনের জন্য এর ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) নির্মাণে বেশ ঝামেলা সৃষ্টি হয়। তাতে নির্মাণ ব্যয় বাড়ে, নির্মাণ চলাকালে বিকল্প পথে মারাত্মক যানজট সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত নকশায় পরিবর্তন আনা হয় বলেও খবরে প্রকাশ। একই ঘটনা মেট্রোরেলের বেলায় যেন না ঘটতে পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষের সতর্ক দৃষ্টিই প্রত্যাশিত।
লক্ষ্যণীয়, রাজধানীর জনসংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। এক বিদেশী গবেষণা সংস্থার মতে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা আড়াই কোটি মানুষের মহানগরে পরিণত হবে বলে অনুমান। ওই অবস্থায় যে চাপ সৃষ্টি হবে তা সুপরিকল্পনা ছাড়া মেটানো কঠিন। উপরন্তু তা মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্প বাদ দিয়ে সম্ভবও নয়। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োচিত বটে। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের সামর্থ্যও উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয়। মেট্রোরেল বাস্তবায়নে বিরাট ভূমিকা পালন করছে বিদেশী সহায়তা। এদিকে সেখানে সরকারের অবদান কম থাকছে না অর্থাৎ রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ইস্যুটি এড়িয়ে চলা যাবে না। হতে পারে, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের বেলায় বাজেট পরিকল্পনার বাইরে চাপ এলেও সেটি সামাল দেয়া সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে কি ছোট-খাট উন্নয়ন বাজেটকে ছাড় দিতে হবে না? সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিস্তারিত নকশা পাওয়ার আগেই দরপত্র আহ্বান করা হলে প্রকল্প ব্যয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি আমলে নেবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি
লাভ-ক্ষতির হিসাব দ্রুত সম্পন্ন হোক
বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা এফটিএ) হোক, তা অনেক দিন ধরেই চাইছে মালয়েশিয়া। এ উদ্দেশ্যে তারা প্রস্তাবও দেয় ২০১২ সালে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশটি সফরে গেলে তাদের প্রধানমন্ত্রী আবারো আহ্বান জানান। তাতে ইতিবাচকভাবেই সাড়া দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এর পর চলতি বছর জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক মন্ত্রী একই ইস্যুর ওপর জোর দিলেন ঢাকা সফরে এসেছে। সমস্যা হলো, এ দীর্ঘ সময়েও এফটিএ সই হলে বাংলাদেশের কী লাভ বা লোকসান তার হিসাব কষতে পারেন নি আমাদের কর্মকর্তারা। ফলে আসছে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কমিশনের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, সেটি স্থগিত হয়েছে বলে গতকালের বণিক বার্তার খবর। খেয়াল করার মতো বিষয়, আলোচ্য চুক্তি সই হলে বাংলাদেশের কেমন ক্ষতি হবে, তাতে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আনা যাবে কিনা বা সেখানে জনশক্তি রফতানির সুযোগ বাড়বে কিনা সেসব বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট জবাবা নেই ট্যারিফ কমিশনের কাছে। এদিকে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক ৩০০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে তাদের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতিও রয়েছে আমাদের। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সঙ্গে আমাদের এফটিএ সংক্রান্ত প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেয়া দরকার বৈকি। কেননা উক্ত বৈঠক বাতিল হয় নি এবং সেখানে চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে না বলে চূড়ান্ত মত দেয়া যাবে না। এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্নও যুক্ত।
লক্ষ্যণীয়, মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ’র সঙ্গে অবধারিতভাবে চলে আসছে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধির ইস্যু। দেশটি বাংলাদেশী জনশক্তির অন্যতম বৈদেশিক গন্তব্য। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ আমাদের এফডিআই (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) আকর্ষণেও সহায়তা জোগাবে বলে কারো কারো ধারণা। তাছাড়া কার্যকর এফটিএ দু’পক্ষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরই গতিময়তা বাড়াবে। দৃষ্টি রাখতে হবে, এফটিএ সই হলে দেশটির বাজারে আমাদের পণ্য রফতানি বাজার কেমনটা বাড়বে; অর্থনীতির কোন কোন খাতে তাদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। সেটি অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনে কোনো ভূমিকা রাখবে কিনা কিংবা সংরক্ষিত অভ্যন্তরীণ খাতের ওপর চুক্তির প্রভাব কেমন হবে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য হলো, আমাদের রফতানিমুখী খাতগুলোর প্রতিযোগিতাসক্ষমতা বৃদ্ধি। ফলে দ্রুতই প্রস্তুতি সুসম্পন্নপূর্বক মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ চুক্তি বিষয়ে অগ্রসর হওয়াটাই এখন প্রত্যাশিত।
নতুন এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
পোলট্রি ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিন
‘এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত ১০% পোলট্রি খামার’ শিরোনামে যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায় তা আমাদের চিন্তিত না করে পারে না। কেননা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা অত্যন্ত সংক্রামক। খামার থেকে খামার তো ছাড়, এক দেশ থেকে অন্যদেশে পরিবাহিত হতে বেশি সময় লাগে না এর। বাড়তি সমস্যা হলো, এই সাবটাইপ তথা এইচ৯এন২-তে আক্রান্ত হলে খামার নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। আক্রান্ত মুরগি সাধারণত ডিম কম দেয় এবং তা নরম খোসাযুক্ত হয়। এ ভাইরাসে আক্রান্তের অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে পালক উসকোখুসকো হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, অবসাদগ্রস্ততা প্রভৃতি। সমস্যা হলো, এসিওব লক্ষণ দেখে অনেক সময় খামারিরা ধরেই নেন পরিচর্যার ঘাটতি হচ্ছে। ইত্যবসরে ছড়াতে থাকে ভাইরাসটি যা মানবদেহে ব্যাপক ক্ষতিসাধনে সক্ষম। এদিকে বাংলাদেশের পোলট্রি খামারে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা শনাক্তের পর শুধুমাত্র এইচ৫এন১ প্রতিরোধে উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ফ্লু’টির বাকি তিন সাবটাইপ নিয়ে এমনকি গবেষণাও হয় নি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) পরিচালিত গবেষণায় উঠে আসে বিষয়টি। এমন পরিস্থিতিতে এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে মহামারীর আশঙ্কা রয়েছে বলে মত দিয়েছে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)। কর্তৃপক্ষ সতর্কবার্তাটি যথাযথভাবে আমলে নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
খেয়াল করার মতো বশীহয়, ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে অর্ধলক্ষাধিক পোলট্রি খামার বন্ধ হয়েছে এ ভাইরাসের প্রকোপে; বিনষ্ট করা হয়েছে লাখ লাখ ডিম ও মুরগি। এতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা প্রতি সাতজনে এক। সে সময় সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনোমদন দেয়। এছাড়া আরেকটি প্রকল্প চালু হয়, যাতে রোগ চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি খামারিদের আর্থিক ক্ষতিপূরণে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। বর্তমান অবস্থা তার চেয়ে ভালো, সে কথা বলা যাবে না। প্রথমত. এ ভাইরাস সাবটাইপ বিষয়ে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা কম বলে প্রতীয়মান। ফলে ভ্যাকসিন তৈরিসব প্রতিরোধমূলক অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে সময় অতিরিক্ত সময় লাগবে। দ্বিতীয়ত. সাম্প্রতিক নজিরবিহীন হরতাল-অবরোধে শুরু থেকেই সহিংসতার টার্গেট হয়েছে আমাদের পোলট্রি শিল্প। এমন প্রেক্ষাপটে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন ঝুঁকি থেকে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের রক্ষায় সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে দেরি করবে না, তা-ই সবার প্রত্যাশা।
অভিন্ন সফটওয়্যারের আওতায় বীমা খাত
সুফল নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর
স্থানীয় বীমা খাতে একশ্রেণীর করিৎকর্মা লোকের হদিস পত্রপত্রিকা মারফৎ ঠিকই জেনে যান সচেতন পাঠক। যারা সে খবর রাখেন না, তাদের জন্য কৌতূহলোদ্দীপক কিছু খবর রয়েছে বৈকি গতকালের বণিক বার্তায়। সেখানে আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন দেশী বীমা ব্যবসার দুরবস্থার কথা। অবশ্য কোনো প্রতিযোগিতায় যখন নিয়ম অমান্যপূর্বক অস্বাভাবিক কমিশনের চল শুরু হয়ে যায়, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তদুপরি সমস্যা এক নয়, বহুবিধ। বীমা ব্যবসাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ নতুন নয়। খাতটিতে শোনা যায় প্রিমিয়াম সংগ্রহ চুক্তিনামার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি প্রভৃতি অনিয়ম তো থাকছেই পাশাপাশি। তবে বীমা খাতের একশ্রেণীর প্রথম সারির কর্মকর্তার অপকীর্তি বোধকরি ব্যক্তিগত নৈতিকতার সব সীমা অতিক্রম করে যায়। অনেক এমডি কোম্পানি পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে একাডেমিক কৃতিত্ব দেখিয়ে চলেছেন, তার তুলনা পাওয়া ভার। কিছু দিন আগে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) এক ভাইভা বোর্ডের সামনে প্রকৃত সনদ দেখাতে পারেন নি একাধিক বীমা কোম্পানির এমডি। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা নিয়ে জালিয়াতি নাকি হরহামেশাই হয়। এসব সমস্যার সূত্র মেলে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দুর্বল নজরদারির মধ্যে। সেজন্য তাদের দক্ষ জনবলের ঘাটতিকে দায়ী করবেন অনেকে। এত কিছুর মধ্যে সুখবর হলো, আমাদের বীমা খাত অভিন্ন সফটওয়ারের আওতায় আসছে। তবে এর সাফল্য কিন্তু নির্ভর করবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সফলতার ওপর। সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি রয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।
বীমা খাতে সুশাসনের সঙ্গে ভোক্তাকল্যাণ প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। সেখানে অভিন্ন সফটওয়্যার চালু হলে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে নিঃসন্দেহে। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণপূর্বক বীমা কোম্পানিগুলো কর্তৃক নির্ধারিত ব্যয় সীমা অতিক্রম নাকি চিহ্নিত করেছে আইডিআরএ। সেখানে লাগামহীনভাবে ব্যয়ের ঘটনাও রয়েছে কোনো কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে। ওই ধরনের বেপরোয়া আচরণ ঠেকাতে অভিন্ন সফটওয়্যার বেশ সহায়ক হবে। আবার মাঝেমধ্যে এমনটি ঘটে যে, একেক কোম্পানি একেক সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে অনেক সময় জরুরি তথ্য উদ্ধার করতে গিয়ে হিমশিম খান নিয়ন্ত্রকরা। তাই বীমা খাতের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জববাদিহিতা নিশ্চিত করতে অভিন্ন সফটওয়্যারের বিকল্প নেই বললে চলে। সবাই প্রত্যাশা করবেন, এখন দ্রুত বাস্তবায়নপূর্বক খাতে এর দৃশ্যমান সুফল ফুটিয়ে তুলতে যত্নবান হবেন সংশ্লিষ্টরা।
অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে
পানিসম্পদ সুরক্ষায় জোর দিন
এরই মধ্যে গতকাল বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হয়েছে বিশ্ব পানি দিবস। নদী মাতৃক বাংলাদেশে পানিসম্পদ সুরক্ষায় গুরুত্বের কথা দেশে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিও তুলে ধরা দরকার অবস্থায় প্রকৃত চিত্র পেতে। খেয়াল করার মতো বিষয়, বিশেষত ব্যবহার উপযোগী পানির সুব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা বিতর্ক এগিয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয়। অনেকের শঙ্কা, আগামীতে পানিসম্পদের ভোগদখল নিয়ে মারাত্মক সহিংসতার সৃষ্টি হতে পারে। আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি চরম দৃষ্টান্তের দিকে তাকালে সে সন্দেহকে হেসে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে আফ্রিকার কিছু দেশে যেমন সম্প্রসারণশীল পানি সংকট নিয়ে সমস্যা, আমাদের প্রতিবন্ধকতা অনেকটাই পানিসসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আর সেখানে অন্যতম বড় বাধা, আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ভাগাভাগি জনিত জটিলতা। বলার অপেক্ষা রাখে না, তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের একটা সুরাহা হওয়া দরকার দ্রুত। কিন্তু তাতেই সব মুশকিল আসানের প্রত্যাশা যুক্তিযুক্ত নয়; বিশেষত যেখানে অভ্যন্তরীণ পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সুদৃষ্টি উল্লেখযোগ্যভাবে অপ্রতুল। অথচ এর প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি ব্যতীত টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয় বলে অনেকের অভিমত। আরেকটি বিষয়, চলতি বছরই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাবে; পরবর্তী বৈশ্বিক টার্গেট- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। আর সেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণভাবে যুক্ত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ইস্যুটি। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য উন্নয়নশীল অনেক দেশের সামনেই দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। সে ধারা অব্যাহত থাকুক, এমনটিই আমরা চাই।
পানি ছাড়া কৃষি উন্নয়ন কল্পনাতীত। অথচ বিশেষত স্থানীয় কৃষিকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির যে অপব্যবহার হয়, সেটিও উদ্বেগজনক। অন্যদিকে নেই ভূ-উপরস্থ পানি ব্যবহারের সুপরিকল্পনা। আবার শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে পানির চাহিদা বেড়েছে বৈকি। কিন্তু বহুদিন ধরে কলকারখানায় পানি ব্যবস্থাপনার চলেছে দুর্দশা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার বর্তমান ‘রূপ’ দেখে তার অনেকটা আন্দাজ করা যায়। তবে বাস্তবতা হলো, শুধু বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা-তুরাগ নয়, নদীকেন্দ্রিক শিল্পনগরীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনায় অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। নইলে এক পাড়ে মারাত্মক নদী দূষণ আর অন্যপাড়ে তীর দখল সমানতালে চলত কিনা সন্দেহ। নতুন করা নে বললেও চলে, এসব রোধের জন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে; তার অংশ হিসেবে এখনো অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু নদীর তীর দখল পুরোপুরি নির্মূল হয় নি; যেমন হয় নি পানি দূষণ রোধে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। এক্ষেত্রে একটা বিরাট কর্মপরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা ইটিপি। অথচ মাঝেমধ্যে পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবর মেলে তাতে অনুমান করতে কষ্ট হয় না, ইটিপি বাস্তবায়নে মনোযোগই নেই একশ্রেণীর উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের। সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কিছু দুর্বলতা রয়েছে বলেও প্রতীয়মান। আরো সমস্যা, পানিসম্পদ সুরক্ষায় বলিষ্ঠ রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের অভাব। এসবের প্রতি কর্তৃপক্ষের নজর দিতে হবে। নইলে প্রথমত. টেকসই উন্নয়ন অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে এবং দ্বিতীয়ত. দেশে শিল্পায়ন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে পরিবেশ নীতির বাস্তবায়ন।
লি কুয়ান ইউয়ের অর্থনৈতিক কীর্তি
এশিয়ার সামনে বলিষ্ঠ দৃষ্টান্ত
পরিহাসের বিষয়, সদ্য প্রয়াত ‘আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক’ লি কুয়ান ইউয়ের জীবনের শেষ লক্ষ্যটি পূরণ হয় নি। তার ইচ্ছা ছিল, কোনো রকমে দীর্ঘ জীবন যেন পার করতে না হয়; দ্রুতই হুট করে একদিন চলে যায়। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ৯১ বছর বয়সে। এ নিয়ে তার মনোভাব যেমনই থাকুক দেশটির অনেকের আফসোস থাকা স্বাভাবিক। সেটির অন্যতম বড় কারণ, চলতি বছর ৯ আগস্ট স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে দেশটিতে। ফলে ৫০ বছরে সিঙ্গাপুর কর্তৃক অর্জিত সমৃদ্ধির মাইলফলক দেখার সৌভাগ্য হলো না তার। তবু তিনি যতটা দেখেছেন, নিজ কর্মগুণে অন্যদের যা দেখিয়েছেন, অবিসংবাদিত না হলেও প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। পরিণত বয়স হওয়া সত্ত্বেও এমন একজন নেতার প্রয়াণে শোকগ্রস্ত দেশটির প্রতি রইল বণিক বার্তার সহানুভুতি। একই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকবে, লি’র সুকীর্তিগুলো এশিয়ার সামনে প্রেরণাদায়ী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক।
বললে ভুল হবে না, জীবনের সিংহভাগ সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ব্যয় করেছেন লি। এটি করতে গিয়ে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত একাধিক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেন তিনি। বিশেষত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি তার কঠোর মনোভাব বেশ সমালোচিত হয়েছে দেশের বাইরে। আবার গণমাধ্যমকে খাঁচায় বন্দী করার নিন্দাও তার রয়েছে বৈকি। অভিযোগগুলো সম্পূর্ণভাবে সত্য নয় বলে কারো কারো অভিমত। তাদের ধারণা, এমন ভাবমূর্তি গড়ে ওঠার পেছনে লি’র আপসহীন মনোভাবের যেমন দায় ছিল, প্রতিপক্ষের অতিরঞ্জনের প্রবণতাও কম দায় নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একবার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে সিঙ্গাপুরে চুইংগাম খাওয়া নিষিদ্ধের পর তা বাস্তবায়নে শক্ত অবস্থান গ্রহণের পর কিছু মিডিয়া বিষয়টিকে ‘যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করে। অবশ্য অস্বীকার করা যাবে না, তিনি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ছিলেন; ‘উগ্র’ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনেও তার হাত কাঁপতে দেখা যায় নি। অনেকেই মনে করেন, সিঙ্গাপুরের উন্নয়নের স্বার্থে এত কঠোরতার প্রয়োজন ছিল না। খেয়াল করার মতো বিষয়, তার পরও লি’র মানবাধিকার সংক্রান্ত রেকর্ড তৎকালে প্রতিবেশী কোনো দেশের তুলনায় নিম্নগামী ছিল না। তবু এসব বিতর্কিত ইস্যু নয়, সবাই চাইবেন লি’র কাজ অনুপ্রেরণার উৎস হোক।
সর্বদা প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণে দৃষ্টি দিয়েছেন তিনি। ১৯৬৫ সালে মাথাপিছু ৫০০ ডলারের একটি অর্থনীতি যে এখন ৫৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে, সেক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত অবদানের চেয়েও প্রাতিষ্ঠানিক অবদান বেশি বলে প্রতীয়মান। অর্থনৈতিক অগ্রগতি থেকে স্থিতিশীলভাবে সমৃদ্ধি অর্জনে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের। ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে দুর্নীতিসহ সার্বিক শাসন পরিস্থিতি মোটেই সুখকর ছিল না। চীনের সাংহাই শহরের নয় ভাগের একভাগ সমতুল্য এ ভূখণ্ডের তেমন গুরুত্বও ছিল না আন্তর্জাতিক মহলের কাছে। এখন দেশটির বন্দর বিশ্বের পাঁচটি ব্যস্ততম বন্দরের একটি। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকে এটি মুক্ততম দ্বিতীয় দেশ। দুর্নীতির ধারণা সূচকে সিঙ্গাপুরের অবস্থান স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর কাছাকাছি। কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদেরও সুশাসনের ওপর জোর দিতে হবে। শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ছাড়া মিলবে না সেটি। লি’র আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি ছিল, অর্থনৈতিক বৈচিত্রায়ন নিশ্চিতকরণ। এটি ছাড়া ব্যাপকভাবে আমদানিনির্ভর সিঙ্গাপুরের পক্ষে স্বনির্ভরতা অর্জন কঠিন হতো। সবাই চাইবেন, দেশটির ওসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেবেন আমাদের নীতিনির্ধারকরা।
চিনির বাজারে আমদানি কোটা
হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন?
আন্তর্জাতিক পণ্য বাজার নিম্নমুখী ধারায় থাকার খবর প্রকাশিত হয়েছিল কয়েক সপ্তাহ আগের বণিক বার্তায়। সেখানে উল্লেখ করা হয় গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে চাল, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, চা ডিজেলসহ প্রায় সব পণ্যেরই মূল্যসূচক। হিসাবটি ২০০৫ সালকে ভিত্তি ধরে ১০০-র ভিত্তিতে তৈরি। জ্বালানি ও অজ্বালানি সব পণ্যই অন্তর্ভুক্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঐ সূচকে। এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক জানুয়ারির চেয়ে ১ দশমিক ৮ পয়েন্ট কমেছে শুধু নয়, খাদ্যপণ্যের দাম গত ৫৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এখন। বলা অপেক্ষা রাখে না, খাদ্যপণ্যের বিশ্ববাজার বেশ শান্ত। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থায় সামান্য ভিন্নতা থাকতে পারে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। তবে সেটি গ্রাহ্য করার মতো নয় বলে অনেকের অভিমত। এরই মধ্যে অপরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর সরকার কোটা আরোপ করেছে বলে প্রতিবেদন গতকালের বণিক বার্তার; তদানুযায়ী বছরে ১৩ লাখ ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করতে পারবে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের প্রতিবেদককে শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, ‘অস্থিতিশীল’ পরিবেশ বিরাজ করছে চিনির বাজারে; শর্ত নাকি মানছেন না আমদানিকারকরা। এ অবস্থায় পরিস্থিতির অধিকতর অধোগতি রোধে নেয়া হলো আগাম ব্যবস্থাটি। অনেকের শঙ্কা, এতে হিতে বিপরীত না হয়- বিশেষত দেশে যেখানে চিনির বাজার এক রকম স্থিতিশীলই রয়েছে বলা যায়। ফলে হঠাৎ ওমন সিদ্ধান্ত কেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বৈকি।
রমজান মাস আসতে বেশি দেরি নেই। একে সামনে রেখে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী কর্তৃক চিনির দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টাকে কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আবার আমদানিকারকদের এ যুক্তিও মানতে হবে, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে চিনির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য আমদানিতে কোটা পদ্ধতি খুবই বেমানান। শুল্ক আইন, ১৯৬৯ ও আমদানিনীতি আদেশ ২০১২-১৩ এবং প্রযোজ্য অন্যান্য আইন অনুযায়ীও নাকি আমদানিযোগ্য পণ্য অপরিশোধিত চিনির আমদানির বেলায় কোটা আরোপের সুযোগ নেই। তবে মিল মালিকদের আসল ভয় বোধকরি এটাই যে, কোটায় চিনি আমদানি করতে হলে সক্ষমতা অনুযায়ী চালানো যাবে না রিফাইনারি এবং সেক্ষেত্রে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়তে পারেন তারা। শিল্প মন্ত্রণালয় অবশ্য তেমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। তারা মনে করে, কোটা আরোপের প্রভাব পড়বে না চিনির দামে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভোক্তা কল্যাণের পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণের পর সংশ্লিষ্ট ব্যবসার প্রতিও সরকার সঠিকভাবে দৃষ্টি দেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
মেধাসত্ত্ব অর্জনে সার্বিক অবস্থান
সন্তোষজনক নয়, বরং দুশ্চিন্তা উদ্রেককারী
পেটেন্ট, শিল্পনকশা, ট্রেডমার্ক ও কপিরাইট মেধাসত্বের আওতাভুক্ত হলেও স্বাভাবিকভাবেই পেটেন্টকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয় উদ্ভাবন সংক্রান্ত স্বত্ব হওয়ায়। এক্ষেত্রে অসন্তোষজনক খবর রয়েছে গতকালের এক জাতীয় দৈনিকের সংবাদে। তাতে দেখা যায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে (ডিপিডিটি) ২০১৩ সালে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তির কাছ থেকে আবেদন জমা পড়ে ৬০টি; সংখ্যাটি ৪৪ ছিল ঠিক এর পরের বছর। বিস্তারিত প্রতিবেদন আরো হতাশাজনক। এক হিসাব মতে, আবেদনকৃত মোট পেটেন্টে বিদেশীদের অবদান ৮৫ শতাংশ। তাই দেখা যায়, গত বছর ডিপিডিটি কর্তৃক অনুমোদিত ১২১টি পেটেন্টের মধ্যে মাত্র ২১টি রয়েছে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবনের পেটেন্ট। তবে তুলনামূলকভাবে উন্নত পরিস্থিতি বিরাজ করছে শিল্পনকশা, ট্রেডমার্ক ও কপিরাইটের বেলায়। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, বিশ্বায়নের যুগে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ব্যাপকভাবে পেটেন্টের ওপর নির্ভরশীল। লক্ষ্যণীয়, অন্যান্যদের তুলনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের উদ্যোক্তাদের এক বড় ভরসাস্থল হচ্ছে উদ্ভাবন। এতে পিছিয়ে থাকার মানে বিশ্বায়নের অনেক সহজ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকা। তাছাড়া কম-বেশি সব দেশের জিডিপিতেই এর ভূমিকা বাড়ছে। আইসিটি’র মতো না হলেও সেবা, শিল্প ও কৃষি খাতে স্থানীয় পেটেন্ট সত্বের বৃদ্ধি জরুরি। নইলে এগুলোর জন্য পরবর্তীতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে সন্দেহ নেই। ফলে সরকারের উচিৎ ইস্যুটিকে যথাযথভাবে আমলে নেয়া।
খেয়াল করার মতো বিষয়, এ স্থানীয় পরিস্থিতির প্রতিফলন বিদ্যমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, পেটেন্ট সত্ব পাওয়ার বেলায় বাংলাদেশের অবস্থান নেপালের কাছাকাছি এবং আফ্রিকার কিছু দেশের তুলনায় কম। নেপালের সঙ্গে আবার দুই ক্যাটাগরিতে ব্যবধান চোখে পড়ে; এক. পেটেন্ট অর্জনে প্রবৃদ্ধি এবং দুই. স্থানীয় প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তি কর্তৃক পেটেন্ট প্রাপ্তি। দুঃখজনক হলো, উভয় ইস্যুতে যতটকুই হোক পিছিয়ে রয়েছি আমরা। তদুপরি বিশেষভাবে উল্লেখ্য, আমাদের স্থানীয় পেটেন্ট প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক; অর্থাৎ প্রতি বছরই কমছে পেটেন্টপ্রাপ্তদের সংখ্যা। চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এরই মধ্যে ‘পেটেন্ট তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব তুলেছেন অনেকে। আলোচনাটি বাস্তবায়নের দিকে যত দ্রুত এগিয়ে নেয়া যাবে ততই মঙ্গল। পাশাপাশি গবেষণার সার্বিক পরিবেশের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। নানা কারণে স্থানীয় গবেষকরা বিদেশে পাড়ি জমান। তার কারণ ও প্রতিকারও অজানা নয়। আসলে পেটেন্ট অর্জনে আর্থিকসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। আর সেজন্য দরকার কর্তৃপক্ষের বাড়তি মনোযোগ।
অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি
উত্তরণে চাই স্বচ্ছতা-রাজনৈতিক সদিচ্ছা
স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্ব আরোপ করে এসেছে ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সরকারগুলো। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় এনজিও এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার অবদানও অনস্বীকার্য। তাতে বাড়তি চাপ যুক্ত হয় ২০০০ সালের প্রাক্কালে- জাতিসংঘ কর্তৃক সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হলে। তার সময়সীমা এ বছরই শেষ হওয়ার কথা। সৌভাগ্যের বিষয়, সংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় ভূমিকায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন হতাশাজনক নয়। লক্ষ্যণীয়, এরই দেশে ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাসের পেছনে বড় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। জনকল্যাণের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটেও এর প্রভাবকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। অথচ অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ পর্যন্ত দুর্নীতি-অনিয়মমুক্ত ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দক্ষভাবে সম্পন্ন কোনো সামাজিক নিরাপত্তামূলক হস্তক্ষেপের কথা শোনা যায়। তদুপরি সোমবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির বর্তমান অবস্থা ও উত্তরণ’ শীর্ষক সেমিনারে যেসব বক্তব্য উঠে এসেছে তা আরো চিন্তা জাগানিয়া। গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ উক্ত প্রতিবেদনে প্রধান অতিথি বলেছেন, কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে হলে স্থানীয়ভাবে অংশগ্রহণকারী সবার চরিত্র পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া দেশপ্রেম থাকতে হবে। সার্বিকভাবে এসব কর্মসূচির দুর্নীতি কমানো গেলে সম্ভব হবে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা। বলা বাহুল্য, শুধু অনিয়ম-দুর্নীতি নয় অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার জন্যও অপচয় ঘটছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বরাদ্দের। এমন পরিস্থিতিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি করা চলবে না।
এ উদ্দেশ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে অধিকতর স্বচ্ছতা আনায়ন এবং বলিষ্ঠ রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শনের বিকল্প নেই। সেজন্য এও মাথায় রাখা দরকার, দারিদ্র্য হ্রাস পেলেও এখনো তা পুরোপুরি নির্মূল নয়। তাছাড়া এর সঙ্গে শিশুকিশোরদের দারিদ্র, অপুষ্টি, নিম্ন মানব পুঁজি সঞ্চয়ন এবং শ্রমশক্তির শোষণ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ফলে সামাজিক নিরাপত্তামূলক হস্তক্ষেপ শুধু অব্যাহত নয়, একে আরো বিস্তৃত করা প্রয়োজন বলে কারো কারো অভিমত। তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে নিছক কল্যাণমূলক ব্যবস্থা হিসেবে না দেখে এটিকে গরিবমুখী উন্নয়নধর্মী কৌশল হিসেবে দেখা উচিৎ। সমস্যা হলো, অনেক সময় এতে যুক্ত হয়ে পড়ে ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক স্বার্থ। ফলে কর্মসূচিগুলোর কাঙ্ক্ষিত কার্যকারিতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর সে অবস্থায় পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের শক্ত অবস্থান গ্রহণের বিকল্প নেই বললেই চলে।