Published in Bonik Barta, March 2015

জ্বালানি পরিবহনে ত্রুটিপূর্ণ ট্যাংকার

দ্রুত ব্যবহারোপযোগী করে তোলা হোক

প্রচলিত উপায়টা হলো, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে উড়োজাহাজের জেট ফুয়েল আসবে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত। সেখান থেকে সড়কপথে ট্যাংক-লরির মাধ্যমে জ্বালানি পৌঁছানো হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সমস্যা হলো, ব্যয় তো আছেই এভাবে তরল পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে অপচয়ও হয় বেশ। জ্বালানি তেল চুরির ইস্যুটি এখানে আর নতুন করে উত্থাপনের দরকার নেই। সচেতন পাঠক মাত্র জানেন, এখনো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জ্বালানি তেল অবৈধভাবে সংগ্রহ ও বিক্রি হচ্ছে। যাহোক, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) উদ্যোগে জেট ফুয়েল অপচয় রোধ ও এর পরিবহন ব্যয় হ্রাসের উদ্দেশ্যে রেলপথ ব্যবহারের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। সে লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারকও সই হয় ২০১০ সালে এবং ২০১৩ সালে ভারতের ঋণে ৮১টি তেলবাহী ওয়াগন ট্যাংকার (প্রতিটি ৪০ হাজার ৭৫০ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন) কেনা হয়। পরিকল্পনা প্রণয়নকালে অনুমিত হয়, ৮১টি ওয়াগনে মাসে প্রায় ১ কোটি টাকা আয় হবে। সে বিচারে গত ১৯ মাসে রাজস্ব সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়েছে ১৯ কোটি টাকার। কেননা কেনার পর থেকেই পড়ে রয়েছে ওগুলো। রেলওয়ের পক্ষ থেকে তা ব্যবহারের অনুরোধ জানানোর বিপরীতে ট্যাংকারের ত্রুটি মেরামতে উল্টো চিঠি নাকি দিয়েছে তিন জ্বালানি বিপণনকারী কোম্পানি- পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা!

খেয়াল করার মতো বিষয়, রেলওয়ের পক্ষ থেকে একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত থেকে আনা ট্যাংকারগুলো আন্তর্জাতির মান ও নকশা অনুযায়ী প্রস্তুত। এতে তেল চুরি সহজে বন্ধ হওয়ার ভয়েই অপপ্রচার চালাচ্ছেন একশ্রেণীর ব্যক্তিরা। এদিকে বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ মূলত কারিগরি। তাদের ভাষ্য হলো, লোডিং পয়েন্ট তেল লোডের হোলের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তদুপরি ম্যানহোল কভারে সিলের ব্যবস্থা নেই; ফলে পথিমধ্যে ঝুঁকি রয়েছে তেল চুরির! সুলক্ষণ যে, উভয় পক্ষই তেল চুরি নিয়ে চিন্তিত। পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এটা বড় নিয়ামক হতে পারে। সেজন্য উভয়ের কাজে অধিকতর সমন্বয় আনা প্রয়োজন। একই উদ্দেশ্যে একে অন্যের প্রতি অভিযোগের আঙুল তোলাও বন্ধ করতে হবে। ট্যাংকারগুলো ত্রুটিমুক্ত নয় বলেই অনেকের অনুমান। সেক্ষেত্রে ওগুলো কোন বিবেচনায় ক্রয় করা হলো, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি দ্রুত মেরামত করে এবং অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে না জড়িয়ে তা যত তাড়াতাড়ি ব্যবহারোপযগী করে তোলা যায় ততই মঙ্গল।

এনার্জি ড্রিংকসে মাদকের উপাদান

রোধে মনোযোগ দিতেই হবে

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এনার্জি ড্রিংকস বিষয়ে যে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে তা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সেখানে একজন সাংসদ তথ্য পরিবেশন করেন যে, বিএসটিআইয়ের লাইসেন্স নিয়ে বাজারে বিক্রি হওয়া ৮০ শতাংশেরও বেশি এনার্জি ড্রিংকসে রয়েছে মাদকের উপাদান। এক্ষেত্রে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিল্পমন্ত্রী জানান, এনার্জি ড্রিংকস উৎপাদন বা বাজারজাতে মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ইতিবাচক দিক হলো, এ মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে ঘটনাটিকে সমস্যা বলে মেনেছেন শিল্পমন্ত্রী। আরো খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, স্থানীয় খাদ্য বাজারের এমন পরিস্থিতি একদিনে সৃষ্টি হয় নি; একে রাতারাতি দূর করাও সম্ভব নয়। তবু সাধারণ ভোক্তাদের পক্ষ থেকে দাবি থাকবে, এনার্জি ড্রিংকস-সহ সব রকম খাদ্য উপাদানে ভেজাল ও ক্ষতিকর উপাদানের সংমিশ্রণ রোধে সদা প্রশাসনিক তৎপরতা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেবে সরকার। অস্বীকার করা যাবে না, বর্তমান শাসনামলে আমাদের কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। এখন মানুষের কাছে পর্যাপ্ত নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দিতে না পারলে কিন্তু বলিষ্ঠ খাদ্য নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি বেমানান।

লক্ষ্যণীয়, খাদ্যে ক্ষতিকর উপাদান মেশানো নিয়ে গত কয়েক মাসে একাধিক আলোচিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বণিক বার্তায়। সেখান থেকে, ‘জুস ও ফ্রুট ড্রিংকস ১০০% ভেজাল!’ শিরোনাম থেকে পরিস্থিতি আঁচ করা সম্ভব। ক্ষতিকর খাদ্য উপাদানগুলো জনস্বাস্থ্যের কেমন ক্ষতি করে আসছে সেটি নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। বহু দুরারোগ্য ব্যাধির জন্ম হতে পারে এখান থেকে। আরো বড় বিষয়, এ ধরনের খাবারে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে বয়স্ক ও শিশুরা। ফলে আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন ইস্যুতে শক্ত অবস্থা নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। এমন নয় যে, সেজন্য নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। বরং এক্ষেত্রে প্রয়োগোপযগী একাধিক আইন রয়েছে, যার মধ্যে শুধু নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ কার্যকর করে তোলা গেলেও খাদ্য বাজার বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে অনেকের অভিমত। তবে আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে সমন্বয় আরো বাড়াতে হবে। এসব পদক্ষেপ সুসম্পন্নের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে বর্ধিত উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তবে ক্ষতিকর খাদ্যপণ্য নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক দায়িত্ব সরকারের ওপরই পড়ে। তাই এদিকে তাদের বাড়তি মনোযোগ দিতেই হবে।

অবৈধ ইটভাটার আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি

কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে

পরিবেশ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী গত মৌসুম পর্যন্ত দেশে মোট ইটভাটা ছিল ৫ হাজার ৮৭৯টি। তার মধ্যে প্রায় ৪ হাজারটি চলছে পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই। তবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) অনুসন্ধান মতে, স্থানীয় ৬৭ শতাংশ ইটভাটাই চলছে অবৈধভাবে। গতকালের বণিক বার্তায় এ সংক্রান্ত খবরে আরো প্রকাশ, তার মধ্যে অনেকগুলোয়ই আবার ব্যবহার হচ্ছে না নির্ধারিত প্রযুক্তি। তদুপরি বিপুল সংখ্যক ইটভাটা ক্ষতিকর ড্রাম চিমনিবিশিষ্ট যা কিছু অঞ্চলে ‘বাংলাভাটা’ নামে পরিচিত। অপরিকল্পিত ইটভাটা যে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে, সে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। স্বল্প উচ্চতার ড্রাম চিমনি থেকে নির্গত কাঠ পোড়া কালো ধোঁয়া নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ফুসফুসে। সেসব বিবেচনায়ই পরামর্শ দেয়া হয় পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের। একই উদ্দেশ্যে জ্বালানি হিসেবে নির্ধারিত মাত্রার সালফারযুক্ত কয়লা ব্যবহারেও উৎসাহ দেয়া হয়েছে সময়ে সময়। তার পরও কেন অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। একই সঙ্গে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা চাই। নইলে ইটভাটার দূষণ রোধ করা কঠিন হবে।

ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকা ও ফলের বাগান থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এ নিয়ম ব্যাপকভাবে ভঙ্গ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। সেক্ষেত্রে আবাসিক এলাকা পরের কথা কিছু অঞ্চলে আইনের তোয়াক্কা না করে বনের কাছাকাছি স্থাপনা করা হচ্ছে ইটভাটা। ক’দিন আগে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন জঙ্গলে ইটভাটা বসানোর খবর রয়েছে এক জাতীয় দৈনিকে। এমন প্রবণতা পুরোপুরি নির্মূল করতে চাইলে এখন যারা অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। খেয়াল করার মতো বিষয়, এগুলো উচ্ছেদে মাঝেমধ্যেই অভিযান পরিচালনা করা হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে; তাতে দণ্ডও পান একশ্রেণীর ভাটা মালিকরা। তবু তাদের ব্যাপকভাবে নিরুৎসাহিত করা গেছে বলে মনে হয় না। অথচ এ কাজটিই দ্রুত করা দরকার। সেজন্য ভাটা সংশ্লিষ্টদের সচেতনতা বৃদ্ধিরও প্রয়োজন রয়েছে। অনেকে মনে করেন, মুনাফার প্রতি বেশি ঝোঁক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বিরত রাখছে একশ্রেণীর ভাটামালিককে। অবশ্য এরও আগে নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণই প্রত্যাশিত।

শিল্প-কারখানা পরিদর্শন নীতিমালা

শ্রমাধিকার রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তুলুন

দেশের ৪৫টিরও বেশি শিল্প খাতের জন্য আধুনিক ও কার্যকর সমন্বিত শ্রম পরিদর্শন নীতিমালা প্রণয়নে সরকার কর্তৃক গুরুত্ব প্রদানের কথা এরই মধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত। সেটির আওতায় সব খাতের জন্য প্ররথক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও জানা যায়। তবে এ আশাবাদ থেকে চলমান বাস্তবতায় কিছু পার্থক্য রয়েছে বৈকি। তার একটি দিক উঠে এসেছে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধ্বসের মতো ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনার পর মূলত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এখন মূলত পোশাক কারখানায় চালু রয়েছে পরিদর্শন। সেদিক থেকে শিল্প খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অনেকাংশে সরকারি নজরদারির বাইরে বলে অভিযোগ। এটি যে কেউ সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? অন্যদিকে নিজস্ব নীতিমালা না থাকায় বিদেশী ক্রেতারাও কিন্তু সুযোগ পাচ্ছেন তাদের মানদণ্ড আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার। স্থানীয় শিল্প-কারখানা তথা শ্রমিক ও মালিকের স্বার্থ সুরক্ষায় এর প্রভাব কেমন পড়বে, তা খতিয়ে দেখার দাবি তোলে বটে।

আমরা নিজেরা যথাযথভাবে কল-কারখানানা পরিদর্শন করতে পারলে অন্য কাউকে করতে দিতে হতো না বলে আমাদের প্রতিবেদকের কাছে মন্তব্য করেছেন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক। এ বক্তব্য প্রতিধ্বনিত করে বলা যায়, অভ্যন্তরীণ পরিদর্শন সক্ষমতা সন্তোষজনক থাকলে বহির্বিশ্বের ক্রেতারাও হয়তো চাপ দিতেন না আর। কথা হলো, সরকারের সামর্থ্যের ঘাটতি এবং শ্রম কল্যাণ নিশ্চিতে একশ্রেণীর মালিকের গাফিলতি অনেক আগে থেকেই আলোচিত। তা সত্ত্বেও পরিদর্শন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দৃষ্টি না দেয়াটা দুঃখজনক। তবু সুখবর হলো, এক্ষেত্রে সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের খবর। খসড়াটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সহযোগিতায় প্রস্তুত হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পরই তা গৃহীত হবে বলে আশ্বাস পেয়েছি আমরা। প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। কেননা এর ধারাবাহিকতায় ইনস্পেকশন ম্যানুয়াল তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো সম্পন্ন করতে হবে। সুতরাং নীতিমালা সুষ্ঠুভাবে কার্যকরের স্বার্থেও হাতে পর্যাপ্ত সময় রাখা জরুরি। কাজটি সুসম্পন্ন হলে বিদ্যমান আইনের আরো দক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করা সহজ হবে। পাশাপাশি অনেকের প্রত্যাশা হলো, শিল্প-কারখানায় শ্রম অধিকার রক্ষার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখুক আলোচ্য নীতিমালা। ওমন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেলে কিন্তু আইনের বাস্তবায়নও সহজ হবে বেশ।

কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা

রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার অবসান কাম্য

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ওপর চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব নিয়ে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ খবরটি এরই মধ্যে অনেকের নজরে এসে থাকবে। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ব্যবসায় মন্দা বিরাজ করায় ঠিকমতো ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। পরিসংখ্যানও বলে একই কথা। একাধিক ব্যাংকের তথ্য-উপাত্তে দেখা যাচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের বৃদ্ধি। তার সঙ্গে কমে এসেছে নতুন ঋণ আবেদনকারীর সংখ্যা; এমনকি ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন পাওয়ার পরও ঋণ গ্রহণ করছেন না উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক। খেয়াল করার মতো বিষয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মৌসুমী ব্যবসা। আবার সামনে পয়লা বৈশাখের মতো বৃহৎ সামাজিক উৎসব। এটি ঘিরে প্রতিবারই বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন বুটিক, কারুশিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা। উৎসব উপলক্ষ্যে বাড়তি ঋণ নিতে দেখা যায় তাদের। এবার তাদের অনেকেই উৎসাহহীন। নিকট অতীতে সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হলেও কিন্তু তা বর্তমানের মতো নির্বিচার ছিল না। আর এখনকার পরিস্থিতি সে তুলনায় ব্যতিক্রম। এ অবস্থায় দেশ ও অর্থনীতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে- সে আশাবাদ ব্যক্ত করা ছাড়া উপায় কী ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের।

লক্ষ্যণীয়, ব্যবসায়ীরা শুধু ঋণের কিস্তি পরিশোধেই ব্যর্থ হচ্ছেন না, অনেকেই হারাচ্ছেন পুঁজি। লোকসান পোষাতে কেউ কেউ কমিয়ে দিচ্ছেন উৎপাদন। তাতে সমাজে বেকারত্ব বাড়ছে বৈ কমছে না। এতে স্বভাবতই ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি উঠছে মেয়াদি ঋণের বেলায় শ্রেণি বিন্যস্ত না করে পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ প্রদানের জন্য- বড় ঋণ গ্রহীতাদের মতো। কিছু ব্যবসায়ী নাকি বলছেন নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের কথাও। সেসব যুক্তি অস্বীকারের প্রশ্ন না তুলেও বলা যায় এভাবে প্রণোদনা দিয়ে দিয়ে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক পথে ফেরানো কঠিন। ফলে ইস্যুটির একটি রাজনৈতিক সমাধান হওয়া শ্রেয় এবং তা দ্রুতই। চলতি বছর এসএমই খাতে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। চলতি অবস্থার ধারবাহিকতায় সেটি অর্জনে বেগ পেতে হবে বলে অনেকের শঙ্কা। অন্যদিকে অচিরেই পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) কারিগরি-প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আনুমানিক সাড়ে চার লাখ কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা প্রদানের কথা। পরিস্থিতির উন্নতি ছাড়া ওসব উন্নয়ন কর্মসূচি থেলে কাঙ্ক্ষিত ফলের প্রত্যাশা করা কঠিন।

তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মপরিবেশ

পরিস্থিতি উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ভাবনাই হোক বিবেচ্য

গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক খবরে দেখা যাচ্ছে, পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রম পরিস্থিতি উন্নয়নে সংশোধনমূলক কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় ইউরোপীয় অ্যাকর্ড বা উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্স- কেউই। আমাদের প্রতিবেদক আরো জানাচ্ছেন, নির্ধারিত সময়ে উক্ত কার্যক্রম সম্পন্ন না হলে জোটের অন্তর্ভুক্ত ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের কারখানা মালিকদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছেদ করতে পারে বলে ইঙ্গিত মেলে, যা কারো কাম্য হতে পারে না। ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন। উল্লেখ্য, অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের পরিদর্শন আওতায় রয়েছে আনুমানিক ১ হাজার ৭০০ পোশাক কারখানা। তার মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ কারখানার বিস্তারিত প্রকৌশল মূল্যায়ন (ডিইএ) এখনো অসম্পন্ন। সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা, নির্ধারিত সময়ে এগুলোর সংস্কার সম্পন্ন হবে না। এ অনুমানের বিরুদ্ধে পরিসংখ্যান তুলে ধরা কঠিন। কেননা দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক মূল্যায়ন শেষে যেসব তৈরি পোশাক কারখানায় সংশোধনমূলক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি গত নয় মাসে ১ থেকে ২০ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে বণিক বার্তাকে দেয়া বিজিএমইএ’র সহসভাপতির বক্তব্য মাথায় রাখা উচিৎ, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাই দ্রুত কারখানার ত্রুটি সংশোধন।

খেয়াল করার মতো বিষয়, সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহায়তায় অ্যাকর্ডের পাশাপাশি আড়াইশ’ কোটি টাকারও বেশি ঋণ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে অ্যালায়েন্স। এ থেকে সংশোধনমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে ক্রেতাদের সিরিয়াসনেস প্রকাশ পায়। তার বিপরীতে ওই চিত্রটাও দ্রষ্টব্য যে, সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়- সে অজুহাতে কিছু কারখানার ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছেন কয়েকজন ক্রেতা। এখানে সব পক্ষের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝির শঙ্কাও আবার একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দেশ, শ্রমিক তথা ব্যবসার স্বার্থে কর্মসূচিটি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। একাধিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, কারখানায় অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও স্থান বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে এখনো পর্যাপ্তভাবে উপযুক্ত কর্মসূচি গৃহীত হচ্ছে না। এর অন্তর্নিহিত কারণ অনেকের বিস্ময়ের উদ্রেক করবে বৈকি। কেননা স্থানীয় প্রেক্ষাপটে সঠিক নকশায় কারখানা নির্মাণের ইস্যুটি সহজে বোধগম্য; কিন্তু এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ প্রবাহের ওভারলোড-সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ঝুঁকি দূরীকরণে একশ্রেণীর মালিক নির্দেশিত পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তার কারণ উদ্ঘাটন কঠিন। আবার৪ আলোচ্য শঙ্কা দূরীকরণে এসব বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণও জরুরি।

জুস-কোমলপানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত এসিড!

নিয়ন্ত্রণে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকা কাম্য

ব্রোমিনেটেড ভেজিটেবল অয়েল (বিভিও) ‘নিরাপদ খাদ্য উপাদান’ তালিকা থেকে বাদ পড়ে ১৯৭০ সালেই। অবশ্য কোমল পানীয় তৈরিতে এর ১৫ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন) মাত্রা পর্যন্ত ব্যবহার করা যেত। পরবর্তীতে এটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কিনা তা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা যায় বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। আর অবস্থাদৃষ্টে এ বিতর্কিত উপাদান বাদ দেয়ারই সিদ্ধান্ত নেয় কোকাকোলা ও পেপসি। কয়েক মাস আগে এ খবর ছাপা হয়েছে বণিক বার্তাতেই। অভিযোগ মেলে, এ দেশে ব্যবসারত অনেক কোম্পানিরই ভোক্তার প্রতি অতটা প্রতিশ্রুতি নেই যে তারা নিজ থেকে কোমলপানীয়তে সম্ভাব্য ক্ষতিকর উপাদানের মিশ্রণ রোধে আগাম ব্যবস্থা নেবেন। বরং কিছু ক্ষেত্রে এমনো দেখা যায় যে, নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কর্তৃক হুঁশিয়ারি জানানো সত্ত্বেও নেয়া হচ্ছে না ব্যবস্থা। তেমনই আরেক প্রতিবেদন রয়েছে গতকাল প্রকাশিত বণিক বার্তায়। সেখানে বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক সাম্প্রতিক গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়েছে যে, স্থানীয় বাজারে বিদ্যমান সব কোমলপানীয়, জুস, এনার্জি ড্রিংকসে পিএইচ মাত্রা লক্ষ্যণীয়ভাবে কম। তার মানে এসব পানীয়তে অতিরিক্ত এসিডের উপস্থিতি বিদ্যমান। সব বয়সীরা ওসব পণ্যের ক্রেতা হলেও তরুণ ও যুবকরাই এর প্রধান ভোক্তা। পানীয়তে এসিডের উপস্থিতি বাড়ায় এদের দাঁতের সমস্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়ানি নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে নিঃসন্দেহে। এমন পরিস্থিতিতে কোমলও পানীয়, জুস ও এনার্জি ড্রিংকসে সঠিক মাত্রায় এসিড লেভেল বজায় রাখতে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকাই প্রত্যাশা করবেন সবাই।

আমাদের দেশের ভোক্তারা তেমন সচেতন নন, সংগঠিত নন- সেসব পুরনো কথা। সেজন্য পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। কথা হলো, কোমল পানীয়তে এসিডের মতো কৃত্রিম রাসায়নিক উপাদান সহনীয় মাত্রায় বজার থাকছে কিনা, সেটি ভোক্তাদের পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে কর্তৃপক্ষকেই। আর এখানেই নিয়ন্ত্রণগত দুর্বলতা প্রতিভাত হয় মাঝে মধ্যে। অথচ চলমান পরিস্থিতিতে এক্ষেত্রে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই কোনোক্রমেই। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ক্রমে বড় হচ্ছে। মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে কোমল পানীয়, জুস ও এনার্জি ড্রিংকসের বাজার। দুর্ভাগ্যজনক হবে, যদি এখনই বাজারটিকে সুনিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ না নেয়া হয়। তাতে দেশী বাজারে ভোক্তার আস্থা তো কমবে, বাড়তি জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হবে এবং একই সঙ্গে কমবে রফতানি সম্ভাবনা। ফলে ব্যবস্থা নিতে দেরী নয়।

দূষণকারী চিহ্নিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান

আইন বাস্তবায়নে দেরি নয়

‘৭ শতাধিক শিল্প কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই’ শিরোনামে গতকাল বণিক বার্তায় ছাপা খবরটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক প্রকাশিত ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত শিল্পকারখানাগুলোয় বর্জ্য শোধনাগারও (ইটিপি) নেই। এখানে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করার মতো। প্রথমত. দূষণকারী অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগণ্য দেখা যাচ্ছে ঢাকা বিভাগ এবং সর্বনিম্নে রয়েছে খুলনা। দ্বিতীয়ত. ওসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই বস্ত্রখাত সংশ্লিষ্ট; তার পাশে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্যানারি। তৃতীয়ত. কয়েকটি খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে তালিকায়। এসবের মধ্যে বেশিরভাগেরই নেই পরিবেশগত ছাড়পত্র। কতগুলোর ছাড়পত্র থাকলেও মেয়াদ নেই। সিংহভাগ শিল্পকারখানায় দেখা যাচ্ছে না ইটিপি। যে কয়জনেরওবা রয়েছে তাদের কেউ কেউ আবার ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বন্ধ রাখেন ইটিপি। বিভিন্ন শিল্প বর্জ্য সরাসরি নদীতে চালান করে দিচ্ছেন এরা। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশের অবস্থান এখন আর শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে নয় বলে কারো কারো ধারণা। ফলে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। তারা যেন দায়িত্বশীল আচরণ করেন, সেটা নিশ্চিতের দায়িত্ব অবশ্য সরকারেরই।

জানা যায়, অর্থ আইন, ২০১৪-এর ৬৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী- পরিবেশে দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাংলাদেশে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্যের ওপর মূল্যভিত্তিক ১ শতাংশ হারে পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আরোপ করা হবে। আলোচ্য তালিকা সেটি চূড়ান্তকরণেরই অংশমাত্র। তবে স্বাভাবিকভাবেই কোনো প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করলে তার নাম বাদ পড়ব ওই কালো তালিকা থেকে। এর অন্যথা হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে দেরি করবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। পরিবেশ অধিদফতর থেকে এনবিআরে পাঠানো তালিকাটি নাকি সংশোধন হয়েছে একবার। এ থেকে সহজে অনুমেয়, প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সিংহভাগই মারত্মক পরিবেশ দূষণকারী। ফলে তালিকা অনুযায়ী অর্থ আইন বাস্তবায়নে দেরি হলে বা আইন অমান্যকারী কেউ সারচার্জ থেকে রেহাই পেয়ে গেলে তা অন্যদের সামনে মন্দ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এমনিতেই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তদুপরি আইন বাস্তবায়নে দুর্বলতা বাড়তি দায় হয়ে দেখা দিতে পারে। তাছাড়া পরিবেশ সুরক্ষা বিধিমালা সংশোধনপূর্বক দূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ক্রমে অন্যরাও সারচার্জের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও এক্ষেত্রে সরকারের জোরালো ভূমিকাই দেখতে চাইবেন সবাই।

কৃষকের সঙ্গে প্রতারণা

কঠোর নজরদারিতে রাখুন কৃষি উপকরণের বাজারকে

জানা যায়, বৈশ্বিক বীজের বাজার যেখানে প্রতি বছর সম্প্রসারিত হচ্ছে গড়ে ১৩ শতাংশ হারে সেখানে বাংলাদেশের বেলায় সংখ্যাটি আনুমানিক ১০। এদিকে আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়ছে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। ইদানীং আবার দৃষ্টি দিতে হচ্ছে কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংক্রান্ত প্রভাবের ওপরও। বলা বাহুল্য, উচ্চ ফলনশীল বীজ উৎপাদন ও বিপণন এ সমীকরণের বাইরে নয়। সেক্ষেত্রে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএ) দেয়া তথ্যটি উল্লেখ্য যে, সারা দেশে কমবেশি সব ফসল মিলিয়ে বীজের বার্ষিক চাহিদা মোটামুটি সাড়ে ১১ লাখ টন। তার মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী আলু ও ধানের পরই রয়েছে অন্যান্য ফসল। সমস্যা হলো, মাত্র দেড় লাখ টন বীজ সরবরাহ করতে পারে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। বাকিটা আসে ১৭৬টি প্রতিষ্ঠিত ও সনদপ্রাপ্ত কোম্পানি। তদুপরি জটিলতা হলো, চাহিদার বেশিরভাগ বীজের উৎপাদন ও বিপণনের উৎস অপ্রাতিষ্ঠানিক। উপযুক্ত বীজ পর্যাপ্তভাবে কৃষকের কাছে সরবরাহের এ দুর্বলতা কীভাবে দেশের কৃষি সাফল্য ম্লাণ করে দিতে চাইছে তার এক খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। সেখানে দেখা যায়, দেশজুড়েই কৃষি উপকরণের বাজারে বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের বীজ, সার ও কীটনাশক। আর নজরদারির অভাবে এসব কিনে ব্যাপকভাবে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষক। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি উপকরণ বাজারের ওপর কর্তৃপক্ষ কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে দ্রুত উদ্যোগী হয়েছে, তেমনটাই দেখতে চাইবেন সবাই। এর হাত থেকে কৃষককে রক্ষায় কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে না, সে কথা বলা যাবে না। প্রশাসনের সহায়তায় বিভিন্ন বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা শোনা যায় মাঝে মধ্যেই। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর সেসব প্রচেষ্টাও যথেষ্ট নয় বলে প্রতীয়মান।

কেবল বীজ নয়, একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সারের সঙ্গে লবণ, মাটি, ইটের গুঁড়া প্রভৃতি মিশ্রিত করে বিক্রি করছেন বাজারে। কথিত ‘চায়না’ সার ক্রয়ে কৃষকের ঠকার কথা জানিয়েছেন আমাদের প্রতিবেদক। কীটনাশক বিষ বলেই কিনা কে জানে, এক্ষেত্রে প্রতারণার মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি বলে মনে হয়। তবে আরো মারাত্মক একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীর এমন চিন্তাভাবনা, প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কীটনাশকে মুনাফার সুযোগ কম, ফলে ভেজাল কীটনাশকই বিক্রি করা শ্রেয়। খেয়াল করার মতো বিষয়, অনেক কৃষকই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উপকরণ ক্রয় করে থাকেন বাকিতে। এতে করে ওই বিক্রেতার সঙ্গে স্বভাবতই হ্রাস পায় তার দর কষাকষি ক্ষমতা। অপ্রাতিষ্ঠানিক বাজারটি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে এসব ইস্যুর দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে বৈকি। শুধুমাত্র ভেজাল, বীজ, সার ও কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে তাই নয়, কিছু ভূয়া কোম্পানি সেসব বিক্রি করছে অবৈধভাবে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে। কৃষি উপকরণের বাজারে দুর্বল নজরদারির কারণ হিসেবে অনেকে দায়ী করছেন জনবলের অভাবকে। সেটি বড় প্রতিবন্ধকতা সন্দেহ নেই। তা কাটিয়ে ওঠার জোরালো প্রচেষ্টাও কিন্তু দৃশ্যমান নয়। কৃষকের স্বার্থে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সক্রিয়তা বাড়াবে বলে আমাদের বিশ্বাস। এ ধরনের ঘটনা এখনই সুনিয়ন্ত্রণে না গেলে পরবর্তীতে তা বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে।

ভোক্তার অধিকার

নিশ্চিতের প্রাথমিক দায় সরকারের

‘স্বাস্থ্যকর খাদ্য ভোক্তার অধিকার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি গতকাল বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এটি এমন সময়ে উদযাপিত হলো, যখন দেশের ৪০ শতাংশেরও বেশি খাদ্য ভেজালযুক্ত বলে জানাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ বুলেটিন। অনেকের শঙ্কা, পরিমাণটি আরো বেশি। কার্যত সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উদঘাটিত নানা ঘটনা বিবেচনায় শঙ্কিত ভোক্তার অভিযোগকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। প্যাকেটজাত পণ্য থেকে বাজারের আম-জাম-মাছ কীসে মেলে নি বা মিলছে না ফরমালিন? আখের গুঁড়ে হাইড্রোজের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানোর খবর এখনো বিরল। আবার মুড়ি ভাজতে ইউরিয়া ব্যবহারও ব্যতিক্রমে পরিণত হয় নি। কয়েক মাস আগে দেশের নামকরা এক কোম্পানির মশলার চালান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়। কোনো কোনো কোম্পানির ভগ্যপণ্য বিশেষত গুঁড়া মরিচে ইটের গুঁড়া মেশানোর বিষয়টি কিন্তু আজ আর নিছক অভিযোগ নয়। খেয়াল করার মতো বিষয়, স্বাস্থ্যকর খাদ্য দূরের কথা সাধারণ ভোগ্যপণ্য কিনতে গিয়েই নানা পর্যায়ে নাজেহাল হচ্ছেন আমাদের দেশের ভোক্তারা। ফলে অনেককে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে কেবল দাম নিয়েই, তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয় যেন মান নিশ্চিতকরণের ইস্যু!

অগ্রসর ও উন্নয়নশীল অনেক দেশই নিজেদের মতো করে ভোক্তার অধিকার সুরক্ষায় দৃষ্টি দিয়েছে এমন বিবেচনা থেকেও যে, সব নাগরিকই কোনো না কোনোভাবে ভোক্তা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হলো, এখানে বিষয়টি যেহেতু দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল, সুতরাং এখন তাতে প্রত্যাশিত ফল লাভ করতে চাইলে বাড়তি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন এবং সেটি কেবল ভোক্তা সচেতনতা বাড়িয়ে নিশ্চিত করা যাবে না। ভোক্তা সচেতনতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু লক্ষ্যণীয়, তথ্য জানার অধিকার ভোক্তার অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম- একমাত্র নয়। এদিকে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। সেজন্য লক্ষ্য রাখতে হবে যেন প্রতিযোগিতামূলক দামে বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্যকর খাবারের সরবরাহ বজায় থাকে; পণ্য তো বটেই সেগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়াও যেন পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর না হয়। সাধারণ বাংলাদেশী ভোক্তাদের পক্ষে মানসম্পন্ন পণ্য বাছাই ক্রমে কঠিন হচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। অস্বীকার করা যাবে না, কিছু ক্ষেত্রে ভোক্তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায় কর্তৃপক্ষকে। তবু সেসব যথেষ্ট নয় বলে প্রতীয়মান। এক্ষেত্রে কার্যকর সুফল পেতে বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ দরকার। বিষয়টি নীতিনির্ধারকরা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।

বিমসটেকে অভিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনে সমঝোতা

দ্রুত বাস্তবায়নে জোর দিন

ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করা বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (বিমসটেক) সক্রিয় রয়েছে ১৯৯৭ সাল থেকে। এ সময়ের মধ্যে তার কোনো অর্জন নেই, সে কথা বলা যাবে না। আবার এও অনস্বীকার্য, সম্ভাবনা অনুযায়ী এ থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। তেমন প্রেক্ষাপটে একটি সুখবর অবশ্য এসেছে গতকালের পত্রপত্রিকায়। সেটি হলো, সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তঃবিদ্যুৎ বিনিময় ও উন্নয়ন বিষয়ক টাস্কফোর্সের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের সাত-দেশীয় এ জোটের সদস্যদের মধ্যে অভিন্ন সঞ্চালন লাইনের সংযোগ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়া। এতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের নীতিমালা ও নির্ধারিত সময়সীমার পথনকশা। সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বিদ্যুৎ বিনিময়ের জন্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কারিগরি সহযোগিতা। খেয়াল করার মতো বিষয়, বিমসটেকভুক্ত একাধিক দেশের রয়েছে সস্তা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা। উদাহরণ হিসেবে ভারতের দেড় লাখ, মিয়ানমার ৪০ হাজার এবং নেপাল ও ভুটান প্রত্যেকে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা বলা যায়। এর বিপরীতে বাংলাদেশসহ একাধিক দেশ রয়েছে বিদ্যুৎ ঘাটতিতে। সৌরবিদ্যুৎ, পরমাণুবিদ্যুৎসহ নানা প্রযুক্তির ওপর আমাদের নজর বেড়েছে বটে। তবে দীর্ঘমেয়াদে শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব সস্তা জলবিদ্যুৎ ভিন্ন পালন করা কঠিন। সে লক্ষ্যে সম্প্রতি সামনে আসা সমঝোতা স্মারক ধরে ধারাবাহিক অগ্রগতি বাস্তবিকই দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম। ফলে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, তারা বিমসটেক অভিন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দ্রুত স্থাপনে এবং তা চালু করার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেবেন।

বিদ্যুৎ বাণিজ্য সমঝোতার খুঁটিনাটি নিয়ে অনেক সময় নানা প্রশ্ন তৈরি হয় জনমনে। সেদিক থেকে আলোচ্য স্মারক নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ কম বলেই ধারণা কারো কারো। তাদের যুক্তি হলো, আইনগত দিক থেকে সমঝোতাটি অনেকটা ২০১৪ সালের নভেম্বরে কাঠমান্ডুতে সাক্ষরিত সার্ক ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ফর এনার্জি কোঅপারেশন-এর মতো। তবু সম্ভাব্য মতোবিরোধ এড়িয়ে চলাই ভালো। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, সদস্যদের ভেতর একমাত্র মিয়ানমারের ভিন্ন অবস্থান দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে। তারা নাকি বলছে, সমঝোতার মূল বিষয় নিতে তাদের আপত্তি নেই। তবু অভ্যন্তরীণ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্নের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারবে তারা। নিঃসন্দেহে এ ধরনের স্বাধীনতা রয়েছে তাদের। কিন্তু মাথায় রাখা দরকার, ডজনের অধিক অগ্রাধিকার খাতের ওপর ফোকাস করে এগোচ্ছে বিমসটেক আর এর শক্তি-জ্বালানি খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে মিয়ানমার। ফলে আলোচ্য উদ্যোগের শেষ পর্যন্ত অন্যান্যদের পাশাপাশি মিয়ানমারের সক্রিয় সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। উদ্দেশ্য পূরণে যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণেও দৃষ্টি থাকা চাই। কয়েক মাস আগে জাতীয় গ্রীড বিপর্যয়ে দেশজুড়ে টানা কয়েক ঘণ্টার বিদ্যুৎ সংকট দেখেছি আমরা। একই ধরনের ত্রুটি আন্তঃসীমান্ত গ্রীডের বেলায় ঘটলে কিন্তু তার প্রভাব হবে আরো বিস্তারিত। তাছাড়া অনেকে মনে করেন, উক্ত সমঝোতা চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপ যতই দৃশ্যমান হবে ততই ত্বরান্বিত হবে সার্ক রূপরেখা চুক্তি। ফলে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে যথেষ্ট যত্নবান হবেন, এমনটাই কাম্য।

মেট্রোরেলে গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল

বিস্তারিত নকশা ছাড়াই দরপত্র!

আলোচিত মেট্রোরেল প্রকল্পে নকশা চূড়ান্তের আগেই রেললাইন নির্মাণে দরপত্র আহ্বানের যে কথা প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, সেটি সচেতন পাঠককে ভাবিত না করে পারে না। তবে এক্ষেত্রে প্রকল্পে বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ খুবই কম। বরং এটা হতে পারে যে সার্বিক নির্মাণকাল কমিয়ে আনার লক্ষ্যেই তারা জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজগুলো সেরে ফেলতে চাইছেন। নিঃসন্দেহে সেসব কাজ আগে থেকে সম্পন্ন করা হলে মূল অংশ বাস্তবায়নে সময় অপচয় রোধ হবে। কথা হলো, বিস্তারিত নকশা ব্যতীত দরপত্র আহ্বান জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে তা অগ্রাহ্য করা কিন্তু কঠিন। খেয়াল করার মতো বিষয়, মেট্রোরেল প্রকল্পের আওতাধীন ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার রেললাইনের গোটাটাই থাকবে উড়ালপথে। জানা যায়, এরই মধ্যে উল্লিখিত রুটের প্রায় অর্ধেক পথের নমুনা মাটি সংগ্রহিত হয়েছে। সেসব প্রতিটি নমুনা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফল বিশ্লেষণপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে সময়ে লাগবে কয়েক মাস। আবার সয়েল টেস্টের প্রতিবেদন পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিস্তারিতভাবে প্রকল্প ব্যয় অনুমান করা সহজ নয়। ফলে উক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই সঙ্গত। কেননা এর সঙ্গে সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রশ্নটি চলে আসে অবধারিতভাবে। তার সঙ্গে আরেকটি বিষয় চিন্তা করা দরকার। সেটি হলো, রাজধানীতে ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরস্থ নানা পরিষেবার লাইন রয়েছে। সেগুলো সুসমন্বিতভাবে সম্পন্ন হয়েছে তেমন কথাও বলা যাবে। এক্ষেত্রে মগবাজার ফ্লাইওভার প্রকল্পটিই দৃষ্টান্ত হিসেবে যথেষ্ট। ভূগর্ভস্থ নানা পরিষেবা লাইনের জন্য এর ভায়াডাক্ট (উড়ালপথ) নির্মাণে বেশ ঝামেলা সৃষ্টি হয়। তাতে নির্মাণ ব্যয় বাড়ে, নির্মাণ চলাকালে বিকল্প পথে মারাত্মক যানজট সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত নকশায় পরিবর্তন আনা হয় বলেও খবরে প্রকাশ। একই ঘটনা মেট্রোরেলের বেলায় যেন না ঘটতে পারে সেজন্য কর্তৃপক্ষের সতর্ক দৃষ্টিই প্রত্যাশিত।

লক্ষ্যণীয়, রাজধানীর জনসংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। এক বিদেশী গবেষণা সংস্থার মতে এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা আড়াই কোটি মানুষের মহানগরে পরিণত হবে বলে অনুমান। ওই অবস্থায় যে চাপ সৃষ্টি হবে তা সুপরিকল্পনা ছাড়া মেটানো কঠিন। উপরন্তু তা মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্প বাদ দিয়ে সম্ভবও নয়। এক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োচিত বটে। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের সামর্থ্যও উপেক্ষা করার মতো বিষয় নয়। মেট্রোরেল বাস্তবায়নে বিরাট ভূমিকা পালন করছে বিদেশী সহায়তা। এদিকে সেখানে সরকারের অবদান কম থাকছে না অর্থাৎ রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ইস্যুটি এড়িয়ে চলা যাবে না। হতে পারে, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের বেলায় বাজেট পরিকল্পনার বাইরে চাপ এলেও সেটি সামাল দেয়া সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে কি ছোট-খাট উন্নয়ন বাজেটকে ছাড় দিতে হবে না? সবচেয়ে বড় কথা হলো, বিস্তারিত নকশা পাওয়ার আগেই দরপত্র আহ্বান করা হলে প্রকল্প ব্যয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি আমলে নেবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি

লাভ-ক্ষতির হিসাব দ্রুত সম্পন্ন হোক

বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা এফটিএ) হোক, তা অনেক দিন ধরেই চাইছে মালয়েশিয়া। এ উদ্দেশ্যে তারা প্রস্তাবও দেয় ২০১২ সালে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশটি সফরে গেলে তাদের প্রধানমন্ত্রী আবারো আহ্বান জানান। তাতে ইতিবাচকভাবেই সাড়া দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এর পর চলতি বছর জানুয়ারিতে মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক মন্ত্রী একই ইস্যুর ওপর জোর দিলেন ঢাকা সফরে এসেছে। সমস্যা হলো, এ দীর্ঘ সময়েও এফটিএ সই হলে বাংলাদেশের কী লাভ বা লোকসান তার হিসাব কষতে পারেন নি আমাদের কর্মকর্তারা। ফলে আসছে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কমিশনের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, সেটি স্থগিত হয়েছে বলে গতকালের বণিক বার্তার খবর। খেয়াল করার মতো বিষয়, আলোচ্য চুক্তি সই হলে বাংলাদেশের কেমন ক্ষতি হবে, তাতে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আনা যাবে কিনা বা সেখানে জনশক্তি রফতানির সুযোগ বাড়বে কিনা সেসব বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট জবাবা নেই ট্যারিফ কমিশনের কাছে। এদিকে মালয়েশিয়ায় আনুমানিক ৩০০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে তাদের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতিও রয়েছে আমাদের। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির সঙ্গে আমাদের এফটিএ সংক্রান্ত প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেয়া দরকার বৈকি। কেননা উক্ত বৈঠক বাতিল হয় নি এবং সেখানে চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে না বলে চূড়ান্ত মত দেয়া যাবে না। এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তির প্রশ্নও যুক্ত।

লক্ষ্যণীয়, মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ’র সঙ্গে অবধারিতভাবে চলে আসছে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধির ইস্যু। দেশটি বাংলাদেশী জনশক্তির অন্যতম বৈদেশিক গন্তব্য। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ আমাদের এফডিআই (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) আকর্ষণেও সহায়তা জোগাবে বলে কারো কারো ধারণা। তাছাড়া কার্যকর এফটিএ দু’পক্ষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিরই গতিময়তা বাড়াবে। দৃষ্টি রাখতে হবে, এফটিএ সই হলে দেশটির বাজারে আমাদের পণ্য রফতানি বাজার কেমনটা বাড়বে; অর্থনীতির কোন কোন খাতে তাদের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। সেটি অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনে কোনো ভূমিকা রাখবে কিনা কিংবা সংরক্ষিত অভ্যন্তরীণ খাতের ওপর চুক্তির প্রভাব কেমন হবে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য হলো, আমাদের রফতানিমুখী খাতগুলোর প্রতিযোগিতাসক্ষমতা বৃদ্ধি। ফলে দ্রুতই প্রস্তুতি সুসম্পন্নপূর্বক মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ চুক্তি বিষয়ে অগ্রসর হওয়াটাই এখন প্রত্যাশিত।

নতুন এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস

পোলট্রি ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যবস্থা নিন

‘এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত ১০% পোলট্রি খামার’ শিরোনামে যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায় তা আমাদের চিন্তিত না করে পারে না। কেননা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা অত্যন্ত সংক্রামক। খামার থেকে খামার তো ছাড়, এক দেশ থেকে অন্যদেশে পরিবাহিত হতে বেশি সময় লাগে না এর। বাড়তি সমস্যা হলো, এই সাবটাইপ তথা এইচ৯এন২-তে আক্রান্ত হলে খামার নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। আক্রান্ত মুরগি সাধারণত ডিম কম দেয় এবং তা নরম খোসাযুক্ত হয়। এ ভাইরাসে আক্রান্তের অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে রয়েছে পালক উসকোখুসকো হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, অবসাদগ্রস্ততা প্রভৃতি। সমস্যা হলো, এসিওব লক্ষণ দেখে অনেক সময় খামারিরা ধরেই নেন পরিচর্যার ঘাটতি হচ্ছে। ইত্যবসরে ছড়াতে থাকে ভাইরাসটি যা মানবদেহে ব্যাপক ক্ষতিসাধনে সক্ষম। এদিকে বাংলাদেশের পোলট্রি খামারে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা শনাক্তের পর শুধুমাত্র এইচ৫এন১ প্রতিরোধে উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু ফ্লু’টির বাকি তিন সাবটাইপ নিয়ে এমনকি গবেষণাও হয় নি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) পরিচালিত গবেষণায় উঠে আসে বিষয়টি। এমন পরিস্থিতিতে এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে মহামারীর আশঙ্কা রয়েছে বলে মত দিয়েছে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)। কর্তৃপক্ষ সতর্কবার্তাটি যথাযথভাবে আমলে নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

খেয়াল করার মতো বশীহয়, ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশে অর্ধলক্ষাধিক পোলট্রি খামার বন্ধ হয়েছে এ ভাইরাসের প্রকোপে; বিনষ্ট করা হয়েছে লাখ লাখ ডিম ও মুরগি। এতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা প্রতি সাতজনে এক। সে সময় সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের পর প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনোমদন দেয়। এছাড়া আরেকটি প্রকল্প চালু হয়, যাতে রোগ চিহ্নিতকরণ ও প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি খামারিদের আর্থিক ক্ষতিপূরণে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। বর্তমান অবস্থা তার চেয়ে ভালো, সে কথা বলা যাবে না। প্রথমত. এ ভাইরাস সাবটাইপ বিষয়ে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা কম বলে প্রতীয়মান। ফলে ভ্যাকসিন তৈরিসব প্রতিরোধমূলক অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে সময় অতিরিক্ত সময় লাগবে। দ্বিতীয়ত. সাম্প্রতিক নজিরবিহীন হরতাল-অবরোধে শুরু থেকেই সহিংসতার টার্গেট হয়েছে আমাদের পোলট্রি শিল্প। এমন প্রেক্ষাপটে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার নতুন ঝুঁকি থেকে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের রক্ষায় সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে দেরি করবে না, তা-ই সবার প্রত্যাশা।

অভিন্ন সফটওয়্যারের আওতায় বীমা খাত

সুফল নির্ভর করবে বাস্তবায়নের ওপর

স্থানীয় বীমা খাতে একশ্রেণীর করিৎকর্মা লোকের হদিস পত্রপত্রিকা মারফৎ ঠিকই জেনে যান সচেতন পাঠক। যারা সে খবর রাখেন না, তাদের জন্য কৌতূহলোদ্দীপক কিছু খবর রয়েছে বৈকি গতকালের বণিক বার্তায়। সেখানে আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন দেশী বীমা ব্যবসার দুরবস্থার কথা। অবশ্য কোনো প্রতিযোগিতায় যখন নিয়ম অমান্যপূর্বক অস্বাভাবিক কমিশনের চল শুরু হয়ে যায়, সেটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তদুপরি সমস্যা এক নয়, বহুবিধ। বীমা ব্যবসাকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ নতুন নয়। খাতটিতে শোনা যায় প্রিমিয়াম সংগ্রহ চুক্তিনামার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি প্রভৃতি অনিয়ম তো থাকছেই পাশাপাশি। তবে বীমা খাতের একশ্রেণীর প্রথম সারির কর্মকর্তার অপকীর্তি বোধকরি ব্যক্তিগত নৈতিকতার সব সীমা অতিক্রম করে যায়। অনেক এমডি কোম্পানি পরিচালনার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে একাডেমিক কৃতিত্ব দেখিয়ে চলেছেন, তার তুলনা পাওয়া ভার। কিছু দিন আগে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) এক ভাইভা বোর্ডের সামনে প্রকৃত সনদ দেখাতে পারেন নি একাধিক বীমা কোম্পানির এমডি। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা নিয়ে জালিয়াতি নাকি হরহামেশাই হয়। এসব সমস্যার সূত্র মেলে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার দুর্বল নজরদারির মধ্যে। সেজন্য তাদের দক্ষ জনবলের ঘাটতিকে দায়ী করবেন অনেকে। এত কিছুর মধ্যে সুখবর হলো, আমাদের বীমা খাত অভিন্ন সফটওয়ারের আওতায় আসছে। তবে এর সাফল্য কিন্তু নির্ভর করবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সফলতার ওপর। সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি রয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বীমা খাতে সুশাসনের সঙ্গে ভোক্তাকল্যাণ প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। সেখানে অভিন্ন সফটওয়্যার চালু হলে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে নিঃসন্দেহে। সম্প্রতি আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণপূর্বক বীমা কোম্পানিগুলো কর্তৃক নির্ধারিত ব্যয় সীমা অতিক্রম নাকি চিহ্নিত করেছে আইডিআরএ। সেখানে লাগামহীনভাবে ব্যয়ের ঘটনাও রয়েছে কোনো কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে। ওই ধরনের বেপরোয়া আচরণ ঠেকাতে অভিন্ন সফটওয়্যার বেশ সহায়ক হবে। আবার মাঝেমধ্যে এমনটি ঘটে যে, একেক কোম্পানি একেক সফটওয়্যার ব্যবহারের ফলে অনেক সময় জরুরি তথ্য উদ্ধার করতে গিয়ে হিমশিম খান নিয়ন্ত্রকরা। তাই বীমা খাতের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জববাদিহিতা নিশ্চিত করতে অভিন্ন সফটওয়্যারের বিকল্প নেই বললে চলে। সবাই প্রত্যাশা করবেন, এখন দ্রুত বাস্তবায়নপূর্বক খাতে এর দৃশ্যমান সুফল ফুটিয়ে তুলতে যত্নবান হবেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে

পানিসম্পদ সুরক্ষায় জোর দিন

এরই মধ্যে গতকাল বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হয়েছে বিশ্ব পানি দিবস। নদী মাতৃক বাংলাদেশে পানিসম্পদ সুরক্ষায় গুরুত্বের কথা দেশে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিও তুলে ধরা দরকার অবস্থায় প্রকৃত চিত্র পেতে। খেয়াল করার মতো বিষয়, বিশেষত ব্যবহার উপযোগী পানির সুব্যবস্থাপনা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নানা বিতর্ক এগিয়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোয়। অনেকের শঙ্কা, আগামীতে পানিসম্পদের ভোগদখল নিয়ে মারাত্মক সহিংসতার সৃষ্টি হতে পারে। আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি চরম দৃষ্টান্তের দিকে তাকালে সে সন্দেহকে হেসে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে আফ্রিকার কিছু দেশে যেমন সম্প্রসারণশীল পানি সংকট নিয়ে সমস্যা, আমাদের প্রতিবন্ধকতা অনেকটাই পানিসসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আর সেখানে অন্যতম বড় বাধা, আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি ভাগাভাগি জনিত জটিলতা। বলার অপেক্ষা রাখে না, তিস্তাসহ সব অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের একটা সুরাহা হওয়া দরকার দ্রুত। কিন্তু তাতেই সব মুশকিল আসানের প্রত্যাশা যুক্তিযুক্ত নয়; বিশেষত যেখানে অভ্যন্তরীণ পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সুদৃষ্টি উল্লেখযোগ্যভাবে অপ্রতুল। অথচ এর প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি ব্যতীত টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয় বলে অনেকের অভিমত। আরেকটি বিষয়, চলতি বছরই সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাবে; পরবর্তী বৈশ্বিক টার্গেট- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। আর সেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণভাবে যুক্ত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ইস্যুটি। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য উন্নয়নশীল অনেক দেশের সামনেই দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। সে ধারা অব্যাহত থাকুক, এমনটিই আমরা চাই।

পানি ছাড়া কৃষি উন্নয়ন কল্পনাতীত। অথচ বিশেষত স্থানীয় কৃষিকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির যে অপব্যবহার হয়, সেটিও উদ্বেগজনক। অন্যদিকে নেই ভূ-উপরস্থ পানি ব্যবহারের সুপরিকল্পনা। আবার শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে পানির চাহিদা বেড়েছে বৈকি। কিন্তু বহুদিন ধরে কলকারখানায় পানি ব্যবস্থাপনার চলেছে দুর্দশা। ঢাকার পার্শ্ববর্তী বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার বর্তমান ‘রূপ’ দেখে তার অনেকটা আন্দাজ করা যায়। তবে বাস্তবতা হলো, শুধু বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা-তুরাগ নয়, নদীকেন্দ্রিক শিল্পনগরীগুলোর পানি ব্যবস্থাপনায় অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। নইলে এক পাড়ে মারাত্মক নদী দূষণ আর অন্যপাড়ে তীর দখল সমানতালে চলত কিনা সন্দেহ। নতুন করা নে বললেও চলে, এসব রোধের জন্য সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে; তার অংশ হিসেবে এখনো অভিযান পরিচালিত হয়। কিন্তু নদীর তীর দখল পুরোপুরি নির্মূল হয় নি; যেমন হয় নি পানি দূষণ রোধে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। এক্ষেত্রে একটা বিরাট কর্মপরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা ইটিপি। অথচ মাঝেমধ্যে পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত খবর মেলে তাতে অনুমান করতে কষ্ট হয় না, ইটিপি বাস্তবায়নে মনোযোগই নেই একশ্রেণীর উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের। সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কিছু দুর্বলতা রয়েছে বলেও প্রতীয়মান। আরো সমস্যা, পানিসম্পদ সুরক্ষায় বলিষ্ঠ রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের অভাব। এসবের প্রতি কর্তৃপক্ষের নজর দিতে হবে। নইলে প্রথমত. টেকসই উন্নয়ন অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে এবং দ্বিতীয়ত. দেশে শিল্পায়ন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে পরিবেশ নীতির বাস্তবায়ন।

লি কুয়ান ইউয়ের অর্থনৈতিক কীর্তি

এশিয়ার সামনে বলিষ্ঠ দৃষ্টান্ত

পরিহাসের বিষয়, সদ্য প্রয়াত ‘আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক’ লি কুয়ান ইউয়ের জীবনের শেষ লক্ষ্যটি পূরণ হয় নি। তার ইচ্ছা ছিল, কোনো রকমে দীর্ঘ জীবন যেন পার করতে না হয়; দ্রুতই হুট করে একদিন চলে যায়। তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ৯১ বছর বয়সে। এ নিয়ে তার মনোভাব যেমনই থাকুক দেশটির অনেকের আফসোস থাকা স্বাভাবিক। সেটির অন্যতম বড় কারণ, চলতি বছর ৯ আগস্ট স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে দেশটিতে। ফলে ৫০ বছরে সিঙ্গাপুর কর্তৃক অর্জিত সমৃদ্ধির মাইলফলক দেখার সৌভাগ্য হলো না তার। তবু তিনি যতটা দেখেছেন, নিজ কর্মগুণে অন্যদের যা দেখিয়েছেন, অবিসংবাদিত না হলেও প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। পরিণত বয়স হওয়া সত্ত্বেও এমন একজন নেতার প্রয়াণে শোকগ্রস্ত দেশটির প্রতি রইল বণিক বার্তার সহানুভুতি। একই সঙ্গে প্রত্যাশা থাকবে, লি’র সুকীর্তিগুলো এশিয়ার সামনে প্রেরণাদায়ী দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক।

বললে ভুল হবে না, জীবনের সিংহভাগ সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ব্যয় করেছেন লি। এটি করতে গিয়ে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত একাধিক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেন তিনি। বিশেষত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি তার কঠোর মনোভাব বেশ সমালোচিত হয়েছে দেশের বাইরে। আবার গণমাধ্যমকে খাঁচায় বন্দী করার নিন্দাও তার রয়েছে বৈকি। অভিযোগগুলো সম্পূর্ণভাবে সত্য নয় বলে কারো কারো অভিমত। তাদের ধারণা, এমন ভাবমূর্তি গড়ে ওঠার পেছনে লি’র আপসহীন মনোভাবের যেমন দায় ছিল, প্রতিপক্ষের অতিরঞ্জনের প্রবণতাও কম দায় নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একবার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে সিঙ্গাপুরে চুইংগাম খাওয়া নিষিদ্ধের পর তা বাস্তবায়নে শক্ত অবস্থান গ্রহণের পর কিছু মিডিয়া বিষয়টিকে ‘যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করে। অবশ্য অস্বীকার করা যাবে না, তিনি গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ছিলেন; ‘উগ্র’ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনেও তার হাত কাঁপতে দেখা যায় নি। অনেকেই মনে করেন, সিঙ্গাপুরের উন্নয়নের স্বার্থে এত কঠোরতার প্রয়োজন ছিল না। খেয়াল করার মতো বিষয়, তার পরও লি’র মানবাধিকার সংক্রান্ত রেকর্ড তৎকালে প্রতিবেশী কোনো দেশের তুলনায় নিম্নগামী ছিল না। তবু এসব বিতর্কিত ইস্যু নয়, সবাই চাইবেন লি’র কাজ অনুপ্রেরণার উৎস হোক।

সর্বদা প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণে দৃষ্টি দিয়েছেন তিনি। ১৯৬৫ সালে মাথাপিছু ৫০০ ডলারের একটি অর্থনীতি যে এখন ৫৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে, সেক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত অবদানের চেয়েও প্রাতিষ্ঠানিক অবদান বেশি বলে প্রতীয়মান। অর্থনৈতিক অগ্রগতি থেকে স্থিতিশীলভাবে সমৃদ্ধি অর্জনে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের। ক্ষমতা গ্রহণের প্রাক্কালে দুর্নীতিসহ সার্বিক শাসন পরিস্থিতি মোটেই সুখকর ছিল না। চীনের সাংহাই শহরের নয় ভাগের একভাগ সমতুল্য এ ভূখণ্ডের তেমন গুরুত্বও ছিল না আন্তর্জাতিক মহলের কাছে। এখন দেশটির বন্দর বিশ্বের পাঁচটি ব্যস্ততম বন্দরের একটি। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকে এটি মুক্ততম দ্বিতীয় দেশ। দুর্নীতির ধারণা সূচকে সিঙ্গাপুরের অবস্থান স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর কাছাকাছি। কাঙ্ক্ষিত সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদেরও সুশাসনের ওপর জোর দিতে হবে। শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ছাড়া মিলবে না সেটি। লি’র আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি ছিল, অর্থনৈতিক বৈচিত্রায়ন নিশ্চিতকরণ। এটি ছাড়া ব্যাপকভাবে আমদানিনির্ভর সিঙ্গাপুরের পক্ষে স্বনির্ভরতা অর্জন কঠিন হতো। সবাই চাইবেন, দেশটির ওসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেবেন আমাদের নীতিনির্ধারকরা।

চিনির বাজারে আমদানি কোটা

হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন?

আন্তর্জাতিক পণ্য বাজার নিম্নমুখী ধারায় থাকার খবর প্রকাশিত হয়েছিল কয়েক সপ্তাহ আগের বণিক বার্তায়। সেখানে উল্লেখ করা হয় গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে চাল, গম, চিনি, ভোজ্যতেল, চা ডিজেলসহ প্রায় সব পণ্যেরই মূল্যসূচক। হিসাবটি ২০০৫ সালকে ভিত্তি ধরে ১০০-র ভিত্তিতে তৈরি। জ্বালানি ও অজ্বালানি সব পণ্যই অন্তর্ভুক্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঐ সূচকে। এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ফাও) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক জানুয়ারির চেয়ে ১ দশমিক ৮ পয়েন্ট কমেছে শুধু নয়, খাদ্যপণ্যের দাম গত ৫৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন এখন। বলা অপেক্ষা রাখে না, খাদ্যপণ্যের বিশ্ববাজার বেশ শান্ত। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থায় সামান্য ভিন্নতা থাকতে পারে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে। তবে সেটি গ্রাহ্য করার মতো নয় বলে অনেকের অভিমত। এরই মধ্যে অপরিশোধিত চিনি আমদানির ওপর সরকার কোটা আরোপ করেছে বলে প্রতিবেদন গতকালের বণিক বার্তার; তদানুযায়ী বছরে ১৩ লাখ ৯০ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করতে পারবে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের প্রতিবেদককে শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, ‘অস্থিতিশীল’ পরিবেশ বিরাজ করছে চিনির বাজারে; শর্ত নাকি মানছেন না আমদানিকারকরা। এ অবস্থায় পরিস্থিতির অধিকতর অধোগতি রোধে নেয়া হলো আগাম ব্যবস্থাটি। অনেকের শঙ্কা, এতে হিতে বিপরীত না হয়- বিশেষত দেশে যেখানে চিনির বাজার এক রকম স্থিতিশীলই রয়েছে বলা যায়। ফলে হঠাৎ ওমন সিদ্ধান্ত কেন তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বৈকি।

রমজান মাস আসতে বেশি দেরি নেই। একে সামনে রেখে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী কর্তৃক চিনির দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টাকে কিন্তু একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আবার আমদানিকারকদের এ যুক্তিও মানতে হবে, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে চিনির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য আমদানিতে কোটা পদ্ধতি খুবই বেমানান। শুল্ক আইন, ১৯৬৯ ও আমদানিনীতি আদেশ ২০১২-১৩ এবং প্রযোজ্য অন্যান্য আইন অনুযায়ীও নাকি আমদানিযোগ্য পণ্য অপরিশোধিত চিনির আমদানির বেলায় কোটা আরোপের সুযোগ নেই। তবে মিল মালিকদের আসল ভয় বোধকরি এটাই যে, কোটায় চিনি আমদানি করতে হলে সক্ষমতা অনুযায়ী চালানো যাবে না রিফাইনারি এবং সেক্ষেত্রে আর্থিক লোকসানের মুখে পড়তে পারেন তারা। শিল্প মন্ত্রণালয় অবশ্য তেমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। তারা মনে করে, কোটা আরোপের প্রভাব পড়বে না চিনির দামে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভোক্তা কল্যাণের পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণের পর সংশ্লিষ্ট ব্যবসার প্রতিও সরকার সঠিকভাবে দৃষ্টি দেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

মেধাসত্ত্ব অর্জনে সার্বিক অবস্থান

সন্তোষজনক নয়, বরং দুশ্চিন্তা উদ্রেককারী

পেটেন্ট, শিল্পনকশা, ট্রেডমার্ক ও কপিরাইট মেধাসত্বের আওতাভুক্ত হলেও স্বাভাবিকভাবেই পেটেন্টকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয় উদ্ভাবন সংক্রান্ত স্বত্ব হওয়ায়। এক্ষেত্রে অসন্তোষজনক খবর রয়েছে গতকালের এক জাতীয় দৈনিকের সংবাদে। তাতে দেখা যায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে (ডিপিডিটি) ২০১৩ সালে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তির কাছ থেকে আবেদন জমা পড়ে ৬০টি; সংখ্যাটি ৪৪ ছিল ঠিক এর পরের বছর। বিস্তারিত প্রতিবেদন আরো হতাশাজনক। এক হিসাব মতে, আবেদনকৃত মোট পেটেন্টে বিদেশীদের অবদান ৮৫ শতাংশ। তাই দেখা যায়, গত বছর ডিপিডিটি কর্তৃক অনুমোদিত ১২১টি পেটেন্টের মধ্যে মাত্র ২১টি রয়েছে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবনের পেটেন্ট। তবে তুলনামূলকভাবে উন্নত পরিস্থিতি বিরাজ করছে শিল্পনকশা, ট্রেডমার্ক ও কপিরাইটের বেলায়। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, বিশ্বায়নের যুগে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ব্যাপকভাবে পেটেন্টের ওপর নির্ভরশীল। লক্ষ্যণীয়, অন্যান্যদের তুলনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের উদ্যোক্তাদের এক বড় ভরসাস্থল হচ্ছে উদ্ভাবন। এতে পিছিয়ে থাকার মানে বিশ্বায়নের অনেক সহজ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকা। তাছাড়া কম-বেশি সব দেশের জিডিপিতেই এর ভূমিকা বাড়ছে। আইসিটি’র মতো না হলেও সেবা, শিল্প ও কৃষি খাতে স্থানীয় পেটেন্ট সত্বের বৃদ্ধি জরুরি। নইলে এগুলোর জন্য পরবর্তীতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে সন্দেহ নেই। ফলে সরকারের উচিৎ ইস্যুটিকে যথাযথভাবে আমলে নেয়া।

খেয়াল করার মতো বিষয়, এ স্থানীয় পরিস্থিতির প্রতিফলন বিদ্যমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, পেটেন্ট সত্ব পাওয়ার বেলায় বাংলাদেশের অবস্থান নেপালের কাছাকাছি এবং আফ্রিকার কিছু দেশের তুলনায় কম। নেপালের সঙ্গে আবার দুই ক্যাটাগরিতে ব্যবধান চোখে পড়ে; এক. পেটেন্ট অর্জনে প্রবৃদ্ধি এবং দুই. স্থানীয় প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তি কর্তৃক পেটেন্ট প্রাপ্তি। দুঃখজনক হলো, উভয় ইস্যুতে যতটকুই হোক পিছিয়ে রয়েছি আমরা। তদুপরি বিশেষভাবে উল্লেখ্য, আমাদের স্থানীয় পেটেন্ট প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক; অর্থাৎ প্রতি বছরই কমছে পেটেন্টপ্রাপ্তদের সংখ্যা। চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এরই মধ্যে ‘পেটেন্ট তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব তুলেছেন অনেকে। আলোচনাটি বাস্তবায়নের দিকে যত দ্রুত এগিয়ে নেয়া যাবে ততই মঙ্গল। পাশাপাশি গবেষণার সার্বিক পরিবেশের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। নানা কারণে স্থানীয় গবেষকরা বিদেশে পাড়ি জমান। তার কারণ ও প্রতিকারও অজানা নয়। আসলে পেটেন্ট অর্জনে আর্থিকসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। আর সেজন্য দরকার কর্তৃপক্ষের বাড়তি মনোযোগ।

অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি

উত্তরণে চাই স্বচ্ছতা-রাজনৈতিক সদিচ্ছা

স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্ব আরোপ করে এসেছে ঘনবসতিপূর্ণ উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সরকারগুলো। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় এনজিও এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার অবদানও অনস্বীকার্য। তাতে বাড়তি চাপ যুক্ত হয় ২০০০ সালের প্রাক্কালে- জাতিসংঘ কর্তৃক সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হলে। তার সময়সীমা এ বছরই শেষ হওয়ার কথা। সৌভাগ্যের বিষয়, সংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় ভূমিকায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন হতাশাজনক নয়। লক্ষ্যণীয়, এরই দেশে ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাসের পেছনে বড় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। জনকল্যাণের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটেও এর প্রভাবকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। অথচ অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ পর্যন্ত দুর্নীতি-অনিয়মমুক্ত ও সুব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দক্ষভাবে সম্পন্ন কোনো সামাজিক নিরাপত্তামূলক হস্তক্ষেপের কথা শোনা যায়। তদুপরি সোমবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচির বর্তমান অবস্থা ও উত্তরণ’ শীর্ষক সেমিনারে যেসব বক্তব্য উঠে এসেছে তা আরো চিন্তা জাগানিয়া। গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ উক্ত প্রতিবেদনে প্রধান অতিথি বলেছেন, কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলে হলে স্থানীয়ভাবে অংশগ্রহণকারী সবার চরিত্র পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া দেশপ্রেম থাকতে হবে। সার্বিকভাবে এসব কর্মসূচির দুর্নীতি কমানো গেলে সম্ভব হবে দারিদ্র্যকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা। বলা বাহুল্য, শুধু অনিয়ম-দুর্নীতি নয় অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার জন্যও অপচয় ঘটছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বরাদ্দের। এমন পরিস্থিতিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে দেরি করা চলবে না।

এ উদ্দেশ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে অধিকতর স্বচ্ছতা আনায়ন এবং বলিষ্ঠ রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শনের বিকল্প নেই। সেজন্য এও মাথায় রাখা দরকার, দারিদ্র্য হ্রাস পেলেও এখনো তা পুরোপুরি নির্মূল নয়। তাছাড়া এর সঙ্গে শিশুকিশোরদের দারিদ্র, অপুষ্টি, নিম্ন মানব পুঁজি সঞ্চয়ন এবং শ্রমশক্তির শোষণ ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ফলে সামাজিক নিরাপত্তামূলক হস্তক্ষেপ শুধু অব্যাহত নয়, একে আরো বিস্তৃত করা প্রয়োজন বলে কারো কারো অভিমত। তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে নিছক কল্যাণমূলক ব্যবস্থা হিসেবে না দেখে এটিকে গরিবমুখী উন্নয়নধর্মী কৌশল হিসেবে দেখা উচিৎ। সমস্যা হলো, অনেক সময় এতে যুক্ত হয়ে পড়ে ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক স্বার্থ। ফলে কর্মসূচিগুলোর কাঙ্ক্ষিত কার্যকারিতা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর সে অবস্থায় পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকারের শক্ত অবস্থান গ্রহণের বিকল্প নেই বললেই চলে।

Published in Bonik Barta, February 2015

১২’র স্থলে ৪৮ ঘণ্টা!

বন্দর-সক্ষমতা বৃদ্ধির সুফল বিনষ্টের শঙ্কা

টানা অবরোধের ওপর মাঝে মধ্যে হরতালের কুপ্রভাব যে রেল পরিবহনের ওপর পড়ছে, ব্যাখ্যা না করলেও তা সহজে বোধগম্য। এর মধ্যে আমদানিকৃত পণ্য পরিবহনের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানা যায়। তদুপরি বাড়তি ভাবনা গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়েছে, ৩১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় কমলাপুর আইসিডিতে পৌঁছুতে রেলপথে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪ গুণ বেশি সময়- ১২ ঘণ্টার স্থলে দু’দিন! জাহাজ থেকে নামানো পণ্যের সঙ্গে সেগুলো পরিবহনের সামঞ্জস্য না থাকায় নিয়মিত কনটেইনার পড়ে থাকছে বন্দর চত্বরে। এদিকে বন্দর থেকে পণ্য নামার পর ব্যবসায়ীরা নাকি বিনা মাশুলে কনটেইনার রাখতে পারেন ৪ দিন পর্যন্ত। ওই সময়সীমা অতিবাহিত হলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মাশুল পরিশোধ করতে হয় কনটেইনারের আকার অনুসারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেক্ষেত্রে চত্বরে জমা হওয়া কনটেইনারের বিপরীতে নেয়া মাশুল (যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত মাশুল না নেয়ার অনুরোধ রয়েছে) ‘প্রভাবিত’ করতে পারে উৎপাদন ব্যয়কে; এর প্রতিফলন হয়তো থাকবে বাংলাদেশে মূল্য সংযোজিত রফতানিযোগ্যসহ অন্যান্য পণ্যেও। কয়েকটি দুর্দশাগ্রস্ত অঞ্চল বাদে অধিকাংশ দেশ যেখানে বছরের শুরুতে উন্নয়ন ও ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে ভাবনায় কাটায়, সেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নববর্ষের আরম্ভে আমাদের দিন কাটছে জীবন ও অর্থনীতির শঙ্কায়। কার্যত রেলপথে বাণিজ্য ও শিল্প পণ্য আমদানিকারকরাও পড়েছেন একই বিড়ম্বনায়।

রেলপথে আমদানি পণ্য পরিবহন হ্রাসের কারণ ট্রেনে যাত্রী পরিবহন বৃদ্ধি। অনস্বীকার্য যে, নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে পরিবহন স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না এবং তা সম্ভবও নয়। সেজন্য রাজনৈতিক মীমাংসার বিকল্প পাওয়াও কঠিন। কমলাপুর আইসিডির কমিশনার আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছিলেন, রেলওয়েকে তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। আবার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আমদানি পণ্য পরিবহনে রেল সেবা নেয়ায় আগ্রহ নাকি কমছে। অথচ কনটেইনার পরিবহনে রেল সেবাকে প্রতিস্থাপন করা কঠিন। আবার বন্দর সক্ষমতাও বেড়েছে সম্প্রতি। চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কিংবা জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান নতুন করে ব্যাখ্যার দরকার নেই। চলমান বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা উত্তরোত্তর বাড়বে বলেই মনে করেন কেউ কেউ। কিন্তু সুযোগটি দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জন্য অবারিত থাকবে কিনা, সংশয় রয়েছে তা নিয়ে। এ অবস্থায় সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সব পক্ষের কাছে আরো বিবেচনাই প্রত্যাশা করবেন জনগণ।

বায়ার্স ফোরামের উদ্বেগ

রফতানি সম্ভাবনাকে বলি কেন?

সোমবার রাজধানীতে বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিজিএমইএ ও বায়ার্স ফোরামের প্রতিনিধিদের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত নিয়মিত বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ হয়েছে সে বিষয়ে না ভেবে থাকা কঠিন। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে আরো দেখা যাচ্ছে, ক্রেতা প্রতিনিধিরা আঁচ করতে চেয়েছেন- উদ্ভূত অস্থির পরিস্থিতি কত সময় পর্যন্ত চলতে পারে। তাদের এ বক্তব্যও স্মর্তব্য যে, বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চান না ক্রেতারা। অবশ্য সেটা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছুলে তারা যে ভিন্ন পথে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে, সে সংশয়ের পক্ষে যুক্তিও মেলে খানিকটা। নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে রফতানি ও রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। রফতানির বেলায় বাড়তি জটিলতা হলো, কোনো শিল্পই এখন পর্যন্ত গার্মেন্টের পাশে দাঁড়াতে পারে নি। সে অবস্থায় তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় আমাদের অংশে যতদিন স্বভাবিকতা না ফিরবে ততদিন নিজেদেরই ক্ষতি। এমনিতেই তাজরীন, রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর সাম্প্রতিক সময়ে বছরের শুরুতেই সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখে বিদেশী ক্রেতাদের ঘাবড়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। উপলব্ধি করা প্রয়োজন, বিশ্ব বাজারের আমাদের গার্মেন্ট পণ্যের প্রতিযোগী কম নেই। অন্তর্কলহ যদি এখানকার সম্ভাবনা বিনষ্ট করে তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেয়, সেটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য জাহাজীকরণ করতে না পারলে ক্র্যাদেশ বাতিল হয়ে যেতে পারে। অনেকে আবার কোম্পানির সুনামসহ নানা বিবেচনায় অধিক ব্যয়ে হলেও আকাশপথে পণ্য রফতানি করেন। এরই মধ্যে গার্মেন্ট পণ্য জাহাজীকরণে বিলম্বের খবর মিলেছেন। দর হ্রাস কিংবা রফতানি আদেশ বাতিলের ঘটনাও কম ঘটছে না। নাশকতার আশঙ্কা নিয়ে কারখানায় যাচ্ছেন শ্রমিকরা। মালিকদের দুশ্চিন্তা রফতানি শুধু নয় কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি নিয়েও। ফলে সবার সচেতন হওয়া আরো সুবিবেচনার পরিচয় দেয়া দরকার। বাংলাদেশের রফতানি সম্ভাবনাকে রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হতে দেয়া চলবে না। এমনিতেই দেশের বিনিয়োগ চিত্র সন্তোষজনক নয়। তা নিয়ে গত বছরের শেষার্ধ থেকেই বিভিন্ন রকম কথাবার্তা চলছিল। অথচ তার মধ্যেই শুরু হয় লাগামহীন রাজনৈতিক কর্মসূচি। যেখানে মানুষকে জানের ভয় নিয়ে চলতে হয়, সেখানে কীভাবে সম্ভব অর্থনীতির উত্তরোত্তর বিকাশ? পরিস্থিতির স্বাভাবিকতা ফেরাতে ক্রমাগত আহ্বান জানিয়েই যাচ্ছেন উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টদের মনে দ্রুত শুভবুদ্ধির উদয় হোক; আমাদের রফতানি বাণিজ্য আরো প্রসার লাভ করুক- এটাই আজ প্রত্যাশিত।

বিডিএফ ফোরাম

সহযোগিতায় সম্প্রসারিত হোক উন্নয়ন

২০১০ সালে অনুষ্ঠিতটির প্রায় পাঁচ বছর পর চলতি বছর এপ্রিলে আবার বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের (বিডিএফ) বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে যে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, সেটি খুবই আশাব্যঞ্জক। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সরকারের মধ্যে সৃষ্ট দূরত্ব দূর হবে। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র কেন্দ্র করে ওই ব্যবধান দেখা দেয়। অনেকের ধারণা তার জের ধরে সম্পর্কে টানাপড়েন প্রতীয়মান হয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ (আইডিবি) অন্যান্যদের সঙ্গে। পরবর্তীতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও জাতীয় নির্বাচনের কারণে তেমন আগ্রহ নাকি দেখায় নি সরকারও। সুখবর যে, আসন্ন বৈঠকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি), দারিদ্র বিমোচনে সরকারি উদ্যোগ ও ভিশন-২০২১ বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে জানা যায়। ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত বিডিএফ বৈঠকে জ্বালানি খাতে আমাদের পিছিয়ে থাকা নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সুশাসনের পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার ইস্যু নিয়েও কথা উঠেছিল। অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক নানা অভিঘাত থেকে নাজুক জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা জালের কার্যকারিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন তাতে। খেয়াল করার মতো বিষয়, বিডিএফ বৈঠকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের ওপর জোর দেয়া হয়েছিল বিশেষভাবে। আজ পাঁচ বছর পর, বৈঠক অনুষ্ঠিত না হোক- আগের বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসা ইস্যুগুলোর মীমাংসা কতটা হয়েছে, সে হিসাব নিশ্চয়ই করে দেখতে চাইবেন অনেকে। সেক্ষেত্রে পরিতুষ্টির সুযোগ আছে কি?

অনস্বীকার্য যে, একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ কোনো দেশের পক্ষেই একা মেটানো সম্ভব নয়। কথাটি উন্নয়নশীল এ দেশের বেলায় আরো বেশি করে খাটে। নিঃসন্দেহে উন্নয়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। অনেক পদক্ষেপ আসবে বেসরকারি খাত থেকেও। কিন্তু সেসবের কার্যকারিতা বাড়াতে কিছু পরিপূরক উদ্যোগ দরকার, যা উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা ভিন্ন সম্ভব নয়। উন্নয়ন নিশ্চিতে ব্যবহার্য সম্পদের স্বচ্ছ ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিতের জন্যও তাদের থাকা প্রয়োজন। লক্ষ্যণীয়, বিডিএফের গত বৈঠকে উন্নয়ন সহযোগীরা বলেছিল, জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কৌশলই তাদের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মেটানোর প্রধান হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃত। এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় তদারকি ও মূল্যায়ন সক্ষমতা আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে উপযুক্ত সহযোগিতা জোগাতে আগ্রহী তারা। বিষয়গুলো নতুন করে উপলব্ধির দরকার আছে বৈকি। কারো কারো ধারণা, পদ্মা সেতু প্রশ্নে সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কে যে নিম্নমুখীতা দেখা গেছে সেজন্য সিংহভাগ দায় সমন্বয়ের ঘাটতি। এদিকে যথাযথ সমন্বয়ের অভাবে স্থানীয় বহু প্রকল্পে অর্থ অপচয়ের দৃষ্টান্ত রয়েছে। সমন্বয়ের অভাব কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্প অগ্রাধিকার প্রদান প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টির জন্যও দায়ী। এগুলোর সঙ্গে সরকারি ক্রয় ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার সংযোগও নতুন করে ব্যাখ্যার কিছু নেই। এ অবস্থায় সরকারের উচিৎ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে এগিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি নতুন নতুন ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা বৃদ্ধির চেষ্টাও করতে হবে।

ওষুধের দামে উর্ধ্বগতি

নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক সক্রিয়তা প্রয়োজন

গত সোমবার এক অ্যান্টিবায়োটিক এবং বৃহস্পতিবার প্যারাসিটামল গ্রুপের আরেকটি ওষুধের দাম নিয়ে বণিক বার্তায় প্রকাশ খবর দুটি অনেক সতর্ক পাঠকেরই নজরে এসে থাকবে। অনুসন্ধানপূর্বক আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ট্যাবলেট তৈরির মূল উপাদান বর্তমান বাজারে বিক্রি হয় কেজিপ্রতি অনুর্ধ্ব ৩ হাজার টাকায়; যা থেকে ৫০০ মিলিগ্রামের ২ হাজার ট্যাবলেট তৈরি করা সম্ভব। কাঁচামাল, ফয়েলিং, লেবেলিং, প্যাকেজিং, কর্মী ও যন্ত্রপাতি ব্যয় এবং যৌক্তিক মুনাফাসহ এর দাম ২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ সাধারণভাবে তা ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে! আপাতদৃষ্টিতে পরিস্থিতি খানিকটা ভালো মনে হতে পারে, প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধটির ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে দেড় টাকার কিছু কম অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে ভোক্তাকে। তবে এখানে খেয়াল করার মতো বিষয়, প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেশে ব্যাপকভাবে প্রচলতি এবং সরকার যে কয়েকটি ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে প্যারাসিটামল সেগুলোর অন্যতম। একশ্রেণীর কোম্পানি কৌশলে সেটি বাজারজাত করে নিচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা। এমন পরিস্থিতিতে ওষুধ প্রশাসনের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশাই করবেন সবাই। পাশাপাশি অন্য কোনো ওষুধের বেলায় যেন অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটতে না পারে সেজন্যও নিতে হবে উপযুক্ত ব্যবস্থা।

একই গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ওষুষের দামে তারতম্য কেন, তার জবাবে কিছু বাধা বুলি শোনা যায়। তাতে প্রথমেই ওঠে কাঁচামালের গুণগত মানের কথা; দ্বিতীয়ত আসে গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসের (জিএমপি) ইস্যু। এ দুটির কোনো যুক্তিই হেলাফেলা করার নয়। সারা বিশ্বের তার নজির রয়েছে। কথা হলো, তাই বলে একই ওষুধের দামে এক কোম্পানি থেকে আরেক কোম্পানির মধ্যে কয়েকগুণ ব্যবধান সৃষ্টি হতে পারে? আর তাই যদি হয়, সরকারের উচিৎ নিম্ন মানের ওষুধ কেউ ব্যবহার করছে কিনা সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখা। নাকি ‘বিপণন ব্যয়’ বৃদ্ধিই উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য দায়ী? তেমন ঘটনায় ওষুধ মালিক সমিতিরও উচিৎ হবে সরকারকে সহায়তা জোগানো। দুঃখজনক হলো, এসব অভিযোগ এমন সময়ে উঠছে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের ওষুধের সুনাম বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেন, তাদের প্রচেষ্টার পাশাপাশি এক্ষেত্রে বিরাট অবদান রয়েছে সরকারের। তাই ওই সুযোগের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে তাদের মনোযোগ এবং ওষুধ প্রশাসনের উদ্যোগ বৃদ্ধিই কাম্য এখন।

ছাড়েও জমছে না পর্যটন ব্যবসা

অর্থনীতিকে দুর্বলকারী রাজনীতির অবসান কাম্য

অবরোধ-হরতালের নামে চলা রাজনৈতিক কর্মসূচির সহিংস রূপ দেখে নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ কয়েক সপ্তাহ আগেই দিয়েছিল একাধিক বিদেশী দূতাবাস। ফলে এরই মধ্যে নাকি বাংলাদেশে ভ্রমণ বাতিল করেছেন কমপক্ষে ৫ হাজার বিদেশী পর্যটক। স্থানীয় পর্যটকদের মধ্যেও তেমন সাড়া নেই বোধগম্য কারণে। বিশেষত কুমিল্লার ঘটনার পর মৃত্যু ফাঁদ ধরতে নিয়ে সড়কপথ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন সবাই। রেলপথে তুলনামূলকভাবে খানিকটা নিরাপদে চলাচলের সুযোগ থাকলেও তাতে হামলার ঘটনা ঘটছে ইদানীং; সঙ্গে শিডিউল বিপর্যয় ও বগি লাইনচ্যুতির দুর্ভোগ তো আছেই। নৌপথে আবার অনেককে চলাচল করতে হচ্ছে ছিনতাই বা ডাকাতি হওয়ার ভয় নিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে কেবল যারা বিমানে চলাচলের সামর্থ্য রাখেন তাদের পক্ষেই কক্সবাজারের মতো পর্যটন স্পট ঘুরে আসা সম্ভব। অথচ নভেম্বর-মার্চ পর্যটন মৌসুমের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ছাড় দিয়েও কক্সবাজার-সিলেটসহ গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্রের হোটেল-মোটেল-রিসোর্টে অতিথি মিলছে না বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন অবস্থার দ্রুত উন্নতি না হলে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকার লোকসানে পড়বে পর্যটন খাত; সেক্ষেত্রে এক কক্সবাজারেই বিনষ্ট হতে পারে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার বিষয়টি অস্বীকার করা যাবে না। তবে সেটি বিকাশের পথে অন্যতম অন্তরায় হলো, বাজার সম্প্রসারণ। কেউ কেউ মনে করেন, খাতটি থেকে অর্থনীতিকে লাভবান করতে চাইলে উপযুক্ত বাজার সৃষ্টি করতে হবে। এখন পর্যন্ত আমাদের পর্যটন বাজার যথেষ্ট সংকুচিত বলা যায়। এক্ষেত্রে সরকারি প্রচেষ্টা নেয়া হয় নি বলা যাবে না। বরং ধারাবাহিকভাবেই আমাদের পর্যটন খাত এগিয়েছে ধীরে ধীরে। সেই অগ্রগতি এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সহিংসতায়। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, কক্সবাজারে ছোট-বড় সব হোটেলেই ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় চলছে; কিন্তু দেখা নেই অতিথির! অনেক হোটেল-মোটেলে খালি পড়ে আছে ৯০-৯৫ শতাংশ কক্ষ। সিলেটের একাধিক বড় রিসোর্টের রুম বুকিং এক মাসে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে বলা জানা যায়। এমন পরিস্থিতি থেকে অর্থনীতির মুক্তি প্রয়োজন; বিশ্ববাজারে নিজেদের ভাবমূর্তি নিয়েও তো ভাবতে পারে। সেজন্য রাজনৈতিক সমঝোতার বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এ বিষয়ে দ্রুতই উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে বলে সবার প্রত্যাশা।

স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব স্থানীয় সরকারের!

এর দ্রুত সুরাহা হওয়া চাই

বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে শিশুর পুষ্টি ও নারীর গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত ‘ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটি স্থানীয় সরকারের আওতায় বাস্তবায়নের যে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায় তা ভাবনা জাগায় বৈকি। সাধারণভাবে এ ধরনের প্রকল্প স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন কোনো বিভাগের করার কথা। জানা যায়, এক্ষেত্রে কারিগরি দিক থেকে কিছু জটিল বিষয় রয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে এর আওতায়। ২০ থেকে ৬০ মাস বয়সী শিশুদের তিন মাস অন্তর গ্রোথসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে আলোচ্য প্রকল্পের সহায়তায়। এদিকে পাইলট প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ তুলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগ (আইএমইডি) নাকি স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার সুপারিশ করেছে। খবরে আরো প্রকাশ, বিষয়টি নিয়ে একাধিক মন্ত্রী ও কর্মকর্তা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্ভূত সমস্যার দ্রুত সুরাহাই দেখতে চাইবেন সবাই।

খেলা করার মতো বিষয়, অনেকে বলছেন- এ ধরনের প্রকল্প স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা উচিৎ। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের কাছে প্রকল্পটি সম্ভবত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। ফলে তারা সে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছে; তাদের ধারণা, এটি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য। আবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রকল্পটি প্রণয়নের কোনো পর্যায়ে সম্পৃক্ত না করাই পরিকল্পনা কমিশনের মূল সমালোচনা বলে মনে হয়। সেক্ষেত্রে একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেছেন তেমনিভাবে কার্যক্রমের ওভারল্যাপিং হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। তাই এখানে দ্রুত সতর্কতা অবলম্ব জরুরি। পাশাপাশি সমন্বয়ের অভাব দূর করতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে গর্ভবতী মা ও শিশুর তালিকা প্রণয়নের ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর সঙ্গেও দ্বিমত পোষণের সুযোগ কম। আসল কথা হলো, সার্বিকভাবে প্রকল্পটির কার্যকারিতা বৃদ্ধি। সেক্ষেত্রে অল্প অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে কিনা, ভেবেচিন্তেই তার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ বিশ্বব্যাংকের। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো পরামর্শ থাকলেও তা দিতে পারে পরিকল্পনা কমিশন। ‘অনড়’ অবস্থান গ্রহণের কোনো সুযোগ এখানে নেই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এমন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর সহজ সমাধান মিলবে বলে অনেকের প্রত্যাশা।

সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি সই

দুশ্চিন্তা কর্মীর নিরাপত্তা নিয়ে

প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর চলতি মাসে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারপূর্বক গত মঙ্গলবার প্রবাসীকল্যাণ ভবনে সৌদি আরবে কর্মী প্রেরণ সংক্রান্ত চুক্তি সইয়ের ঘটনা সুখবর নিঃসন্দেহে। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে আমাদের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোয়। অর্থনীতির ওপর এর (রেমিট্যান্স) প্রভাব কেমন, তা নতুন করে ব্যাখ্যা করা নিষ্প্রয়োজন। স্পষ্টত সৌদি আরবে কর্মী গমন শুরু হয়ে গেলে জনশক্তি রফতানির ওপর হ্রাস পেতে থাকবে চাপ। তবে খেয়াল করার মতো বিষয়, কর্মী প্রেরণের দর কষাকষিতে তেমন সুবিধা করে ওঠা যায় নি। শুরুতে সরকারের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলা হয়, ১২০০ (২৫ হাজার ২০০ টাকা) থেকে ১৫০০ (৩১ হাজার ৫০০ টাকা) রিয়ালের নীচে কর্মী পাঠাবে না বাংলাদেশ। এখন জানা যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত ৮০০ রিয়ালেই (১৬ হাজার) পাঠাতে হবে গৃহকর্মী। সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, যেহেতু দীর্ঘদিন পর শ্রমবাজারটি খুলেছে ফলে দর কষাকষিতে তেমন সুবিধা পাওয়া যায় নি। অবশ্য একটি জাতীয় দৈনিকে প্রবাসীকল্যাণসচিব বলেছেন, বেতন ৮০০ রিয়াল হলেও থাকা-খাওয়া ও সব সুযোগ-সুবিধা পাবে কর্মীরা। তাছাড়া ওই ৮০০ রিয়াল নাকি কেবল গৃহকর্মীদেরই বেতন; অন্যান্য খাতের বেতন এখনো ঠিক হয় নি। সেক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতেই কর্মীদের বেতন নির্ধারিত হওয়াটা কাম্য। এ বিষয়ে সরকারও সতর্কতা বজায় রেখে ব্যবস্থা নেবে বলেও আমাদের প্রত্যাশা। আন্তর্জাতিক বাজারে শ্রম শোষণ কিন্তু মোটেই অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।

লক্ষ্যণীয়, সৌদি শ্রমবাজারে অনিয়মিতভাবে বেতন পরিশোধের নজির কম নেই। তবে পারিশ্রমিক নিয়ে জটিলতার চেয়েও এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা বেশি গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে। দেশটিতে গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া নারীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের কথা এরই মধ্যে জাতীয়-আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে আলোচিত। সব ক্ষেত্রে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলা যাবে না। তবে সেখানে নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা বেশি হওয়ায় ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কার মতো দেশ যে গৃহকর্মী প্রেরণ কমিয়ে দিয়েছে সে বাস্তবতাও অস্বীকার করার উপায় নেই। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ইস্যুটি নিয়ে সৌদি ন্যাশনাল রিক্রুটমেন্ট কমিটির (সানারকম) সঙ্গে নাকি আলোচনা হয়েছিল বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা)। নিজ মা-বোনের মতোই আমাদের নারীদের নিরাপত্তা দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন তারা। এ কথার আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা কঠিন। তবু আমাদের দূতাবাসগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা সানারকমের পক্ষেও গোটা পরিস্থিতি সুনিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয় বলে কেউ কেউ মনে করেন। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলো, এক্ষেত্রে সেখানকার দূতাবাসের একশ্রেণীর কর্মকর্তাকে নিয়ে অভিবাসী বাংলাদেশীদেরই রয়েছে নানা অভিযোগ। সেসব পুরোপুরি নির্মূলে দৃষ্টি দিতে হবে সরকারকে। কারো কারো মতে, সৌদি আরবে বাংলাদেশী নারীদের মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়া উচিৎ। তাতে করে নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা জানাতে পারবে না অন্তত। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের নজর দেয়া উচিৎ জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিতেও। তাতে নির্যাতনের ঘটনা যেমন কমবে; দেশের রেমিট্যান্স আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে উঠবে বলে ধারণা।

বীমার আওতায় আসছেন প্রবাসীরা

ভালো উদ্যোগটি দ্রুত কার্যকর হোক

আকস্মিক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুজনিত দাবি পূরণে ‘প্রবাসী বীমা’ নামে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য নতুন পলিসি ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি যে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, সেটিকে ইতিবাচকভাবেই দেখতে চাইবেন সবাই। এমন উদ্যোগের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষেরও (আইডিআরএ) প্রশংসা প্রাপ্য। খেয়াল করার মতো বিষয়, এমন সুযোগ এই প্রথমবারের মতো প্রদান করা হলো। জানা যায়, নতুন এ বীমা পলিসির আওতায় স্থানীয় কোম্পানির মাধ্যমে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কাভারেজ দেয়া হবে দেড় হাজার টাকার প্রিমিয়ামে। অনুমোদিত পলিসিতে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে স্পষ্টভাবে। কোনো অভিবাসী কর্মী অসুস্থতাজনিত কারণে কিংবা দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে অথবা অসুস্থতা বা দুর্ঘটনায় শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়লে শতভাগ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে তাদের পরিবারকে। শ্রম প্রদানে অক্ষম হয়ে পড়া অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনা বাবদও ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে ৩ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। অবশ্য আত্মহত্যার বেলায় কার্যকর হবে না বীমার এ নিয়ম। বীমাগ্রহীতা যে দেশে অবস্থান করবেন সেখানে নিযুক্ত থার্ড পার্টি অ্যাডমিনস্ট্রেটরের (টিপিএ) মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে দাবি পূরণের শর্তাদি। গ্রাহকের প্রত্যাশা, প্রক্রিয়াগুলো যেন সহজ ও স্বচ্ছ হয়। তার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করবে ‘প্রবাসী বীমা’র সাফল্য। বিশেষ কিছু কারণে নতুন এ পলিসির ওপর গ্রাহকের আগ্রহ থাকা কিন্তু স্বাভাবিক। এ দেশে বহু প্রবাসী শ্রমিক আছেন যারা পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে বিদেশে যান। আবার এমন অনেক পরিবার রয়েছে, একমাত্র কর্মক্ষম সদস্যের কর্মহীনতা যাদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে ফেলতে পারে। সেসব দিক বিবেচনায় ‘প্রবাসী বীমা’র সম্ভাব্য ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখেই কার্যকর করতে হবে পলিসিটি।

উল্লেখ্য, এ ধরনের বীমা অনুমোদনের উদ্যোগ নাকি আগেই (২০০৯ সাল) নিয়েছিল সরকার। উদ্যোগটি দীর্ঘদিন আটকে ছিল প্রক্রিয়াগত ত্রুটিতে। একই প্রতিবন্ধকতায় পলিসির বাস্তবায়ন আটকে যাওয়া চলবে না। আরো জরুরি বিষয়, যেসব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন পর্যায়ক্রমে সেগুলোর প্রতিটিতে এটি চালুর পদক্ষেপ নেয়া। অভিবাসীর সংখ্যানুপাতে সেসব শ্রমবাজারের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা যেতে পারে। ৮৫ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের মধ্যে বড় একাংশও যদি বীমা সুবিধার আওতায় আসেন, স্থানীয় বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য সেটি বিরাট অনুপ্রেরণার ঘটনা হবে বৈকি। খবরে প্রকাশ, ওই বীমার আওতায় গ্রাহকের সন্তানদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি দেয়া হবে। শ্রমিকের পরিবারকে অর্থসহায়তা দেয়া হবে মরদেহ আনা ও দাফনসহ পরবর্তীত সময়েও। নবায়নযোগ্য শর্তে বীমার মেয়াদ হবে এক বছর; এককালীন পরিশোধ করতে হবে প্রিমিয়াম। চাকরির সময় বাড়ানো হলে আরেকটি বীমা করতে হবে নতুন করে। পাসপোর্ট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলেও কোম্পানি কর্তৃক আর্থিক সহায়তা পাবেন গ্রহীতা। শর্তগুলো গ্রাহকের প্রতিকূলে যায়, সে কথা বলা যাবে না। এক্ষেত্রে মোটামুটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে বলেই মনে করেন অনেকে। কথা হলো, নতুন পলিসি নিয়ে আশাবাদের পাশাপাশি এবার তার বাস্তবায়নে অধিক দৃষ্টি দিতে হবে আইডিআরএ। সেক্ষেত্রে বাজারে প্রতিযোগিতা ও গ্রাহকের স্বার্থ উভয় বিষয়েই সতর্ক থাকতে হবে সংস্থাটিকে।

মরিচ উৎপাদন

সমুন্নত রাখতে হবে কৃষকের স্বার্থ

দেশে মরিচ উৎপাদন যে ধারাবাহিকভাবে কমছে, সেটি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য থেকেই পরিষ্কার। গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখে ভাবনা আরো বাড়ে বৈকি। কেননা সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মাত্র দু’বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে ফসলটির উৎপাদন। নিঃসন্দেহে মরিচের গুরুত্ব ধানের মতো নয়। তবে কিছু কারণে এর চাষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত. অভিজ্ঞতা বলে দেশের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে (বিশেষত চরাঞ্চল) মরিচের উৎপাদন ভালো হয়। দ্বিতীয়ত. চরের মতো এলাকা, যেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি মোটেই সহজ নয়, সেখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে মরিচ আবাদের কারণে। তৃতীয়ত. যে মাত্রায়ই হোক এর মধ্যে দিয়ে ফসল বৈচিত্র্যকরণও সম্ভব হয়। তাছাড়া মরিচ চাষে কৃষককে বিপুল উদ্যোগও নিতে হচ্ছে না। সুপরিকল্পনার মাধ্যমেই এক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে কারো কারো ধারণা। তবে সময়োচিত ব্যবস্থা নিতে না পারলে বছরখানেক আগে উপস্থাপিত বাংলাদেশে কর্মরত এক বহুজাতিক এনজিও’র গবেষণা প্রতিবেদনে দেয়া মত ফলে যেতে পারে। তাতে বলা হয়, ২০১৬ সালে আমাদের মরিচ আমদানির হার বেড়ে দাঁড়াবে ১০৭ দশমিক ৫ শতাংশে! এমন পরিস্থিতিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন সবাই।

দেশী মরিচের উৎপাদন হ্রাসের জন্য অনেক সময় প্রায় ঢালাওভাবে অভিযোগ তোলা হয় এক বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ থেকে মরিচ আমদানিকে। আবার অভিযোগটি বাস্তবতাবর্জিত সে কথাও বলা যায় না। অনেকেই মনে করেন, প্রতিযোগিতার বাজারে আমদানিকৃতটির বিপরীতে তেমন সুবিধা করে উঠতে পারছে না দেশি মরিচ; অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, গুণগত মানে আমাদেরটি উন্নততর। সেজন্য সীমিত পর্যায়ে বাজার সংরক্ষণমূলক কৌশল গ্রহণের পরামর্শও দিচ্ছেন অনেকে। কথা হলো, এতে আমদানি হয়তো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কিন্তু আমাদের মূল সমস্যার সুরাহা হবে কি? উৎপাদক কৃষক ফসলটি বিক্রি করে হতাশ হচ্ছেন; অন্যদিকে কতিপয় চ্যানেলে জমছে মুনাফা। অন্তত চরাঞ্চলে মরিচ চাষে কৃষকের আগ্রহ বাড়াতে এদিকে দ্রুত মনোযোগ দেয়া দরকার। একই সঙ্গে তাদেরকে উৎপাদন বৃদ্ধির উন্নততর প্রশিক্ষণ দিতে হবে; বাড়াতে হবে মরিচ সংরক্ষণ সুবিধা। পাশাপাশি মরিচের জাতোন্নয়ন দরকার। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক আমাদের প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রচলিত মরিচ জাত আবাদে কৃষকের মধ্যে এক ধরনের অনীহা আছে; অথচ এর খুব বেশি জাত অবমুক্ত করা যায় নি। সরকারি-বেসরকারি গবেষণা বাড়লে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে বলে অনেকেরই বিশ্বাস।

হোসিয়ারি ব্যবসায়ীদের হতাশা

অর্থনীতির প্রতি কর্ণপাত করুন

টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির কারণে নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ার যে খবর ছাপা হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, কয়েকটি কারণে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা না হয়ে পারে না। প্রথমত. এখানে উৎপাদিত স্যান্ডো গেঞ্জি, আন্ডারওয়্যার, শিশুদের পোশাক, টি-শার্টসহ বিভিন্ন হোসিয়ারি পণ্য মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন বাজারে রফতানি হয় এবং সেটির আর্থিক পরিমাণ অগ্রাহ্য করার মতো নয়। আরো বড় দুশ্চিন্তা হলো, আন্তর্জাতিক হোসিয়ারি বাজারের চীন, ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশ রয়েছে। এক্ষেত্রে কারো পিছিয়ে পড়ার সুযোগ অন্যরা ছেড়ে দেবে ভাবাটা বাস্তবতাবর্জিত। দ্বিতীয়ত. অভ্যন্তরীণ বাজারে বিভিন্ন জেলার পাইকাররা প্রতিদিন বিশেষত নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি, উকিলপাড়া, থানা পুকুরপাড়ায় অবস্থিত কয়েক হাজার শোরুম থেকে পণ্য কিনে নিজ নিজ এলাকায় বিক্রি করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেচাকেনা প্রায় স্থবির। সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অলস বসে থাকছেন বহু শ্রমিক; উৎপাদকরা চিন্তিত ঋণের অর্থ নিয়ে। গার্মেন্ট ব্যবসায় সরকারি প্রণোদনা থাকলেও তেমন কিছুর খবর মেলে না হোসিয়ারি ব্যবসায়। জানা যায়, এক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের সুবিধা নেয়াও কষ্টসাধ্য। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক ব্যবসায়ীই বিভিন্ন মাল্টিপারপাস, এনজিও বা সমিতি থেকে চড়ামূল্যে সুদ নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। বিক্রি না থাকলে সে অর্থ উঠবে কীভাবে, তা-ই এখন চিন্তার বিষয়।

লক্ষ্যণীয়, চলমান সহিংসতায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। এদিকে বিভিন্ন হোসিয়ারি সামগ্রী তৈরিতে যে সুতা ব্যবহার হয়, সেগুলো আমদানি করতে হয় ভারত থেকে। জটিলতা হলো, এর ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা নেই; তদুপরি অবরোধে বন্ধ হয়ে পড়েছে সুতা আমদানি। ফলে ধারটি অব্যাহত থাকলে ৪০ শতাংশ ব্যবসায়ী হোসিয়ারি শিল্প ছেড়ে যেতে বাধ্য হবে বলে অনেকের শঙ্কা। বাংলাদেশ হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, অবরোধ-হরতালে দৈনিক আনুমানিক ১ থেকে দেড় কোটি টাকার ক্ষতি গুনছেন নারায়ণগঞ্জের হোসিয়ারি ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি থেকে হোসিয়ারি ব্যবসা শুধু নয়, গোটা অর্থনীতিই মুক্তি চায়। ২০০৮ সালে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকটের পর আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট ভালো করেছে; বলার মতো লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে। এখন অর্থনীতিতে ক্রমেই যখন বেসরকারি খাতের নেতৃত্ব শক্তিশালী হচ্ছে তখনই সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এর বিকাশে। উপরন্তু শনিবার রাজধানীতে বিজিএমইএ’র কার্যালয়ের সামনে ব্যবসায়ীদের অনশনস্থলে হাতবোমা বিস্ফোরণও নেতিবাচক ইঙ্গিতবাহী। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে এ থেকে দ্রুত উত্তরণ দরকার।

পুষ্টি পরিস্থিতি

উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকুক

”মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমেছে” শিরোনামে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ খবরটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের নজরে এসে থাকবে। প্রতিবেদনটির ভিত্তি ফুড সিকিউরিটি নিউট্রিশনাল সারভেইল্যান্স প্রজেক্টের (এফএসএনএসপি) আওতায় ‘বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি’ (২০১৩) নিয়ে গবেষণা। সেটি পরিচালিত হয়েছে আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কার্যালয়ের যৌথ অংশগ্রহণে। এ থেকে গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের তাৎপর্য সহজেই অনুমেয়; আর তা সুখবরই দেয়। জানা যায়, গৃহস্থালিতে ২০১১ সালে যত জন নারী সদস্য শুধু ভাত খেয়ে থাকতেন, তা পাঁচ ভাগের একভাগে নেমে এসেছে ২০১৩ সালে। আবার আলোচ্য সময়ে বেড়েছে নিরাপদ স্যানিটারি সুবিধাও। আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক নারী এখন নিজ পছন্দের খাবার গ্রহণ করতে পারছেন। হাত ধোয়ায় সাবানের ব্যবহারও বেড়েছে ব্যাপকভাবে। শুধু খাদ্য পরিস্থিতির উন্নয়ন পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নের একমাত্র কারণ হতে পারে না। জনস্বাস্থ্যের উন্নতিও এর বড় উপাদান। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এ থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সম্প্রসারণের একটা চিত্র অনুমান করা যায়। তবু বলা দরকার, বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আত্মসন্তুষ্টিতে মগ্ন থাকার উপায় নেই। বরং প্রক্রিয়াটির ধারাবাহিকতা তথা খাদ্যনিরাপত্তা পুষ্টি পরিস্থিতির যেন উত্তরোত্তর উন্নতি হয় সেদিকেই বেশি মনোযোগ দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

খেয়াল করার মতো বিষয়, একদিকে যেমন নারী স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটছে অন্যদিকে তাদের মধ্যে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে। বিশেষত ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীই এখন বহন করছেন অতিরিক্ত ওজন। মজার কথা, তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছল পরিবারে এ ধরনের ঘটনা বেশি দেখা গেলেও গরিবের ঘরে তা একেবারে কম নয়! ফলে আগেভাগেই ব্যবস্থা নিয়ে রাখা দরকার। গবেষণা মতে, শিশুদের ঘন ঘন খাওয়ানোর ইস্যুতে উন্নতি করেছেন বাংলাদেশী মায়েরা। তবে সমস্যা হচ্ছে, মাতৃদুগ্ধের চেয়ে অন্যান্য খাবারের পরিমাণ বেড়ে গেছে। বলা যায় অনেক ক্ষেত্রেই মাতৃদুগ্ধের চেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে পরিপূরক খাবারকে। আরো গুরুতর হলো, সেসব পরিপূরক খাবারের পুষ্টি মান নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের। এ অবস্থায় মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সরকারের সুনিয়ন্ত্রণ ও বেসরকারি খাতের আরো দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য।

লেভেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তা

রেল কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙুক

রেলওয়ে আইন অনুযায়ী রেলের স্পেশাল সিগন্যাল ক্রসিংয়ে সিগন্যালিং বেল থাকা বাধ্যতামূলক হলেও চট্টগ্রাম নগরীর রেলগেটগুলোয় তা কার্যকর নেই বলে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত খবরটি আলোচনায় দাবি রাখে। কেননা এতে দুর্ঘটনা বাড়ছে এবং একই সঙ্গে দূর হচ্ছে না ঝুঁকি। ভাবনার বিষয়, অনেক ক্রসিংয়েই নেই গেটকিপার। অথচ নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে গেটকিপার, চেইন ব্যারিয়ার ও গেটকিপারের জন্য রুম থাকার কথা। সারা দেশের রেল ক্রসিংগুলোর হাল এখান ঠেকে সহজেই অনুমেয়। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অনেকেই দায়ী করছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। এদিকে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ দায় এড়িয়ে চলছেন কৌশলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আলোচ্য ইস্যুতে একজন দায়িত্বশীল রেল কর্মকর্তা আমাদের প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের স্পেশাল লেভেল ক্রসিংয়ের সবগুলোরই সিগন্যালিং বেল নষ্ট থাকার বিষয়টি সঠিক নয়। জানা যায়, শহরটির অভ্যন্তরে নয়টি স্পেশাল লেভেল ক্রসিং রয়েছে। তার মধ্যে একটির সিগন্যালিং বেল কার্যকর থাকলেই কি সে অবস্থাকে যথেষ্ট ভালো হিসেবে অভিহিত করা যায়?

লক্ষ্যণীয়, রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংয়ের এই দুর্বলতা চট্টগ্রামের কোনো নিজস্ব ঘটনা নয়। বরং এটা দেশব্যাপীই বিরাজমান। এক্ষেত্রে গেটকিপারের সংকট এক দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা। তার সঙ্গে রয়েছে কিছু স্থানের অনুমোদনহীন রেল ক্রসিং, যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় প্রায়শ। তবে এর চেয়ে অধিক গুরুতর হলো, রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। অনেকের অভিযোগ, গেটকিপার নিয়োগের সমস্যা দূর হয় না একশ্রেণীর রেল কর্মকর্তারই উদাসীনতায়। এরা নাকি উর্ধ্বতন মহলের কাছে এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে যেতে ‘সাহস করেন না’ অথবা ‘বিরক্তি দেখান’। খেয়াল করার মতো বিষয়ে, রেলওয়ের সার্বিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি আধুনিক নয়। সে রকম পরিকল্পনা নাকি রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। আরো বড় কথা হলো, রেল ক্রসিংয়ে শক্তিশালী সিগন্যালিং ব্যবস্থা কেবল রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ কোনো ইস্যু নয় এর সঙ্গে চলাচলকারী সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা যুক্ত। ফলে সবাই প্রত্যাশা করেন, এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র অবহেলা দেখাবে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেজন্য স্বতন্ত্রভাবে বাজেট বরাদ্দের ইস্যুটিও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে। দুর্ঘটনায় চালক ও পথচারীদেরও দায় রয়েছে। কিন্তু তারও ওপর দায়িত্বটা কর্তৃপক্ষের। এ বিষয়ে তাই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

লবণ সংকটের শঙ্কা

পরিবহন স্বাভাবিক হবে কবে?

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় স্থানীয় লবণ চাষে বিরাট কোনো সুখবর মেলে না। তার অন্যতম কারণ ছিল দুর্যোগ ও বৈরী আবহাওয়া। তবু দেখা যাচ্ছে গত মৌসুমে যেখানে চাহিদা ছিল ১৫ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন সেখানে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থা (বিসিক) মতে উৎপাদন হয় ১৬ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। তাতে করে স্বভাবতই সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হন কৃষকরা। পরিস্থিতির জটিলতা বাড়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া হলে। ফলে অবিক্রীত রয়ে যায় বিপুল লবণ। এ সত্ত্বেও গত বছর ডিসেম্বর থেকে নতুন উদ্যোমে লবণ মৌসুমের প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করেন চাষীরা। সেজন্য ঋণের অর্থ পরিশোধের দায়টাই অধিক ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতীয়মান। কিন্তু গতকালের বণিক বার্তায় ছাপা হয়েছে এখন উদ্বেগজনক প্রতিবেদন। সেটি হলো, অন্য কোনো কারণ নয় চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন অঞ্চল থেকে সারা দেশে লবণ সরবরাহ। এতে করে সারা দেশে লবণ সঙ্কট সৃষ্টি হওয়াটা একাবারে অমূলক বলা যাবে না। এ অবস্থায় পরিস্থিতি উত্তরণে যথাযথ উদ্যোগই কাম্য।

খেয়াল করার মতো বিষয়, উৎপাদন অঞ্চল (কক্সবাজার প্রভৃতি) থেকে লবণের বেশিরভাগ প্রথমে যায় নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও ঝালকাঠির মিলে সরবরাহ করা হয়। সেখানে আয়োডিন মেশানোর পর সারা দেশে সরবরাহ করা হয় লবণ। প্রক্রিয়াটি মূলত সড়ক পথে সম্পন্ন করা হয়। তবে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় পরিবহন সংকটের কারণে তা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে কিছু লবণ পরিবহন করতে হচ্ছে নৌপথে। তবে সে পরিমাণটি যথেষ্ট নয়। আকাশপথে লবণ পরিবহন করা যায় বৈকি। তবে তা কতটুকু সুবিধাজনক হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই রাজনৈতিকভাবে চলমান সমস্যা মোকাবেলার বিকল্প নেই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, লবণ আমদানির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করেও বলা যেতে পারে- বর্ধিত লবণ বিপণন ও মজুতে আরো দৃষ্টি দিতে হবে। অনেকের অভিযোগ, একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লবণ সরবরাহ ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেন। এটি যদি স্বাভাবিক সময়ের চিত্র হয়, তাহলে বর্তমানে কী অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। জানা যায়, অর্ধলক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান এই লবণ চাষে। তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। এদের প্রত্যেকের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির কথা কি অগ্রাহ্যই থেকে যাবে?

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা বাণিজ্য

সম্ভাবনা বিকাশ লাভ করুক

সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফাইন্যান্স’ শীর্ষক আইসিসি’র এক কর্মশালায় দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তার ওপর ভরসাই রাখতে চাইবেন সবাই। তিনি বলেছেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে সাতগুণ! এ খবর গতকালের বণিক বার্তার। উভয় দেশের গত কয়েক বছরের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য পরিস্থিতির দিকে তাকালে শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যমন্ত্রীর ওই উক্তির যৌক্তিকতা প্রতীয়মান। খেয়াল করার মতো বিষয়, ২০১০ সালেও বাংলাদেশ-শ্রীলংকা খুব একটা আশাব্যঞ্জক ছিল না। তবে ২০১২ ও ২০১৩ সালে এক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। জানা যায়, বিশেষত ২০১২ সালের ৮৩ মিলিয়নের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৯ মিলিয়ন ডলারে। এ সময় শ্রীলঙ্কান পণ্যের অন্যতম রফতানি গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। কারো কারো ধারণা, দীর্ঘ সময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভাটা বিরাজ করার কারণ দেশটির অভ্যন্তরীণ সংঘাত। সেটি কাটিয়ে ওঠার পর নতুন উদ্যোমে নামতে দেখা গেছে তাদের। ক’সপ্তাহ আগে দায়িত্ব নেয়া নতুন সরকারও এ বিষয়ে বলিষ্ঠ অবস্থান নেবে বলে ধারণা। উদ্ভূত পরিস্থিতি কিছু সুযোগ সৃষ্টি করবে বটে।

লক্ষ্যণীয়, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সাফটা, সাপটা ও বিমসটেকের অন্তর্ভুক্ত। এদিকে পর্যটন শিল্প বিকাশে আমাদের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। ‘নাগেনাহিরা নবোদয়া’র মতো কর্মসূচি শিল্পটি প্রসারে তাদের যথেষ্ট সহায়তা জুগিয়েছে নিঃসন্দেহে। বাংলাদেশের উচিৎ হবে এসব ক্ষেত্রে তাদের সক্রিয় সহযোগিতা আহ্বান করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আলুর উদ্বৃত্ত ফলন হয়েছে এখানে। সমস্যা হলো, এটিসহ আরো কিছু পণ্য রয়েছে শ্রীলঙ্কার স্পর্শকাতর তালিকায়। নতুন বাণিজ্যই রূপরেখায় সেগুলো দূরীকরণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। রফতানির বেলায় শুল্ক বাধা অপসারণ আরেক বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি অশুল্ক বাধাও কীভাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ক্ষতি সাধন করতে পারে সে দৃষ্টান্তও রয়েছে আমাদের সামনে। ফলে উভয় বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, চট্টগ্রাম ও কলম্বো বন্দরের মধ্যকার সহযোগিতা জোরদারকরণ এবং হাম্বানতোতা গভীর সমুদ্র বন্দরের ব্যবহার নিশ্চিত করা। হাম্বানতোতা আমাদের নিকটতম গভীর সমুদ্র বন্দর এবং এটিকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আমাদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো যাচাইবাছাই করা অধিক জরুরি। তাতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা মুক্ত বাণিজ্য সম্ভাবনার সহজ বিকাশ সম্ভব।

চড়া সুদের বায়ার্স ক্রেডিট

কুপ্রভাব পড়বে প্রকল্পে

বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় চীন থেকে ৫০০ কোটি ডলার অর্থায়ন আনার যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, কয়েক দিক থেকে তা ভাবনা জাগানিয়া। অবশ্যই চীনা বিনিয়োগের প্রতি কারোরই বিরূপ মনোভাব থাকার কথা নয়। তবে কথা হলো, সেটি বাংলাদেশের জন্য কতটা লাভজনক তা-ই এখানে বড় বিবেচ্য হওয়া উচিৎ। সেক্ষেত্রে কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোয়, যেখানে ৭ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ চলমান প্রকল্পগুলোয় সুদ দিতে হচ্ছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ করে। ওই ঋণ আবার পরিশোধ করতে হবে ২০ বছরের মধ্যে এবং দশমিক ২ শতাংশ করে দিতে হবে কমিটমেন্ট ও ম্যানেজমেন্ট ফি। সব মিলিয়ে নাকি আমাদের পরিশোধ করতে হবে মোট ঋণের আনুমানিক ৫ শতাংশ সুদ। তার সঙ্গে শর্ত রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও প্রয়োজনীয় পণ্য চীন থেকে কেনার। এসব বিবেচনায় চীন থেকে এ বায়ার্স ক্রেডিট আমাদের জন্য কতটা লাভজনক হবে, সে নিয়ে সংশয় রয়েই যায়। আরো বড় ইস্যু হলো, এত চড়া সুদে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে ব্যয় বাড়বে। আনুমানিক সাড়ে ৩৯ হাজার কোটি টাকার এ অর্থায়নের প্রভাব নিশ্চয়ই থাকবে বাজেটে।

খেয়াল করার মতো বিষয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারি প্রজেক্ট, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্ণফুলী নদীতে টানেল, চট্টগ্রামে সিঙ্গেল মুরিং টার্মিনাল প্রভৃতি। কিছু অর্থনীতিবিদ মনে করেন এসব প্রকল্প তেমন জরুরি নয়। এর সঙ্গে আবার দ্বিমত পোষণ করছেন অনেকেই। সার্বিকভাবে প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। আরো লক্ষ্যণীয়, চীনের এক্সিম ব্যাংক বা অন্য কেউ এসব প্রকল্প আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দেয় নি। প্রয়োজন অনুসারে অর্থায়ন অনুসন্ধান করেছি আমরাই। কিন্তু সেক্ষেত্রেও অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অগ্রসর দেশগুলো যেখানে প্রকল্প ব্যয় সীমিত রাখার ওপর জোর দিচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের উচিৎ অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয়ে সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা। সেজন্য চীনের সঙ্গে দর কষাকষি করা দরকার; উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার সহযোগিতা আহ্বান এক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে বৈকি। আর তাতে সার্বিকভাবে নিশ্চিত হবে জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের সদ্ব্যবহার।

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সম্পর্ক

আবেগের সঙ্গে অর্থনীতির ভূমিকা বৃদ্ধি জরুরি

প্রাথমিকভাবে প্রতিবেশী ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক ঢাকা সফর খুবই খুশির খবর। খেয়াল করার মতো বিষয়, ১৯৪৭’র ভারতভাগের পর দু’বাংলার মাঝে অলঙ্ঘনীয় রাজনৈতিক বাতাবরণ মুড়ে দেয়া হলেও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয় নি কখনো। সেটি কখনো ঘটবে বলেও মনে হয় না- অভিন্ন ইতিহাসের কারণে না হোক, অন্তত ‘ভাষা’ নামক নাড়ীর টানের জন্যও। তাই মমতা শুধু নন, পশ্চিমবঙ্গের শাসন পরিচালনার দায়িত্বে যিনি বা যারাই থাকুন, ঢাকা তাদের স্বাগত জানাবে বলে আশাবাদ রাখতেই পারেন তারা। পশ্চিমবঙ্গের প্রতি প্রত্যাশা অবশ্য আমাদেরও কম নেই। আবেগের বশবর্তী হয়ে কোনো পক্ষেই এর বিস্মরণ ঘটনা উচিৎ নয়। কেননা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে যেসব ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে সেগুলো দূরীকরণের উপায় নিহিত ওই ইস্যুগুলোর মধ্যেই। ফলে দ্রুত তিস্তা পানি চুক্তির মতো ইস্যুগুলোর দ্রুত সুরাহা হওয়া চাই। এরই মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের মনে আশার আলো উজ্জ্বল করেছেন। স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পন্নের প্রক্রিয়ায় তার ইতিবাচক ভূমিকার কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত। সে ধারাবাহিকতায় তিস্তার পানির সুষম বণ্টনে তিনি অধিকতর বলিষ্ঠ অবস্থান নেবেন, এমনটা ভাবতেই পারি আমরা। অন্তত তিস্তা বাঁধ যেন দু’পক্ষের সম্পর্ক জোরদারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি।

কথা হলো, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ককে তিস্তা ও কাঁটাতারের গণ্ডীতে আবদ্ধ রাখা যাবে না; আবার বই, চলচ্চিত্র, নাটক ও চ্যানেল বিনিময় হতে পারে না সম্পর্ক সম্প্রসারণের প্রধান ক্ষেত্র। আসলে উপযুক্ত বিকাশের লক্ষ্যে উভয় পক্ষের অর্থনৈতিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর মজবুত হওয়া দরকার। ধারণা না করলেও চলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের প্রতি জোরালো সমর্থন রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। ভারতের সঙ্গে মৈত্রী বিকাশে পশ্চিমবঙ্গ যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করতে পারে সে ইঙ্গিত মেলে রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। আমাদের দেখা উচিৎ সমগ্র ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পশ্চিমবঙ্গকে ‘পোর্ট অব এন্ট্রি’ হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা। বাংলাদেশ থেকে কলকাতাসহ রাজ্যটির বিভিন্ন অংশে পরিবহন ব্যবস্থা প্রাচীন বটে। আবার উত্তরপূর্ব ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগও কঠিন নয়। পাশাপাশি বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ডের মতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধশালী অঞ্চলগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশেও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সুযোগ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের। রাজ্যটি চা রফতানি বাড়াতে পারে এখানে। ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবসা প্রভৃতির প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আগ্রহ লক্ষ্যণীয়। এক্ষেত্রেও সহায়তা দিতে পারে বাংলাদেশ। পশ্চিমবঙ্গের মনোযোগ দেয়া দরকার, এনএসডিপি’র (নেট স্টেট ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) দিক থেকে রাজ্যটি ভারতের অন্যতম বৃহৎ অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও এবং সম্ভাবনা থাকার পরও সেভাবে বাড়াতে পারছে না অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে বর্ধিত বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়তি প্রণোদনা সৃষ্টি করতে পারে সেখানে। তাতে দু’বাংলার জনগণের মধ্যে আবেগও গাঢ়তর হবে বলে প্রত্যাশা। ফলে মাঝেমধ্যে দু’একটি শুভেচ্ছা সফর বা ইলিশ কূটনীতি নয়, পারস্পরিক সমৃদ্ধির ভাগীদার হয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ ধারাবাহিক সম্পর্কোন্নয়নে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে- এটাই কাম্য এখন।

এটিএম সেবায় অতিরিক্ত মাশুল

ব্যবস্থা নিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক

জানা যায়, বর্তমানে দেশে এটিএম বুথ রয়েছে ৬ হাজার ২০২টি। পয়েন্ট অব সার্ভিস মেশিনের সংখ্যা ২২ হাজার ১২৩। তার সঙ্গে ৭২ লাখ ৮৫ হাজার ডেবিট কার্ডের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ৭ লাখ ৭০ হাজার। এসব তথ্য স্পষ্টতই বর্ধিক এটিএম সেবা গ্রহণেরই প্রমাণ। খেয়াল করার মতো বিষয়, প্রতি বছরই এর গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। তাদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই নতুন নতুন সেবা আনছে ব্যাংকগুলো। এক্ষেত্রে সেবার মান নিয়েও তেমন অভিযোগ শোনা যায় না। তবে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে, এটিএম সেবার ওপর আরোপিত মাশুলের পরিমাণ নিয়ে। বিশেষত এক ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের এটিএম সেবা নিতে গেলে অতিরিক্ত মাশুলের শিকার হতেন। সে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশের (এনপিএসবি) সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকের গ্রাহক অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অর্থ উত্তোলন করলে তার জন্য সর্বোচ্চ ১৫ টাকা মাশুল নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনাটি ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের। ক’দিন পর ২০১৫ সালের মার্চ শুরু হইবে। অথচ এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে বেশি মাশুল আদায়ের অভিযোগ দূর হয় নি। সে নিয়ে এক প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। এ থেকে দ্রুত উত্তরণ প্রয়োজন। আর সে লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককেই।

লক্ষ্যণীয়, নিজ ব্যাংকের বুথ থেকে অর্থপ উত্তোলনে ওই ধরনের অভিযোগ তেমন শোনা যায় না। কিন্তু ভিন্ন ব্যাংকের সেবা নেয়ার বেলায় পরিস্থিতি ভিন্ন। গত বছর মার্চে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, এনপিএসবি’র সঙ্গে যুক্ত এক ব্যাংকের গ্রাহক, অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে অর্থ তুললে চার্জ বাবদ বুথ স্থাপনকারী ব্যাংক পাবে ২০ টাকা; যার মধ্যে ১০ টাকা দিতে হবে গ্রাহককে। সম্প্রতি জারিকৃত নির্দেশনার প্রতি লেনদেনে গ্রাহকের কাছ থেকে ১৫ টাকা আদায়ের সুযোগ রয়েছে অবশ্য। এ সুযোগে কেউ অনিয়ম করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা উচিৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের। একই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে, অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অর্থ উত্তোলনের বেলায় ধার্যযোগ্য সেবা মাশুলের হার বিষয়ে অবগত হতে পারছেন গ্রাহকরা। কেননা আলোচ্য ঘটনার জন্য বহুলাংশে অসচেতনতাও দায়ী বলে প্রতীয়মান। সর্বোপরি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিয়ম অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সুবিধা আদায়ে ব্যবসায়ীদের সক্রিয়তা

ঢালাওভাবে দেয়া চলবে না

টানা হরতাল-অবরোধে জাতীয় অর্থনীতি যে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে, সে নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ কম। তবে বিতর্ক হতে পারে- সেটি কী মাত্রায় ও কোন কোন খাতে বেশি? একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কবলে পড়ে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির এক উল্লেখযোগ্য অংশ; অর্থের হিসাবে দৈনিক ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। খাতভিত্তিক চিত্রে দেখা যায়, ব্যাপক সমস্যায় পড়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো। এক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ খবরে দেখা যাচ্ছে, চলতি অবরোধে তৈরি পোশাকে ৬৯৫ কোটি, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৩০০ কোটি, কৃষিতে ২৮৮ কোটি ১০ লাখ, আবাসন খাতে ২৫০ কোটি, পর্যটন খাতে ২১০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে দৈনিক। পাশাপাশি বিঘ্নিত হয়েছে পাইকারি বাজার, শপিং মল, শোরুম, সিরামিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি দোকান, পোলট্রি, হকার্স ব্যবসা, প্লাস্টিক পণ্যের লেনদেন। শিক্ষার প্রায় সব স্তরের শিডিউলে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে। আরো খেয়াল করার মতো বিষয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থলবন্দর ও সেতুতে টোল আদায় হ্রাস পেয়ে সরকারের রাজস্ব আহরণও কম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূসক, আয়কর আহরণের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো সে কথাও হলফ করে বলা যায় না। এমন পরিস্থিতিতে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলো, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে ঋণ পরিশোধে সময়সীমা বর্ধিতকরণের পাশাপাশি বন্দরের বাড়তি মাশুল থেকে অব্যাহতি চাইছেন ব্যবসায়ীরা। এ দাবির সঠিক মূল্যায়ন হওয়া দরকার।

লক্ষ্যণীয়, ব্যবসায়ীরা চাইছেন ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা। তার সঙ্গে ফোর্সড লোন ও প্যাকিং ক্রেডিট পরিশোধে বাড়তি সময় এবং শ্রমিকের বেতন পরিশোধে সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির দাবি রয়েছে তাদের। খবরে আরো প্রকাশ, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর আবেদনও করা হবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি সম্প্রতি টাকার বিপরীতে ইউরোর পতন আমাদের বড় কয়েকটি রফতানিমুখী শিল্পকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। ফলে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার স্বার্থে সরকারের সহায়তা প্রয়োজন বৈকি। স্পষ্টত এখানে প্রয়োজন রয়েছে প্রকৃতই। এ কথাও অজানা নয়, দেশে একশ্রেণীর চিহ্নিত ঋণ খেলাপি রয়েছেন যারা ওই ধরনের পরিস্থিতিকে সহজ সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আবার কিছু খাত রয়েছে যেগুলো হয়তো চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার শিকার সেভাবে হয় নি, অথচ সুযোগ-সুবিধার বাড়তি অংশ তারাই পেলো। ফলে এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দাবির সঠিক মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। খতিয়ে দেখতে হবে, কোনো খাত কতটা ক্ষতির শিকার হচ্ছে এবং কীভাবে তা পোষানো যেতে পারে। ঢালাওভাবে সরকারি সহায়তা দেয়া যাবে না। তাতে জনগণের অর্থের অপচয়ের শঙ্কা থেকে যায়। আরেকটি প্রশ্ন হলো, সেক্ষেত্রে সহায়তার কার্যকারিতা কোথায় দাঁড়াবে। এক সঙ্গে সবাইকে সমান সহায়তা দেয়া হলে অর্থনীতিতে তার কাঙ্ক্ষিত কার্যকারিতা প্রত্যাশা করা কঠিন। তার চেয়ে ভালো হয়, তুলনামূলক নাজুক শিল্প চিহ্নিতপূর্বক ব্যবসায়ীদের জন্য আর্থিকসহ নীতিগত সহায়তার ব্যবস্থা করলে। তাতে অর্থনীতিও অধিক উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়।

রাজস্ব মামলা সচলের পরিকল্পনা

উদ্যোগ যেন অব্যাহত থাকে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১ কোটি টাকার ওপর সব ধরনের রাজস্ব মামলা সচলের পরিকল্পনা করছে বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। কারণটি অস্পষ্ট নয়। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারিতে রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ৫৯ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। তার বিপরীতে ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ হয়েছে চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে) একই সময়ে। তার মানে ১৭ শতাংশের কাছাকাছি হারে রাজস্ব বেড়েছে গত অর্থবছরের তুলনায়। সমস্যা হলো, আলোচ্য সময়ে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করা। সেখানে দেখা যাচ্ছে ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার ঘাটতি। সেটির পূরণের লক্ষ্যেই যে সংস্থাটি ১ কোটি টাকার ওপর রাজস্ব মামলা সচলের উদ্যোগ নিয়েছে সেটি ব্যাখ্যা করার দরকার। কথা হলো, অতীতে এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে সাধারণত বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপ হিসেবে। তদুপরি বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় অভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্য পরিস্থিতি তেমন সুবিধাজনক নয়। ফলে সতর্কভাবেই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির তথা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে মীমাংসায় আসা যায় কিনা, সে চিন্তাও সক্রিয়ভাবে করা দরকার।

দেশে কর ফাঁকির দৃষ্টান্ত কম নেই। জিডিপির তুলনায় আমাদের রাজস্ব আহরণও সন্তোষজনক নয় বলা যায়। অথচ উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি ব্যয় হ্রাসের সুযোগ কম; তার সঙ্গে অর্থের অপচয় রোধে ব্যবস্থা নেয়াও কর্তব্য। খেয়াল করার মতো বিষয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাজস্ব আহরণে গতি বৃদ্ধি হয়েছে; বিশেষত আয়কর আহরণের সরকারের নতুন নতুন পদক্ষেপও দৃশ্যমান। তাতে করে রাজস্ব ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটেছে বটে; তবে উন্নতির সুযোগ রয়েছে আরো। সেদিক থেকে রাজস্ব মামলা সচলের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাত্রা অনুযায়ী এসব আর্থিক মামলার বিষয়ে সরকারের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। আরো বড় বিষয়, এগুলো যেন বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ না হয়। অব্যাহতভাবে ঘটনা ধরে ধরে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এক্ষেত্রে। সেজন্য রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে আরো গ্রাহকবান্ধব করে তোলা বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি জনবল ও দক্ষতা বাড়াতে হবে এনবিআরকে। সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে শুল্ক, মূসক ও আয়কর বিভাগকে; শক্তিশালী করে তুলতে হবে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাকে। প্রত্যাশা করা যায়, রাজস্ব আহরণ ক্রমে বৃদ্ধি পাবে তাতে।

জেট ফুয়েলের দাম সমন্বয়

কেন অকটেল-পেট্রলে হবে না?

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সূত্র মতে, গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ খবরে দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক লিটারপ্রতি কমেছে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম। এখন থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি লিটার জেট ফুয়েল বিক্রি হবে ৭৪ টাকায়; এর দাম ৭৩ টাকা পড়বে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে। খেয়াল করার মতো বিষয়, সংখ্যা দুটি আগে ছিল যথাক্রমে ৮৪ ও ৮৩ টাকা। এ চিত্রও ভুলে যাওয়া চলবে না, লিটারপ্রতি পেট্রোল ৯৬ ও অকটেন ৯৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বর্তমানে। সম্প্রতি বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়ার পর থেকে একাধিকবার পেট্রল-অকটেনের মতো নিত্যব্যবহার্য জ্বালানির দাম সমন্বয়ের আহ্বান জানানো হলেও তাতে কর্তৃপক্ষের সাড়া মেলে নি খুব একটা। অথচ জেট ফুয়েলের দাম সমন্বয়ে তাদের সক্রিয়তা দেখে অনেকে অবাক হন বৈকি। ভাবনা আরো বাড়ে যখন জানা যায় যে, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর আন্তর্জাতিক বাজারের কয়েক দফা দাম কমলেও সেটি সমন্বয় হয় নি দেশে; যেখানে গত আগস্ট থেকে সাত দফায় পেট্রোল ও তিন দফায় ডিজেলের দাম কমিয়েছে ভারত।

জেট ফুয়েলের দাম সমন্বয়ের গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। প্রতিদিন আনুমানিক ১২ লাখ লিটার জেট ফুয়েল বিক্রি হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এখানে দাম বেশি থাকলে স্বভাবতই পার্শ্ববর্তী দেশের বিমানবন্দর থেকে জ্বলানই তেল সংগ্রহে মনোযোগ দেয় তারা। ফলে জেট ফুয়েলের দাম তাৎক্ষণিকভাবে সমন্বয় করতে হয় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। ফলে উক্ত খবর স্থানীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে স্বস্তি দেবে নিঃসন্দেহে। প্রশ্ন হলো, পেট্রল-অকটেনের দাম সমন্বয় কি কম জরুরি? আমাদের জ্বালানি চাহিদা ক্রমাগত বাড়বে বৈ কমবে না। তেমন প্রেক্ষাপটে জ্বালানি মূল্যের দাম যতটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় ততই মঙ্গল। বিশেষত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যথাসম্ভব দ্রুত সমন্বয় করতে হবে জ্বালানি মূল্য। নইলে দাম হ্রাসের সুপ্রভাব থেকে বঞ্চিত হবে অর্থনীতি। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এটি শ্রেয়। তদুপরি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা আরো বেশি কাম্য। জানা যায়, জেট ফুয়েল ব্যতীত অন্যান্য জ্বালানির দাম নির্ধারণের ক্ষমতা নেই বিপিসি মূল্য নির্ধারণ কমিটির। ফলে এক্ষেত্রে সরকারের সক্রিয় উদ্যোগই দেখতে চাইবেন সবাই।

চায়ের ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাংলাদেশ

দেখার দায়িত্ব চা বোর্ডের

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশে চা পরিভোগ বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে উৎপাদন। ফলে স্বভাবতই বর্তমানে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করতে হচ্ছে আমাদের। অবশ্য গতকালের বণিক বার্তায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির চেয়েও অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মানসম্পন্ন চায়ের অধিক উৎপাদনের প্রতি। আর তাতে উঠে এসেছে হতাশাজনক চিত্র। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এখানকার ১৬৬ টি বাগানে কমবেশি ৬৬ মিলিয়ন কেজি চা যে উৎপাদন হয়, তার এক উল্লেখযোগ্য অংশই অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের। আরো দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশে চায়ের ঐতিহ্য হারানোর জন্য বাগান মালিকদের অনীহাকেই দায়ী করছেন অনেকে। তাদের মতে, দেশে এখনো চায়ের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। সেজন্য চাষ পদ্ধতিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, নিবিড় পরিচর্যা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি তথা বাড়তি বিনিয়োগের প্রয়োজন নয়। দুর্ভাগ্য বলতে হয়, কিছু মালিক এতে অনিচ্ছুক বলে প্রতীয়মান। বরং কিছু ক্ষেত্রে বাগানের বিভিন্ন উপত্যকা তারা নাকি ব্যবহার করছেন মাছ, সবজি বা কাঠ জাতীয় বৃক্ষ চাষে। চায়ের মান হ্রাসের পেছনে তাদের কেউ কেউ যুক্তি দেখিয়েছেন, আবহাওয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। চা চাষ এবং চা পাতার মানের ওপর পরিবেশের বিরাট প্রভাব অনস্বীকার্য। কথা হলো, এ ইস্যুটি বাদ দিয়ে তারা নিজ করণীয় কতটুকু পালন করছেন? কর্তৃপক্ষের উচিৎ বিস্তারিতভাবে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা।

লক্ষ্যণীয়, মান ভালো না হওয়ায় নিলামে তোলা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চা অবিক্রীত রয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির পরও হ্রাস পেয়েছে ভালো মানের চা উৎপাদন। অথচ বাগান পরিচালনার জন্য মালিকরা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ফার্নেস অয়েলের পাশাপাশি পান সস্তা শ্রমশক্তি। সেখানকার শ্রমিকদের রেশনিং সুবিধা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। তদুপরি রয়েছে জমি ইজারার সুবিধা। মালিকরা এসব সুবিধা ফিরিয়ে দিয়েছেন তেমন কথা শোনা যায় না। তবু একশ্রেণীর বাগান মালিকের অবহেলা ও ঔদাসীন্য রয়েছে বাগানের উন্নয়নে। বেশ কয়েকটি বাগানের গাছ পুরনো। সেখানে নতুন গাছ লাগানো দরকার। এক্ষেত্রে অর্থায়ন জটিলতার প্রশ্নটি জোরালোভাবে ওঠার সুযোগ নেই। কেননা সরকার স্বল্প সুদে বাগান মালিকদের কৃষিঋণ সুবিধা দিচ্ছেন বলে জানা যায়। এমন পরিস্থিতিতে চা বাগান মালিকদের সক্রিয়তা বাড়াতে চা বোর্ডের সক্রিয়তা বৃদ্ধি প্রয়োজন। কয়েকটি বাগানে উন্নত মানের চা অধিক হারে উৎপাদন হচ্ছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বোর্ডকে নিশ্চিত করতে হবে যেন অধিকাংশ চা বাগানে ভালো চা বেশি করে উৎপাদন হয়।

উপকূলীয় বনাঞ্চল থেকে লোকালয়ে আসছে বন্যপ্রাণী

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় ছোট-বড় যে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে, সেটি নানা প্রজাতির বৃক্ষের সঙ্গে সঙ্গে বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধ। স্থানীয়দের ধারণা, এখানে ২০ হাজারের বেশি চিত্রা হরিণের বাস। সংখ্যাটি অতিরঞ্জিত কিনা, সে সংশয় দূরে সরিয়ে রেখেও উক্ত অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যগত গুরুত্ব অনুধাবন করা কঠিন নয় মোটেই। কথা হলো, এ সংক্রান্ত যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায় তা সচেতন পাঠকের ভাবনা না বাড়িয়ে পারে না। আমাদের প্রতিবেদক বলছেন, ইদানীং ভয়ভীতি উপেক্ষা করে অনেক প্রাণী চলে আসছে লোকালয়ে। সুন্দরবন অঞ্চলে খাবারের সন্ধানে কোনো বাঘ লোকালয়ে প্রবেশ করলে ভাগ্যে কী ঘটে, সেটি অজানা নেই। ভোলার বনাঞ্চলেও হরিণের পক্ষে ওর চেয়ে মঙ্গলজনক কিছু জুটছে না। অনেক সময়ই স্থানীয় অধিবাসীরা ধাওয়া করছেন হরিণকে; কিছু ক্ষেত্রে পালাতে গিয়ে হতাহত হচ্ছে হরিণ। আরো চিন্তার বিষয়, একশ্রেণীর অসাধু শিকারি ঘটনাটিকে মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন। এরা লোকালয়ে আসা হরিণ ধরে বিক্রি করছে তার মাংস ও চামড়া। হরিণের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকলে স্থানীয় বাস্তসংস্থানের তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে নিঃসন্দেহে। এমন পরিস্থিতিতে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা পরিস্থিতির অবনতি রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

অনুমান করা হচ্ছে অবাধ বৃক্ষ নিধন, অনিরাপদ বাসস্থান, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব এবং খাদ্য ও মিঠা পানির সংকটই বন্যপ্রাণীগুলোকে ঠেলে দিচ্ছে লোকালয়ের দিকে। বসন্তের শুরুতে তাপমাত্রা বেড়ে উপকূলীয় বনাঞ্চলের অনেক জলাশয় শুকিয়ে যায় স্বভাবতই। এ সময় পানির লবনাক্ততা বৃদ্ধিও অস্বাভাবিক নয়। তবে বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে আগমনের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের ভূমিকা কতটুকু সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। ব্যবস্থা নিতে হবে যে কোনো বনে অবাধ বৃক্ষ নিধনে বিষয়। এক্ষেত্রে উপকূলীয় বনাঞ্চলের বিষয়ে বাড়তি সতর্কতাও কাম্য। এসব অভিযোগের প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মাঝেমধ্যেই বহুল উচ্চারিত বাক্য শুনতে হয়- বিশাল বনাঞ্চলে এত অল্প বন প্রহরী দিয়ে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা কঠিন! এক্ষেত্রে লোকবলের অভাব রয়েছে সন্দেহ নেই। তবু যতজন রয়েছেন, ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব বলে কারো কারো অভিমত। এর পাশাপাশি, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। অবশ্য এর চেয়েও জরুরি হলো, নানাভাবে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বনদস্যুদের অপতৎপরতা হ্রাস।

Published in Bonik Barta, January 2015

সরকার ও জাতিসংঘের যৌথ সুপারিশ

সুন্দরবনে নৌচলাচল নিয়ন্ত্রণে বিলম্ব নয়

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী নৌযানডুবির ঘটনা পর্যবেক্ষণের পর বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যৌথভাবে সুপারিশ পেশ করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী কার্যালয়। এতে পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। তারা দুর্যোগটিকে ‘ওয়েক আপ কল’ হিসেবে দেখছেন বলেও জানা যায়। খেয়াল করারা মতো বিষয়, এটি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ। বিস্তৃত প্রতিবেদনটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রকাশ হওয়ার কথা। সেখানে সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় পর্যবেক্ষকদের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিশদ বিবরণ থাকবে নিশ্চয়ই। আপাতত দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে উল্লিখিত সংক্ষিপ্ত ওই সুপারিশ ধরেই সরকার কাজ শুরু করে দেবে বলে সবার প্রত্যাশা। নইলে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পথে অধিকতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষ্যণীয়, শ্যালা চ্যানেল একটি বাণিজ্যিক রুট। দুর্ঘটনার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জাহাজের মালামাল পরিবহনের ব্যাপক বিঘ্ন ঘটার খবর রয়েছে; তার মধ্যে সারভর্তি নৌযান আছে। এটি দীর্ঘায়িত হলে ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকিও নাকি দিয়েছে একশ্রেণীর নৌযান শ্রমিক। কথা হলো, পর্যবেক্ষক চলমান বাস্তবতা আমলে নিয়েই সুপারিশ করেছেন। তাদের মতে, এখনই সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে চালু রুটে নৌচলাচল বন্ধ করে দেয়া কঠিন। তবে ধীরে ধীরে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে যাতে সুন্দরবনের মতো একটি স্পর্শকাতর এলাকার পরিবেশগত ভারসাম্য কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ না হয়। বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপর এর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের ভূমিকা কম বড় নয়। অথচ সার্বিকভাবে এর রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের গাফিলতি দৃষ্টিকটু বটে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে বারাবার আহ্বান জানানো হয়েছে এর ভারসাম্য অটুট রাখায় সতর্ক থাকার ব্যাপারে। ইউনেস্কো বলেছিল, সুন্দরবন অসামান্য এবং বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনের ভেতর পশুর নদ দিয়ে নৌচলাচলের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বিশ্ব ঐতিহ্য কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ব ঐতিহ্য রয়েছে এমন দেশগুলোকে নিজ নিজ ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিস্থিতি সম্বন্ধে ইউনেস্কোতে প্রতিবেদন জমা দিতে হয় প্রতি বছর। এদিকে পরিবেশ-জলাভূমি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ইস্যুটি সংবিধানে যুক্ত করেছে বর্তমান সরকার। সে অঙ্গীকার রক্ষার বিবেচনাগুলো মাথায় নিয়েও সুন্দরবনে নৌচলাচল নিয়ন্ত্রণে দ্রুত অগ্রণী হতে হবে সরকারকে।

কতিপয় বীমা কোম্পানির ভারসাম্যহীন পদক্ষেপ

সুপারভাইজরি সক্ষমতা দেখাতে হবে আইডিআরএ’কে

অর্থনীতির অন্যান্য অংশের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা অর্থেও আমাদের বীমা বাজারে অসম্পূর্ণতা রয়েছে কিছু। সেজন্যই হয়তো যুক্তরাজ্যের মতো অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোয় জিডিপি’তে বীমার অবদান যেখানে ১২ শতাংশের কাছাকাছি, বাংলাদেশে জিডিপি অনুপাতে প্রিমিয়াম ১ শতাংশও ছাড়ায় নি বলে জানা যায়। সেসব সত্ত্বেও বাংলাদেশে বীমার বাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এখানকার নিম্ন প্রবেশ হার বীমা ব্যবসায়ীদের জন্য নিঃসন্দেহে বিরাট সুযোগ। বীমা শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশের পথে এক সময় বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল বীমা অধিদফতর। প্রায় অকার্যকর সে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে বিলুপ্ত করে সরকার ২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যে গঠন করল, তার পেছনের সদিচ্ছাই অনেকের মনে নতুন প্রেরণা সঞ্চার করেছিল। কিন্তু সে উৎসাহ কমে যায় বৈকি, যখন শোনা যায়- গাড়ি ও অফিস ভাড়ায়ই শেষ কতিপয় নতুন বীমা কোম্পানির প্রারম্ভিক মূলধন! প্রতিবেদনটি গতকালের বণিক বার্তার। বিস্তারিত খবর আরো গুরুতর। ব্যবসা ও নবায়ন প্রিমিয়ামের আয় না থাকার পরও কেবল ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে প্রারম্ভিক মূলধনের উল্লেখযোগ্য অংশ এরই মধ্যে ব্যয় করে ফেলেছে কয়েকটি কোম্পানি; সুদও নাকি উঠিয়ে নিয়েছে তারা। উক্ত অর্থ শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনের জন্য তারা আইডিআরএ’র অনুমোদন নিতে গেলে ঘটনাটি প্রতীয়মান হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বণিক বার্তায় প্রকাশ কয়েকটি প্রতিবেদনে একশ্রেণীর বীমা কোম্পানি কর্তৃক ভারসাম্যহীন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। তার মধ্যে বাকিতে ব্যবসা ও অবৈধ কমিশন দেয়ায় বেশ ক’টি বীমা কোম্পানি ও শাখা প্রধানদের কোটি টাকাও বেশি অর্থ জরিমানা করে আইডিআরএ। এর পরও মনে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানকে নিজ বা পরিবারের নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতি যতটুকু রয়েছে ৮০ শতাংশ তামাদি পলিসির দিকে সে নজর নেই একশ্রেণীর বীমা ব্যবসায়ীর। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সুপারভাইজরি সক্ষমতার কার্যকারিতাই দেখতে চাইবেন সবাই।

খাতের ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বজায় না রেখে বীমা শিল্পের নিয়মতান্ত্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে পলিসি গ্রাহক ও পলিসির অধীন উপকারভোগীদের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব নয়। অথচ এটি নিশ্চিত করা দরকার। কেননা বীমায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের সম্মিলন ঘটে অর্থনীতির নানা অংশে বিনিয়োজিত হয় এবং তাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। খাতটি বর্তমান্নে দেশে ২০ লক্ষাধিক মানুষের বেকারত্ব ঘুচিয়েছে বলা জানা যায়। বীমা বাজারের উল্লেখযোগ্য একাংশ রয়েছে পুঁজিবাজারের পোর্টফোলিও বিনিয়োগে। অন্যদিকে আমদানি ও রফতানি কার্যক্রম বীমা ছাড়া পরিচালনার কথা ভাবো যায় না। অবকাঠামো উন্নয়নেও সুযোগ রয়েছে বীমা তহবিল বিনিয়োগের। মূলত এসব কারণেই বীমা ব্যবসাকে আর্থ-সামাজিক সেবা ব্যবস্থা হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অথচ একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর ভুল ও এলোমেলো পদক্ষেপে বীমা খাতের অনেক সম্ভাবনাই ম্রিয়মাণ। এ বিষয়ে আইডিআরএ’র বলিষ্ঠ উদ্যোগ কাম্য তাই। তাদেরই বীমা প্রতিষ্ঠানে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিতে নজরদারি বাড়াতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যেন বীমা সেবা পরিচালনায় পেশাদারিত্ব সৃষ্টি হয় এবং অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধপূর্বক খাতটিকে সঠিক পথে পরিচালনা করা যায়। নইলে কিন্তু বীমাযোগ্য ঝুঁকি নিরসনের মাধ্যমে অর্থনীতিতে এর কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না।

আইসিটি বিনিয়োগের কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না

চিহ্নিতপূর্বক সমস্যা দূর করুন

ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট পরিচালিত ‘দ্য স্টেট অব ব্রডব্যান্ড ২০১৪’ গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপস্থাপিত গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ খবরটি এরই মধ্যে অনেক আগ্রহী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, খানা হিসাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে একমাত্র আফগানিস্তান। দেশটির সঙ্গে এখানকার পরিস্থিতি মোটেই তুল্য নয়। বরং অনেকে যখন আফগানিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্রের কোন পর্যায়ে পড়ে সেটি নিয়ে চিন্তিত, সেখানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা এখন বেশ উচ্চারিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বর্তমান সরকারও দেশের ডিজিটাল রূপায়নে আন্তরিক ছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অব্যাহত বিনিয়োগ দেখেছি আমরা এবং অর্থ মূল্যে তার পরিমাণ মোটেই সামান্য নয়। অথচ সে তুলনায় কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ হয়েছে কমই। বিশেষত ব্যক্তি পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের ঘনত্ব গত বছরের তুলনায় দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে প্রভৃতি উজ্জ্বলতর কোনো ভবিষ্যৎ আমাদের সামনে দাঁড় করায় না। আবার এখানকার ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে, এটিও বিরাট আশার কথা নয়। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের একটা সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ওই হিসাবে স্থানীয় জনসংখ্যার এক হাজার জনের মধ্যে নাকি মাত্র ৪ জন ব্যবহার করেন ফিক্সড ব্রডব্যান্ড। শতকরা ৮ জন ব্যবহারকারী সেলফোন ইন্টারনেটের সেবা নিয়ে থাকেন। এর ডাটাসেবার সক্রিয় গ্রাহক চিত্রও দক্ষিণ এশিয়ায় তুলনামূলকভাবে আশাপ্রদ নয়। এমন পরিস্থিতিতে সমস্যা চিহ্নিতপূর্বক তার সমাধানে নজর দিতে হবে সরকারকেই।

তবে এক্ষেত্রে কিছু জটিলতা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সেলফোন অপারেটরসহ কিছু ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী মনেই করেন- দ্রুতগতির ইন্টারনেট বিষয়ে মানুষের সচেতনতা ও কিছু ক্ষেত্রে আগ্রহের অভাবই থ্রিজির মতো ব্রডব্যান্ডের আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি থামিয়ে রেখেছে। এমন অভিযোগের সত্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেক বিশেষজ্ঞের মনে। বরং এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর কাছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা এখনো সেভাবে সুলভ নয় বলে তাদের অভিমত। কার্যত সূচনার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি প্রচেষ্টায় ব্রডব্যান্ডের দাম যতটা কমানো হয়েছে, গ্রাহক পর্যায়ে তার প্রতিফলন আদৌ কত, সে খবর ব্যবহারকারী মাত্রেই রাখেন। ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকেন এমন কিছু ব্যবসায়ীর ধারণা হলো, বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব তুলে নেয়া হলে (এমনকি ভর্তুকি দিয়ে), খাতটি অনুপ্রেরণা পাবে এবং পরিণামে উপকৃত হবে গ্রাহকরা। একশ্রেণীর সেলফোন অপারেটরদের মধ্যেও দেখা যায় উক্তন প্রবণতা। খাত সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ আবার মনে করেন, ভ্রান্ত নীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোতে পারছে না বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত। ফলে সেভাবে বাড়ছে না ইন্টারনেটের ব্যবহার। তাদের অনেকের সন্দেহের তীর খোদ বিটিআরসি’র দিকেই- সংস্থাটি সরকারি নীতিনির্ধারণে ভুল পথে নেই তো? অন্যদিকে এমন সাফাই গাইতেও শোনা যায় যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যধিক বেশি হওয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারের উন্নয়নমূলক চিত্র খানিকটা ম্লান দেখায়। এ যুক্তি খোঁড়া বলেই মনে হয়েছে কারো কারো কাছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে আগামী দিনের এই গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর বিকাশ। আসলে এক্ষেত্রে সমন্বয় ভিন্ন পথ নেই; যেখানে আমাদের ঘাটতি ব্যাপক। এখানে বিটিআরসি সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে সবাইকে উপকৃত করবে এমনটাই প্রত্যাশিত।

সতর্কতা এড়িয়ে শ্যালা রুটে নৌচলাচল শুরু

সংশোধনাতীত ভুল নিঃসন্দেহে দুঃখজনক

গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটার তেলসহ নৌযান ডুবির এক মাস না পেরোতেই সরকার কর্তৃক উক্ত রুটে শর্তসাপেক্ষে নৌযান চলাচলের অনুমতি প্রদানের খবর ছাপা হয়েছে গতকালের বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায়। রুটটি খুলে দেয়া না হলে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশে নৌচলাচল বন্ধ করার হুমকি দিয়েছিলেন নৌযান মালিক ও শ্রমিকরা। এমনিতেই রাজনৈতিক অস্থিরতায় গত কয়েক দিনে রেল বাদ দিয়ে সড়ক পথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যাপকভাবে ব্যাহত। সেজন্যই হয়তো সরকার নৌপথে পরিবহন বন্ধের ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কর্তৃপক্ষ সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্যের কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই খেয়ালখুশি মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে কোথাও বলা যাবে না। কেননা বলা হয়েছে, মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খননকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ রুটে নৌযান চলাচল করতে পারবে বটে কিন্তু তা নিয়ন্ত্রিত উপায়ে ও সাময়িকভাবে। শর্তানুযায়ী, আলোচ্য রুটে রাতে কোন যান চলাচল করতে পারবে না; বন্ধ থাকবে তেলবাহী জাহাজ চলাচলও। তবে সচেতন মানুষরা আশ্বাস্ত হতে চাইবেন, রুটটি পুরোপুরি বন্ধ ধারাবাহিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং দুর্ঘটনাটি আমাদের কোনো সংশোধনাতীত ভুল নয়।

সারা বিশ্বের ম্যানগ্রোভ বনভূমির মধ্যেও সুন্দরবনের স্বাতন্ত্র্য থাকার কথা স্বীকার করেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত এর কিছু জীব বৈচিত্র্য প্রতি বছর আহ্বান জানায় অনেক গবেষককে। এদিকে সাধারণ পরিস্থিতিতেই বিরূপ আবহাওয়ায় নানা ক্ষতিকর ধাক্কা সামলাতে সুন্দরবন এক অর্থে বিরাট ঢাল হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় বনটির গুরুত্ব আমাদের কাছে বাড়বে বৈ কমবে না। অথচ এর প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি সেভাবে প্রতিভাত হচ্ছে না বলে অনেকের অভিযোগ। এখন সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে তার সুরাহাই কাম্য। সেটি সুন্দরবনে শ্যালা রুট দিয়ে নৌচলাচল চালুকরণের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করা যাব না। বরং রুটটি যত দ্রুত সম্ভব পুরোপুরি বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যকে একেবারে আনডিস্টার্বড রাখার কথা। তেমন সতর্কবাণী গত কয়েক বছর ধরেই তুলে ধরেছেন অনেকে। তবু তাতে কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধি কতটা জাগ্রত হয়েছে নির্ণয় করা মুশকিল। ২০১১ সালে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়াই নৌচলাচল শুরু হয় শ্যালা রুটে’ এতে গত এক বছরে ডুবেছে তিনটি জাহাজ। এখনো যদি কর্তৃপক্ষ ইস্যুটির প্রতি উপযুক্ত দৃষ্টি দানে সক্ষম না হন, সেটি জনগণের জন্য দুঃখজনক বৈকি।

ডিপোজিটরি সেবার মাশুল

আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করুক সিডিবিএল

দেশে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি এবং সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) গঠিত হয় চলতি সহস্রাব্দের প্রথম বছরই। তবে লেনদেন মানে শুধু বিতরণ নয়, লেনদেন-পরবর্তী শেয়ারের মালিকানা হস্তান্তরও এর অন্যতম কাজ বৈকি। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর আয় নিয়ে সংশয় ছিল অনেকের। কেননা তখনো বাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের ইলেকট্রনিক রূপান্তর হয় নি; কতদিনে তা সম্পন্ন সেটি নিয়েও বিরাট আশাবাদ ছিল না। তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈশ্বিক নিয়মের বাইরে গিয়ে শেয়ার সংখ্যার ওপর না ধরে শেয়ারের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় মাশুল। সেজন্যই বলা যায়, দ্রুতই আয় নিয়ে সংশয় কাটিয়ে উঠে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় সিডিবিএল। তার ভিত্তিতে একবার নাকি শেয়ারহোল্ডারদের সর্বোচ্চ ১৩০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশও দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। সমস্যা হলো, এরই মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে আমাদের শেয়ারবাজারের আকার ও প্রকৃতিতে; সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালী হয়েছে সিডিবিএলের আর্থিক ভিত্তি। অথচ সিডিবিএল সেবা মাশুল নিচ্ছে শেয়ারের বাজারমূল্যের ওপর। তাতে শেয়ার লেনদেনে অপেক্ষাকৃত বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে। অন্যদিকে কিন্তু সিডিবিএলের সব সক্ষমতা ও কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে শেয়ার সংখ্যার ভিত্তিতে। এমন পরিস্থিতিতে সেবা মাশুল ভিত্তির পুনর্মূল্যায়ন চেয়ে অনেকে স্বভাবতই আকর্ষণ করেছেন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি।

খেয়াল করার মতো বিষয়, শেয়ার ডিমেট, রিমেট, করপোরেট অ্যাকশন ও নতুন আইপিও’র ফি নেয়ার বেলায় বাজারমূল্য হিসাব করা হচ্ছে। প্রতি ১০০ টাকায় ১ দশমিক ৭৫ পয়সা আলাদাভাবে ফি নেয়া হচ্ছে শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি ও স্থানান্তরে শেয়ারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ওপর। তার মানে প্রতি ১০০ টাকা লেনদেনে ৩ দশমিক ৫ পয়সা মাশুল পাচ্ছে সিডিবিএল। অথচ সূদূর দেশের উদাহরণ টানার দরকার নেই, প্রতিবেশী ভারতে ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটরি লিমিটেডের (এনএসডিএল) ক্ষেত্রে দেখা যায়- তারা শেয়ার লেনদেনে শুধু ডেবিট এন্ট্রিতে চার্জ নেয় যা বহনের দায়িত্ব বিক্রেতার। ফলে সেখানে একটি লেনদেনে ১০ কোটি শেয়ার বিনিময় হলেও সেবা মাশুল থাকে সমান। আমাদেরও তেমন কিছু চিন্তা-ভাবনা করে দেখতে হবে বৈকি। নিঃসন্দেহে বাড়তি অর্থ সিডিবিএলের অধিকতর উন্নয়নে ব্যয় করা যায় এবং সেটিই উদ্দেশ্য বলে দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তির অভিমত। তবু এখানে শেয়ারবাজারের চাহিদাই কিন্তু মুখ্য। সেটি আমলে নিয়ে সিডিবিএল কর্তৃক আরোপিত সেবা মাশুলের ভিত্তি কর্তৃপক্ষ নতুন করে বিবেচনা করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

এডিপি বাস্তবায়ন

পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়

চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫) প্রথমার্ধে প্রাক্কলিত বাজেটের ২৮ শতাংশ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায়। পরিস্থিতি মূল্যায়নের স্বার্থে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করা দরকার। প্রথমত. এডিপি বাস্তবায়নকারী মোট ৫৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ১০টির অনুকূলেই বরাদ্দ রয়েছে ৬০ হাজার ৮৮৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা; যা পুরো এডিপির ৭১ শতাংশ। অর্থাৎ এডিপি বাস্তবায়নের গতি ব্যাপকভাবে এদের ওপর নির্ভরশীল। অধিক বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে আবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নকৃত কর্মসূচি তুলনামূলকভাবে কম- প্রায় ১৪ শতাংশ; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সেতু, সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো খাতে কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার অনুর্ধ্ব ৩০ শতাংশ। এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবেদককে দেয়া পরিকল্পনা মন্ত্রীর বক্তব্য হলো, বিল পরিশোধের পর বাস্তবায়ন হয়েছে বলে ধরা হয়। তাই কাজ হলেও বিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় বাস্তবায়ন কম দেখাচ্ছে। তিনি আরো মনে করেন, প্রথম ছয় মাসে ২৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হলেও বছর শেষে শতভাগ সম্পন্ন হবে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আরো বাড়তে পারে বলেই তার অভিমত। তার এসব মন্তব্যকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে বলা যায়, প্রথমার্ধ সময়ে বাস্তবায়নে শ্লথগতি দেখা গেলেও শেষ তিন মাসে একেবারে দ্রুতগতি পায় এডিপি। প্রশ্ন হলো, এভাবে এডিপি বাস্তবায়িত হলে কর্মসূচির কাঙ্ক্ষিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব কিনা?

দেখা যাচ্ছে, এডিপি বাস্তবায়নের গ্রহণযোগ্য গতি অর্জনে পুরনো সমস্যাগুলো রয়েই গেছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে পদক্ষেপ নেয়ার পরও কেন বাধা দূর হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সময়ভিত্তিক বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা সম্পন্ন না হওয়ার কথা। যথাযথ নজরদারি এ সমস্যার সমাধান করতে পারে বলে অনেকের ধারণা। একই পদ্ধতি ভিন্নভাবে প্রয়োগ করা উচিৎ যোগ্য পরিচালক নিয়োগের বেলায়। লক্ষ্যণীয়, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে অর্থ পেতে ঝামেলা হয় এখনো। তার কারণ, বিদেশিরা সহায়তা জোগাতে লজ্জা পাচ্ছে কিংবা অনাগ্রহী- তা নয়। বরং অনেক ক্ষেত্রে জবাবাদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতপূর্বক দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্পের অর্থ ছাড় করাতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই। সেজন্য এডিপি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের ওপর বিশেষ জোর দেয়া প্রয়োজন; পাশাপাশি অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে কাঙ্ক্ষিত গতি অর্জনে।

অবকাঠামো স্বল্পতার কবলে বিদেশী বিনিয়োগ

রাজনৈতিক অস্থিরতাও দূর করতে হবে

গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ১৯তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপিত ‘বিশ্বায়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক কর্ম অধিবেশনের নানা মন্তব্য চিন্তাশীল পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বৈকি। স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ তথা এফডিআইয়ের (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) গুরুত্ব নতুন করে ব্যাখ্যার কিছু নেই। অথচ এ বিষয়ে আপাতত কোনো সুখবর নেই আমাদের জন্য। কেন নেই- সে উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি (সিপিডি) ডায়ালগের অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক যে কারণ খুঁজে পেয়েছে তা এখানে প্রণিধানযোগ্য। তিনি জানাচ্ছেন, যেখানে বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ সেখানে গত ৩ বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাহিত এফডিআইয়ের ৯০ শতাংশই গিয়েছে ভারতে। তদুপরি একই অঞ্চলে বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ এফডিআই স্টক (সঞ্চিতি) থাকার পাশাপাশি ভারতের রয়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। চলমান এ চিত্রের সরাসরি অর্থনৈতিক একটি ব্যাখ্যা মেলে উক্ত অধিবেশনে বিনিয়োগ বোর্ডের গবেষণা ও উন্নয়ন বিষয়ক উপপরিচালক কর্তৃক পেশকৃত এক নিবন্ধে। গবেষণাটির অন্যতম ভিত্তি জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অরগানাইজেশন (জেইটিআরও) পরিচালিত এশিয়া ও ওশানিয়া অঞ্চলে বিনিয়োগ সংক্রান্ত ২৩ তম জরিপ। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ভারতের তুলনায় ব্যবসা করার ব্যয় কম হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে সেভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে না বিদেশী বিনিয়োগ; পশ্চাৎপটে থাকা অবকাঠামো স্বল্পতাই যার মূল কারণ।

দেখা যায়, ডলার হিসাবে সাধারণ শ্রমিকের মাসিক মজুরি জরিপকৃত ১০টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। শিল্প জমি ভাড়া বাংলাদেশের চেয়ে খানিকটা কম ভিয়েতনামে। তবে বড় কথা হলো, এখানে শিল্পের জন্য জমি পাওয়াই মুশকিল। মোটামুটি একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে ব্যবসায় ব্যবহারের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাস-বিদ্যুত-পানির ব্যয়েও। এসব সেবা পণ্যের একক প্রতি ব্যয় অধিকাংশ ব্যবসায়ীর নাগালে থাকলেও হিমশিম খেতে হয় সংযোগ প্রাপ্তি নিয়ে। ডুয়িং বিজনেস সূচকে নাকি বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার তালিকায় সবচেয়ে নীচে রয়েছি আমরা। আরেকটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, গবেষণাকৃত ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশেই করপোরেট আয়কর হার বেশি- আনুমানিক ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহে এটি কোনো বাধা হিসেবে কাজ করছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে। তবে সর্বাগ্রে দূর করতে হবে অবকাঠামোজনিত প্রতিবন্ধকতা। সে লক্ষ্যে সরকারের একাধিক বৃহৎ পরিকল্পনার কথাও জানা যায় গণমাধ্যমে প্রকাশ নানা খবরে। কিন্তু সমস্যা সেসবের সময়মতো ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিয়ে। এজন্য সরকারের সদিচ্ছা দেখানো দরকার। পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের এক তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯ সালে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেমন ছিল ২০১২ সালেও তার কোনো পরিবর্তন হয় নি। উভয় ক্ষেত্রে নির্বাচিত কয়েকটি দেশের মধ্যে এগ্রিগেট গভর্নেন্স ইন্ডিকেটরে আমাদের ওপরে রয়েছে শুধুমাত্র পাকিস্তান। জবাবদিহিতা, নিয়ন্ত্রণ মান, আইনের শাসন- এসব প্রতিটি ক্ষেত্রে নিম্নমুখী হয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। কেবলমাত্র দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দেখা যাচ্ছে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা। এ বিষয়ে ফিচ রেটিংয়ের ভিত্তিতে এক প্রতিবেদন গতকাল ছাপা হয় সহযোগী এক দৈনিকে। সেখানেও একই সতর্কবার্তা- অভ্যন্তরীণ চাহিদা, ভোক্তার আস্থা, রাজস্ব আয়, মূল্যস্ফীতি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিনিয়োগের আগে বিদেশীরা সে ঝুঁকি যাচাই করে দেখবেন বৈকি। অবকাঠামগত দুর্বলতার সঙ্গে সঙ্গে এফডিআই আকর্ষণে এসব দূরীকরণের বিকল্প নেই।

সরকারের বর্ষ পূরণ

ফাস্ট ট্র্যাক কর্মসূচির দ্রুত বাস্তবায়ন কাম্য

বাংলাদেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ও সংসদীয় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রক্রিয়াতেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্বভার গ্রহণ করে বর্তমান সরকার। সেবারের নির্বাচনী ইশতিহারে অগ্রাধিকার দেয়া হয় নিরবচ্ছিন্ন উন্নয়ন নিশ্চিতকরণকে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের এক বছর পূরণ হয়েছে। যদিও মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট সময় নয়, তবু প্রাথমিকভাবে ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা পেতে তাদের গত বছরের পারফরম্যান্স সামনে আসা উচিৎ। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলটা না থাকা সত্ত্বেও সাধারণভাবে সে সময় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি। এটি আগামীতেও ধরে রাখা চাই। যে কারণেই হোক, শ্রম কল্যাণে উক্ত সময়ে সরকার প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে বলে প্রতীয়মান। তবে এর প্রকৃত সুফল শ্রমিকের কাছে পুরোপুরি পৌঁছে দিতে আড় সময় ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে ক্ষমতাসীনরা বলিষ্ঠ ভূমিকা নেবেন বলে সবার প্রত্যাশা। গত কয়েক বছরে ধরে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে। এক্ষেত্রে ২০১৪ সালে কিছুটা নিম্নগামী প্রবণতা লক্ষ্যণীয়। সৌভাগ্যবশত তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায় না অন্তর্মুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ তথা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। রফতানি পরিস্থিতি এ সময়ে অনেকের আশানুরূপ না হলেও তা হতাশও করে নি আমাদের।

উল্লেখযোগ্য ঘটনা যে, ক্ষমতায় এসেই গত বছর ফাস্ট ট্র্যাক কর্মসূচির আওতায় ৬টি মেগাপ্রজেক্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। এর মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর খবর সুলক্ষণ নিঃসন্দেহে। তবে বিশেষত মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প ও মহেশখালীতে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল নির্মাণ কাজ কাঙ্ক্ষিতভাবে সম্পন্ন হচ্ছে না বলে অনেকের অভিযোগ। আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলো, ঢাকা-চটগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা। এটি আমাদের রফতানিমুখী খাত তথা সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর ব্যাপকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়। গত এক বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ওপর সরকার কোনো দৃষ্টিই দেয় নি, সে কথা বলা যাবে না। তবে সার্বিকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে অধিকতর সমন্বয় ও কার্যকারিতার ওপর জোর বাড়াতে হবে বলে কারো কারো অভিমত। দেখার বিষয়, সরকারি বিনিয়োগ তথা অবকাঠামো উন্নয়ন যথেষ্ট গতিশীল না থাকলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগও (বৈদেশিকসহ) পিছিয়ে পড়বে। তাতে বিঘ্নিত হবে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণের স্বপ্ন পূরণও। এ অবস্থায় প্রথম বর্ষ পূর্তি শেষে সরকার সাফল্যে সন্তুষ্ট না থেকে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অধিক মনোযোগ দেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক হ্রাস

দ্রুত ব্যবস্থা নিন

দেশে ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিতকরণে ২০১০ সালেই নির্দেশনা প্রদান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে তার উদ্দেশ্য ছিল, গ্রাহককে সারাক্ষণ নিরাপদ ও দ্রুতগতির ব্যাংকিং সেবা প্রদান। পরবর্তীতে এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয় ঝুঁকিমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিংয়ের ধারণা। ফলে স্বভাবতই কমতি ছিল না গ্রাহকের আগ্রহে; ই-ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনাও ছিল অনেক। তবে তেমন পরিস্থিতি ধরে রাখা যায় নি বলে প্রতীয়মান হয় গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক খবরে। সেখানে বলা হয়েছে, গত বছরেরে তৃতীয় প্রান্তিকে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের ব্যাংকে আনুমানিক ৭১ হাজার কমেছে এ ধরনের সেবা গ্রহণকারী গ্রাহকের সংখ্যা। মন্তব্যটি নিছক তথ্যের জটিলতা বা বিভ্রান্তি নয়, এর শক্ত ভিত্তি রয়েছে। জানা যায়, জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক হিসাব বেড়েছে প্রায় ১৮ লাখ। আলোচ্য সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবৃদ্ধিই লক্ষ্যণীয়। তবে ওই সময়ে বাড়েনি ই-ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার; বরং তা কমেছে। ঘটনাটি স্বাভাবিক নয় বলেই অনেক বিশেষজ্ঞের অভিমত। এ অবস্থায় উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ নির্ণয়পূর্বক তার আশু সমাধানই কাম্য সবার।

খেয়াল করার মতো বিষয়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালীতে সেপ্টেম্বর শেষে ই-ব্যাংকিং হিসাব (জুনের তুলনায়) ২টি কমে দাঁড়ায় ২৩টিতে। চার সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংক- কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে নাকি নেই একজন ই-ব্যাংকিং সেবা গ্রাহকও। ওদিকে নতুন কার্যক্রম শুরু করা ৯টি ব্যাংকের ই-ব্যাংকিং হিসাব বেড়েছে ৬২টি। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশী ব্যাংকগুলোর মাঝে সংখ্যাটি অনেকটা বেশি হলেও তাকে সন্তোষজনক বলা যায় না। কেউ কেউ মনে করেন, আপাতভাবে দুটি কারণে ই-ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারীর মাঝে সেভাবে সাড়া জাগাতে পারছে না; এক. নিরাপত্তা ঝুঁকি ও দুই. ব্যাংক চার্জের আধিক্য। ই-ব্যাংকিং সেবা চালুর কয়েক মাসের মধ্যে এক কেলেঙ্কারি ঘটে। উচিৎ ছিল তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ই-ব্যাংকিংয়ে প্রতারণার বীজ সমূলে উৎপাটন করা। অথচ এর প্রতি কমই দেয়া হয়েছে গুরুত্ব। এক্ষেত্রে বিশেষায়িতসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ অনুশীলনের প্রতি ইঙ্গিত করেন কেউ কেউ। আবার ই-ব্যাংকিং সেবা জনপ্রিয় করে তুলতে বিভিন্ন ফি’র পরিমাণ যে হারে নির্ধারণ করলে ভালো হতো, তার ধারেকাছেও যেতে দেখা যায় নি ব্যাংকগুলোকেই। এখন বণিক বার্তায় প্রকাশ উক্ত গ্রাহক সংখ্যা হ্রাসের খবর সংশ্লিষ্টদের মনে বোধোদয় ঘটাক এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

এম সিরাজুল ইসলাম পেশাদার কূটনীতিক। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান হতে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর বিভাগেই যোগ দেন প্রভাষক হিসেবে। পরবর্তীতে অধিকতর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রক থেকে। পাকিস্তান ফরেন সার্ভিস কর্মকর্তা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা জনাব সিরাজ দায়িত্ব পালন করেছেন ক্যানবেরা, নয়াদিল্লি, ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ে। মিশর ও জাপানে নাতিদীর্ঘ সময় রাষ্ট্রদূতের ভারও বহন করতে হয়েছে তাকে। এর বাইরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষিণ এশিয়া ও দূর প্রাচ্যের মহাপরিচালক হিসেবে। সম্প্রতি আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত-চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কসহ অর্থনীতি, রাজনীতি ও কূটনীতির নানা বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয় বণিক বার্তার।

সিএফএল বাতি

জনসংখ্যা-পরিবেশের সুরক্ষা দিতেই হবে

দামে কিছুটা বেশি হলেও দেশে কমপ্যাক্ট ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব তথা সিএফএল বাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ রয়েছে বৈকি। প্রথমত. প্রচলিত বাড়তি থেকে এর আলো অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল; অথচ চোখের জন্য সহনীয় বলা যায়। দ্বিতীয়ত. এতে বিদ্যুৎ ব্যয় হয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কম; যার সঙ্গে বিদ্যুৎ ব্যয়ের সম্পর্কটা স্পষ্ট। তৃতীয়ত. সাধারণগুলোর চেয়ে সিএফএল বাতি টেকসই। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে এর উৎপাদনকালীন ত্রুটি-বিচ্যুতিও আগের চেয়ে কমেছে অনেক। অবশ্য ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সিএফএল বাতি চালুর পক্ষে বিশ্বব্যাংক যে অবস্থান নিয়েছেন, তাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হ্রাসই মুখ্য বিবেচনা ছিল বলে প্রতীয়মান। এমনিতে বাতিগুলো মন্দ চলছিল না, সমস্যা হলো এর পারদযুক্ত উপাদান। রাসায়নিক এ মৌলটি মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সামান্য পারদ বিষক্রিয়াও মস্তিষ্ক, কিডনি ও ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। সেজন্যই অগ্রসর অর্থনীতির দেশে আজকাল সিএফএল বাতিতে পারদের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি এখানকার নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ না করে পারে না। সেজন্যই হয়তো পরিবেশ অধিদফতর ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগের (আইএমইডি) বর্তমান অবস্থান সিএফএলের বিপক্ষে। এক্ষেত্রে আরেকটি কারণও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বলে মনে হয়। সেটি হলো, বাংলাদেশ পারদ বিষয়ক মিনামাতা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। ফলে ২০২০ সালের মধ্যে পারদ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এক ধরনের। এমন পরিস্থিতিতে সিএফএল সংক্রান্ত কর্মকৌশলে নতুন কিছু ইস্যুর সংযোজন-বিয়োজন দরকার বলে মনে করেন অনেকে।

বিষয়টি ঘিরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। তাতে বিশ্বব্যাংকের ‘এফিশিয়েন্ট লাইটিং ইনিশিয়েটিভ ফর বাংলাদেশ’ প্রকল্পের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেছেন আমাদের প্রতিবেদকদ্বয়। কথা হলো, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিবেচনায় পাদর নিয়ন্ত্রণে আপোষ করা চলবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে কয়েকটি বাস্তবতা মাথায় রাখা প্রয়োজন। সিএফএল বাতি চালু করতে গিয়ে সরকারের কিছু আর্থিক ক্ষতি গুণতে হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর বিকল্প হিসেবে যাকে ভাবা হচ্ছে, সেই এলইডি বাতিও বর্তমানে রয়েছে গবেষণা ও উন্নয়নের অধীনে। ফলে এ মুহূর্তে সিএফএল বাজার থেকে উঠিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা সুপ্রভাব ফেলবে না ধরে নেয়া যায়। তাছাড়া এলইডির দামও বাড়তি হবে বলে অনুমান। আরেকটি বড় বিবেচনা হলো, এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োজিত রয়েছে সিএফএল শিল্পে। তার প্রভাবটাও নীতি নির্ধারকদের আমলে নিতে হবে বৈকি। উপরন্তু কিছুদিন আগে একদল মার্কিন গবেষক দেখেছেন যে, সাধারণভাবে একটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও পারদ নির্গমন কম হয় না; মাথাপিছু সিএফএল ব্যবহারের সঙ্গে তার একটা তুলনা চলে। এক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, ভোক্তারা সিএফএল বাতিকে তেমন ক্ষতিকারক হিসেবে বিবেচনা করছেন না; বরং এর ব্যবস্থাপনা হচ্ছে আর দশটা গৃহস্থালি বর্জ্যের মতোই। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের প্রতি এ এক উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি। ফলে জনসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে হবে। নইলে ওই পরিস্থিতির উন্নতি প্রত্যাশা করা কঠিন। পাশাপাশি কেউ কেউ মনে করেন, ব্যবসায়ীদের খানিকটা সুযোগ দেয়া হয় যাতে তারা উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে সময় যেন অধিক বিলম্বিত না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

বিদেশী ঋণের ব্যবহার

শর্ত-ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

খবরটি গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ। ক’বছর আগে স্থানীয় এক বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও নেদারল্যান্ডের এফএমও’র ৬ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের অনুমোদন দেয় বিনিয়োগ বোর্ড। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল বৈদেশিক ঋণ অনুমোদন-সংক্রান্ত বাছাই কমিটি। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে দেখা যাচ্ছে, যে তারিখে আলোচ্য প্রতিষ্ঠানটি বিদেশী ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় নগদায়ন করে সেই একই দিন উক্ত অর্থ হতে তাদের স্থানীয় একটি ঋণ সমন্বয় করা হয়। স্পষ্টত এটি বিনিয়োগ বোর্ডের দেয়া শর্তের লংঘন। তদুপরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণের সুযোগ কমই যে, বিনিয়োজিত হওয়ার পরিবর্তে বিদেশী ঋণ দায় পরিশোধের জন্য ব্যবহার করা হলে বিনিয়োগের অন্যতম উদ্দেশ্য তথা কর্মসংস্থান সৃষ্টি পূরণ হয় না। উল্টো এ অপব্যবহৃত ঋণ বিরূপ প্রভাব ফেলে কিনা, সে আশঙ্কাও করেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশী ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অধিক সক্রিয়তা প্রত্যাশা করবেন সবাই।

খেয়াল করার মতো বিষয়, উক্ত কোম্পানি বিদেশী ঋণ এনেছিল প্রকল্প স্থানান্তরের জন্য। সে অর্থই ব্যয় হয়েছে স্থানীয় ব্যাংকের দেনা পরিশোধে। কথা হলো, কেবল ওই প্রতিষ্ঠান নয়- এ ধরনের ঘটনা আরো রয়েছে। ২০০৯ সালে থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার বৈদেশিক ঋণ অনুমোদন দেয়া হয় বেসরকারি। এর মধ্যে একশ্রেণীর চিহ্নিত ঋণখেলাপি ও ব্যাংক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও নাকি রয়েছেন সে তালিকায়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ যেমন বণিক বার্তার কাছে পরামর্শ দিয়েছেন, তেমনিভাবে নজরদারি বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। গ্যারান্টি দেয়ার বেলায় বাংলাদেশ ব্যাংককে কোম্পানির কাগজপত্রের যথাযথ যাচাই নিশ্চিত করতে হবে। যে কমিটি ঋণ প্রদানের অনুমোদন দিচ্ছে, তাদের শক্ত অবস্থান চাই এক্ষেত্রে। সর্বোপরি বিদেশী ঋণের শতভাগ অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে কোনো রকম শৈথিল্য কাম্য নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ব্যাংকগুলোর নিজেদেরও এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে; তাদের সমন্বয় করে চলতে হবে বৈদেশিক ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। তার সঙ্গে শর্তভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও হয়তো পরামর্শ দেবেন অনেকে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ দ্বিমুখী রেলপথ

প্রকল্পের বাস্তবায়ন হোক দ্রুত

প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকার মোট ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায়। এসব প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থের যোগান আসবে স্থানীয় উৎস থেকে আর বাকিটা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসার কথা। সেগুলোর মধ্যে ৩৭৮ কোটি টাকা (অনুমোদিত) ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে মিটারগেজের সমান্তরালে সাড়ে ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গজ রেলপথ নির্মাণ কর্মসূচি নানা কারণেই উল্লেখযোগ্য। খেয়াল করার মতো বিষয়, কয়েক বছর আগে বর্তমান সরকারের বিগত শাসনামলে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয় প্রধানত দুটি বিষয় বিবেচনায় রেখে। প্রথমত. ব্যবসার প্রয়োজনেই ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের দক্ষ ও পর্যাপ্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রয়োজন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সড়কপথে এ রুটে চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীদের যে মাত্রায় হয়রান হতে হয় এবং সময়ের অপচয় ঘটে তা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ হাইওয়েতে যানজটের চাপ হ্রাসের জন্যও এটি প্রয়োজন ছিল। দ্বিতীয়ত. ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যাত্রী চলাচলের ভোগান্তি বিবেচনা অনেকে প্রায় বাধ্য হন ঢাকায় থাকতে। অর্থাৎ আলোচ্য রুটে উপযুক্ত পরিবহন ব্যবস্থা রাজধানীর ওপর থেকেও জনসংখ্যার চাপ কমাতে অনেকখানি সক্ষম। উভয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের গুরুত্ব আরো তীব্রভাবে অনুভব হয় বৈকি।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনকে (বিকেএমইএ) নারায়ণগঞ্জের শান্তির চরে নীটপল্লী স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বলে জানা যায়। ওটি প্রতিষ্ঠা হলে নগরীর ব্যস্ততা বাড়বে বৈ কমবে না। ফলে সব দিক আমলে নিয়ে বলা যায়- এ সিদ্ধান্ত আরো আগে নেয়া দরকার ছিল। শেষ পর্যন্ত একনেক প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, এটি সুখবর নিঃসন্দেহে। তবু এখন সবাই চাইবেন কর্মসূচিটির দ্রুত বাস্তবায়ন। ব্যাখ্যা না করলেও চলবে যে, বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প থেকে অর্থনীতি আশানুরূপ সুফল তুলে নিতে পারে না শুধুমাত্র অসময়োচিত বাস্তবায়নের কারণে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ দ্বিমুখী রেলপথ বসানোর কাজে তেমন বিলম্ব দেখতে চাইবেন না কেউই। নারায়ণগঞ্জে ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালের স্বপ্নও দেখছেন অনেকে। সেজন্যও রেলপথটি দ্রুত সম্পন্ন হওয়া দরকার। পাশাপাশি শুধু এটি নয়, গুরুত্বপূর্ণ সব প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে নজরদারি বাড়াতে হবে সরকারকে। তার সঙ্গে সব ধরনের সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিহার্য। কেননা তা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

অনুমোদন ছাড়াই বীমা ব্যবসা সম্প্রসারণ!

আইন প্রয়োগে শৈথিল্য নয়

দেশে শতভাগ বিদেশী মালিকানার এক বীমা কোম্পানি কর্তৃক অনুমোদন ছাড়াই শাখা সম্প্রসারণের বিষয়টি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। আমাদের প্রতিবেদন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠান এ দেশে ব্যবসা শুরু করে শাখা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। বিদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান এ দেশে ব্যবসা করতে চাইলে বা শাখা খুলতে চাইলে বিনিয়োগ বোর্ডের (বিওআই) অনুমোদন নিতে হয়। সে ধরনের রেকর্ড নাকি এক্ষেত্রে মেলে নি। তেমন পরিস্থিতিতে উক্ত কোম্পানি শুধু ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া নয় সারা দেশে আনুমানিক ২০০ অফিস খুলতে সক্ষম হলো, সে খতিয়ে দেখা দরকার। তারা সঙ্গে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন, কর্তৃপক্ষের ‘নজর’ এড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি একাধিক বড় শহরে কী করে চলছে তাদের শাখা অফিস। কোনো প্রতিষ্ঠানে টার্গেট করে নয়, বরং সার্বিকভাবে বীমা খাতকে সুশাসনের আওতায় আনতেই এসব ঘটনায় শক্ত অবস্থান নিতে হবে কর্তৃপক্ষ। নইলে একটি মন্দ ঘটনার কুপ্রভাব অন্যদের ওপর পড়া অস্বাভাবিক নয়।

খাতসংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবসায়ীর দাবি, বীমা খাতের প্রতিটি কোম্পানির জন্য অভিন্ন আইন হওয়া উচিৎ। জানা যায়, এখন পর্যন্ত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) যত নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তারা সবই প্রতিটি কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য। পাশাপাশি নতুন বীমা কোম্পানি গঠনের বেলায় নীতিমালা সংক্রান্ত যেসব শর্ত নতুন জারি করা হয়েছে, পুরনো কোম্পানির ক্ষেত্রে তা পরিপালনের সময়সীমাও নাকি বেঁধে দেয়া হয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোম্পানির মালিকানায় বিদেশি অংশ। প্রথমে আইডিআরএ বলেছিল, বীমা কোম্পানিতে বিদেশীদের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ শেয়ার থাকতে পারে। বিদেশী কোম্পানি গঠনে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের হাতে অধিকাংশ শেয়ার রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে। প্রতিবেশী এমনকি পাকিস্তানেও রয়েছে এর দৃষ্টান্ত। শুধু তাই নয়, সেখানে বিদেশী বীমা কোম্পানিকে শেয়ারবাজারেও অন্তর্ভুক্ত হতে হয়েছে। জানা যায়, পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় বিদেশী উদ্যোক্তাদের হাতে ৬০ শতাংশ শেয়ার তুলে দেয়ার নীতি পালনে চাপ দেয় আইডিআরএকে। কথা হলো, আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওই ন্যূনতম শর্তও যথাযথভাবে পরিপালন হচ্ছে। এর সদুত্তর জানা প্রয়োজন। নইলে বীমা বাজারের সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানের দ্বারা। শতভাগ বিদেশী মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হলে কিন্তু মুনাফার অর্থও স্থানীয় অর্থনীতিতে ধরে রাখা কঠিন। ফলে এক্ষেত্রে কোম্পানিটির কার্যক্রম পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনায়নে কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

বিশ্বসেরা গবেষণা সংস্থার তালিকায় বিআইডিএস

সাফল্য আরো সামনে যাওয়ার অনুপ্রেরণা হোক

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান থিংক-ট্যাংক অ্যান্ড সিভিল সোসাইটিজ প্রোগ্রাম (টিটিসিএসপি) পরিচালিত গ্লোবাল গো টু থিংক-ট্যাংক ইনডেক্সে (জিজিটিটিআই) আমাদের সরকারি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) কৃতিত্বের খবর এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায়। ২০১৪ সালের হিসাবে বিশের প্রায় ৮ হাজার গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিআইডিএসের অবস্থান ৯৭তম; প্রতিষ্ঠানটি গতবারও একই অবস্থানে ছিল। খেয়াল করার মতো বিষয়, শীর্ষ থিংক ট্যাংক (নন-ইউএস) ক্যাটাগরিতে এর অবস্থান ৯৯তম। তার বাইরে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শীর্ষ থিংক ট্যাংকের তালিকায়ও বিআইডিএসের অবস্থান প্রশংসনীয়। সরকারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করা থিংক ট্যাংকের মধ্যেও এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানটির এ নৈপুণ্য দেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের; বিশেষত স্বীকৃতি যখন মিলেছে থিংক ট্যাংকের থিংক ট্যাংক টিটিসিএসপি’র কাছ থেকে। সবাই প্রত্যাশা করেন, এ সাফল্যকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে নিজ অগ্রগতি অব্যাহত রাখবে বিআইডিএস। পাশাপাশি স্থানীয় সব থিংক ট্যাংকের সহযোগিতায় গবেষণা ও নীতির মধ্যে ব্যবধান হ্রাসে মনোযোগ দিতে হবে নীতিনির্ধারকসহ সংশ্লিষ্ট সবার।

গবেষণায় গুণগত মানে পরিবর্তন আনতে না পারলে ওই অবস্থান অর্জন সম্ভব হতো না। এক্ষেত্রে বিআইডিএস অন্যদের সামনে দৃষ্টান্ত বটে। স্থানীয় আর্থ সামাজিক গবেষণায় প্রতিষ্ঠানটির সুনাম বরাবরই ছিল। দারিদ্র্য বিমোচন, পরিবেশগত ইস্যুতে পরিচালিত এদের গবেষণার সুনাম ছড়িয়েছে অনেকদূর। তবে এ ধারা অব্যাহত রেখে পরিবর্তনশীল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে মানসম্পন্ন গবেষণা বৃদ্ধি উত্তরোত্তর বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এখন শুধু সমাজের মৌলিক প্রবণতাই গবেষণা বিষয় নয়, নীতি নির্ধারণের জন্য সমাজের ওপর তথ্যের প্রভাবও তাৎপর্যপূর্ণ। জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে তাই বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির খবরাখবরও নিতে হচ্ছে এখন। সেসব নতুন নতুন ক্ষেত্র নিয়ে গবেষোণায় বিআইডিএসের ভূমিকা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে নানা প্রতিবন্ধকতা সঙ্গে নিয়েই গবেষণা চালাতে হয়। এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবের কথাও সচেতনদের অজানা থাকার কথা নয়। এ চলমান বাস্তবতা নিত্যই হয়তো স্মরণ করতে হয় গবেষকদের। এ অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিকাশে গবেষণার গুরুত্ব আমলে নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। আর কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে তার সুপ্রভাব সমাজ ও অর্থনীতিতে পড়বে, এমন প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক

এবার বাড়ুক সহযোগিতার আওতা

ভারতের ৬৬তম প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির আয়োজনে শুক্রবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় ‘ইন্ডিয়া রিপাবলিক ডে অ্যান্ড কনটেমপোরারি সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক সেমিনার। উপস্থিত বক্তাদের মতামতে এটা স্পষ্ট যে, এরই মধ্যে বাণিজ্য, সংস্কৃতিসহ বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত খবরাখবরও ছাপা হয়েছে গতকালের বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায়। নিঃসন্দেহে উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আগের তুলনায় ভালো এবং তা সুখবর। তবে এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, বিদ্যমান মৈত্রীকে কার্যকর করে তোলা তথা দু’দেশের উন্নয়নে বিদ্যমান সুসম্পর্কের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত. এ সুসম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখতে হবে। কারো কারো ধারণা, যেহেতু বাংলাদেশ-ভারতের অবস্থান স্থির, এক্ষেত্রে সাময়িক নীতি গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। তৃতীয় বিষয় হলো, অন্তত উপ-আঞ্চলিক ইস্যুতে এবং বিশেষভাবে অর্থনীতির বেলায় পারস্পরিক সহযোগিতার আওতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওই তিন দিক আবার বিচ্ছিন্ন নয়; বরং সংযুক্ত। ফলে এক্ষেত্রে একটি ফেলে অন্যটিকে বেশি গুরুত্ব প্রদানের সুযোগ নেই। বরং সম্ভাবনা বিচারে প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে হবে উভয়ের সমৃদ্ধির স্বার্থে।

খেয়াল করার মতো বিষয়, বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দৃঢ়তর রয়েছে মূলত জিটুজি (সরকারি) পর্যায়ে। এক্ষেত্রে বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) কিংবা পিপল টু পিপল (পিটুপি) স্তরে সম্পর্কোন্নয়ন আশানুরূপ হয় নি বলে অনেকের ধারণা। অবশ্যই এরই মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ছাড় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবু কিছু ব্যবসায়ীর অভিযোগ, শুল্ক ছাড় মিললেও এখনো নানা রকম অশুল্ক বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিভিন্ন বাংলাদেশী পণ্যকে। এমন ‘কাজীর গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নেই’ অবস্থা একেবারে কাম্য নয়। সেজন্য ভারতকে এগিয়ে আসতে হবে আর সমন্বয় বৃদ্ধির প্রতি অধিক দৃষ্টি দিতে হবে আমাদের ব্যবসায়ীদের। তার সঙ্গে কেউ কেউ মনে করেন, গোটা ভারতকে আকর্ষণীয় বাজার হিসেবে না দেখে বাংলাদেশী উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের উচিৎ অধিক সম্ভাবনাময় বাজার চিহ্নিত করে অগ্রসর হওয়া। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক স্বার্থ সুরক্ষায় ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট ইস্যুর দূরদর্শী সমাধানও দরকার। অন্যদিকে উভয় দেশের জনগণের সম্পর্কোন্নয়নের বড় দুটি ক্ষেত্র- স্থল সীমান্ত ও আন্তঃসীমানা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা। আর সেখানে ভারতের ভূমিকাই বৃহৎ বলে প্রতীয়মান। এ অবস্থায় দু’দেশই পারস্পরিক স্বার্থের তাগিদে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও তা কার্যকরে যত্নবান হবে বলে সবার প্রত্যাশা।

জরুরি ওষুধপত্র

সরবরাহ সংকট দূর হোক

মাদক হিসেবে অপব্যবহার বাদ দিয়ে প্যাথেডিনকে জরুরি ওষুধপত্রের মধ্যেই ধরা হয়। রোগীর অস্ত্রপচারে ব্যবহার হয় এর ইনজেকশন। ক্যান্সার রোগীর কেমোথেরাপিতে এবং বিশেষভাবে তীব্র ব্যথা হ্রাসে কার্যকর এ ওষুধ। গোটা দেশ মিলিয়ে আমাদের প্যাথেডিনের চাহিদা বিরাট নয়- আনুমানিক ৪৫০ কেজি। এর মধ্যে একাই ৩০০ কেজি উৎপাদন করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটির প্যাথেডিন সরবরাহ করা হয় হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। বেসরকারি খাতে তথা বাজারে যেসব প্যাথেডিন পাওয়া যায় সেগুলো অবশ্য আসে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। সরবরাহ সংকটে পড়ে এর দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধির খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, মাত্র ২২ টাকা ৫০ পয়সা দামের প্যাথেডিন কোথাও ৫০০ কোথাও সাড়ে সাতশ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। এতে করে মারাত্মক সমস্যায় পড়ে গেছে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো। নিঃসন্দেহে ঘটনাটি উদ্বেগজনক। কেননা দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী চিকিৎসা সেবার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল এবং সেগুলোর ব্যয় নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। এখন প্যাথেডিনের মতো জরুরি ওষুধের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেলে তার প্রভাব সার্বিকভাবে চিকিৎসা ব্যয়ে পড়বে বৈকি।

খেয়াল করার মতো বিষয়, সরবরাহ সংকটে ভোগান্তিতে পড়া চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রগুলো অনেকটা বাধ্য হয়ে প্যাথেডিন জোগাড় করছে কালোবাজার থেকে। এক্ষেত্রে বিপুল অর্থ অপচয়ের ঘটনা তো থাকছেই ওষুধের গুণগত মানের ওপরও আস্থা রাখা কঠিন। বাজারে তীব্র চাহিদা অনুভব করে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী নাকি চোরাই পথেও আনছেন প্যাথেডিন। উভয় প্রবণতা রোধে কর্তৃপক্ষের সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। সেজন্য প্যাথেডিন তৈরির কাঁচামাল আমদানি নির্বিঘ্ন করতে হবে। দীর্ঘসূত্রতা এক্ষেত্রে বিরাট প্রতিবন্ধক বলে প্রতীয়মান। জানা যায়, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অনুমতি নিতে হয় ওই কাঁচামাল আমদানির জন্য। উপরন্তু রফতানিকারক দেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুমোদনেরও প্রয়োজন পড়ে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ জটিলতা দেশে প্যাথেডিন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পক্ষে অনুকূল নয়। কোথাও অনুমোদনের জন্য কোনো ফাইল আটকে গেলে বা অন্য কোনো সমস্যায় সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় ওষুধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো উচিৎ যেন দ্রুত পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে আসে।

প্রবাসী আয়

আগ্রহী বাড়াতে হবে সঞ্চয়ে

দেশে প্রবাসী আয়ের অর্থ বিশেষত অনুন্নয়ন ব্যয়ে ব্যবহার নিয়ে নানা মতামত রয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশী-বিদেশী গবেষণায় সাধারণভাবে এ বাস্তবতাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সামষ্টিক অর্থনীতির অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র- এক. দারিদ্র বিমোচন ও দুই. প্রবৃদ্ধির বৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রেখেই চলেছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। এরই মধ্যে পরিবারগুলো প্রবাসীদের পাঠানো প্রায় ৭৫ শতাংশ অর্থই সঞ্চয় করে না বলে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত খবর উদ্বেগজনক বৈকি। প্রতিবেদনটির ভিত্তি স্থানীয় থিংক ট্যাংক রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) গবেষণা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে সঞ্চয় করে মাত্র ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবাসী পরিবার। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘প্রবাসী আয় ব্যবহার জরিপ ২০১৩’তে এর ঠিক আগের বছর খাদ্য, বস্ত্র শিক্ষা, যাতায়াতেই ব্যয় হয়েছে রেমিট্যান্সের সিংহভাগ অর্থ। বাকি অর্থের আনুমানিক ৮৫ শতাংশই আবার ব্যয় হয়েছে জমি বা ফ্ল্যাট ক্রয়ে; অবশিষ্টাংশ সঞ্চিত হয়েছে বলে প্রত্যাশা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিভোগ ও নৈমত্তিক ব্যয় মেটাতে অভ্যস্ত প্রবাসী পরিবারে এক সময় সঞ্চয়ের প্রবণতা ছিলই না। তা থেকে বর্তমান পরিস্থিতি উন্নততর অবশ্যই। কিন্তু কথা হলো, অর্থনীতির জন্য ওই অবদান যথেষ্ট নয়। তাই সঞ্চয়ে প্রবাসী পরিবারকে আগ্রহী করে তুলতে আরো জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে।

বর্তমান সরকারের বিগত শাসনামলে বিশেষ ব্যাংক গঠিত হয় প্রবাসীদের কল্যাণের স্বার্থে। তার সুফল গ্রাহকরা কেমন পাচ্ছেন সেটি খতিয়ে দেখা উচিৎ। পাশাপাশি যেসব ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে অর্থ আসছে সেখানে সচেতনতামূলক কার্যক্রম নেয়া যেতে পারে। এ সংক্রান্ত নানা জটিলতা গ্রাহক তথা প্রবাসী পরিবারকে সঞ্চয়ে নিরুৎসাহিত করছে বলে অনেকের অভিযোগ। জমি বা ফ্ল্যাটে রেমিট্যান্সের অর্থ ব্যয় অস্বাভাবিক নয়; আবার তাদের সঞ্চয়ে অনাগ্রহও দুশ্চিন্তাজনক। বড় বিষয় হলো, সঞ্চয় না বাড়লে সম্পদ সৃষ্টি কঠিন। সেক্ষেত্রে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে এর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা কঠিন। জমি বা ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পদ সংগ্রহের অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক অভিঘাত থেকে সুরক্ষা। তবে এক্ষেত্রে আর্থিক সম্পদ অধিকতর উত্তম বলে অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন। এ অবস্থায় সঞ্চয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এবং উন্নয়নে রেমিট্যান্সের ভূমিকা বৃদ্ধির উপযুক্ত প্রণোদনা সৃষ্টি সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

চ্যালেঞ্জের বছরে সেরা প্রধান নির্বাহীরা

অনুপ্রাণিত হোন অন্যরাও

এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) বা সিইও’দের (প্রধান নির্বাহী) মুখ্য দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির দিকে নজর রাখা। আর তা করতে গিয়ে দৈনন্দিন কাজের বোঝা তো আছেই, পাশাপাশি বাজারে নতুন সম্ভাবনা চিহ্নিতকরণ ও চ্যালেঞ্জ মেটানোর লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সেগুলো বাস্তবায়নের দিকেও নজর রাখতে হয় তাদের। ফলে ব্যবসায় সাফল্য যেমন তাদের নৈপুণ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল; ব্যর্থতার দায় এড়ানোর সুযোগও নেই উক্ত পদে আসীনদের। পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে শেয়ারবাজার তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে দশজন সেরা প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে প্রস্তুতকৃত গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ তালিকাটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি করে থাকবে। আরো খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, তারা যেসব নিজ কোম্পানির হাল ধরেছেন তখনই দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অর্থনীতির জন্য তেমন অনুকূল ছিল না। সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই যারা স্ব স্ব ব্যবসাকে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে নিয়ে গেছেন তাদের প্রতি রইলো আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন। তাদের এ দৃষ্টান্ত অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

সর্বশেষ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত কোম্পানির টার্নওভার ১০০ কোটি টাকার ওপর ও প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে আছে কিনা- তা ছিল সেরা প্রধান নির্বাহী নির্বাচনের অন্যতম বিবেচনা। সে সঙ্গে বিবেচ্য ছিল কোম্পানির পরিচালন মুনাফায় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি, মুনাফা মার্জিন, সুশাসনের পরিপালন প্রভৃতিও। ব্যবসাবাণিজ্যে এসব মানদণ্ডের গুরুত্ব অস্বীকার করারা সুযোগ নেই। আরেকটি লক্ষ্য করার মতো বিষয়, প্রধান নির্বাহীর তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে খাত অনুযায়ী। এখানে ওষুধ শিল্পের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের তুলনা করা হয় নি; অথচ সব খাতের প্রধান নির্বাহী নির্বাচনেই একটি সাধারণ প্লাটফর্ম ছিল। বাঙালি ব্যবসা করতে পারে না বলে এক সময় গুঞ্জন ছিল। এর অসারতা বহু আগেই প্রমাণ হয়েছে। তবে সামগ্রিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের যে ভূমিকা নেয়ার কথা ছিল সেক্ষেত্রে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয় নি বলেই মনে করেন কেউ কেউ। আবার ব্যবসায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা, ভোক্তার প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে একশ্রেণীর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে দেখা যায়। এদিকে মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রধান নির্বাহীদের প্রতি আহ্বান থাকবে। পাশাপাশি সর্ব স্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধান নির্বাহীরা বলিষ্ঠ অবস্থান নেবেন বলেও প্রত্যাশা।

সদ্য ঘোষিত মুদ্রানীতি

গুরুত্ব বাড়ুক ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারে

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণার খবর এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায়। একে বলা হচ্ছে ধারাবাহিকতার মুদ্রানীতি। অর্থাৎ সংযত ও নমনীয়ভাবে মুদ্রা সরবরাহের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি পরিমিত রেখে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে অর্থনীতিকে সহায়তা জোগানো হবে এর মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সূত্র ধরে সহযোগী এক দৈনিক জানিয়েছে, যেহেতু সরকার মোট দেশজ উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হারে পরিবর্তন আনেনি, তাই সমানভাবে ঋণ জোগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। তবে ঋণ প্রবৃদ্ধির কর্মসূচি থেকে নাকি বাদ দেয়া হয়েছে বিদেশী উৎসকে; সুযোগটা উন্মুক্ত রেখে। জানা যায়, অনেকটাই বাস্তবায়ন হয়েছে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ও নিট সম্পদ অর্জন কর্মসূচি; যদিও সরকারের ব্যাংকঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। অনেকে বলছেন, প্রধানত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণেই কমে গেছে সেটি। খেয়াল করার মতো বিষয়, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তিত অথচ প্রত্যাশা করা হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়কই হবে দ্বিতীয় ষাণ্মাসিক এ মুদ্রানীতি। সবাই এর কার্যকর বাস্তবায়নই প্রত্যাশা করবেন।

লক্ষ্যণীয়, এ মুদ্রানীতি শিথিল বা কঠোর নয়। তার সমালোচনাও করেছেন অনেকে। বিশেষত বাংলাদেশের মধ্যমেয়াদি টার্গেট ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের স্ট্যাটাস অর্জনের বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের দেয়া সেসব বক্তব্য একেবারে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের প্রবৃদ্ধির হার কিংবা আর্থ-সামাজিক অর্জনকে কোনোভাবেই হেয় করা যাবে না। কিন্তু কথা হলো- এক. সম্ভাবনা অনুযায়ী সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারছি না আমরা; দুই. দ্রুত পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার মাত্রা বাড়বেই। সে অবস্থায় বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অবস্থান নিশ্চিতের তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই বলা চলে। সম্প্রতি বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে মুদ্রানীতিতে সুদের হারের ব্যাপ্তি হ্রাস ও ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মনজুর হোসেন। দুটি ইস্যুরই গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। যদিও বড়গুলোর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ বিকাশে সহায়তা প্রদানের কথা বলা হচ্ছে, কারো কারো মতে- সেটি আরো অনুকূল হতে পারত। এগুলোর প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামীতে অধিকতর মনোযোগ দেবে বলে প্রত্যাশা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা পরিস্থিতি

উত্তরণে সক্রিয় হোক কর্তৃপক্ষ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এ দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক নির্ধারিত আয়ের একাংশ প্রতি বছর গবেষণার জন্য বরাদ্দ রাখতে এবং তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। বর্তমানে এ নির্দেশনার কেমন চর্চা হচ্ছে তা গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক খবর থেকে সহজে অনুমেয়। খোদ ইউজিসির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১৩ সালে কোনো গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হয় নি ৬২ শতাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপরন্তু ২৮ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বরাদ্দই নেই গবেষণার জন্য। গবেষণার প্রতি একশ্রেণীর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিমুখতা নতুন কথা নয়। অথচ শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই বলেই প্রতীয়মান। কেননা তাদের অনেকেই বিশ্বাস করেন, গবেষণা না করলে উচ্চশিক্ষা অপূর্ণ থেকেই যায়। এদিকে বাস্তবতা হলো, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা করারা সক্ষমতা নেই। আবার কোনো কোনোটি গবেষণায় যেতে চায় না ব্যয় বৃদ্ধির ভয়ে। কথা হলো, এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই তো আইনটিও প্রণয়ন করা হয়েছিল এবং নিজেদের সামর্থ্য-সক্ষমতা বুঝে তাতে সায় দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এখন ওই আইন বাস্তবায়নে গড়িমসি কেন? এমন পরিস্থিতি আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ইউজিসি’র কাছে অনুরোধ করতে চাইতে পারেন অনেকে।

লক্ষ্যণীয়, গবেষণায় বরাদ্দ না থাকার ইস্যুতে আমাদের প্রতিনিধির কাছে খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করেছে এক বিশ্ববিদ্যালয়। সেমিনার, সিম্পোজিয়ামের সঙ্গে গবেষণায় একটি সম্পর্ক আছে বটে; কিন্তু সেমিনারের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া মানেই তা গবেষণায় ব্যবহৃত হচ্ছে, তেমন কিছু ধরে নেয়াটাও দূর কল্পনা। এক্ষেত্রে বরং ওই যুক্তিটারই কিছুটা সারবস্তু আছে যে, গবেষণা করা হয় প্রধানত স্নাতকোত্তর পর্যায়ে। এদিকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমোদন পায় নি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবু প্রশ্ন উঠতে পারে, ওই প্রোগ্রামটি ছাড়া কি কোথাও গবেষণা হয় না বা হচ্ছে না? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিৎ এসবের প্রতি মনোযোগ বাড়ানো। অনেক দেশেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্তত গবেষণার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। সে বিষয়ে এখানে এক ধরনের সাংস্কৃতিক সংকট চলছে বলে কারো কারো অভিমত। প্রত্যাশা থাকবে সেসব দ্রুত কাটিয়ে ওঠায় মনোযোগ দেবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। কেননা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা অন্য কোনো ব্যবসা নয়, এর সঙ্গে দায়িত্বশীলতার এক গুরুতর প্রশ্নও যুক্ত।

Published in Bonik Barta, December 2014

সিবিএস বাস্তবায়নে কচ্ছপগতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তাগিদ আমলে নিতে হবে

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় পূর্ণাঙ্গ কোর ব্যাংকিং সিস্টেম (সিবিএস) চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নাকি ২০১৬ সাল পর্যন্তও সময় দিতে রাজি ছিল না শুরুতে। তাদের মতে ওই সময়ের আগেই কাজটি করা সম্ভব। তবু অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া পরিকল্পনায় উক্ত সময়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ সিবিএস বাস্তবায়নের কথা জানায় সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক। প্রকৃতপক্ষে ২০১৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় আলোচ্য কার্যক্রম প্রাক্কলনের কাছাকাছিও যেতে পারবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকে। আর গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনেও দেখা যাচ্ছে সিবিএস বাস্তবায়নের কচ্ছপগতি। এ অবস্থায় না ভাবে পারা যায় না। সহযোগী এক দৈনিকে প্রকাশ এ সংক্রান্ত খবরও হতাশাজনক চিত্রই তুলে ধরে। সেখানে যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক (আইসিটি) ব্যাংকিং কার্যক্রম তুলনামূলকভাবে বেশি অগ্রণী ব্যাংকে; তালিকায় এর পরেই থাকছে জনতা ও সোনালী ব্যাংক। দুর্ভাগ্যবশত চলতি বছর অক্টোবরে প্রকাশ আরেক প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য মতে, রূপালী ব্যাংকের ৫৩২টি শাখার একটিতেও নাকি চালু হয় নি আইসিটিভিত্তিক সেবা। একইভাবে ইন্টারনেট কার্যক্রম নাকি নেই রাষ্ট্রায়ত্ত দুই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একটি শাখাতেও! খেয়াল করার মতো বিষয়, এসব ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের বিস্তৃত কার্যক্রমের তুলনায় আইসিটিভিত্তিক সেবা নগণ্যই; অথচ এখানে সিবিএস চালু করা হলে ব্যাপকভাবে উপকৃত হতো ব্যাংকটি। আবার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনেই দ্রুত অটোমেশনে চলে যাওয়াটা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য ভালো হতো বলে অনেকের অভিমত। আরো লক্ষ্যণীয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় মন্দ ঋণ বেড়ে উঠতে দেখা গেছে। এরই মধ্যে হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারি আলোচিত হয়েছে দেশজুড়ে। তার বাইরে নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর কাছে বড় অঙ্কের ঋণ আটকে আছে বলে প্রতীয়মান। এমন পরিস্থিতিতে ঋণ ব্যবস্থা উন্নয়নের স্বার্থেও নিজ থেকে সিবিএস বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা উচিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। এটা সুশাসন নিশ্চিতকরণের ইস্যু বটে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে থেকে এ বিষয়ে সঙ্গত কারণেই তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে বারবার। কোনো সমস্যা হলে সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকেই তাকিয়ে থাকবে, সে ভাবনাই বোধহয় এখানে কাজ করছে বেশি। তা না হওয়ারও কোনো কারণ নেই। লক্ষ্যণীয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ জটিলতা কাটিয়ে উঠতে একাধিকবার ঋণ শ্রেণীকরণ হয়েছে; কিছু ক্ষেত্রে অবলোপন করতে হয়েছে মন্দ ঋণ। সেজন্য ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণের পরিমাণ বাড়ানো হলে আবার মূলধন সংকটে পড়ে যায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। ওই ঘাটতি পূরণে কয়েক হাজার কোটি টাকা মূলধন জোগান দেয় সরকার। ফলে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তাগিদ নিয়ে ভিন্ন কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগই নেই। বরং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর উচিত এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আহ্বানের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেয়া। কেউ কেউ পর্যবেক্ষণ করেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুরোপ পেলে বেসরকারি ব্যাংকগুলো সেটি নির্দেশের মতো পালন করে; নির্দেশ পেলে দিশেহারা হয়ে যায়। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কাঙ্ক্ষিত সাড়া দেয় না এসব ক্ষেত্রে। ফলে শুধু তাগিদ নয়, পারস্পরিক সমন্বয় রক্ষায় উভয়ের পক্ষ থেকেই এগিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি তো নিছক ব্যাংকের সুশাসন প্রতিষ্ঠা নয়, লাখ লাখ গ্রাহকেরও স্বার্থ যুক্ত এতে।

রাজউক পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প

দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে

এক দশকের মধ্যে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে ১৯৯৫ সালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প হাতে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সহজবোধ্য কারণে ২০০৫ সালের মধ্যে সেটি সম্পন্ন হয়। সেক্ষেত্রে অন্যতম জটিলতা ছিল জমি অধিগ্রহণ। আমাদের মতো ছোট জনবহুল দেশের ততোধিক জনবহুল রাজধানীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তা কোনো নতুন সমস্যা নয়। সেজন্যই হয়তো পূর্বাচল প্রকল্পের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশের জমি অধিগ্রহণ শুরু হয় ২০০৩ সালে; গাজীপুরের কালীগঞ্জ অংশে লেগে যায় ২০০৯ সাল পর্যন্ত। আলোচ্য প্রকল্পে লটারির মাধ্যমে প্রায় ১৩ হাজার প্লট বরাদ্দ দিয়েছিল রাজউক। এর পর পরই প্রকল্পটির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে এলাকাবাসী। ভূমি উন্নয়নের বিরুদ্ধে আইনের শরণাপন্ন হয় একাধিক পরিবেশবাদী সংগঠনও। এ সংক্রান্ত গতকালের বণিক বার্তার খবরটি পড়ে বুঝতে অসুবিধা হয় না, এক্ষেত্রে কতটা ধীর গতিতে এগিয়েছে কাজ। তদুপরি নির্ধারিত ২০১৫ সালের মধ্যেও প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে না বলে দায়িত্বশীল অনেকেই মত ব্যক্ত করেছেন আমাদের প্রতিনিধির কাছে। তার মানে আরো বাড়বে প্রকল্প ব্যয়। উল্লেখ্য, শুরুতে যতটা প্রাক্কলন করা হয়েছিল এরই মধ্যে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের জন্য ব্যয় হয়ে গিয়েছে তার তুলনায় কমপক্ষে ৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। সুতরাং বিষয়টিকে হতাশাজনক ভিন্ন অন্য কোনো অভিধায় অভিহিত করা কঠিন।

২০১৫ সালের মধ্যে পূর্বাচল প্রকল্প সম্পন্ন হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের মাঝে যে নিরাশাবাদ, তার যৌক্তিক ভিত্তি নেই সে কথা বলা যাবে না। জানা যায়, পূর্ত কাজে অগ্রগতি সাধিত হলেও পিছিয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ সেবা চালুর প্রক্রিয়া। আবার পূর্ত কাজে নাকি রূপগঞ্জের চেয়ে খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে কালীগঞ্জ। বিদ্যুৎ সংযোগের বেলায় আশার বাণী কিছুটা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু প্লটগুলোয় কবে নাগাদ গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ প্রদান সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই সন্দিহান। এক্ষেত্রে প্রকল্পে কর্তৃপক্ষের বাড়তি মনোযোগ দেখতে চাইবেন সবাই। একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের আবাসের ভরসাস্থল হয়ে উঠেছে এই পূর্বাচল প্রকল্প; রাজউকের জন্যও তা কম চ্যালেঞ্জের নয়। ফলে আলোচ্য প্রকল্পের প্লটগুলো এখন যত দ্রুত সুষ্ঠুভাবে উপযুক্ত মালিকানার হাতে তুলে দেয়া যায় ততই ভালো। আর অবশ্যই তার সঙ্গে আবশ্যকীয় নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করতে হবে নগরের সুস্থ বিকাশের স্বার্থেও।

স্বপ্নের প্রকল্প সেডান কারের তন্দ্রাবেশ!

সরকারকেই নিতে হবে সঠিক পদক্ষেপ

২০০৯ সালে মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নাকি প্রতিশ্রুতি দেন, ২০১১ সালের বাজেট অধিবেশনে প্রগতির সেডান কারে চড়ে সংসদে যেতে পারবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই ঘটনার কয়েক বছর পেরুনোর পর এখন প্রকল্পটির কী অবস্থা সেটি বোঝার জন্য গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ খবরটিও পড়ার দরকার নেই, বাজারের দিকে তাকানোই যথেষ্ট। বর্তমানে ঝুলে রয়েছে সেডান কার সংযোজন প্রকল্পটি। কেন স্বপ্ন প্রকল্পের এমন পরিস্থিতি দাঁড়ালো, তার কারণ খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বৈকি। আমাদের প্রতিবেদকদ্বয়ের দেয়া তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে সেডান কার সংযোজনের প্রতি ইতিবাচকভাবেই সাড়া দেয় মিতসুবিশি মোটরস করপোরেশন। তাদের প্রস্তাব ছিল, সিকেডি (কমপ্লিট নক ডাউন) আমদানির পর এ দেশের বৃহৎ পরিসরে সেটিকে পূর্ণাঙ্গ গাড়িতে রূপান্তর করা হবে। কিন্তু বিস্তারিত পর্যায়ে এ বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব না দেখে স্বল্প পরিসরে সিবিইউ (কমপ্লিট বিল্ট ইউনিট) পদ্ধতির মাধ্যমে এগোনোর পরামর্শ দেয় প্রগতি। জটিলতা হলো, এক্ষেত্রে প্রগতি ও মিতসুবিশির পরিকল্পনার মাঝে সমন্বয় রক্ষা করা যায় নি। আরেকটি সমস্যা, সিকেডি আমদানির বর্তমান শুল্কহার উচ্চ; প্রায় ৯৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে মিতসুবিশি কর্তৃক শুল্কহার নামিয়ে আনার প্রস্তাবও আমলে নেয়া হয় নি বলে জানা যায়। আর এ প্রেক্ষাপটেই বাজারে আসার সুযোগ পাচ্ছে না বাংলাদেশে সংযোজিত সেডান। কারটি ঘিরে স্বপ্ন দেখেন অনেক মধ্যবিত্ত ও চাকুরিজীবি। অথচ একাধিক বিশেষজ্ঞের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবই এক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপই প্রত্যাশা করেন সবাই।

লক্ষ্যণীয়, নিজস্ব পথ ধরে হাঁটলে পূর্ণাঙ্গ গাড়ি প্রস্তুতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞান অর্জনে আমাদের ব্যয় করতে হবে বহু সময় ও অর্থ; বাংলাদেশের পক্ষে যার ভার বহন করা এখন দুঃসাধ্য বটে। অন্য দিক থেকে দেখলে গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মতো বৃহৎ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ অনেক দেশের বেলায়ই আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। তার উদাহরণ হিসেবে প্রতিবেশী ভারতের অভিজ্ঞতা মন্দ নয়। বর্তমানে সেখানে স্থানীয় গাড়ি প্রস্তুতকারক কারখানা গড়ে ওঠার পেছনে এক সময়কার বিদেশী বিনিয়োগের অবদানের কথা অস্বীকার করা যাবে না। খেয়াল করার মতো বিষয়, অন্যান্য দেশে মজুরি বৃদ্ধিসহ নানা কারণে উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় মিতসুবিশির মতো কোম্পানি আসতে চাইছে বাংলাদেশে। এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদি ভাবনা থেকে তাদের এ আগ্রহকে আমাদের অনুপ্রাণিত করা উচিত বলে মতও দিয়েছেন কেউ কেউ।

আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য কার্যক্রমে কাগজবিহীন ব্যবস্থা

সক্রিয়ভাবে আমলে নিন

জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক কমিশনের (এসক্যাপ) ধারণা, কাগজের পরিবর্তে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা গেলে আন্তঃদেশীয় আমদানি-রফতানি ব্যয় মোটামুটি এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। এ বিষয়ে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ খবরটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। হিসাব অনুযায়ী, এশিয়া অঞ্চলে এক্ষেত্রে কাগজ ব্যবহারের জন্য বার্ষিক গড় ব্যয় কিন্তু কম নয়; আনুমানিক ৬ কোটি ডলার। আবার কাগজ ব্যবহারের অতিরিক্ত মানবসম্পদগত ব্যয়ও রয়েছে। অথচ উভয়ই কমিয়ে আনা সম্ভব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে। এ অবস্থায় ইস্যুটি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত আমাদের নীতি নির্ধারকদের। সেজন্য আলোচ্য ব্যবস্থার সুবিধা-অসুবিধা দু’দিকই চিহ্নিতকরণ প্রয়োজন। খেয়াল করার মতো বিষয়, শুরুতে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে কাগজবিহীন ব্যবস্থা জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল পরিবেশবান্ধব নীতি। সে সময় বৃক্ষ রক্ষায় নিয়োজিত একাধিক সংগঠন কাগজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নামে। পরবর্তীতে বাণিজ্য সহজীকরণের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায় কাগজবিহীন ব্যবস্থা। কেননা প্রচলিত ব্যবস্থার তুলনায় প্রক্রিয়াগত ঝামেলা কমই রয়েছে এতে। তাই এর পক্ষে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের অনেকে কথা বলছেন এখন। এখানে সরকারি ও বেসরকারি খাতের জন্য অনুপ্রেরণার বিষয় ছিল, আইসিটি-নির্ভর বাণিজ্য ব্যবস্থায় সরকারের রাজস্ব ও কোম্পানির আয় বাড়ে। সীমান্ত বাণিজ্যে কালক্ষেপণ কমে আসায়ও এর প্রতি দুর্বলতা রয়েছে কারো কারো। বাংলাদেশের বাস্তবতা একটু তলিয়ে বিচার করলে দেখা যাবে, কাগজবিহিণ ব্যবস্থার উপকারিতা রয়েছে আমাদের জন্যও। অবশ্য তার সঙ্গে এও স্মরণ রাখা দরকার, ব্যবস্থাটি শতভাগ নিখুঁত। এক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে, যেগুলো এড়িয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হলে পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

প্রথম কথা হলো, কাগজনির্ভর ব্যবস্থার সঙ্গে আমাদের দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান যুক্ত। এখন ব্যবস্থাটিই যদি উঠিয়ে দেয়া হয়, তাদের কী হবে? আর যদিওবা মধ্য মেয়াদে সেসব কর্মসংস্থান বিলুপ্ত করা হয়, সেটিও মানবসম্পদ ও সরকারি-বেসরকারি অর্থের বিপুল অপচয় ভিন্ন কিছু নয়। তদুপরি আইসিটি ব্যবস্থা নিয়েও কিছু ছোটখাট অথচ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ঝামেলা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আইসিটি প্লাটফর্ম ব্যবহারের বেলায় বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে গ্রাহ্য করার মতো পার্থক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে সঙ্গতি রক্ষা হবে কীভাবে? আবার কাগজবিহীন ব্যবস্থা চালুর জন্য বাণিজ্যিক পর্যায়ে যেমন বোঝাপড়া থাকতে হয় সেখানে দু’দেশের ঘাটতি রয়েছে বলে প্রতীয়মান। আরেকটি বিষয়, সেজন্য প্রচুর বিনিয়োগ দরকার; ব্যবস্থাটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও চাই পর্যাপ্ত সংখ্যক উপযুক্ত কর্মী। এ লক্ষ্যে দক্ষতা অর্জনও অতিদ্রুত সম্ভব নয়। ফলে সরকার কয়েক বছরের মধ্যেই গোটা আমদানি-রফতানি কার্যক্রম কাগজবিহীন ব্যবস্থায় নিয়ে আসবেন সেটি খুব একটা প্রত্যাশিত নয়। তবে এক্ষেত্রে অগ্রগতির ধারা যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে বিশেষ যত্নবান হওয়া চাই। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সরকারি ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী করে তোলায় জোর দিতে দেখা গেছে। তার অংশ হিসেবে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে কাগজবিহীন ব্যবস্থা চালু হলে বাংলাদেশের প্রতি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ বাড়বে বৈকি।

৫০তম জন্মবার্ষিকীতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য

পূরণে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া চাই

এরই মধ্যে রাজধানীতে শুরু হয়েছে প্রথম ঢাকা অ্যাপারেলস সামিট। ২০২১ সালে বাংলাদেশের ৫০তম জন্মবার্ষিকীতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক পণ্যের বাজার সৃষ্টিকে কেন্দ্র করেই নির্ধারিত হয়েছে এবারকার সম্মেলনটির প্রতিপাদ্য। এর মনস্তাত্বিক গুরুত্বের বিষয়টিও অগ্রাহ্য করা যাবে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তাজরীন অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধ্বসে বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের করুণ মৃত্যু আমাদের গার্মেন্ট খাতের ওপর যে কালো ছায়া ফেলেছিল, সে পরিস্থিতির মধ্যে ঢাকা অ্যাপারেলস সামিট খানিকটা হলেও স্বস্তি এনে দেবে বলে মনে হয়। খাতসংশ্লিষ্ট অনেকে অবশ্য মনে করেন, আমাদের গার্মেন্ট খাতের ইতিবাচক ভাবমূর্তি কিছুকাল আগেই ফিরে এসেছে। চলতি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তা উজ্জ্বল করার পালা। তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো, উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সরকার, দাতা সংস্থা, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন বাংলাদেশের বিকাশমান বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা। প্রচলিত ব্যবসায়িক মডেলে যে স্থানীয় গার্মেন্ট খাতের উন্নয়ন একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর হাসিল করা সম্ভব হবে না, তা বোধকরি তারা মেনে নিয়েছেন। ফলে এখন অগ্রসর হতে চাইছেন বাস্তবসম্মত ও অধিক কার্যকর পথে। এক্ষেত্রে সবাই চাইবেন, ২০২১ সালে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছবার রোডম্যাপটি যেন টেকসই হয়। সেজন্য স্বল্পমেয়াদি মুনাফার প্রতি একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর অতিমুনাফার প্রলোভন পরিত্যাগই শ্রেয়। ৫০তম জন্মবার্ষিকীতে গার্মেন্ট পণ্য রফতানি ৫০ বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধির যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, তা নিছক কল্পনা নয়। কেননা অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারলে ওই সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়। তাই নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে সবার উচিত বিষয়টির প্রতি মনোযোগ বাড়ানো।

স্থানীয় অর্থনীতিতে গার্মেন্ট খাত কতটা অবদান রাখতে পারছে, তার ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। তবু এতটুকু বলা দরকার, কেবল গার্মেন্ট অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজারে যত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে, তা আর অন্য কোনো খাতের পক্ষে এককভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হয় নি। বাড়তি চিন্তার কথা হলো, অন্তর্মুখী বা রফতানিনির্ভর গার্মেন্টের বিকল্প কোনো শিল্পই দেখা যাচ্ছে না আপাতত; মধ্য মেয়াদে তেমন কিছু ঘটতে পারে, সে সম্ভাবনাও ক্ষীণ বৈকি। পরোক্ষভাবে এসবের অর্থ হলো, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য এ খাতটি যেন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ও কাঙ্ক্ষিত গতিতে অগ্রসর হতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা। সেজন্য অবকাঠামোর প্রতি জরুরি ভিত্তিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে পরিণত করণের কাজটি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। ফলে একদিকে বাড়ছে নির্মাণ ব্যয়; অন্যদিকে গার্মেন্ট খাতের ওপর বাড়ছে প্রতিযোগিতার চাপ। এ থেকে মুক্ত হতে প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। উক্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি কাম্য। আবার স্থানীয় রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় না থাকলে এবং বাণিজ্য কূটনীতিতে পিছিয়ে থাকলেও সেটি সম্ভব নয়। আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন ও বন্দর সুবিধার অধিকতর সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। অন্যদিকে জাতীয় সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূমিকা বাড়াতে চাইলে করণীয় তালিকায় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে শ্রমিকের জীবনমান ও পরিবেশগত ভারসাম্য। এটি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাজেকর্মে ঢাকা অ্যাপারেলস সামিটের এবারকার প্রতিপাদ্য প্রতিফলিত হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বেজা কর্তৃক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ

শিল্পোন্নয়নের স্বার্থে এর সাফল্য জরুরি

রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ধারণাটি এখানে নতুন নয়। তার পরও ওই ধরনের ব্যবসাবাণিজ্য কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা তুলে নেয়ার লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন ২০১০’ অনুসারে ২০১০ সালেই গঠিত হয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সুপারিশ ক্রমে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত হয় ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। চলতি বছর শুরুর দিকে বেশ গতি লক্ষ্য করা যায় বেজার কাজে। পরিকল্পনা হয়েছিল, আনোয়ারা, মিরসরাই ও মৌলভীবাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে জমি অধিগ্রহণ এবং তা লিজ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। মংলা অঞ্চলের জন্য ২০৫ একর জমি নেয়া হয় মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে আগ্রহীদের মধ্য থেকে ৩টি ডেভেলপার ফার্মকে নির্ধারণ করা হয়, যাদের দায়িত্ব হলো উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো তৈরি করে দেয়া। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে শিল্পের জন্য উপযুক্ত জমি পাওয়া কঠিন বৈকি। সেজন্যই বেজার কাছে অনেকের প্রশ্ন ছিল, জোরপূর্বক কোনো জমি দখল দিতে হবে কিনা। সংশ্লিষ্টদের এক্ষেত্রে কিন্তু ইতিবাচক ধারণাই পেয়েছিলাম আমরা। সম্প্রতি সহযোগী এক দৈনিকে বেজার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে একটি খবর প্রকাশ হয়েছে। সেটি অবশ্য জমির দখল নিয়ে নয়। বরং জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে বেজার ৩ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় ফিরিয়ে দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে প্রকাশ। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তা হয় বৈকি।

মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, বেজাকে ওই পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হলে বাজেটের ওপর বেশি চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তাই তাদের প্রস্তব হলো- বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় একটি বিশেষ তহবিল গঠনপূর্বক উল্লিখিত অর্থায়ন নিশ্চিত করুক বেজা। সেজন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল বিনিয়োগ নীতিতে পরিবর্তন আনতে হলেও অনেক বিনিয়োগকারী তাতে আগ্রহী হবেন সন্দেহ নেই। কথা হলো, এ ধরনের পদক্ষেপ উপযুক্ত বিবেচিত হয় কিনা এবং তা বাস্তবসম্মত কিনা। লক্ষ্যণীয়, জাপানি বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজে আগ্রহী, কিন্তু সেটি ঢাকার আশাপাশে হতে হবে। অথচ সরকার চায় জাপানিরা মিরসরাইয়ে কাজ করুক। আমাদের কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনসের (কেইপিজেড) অভিজ্ঞতাও এখানে প্রাসঙ্গিক বৈকি। অথচ যেজন্যই হোক গত ১৬ বছর কোরীয় বিনিয়োগকারীরা বরাদ্দকৃত ২৪৯২ একর জমির মধ্যে উন্নয়ন করতে পেরেছে মাত্র ৫০০ একর জমির। তবে বেসরকারি পুঁজি বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে এতে রাতারাতি পরিবর্তন আসবে তেমনটি ধরে নেয়ার কারণ নেই। এ অবস্থায় সরকারের কাছ থেকে দূরদর্শী সিদ্ধান্তই পেতে চাইবেন সবাই।

শিল্প খাতে মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া ঋণের বৃদ্ধি

সাবধানতা অবলম্বন জরুরি

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছর ২০১৪-১৫’র প্রথম প্রান্তিক তথা জুলাই-সেপ্টেম্বরে শিল্প খাতে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে আনুমানিক ৫২ হাজার কোটি টাকার ঋণ; গত বছরেরে সঙ্গে পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসেবে যার বৃদ্ধি প্রায় ৫৮ শতাংশ বেশি। সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, এ বছরের জানুয়ারির অব্যবহিত পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তার পরও কিছু ব্যবসায়ী দুশ্চিন্তায় ছিলেন অজানা পরিস্থিতি নিয়ে। সেটি দ্রুতই কেটে যায় এবং তা দূর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষত শিল্প খাতে বেড়ে যায় ঋণের চাহিদা। একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তির ভাষ্যমতে, আলোচ্য সময়ে বেগবান হয়েছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এর অবদানের কথা অস্বীকার করবেন না কেউই। প্রশ্ন হলো, ওই সময়ের মধ্যে বকেয়া ঋণের পরিমাণ কেমন বেড়েছে? একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ বক্যে ঋণ নিয়ে তেমন গা করেন না অর্থনীতিবিদরা। তবে সেটি মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে দুশ্চিন্তার বৈকি। আর তেমন খবরই মেলে গতকালের বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে। সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা; যা মোট খেলাপি ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ বটে। শিল্প খাতের মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া ঋণ ৩৫ হাজার ৪২১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনা করলে সংখ্যাটি বেড়েছে ৪৬ শতাংশের কাছাকাছি। এ অবস্থায় নিশ্চিত থাকার সুযোগ নেই।

অভিযোগ ছিল, শিল্প খাতে ঋণ বিতরণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ সামান্যই। ওই ধারা এখনো বজায় রয়েছে বলে আপাতভাবে প্রতীয়মান। কেননা এবারো দেখা যাচ্ছে, সরকারি ব্যাংকগুলোর মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ২ শতাংশ কমলেও তা ২৭ শতাংশ বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে আরেকটি চিত্র অবশ্য আমলে নেয়া দরকার। সেটি হলো, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ নিয়মিতকরণের সুযোগ দেয়া হয় গত জুন পর্যন্ত। সে সুযোগে নাকি কোনো রকম ডাউন্ট পেমেন্ট ছাড়াই ঋণ নিয়মিত করে ফেলে একাধিক শিল্প গ্রুপ। সেসব ঋণ আবারো খেলাপি হতে শুরু করেছে বলে শোনা যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, ইত্যবসরে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ নিয়মিত করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে আলোচ্য সময়ে বিদেশী ব্যাংকগুলোয় মেয়াদোত্তীর্ণ বকেয়া ঋণ ৬০৫ শতাংশ হ্রাস পেলেও একই ঋণ প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়ে উঠতে দেখা গেছে বিশেষায়িত ব্যাংকে। উপযুক্ত পরিস্থিতিতে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখা হয়। তবে অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে সেটি আমাদের জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তার উদ্রেককারী। কেননা নিকট অতীতেই ব্যাংকিং খাতে মেয়াদি খেলাপি ঋণ নিয়ে বেদনাদায়ক স্মৃতি রয়েছে আমাদের। তদুপরি বিশেষ ছাড়ে ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ সে প্রবণতা আরো উস্কে দিতে পারে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এখন থেকেই কঠোরভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা। খেলাপি ঋণের সঙ্গে অর্থ পাচারের যোগসূত্র সংশ্লিষ্টদের নিশ্চয়ই অজানা নয়। আরেকটি বিষয়, শিল্প খাতে ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে থেকে বাড়তি সুযোগসুবিধা দেয়া হচ্ছে অর্থনীতির বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে। তাই ফলপ্রদ না হয়ে শিল্প ঋণ যেন অর্থনীতির বোঝা হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

অবশেষে কৃষি ব্যাংক সংস্কারের উদ্যোগ

ওমন উদাহরণ যেন সৃষ্টি না হয়

ক্রমাবনতি লক্ষ্য করে এবং আরো অবনতির শঙ্কায় সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) সংস্কারের যে উদ্যোগ গ্রহণের খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, তা সাধুবাদ জানানোর যোগ্য। একই কিছু বিষয় নতুন করে তুলে ধরা দরকার যাতে ওই ধরনের উদাহরণ সৃষ্টি হতে না পারে। নতুন করে জানানোর কিছু নেই কৃষি ঋণ পরিচালনায় আমাদের সর্ববৃহৎ বিশেষায়িত জাতীয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান এই বিকেবি। এর সম্পূর্ণ শেয়ার ক্রয় করে সরকার। এটি যেকোনো ব্যক্তিবিশেষ বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয় শস্য উৎপাদন, সবজি আবাদ, বনায়ন, মৎস্য চাষের মতো বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। বিকেবি আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা জোগায় গ্রামীণ কুটির শিল্পেও। এছাড়া আমদানি বিকল্প শস্য উৎপাদন, নতুন দিক চিহ্নিতপূর্বক ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কৃষি খাত সুদৃঢ়করণ, সহজতর অর্থসংস্থান প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় বিকেবি প্রতিবছর কৃষি ঋণ বিতরণ, আদায় ও আমানত সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার কথা। গত কয়েক বছরে এদিকে একশ্রেণীর বিকেবি কর্মকর্তার নজর কতটা ছিল তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন ও কৃষি ব্যাংক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে সে সন্দেহ জোরালো হয় বৈকি। একক ঋণগ্রহীতা নিয়ম লংঘন করে রাজধানীর একটিমাত্র শাখা থেকে ওই শাখায় মোট প্রদত্ত ঋণের প্রায় ৬২ শতাংশ প্রদান থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হয় বৈকি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনের তথ্য থেকে যে খবর আমাদের প্রতিবেদক জানালেন, সেটিও সুসংবাদ নয়। ভূমিহীন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং বর্গাচাষীরা নাকি সেভাবে পাচ্ছেন না বিকেবির ঋণ। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ের হিসাব বলছে, ২০১৩ সালে তাদের মোট ঋণগ্রহীতার মাত্র ১০ দশমিক ৬৫ শতাংশ হতদরিদ্র কৃষক; যারা পেয়েছেন বিতরণকৃত মোট ঋণের দশমিক ৯১ শতাংশ। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সঙ্গে এ চিত্রের তুলনা নিতান্ত হতাশাজনক। ফলে শুধু ব্যাংকটি সংস্কারের উদ্যোগ নয়, এ ধরনের দৃষ্টান্ত যেন আর সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। আর সে কাজে সরকার সক্রিয়ভাবে তাদের সহায়তা জোগাবে এমন প্রত্যাশাই রাখেন সবাই।

বিকেবির বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম ও তার অবৈধ সুবিধাভোগীদের। বিশেষত গত পাঁচ বছরে আধুনিক ব্যাংকিংয়ের নামে নিয়ম ভেঙ্গে অর্থায়ন করেছে ব্যাংকটি। তারা প্রতিষ্ঠাকালীন চার্টার লঙ্ঘনপূর্বক বৈদেশিক বাণিজ্যে অর্থায়ন করেছে বলেও অভিযোগ। একটু খতিয়ে দেখলে এখানে কিছু জটিলতা পরিস্ফুট হয়। কেননা বিকেবি কৃষি খাতের উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি বিশেষায়িত উন্নয়ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হলেও অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো সব ধরনের ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড এটি পরিচালনা করে থাকে বলে জানা যায়। কৃষিঋণের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিময় ব্যবসা, বাণিজ্যিক ও কৃষিভিত্তিক শিল্প বা প্রকল্প, প্রকল্পের চলতি মূলধন প্রদান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা প্রভৃতিতেও ঋণ বিতরণ করে থাকে বিকেবি। ফলে এক্ষেত্রে বেশ কিছু আইনের ফাঁকফোকর রয়েছে বলে কারো কারো কাছে প্রতীয়মান। প্রত্যাশা হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চয়ই আলোচ্য সংস্কার উদ্যোগে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে রাখবে।

মানব পাচারে শীর্ষ রুট বঙ্গোপসাগর

অভিবাসন আইনের কঠোর প্রয়োগ চাই

সমুদ্রপথে মানব পাচারে বঙ্গোপসাগরের শীর্ষ রুট হয়ে ওঠার যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিবেদক তথ্য দিয়েছেন, চলতি বছর জানুয়ারী থেকে নভেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে অবৈধভাবে সমুদ্রযাত্রা করেছে তার আনুমানিক ৯৮ শতাংশই সম্পন্ন হয়েছে বঙ্গোপসাগর হয়ে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানব পাচারের রুট হিসেবে ক্রমে কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এটি। অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকীও মনে করেন, মানব পাচারের দিক থেকে বঙ্গোপসাগর একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় রুটে পরিণত হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে মূলত থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় মানব পাচার হচ্ছে সুতরাং এক্ষেত্রে চার রাষ্ট্রকেই উদ্যোগ নিতে হবে বলে মন্তব্য তার। এ পরামর্শ সংশ্লিষ্টরা মাথায় নেবেন বলেই প্রত্যাশা আমাদের। কেননা বঙ্গোপসাগর হয়ে যেভাবে মানব পাচার হচ্ছে তাকে শুধু পাচার শব্দটায় সীমাবদ্ধ রাখা কঠিন। মাসখানেক আগে থাইল্যান্ডে অবৈধভাবে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎপূর্বক যে খবর এসেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তাতে ঘটনাটিকে অষ্টাদশ শতাব্দীর আফ্রিকান দাস ব্যবসার সঙ্গেই কেবল তুলনা করা যায়। অনেকে ক্ষেত্রে পাচার হওয়া মানুষজন ঘাস-পাতা খেয়ে টিকে থাকার উদাহরণ রয়েছে। মৃত্যুর হুমকি থেকে শুরু করে নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন তো হচ্ছে; এক্ষেত্রে ইদানীং শারীরিকভাবে নিগ্রহের খবরও পাওয়া যাচ্ছে বেশ। অনেক সময় সামান্য বাতাস প্রবেশের সুযোগ রেখে বদ্ধ কন্টেইনারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাচারকৃতদের। ভেতরে কেউ মারা না গেলে নাকি ওটি একবার খুলেই আবার বন্ধ করে দেয়া হয়!

স্পষ্টত চার দেশেই ব্যবস্থা নিতে হবে এসব জঘন্য ঘটনা রুখতে। সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে সহায়তা জোগানোর কথা বারবার বলা হয়েছে। এর প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেয়া উচিত। ক’দিন আগে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বেরিয়েছিল, ১৫ অক্টোবরের পর থেকে প্রতিদিন গড়ে আনুমানিক ৯০০ রোহিঙ্গাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে মিয়ানমারের একাধিক সরকারি বাহিনী। এপি (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস) খতিয়ে দেখেছে, তার অন্যতম বড় কারণ- রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়লে নগদে আর্থিকভাবে লাভবান হয় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এ অবস্থায় মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আহ্বান জানানো প্রয়োজন। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারে এসেই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। অথচ প্রতিবেশী হয়েও এবং রোহিঙ্গা সমস্যা দ্বারা পীড়িত হওয়ার পরও আমাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কমই বলা যায়। তা থেকে উত্তরণ আবশ্যক। দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে মানব পাচার রোধে অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপ নিতে হবে। সেজন্য প্রথম কাজ স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা; জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো। অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইন ২০১৩ এবং নারী ও শিশু পাচার আইন ২০১২’এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা হলে বঙ্গোপসাগর দিয়ে মানব পাচার অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। পাচার রোধে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের সক্ষমতার সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধিও জরুরি। এক গবেষণায় জানা যায়, যশোর, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরার মতো নির্দিষ্ট কয়েক জেলা থেকে বৈধ অভিবাসন সীমিত ও অবৈধ অভিবাসন বেশি। এসব ক্ষেত্রে পর্যাপ্তভাবে বৈধ বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিতে অধিক সক্রিয় হতে হবে সরকারকেই।

তৈরি পোশাক কারখানায় বাড়ছে যক্ষ্মা রোগী

শনাক্তকরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নিশ্চিত হোক

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে তৈরি পোশাক খাতে যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণের উদ্যোগ প্রথম গৃহীত হয় ২০০১ সালে। তার পর একটা সময় পর্যন্ত ধীরে চললেও চিহ্নিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে বৃদ্ধি পায় উক্ত কার্যক্রমের গতি। তবে গার্মেন্ট কারখানায় যক্ষ্মা রোগ প্রাপ্তির সম্ভাবনার সঙ্গে শনাক্ত কর্মসূচি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেই প্রতীয়মান। এ সংক্রান্ত এক খবর ছাপা হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, আলোচ্য রোগটি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ রফতানি আয় অর্জনকারী খাতটির দুশ্চিন্তার কারণ রয়েছে যথেষ্ট। স্বাস্থ্য অধিদফতরের বরাত দিয়ে আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দুই শতাধিক কারখানাতে ৭৫৮ জন কর্মী শনাক্ত হয়েছেন যক্ষ্মা রোগী হিসেবে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বিস্তৃত পরিসরে জরিপ চালানো হলে এ সংখ্যাটি বেড়ে যাবে ব্যাপকভাবে। সেক্ষেত্রে প্রথম সমস্যা হলো, কর্মীর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা। দ্বিতীয় বিষয়, গার্মেন্ট খাত অত্যন্ত শ্রমঘন, অন্যদিকে যক্ষ্মা সংক্রামক রোগ। এ অবস্থায় প্রাথমিকভাবে শনাক্ত না হলে কিন্তু বড় ঝুঁকির শঙ্কা থেকেই যাবে। তৃতীয় ইস্যুটি হলো, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সার্বিকভাবে আমাদের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হলো যক্ষ্মা। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষত গার্মেন্ট খাতে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে সংশ্লিষ্টদের জোরদার পক্ষেপ প্রত্যাশা করবেন সবাই।

খেয়াল করা দরকার, একটা সময় পর্যন্ত দেশে যক্ষ্মা প্রাণঘাতী বলে পরিচিত ছিল। তবে আধুনিক পদ্ধতি আর উন্নত ওষুধপত্র ব্যবহারে রোগটির প্রকোপ তেমন নেই বললে চলে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে প্রতি বছর যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন লাখে ২২৫ জন। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা গ্রহণে তাদের ৯০ শতাংশই পুরোপুরি সেরে উঠছেন। ফলে এক্ষেত্রে জোরটা বেশি দেয়া উচিত যক্ষ্মা রোগী চিহ্নিতকরণের ওপর। কর্মীদের যক্ষ্মা হওয়ার পেছনে শুধু কারখানার পরিবেশ দায়ী, এ কথা হলপ করে বলা যায় না। এ কথা ঠিক যে, গ্রামের তুলনায় শহরে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। সেজন্য বাংলাদেশে নগরায়ণের প্রকৃতি ও শিল্পায়ন উভয়ই দায়ী; দায় শুধু শিল্পায়নের ওপর চাপালে হবে না। তবে এসব নিয়ে তর্ক-বিতর্কের চেয়ে বেশি জরুরি যক্ষ্মা শনাক্তকরণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নিশ্চিতে গুরুত্ব প্রদান। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিজিএমইএ, সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ ও একাধিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে জনবল সংকট নিয়ে। সেটি দূরীকরণে সংশ্লিষ্টরা মনোযোগ দেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশই অব্যবহৃত!

নিটিংয়ে নীতিগত সহায়তা সম্প্রসারণ করুন

শনিবার রাজাধানীর এক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিট পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের তথ্য সম্বলিত পঞ্জি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ। এ খবর প্রকাশও হয়েছে গতকালের পত্রপত্রিকায়। তাতে দেড় শতাধিক দেশের ২৫ হাজারের বেশি ক্রেতার ঠিকানাসহ ব্যবসাবাণিজ্য সংক্রান্ত তথ্যের উল্লেখ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এটিকে ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে বলে ধারণা করেন। সে বিষয়ে বিতর্কের সুযোগ কম বটে। খেয়াল করার মতো বিষয়, উক্ত প্রকাশনাটি বাজারে আনার মুখ্য উদ্দেশ্য কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য নিছক তথ্য প্রদান নয়, বরং আমাদের নিট পণ্যের বাজার আরো সুদৃঢ় করে তোলা। এ বিষয়ক একাধিক ইস্যু উঠে এসেছে ওই আলোচনায়। তার একটি গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক খবরের শিরোনামও হয়েছে। সেটি হলো- নিট পোশাক কারখানায় উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশ অব্যবহৃত। দেশে বিশেষজ্ঞরা যখন সব পর্যায়ে উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তোলার কথা বলছেন, সেখানে এমন খবর অনেক সচেতন পাঠকেরই নজর কাড়বে বৈকি। অবশ্য তার চেয়েও এক্ষেত্রে জরুরি হচ্ছে, নিট খাতকে এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

জানা যায়, সমস্যা সত্ত্বেও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১ দশমিক ০১ শতাংশ উৎপাদন বেড়েছে নিট শিল্পে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নতুন বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের রফতানি বৃদ্ধির পরিমাণও লক্ষ্য করার মতো। তবে এসবই হচ্ছে উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশ ব্যবহারে। নিট কারখানার মালিক প্রতিনিধিরা মনে করেন, পুরো সক্ষমতা কাজে লাগানো গেলে ২০১৬ সালের মধ্যেই ৩ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব নিট পোশাক রফতানি। কিন্তু উৎপাদন সক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইলে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সমস্যার সুসমাধান কাম্য। আসলে এক্ষেত্রে বেশি দরকার নীতিগত সমন্বয় ও অধিক নীতিগত সহায়তা। লক্ষ্যণীয়, এরই মধ্যে রফতানি বাজার সম্প্রসারণে দিকে নিজ তাগিদেই অগ্রসর হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাদের উপযুক্ত নীতি রূপরেখার আওতায় আনতে হবে সরকারকেই। বিভিন্ন দেশে চাহিদা সৃষ্টির লক্ষ্যে মেলার আয়োজন করছেন নিট ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলো সমন্বয় করে চলছে কিনা, তা সরকারকেই দেখতে হবে। তবে নিট পোশাক রফতানি বৃদ্ধির বেলায় এগুলোর চেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতাটি জ্বালানি সংক্রান্ত। এরই মধ্যে বিকেএমইএ’র সভাপতি নিট শিল্পে ব্যবহৃত ডিজেলে ভর্তুকি জোগাতে সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। জাতীয় অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে এক্ষেত্রে সরকারের সুবিবেচনাপূর্ণ নীতি সহায়তাই প্রত্যাশা করবেন সবাই।

পণ্য পৌঁছুল প্রদর্শনী সমাপ্তির আগে!

কারণ-দর্শানোসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

কলকাতা সায়েন্স সিটি গ্রাউন্ডে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ৫ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়েছে হোম অ্যান্ড ডেকোর প্রদর্শনী। বাংলাদেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানও অংশ নেয় তাতে। তবে আমাদের ব্যবসায়ীরা সেখানে নিজেদের পণ্য প্রদর্শন করতে পেরেছেন শুধু চতুর্থ ও পঞ্চম দিন। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ব্যর্থতায় বাকি দিনগুলোয় প্রদর্শনী প্রাঙ্গণে অলস বসে থাকা ভিন্ন কিছু করার ছিল না বলে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক খবর নিয়ে গতকালের বণিক বার্তায় পরিবেশিত প্রতিবেদন অনেক পাঠকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। প্রশ্ন হলো, এমন পরিস্থিতি দৃষ্টি হলো কীভাবে? জানা যায়, ইপিবির অনুরোধেই কলকাতার ওই প্রদর্শনীতে অংশ নেন ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। পণ্য পরিবহন ও তা প্রদর্শনী প্রাঙ্গন পর্যন্ত পৌঁছানোর দায়িত্ব ছিল ইপিবির। ৮ ডিসেম্বর নাকি পণ্য নিয়ে রওনা হয় ইপিবি কর্তৃপক্ষ। সেটি ১০ ডিসেম্বর আসে পেট্রাপোল বন্দরে। ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব বেড়ে গেলো কিনা কিংবা ঢাকা থেকে কলকাতা যাওয়ার নতুন রুট মিলল কিনা তা খুঁজে দেখা যেতে পারে। খেয়াল করার মতো বিষয়, পরবর্তীতে পণ্যের স্বীকৃতি দেয়া কর্তাব্যক্তিদের অনুপস্থিতির কারণেও সীমান্তে শুল্ক বিভাগ থেকে পণ্য ছাড়িয়ে নিতে দেরি হয়েছে। এটা কি সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতার পরিচয় না সমন্বয়ের অভাব সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বৈকি।

আমাদের প্রতিবেদকের কাছে ইপিবির দায়িত্বশীল এক ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন, উক্ত প্রদর্শনীতে পণ্য পৌঁছাতে দেরি হওয়ার মতো কিছু ঘটেছে বলে জানেন না তিনি। তার আরো পাল্টা অভিযোগ, ইপিবির হাতে পণ্য আসতে দেরি হলে প্রদর্শনীর ওপর তার প্রভাব পড়তেই পারে। এমন অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের মধ্যে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এমন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখা হোক আসলে কী ঘটেছিল। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের প্রতি কারণ-দর্শানোর নোটিস জারি করা যেতেই পারে। কেননা এমন একটি বিব্রতকর ঘটনা এড়িয়ে গেলে চলবে না। এখানে কেবলমাত্র কয়েকজন ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ইমেজের প্রশ্ন নয়, এর সঙ্গে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও যুক্ত। ফলে সবাই চাইবেন ঘটনাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হোক। এক্ষেত্রে কারো গাফিলতির প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রত্যাশাও থাকবে সচেতন মানুষের।

সৌরপ্রযুক্তির সবুজ ভাবমূর্তি

সুরক্ষায় সরকারের সক্রিয়তা কাম্য

প্রাথমিক পর্যায়ে খানিকটা দেরি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে সৌরপ্রযুক্তির নানা মাত্রায় ব্যবহার হচ্ছে ব্যাপকভাবে এবং প্রবণতাটি দ্রুত বর্ধনশীল। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বিকল্প জ্বালানির হিসেবে সারা দেশে সোলার ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে ৪৫ লাখেরও বেশি। অবশ্য শুধু জ্বালানি সাশ্রয় নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে জোড় দেয়া হচ্ছে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে। বায়ুবিদ্যুতে আমাদের সাফল্য তেমন উল্লেখযোগ্য নয়; পরমাণু বিদ্যুৎও ঠিক কবে নাগালে আসবে বলা মুশকিল; ওদিকে যুক্তিগ্রাহ্য কারণে সীমাবদ্ধই থাকছে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। তেমন পরিস্থিতিতে সবুজ (তথা ক্লিন) শক্তির উৎস হিসেবে আমাদের আস্থা স্বভাবতই বাড়ছে সৌরবিদ্যুতের ওপর। আগামী তিন বছরে বাড়তি ৩০ লাখ পরিবারের কাছে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছানোর যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, সেটিও এর প্রতিফলন বৈকি। আর শুধু আমরা কেন, সৌরবিদ্যুৎ প্রসারে কর্মরত অনেক অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের কাছেও এ বিষয়ে বলার মতো দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত ‘সৌরবিদ্যুতেও পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি’ খবরটি আমাদের চিন্তিত না করে পারে না। এক্ষেত্রে সমস্যাটি যতটা না প্রযুক্তি-সংশ্লিষ্ট, তার চেয়ে বেশি ব্যবস্থাপনাগত। বলা যায়, সার্বিক দুরবস্থার একটা খণ্ড চিত্র মেলে সেখানে। আর তা প্রধানত সোলার হোম সিস্টেমের ব্যবহৃত লেড-এসিড ব্যাটারিকে সাধারণ বর্জ্য হিসেবে গণ্য করা নিয়েই।

প্রতিটি সোলার হোম সিস্টেমের সঙ্গে থাকে লেড-এসিড ব্যাটারি। স্বভাবতই তাতে থাকে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর সিসা, সালফিউরিক বা হাইড্রোক্লোরিক এসিড। লক্ষ্যণীয়, প্রচলিত সিলিকিন ফটোভোল্টিক সেলে রয়েছে গ্যালিয়াম আর্সেনাইডের মতো ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে আধুনিক প্রযুক্তির কিছু সেলে কয়েকটি অতিরিক্ত বিষাক্ত উপাদানও যুক্ত হয়েছে বলা জানা যায়। তবে সার্বিকভাবে আমাদের জন্য ফটোভোল্টিক সেলের চেয়ে বেশি সমস্যা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আনা, চালু এবং ব্যবহৃত ব্যাটারির উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ। কেননা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব আমলে নিয়ে এর ক্ষতিকর প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশি বৈকি। সোলার প্যানেলের মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারি থেকে যত্রতত্র সিসা বের করে নেয়ার অনুশীলন দেশে ব্যাপক। তার সঙ্গে কোনো রকম নিয়মনীতি ছাড়াই ফেলে দেয়া হয় এসিডসহ অন্যান্য কেমিক্যালস। অবশ্য কেবল সৌরপ্রযুক্তি নয়, গাড়িসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ব্যাটারির ব্যবস্থাপনাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ এবং এক্ষেত্রে একটি কেন্দ্রীয় নীতিমালার প্রণয়ন ও প্রয়োগ সময়ের দাবি। খেয়াল করারা বিষয়, প্রতিবেশী ভারত ‘লেড ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হ্যান্ডলিং’ বিধিমালা প্রণয়ন করেছে সেই ২০০১ সালেই। এতে নতুন ব্যাটারি বিক্রি ও পুরনো ব্যাটারি ফেরত নেয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের করণীয় উল্লেখ রয়েছে স্পষ্টভাবে। এখানে বিষয়টি নিয়ে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মনোযোগ তেমন দেখা যায় না। সবচেয়ে মারাত্মক হলো এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রকদের উদাসীনতা। তাই অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া দরকার; নইলে একটা পর্যায়ে বড় হুমকিতে পড়তে পারে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। তাছাড়া লেড-এসিড রিসাইক্লিং পাহাড়সম কোনো বাধা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা বলে, এটি সফলতম রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রিগুলোর অন্যতম। সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতের স্বার্থেই এসব বিষয়ে সরকারকে আরো সক্রিয় হতে হবে; পদক্ষেপ নিতে হবে নিজে থেকে।

কর্ণফুলী পেপার মিলসের বিফল সংস্কার

দুর্নীতি উপড়ে ফেলতে হবে

১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে অভ্যন্তরীণ বাজারে কাগজ সরবরাহে কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) শুধু অন্যতম ভরসাস্থলই ছিল না, এটি আমাদের উল্লেখযোগ্য সম্মানজনক শিল্প-স্থাপনাও বটে। কয়েক দশক আগেও এখানে দৈনিক উৎপাদন হতো ১১০-১৩০ টন কাগজ। মূলত ব্যালেন্সিং মডার্নাইজেশন রেনোভেশন অ্যান্ড এক্সপানশনের (বিএমআরই) অভাবে নব্বইয়ের দশক থেকেই পড়তে থাকে কেপিএমের উৎপাদন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে কারখানাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও অগ্রগতি থেমে ছিল। ২০০৫-০৬ সালে দৈনিক উৎপাদন ৩০-৩৫ টনে নামলে টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। ফলে ২০০৮ সালে বিএমআরই শুরু হয়ে তা সম্পন্ন হয় ২০১২ সালে; প্রধানত ব্লিচিং টাওয়ার, রোলার বিভাগ, ট্যালকম পাউডার স্টোর, লবণ স্টোর, চুন স্টোর প্রভৃতি বিভাগে সংস্কার ও নতুন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের জন্য ১৮১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে। এ বিপুল অর্থ ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানের কী লাভ হলো, তার একটা পরিষ্কার ধারণা মিলবে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন পড়লে। উৎপাদন লক্ষ্য ৭২ টন থাকলেও প্রতিদিন নাকি সেখানে আর ১১-১২ টনের বেশি কাগজ তৈরি হচ্ছে না। তিন উৎপাদন ইউনিটের মধ্যে চালু রয়েছে একটি; বাকিগুলো নিকট ভবিষ্যতে চালু হওয়ার কোনো লক্ষণ। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কেপিএম থেকে কাগজ ক্রয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ নির্দেশনা ছিল। ফলে কাগজ বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না প্রতিষ্ঠানটির। আবার এর ওপর নির্ভরশীল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থানও আরেক চিন্তা বটে।

কেপিএমের এ দুরবস্থার জন্য দায়ী দুর্নীতি। এ নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল বিএমআরই বাস্তবায়নকালেই। পরবর্তীতে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলসহ কয়েক দফা প্রকল্প পরিদর্শনপূর্বক অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। জানা যায়, কয়েকটি ইউনিটে ব্যয় দেখানোর পরও ব্যবহৃত হয় পুরনো যন্ত্রপাতি। আবার শর্ত ছিল, যন্ত্রগুলো টানা সাতদিন চালু থাকার সক্ষমতা অর্জন করবে। সেটিও পূরণ হয় নি। তদুপরি সুপারিশ ছিল, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও একশ্রেণীর কেপিএম কর্মীর বিরুদ্ধে অধিকতর ব্যবস্থা গ্রহণের। ওই প্রক্রিয়াটি এখনো এগিয়ে নেয়া যায়। প্রত্যাশা থাকবে, এসব ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেবে সরকার। নইলে উৎপাদন বৃদ্ধি কঠিন হবে; আর একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মীর প্রভাবে হাতের কাছে কাঁচামাল রেখে তা আমদানির জন্য বাড়তেই থাকবে উৎপাদন ব্যয়।

দ্রুত কম্বল বিতরণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

দক্ষতা ও সমন্বয়ের সঙ্গে পালিত হোক

শনিবার সারা দেশের শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার পিস কম্বল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেয় বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি)। গতকালের পত্রপত্রিকায় সে খবর ছাপা হয়েছে। এটি গ্রহণের পর পরই শীতকবলিত এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৬০ বছরের অধিক বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও এতিমদের মধ্যে সেগুলো দ্রুত বিতরণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময়োচিত নির্দেশনা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। লক্ষ্যণীয়, নাজুক অঞ্চলগুলোয় শীত এখনো ঠিক জেঁকে বসে নি। কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জনজীবন পর্যদুস্ত হওয়ার তেমন খবর মেলে না। কথা হলো, এবার শীত খানিকটা দেরিতে এসেছে। ফলে আগামীতে তীব্র শীত পড়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না কোনোভাবেই। নিকট অতীতেই দেখা গেছে, বিশেষত উত্তরাঞ্চলে মানুষের দুর্ভোগের খবর গণমাধ্যমে আসার পর কম্বল, চাদরের মতো শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও তা বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেদিক থেকে এবারকার আগাম প্রস্তুতি প্রশংসনীয়। এখন তার দক্ষতাপূর্ণ ও সমন্বিত বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

ভিজিএফ, ভিজিডির মতো গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিতরণে অদক্ষতা ও দুর্নীতির অনেক অভিযোগ রয়েছে দেশে। শীতবস্ত্র বিতরণের প্রতি সে মাত্রায় অভিযোগ না উঠলেও অব্যবস্থাপনার নজির রয়েছে এখানেও। অনেক সময়ই দেখা যায়, সমন্বয় না থাকায় নির্দিষ্ট (অধিকাংশ ক্ষেত্রে সবচেয়ে নাজুক জনগোষ্ঠীর বাসস্থান) অঞ্চলেই গরম কাপড় বিতরণ করছে একাধিক পক্ষ। এতে অভাবী কারো কারো কপালে জুটছে একাধিক কম্বল; আবার কেউ কেউ পাচ্ছেন না একেবারেই। সামাজিক সুবিধা বিতরণের এ অসাম্য যথাসম্ভব দূর করতে হবে; নির্মূল করতে হবে অনিয়মও। অনেকের অভিযোগ, সারা দেশে বিতরণকৃত কম্বল-চাদরের এক উল্লেখযোগ্য অংশ বিতরণ কর্মসূচি সূচনার সঙ্গে সঙ্গেই একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর হাতে চলে যায়। এতে গরিব মানুষের উপকার তো হয় না, উল্টো গুটিকয়েক ব্যবসায়ী কম দামে বেশি লাভ করায় নিরুৎসাহিত হন সৎ ব্যবসায়ীর। ফলে এদিকে কর্তৃপক্ষের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকা চাই। কেননা নিঃসন্দেহে কম্বল বিতরণের উদ্দেশ্য দুঃস্থ মানুষের কল্যাণ। কথা ওঠায় রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের করপোরেট সোশ্যাল রেস্পনসিবিলিটি (সিএসআর) কর্মকাণ্ডের ওপর শক্ত নিয়ন্ত্রণ জারি করেছিল সরকার। শীতবস্ত্র ক্রয়ে সিএসআরের অর্থ ব্যয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে তা খানিকটা শিথিল করা হয়েছে। আশা থাকবে, সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে এক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বাড়তি গুরুত্ব দেবে তারা।

রফতানি থেকে আমদানিকারক

বাড়াতে হবে চায়ের উৎপাদন

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন শীর্ষ দশ চা রফতানিকারক দেশের তালিকায় নাম ছিল বাংলাদেশের। সে সময় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পরই এখান থেকে বিপুল পরিমাণ চা যেত বিশ্ব বাজারে। নতুন প্রেক্ষাপটে চিত্রটি আজ এতটাই পরিবর্তিত যে, আমাদের এখন বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করতে হচ্ছে। কাস্টমস ও বাংলাদেশ চা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আনুমানিক ১৪ মিলিয়ন কেজি চা আমদানি করতে হয়েছে। আলোচ্য সময়ে সামান্য কিছু চা রফতানি হয়েছে অবশ্য। সেটি ধর্তব্য নয়। বরং খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে নান পারার ব্যর্থতাই আমাদের ঠেলে দিচ্ছে আমদানির প্রতি। অবশ্যই বর্ধিত জনসংখ্যা এর বড় কারণ। তবে মুখ্য কারণ বোধকরি, মানুষের চা পান প্রবণতা বৃদ্ধি। দেখা যাচ্ছে, চায়ের বেলায় উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি প্রতি বছর বাড়ছে প্রায় ২ শতাংশ হারে; কেননা উৎপাদনের চেয়ে এক্ষেত্রে চাহিদা বৃদ্ধির পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি। ফলে ব্যাপকভাবে চা আমদানি বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়।

প্রশ্ন হলো, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কী সম্ভব নয়? গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বলা যায়, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হলে স্থানীয়ভাবে চা উৎপাদন লক্ষ্যণীয়ভাবে আরো বাড়ানো যাবে; অনেকের অনুমানে তা সহজে ৫ মিলিয়ন কেজিতে উন্নীত করা সম্ভব। কেননা বর্তমানে দেশের ১৬৬টি চা বাগানের মধ্যে ৪৪টিই দুর্বল ব্যবস্থাপনায় চলছে বলে খবরে প্রকাশ। জানা যায়, মোট যতটা জমি বরাদ্দ রয়েছে চাষের আওতায় আসে নি সেটির উল্লেখযোগ্য অংশ। ১৯৯৮ সালে রুগ্ন বাগানগুলোর উৎপাদন বাড়াতে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা নেয়া হলেও তাতে মেলেনি আশানুরূপ সাফল্য। এজন্য বাগান মালিকের দায় অস্বীকার করবেন না কেউই। কথা হলো, এখানে সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকার নেয়ার বিষয়টিও এড়ানো যায় না কোনোভাবেই। এখন কর্তৃপক্ষের উচিৎ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে চা চাষে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা। বরাদ্দকৃত জমিকে নতুনভাবে চাষের আওতায় আনতেও সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি বাগানগুলোর প্রশাসনিক ব্যবস্থার দক্ষতা উন্নয়নে পরামর্শ দেয়া যেতে পারে। তাতে হয়তো পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে চায়ের উৎপাদন পুরোপুরি বাড়ানো যাবে না। তবে স্থানীয় উৎপাদন ৫ মিলিয়ন কেজি বাড়ানো গেলেও অনেকটাই কমবে চা আমদানির চাপ।

রাজধানীতে দেশী-বিদেশী মুদ্রা ও স্বর্ণবার উদ্ধার

চোরাচালান রোধে নজরদারি বাড়াতে হবে

সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত রাজধানীর পুরনো পল্টনের এক বাসা থেকে উদ্ধারকৃত কয়েক বস্তা দেশী-বিদেশী মুদ্রা ও অর্ধসহস্রাধিক স্বর্ণের বার উদ্ধারের ঘটনা এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। অভিযুক্তের দাবি, তার বাসা থেকে উদ্ধারকৃত অর্থ বৈধ। খেয়াল করার মতো বিষয়, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মুদ্রা বিনিময় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত; যদিও ঘরে প্রায় ৬১ কেজি স্বর্ণ সংরক্ষণের কোনো ব্যাখ্যা তার কাছ থেকে মেলে নি এখনো। তথ্যপ্রমাণে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তিনি মুদ্রা ও স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর নিশ্চিত হয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহায়তায় আলোচ্য অভিযানটি চালায়। লক্ষ্যণীয়, ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে বিমানবন্দরের সূত্র ধরে মগবাজার থেকে তা উদ্ধার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) একটি দল। সে সময় ওই চোরাচালানের সঙ্গে একশ্রেণীর বিমানবন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং চিহ্নিত কয়েকজন মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায়ীর সম্পৃক্ততাও খুঁজে পেয়েছিল র‍্যাব। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যাশা থাকবে, কর্তৃপক্ষ ক’দিন আগে সংঘটিত ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন বলে ধরে নেবে না।

মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও গত কয়েক মাসে কেবল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যে পরিমাণ অবৈধ স্বর্ণ আটক হয়েছে, তা হতবাক করার মতো বৈকি। এর পেছনে শক্তিশালী চক্র সক্রিয় থাকার প্রমাণও বর্তমানে উদ্ঘাটিত। এদিকে আমাদের বিমানবন্দরগুলোর স্ক্যানিং কার্যক্রমে দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। বিমানবন্দরে এমনকি একশ্রেণীর নিরাপত্তা কর্মীকেও জড়িত থাকতে দেখা যায় স্বর্ণ ও মুদ্রা চোরাচালানে। ফলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের নজরদারি কর্মসূচি আরো বাড়াতে হবে; এর বিকল্প খুঁজে পাওয়া ভার বৈকি। পাশাপাশি এ ধরনের চোরাচালান রোধে বৃহত্তর পরিসরে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে। অনেকে মনে করেন, জব্দকৃত স্বর্ণ ও মুদ্রা চালানের প্রকৃত গন্তব্য ভারত; এক্ষেত্রে কেবল করিডোর হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ। তবে গোটা পরিস্থিতি বোধ করি সে অনুমানের চেয়ে জটিল। কেননা ক’বছর আগে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে চোরাচালান বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে আমাদের ওপর খানিকটা চাপ সৃষ্টি করেছিল। তাছাড়া বর্তমানে বিজিবি-বিএসএফ ও বিজিবি-নাসাকার মধ্যেও সম্পর্কোন্নয়ন পরিলক্ষিত। সেখান থেকে এমন ধারণা একেবারে অসমীচীন নয় যে, বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে দাম বেশি হওয়ায় সেখানে স্বর্ণ চোরাচালান যেমন বাস্তবতা; তেমনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্বর্ণ স্থানীয় বাজারে শোষিত হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। তবে কারো কারো মতে, আন্তঃসীমান্ত চোরাচালান রোধে বেশি জোর দেয়া দরকার; কেননা এক্ষেত্রে স্বর্ণ ও মুদ্রা পাচারের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত মাদক চোরাচালান।

৯০ বছর পর কার্যকর মহাসড়ক আইন!

বাস্তবায়নে ক’দিন লাগবে?

যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বাংলাদেশে সড়কপথের গুরুত্ব বাড়ছে বৈ কমছে না। সমস্যা হলো, এর প্রতি আমাদের সুনজর সেভাবে নেই বললেই চলে। চলতি বছর শুরুর দিকে স্থানীয় সড়ক-মহাসড়কের হাল নিয়ে প্রস্তুত ‘বাংলাদেশ টেকনিক্যাল রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) হাতে তুলে দেয় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সেখানে যে চিত্র তুলে ধরা হয় তা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। ক’দিন আগে এডিবি ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত ‘কানেক্টিং সাউথ এশিয়া অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়াঃ আ বাংলাদেশ কান্ট্রি স্টাডি’ শিরোনামের গবেষণার ভিত্তিতে এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয় বণিক বার্তায়। তাতে দেখা গেছে, আমাদের মহাসড়কগুলোর মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশকে আন্তর্জাতিক মানের বলে দাবি করা যায়। স্পষ্টত এখানকার সড়ক-মহাসড়কগুলোর অধিকাংশই দ্বিতীয় শ্রেণীতে গণ্য। মহাসড়কে মানুষ হাঁটছে না এমনটা বোধকরি পাওয়া যাবে না। আবার সড়কের নিরাপত্তা সীমার মধ্যে কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে বাড়িঘর ও দোকানপাট। দেশের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ককেই সুপরিকল্পনায় এনে দুই লেনের বেশি স্থান দেয়া সম্ভব হয় নি। সেজন্য ওতে সড়ক বিভাজকও থাকে না প্রায়ই; সঙ্গে নিরাপত্তা বেষ্টনীর কথা না হয় বাদই থাক। তবে এত কিছুর পরও যে মাত্রায়ই হোক, একটি সুখবর হলো- ৮৯ বছর আগে ব্রিটিশ শাসনামলে সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত ‘হাইওয়ে অ্যাক্ট ১৯২৫’ কার্যকরে গত ১৪ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এর দ্রুত বাস্তবায়নই এখন দেখতে চাইবেন সবাই।

আইনটি পুরোপুরি কার্যকর হলে নিঃসন্দেহে সড়ক-মহাসড়কের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বড় পরিবর্তন আসবে। তাতে সংশ্লিষ্টের কাজে অধিকতর সমন্বয় রক্ষা করাও সম্ভব। প্রশ্ন হলো, ২০১৪ সালের এ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আইনটি যুগোপযোগী কিনা? কেননা আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অব্যাহত লঙ্ঘনের জন্য ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড (এছাড়া প্রতিদিনের জন্য অতিরিক্ত অনধিক ১০০ টাকা জরিমানা) ভোগ করতে হবে উক্ত আইন অমান্যকারীকে। এরূপ দণ্ড অন্যায়কারীকে অপরাধ হতে প্রকৃতপক্ষে কতটা দূরে রাখবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশের অবকাশ রয়েছে। আইনটি বাস্তবায়নকারীদের এসবের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখা দরকার। অবশ্য তাতেও দেরি করা চলবে না। এমনিতেই পরিকল্পনা ও নির্মাণ থেকে সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত গাফিলতি কম হয় নি। তবে এক্ষেত্রে অধিকতর উদাসীনতা চলমান প্রেক্ষাপটে স্থানীয় অর্থনীতির ওপর আরো ব্যাপকভাবে পড়বে বলেই অনেকের শঙ্কা। সেটি দূরে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।

কৃষি ঋণের ব্যবহার

ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে

কৃষি খাতে ভারসাম্যহীনভাবে ঋণের ব্যবহার নিয়ে শনিবার বণিক বার্তায় প্রকাশ খবরটি এরই মধ্যে সজাগ অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। আলোচ্য প্রতিবেদনটির ভিত্তি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালিত ‘বাংলাদেশের কৃষিঋণের ব্যবহার এবং প্রভাব নির্ধারণ’ শীর্ষক গবেষণা। সেখানে দেখা যাচ্ছে, কৃষিঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ সরাসরি বিনিয়োগ হয়েছে শস্য খাতে। তার সঙ্গে মসলা আবাদে ৩ দশমিক ৩৮, শস্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং সেচের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যবহৃত ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ ঋণ যোগ করলে শস্য খাতে মোট ঋণ দাঁড়াচ্ছে ৭৫ শতাংশের বেশি; যেটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বৈকি। অথচ এর পাশাপাশি মতস্য চাষ ও গবাদি পশুপালনে প্রদত্ত ঋণ চিত্র তুলনা করলে দেখা যাবে ২০১৩-১৪ সালে মতস্য চাষ ও প্রাণিসম্পদে ঋণ বিতরণ হয়েছে ২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। অন্যান্য খাতে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ ঋণ প্রাপ্তির সঙ্গে গ্রাহক তথ্য গোপন রাখায় ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ ঋণের হদিস মেলে নি অবশ্য। তবু মোটা দাগে চলমান চিত্রকে আমলে নিতেই হবে। কেননা এর ওপর আমাদের কৃষি খাতের ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ নির্ভর করে অনেকটা।

লক্ষ্যণীয়, শস্য উপখাতে ঋণ বেশি যাওয়ায় বিরাট অসুবিধা হচ্ছে সে কথা বলবেন না। এ উপখাতটির উৎপাদন কিন্তু কৃষি খাতে সর্বোচ্চ। তবে সমস্যা হলো, শুধু একটি উপখাতের ওপর অধিক জোর দেয়া হলে বাকিগুলোর সুষ্ঠু বিকাশ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার কৃষিঋণ বিতরণের নতুন নীতিমালায়ও রয়েছে, শস্যে মোট ঋণের সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ দেয়া যাবে। ফলে যুক্তিগ্রাহ্য কারণেই ওমন প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে জরুরিভিত্তিতে। খেয়াল করার মতো বিষয়, জনসংখ্যা ও সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে বাড়ছে আমিষের চাহিদা। অথচ মতস্য ও প্রাণিসম্পদ উপখাতে ঋণ প্রবাহ বেশ কম। বিশেষত পোলট্রি উৎপাদকরা ঋণ চাইলেই ব্যাংক পিছু হটে বলে জানা যায়। অস্বীকার করা যাবে না, পোল্ট্রিতে ঋণ প্রদানের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি। কিন্তু তাই বলে বৃহত্তর স্বার্থে এখানে ঋণ প্রদানে বিরত থাকলে চলে না। এমন পরিস্থিতিতে সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দূরদর্শী ও কার্যকর পদক্ষেপই প্রত্যাশা করেন সবাই।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে উৎপাদনশীল খাতের নেতৃত্ব

টেকসই করতে অভ্যন্তরীণ সুশাসনও জরুরি

বিশ্বে অভূতপূর্ব না হলেও গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উত্থান সত্যই লক্ষ্য করার মতো। বর্তমানে আমাদের গার্মেন্ট খাত আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক সরবরাহকারী দ্বিতীয় শীর্ষ উৎস। আর স্থানীয় অর্থনীতিতে খাতটির প্রভাব কী, তা নতুন করে ব্যাখ্যার কিছু নেই। ওটির মতো না হলেও এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে আমাদের ফার্মাসিউটিক্যালসগুলো। বাংলাদেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ ওষুধ রফতানি হচ্ছে এখন। অথচ এক সময়ে দেশের সিংহভাগ ওষুধের চাহিদা মেটাতে হত আমদানি করে। তৈরি পোশাকের পর দেশি-বিদেশি অনেক ক্রেতা আগ্রহী হয়েছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ চামড়াজাত ফুটওয়্যারের প্রতি। চামড়া ও ফুটওয়্যার রফতানি করে স্থানীয় বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা ১০৫ কোটি ৫৬ লাখ ডলারেরও বেশি আয় করেছেন কেবল গত বছর। সিমেন্ট, ইস্পাত খাতের মতো বড় শিল্পেও বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা তাদের সামর্থ্য দেখিয়েছেন বৈকি। ফলে সার্বিকভাবে বেসরকারি খাতের আধিপত্য দেখা যাচ্ছে, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ সব ক্ষেত্রে। এদিকে সরকারি খাতের তুলনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্য সংযোজন ৯৮ শতাংশের বেশি বলেও প্রতীয়মান। স্পষ্টত উৎপাদনশীল খাতের নেতৃত্বে এখন যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই সে তথ্য মেলে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ প্রতিবেদন পড়েও। খবরটির ভিত্তি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কর্তৃক প্রস্তুত এক হিসাব। লক্ষ্যণীয়, একই সময়ে সরকারি খাতের ভূমিকা ক্রমহ্রাস পেতে দেখা গেছে। এটিকে অস্বাভাবিক বলা যায় না মোটেই। তবে কথা হলো, আমাদের বেসরকারি খাতের এই বিকাশকে শক্তপোক্ত ও টেকসই করা চাই। সেজন্য সরকারের উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, বেসরকারি খাতের সচেতনতাও কম জরুরি নয়।

নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গার্মেন্ট খাতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখনো এর নির্ভরযোগ্য বিকল্প দাঁড় করানো যায় নি। অন্তত মধ্য মেয়াদে নতুন কোনো শিল্প এর ভূমিকা নিতে পারে, তেমন আভাষও দেখা যাচ্ছে না আপাতত। অথচ সাম্প্রতিককালের তাজরীন ও রানা প্লাজার কাণ্ড বিশেষত পশ্চিমা বাজারে বাংলাদেশী গার্মেন্ট পণ্যের অস্তিত্বই হুমকিতে ফেলে দিচ্ছিল প্রায়। পরিহাসের বিষয়, এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রকরা ছিলেন উদাসীন; আবার খুব কম সংখ্যক ব্যবসায়ীই নিজ থেকে কমপ্লায়েন্স মান্যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে বেসরকারি খাতের উত্তরণই কামনা করি আমরা। এখনো জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের মতো অনেক ক্ষেত্রে অবমূল্যায়িত শ্রম ও পরিবেশগত ভারসাম্যের প্রতি বহু উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীর অবজ্ঞা লক্ষ্যণীয়। অথচ পরিবেশগত ইস্যুর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আগামীতে স্থিতিশীলভাবে ব্যবসাবাণিজ্যের বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আবার শ্রমিকের অধিকতর বঞ্চনা কিংবা কর্মপরিবেশের অবনতি প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে সহায়ক হবে না। ফলে এদিকে দৃষ্টি দেয়া জরুরি বৈকি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের যে উন্নতি হয়েছে তাতে অবশ্যই উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের ভূমিকা বেশি। তবে যে মাত্রায়ই হোক অপরিহার্যভাবে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে রাষ্ট্র তথা সরকারও। আগামীতেও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ও সমন্বয়মূলক মনোভাব বজায় রেখে সরকারি ও বেসরকারি খাত এগিয়ে চলবে এমনটাই প্রত্যাশা। আমাদের অর্থনৈতিক বিকাশের প্রক্রিয়া পরিপক্ক হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সবার অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকাই কাম্য।

প্রাথমিক ও জুনিয়র পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষা

ফলের সঙ্গে শিক্ষার মানোন্নয়ন আবশ্যক

গতকাল প্রকাশ জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলের বিষয়টি এরই মধ্যে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে থাকবে। সার্বিকভাবে পাসের হার সন্তোষজনক; জিপিএ৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা কম নয়। তবে গতবারের সঙ্গে তুলনায় বর্তমান ফলের কিছু গুণগত পার্থক্য রয়েছে বৈকি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এবার জিপিএ৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা কম; আবার বিশেষত জেএসসিতে পাশের হার বিশেষভাবে কমেছে। শুরুর দিন থেকেই ব্যাপক অভিযোগ ছিল, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত অনেকে এর সত্যতা বিষয়ে অস্বীকৃতি জানানো সত্ত্বেও সাধারণভাবে একটা সন্দেহ ছি যে, কিছু একটা নিশ্চয়ই ঘটেছে। সে দৃষ্টিকোণ থেকেও সমাপনী পরীক্ষার ফল জানার আগ্রহ ছিল কারো কারো। অন্যান্য বছর উত্তরপত্র মূল্যায়নে সরকারের ‘উদারতা’র প্রতি ইঙ্গিতও করেন অনেকে। সে ধারাবাহিকতায় এবার ‘ছন্দ পতন’ ঘটেছে বলা যায়। এ অবস্থায় শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকার বাড়ুক, এমন প্রত্যাশাই করেন সবাই।

খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, মানহীন ফল গ্রহণে (যে সংখ্যায়ই) হোক- অভিভাবকদের মনে সচেতনতা বেড়েছে। এটি সুলক্ষণ বটে। প্রাথমিক ও জুনিয়র পর্যায়ে অনিয়ম-উদাসীনতার জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর মূল দায় চাপানোর সুযোগ নেই। সেখানে প্রধানত ভূমিকা পালন করতে হবে সরকার, শিক্ষক ও অভিভাবকদের। এক্ষেত্রে কোনো এক পক্ষের গাফিলতি কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। ফলে নির্দেশনা অনুসরণে কেবল শিক্ষকদের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি না করে এবং প্রাথমিক-জুনিয়র শিক্ষার মানোন্নয়নকে অভিভাবকের সচেতনতার ওপর ছেড়ে না দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকেই। শিক্ষা প্রত্যক্ষভাবে অলাভজনক খাত এবং তা সত্ত্বেও মূল ধারার অর্থনীতিবিদদের অভিমত হলো, এর ভালোমন্দ নিশ্চিতে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের মাথায় থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাস্তবায়নের দুর্বলতার চেয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ত্রুটিই বেশি বলে কারো কারো কাছে প্রতীয়মান। সুসংবাদ হলো, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেসব নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করছে বলেই জানা যায়। আমরা তাদের সাফল্য কামনা করি। পাশাপাশি এ প্রত্যাশাও করি যে, আজকের তরুণ যে মুখগুলো ফলের আনন্দে উদ্ভাসিত, আগামী কর্মসংস্থান নিয়েও তারা তৃপ্ত হোক এবং বিশ্বের বুকে উজ্জ্বলতর করে তুলুক বাংলাদেশের ভাবমূর্তি।

Published in Bonik Barta, November 2014

উদ্ভিদজাতের বাণিজ্যিক মালিকানা

পথিকৃৎ ও কৃষকের স্বার্থ সুনিশ্চিত করুন

কৃষিতে বাংলাদেশের আজ যে অর্জন, তার পেছনে কমবেশি সব সরকারেরই অবদান রয়েছে। এক্ষেত্রে বর্তমান শাসনামলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাড়তি যত্ন কৃষি উৎপাদন ও এ সংক্রান্ত গবেষণার গতি বাড়িয়েছে বলেও অনেকের অভিমত। জানা যায়, এরই মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত শস্যপণ্যের জাত রয়েছে চার শতাধিক। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এবং বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) মতো প্রতিষ্ঠানও একাধিক নতুন জাত বাজারে ছেড়েছে এবং কিছু জাত অবমুক্তির অপেক্ষায়। সরকারি বিনিয়োগ ও উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়েছে বেসরকারি খাতের গবেষণাও। সমস্যা হলো, উদ্ভাবিত নতুন শস্য জাতের মালিকানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মাঝে বিভাজন ও দ্বন্দ্ব প্রতীয়মান। সেটি নিরসনে এবং আমাদের কৃষি গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে যোগ্য করে তুলতেই মূলত নেয়া হয় ‘উদ্ভিদজাত ও কৃষক অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০১৪’ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত। দুঃখজনক খবর হলো, সেক্ষেত্রে জাত গবেষণায় পথিকৃৎদের জন্য যে বাণিজ্যিক মালিকানা রাখা রয়েছে সেটি আন্তর্জাতিক রীতির চেয়ে এক দশক কম। তদুপরি বিশেষত জিন পরিবর্তিত (জিএম) জাতসত্ত্ব ও কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণ নিয়েও কিছু বিতর্ক রয়েছে সচেতন মহলে। এমন পরিস্থিতিতে বীজ গবেষণায় পথিকৃৎ ও কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় সরকার পিছপা হবে না, তেমন্টাই দেখতে চান সবাই।

আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রধানত ফলদ বৃক্ষ ও লতানো বহুবর্ষী প্রজাতির বেলায় উদ্ভাবকের হাতে ২০ বছরের জন্য বাণিজ্যিক মালিকানা দেয়ার কথা বলা হয়েছে; অন্যান্য ক্ষেত্রে যা ১৫ বছরের জন্য মাত্র। কথা হলো, গবেষককে উৎসাহ প্রদানও তো নতুন জাতের মালিকানা সত্ত্ব নিশ্চতকরণের অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রস্তাবিত আইনে তার কতটা নিশ্চিত হবে? এ থেকে বেসরকারি বীজ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোই বা কী সংকেত পাবে? নীতি নির্ধারকদের বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। আলোচ্য আইনের প্রয়োগ পদ্ধতি বিষয়েও খোলামেলা আলোচনা হওয়া দরকার বলে মনে করেন কেউ কেউ। আবার জিএম জাত সত্ত্ব, জিন ব্যাংক ও তাতে কৃষকের প্রবেশাধিকার নিয়েও কিছু জটিলতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান। এসব ইস্যুর সুনিষ্পত্তিও আইনটির খসড়ায় থাকা উচিৎ। উক্ত খসড়া প্রণয়ন কমিটির এক সদস্য এসব বিষয়ে বণিক বার্তাকে আশ্বস্ত করেছেন বটে। কিন্তু সে বক্তব্যের সারাংশের সঙ্গে চলমান বাস্তবতার সাযুজ্য কমই। অথচ কৃষকের অধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি কৃষি গবেষণায় অনুপ্রেরণা জোগায় এমন মেধাসত্ত্ব আইনই প্রত্যাশা সবার।

অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ব্যাংক ঋণ

ঝুঁকি হ্রাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা কাম্য

শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশ (এবিবি) কর্তৃক আয়োজিত ‘ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচিত ইস্যুগুলো এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। তার ভিত্তিতে স্থানীয় ব্যাংকগুলোর ঋণ কিছু ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ার যে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, সেটি আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। কেননা বাংলাদেশের ঋণ বাজার মোটামুটি বিস্তৃত হলেও, তা গভীর নয় বলে কারো কারো অভিমত। সেজন্য যথেষ্ট বিচার-বিবেচনাপূর্বক অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে এর সুপ্রবাহ নিশ্চিত করাই কাম্য। সেক্ষেত্রে একের সম্ভাবনা দমিয়ে অন্যকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ প্রদানকে ঋণের অপচয় হিসেবে অভিহিত করেন অনেকে। যুক্তি তোলা যেতে পারে, ঋণ কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা অঞ্চলে আবদ্ধ হয়ে পড়লে তেমন কিছু ঘটে কিনা। শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলার না গেলেও বাস্তবতা হলো, তেমন প্রেক্ষাপটে ঋণ অপচয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তার চেয়েও বড় কথা, ঋণ এক স্থানে কেন্দ্রীভূত তথা স্ফীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যত্র সংকুচিত হয়ে পড়ে ঋণ প্রবাহ। তাতে বিশেষভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির শঙ্কাও বাড়ে এতে। আরেকটি বিষয়, এ ধরনের ঋণ বিন্যাস সমাহরণ ঝুঁকি (রিস্ক অব কনসেন্ট্রেশন) তৈরি করে যা প্রায় পুরোপুরি অনিয়মানুগ (অ্যান-সিস্টেম্যাটিক)। এ অবস্থায় বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেবে এমনটাই প্রত্যাশা।

মনে হয় না, অর্থনৈতিকভাবে নাজুক অঞ্চলেই ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। বরং অধিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদনকারী অঞ্চলে ঋণ বেড়ে যাওয়টাই স্বাভাবিক প্রবণতা। কিন্তু এক্ষেত্রে ঝুঁকি ও অন্যান্য সম্ভাবনা বিনষ্টের হিসাবটি সংশ্লিষ্টদের মাথায় রাখা চাই। ব্যবসা ও গৃহস্থালির প্রয়োজনে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করার মতো পর্যাপ্ত তহবিল এখন দেশের ব্যাংকিং খাতে নেই বলে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের অভিমত। সেজন্য গ্রাহকরা দীর্ঘমেয়াদী না ভেবে মধ্যমেয়াদী বিনিয়োগ নিয়ে বেশি ভাবছেন; প্রয়োজনীয় সময়ের চেয়ে কম সময়ের ঋণ চেয়ে অনেকেই পরবর্তীতে হয়ে পড়ছেন খেলাপি। গভর্নরের এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগ কম। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের সমাহরণ হ্রাসে অধিক মনোযোগ দেয়া উচিৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। স্থানীয় ব্যাংক কর্তৃক আপন প্রচেষ্টা গ্রহণেরর পাশাপাশি সে লক্ষ্যে ব্যাংকিং খাতকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে।

উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশই অব্যবহৃত!

শিল্পের স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করুন

মঙ্গলবার বণিক বার্তায় প্রকাশ স্থানীয় সিমেন্ট, সিআর কয়েল, তুলা ও পাটের সুতা, চামড়া, চিনি এবং ভোজ্যতেলের মতো বৃহৎ শিল্পখাতের উৎপাদন সক্ষমতার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অব্যবহৃত রয়ে যাওয়ার খবর এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, স্থানীয় সিমেন্ট খাতের উৎপাদন সক্ষমতা আনুমানিক ২ কোটি ৮০ লাখ টন; এর বিপরীটে অভ্যন্তরীণ চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড় কোটি টন। স্পষ্টত এক্ষেত্রে অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে ৪৭ শতাংশ সক্ষমতা। আবার সিআর কয়েলের বেলায় বাজার চাহিদা যেখানে প্রতি মাসে ১০ হাজার টন সেখানে খাতটি উৎপাদন করছে ১৫ হাজার টন কয়েল। ১৪-১৫ লাখ টন চিনি উৎপাদন সক্ষমতাও ব্যবহার করা যাচ্ছে। আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, একইভাবে তুলা ও পাটের সুতা এবং ভোজ্যতেল পরিশোধনে অব্যবহৃত সক্ষমতার পরিমাণ যথাক্রমে ৪০-৪৫ ও ৫০ শতাংশ। সক্ষমতার শতভাগ ব্যবহার করা যায় না কখনো। আবার সক্ষমতার ব্যবহার উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে বেশি নীচে নেমে গেলে স্বভাবতই তা উদ্যোক্তার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীরাও এর বাইরে নন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা এক ধরনের ঝুঁকি অনুভব করছেন বলেও জানিয়েছেন বণিক বার্তাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল অবকাঠামো, আর্থিক অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত বিনিয়োগ প্রভৃতি কারণে উৎপাদন সক্ষমতার কাঙ্ক্ষিত ব্যবহার ঘটাতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। এর স্বল্পমেয়াদি প্রভাব হিসেবে ব্যবসার মাত্রা বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তা-বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ কমিয়ে দেয়া মোটেই বিচিত্র নয়। তাই ওই স্থিতাবস্থা থেকে দ্রুত মুক্ত হওয়া চাই।

সেজন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা বাড়াতে এবং তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। লক্ষ্যণীয়, বর্তমান সরকার পরিবেশবান্ধব পাটপণ্য প্রচলনে জোর দেয়ায় এর উৎপাদন বাড়ছিল। তার পরও এর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সক্ষমতা অব্যবহৃত! এক্ষেত্রে মাথায় রাখা জরুরি, তুলা ও পাটজাত পণ্যের চালু অভ্যন্তরীণ বাজারের পরিধি সীমিত। এখন বাজারের আয়তন বাড়াতে চাইলে, পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। তার দায়িত্ব সরকারের বদলে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের ওপরই বেশি বর্তায়। উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহারের দ্বিতীয় কার্যকর পথ হতে পারে তুলা ও পাটজাত পণ্যের রফতানি বৃদ্ধি। সেজন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। আবার কিছু পণ্য যেমন সিমেন্ট রফতানির সুযোগ কিন্তু আমাদের জন্য সীমিতই। এক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো পরিবহন ব্যয়। মূলত এ কারণেই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারে সিমেন্ট রফতানির চিন্তাটা সেভাবে করা যাচ্ছে না। তবে এখানে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। তাই পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ যত দ্রুত শুরু হয় ততই মঙ্গল। খেয়াল করার মতো বিষয়, বিভিন্ন কারণে উদ্যোক্তারা পর্যাপ্ত জ্বালানি-বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। সেজন্যও বাড়ছে না উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার। একে সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সুবিধাজনক হিসেবে না দেখে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) পরিচালক যেমনটি বলেছেন সেভাবেই দেখতে চাইব আমরা অর্থাৎ এমন অপর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা ও অপরিকল্পনায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি। সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকলে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে না। আবার দুর্বল পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নিয়েও বেশি দূর এগিয়ে নেয়া যাবে না উদ্যোগ। এক্ষেত্রে সরকার ও বেসরকারি খাতের মাঝে সুসমন্বয়ের বিকল্প নেই।

পল্লী অঞ্চলে লাখো ঘরে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছানোর উচ্চাশা

সঠিকভাবে এগোলে কাঙ্ক্ষিত ফলার্জন সম্ভব

সম্প্রতি রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরবিদ্যুতের অবদান ১০ শতাংশে উন্নীতিকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩ বছরের মাঝে পল্লী অঞ্চলে ৩০ লাখ পরিবারে সোলার হোম সিস্টেম চালুর (এসএইচএস) যে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। একই সঙ্গে আলোচ্য সময়ে ২৪ হাজার মেগাওয়াট মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, সেটি পূরণ হোক এমন প্রত্যাশা থাকবে সবার। লক্ষ্যার্জনে সরকারের নির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই বলে সমালোচনা হয় অনেক সময়। এক্ষেত্রে তেমন মন্তব্য করার উপায় নেই। কেননা বণিক বার্তাসহ গতকালের পত্রপত্রিকায় প্রকাশ, ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও শক্তি চাহিদা জোগান দিতে গিয়ে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। লক্ষ্যণীয়, ২০০৮ সালের অব্যবহিত পরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু জটিলতা সৃষ্ট হয়েছিল। তার বাস্তব প্রেক্ষাপট ছিল না, সে কথাও বলা যাবে না। এর মধ্যে কয়েকবার কষ্টকর সমন্বয়মূলক পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে সেজন্য। অস্বীকার করা যাবে না, বর্তমান শাসনামলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতাও বেড়েছে। তবু নাকি ৩৮ শতাংশ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষত প্রত্যন্ত গ্রাম ও চরাঞ্চলে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি মঙ্গলজনক আর্থিক ও উৎপাদনগত- উভয় দিকেই। আবার জানা যাচ্ছে, সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রকে স্থানীয় পর্যায়ে মিনি গ্রিডে রূপান্তরের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। ফলে শুধু উৎপাদন ও আওতা বৃদ্ধি নয়, মধ্য মেয়াদে অন্তত স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের দামে সৌরবিদ্যুতের সুপ্রভাবও দেখতে চাইবেন অনেকে।

৩ বছরে ৩০ লাখ এসএইচএস গ্রাহক বৃদ্ধি সহজ নয়। তবু সাম্প্রতিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করে বলা যায়, সঠিক পথে এগোলে সে লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। খেয়াল করার মতো বিষয়, দেশে পরিবারভিত্তিক এসএইচএস ব্যবস্থা পরিচিতি পায় ১৯৯৫-৯৬ সালে। বলতে হবে, সে সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শক্তির প্রাথমিক প্রচেষ্টায় গ্রামের মানুষ আগ্রহী হয়ে ওঠে সৌরবিদ্যুৎ ও জৌবশক্তি ব্যবহারে। তার সঙ্গে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সরকারসহ আমাদের উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা। তাই দেখা যায়, ২০০৩ সালে যখন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হলো ৫ বছরের মধ্যে ৫০ হাজার এসএইচএস সংযোগ দেয়া হবে, প্রায় ৩ বছরের মাঝে সেটি পূরণ হয়। এ ইতিবাচক অভিজ্ঞতাই ৩ বছরে ৩০ লাখ এসএইচএস সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যার্জনে আশান্বিত করে তোলে আমাদের। তাছাড়া এরই মধ্যে বেশ কিছু উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ প্রযুক্তিতে; সাধারণ মানুষ আরো আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ‘ক্লিন এনার্জি’ ব্যবহারে। শুরুতে বাজার প্রস্তুতে যে সময় ব্যয় হয়েছে, তারও প্রয়োজন হবে না। এখন দরকার, সুপরিকল্পিত উপায়ে অনগ্রসর অঞ্চলে সৌরবিদ্যুতের আওতা বাড়ানো। পাশাপাশি পর্যাপ্ত সংখ্যক এসএইচএস গ্রাহক সেবাকেন্দ্র রাখতে হবে। অভিযোগ মেলে, একশ্রেণীর প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের হাতে এসএইচএস ধরিয়ে দিয়েই কেটে পড়ে; পরবর্তীতে এর প্রভাব পড়ে রক্ষণাবেক্ষণে। উদ্দেশ্য পূরণের স্বার্থে এসব দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে সরকারকে।

স্বাস্থ্যখাতে পরিচালনামূলক অনিয়ম

টাকার খেলা বন্ধ করুন

দেশে স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক পরিস্থিতি কেমন, ভুক্তভোগী মাত্র তা ভালো বলতে পারবেন। এর সাধারণভাবে অনুমিত উত্তর হলো, তা মোটেই সন্তোষজনক নয়। তথ্য-উপাত্তও সে দিকেই ইঙ্গিত করে বৈকি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত জাতীয় খানা জরিপ ২০১২ বলছে, শতকরা ৪০ দশমিক ২টি খানা সরকারি স্বাস্থ্য সেবা নিতে গিয়ে অনিয়মের কবলে পড়ে এবং তাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বাধ্য হয়ে তাদের ব্যয় করতে হয় আনুমানিক ৭০ দশমিক ৩ কোটি টাকা। অনেকে মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যাটি আরো বড় এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও সেটিও আশাপ্রদ নয়। এরই মধ্যে গতকালের বণিক বার্তায় সরকারি স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পদোন্নতিসহ সর্বত্র ১০ হাজার থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত টাকার খেলা চলছে বলে যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, তা কাউকে কাউকে আতঙ্কিত করে তুলতে পারে। উল্লেখ্য, এ খবরের ভিত্তি টিআইবি’র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আরেকটি গবেষণা। এখন স্বাস্থ্য নীতি নির্ধারকদের উচিৎ হবে, গুরুত্ব সহকারে আলোচ্য গবেষণার ফলাফল ও সুপারিশগুলোর প্রতি দৃষ্টি প্রদান।

স্থানীয় স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে বা এর ভয়ে বিদেশ গমন নতুন কিছু নয়। অথচ যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলে আমাদের চিকিৎসকদের সেবার মান আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। সেটি পরিচালনামূলক কর্মকাণ্ডে টাকার খেলা বন্ধ না করে সম্ভব হবে না। লক্ষ্যণীয়, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও চিকিৎসকদের ঢাকামুখী যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। চিকিৎসক ফি’র সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের মাধ্যমে তা রোধ করা যায় কিনা ভাবা উচিৎ। পাশাপাশি এও খেয়াল রাখা প্রয়োজন- নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্বাভাবিক গতিতে শ্লথভাব বিদ্যমান। ফলে সবাই সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছুতে অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন এমনটি ধরে নেয়া ঠিক হবে না। বরং কেউ কেউ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় হতাশ হওয়ার নিয়ম ভাঙ্গতে পারেন। তবে নিয়ম যিনিই ও যে কারণেই ভেঙ্গে থাকুন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। টাকার খেলা বন্ধের এটিও গুরুত্বপূর্ণ অংশ বটে। তার সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের মাত্রা বাড়ানো দরকার। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বিধান এবং অপচিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ। দেশে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধিতে সবাই সার্বিকভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুনজরই কামনা করবেন।

বায়োগ্যাস

সুবিধাভোগীর আওতা বাড়াতে হবে

আশির দশকেই বায়োগ্যাস প্লান্টের প্রচলন ঘটে বাংলাদেশে। তার পেছনের প্রধান অনুপ্রেরণা অবশ্য পরিচ্ছন্ন বা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার ছিল না। বরং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) সংশ্লিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণের মূল কারণ ছিল দেশের যেসব অঞ্চলে গ্যাস-বিদ্যুৎ পৌঁছানো দুরূহ সেখানকার মানুষকে বায়োগ্যাসের ব্যবহার শেখানো। এরই মধ্যে সরকারি-বেসরকারি বহু প্রতিষ্ঠান নানাভাবে যুক্ত হয়েছে এর সঙ্গে। তাদের অব্যাহত ও সম্মেলিত প্রচেষ্টা না থাকলে হয়তো গতকালের বণিক বার্তায় এক প্রতিবেদনের শিরোনাম অনুযায়ী ৫ লাখ ছাড়িয়ে যেতো না বায়োগ্যাসের সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা (পরিবার হিসাবে লক্ষাধিক)! ৩৫ বছর ব্যয় হলেও কার্যকারিতার দিক থেকে নবায়নযোগ্য অন্যান্য শক্তি উৎসের মাঝে বায়োগ্যাসকে তাই প্রথম সারিতে রাখা যায়। আরো খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, বায়োগ্যাস প্লান্টের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি। ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ায় বায়োগ্যাস ব্যবহারে অনেকেই উৎসাহ বোধ করেন। আবার প্লান্ট থেকে উৎপন্ন উপজাত জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় ফসলি জমিতে; মাছের পরিপূরক খাদ্য হিসেবেও এর চল রয়েছে। ফলে বর্জ্য থেকে প্রস্তুত জ্বালানি (তথা বায়োগ্যাস) ব্যবহার নিয়ে যে ধরনের মনোভাব শুরুতে দেখা দিয়েছিল, তা আজ অনেকটাই তিরোহিত।

বায়োগ্যাসের সুবিধাভোগীর মাঝে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীর বিভাগের গ্রামাঞ্চলের অধিবাসীদের আধিক্য লক্ষ্যণীয়। এর আওতা অন্যান্য অঞ্চলেও বাড়ানো দরকার। কেননা আজ শুধু জ্বালানির প্রয়োজনে নয়, পরিবেশ দূষণ রোধের কৌশল হিসেবেও বায়োগ্যাসের কার্যকারিতা। এর সঙ্গে পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুটিও। এক্ষেত্রে পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে। সে উদ্দেশ্য পূরণে বিসিএসআইআর, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (পিডিএ), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি), পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল), গ্রামীণ শক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে সমন্বয় বিধান জরুরি। বায়োগ্যাস প্লান্টের জনপ্রিয়তা আরো বাড়াতে চাইলে অবশ্যই এক্ষেত্রে প্রাযুক্তিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে; বৃদ্ধি করতে হবে প্লান্ট সক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা। এ ধরনের প্লান্ট ব্যবহারে গ্রাহক পর্যায়ে ইচ্ছাকৃত হোক বা না হোক, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে কিছু। আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, সঠিক অনুশীলন না থাকায় বিশেষত বর্ষা মৌসুমে প্লান্টে বৃষ্টির পানি ঢুকে বর্জ্য ছড়িয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে দেখা যায় কোনো কোনো গ্রাহককে। ফলে প্লান্ট রক্ষণাবেক্ষণে গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কর্তৃপক্ষের মনোযোগ বৃদ্ধিই কাম্য। এতে বায়োগ্যাসের সুবিধাভোগীর আওতা বাড়বে বৈকি।

মাধ্যমিকে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ

বাস্তবায়নে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক কর্তৃপক্ষ

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মোতাবেক ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে আসছে ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে। ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ফরম পূরণ করে বিলম্ব ফি (১০০ টাকা) ছাড়া নির্ধারিত ফি বোর্ডে জমা প্রদানের কথা। এর জন্য বর্ধিত সময়সীমা ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ পরিমাণ অর্থ সবাইকে প্রদান করতে হয় না। আবার যেসব পরীক্ষার্থীকে ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে হয় না বা যারা নিয়মিত পরীক্ষার্থী, তাদের বেলায় নির্ধারিত ফি স্বভাবতই কম। তবে সেগুলো আমলে নিলেও কোনোক্রমেই ১ হাজার ৪০০ টাকার বেশি ফি বোর্ডকে দিতে হবে না ঢাকা বোর্ডের আগ্রহী শিক্ষার্থীদের। অত্যন্ত দুঃখজনক যে, শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা সত্ত্বেও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণকালে কমবেশি বাড়তি ফি আদায় করা হচ্ছে প্রায় দেশজুড়েই এবং এক্ষেত্রে ঢাকার পরিস্থিতি অগ্রগণ্য বলে প্রতীয়মান। উক্ত ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের নাকি আটগুণ পর্যন্ত ফি প্রদানে বাধ্য করছে এখানকার কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশ এক প্রতিবেদনে জ্ঞাত হয়ে ফরম পূরণবাবদ অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ শুভ উদ্যোগের প্রশংসাই করবেন সবাই।

উপরোক্ত নির্দেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়েও প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে বোর্ড চেয়ারম্যানদের। লক্ষ্যণীয়, একশ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ নতুন নয়। অতীতে এ ধরনের ঘটনা রোধে বোর্ডের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাও নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে বোর্ড শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুবিধা অসুবিধা কোনো বিষয়ই বিবেচনায় নেয় নি, তেমন কথাও বলা যাবে না। বরং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান একটি জাতীয় দৈনিকের কাছে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে স্কুলগুলোর আর্থিক অবস্থার প্রতি তার সহানুভূতিই প্রকাশ পায়। তিনিও বিস্মিত হয়েছেন্ন, আটগুণ পর্যন্ত বাড়তি ফি আদায় বিষয়ে। এখানে বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ যে অপ্রতুল সে কথা আমাদের বাজেটের পরও স্মরণ করা উচিৎ। এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে দেশি-বিদেশী প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীদের যতটা মনোযোগ রয়েছে, মাধ্যমিক পর্যায়ে সেটি দৃশ্যমান। ফলে এসএসসি ফরম পূরণে পিকনিক, স্পেশাল কোচিং প্রভৃতি খাতের ব্যয়ে এর কোনো প্রভাব রয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি এ বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হবে যে, শিক্ষার চেয়ে মুনাফার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছে একশ্রেণীর প্রতিষ্ঠান। এমন পরিস্থিতিতে অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিক্ষা বোর্ডকে শক্ত অবস্থানেই দেখতে চাইবেন সবাই।

সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ

প্রক্রিয়া দ্রুততর সময়ে সম্পন্ন করুন

আন্তর্জাতিকভাবে বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ যে আয়তনের বর্ধিত সমুদ্রসীমা লাভ করেছে সেটি নিঃসন্দেহে বিরাট অর্জন। কথা হলো, এটি তখনই দৃশ্যমান হবে যখন তা সরাসরি স্থানীয় অর্থনীতিকে সুফল প্রদানে সক্ষম হবে। সেজন্য উপযুক্ত কর্মসূচি হাতে নেয়া চাই। এক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও প্রক্রিয়াটির বাস্তবত অগ্রগতি নিয়ে কিছু সংশয় রয়েছে অনেকের। মীমাংসার পর স্ব স্ব ব্লকে খনিজ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে অনুসন্ধান কাজ ভারত ও মিয়ানমার শুরু করে দিলেও এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে বলে সম্প্রতি প্রতিবেদন পরিবেশন করে সহযোগী এক দৈনিক। এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মত হলো, সমুদ্রে গ্যাস আহরণে আমাদের আরো সক্রিয় ভূমিকা নেয়া উচিত। নতুন করে বলার দরকার নেই, বর্ধিত সমুদ্র সীমা থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের প্রভাব কেমন পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। স্থানীয় একাধিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিশেষত মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী ব্লকগুলোয় গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পেট্রোবাংলা মাল্টিক্লেইন সিসমিক সার্ভের উদ্যোগ নিয়েছে বটে; ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত তেমন কোনো কাজই নাকি শুরু হবে না। অবশ্য এত কিছু মধ্যেও আশার আলো মিলেগতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক খবরে। সেটি হলো, সমুদ্রসম্পদ সুরক্ষায় নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার। উদ্যোগটি প্রশংসনীয় হলেও প্রক্রিয়াটি দ্রুততর সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। তাতে স্থানীয় অর্থনীতিই লাভবান হবে বেশি।

সরকার সমুদ্রসম্পদ আহরণে তাড়াহুড়োর চেয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান। স্থানীয় আইনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার প্রচেষ্টাও লক্ষ্যণীয়। তবে বর্ধিত সমুদ্রসীমায় মৎস সম্পদ আহরণের মতো ইস্যুগুলোয় মনোযোগ বোধকরি কম। এদিকে সরকারের সুদৃষ্টিই কাম্য। আইন প্রণয়নের কাজটি জটিল এবং সেজন্য স্বভাবতই সময় দরকার। ফলে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি বর্ধিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে কীভাবে মৎস সম্পদ আহরণ করা যেতে পারে, সেখানে পর্যটনের বিকাশ সম্ভব, কোন উপায়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ জনবল গড়ে তোলা যায়, সেসব নিয়ে এখন থেকেই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। নইলে আইন প্রণীত হওয়ার পর আবার ব্লু ইকনোমির সুফল পেতে চলে যাবে বাড়তি সময়। তার সঙ্গে আইন প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের স্বার্থ নিশ্চিত করা জরুরি। সে লক্ষ্যে নিরাপত্তা আলোচনার বাইরে অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে উপযুক্ত পক্ষগুলোর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার।

বিআইপিসির প্রথম সম্মেলন

আগ্রহীদের কী আশ্বস্ত করতে পেরেছে সরকার?

শুক্রবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ইন্টারনেট প্রফেশনালস কমিনিটির (বিআইপিসি) সম্মেলন। বলা বাহুল্য এ স্ব-উদ্যোক্তাদের প্রায় সবাই তরুণ। আরো খেয়াল করার মতো বিষয়, দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইন্টারভিত্তিক পেশাজীবিদের একত্র হয়ে নিজ সুবিধা-অসুবিধার কথা আলোচনার ঘটনা এই প্রথম। এ ধরনের আয়োজন সংশ্লিষ্টদের মনে অনুপ্রেরণা জোগাবে নিঃসন্দেহে। পাশাপাশি তা নীতি প্রণয়নে সঠিক পথ দেখাবে, এমন প্রত্যাশাও থাকবে সবার। জানা যায়, বর্তমানে আনুমানিক ৭ লাখ বাংলাদেশীর জীবিকার উৎসে পরিণত হয়েছে ইন্টারনেট। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নতুন করে ব্যাখ্যার দরকার। আমাদের সামনেই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ রয়েছে- ভারত। সরকারও এ বিষয়ে উদাসীন সে কথা বলা যাবে না। তার সঙ্গে বেসরকারি খাতে বেসিস ও বিসিসি’র সংগঠনের অব্যাহত প্রচেষ্টা তো আছেই। তা সত্ত্বেও গতকাল বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে প্রকাশ তথ্যানুযায়ী, তিন বছরের মধ্যে জিডিপি’তে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবদান ১ শতাংশে উন্নীতকরণের যে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা, সেটি কতটা বাস্তবতসম্মত তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের। ফলে সরকারের উচিত হবে, সম্ভাবনা বিকাশের চ্যালেঞ্জ দূর করে খাতটিকে দ্রুত এগিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া।

তথ্যপ্রযুক্তি খাত এখন আমাদের জিডিপি’তে ১ শতাংশ অবদান রাখতে পারছে না। কখনোই তা ঘটবে না, এমনটাও নয়। কিন্তু কথা হলো, ওই অবদান ১ শতাংশে তুলতে যে মাত্রায় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি সেটি দেখা যাচ্ছে না। কী এক অদৃশ্য বাধায় যেন বারবার ব্যাহত হচ্ছে এ খাতের অগ্রগতি। সুলভে দ্রুত গতির ইন্টারনেট প্রাপ্তি এখনো আসে নি হাতের নাগালে। সরকারের পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে আশার বাণী শোনা গেলেও গ্রাহকরা আশ্বস্ত নন বলে অনেকের ধারণা। উপরোক্ত সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী আরেকবার অঙ্গীকার করলেন, ২০১৭ সালের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট নিয়ে যাওয়া হবে। ইন্টারনেটভিত্তিক পেশাজীবিরা এ বক্তব্যের কার্যকারিতাই দেখতে চাইবেন। প্রযুক্তির সুফল পেতে দ্রুত গাজীপুর হাইটেক পার্কও চালু করা দরকার। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অনলাইনে বিশেষত আর্থিক লেনদেনের প্রক্রিয়া আরো সহজ এবং নিরাপদা করে তোলা। আলোচ্য সম্মেলনে একাধিক পেশাজীবি বলেছেন, বিদেশ থেকে উপার্জিত অর্থ দেশে আনতে এখনো বেগ পেতে হচ্ছে। জিডিপি’তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবার বৃহত্তর অবদান নিশ্চিতকরণে এসবের প্রতি সরকারকে মনোযোগ বাড়াতে হবে বৈকি।

প্রথম ভারত-বাংলাদেশ হাইকমিশনারদের শীর্ষ বৈঠক

ভারতের উচিত বাংলাদেশকে প্রতিদান দেয়া

নয় দফা ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শনিবারই শেষ হয়েছে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ হাইকমিশনার’স সামিট; ২০১৬ সালে দ্বিতীয় সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে ভারতে। আলোচনা সভাটি একাধিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে কূটনীতিকদের এমন বৈঠকের কথা আর শোনা যায় না। সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারতের হাইকমিশনারদের নিয়ে যে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে এ প্রভাব বলয়টির কার্যকারিতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। তাতে জিটুজি’র (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) বাইরে পিটুপি (পিপলস টু পিপলস) সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। আর এর সুপ্রভাব নিশ্চুয়ই পড়বে দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে। শীর্ষ বৈঠকটিতে উভয় দেশের মৈত্রী শক্তিশালীকরণের পাশাপাশি অমীমাংসিত নানা বিষয়ের নিষ্পত্তি এবং দ্বিপক্ষীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণে জোর দেয়া হয়। একে সচেতন নাগরিকরা শুভ লক্ষণ হিসেবেই দেখতে চাইবেন এবং সম্মেলনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করবেন।

তবে শুধু করণীয় নির্ধারণ হয়, কর্মসূচি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে সে বিষয়েও অভিজ্ঞ এ কূটনীতিকদের সুপরামর্শ কামনা করেন সবাই। নিরাপত্তা ইস্যু বাদ দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শক্তিশালী করা যাবে না। অভিন্ন স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে সম্মিলিতভাবেই উদ্যোগ নিতে হবে এ দুই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারকে। অভিজ্ঞতা ও কারিগরি জ্ঞান বিনিময় করে তারা পরস্পরকে সহায়তা জোগাতে পারে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন থেকে শুরু করে আরো অনেক বিষয়ে। লক্ষ্যণীয়, উভয় দেশের মাঝে সম্পর্ক বলিষ্ঠ করার সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র রয়েছে বেশ কয়েকটি। অথচ সেগুলোর সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণের দিকে দৃষ্টি কম। কেউ কেউ মনে করেন, সেজন্যও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে খানিকটা আস্থার ঘাটতি বিদ্যমান। নিঃসন্দেহে এ বিষয়ে চলতি ও বিগত শাসনামলে বলার মতো একাধিক বড় অর্জন রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের; মৈত্রী দৃঢ়করণে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ভূমিকার কথাও অনেকের স্মরণে থাকবে। দেশটিতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদীর সরকারও বাংলাদেশ ইস্যুতে ইতিবাচক বলেই মনে হয়। তবে এর সদ্ব্যবহারে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। উদাহরণ হিসেবে তিস্তা পানি চুক্তির কথা বলে যেতে পারে। বিশেষভাবে খেয়াল রাখা দরকার যেন দ্বিপক্ষীয় সুসম্পর্ক সংকীর্ণ রাজনীতির শিকার নয়। আরেকটি বিষয় মনে করিয়ে দেয়া দরকার, যে কথাটি গত বছর আগস্টে ভারতীয় এক টিভি চ্যানেলে সাবেক হাইকমিশনার দেব মুখার্জি বলেছিলেন- বাংলাদেশকে সব সময় ভারতের কাছে হাত পাততে হবে কেন? বাংলাদেশে যা ও যতটুকু প্রাপ্য, সেটা দিতেই হবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঠিক করার প্রধান দায়িত্ব ভারতের এবং অগ্রনী হতে হবে তাদেরকেই।

মহাসড়ক

আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে

গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ ‘দেশে আন্তর্জাতিক মানের মহাসড়ক মাত্র ৪ শতাংশ’ শিরোনামের খবরটি এরই মধ্যে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। তবে প্রতিবেদনটির বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। জানা যাচ্ছে, ১ হাজার ৭৬২ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক থাকলেও সব শর্ত পূরণ করে এমন কোনো উন্নত মহাসড়ক নেই দেশে! প্রথম শ্রেণীর সড়ক অবশ্য রয়েছে ৪ শতাংশের কাছাকাছি। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কেননা এর পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেণীর তুলনায়ও নিম্ন মানের সড়ক রয়েছে মোট সড়ক-মহাসড়কের প্রায় ৫ শতাংশ। স্পষ্টত দ্বিতীয় শ্রেণীর সড়কই বেশি এখানে। ইউএন এসক্যাপের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এডিবি ইনস্টিটিউটে প্রস্তুতকৃত ‘কানেক্টিং সাউথ এশিয়া অ্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়াঃ আ বাংলাদেশ কান্ট্রি স্টডি’র অন্যান্য তথ্য এবং ‘বাংলাদেশ টেকনিক্যাল রিপোর্ট’ আমলে নিতে চিত্রটি আরো মলিন দেখায় বৈকি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, মহাসড়কগুলোকে চার লেনের হতে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্প এখনো অনিষ্পন্ন। ফলে এ বলেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে যে, দু’লেনের ওপরে কোনো মহাসড়ক নেই বাংলাদেশে। রাস্তার মাঝে বিভাজক থাকার শর্ত রয়েছে আন্তর্জাতিক নিয়মে। সেটি থাকলেও কিন্তু ৭৭ শতাংশ মহাসড়কে বিভাজক রেখা রয়েছে এখানে। আরো আছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধক ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা। যেসব সড়কে বিপদজনক বাঁক রয়েছে, সেখানে চালকদের জন্য বাড়তি সমস্যা তৈরি করে রাস্তার পার্শ্বস্থ গাছপালা। উপযুক্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত করে খোদ সড়ককেই। তদুপরি অপ্রশস্ত সড়কে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক যান চলাচলের পৃথক ব্যবস্থা ও সিগন্যাল বা বাতি না থাকায় এবং রাস্তার ওপর অনিয়ন্ত্রিত জনচলাচল এমনকি অস্থায়ী হাটবাজার বসানোর বিষয়টিও কিন্তু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অগ্রাহ্য করে। এ অবস্থায় অন্তত মহাসড়কগুলোর মান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সুদৃষ্টি দেয়া উচিত সরকারের।

সে লক্ষ্যে নিজেদের তাগিদও থাকা চাই। নৌ ও রেল আমাদের জন্য সম্ভাবনাময় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল। যে কারণেই হোক, স্বাধানীতার অব্যবহিত পরে এ দুই ক্ষেত্রে অবহেলার পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এর কোনো উপকারই বাংলাদেশের অর্থনীতি পায় নি বা পাচ্ছে না, সে কথা বলা যাবে না। তবে এসব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার চেয়ে আমাদের বেশি করে মাথায় রাখতে হবে যে, বর্তমানে দেশে আনুমানিক ৮০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন হয় সড়ক পথে; এ দ্বারা পণ্যও পরিবহন হয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। আবার নিম্ন মানের সড়ক বাড়িয়ে দেয় মারাত্মক দুর্ঘটনা সংঘটনের ঝুঁকি। সে বিবেচনা থেকেও মহাসড়কের মানোন্নয়ন জরুরি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। অভ্যন্তরীণ মহাসড়কের মান নিশ্চিত না হলে এশিয়ান হাইওয়ের মতো মহাসড়ক থেকে পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সুবিধা ওঠানো অত্যন্ত কঠিন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কন্টেনারবাহী ট্রেলার চলাচলের অভিজ্ঞতা তেমন কোনো শুভ বার্তা দেয়া না। এদিকে কারো কারো ধারণা, আগামীতে নির্ভরযোগ্য মানসম্মত সড়কের ওপর আঞ্চলিক বাজারগুলোর সংহতি নির্ভর করবে অনেকাংশে। এ লক্ষ্যে আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়া না হলে পিছিয়ে পড়বে আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া। এ অবস্থায় মহাসড়কের উন্নয়নে সরকারকে বিনিয়োগ ও প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে বৈকি।

আঞ্চলিক সংযোগ থেকে বাণিজ্যিক সুফল পেতে

অবকাঠামো উন্নয়ন দ্রুত নিশ্চিত করুন

মূলত ২০০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির পর থেকে এশিয়ার ওপর বাকিদের মনোযোগ বেড়েছে বললে অত্যুক্তি হয় না। আন্তর্জাতিক বাজারে এশিয়ার অবস্থান বোঝার সাম্প্রতিকতম ভালো উদাহরণ হতে পারে ক’দিন আগে আয়োজিত জি-২০ সম্মেলন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এশিয়ার এ চমকপ্রদ উত্থানের পেছনে বিরাট ভূমিকা রেখে চলেছে আঞ্চলিক বাণিজ্য। খেয়াল করার মতো বিষয়, দক্ষিণ এশিয়ার তথাকথিত প্রবৃদ্ধি অঞ্চলের অভ্যন্তরে অবস্থান বাংলাদেশের। অথচ শুধু আমরা কেন, সার্কের অর্থনৈতিক সম্ভবনা থেকে তেমনভাবে সুবিধা তুলে নিতে পারে নি বলা যায় কোনো দেশই। নর্থ আমেরিকান ট্রিটি অ্যাগ্রিমেন্ট (নাফটা) বা এ ধরনের অন্যান্য আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাকে আমলে নিয়ে বলা যায়, বহুপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সার্কের ব্যর্থতা তার রাজনৈতিক অকৃতকার্যতার চেয়ে কম নয়। নতুন করে ব্যাখ্যার নিষ্প্রয়োজন যে, সেজন্য অবকাঠামোগত দুর্বলতা বহুলাংশে দায়ী। এরই মধ্যে গতকালের বণিক বার্তায় খবর রয়েছে, আন্তর্জাতিক কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের সরকার রোডমাস্টার প্ল্যানের আওতায় যেসব প্রকল্প চিহ্নিত করেছিল, সেগুলোর অবস্থা হলো- কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ সংক্ষেপে দুটি বাদ দিয়ে বাকি প্রকল্পগুলো পড়ে আছে প্রাথমিক পর্যায়েই। এমন পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। সামগ্রিক উন্নয়ন দ্রুততর করে তোলার স্বার্থে এর প্রতি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টিই জরুরি এখন।

লক্ষ্যণীয়, আলোচ্য প্রকল্পগুলোর মাঝে যে দুটি ব্যতিক্রম- নানা বিতর্ক ঘিরে আছে সেগুলোও। তার মাঝে ঢাকা-চটগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বৃহত্তম বললে ভুল হবে না। তিন দফায় বাস্তবায়ন মেয়াদ বৃদ্ধির পরও নাকি প্রকল্পটির ৪০ শতাংশ কাজ বাকি। সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, অবশিষ্ট কাজ সম্পন্নের জন্য আরো বছরখানেক লেগে যেতে পারে। দ্বিতীয় প্রকল্পটি জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেনে উন্নীতকরণ সংক্রান্ত। অন্যান্য প্রায় নিষ্ক্রিয় প্রকল্প থেকে একে সরিয়ে রাখার কারণ- এর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এডিবির অর্থায়নে আগামী বছর এর মূল কাজ দৃশ্যমান হতে পারে। হলপ করে বলা যাবে না, আঞ্চলিক সংযোগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার মনযোগী হয়। বরং এক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণও এক গুরুত্বপূর্মণ ইস্যু। অস্বীকার করা যাবে না, আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণে অর্থায়ন জুগিয়েছে ভারত। দেশটি আশুগঞ্জ নৌবন্দর উন্নয়নেও নাকি সহায়তা দিতে চায় নৌ কানেক্টিভিটি বৃদ্ধির লক্ষ্যে। সমস্যা হলো, অনেক সময়ই এসব প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবতার সামঞ্জস্য মিলছে না। এর প্রতি সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ ফেরাতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার কথা বিবেচনা করে কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও চীনের ইউনান প্রদেশের মাঝে উপ-আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এর ভিত্তি আবারা ছিল আঞ্চলিক বাণিজ্য বিন্যাস। রোড মাস্টারপ্লান এর সঙ্গে সমন্বয় করা গেলে ভালো। একই সঙ্গে রেল ও নৌ যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের বেলায়ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রাখা দরকার। বাংলাদেশের অবস্থান ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদক্ষেপ নেয়া গেলে এ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করা সম্ভব। কিন্তু সেজন্য দূরদর্শী পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা অন্য কিছু কৌশলগত অবস্থানে বাংলাদেশের অবস্থান নাজুক বলেও প্রতীয়মান হয়েছে কারো কারো কাছে। তবে সেক্ষেত্রেও আঞ্চলিক সংযোগ দৃঢ়করণের বিকল্প নেই।

খাবার লবণে আয়োডিন

পরিমিত মাত্রায় উপস্থিতি নিশ্চিত করুন

বুধবার রাজধানীতে আয়োজিত এক কর্মশালায় দেশে বাজারজাতকৃত লবণের ৫৮ শতাংশে পরিমিত মাত্রায় আয়োডিন উপস্থিতির খবর দুশ্চিন্তার বৈকি। কেননা শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বিকাশে আয়োডিন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান; পূর্ণ বয়স্ক মানুষের বেলায়ও নিয়মিতভাবে পরিমিত আয়োডিন গ্রহণ করা আবশ্যক। এর অভাবে ইন্টেলেকচ্যুয়াল ডেভেলপমেন্ট ডিসর্ডারের (আইডিডি) মতো রোগ দেখা দিতে পারে। আবার অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টিও অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তাই বিশেষজ্ঞরা পরিমিত মাত্রায় আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে বলেন; প্রাকৃতিক উৎস থেকে সেটি নেয়া অসুবিধাজনক প্রতিভাত হওয়ায় জনকল্যাণে তা খাদার লবণের সঙ্গে মেশানোর সিদ্ধান্তও হয় এক সময়। দুঃখজনক যে, এ খাবারের লবণেও নাকি এখন পরিমিত মাত্রায় আয়োডিন মেশানো হচ্ছে না। ফলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব চলবে না। খাবার লবণে আয়োডিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ও দেশিবিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা সহায়তা কম দিয়েছেন বলা যাবে না। বরং স্থানীয় লবণ শিল্প যাতে এর প্রতি যত্নবান হয়, সে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মেয়াদি সুবিধাও দেয়া হয় বলে জানা গেছে। তার পরও ৪২ শতাংশ লবণে আয়োডিন নেই কেন, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) আশা করছে, আনুমানিক ১৬ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে প্রায় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন লবণ উৎপাদন হবে চলতি বছর। এক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্যণীয়। এ অবস্থায় লবণ শিল্পের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি বটে। পরিসংখ্যান দেখলে স্পষ্ট হয়, সব ব্যবসায়ী ওই অপকর্মটি করছেন না; উল্টো একশ্রেণীর লবণ ব্যবসায়ীর অপকর্মে দুর্নামের ভাগীদার হচ্ছেন বাকি সবাই। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষ এমনকি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সংগঠনগুলোর পক্ষে কিন্তু লবণে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আয়োডিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা কঠিন। সেজন্য সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে; যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। কর্মশালাটিতে আয়োডিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ আইন, ১৯৮৯ সংশোধনের দাবি ওঠে। এটি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়া দরকার। কেননা আইনগত দুর্বলতা অনৈতিক ব্যবসায়িক চর্চার সুযোগ বাড়িয়ে দেয়। ফলে সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো রকম বিলম্ব দেখাবে না, এই আমাদের কাম্য।

আশঙ্কাজনক পর্যায়ে তামাদি জীবন বীমা পলিসি

উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে হবে আইডিআরএ-কেই

জীবন বীমা পলিসি তামাদি হতেই পারে। এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বরং বিভিন্ন দেশে ২০ শতাংশ পর্যন্ত তামাদি জীবন বীমা পলিসি নিরাপদ বলেই গণ্য। তবে গতকাল বণিক বার্তায় যে খবর প্রকাশ হয়েছে, সেটি পাঠমাত্র সচেতন পাঠক বুঝতে পারবেন এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। জানা যায়, স্থানীয় কোনো কোনো বীমা প্রতিষ্ঠানের তামাদি পলিসির পরিমাণ ৮০ শতাংশেরও বেশি! কয়েকটি কোম্পানি আবার নতুন যে পলিসি বিক্রি করে তার পরিমাণ তামাদি হওয়া পলিসির চেয়ে কম। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ১৫টি জীবন বীমা কোম্পানি বিক্রি করেছিল ১৪ লাখ ৭ হাজার ৯৭৪টি নতুন পলিসি; এর বিপরীতে একই বছর তামাদি হয়েছে ১১ লাখ ৭৩ হাজার ১৩৩টি। আবার এর মধ্যে নতুন ২৩ হাজার ৬২টি পলিসি বিক্রির পাশাপাশি ৩৯ হাজার ৪৫৭টি পলিসি তামাদি হয়েছে এক কোম্পানির। লক্ষ্যণীয়, পলিসি তামাদি হলে কোম্পানির সাময়িকভাবে লাভ হয়। এ মুনাফার প্রলোভনেই নাকি একশ্রেণীর উর্ধ্বতন বীমা কর্মকর্তা পলিসি নবায়নে গ্রাহকদের চাপ দিতে খুব একটা তাগাদা দেন না মাঠকর্মীদের। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের অধিক সতর্কতা এবং কঠোর নজরদারিই দেখতে চাইবেন সবাই। আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু বীমা খাতের প্রয়োজন বাড়বে বৈ কমবে না।

খেয়াল করার মতো বিষয়, নিয়মানুযায়ী প্রথম বর্ষে আদায় হওয়া প্রিমিয়ামের ওপর কমিশন পান বীমা এজেন্টরা; নবায়ন প্রিমিয়ামের বেলায় বর্ধিত সময়সীমা দুই বছর পর্যন্ত। কিন্তু ৩ বছর পর থেকে এজেন্টরা কোনো কমিশন পাবেন না সংশ্লিষ্ট প্রিমিয়াম থেকে। এর ফলে সৃষ্ট অনাগ্রহও পলিসি ব্যাপকভাবে তামাদি হওয়ার অন্যতম কারণে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত। অন্যদিকে তামাদি হওয়ার পরও গ্রাহক ৫ বছর পর্যন্ত গ্রাহক সুযোগ পান পলিসিটি সচল করার। অথচ এর প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ নাকি সামান্যই। সেজন্য সচেতনতার অভাবের সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর বিরূপ প্রভাব রয়েছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা চাই। বীমা তামাদি হওয়ার মাত্রা বাড়তে পারে অদক্ষ ও শিক্ষিত এজেন্টের কারণেও। এদের নিয়ে কিন্তু অভিযোগ রয়েছে অনেক। সেসব দুর্বলতা দূরীকরণে বীমা এজেন্টদের মানসম্মত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আর এ দায়িত্ব এড়াতেও পারে না আইডিআরএ।

সরকারি হিমাগার নির্মাণ ব্যয়

অর্থ অপচয় বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

মূলত ভিত্তি বীজ মজুদে সক্ষমতা ও মানসম্পন্ন আলু বীজ সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে আনুমানিক ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪টি হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এগুলোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা কঠিন। বলা যায়, বাজার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এসব নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্ত থেকে যে কেউ বলতে পারবেন, দেশে আলু উৎপাদন বেড়েছে ব্যাপকভাবে। তবে এর অধিকতর সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আগের বছরের সংরক্ষণ সুবিধাদির প্রভাব সরাসরিই পড়ছে পরের বছর আলু উৎপাদনে। সেখান থেকে এমন শঙ্কা সৃষ্টি স্বাভাবিক যে, সংরক্ষণের অভাবে পিছিয়ে পড়তে পারে সম্ভাব্য উৎপাদন। এমন পরিস্থিতিতে বিএডিসি কর্তৃক নতুন ৪টি হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। অবশ্য সমস্যা দেখা দিয়েছে, হিমাগারগুলোর প্রাক্কলিত ব্যয় নিয়ে। অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রেরিত এক চিঠিতে উল্লিখিত ব্যয়ে অপচয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) চেয়ারম্যান। সেক্ষেত্রে কীভাবে কমপক্ষে ৬০ কোটি টাকার অপচয় রোধ করা সম্ভব, সে পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। আর এ খবর গতকালের বণিক বার্তার।

আশংকানুসারে সরকারের ৬০ কোটি টাকাই জলে যাচ্ছে, এ কথা হলপ করে বলা যায় না। কেননা গৃহীত প্রকল্পে উল্লিখিত হিমাগারগুলো সাধারণ নয়– বিশেষায়িত। তদুপরি কারিগরি কমিটির অনুমোদনের পাশাপাশি পূর্ব ব্যয়ের অভিজ্ঞতা আমলে নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এতেই বেড়েছে ব্যয়। তা সত্ত্বেও বিসিএসএ বলছে, ৪টি হিমাগারের ব্যয় ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। মানের সঙ্গে কোনো আপোষ চলবে না- এ আদর্শ যেমন সামনে রাখতে হবে, তার সঙ্গে এও মাথায় রাখা উচিত যে, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। ফলে সরকারের কাছে রক্ষিত জনগণের অর্থের প্রতিটি পয়সার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারও এটিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। সেজন্য সুযোগ থাকলে প্রকল্প মূল্যায়নসহ সার্বিক প্রক্রিয়ার কোথায় কোথায় ঘাটতি রয়েছে, সে বিষয়ে বিসিএসএ’র পরামর্শ নিতে পারে বিএডিসি। তাতে কোথাও কোনো ভুল বোঝাবুঝি আছে কিনা, সেটিও চিহ্নিত করা যাবে। আরেকটি বিষয়, প্রকল্পের শুরুতে অনেকে বিশেষজ্ঞই পরামর্শ দেন এটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে সম্পন্ন করতে। এটিও কিন্তু খতিয়ে দেখা যায়।

গভীরতর সংহতির লক্ষ্য সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে

বাণিজ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চাই

শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোর মাঝে গভীরতর সংহতি গড়ার লক্ষ্য নিয়ে গতকাল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হয়েছে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। ২০১১ সালে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত ১৭তম শীর্ষ সম্মেলনে ২০ দফা ঘোষণা দেয়া হয়। সেখানে শস্য ও বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয় সদস্য দেশগুলোর মাঝে ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি, সমুদ্রে দস্যু দমন, বাণিজ্যে নানা ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূরীকরণের কথা। এ কথাও ছিল যে, সদস্যদের মাঝে সংবেদনশীল পণ্যের তালিকা শূন্যে নামিয়ে আনান হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেসব বিষয়ে সার্কের জনগণ কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি দেখেন নি। আঞ্চলিক পর্যায়ে কিছু যোগাযোগ বেড়েছে বটে, কিন্তু বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সেগুলোর প্রত্যক্ষ অবদান কী, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। এরই মধ্যে নির্ধারিত সময় অতিক্রম করে ম্যারাথন বৈঠক চালিয়েও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা চুক্তি সইয়ের ব্যাপারে একমত হতে পারেন নি সার্ক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তবে অনেকে বলছেন, এক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নতুন করে আশার বাণী শোনালেও শোনাতে পারেন। খেয়াল করার মতো বিষয়, ১৯৮৫ সালে সার্ক প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় সংগঠনটি মূলত আশার ভেলা হয়েই থাকছে। কার্যকারিতার দিক থেকে এর পারফরম্যান্স হতাশাজনক বৈকি। বলা বাহুল্য, তার অন্যতম কারণ সদস্যদের মাঝে পারস্পরিক আস্থার ঘাটতি। সেদিক থেকে এবারের শীর্ষ সম্মেলনে শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আঞ্চলিক সংহতি গভীরতর করে তোলার যে আহ্বান জানানো হয়েছে তা সংশ্লিষ্টদের অধিক মনোযোগ প্রত্যাশা করে বৈকি। তাই প্রত্যাশাও থাকবে, এবারের শীর্ষ সম্মেলনটি অন্যগুলোর চেয়ে অধিক সাফল্য বয়ে আনুক।

অনেকের বিশ্বাস, সার্কের সাফল্যের পথে এক বিরাট প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। আফগানিস্তান যোগ দেয়ার পর, সে জটিলতা আরো বাড়ল বলে মন্তব্য করেছিলেন একাধিক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। কথা হলো, আর কতদিন এভাবে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের বেদিতে বলি হবে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা? এখনই কী বিশ্বের বুকে অঞ্চল হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের সময় নয়? সার্ককেই এসব প্রশ্নের সদুত্তর খুঁজে বের করা উচিত। নিঃসন্দেহে আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ভিন্ন সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে শীর্ষ সম্মেলনটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছে তা প্রণিধানযোগ্য। তিনি সব মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে সার্ককে গতিশীল করে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তার সঙ্গে আঞ্চলিক পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তা, শ্রমবাজার সম্প্রসারণ, বাজার উপযোগী ও দক্ষ পর্যাপ্তসংখ্যক মানবসম্পদ সৃষ্টি, টেকসই প্রবৃদ্ধির স্বার্থে জ্বালানি নিরাপত্তা প্রভৃতির দিকে সার্ক নেতৃবৃন্দের যে মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, সেটি সফল হোক- এমন কামনাই থাকবে আমাদের। এক্ষেত্রে আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা এবং বিশেষত সমুদ্র থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে অধিকতর আঞ্চলিক সহায়তা-সহযোগিতা। লক্ষ্যণীয়, জলবায়ু পরিবর্তন কেবল শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ আর বাংলাদেশের বিষয় নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকলে সেটি নেপাল-আফগানিস্তানেও কিন্তু পরোক্ষভাবে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সার্ককে। পাশাপাশি মনে রাখা দরকার, অব্যাহতভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা না নেয়া হলে এ ধরনের ইস্যুর নিষ্পত্তি করা কঠিন।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হ্রাস

সমস্যা নির্ণয়পূর্বক ব্যবস্থা নিন

২০১১ সালে চালুর পর থেকে বাংলাদেশে মোবাইল ভিত্তিক আর্থিক সেবার যে বিকাশ হয়েছে তার তুলনা কমই রয়েছে বিশ্বে। সাফল্যের কারণে আমাদের এখানে ব্যবহৃত মডেলটি নাকি আফ্রিকায়ও প্রয়োগ করা হচ্ছে। সাধারণভাবে একটা ধারণা ছিল বা আছে যে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো প্রাযুক্তিক সেবা হয়তো সাধারণ মানুষের মাঝে সেভাবে জনপ্রিয় হতে পারবে না। সেটি নিয়েও বিকল্প চিন্তাভাবনার সুযোগ করে দেয় ক’দিন আগে সহযোগী দৈনিকে প্রকাশ এক প্রতিবেদন; খবরের ভিত্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান পরিচালিত জরিপ। তাতে বলা হয়, রাজধানীর আনুমানিক ৭৬ শতাংশ রিকশাচালক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেন। নানা দুর্বলতা সত্ত্বেও গবেষণাটিকে সামগ্রিক চিত্রের আংশিক বাস্তবতা হিসেবে ধরে নেয়াই যায়। নিঃসন্দেহে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ক্ষমতায়িত করেছে অন্তর্ভুক্তিমূলক এ ব্যাংকিং সেবা। এরই মধ্যে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ সংশ্লিষ্ট এক খবর ভাবনার বৈকি। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এজেন্ট, গ্রাহক ও সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। তার সঙ্গে বেতন প্রদান, ইউটিলিটি বিল পরিশোধসহ সব ধরনের সেবা কমার তথ্য মিলছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের উপাত্তে।

সংশ্লিষ্টরা ঘটনাটিকে সাময়িক প্রবণতা হিসেবেই দেখতে চাইছেন। বস্তুত সেপ্টেম্বরে লেনদেন বেশি হওয়ার একাধিক কারণ ছিল। ওটা ঈদের সময় হওয়ায় স্বভাবতই বাড়ে অভ্যন্তরীণ লেনদেন এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ। আবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের টিকেট বিক্রির জন্য লেনদেন বেশি হয় মোবাইল ব্যাংকিং সেবায়। পরবর্তী নিম্নমুখী প্রবণতার জন্য অন্যান্য কারণের পাশাপাশি এজেন্টদের ওপর হামলা, বিভিন্ন সন্দেহজনক লেনদেনের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নজরদারির প্রভাব স্বীকার করেন অনেকে। তা সত্ত্বেও নিছক সাময়িক প্রবোণতা ১৮ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেন হ্রাসের খবর উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কেননা এক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা আগে থেকেই বলা হচ্ছে। সেগুলো অপসারিত হলে মোবাইলে আর্থিক সেবার অধিকতর বিকাশ সম্ভব। তাছাড়া খেয়াল করার মতো বিষয়, আলোচ্য সেবার মাধ্যমে বেতন প্রদান সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে কমেছে মোটামুটি ২১ কোটি টাকা। বিশ্বকাপের টিকেট বিক্রির প্রভাব এক্ষেত্রে পড়ার কথা নয়। একই সময়ে ইউলিটি বিল পরিশোধ ৫৩ কোটি টাকা হ্রাস পেলো কেন, সেটি নিয়েও ভাবা দরকার। এক গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, মোবাইল ব্যাংকিং ঘিরে উল্লেখযোগ্য অংশের মানুষের আস্থার ঘাটতি রয়েছে। কারিগরি বিষয় তো আছেই, মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাংলা ভাষার প্রায় নির্বাসনও কম দায়ী নয় সেজন্য। প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণেও অনেকে পিছিয়ে থাকছেন সেবাটি গ্রহণ থেকে। এসব বিষয়ে নির্দেশনা জারি করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। মোবাইক ব্যাংকিং সেবার সম্ভাবনায় বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে এজেন্ট ঘাটতি। সাম্প্রতিক সময়েই মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টকে হত্যার পর অর্থ ছিনিয়ে নেয়ার বড় ঘটনা রয়েছে। উপরন্তু ছোটখাট চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা তো আছেই। কেউ কেউ মনে করেন, এসব নির্মূলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা বা পরামর্শ নেয়া উচিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তবে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক গ্রাহকের ওপর আরোপিত অত্যধিক চার্জের কারণে লেনদেন কমে যাচ্ছে বলে যে অভিযোগ, সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। নইলে কাঙ্ক্ষিত বিকাশ থেকে দূরেই রয়ে যাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা।

স্বল্পোন্নত নিয়ে আঙ্কটাডের প্রতিবেদন

নীতি নির্ধারণে প্রতিফলিত হোক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ

গতকাল রাজধানীতে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড কর্তৃক প্রণীত ‘দ্য লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ রিপোর্ট ২০১৪’এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশের লক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সিপিডি’র আলোচনা এরই মধ্যে সচেতন পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। তাতে দেখা যাচ্ছে, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিন শর্ত তথা মাথাপিছু জাতীয় আয়, অর্থনীতির ভঙ্গুরতা ও মানবসম্পদ সূচকের মাঝে দু’টিতে পিছিয়ে রয়েছি আমরা। ফলে ২০১৫ সালের মূল্যায়ন তালিকায় নাম নেই বাংলাদেশের। স্বভাবতই এটি কোনো উৎসাহব্যঞ্জক খবর নয়। আবার অর্জনের দিকে তাকালে আমাদের অর্জনকে অগ্রাহ্য করা যাবে না কোনোমতেই। প্রতিবেদনটি বলছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯০০ ডলার; চলতি বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিচারে তা বাড়তে পারে আরো ৯২ ডলার। প্রাক্কলন অনুযায়ী আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৩৫ ডলার হবে ২০১৫ সালে। অথচ শর্ত পূরণের জন্য তখন সেটি হওয়া দরকার ১ হাজার ২৪২ ডলার কমপক্ষে। আবার অর্থনীতির ভঙ্গুরতা সূচকে দশমিক ৪ হ্রাস এবং মানবসম্পদ সূচকে বাড়াতে হবে ১১ দশমিক ৩ স্কোর। সেক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা বেরোতে লেগে যেতে পারে এক দশক। প্রত্যাশা থাকবে, এ অবস্থায় পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমলে নেবেন নীতি নির্ধারকরা।

লক্ষ্যণীয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে এক গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতেই আমাদের প্রবৃদ্ধি বাকি ৪৭টি এলডিসি সদস্যের কাছে ঈর্ষণীয়। গত বছর নেতিবাচক লক্ষণ দেখা দেয়া সত্ত্বেও এখনো বাংলাদেশ এশিয়ার সর্ববৃহৎ রেমিট্যান্স উপার্জনকারী স্বল্পোন্নত দেশ। তবে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যেমন পরামর্শ দিয়েছেন তদানুযায়ী অপ্রচলিত পণ্য রফতানিতে মনোযোগ বাড়াতে হবে আমাদের। পাশাপাশি ত্বরান্বিত করতে হবে শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশ। তাতে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে; অর্থনীতির ভঙ্গুরতা মানদণ্ডেও আসবে অগ্রগতি। প্রতিবেদনে প্রকাশ তথ্য উপাত্ত মতে, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ থেকে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো করেছে। তবে মানবসম্পদ উন্নয়নের মতো কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান আশানুরূপ নয়। এক্ষেত্রে আরোপ ভাবনার বিষয় হলো, বাংলাদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু তার সিংহভাগই নাজুক বলে প্রতীয়মান। ইস্যুটি নীতি নির্ধারকদের জরুরি মনোযোগ দাবি করে। তালিকা সৃষ্টির পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট চারটি দেশ স্বল্পোন্নত স্ট্যাটাস অতিক্রম করতে পেরেছে; যার মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা মালদ্বীপও রয়েছে। তাদের অভিজ্ঞতা আমাদের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে দেখা দিক।

ব্যয় বাড়লেও স্থবির সাক্ষরতার হার

বাড়াতে হবে কর্মসূচির জবাবদিহিতা ও দক্ষতা

শিক্ষার হার বাড়াতে ডজনখানেক প্রকল্প প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চালু থাকার পরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব দ্য ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি)’ শীর্ষক গবেষণায় উঠে আসা এ তথ্য যে কারো জন্যই হতাশাজনক। কেননা সেক্ষেত্রে মোটা দাগে ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সাক্ষরতার হার আটকে আছে বললে ভুল হবে না। অথচ এ স্ময়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি চালু ছিল। তার মধ্যে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৩), সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার, রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন, মানব উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতা- উত্তর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এসব প্রকল্প বাস্তবনায়নের বাইরে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দেখা যাচ্ছে বছর বছর বাড়ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ। বার্ষিক ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মাঝে বিতর্ক কম। তাদের অধিকাংশই বরং বিশ্বাস করেন, সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত করতে ব্যয় আরো বাড়ানো যেতে পারে। তবে প্রশ্ন ওঠে ব্যয় বৃদ্ধির পরও সাক্ষরতার হারে প্রায় স্থবির অবস্থা নিয়ে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই।

খেয়াল করার মতো বিষয়, গত কয়েক বছরে সাক্ষরতার বৈশ্বিক তালিকায়ও নেমে গেছে বাংলাদেশের অবস্থান। তার পেছনে কোনো না কোনোভাবে নিশ্চয়ই প্রভাব রয়েছে আলোচ্য পরিস্থিতির। বিষয়টিকে শিক্ষার ব্যবস্থায় দর্শন ও সুশাসনের ঘাটতি বলে আমাদের প্রতিনিধিদ্বয়ের কাছে মন্তব্য করেন পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এ উক্তিও করেন যে, জাতির মঙ্গলের জন্যই নীতি বাস্তবায়নে দুর্বলতা স্বীকারের মানসিকতা রাখা উচিত। প্রত্যাশা থাকবে, সব ধরনের গঠনমূলক সমালোচনাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেবে সরকার। পাশাপাশি শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দক্ষতা বাড়ানো চাই। দক্ষতা না বাড়িয়ে চলতি অবস্থার পরিবর্তন খুব একটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সব পর্যায়ে মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগদান। সেজন্য ব্যয় আরো কিছুটা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাক্ষরতার হারও বাড়বে বলে আশা করা যায়। সর্বোপরি শিক্ষা খাতে সুশাসন নিশ্চিতে সরকারকে অধিক সক্রিয় দেখতে চাই আমরা।

অপরিকল্পিতভাবে বিটিএস স্থাপন

নীতিমালা কার্যকরে শক্ত হতে হবে বিটিআরসিকে

বিপুল জনসংখ্যার সঙ্গে জমির স্বল্পতা আমাদের নতুন বাস্তবতা নয়। আবার জ্বালানি তেল, গ্যাস প্রভৃতির মতো প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য নেই এখানে। পাশাপাশি আরেকটি চাপ যুক্ত হয়েছে কয়েক বছর ধরে; সেটি হলো, অধিকতর শিল্পায়ন তথা প্রবৃদ্ধির চাপে বর্ধিত জ্বালানির চাহিদা। মূলত এ দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং পরিচালনসহ সার্বিক ব্যয় হ্রাসের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০০৮ সালে সেলফোন সেবার প্রত্যক্ষ অবকাঠামো বেজ ট্রান্সসিভার স্টেশন (বিটিএস) ভাগাভাগি নীতিমালা প্রণয়ন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। একাধিক সমস্যা আমলে নিয়ে সেটি সংশোধনও করা হয় ২০১১ সালে। সমস্যা হলো, এ নীতিমালা পরিপালনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় তুলনামূলক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপারেটররা এখনো ব্যবহার করছে পৃথক টাওয়ার। গতকাল বণিক বার্তার প্রকাশ এ বিষয়ক এক খবরে জানা যায়, সারা দেশে সেলফোন অপারেটররা বসিয়েছে আনুমানিক ৩৪ হাজার বিটিএস টাওয়ার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার মধ্যে ১১ হাজার টাওয়ারেরই আবশ্যকতা নেই। বাকি টাওয়ারগুলো দিয়েই সারা দেশের পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক সেবা প্রদান সম্ভব। খেয়াল করারা মতো বিষয়, জমি, বিদ্যুৎ, ব্যাটারি প্রভৃতিই সেলফোল সেবার পরোক্ষ এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এক্ষেত্রে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হিসেবে নিলে বাড়তি টাওয়ারগুলোর সার্বক্ষণিক চাহিদা মেটাতে বিপুল বিদ্যুৎ অপচয় ঘটে বৈকি। একাধিক টাওয়ার জমিও দখল করে থাকে অনেকটা। অথচ দেশে কৃষি জমি যেমন কমছে, শিল্পায়নের জন্যও জমি ব্যাপক হারে বাড়ছে, সে কথা বলা যাবে না। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট নীতিমালা কার্যকরে বিটিআরসি শক্ত অবস্থান নেবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন সবাই।

বিটিএস টাওয়ারের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত কয়েকটি ইস্যু যুক্ত। ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক ব্যাটারি লক্ষ্যণীয় মাত্রায় পরিবেশ দূষণ ঘটনায়। টাওয়ারের তড়িৎ-চুম্বক বিকিরণ বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের দেহে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। সেজন্য ইউরোপের একাধিক দেশ টাওয়ার নির্মাণের দিকনির্দেশনা সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে এবং সেটি বাস্তবায়নে নজরদারি কার্যক্রমও সক্রিয়। প্রতিবেশী ভারতও বিটিএস টাওয়ার নির্মাণে প্রয়োজনীয় পরিবেশগত ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। দুঃখজনক হলো, টাওয়ারের অবস্থান, অবকাঠামোগত নিরাপত্তা, স্থানীয় পরিবেশ প্রভৃতি বিষয় আমলে নিয়ে অপারেটরদের টাওয়ার বসানোর প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণে বিটিআরসিও কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল বটে। কিন্তু সিদ্ধান্ত কার্যকরকরণে দুর্বলতা সেটি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে বলে প্রতীয়মান। নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, টাওয়ার পরিচালন ব্যয় হ্রাস পেলে গ্রাহকের ওপর থেকে ব্যয়ের বোঝাও খানিকটা কমত বৈকি। আরেকটি বিষয়, বিটিএসের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণে ভারতীয় সেলফোন অপারেটররা এর ব্যবস্থাপনার ভার ছেড়ে দিয়েছে তৃতীয় পক্ষের হাতে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ইনফ্রাটেল নেটওয়ার্কস লিমিটেড (বিআইএনএল) নামে এক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়েছে দেশে। এটি নেটওয়ার্ক সংক্রান্ত পরোক্ষ অবকাঠামোর ব্যবস্থাপনাগত দায়িত্ব নেয়ার কথা। বিটিআরসি মনে করে, এ ধরনের উদ্যোগ ইতিবাচক এবং তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগও কম আসলে। তবু সতর্ক থাকতে হবে। তার সঙ্গে প্রণীত নীতিমালাও কার্যকর করে তোলা চাই। সেজন্য বলিষ্ঠ ভূমিকায় নামা দরকার বিটিআরসি’র। নইলে তৃতীয় পক্ষীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে পরোক্ষ অবকাঠামোর ভার তুলে দিয়েও নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না। ফলে একটি যুগোপযোগী টাওয়ার ভাগাভাগি নীতিমালা এবং দ্রুত তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নই নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কাছে কাম্য এখন।

Published in Bonik Barta, October 2014

লঞ্চ ভাড়া

যাত্রী সেবায় এর প্রতিফলন চাই

আমাদের নৌপথের চলমান চালচিত্র নিয়ে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ ‘সর্বনিম্ন বিনিয়োগ সর্বোচ্চ ভাড়া’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। এতে লঞ্চের যাত্রীসেবার যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। অনেকের মতে, সব ধরনের পরিবহন সেবার মাঝে সর্বনিম্ন সেবা মেলে নৌপথ বিশেষত লঞ্চে। অথচ এখানে বিনিয়োগের পরিমাণ কম; অনেক ক্ষেত্রে যাত্রাপথও হ্রস্ব। উদাহরণ হিসেবে ঢাকা-বরিশাল রুটের কথা বলা যেতে পারে। সড়কপথে এর দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটারের মতো; যেখানে দূরত্বটি আনুমানিক ১৫০ কিলোমিটার নৌপথে। আবার নৌপথে টোল দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অন্যান্য সুবিধাদিও নৌযানেরই বেশি বলে প্রতীয়মাণ। জানা গেছে, মোটামুটি প্রমাণ সাইজের একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ নির্মাণে ব্যয় হয় গড়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা। অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ৩০ বছর; যার মধ্যে প্রথম ১০ বছর ইঞ্জিন ওভারহোলিংয়ের প্রয়োজন হয় না। কর্মী, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও তুলনামূলক কম। অবশ্য লঞ্চে জ্বালানি ব্যয় স্বভাবতই অপেক্ষাকৃতভাবে বেশি। তবু সেটিকে অযৌক্তিক বলা যায় না। অথচ বিশেষত ঈদের মৌসুমে ভাড়ার প্রতি লক্ষ্য করলে স্পষ্ট হয় যে, এক্ষেত্রে কয়েকগুণ বেশি মুনাফা করছে মালিক পক্ষ। সব নৌ-পরিবহন ব্যবসায়ীই অতিমুনাফা দ্বারা তাড়িত হয়ে অস্বাভাবিক ভাড়া রাখছেন ঢালাওভাবে সে মন্তব্য করা যাবে না। বরং আমাদের প্রতিবেদক বিভিন্ন মারফতে যে খবর সংগ্রহ করেছেন, তা থেকে আপাতভাবে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় যে, কার্যত নৌ পরিবহন ব্যবসায় যাত্রী ও সৎ ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয় পড়েছেন একটি অশুভ চক্রের কাছে। এমন পরিস্থিতিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছ থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থাই প্রত্যাশা করেন ভুক্তভোগীরা।

উৎসবের সময় পরিবহন ভাড়া বেড়ে ওঠার ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। আবার অন্য মৌসুমে ভাড়া খানিকটা কম থাকে স্বভাবতই। তবে নৌপরিবহন বিশেষত লঞ্চের বেলায় খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, এক্ষেত্রে কোনো মৌসুমেই লোকসান দিয়ে চলতে হয় না। বরং কোনো মৌসুমে মুনাফা কম ও অন্য মৌসুমে তা অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয়। এ অস্বাভাবিক মৌসুমের প্রতিই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া উচিৎ। নৌযানগুলো উপযুক্ত বীমা সেবা গ্রহণ করে না বলে অভিযোগ। আবার নৌদুর্ঘটনা প্রতিরোধ কিংবা এর ক্ষতিপূরণেও নৌযান মালিকদের অবস্থান জোরালো নয়। এ অবস্থায় বলিষ্ঠ জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সেটি খাতটির জন্য মোটেও সুখকর হবে না।

কোরবানি পশুর চামড়া

পাচার রোধে প্রশাসনের সক্রিয়তা কাম্য

আমাদের চামড়া ব্যবসায়ীরা সারা বছর যে পরিমাণ চামড়া সংগ্রহ করেন, তার অর্ধেকই ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া বলে জানা যায়। আবার প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট সংগৃহীত চামড়ার আনুমানিক ৪ শতাংশ নাকি পাচার হয়ে যায় প্রতিবেশী দেশে। বলার অপেক্ষা রাখে না, চামড়া পাচারের ঘটনা ঈদ মৌসুমেই ঘটে বেশি। সে শঙ্কা আসছে ঈদ ঘিরেও রয়েছে। বরং অনেকের মতে তুলনামূলকভাবে বেশি এবারকার ঝুঁকি। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গত বছর কেনা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চামড়া এখনো অবিক্রীত। তদুপরি ঋণ পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের পুরোপুরি অনুকূলে নয়। এর মধ্যে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম ক্রেতা সংকট তৈরি করে বাড়তি মুনাফা তুলে নেয়ার পাশাপাশি ঝুঁকতে পারেন চামড়া পাচারে। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ এক প্রতিবেদনে চামড়া পাচার ঘিরে বরিশালের ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা উঠে এসেছে। প্রায় প্রতিটি স্পর্শকাতর অঞ্চলে একই অবস্থা। ইন্টারনেটভিত্তিক এক গণমাধ্যমের খবর, উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ঈদুল আজহায় চামড়া ক্রয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে শত কোটি টাকা ছড়িয়ে দিয়েছে কতিপয় সিন্ডিকেট। তা থেকে সারা দেশের পরিস্থিতি সহজে অনুমেয়। এমন পরিস্থিতিতে ও গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় চামড়া পাচার রোধে প্রশাসনের অধিক সক্রিয়তাই প্রত্যাশিত।

এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) চেকপোস্টগুলোয় বিশেষ নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন। দেশের অভ্যন্তরেও রুখতে হবে চামড়া পাচারের অপতৎপরতা। গণমাধ্যম সূত্রে প্রকাশ, চামড়া পাচারের নির্দিষ্ট রুট রয়েছে; যার সংখ্যা অনধিক ২০। আবার কাঁচা চামড়ার কিছু বড় পাইকারি বাজার রয়েছে, যেখান থেকে বিপুল চামড়া পাচার হয় বলে সন্দেহ। সেসব স্পর্শকাতর স্থানের (বেনাপোল, জীবননগর, দর্শনা, সোনামসজিদ, গোদাগাড়ী, তামাবিল, করিমগঞ্জ প্রভৃতি) ওপর আগে থেকেই বাড়তি নজরদারি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার। সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার করা হলে সাধারণত যেসব অঞ্চল থেকে পাচার হয় সেখানে একশ্রেণীর ব্যক্তির অস্থায়ী গুদামে কিছুদিন রাখা হয় কাঁচা চামড়া। সেগুলো চিহ্নিতকরণ ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে সক্রিয় থাকতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। এরই মধ্যে চামড়া পাচার রোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সবাই চাইবেন, যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কার্যকরে প্রয়াসী হবে সংশ্লিষ্টরা।

পিছিয়ে থাকা অঞ্চল

শস্য বৈচিত্র্য আনতে হবে পুষ্টির স্বার্থেও

দেশের গুরুত্বপূর্ণ তিন অঞ্চল সিলেট, রংপুর ও বরিশাল ক্রমে এক ফসলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, সেটি সচেতন মানুষকে না ভাবিয়ে পারে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, এখানে মোট জমির ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশে (গড় হিসাব) ধান আবাদ হয়। তবে চিত্রটি লক্ষ্যণীয়ভাবে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আলোচ্য তিন বিভাগে; যথাক্রমে ৯৪ দশমিক ৩, ৮২ দশমিক ৩ ও ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ জমিতে ধান ছাড়া আর কিছুই চাষ হয় না সিলেট, রংপুর ও বরিশালে। এর মাঝে ভাবলে ভুল হবে, বরিশাল অঞ্চলে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে। বরং সেখানে ক্রমে ধানের ওপর আবাদ-নির্ভরতা বাড়ছে বলে প্রতীয়মান। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষত কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অঞ্চল-ভিত্তিক শস্য বৈচিত্র্য নিশ্চিতকরণে যথাযথ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন সবাই। কেননা এক ফসলের ওপর অধিক নির্ভরতা প্রথমত. জবির উর্বরা শক্তির হ্রাস, দ্বিতীয়ত. সার, পানি প্রভৃতি উপকরণের অতিরিক্ত ব্যবহারে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধি এবং তৃতীয়ত. সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়তার পরিবর্তে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করতে পারে।

শস্য বৈচিত্র্য আনায়নে সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, সে কথা বলবেন না কেউ। কথা হলো, এক্ষেত্রে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল মিলেছে ও মিলছে কমই। আরো দুশ্চিন্তার কথা হলো, কর্মসূচি চালুর উল্লেখযোগ্য সময়ে পেরিয়ে যাওয়ার পরও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতির পশ্চাতে গড়াতে থাকে কীভাবে? তার কারণ চিহ্নিত করতে হবে বৈকি। একই সঙ্গে শস্য বৈচিত্র্য আনায়নে আঞ্চলিক সুবিধা-অসুবিধার ওপর দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের প্রতিনিধি বলছেন, কৃষকরা যে শস্য বৈচিত্র্য আনায়নের বিপক্ষে- বিষয়টি তেমন নয়। সমস্যা হলো, তারা কোন পথে এগোবেন সে নির্দেশনা খুঁজে পাচ্ছেন না। দায়িত্বটা বোধকরি যতটা না কৃষকের, তার চেয়ে বেশি কৃষিনীতি নির্ধারকদের। লক্ষ্যণীয়, গত কয়েক দশকে কৃষিতে বাংলাদেশের অর্জন রয়েছে অনেক। তবে বর্ধিত পণ্য উৎপাদনের মাঝেই কৃষির ভূমিকা আবদ্ধ করে ফেললে হবে না। এক্ষেত্রে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সিলেট, রংপুর ও বরিশালের মতো অঞ্চলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পুষ্টিমান উন্নয়নে কৃষির ভূমিকা শক্তিশালীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। সেজন্যই সমন্বিতভাবে ও অধিক কার্যকর উপায়ে শস্য বৈচিত্র্য আনায়নে মনোযোগ দিতে হবে সরকারকে।

পবিত্র ঈদুল আজহা

পরার্থপরতায় আলোকিত হোক জীবন-অর্থনীতি

চূড়ান্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের লক্ষ্যে অন্যতম বৃহৎ সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার প্রস্তুতি দেশজুড়ে সাড়ম্বরে চলছে এখনো। প্রতিবারের মতো এবারো বাসস্থান ফাঁকা রেখে দলে দলে মানুষ ছাড়ছেন ঢাকা; যথারীতি ভোগান্তি মেনে নিয়ে। এত মূল্য দিয়ে যে আনন্দের প্রত্যাশায় তারা বাড়ি যাচ্ছেন, সবার প্রতি সেটি পূর্ণ হওয়ার শুভেচ্ছাই থাকল বণিক বার্তার পক্ষ থেকে। তাৎপর্যপূর্ণ এ উৎসবের অন্তর্নিহিত শিক্ষা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতীয় স্বার্থে আমাদের আরো ঐক্যবদ্ধ করে তুলবে বলেও আশা আমাদের। প্রকারভেদ নির্বিশেষে পরার্থপরতা ইসলামের অন্যতম মৌলিক শিক্ষা আর তার চর্চা দু’ঈদেরই অবশ্য পালনীয় অংশ। এটি রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ আমাদের সবারই মাথায় রাখা উচিৎ।

এরই মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সম্পন্ন হয়েছে প্রাণোচ্ছলতার সঙ্গে। সেজন্য অংশগ্রহণকারীর পাশাপাশি শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বড় ভূমিকা রেখেছে বলে প্রতীয়মান। লক্ষ্যণীয়, পূজার মাঝেই দেশজুড়ে কোরবানির পশু চলাচল শুরু হয়েছে। বলা বাহুল্য প্রশাসনের ওপর টানা চাপ বিরাজ করছে কয়েক দিন ধরেই। বিশেষত সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্ট যানজটে এর একটা পরোক্ষ প্রভাব থাকতে পারে। তবু পূজা সম্পন্নের ইত্যবসরে এখন ঈদে মানুষের ভোগান্তি হ্রাসের তাদের বাড়তি মনোযোগ দেয়া দরকার। এবারো ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে চড়ে বিপুল জনগোষ্ঠী ঢাকা ছাড়ছেন। তাদের ন্যূনতম নিরাপত্তা বিধানে শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে টিকেট কালোবাজারিও। ঈদ উপলক্ষ্যে লঞ্চে সেবার তুলনায় বাড়তি ভাড়া হাঁকার খবর এরই মধ্যে এসেছে বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায়। সংশ্লিষ্টরা সুদৃষ্টি দেয়ায়ই বলতে হবে, বাসে অযৌক্তিক ভাড়া আদায়ে অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। তবু নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের ঘটনা রয়ে গেছে কিছু ক্ষেত্রে। সেটি পুরোপুরি নির্মূলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।

ঈদের ছুটিতে রাজধানীবাসীর শঙ্কা থাকে, চুরি-ডাকাতি নিয়ে। এ সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা একেবারেই ঘটে না, তা নয়। আবার ফাঁকা রাজপথে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা সংঘটনের নজিরও রয়েছে আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতায়। স্বভাবতই আলোচ্য সময়ে স্বাভাবিক শক্তি সহকারে কাজ করতে পারে না শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব সীমাবদ্ধতার মাঝেই তাদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা চাই। গত তত্ত্বাবধায়ক শাসনামলে অপরাধভেদে কিছু স্পর্শকাতর অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়েছিল বলে জানা যায়। ছুটির সময়টায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইকে অধিক প্রাধান্য দেয়া যেতে পারে এক্ষেত্রে। ঈদুল আজহায় আরেকটি দুশ্চিন্তা দাঁড়ায় বর্জ্য অপসারণ। প্রায় প্রতি বছরই সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশন। অবশ্য তাতেও কিছু ফাঁক-ফোকর রয়েছে বলে অনেকের অভিমত। এ বিষয়ে সজাগ থাকা চাই। একই সঙ্গে সারা দেশেই দ্রুততা ও দক্ষতার পশু বর্জ্যের যথাযথ নিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে।

ক’বছর আগে ঈদের আগেভাগে মহাসড়ক আটকে রেখে শ্রমিক বিক্ষোভ দেখা যেত। সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সমন্বয়ের মাধ্যমে ওই জটিলতা অনেকাংশেই এড়ানো গেছে। তবু মাঝে মধ্যে একশ্রেণীর কারখানায় ঈদের আগে শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দিতে অবহেলা লক্ষ্যণীয়। মানুষ প্রত্যাশা করে, এ ধরনের ইস্যুটি পুরোপুরি তথাকথিত উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে যথাসম্ভব হস্তক্ষেপ করবে সরকার। মধ্যম আয়ের স্বপ্ন দেখানো জনবহুল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রকদের এ বিষয়ে কোনো গাফিলতি দেখানো চলবে না। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদেরও বলিষ্ঠ ভূমিকা দেখতে চাইবেন সবাই।

আন্তর্জাতিক কলে হাজার কোটি টাকা বকেয়া

আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে

আন্তর্জাতিক কলের রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারগুলোর সঙ্গে ‘বিরোধ চরমে ওঠা’য় চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত হাজার কোটি টাকা বকেয়া পড়ার খবর এসেছে গতকালের বণিক বার্তায়। আরো দুর্ভাগ্যজনক হলো, উক্ত বকেয়া আদায়ে বিটিসিএলের পক্ষ থেকে কাঙ্ক্ষিত সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, রাজস্ব ভাগাভাগির চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক কলপ্রতি চার্জের বেলায় প্রতি ৩ সেন্টের ৫১ শতাংশ পাওয়ার কথা বিটিসিএলের; বাকি ৪৯ শতাংশ ক্যারিয়ারসহ অন্যান্যদের প্রাপ্য। তথ্য মতে, আন্তর্জাতিক ফোনকল আদান-প্রদানের জন্য বর্তমানে ৮৬টি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বিটিসিএল। মজার বিষয়, বকেয়া প্রসঙ্গ ওঠায় এরই মধ্যে সালিশ নিষ্পত্তির আশ্রয় নিয়েছে বেশ কিছু ক্যারিয়ার; কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘাটতিতে আরো কিছু প্রতিষ্ঠান একইভাবে মামলার পথে হাঁটতে পারে বলে অনেকের অনুমান। এমন পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আন্তর্জাতিক কল আমাদের রাজস্ব আহরণের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠছে ক্রমে। সেখান থেকে বকেয়া রাজস্ব আহরণে তাই নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কঠোর অবস্থানই দেখতে চাইবেন সবাই।

পাশাপাশি খতিয়ে দেখা দরকার, হঠাৎ করে একশ্রেণীর ক্যারিয়ারে কী এমন বুদ্ধিবৃত্তিক স্ফুরণ ঘটল যে তারা বকেয়া পরিশোধ না করে আইনানুগ পথে অগ্রসর হতে চাইছেন। এ ধরনের ঘটনা কিন্তু স্পষ্ট দেখিয়ে দেয় বিদ্যমান চুক্তিতে ফাঁকফোকর রয়েছে। সেগুলো রোধে প্রয়োজনে পুনরায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পদক্ষেপও মাথায় রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। অনেকের অভিযোগ রয়েছে, বিটিসিএলের একশ্রেণীর কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে অসাধু কিছু ক্যারিয়ারের। নিয়মবহির্ভূত সুবিধাদির বিনিময়েই নাকি চুক্তির দুর্বলতাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছেন ওই সরকারি কর্মকর্তারা। অনিয়মের এখানেই শেষ নয়। বেশ কিছু ক্যারিয়ারের ব্যাংক গ্যারান্টিতে অসত্য তথ্য পরিবেশনের প্রমাণ তদন্তপূর্বক পেয়েছে বিটিসিএল। খোদ তাদের একশ্রেণীর কর্মকর্তাই নাকি এসব অপকর্মে জড়িত। খেয়াল করার মতো বিষয়, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের কমতি। বরং ক্রমে সে তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে বলে প্রতীয়মান। ফলে এ বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন জরুরি। সেজন্য বিস্তারিতভাবে চিহ্নিতপূর্বক দুর্নীতিপরায়ণ কর্মীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের প্রচেষ্টা নেয়া প্রয়োজন- অনাদায়ী রাজস্বের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার আগেই।

অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ফ্লাইট

সেবার মান বদলাচ্ছে তো?

২০০৭ সাল পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ৭টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে এসেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। উড়োজাহাজ সংকট আর ক্রমাগত লোকসানে ওই সময় ৩টি রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। অবশ্য এর পরও ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে কয়েক বছর; এটি বন্ধ হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে। বর্তমানে চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিমান ফ্লাইট পরিচালনা করছে বটে। কিন্তু তা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংযুক্তি হিসেবে। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অভ্যন্তরীণ রুটে বিশেষত যাত্রী পরিবহনে চাহিদা বেড়েছে বলে প্রতীয়মান। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন লাভজনক ব্যবসা বেসরকারি খাতের দখলে। সে সৌভাগ্যের ভাগীদার হতে চেয়েই কিনা কে জানে, দীর্ঘ সময় পর বিমান অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। জ্বালানিসাশ্রয়ী দুটি টার্বো-প্রপেলার উড়োজাহাজ সংগ্রহে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিললে এবং বিষয়টি বিমান পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন পেলে মাসখানেকের মধ্যেই সংস্থাটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে বলেও জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এগুলো চালু করা গেলে সার্বিকভাবে বিমানের লোকসান অনেকটা কমে আসবে বলে প্রত্যাশা।

বিমানের ওই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অবিমিশ্র আশীর্বাদ হবে কিনা, সে বিচারের ভার সংশ্লিষ্টদের ওপর দেয়া উচিৎ। তবু কয়েকটি বিষয়ে সরকারের সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকা চাই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন চ্যালঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার কর্তৃক সাধ্যমতো ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টাও দেখছেন সবাই। তবু আশানুরূপ সমাধান মেলে নি। তাঁর কারণ হিসেবে বিমানের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে আকারে-ইঙ্গিতে ও কখনো সখনো সরাসরি বলা হয়েছে, এয়ারলাইনস একটা বিশেষ ব্যবসা এবং সমস্যা সমাধানের পর্যাপ্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ায় ঘাটতি ছিল সরকার। বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখলে সীমাবদ্ধতার মাঝে যতটুকু পদক্ষেপওবা নিয়েছে সরকার, সে তুলনায় বিমানের পারফরম্যান্স ধর্তব্যেই আনতে চান না কেউ কেউ। এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। সেবার মান নিয়ে বিমানের বিরুদ্ধে বিরাট অভিযোগ রয়েছে, যা ফ্লাইট পরিচালনার মতো কারিগরি বিষয়ে তুলনামূলকভাবে কম। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনায় উড়োজাহাজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিমানকে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় শর্ত জুড়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেবার মান নিশ্চিতের বেলায়ও তেমন শর্ত দেয়া যায় কিনা, সেটিও বিবেচনায় রাখা দরকার।

বাজারের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা

চাই প্রণোদনা ও পুঁজির ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহার

১৯৮৮ সালে মরিস অ্যালেয়ারের নোবেল স্মৃতি পদক লাভের দীর্ঘদিন পর দ্বিতীয় কোনো ফরাসী অর্থনীতিবিদ জাঁ তিহোল পুরস্কারটি জিতলেন চলতি বছর। গণমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক গবেষণাকে যারা অনুসরণ করেন তাদের অনেকের কাছে তিহোল শ্রদ্ধেয়। সে বিচারে ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ব্যক্তির যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক তোলার সুযোগ নেই। তিহোলের গবেষণার বিষয়বস্তু মূলত বাজার; আরো নির্দিষ্ট করে বললে সংগঠন, বাজারের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা। তবে কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়, বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে তাঁর বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত অবস্থান। প্রচলিত বিতর্ক যেখানে অনেকাংশে, বাজারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অথবা কঠোর নিয়ন্ত্রিত বাজারের মাঝেই ঘুরপাক খায়। সেখানে তিহোলের গবেষণালব্ধ মধ্যপন্থী অবস্থান স্বতন্ত্র বটে। লক্ষ্যণীয়, বাজারের প্রকৃতি প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান কেম হওয়া উচিৎ- সে নিয়ে শোরগোল এখানে কম হয় না। এক্ষেত্রে ওনার গবেষণা স্থানীয় নীতিনির্ধারকদের ভাবনার খোরাক জোগাতে পারে।

বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিতের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন তিহোল। তিনি বিশ্বাস করেন, পুঁজি শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা কিংবা মুনাফা বৃদ্ধির উপাদান নয়, পুঁজি একটি প্রতিশ্রুতি এবং অগ্রসর হওয়ার বেলায় সে বিবেচনাটিও মাথায় রাখতে হবে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতা কিংবা নিয়ন্ত্রকদের যথেচ্ছাচার বাজার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। তাই নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গবেষণালব্ধ উপায়ে কার্যকর ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। নইলে বাড়তে থাকবে অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও প্রয়োগের মধ্যকার ব্যবধান। বাজারে নিয়ন্ত্রণের সুষ্ঠু পরিবেশ ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধরে রাখাও আবশ্যক। সেজন্য পদস্থ দায়িত্বশীলদের ক্যারিয়ার সম্ভাবনা যেন দক্ষতা অর্জনের ওপর স্থান না পায় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। তিহোল বাজারের ওপর কিছু রাজনৈতিক কুপ্রভাব চিহ্নিত করেছেন। অনেক সময় বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় বদলী করা হয়। আবার একই কারণে প্রকাশ্যে তাদের অপমানিত হওয়ার ঘটনাও কম নেই। তিহোলের মতে, এর প্রতি অর্থনৈতিক গবেষকদের দৃষ্টি কম। কেননা তাদের সাধারণ মত হলো, নিয়ন্ত্রণের ওপর ওসব উপাদান তথা প্রণোদনার প্রভাব কম। অথচ প্রণোদনা বাজার নিয়ন্ত্রণ কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও প্রক্রিয়াটির অন্যতম চালিকাশক্তি। একে অগ্রাহ্য করে বাজারে সুনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বাজার ভারসাম্যহীনতা তথা ব্যর্থতার পথে এগিয়ে যাবে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা পুঁজিকে অঙ্গীকার হিসেবে না দেখলেও। অধিকতর সমৃদ্ধির অর্জনের লক্ষ্যে এসব দিকে লক্ষ্য রাখা উচিৎ আমাদের।

পেটেন্ট নিরাপত্তাহীনতায় স্থানীয় উদ্ভিদ জাত

ব্যবস্থা নিতে দেরি কেন?

সাধারণভাবে মালিকানা সত্ত্ব (পেটেন্ট) আইনে ব্যাক্টেরিয়ার পর (ছত্রাক) থেকে উদ্ভিদ পর্ব। আমাদের প্রথাগত উদ্ভিদের জাত রয়েছে বহু; হাজারের বেশি জাত উদ্ভাবন করেছে স্থানীয় বিভিন্ন কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এর মাঝে প্রথাগত জাতের পেটেন্ট নিরাপত্তা ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। তবে উদ্ভাবিত উদ্ভিদ জাতগুলোর বিপুল পেটেন্ট ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। জানা যায়, কেবল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটই (বারি) অবমুক্ত করেছে ৪১৭টি পণ্য জাত; কমপক্ষে ৬৪টি অবমুক্ত ধান জাত রয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি)। এখন বিধিমালার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পেটেন্টের মাধ্যমে এসব জাতের সুরক্ষা দেয়া না গেলে জাতের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উৎপাদন এবং আরো বৃহত্তর ধারণায় আমাদের কৃষির উন্নয়ন। তাই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিৎ। সেজন্য যত দ্রুত সম্ভব উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন দেখতে চাইবেন সবাই।

সংশ্লিষ্ট পদস্থ একাধিক কর্মকর্তা আমাদের প্রতিনিধিকে বলেছেন, দেশে উদ্ভাবিত উদ্ভিদ জাতের পেটেন্ট সুরক্ষায় কয়েক বছর ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন তারা। অথচ এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ- যুতসই আইনই প্রণয়ন হয় নি এখন পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। উদ্ভিদ জাতের পেটেন্ট সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্যান্য দেশের এগিয়ে আসতে খানিকটা বেশি সময় ব্যয় হয়েছে বৈকি। তবে কিছু ক্ষেত্রে একটা সমস্যা ছিল, সেখানে উদ্ভিদের সঙ্গে প্রাণী সংক্রান্ত পেটেন্ট যুক্ত করা হয়। আমাদের বেলায় তেমন জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ কম। আবার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাংলাদেশের স্বার্থ সমুন্নত এবং আমাদের কৃষি সম্ভাবনার উপযুক্ত বিকাশ ঘটাবে, তেমন নীতিমালা প্রণয়ন সহজ নয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের মধ্যকার সীমানা মেনে এগিয়ে যাওয়াটাও কঠিন। সেজন্য নীতি নির্ধারকদের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা চাই। এক্ষেত্রে ভারতের উদ্ভিদ জাত ও কৃষকের অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০০১ আমাদের জন্য নির্দেশনামূলক নিঃসন্দেহে। তবে এর অন্ধ অনুকরণ পরিত্যাগ করাই শ্রেয়।

অন্যান্য মেধাসত্ত্ব অধিকার আইনের সঙ্গে উদ্ভিদ জাত পেটেন্টের পার্থক্য রয়েছে। আবার পেটেন্ট আইন বাস্তবায়নের বেলায় পণ্য ও প্রক্রিয়ার মধ্যকার বিভিন্ন স্তর নির্ধারিত রয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। আমাদের আইন প্রণয়নের সময় এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পেটেন্ট আইনের অন্যতম লক্ষ্য থাকা উচিৎ যাতে এর প্রয়োগে কৃষিতে অধিকতর গবেষণা উৎসাহিত হয়। আমলতান্ত্রিক জটিলতার ভারে হোক বা উপযুক্ত মানবসম্পদকে দেশে ধরে রাখতে না পারায় ব্যর্থতায়ই হোক- দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রে গবেষণা পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। নেতিবাচক প্রবণতা থেকে কৃষি গবেষণাকে সহজেই আলাদা রাখা সম্ভব এবং সরকারের উচিৎ পারিপার্শ্বিকতা বিচারে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। তাতে গবেষকরা অনুপ্রাণিত বোধ করবেন নতুন জাত উদ্ভাবন ও তার উন্নয়নে। ইদানীং দেশ থেকে নানা ধরনের কৃষি পণ্য রফতানির ঝোঁক বাড়ছে বলেই প্রতীয়মান। এক্ষেত্রে নতুন জাত ও পদ্ধতি উদ্ভাবন ছাড়া কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফল অর্জন কঠিন। কৃষির টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে না কৃষকের অধিকার ওই পরিকল্পনার বাইরে থাকলেও। ফলে পেটেন্ট আইনে উভয় বিষয়েরই বাস্ততসম্মত প্রতিফলন থাকা চাই।

সেলফোনে অপরাধমূলক কার্যক্রম

রোধে বিটিআরসির দ্রুত সক্রিয়তা কাম্য

সেলফোন সেবা চালুর হওয়ায় দেশে অপরাধ প্রবণতা সার্বিকভাবে বেড়েছে না কমেছে, সে ধরনের জাতীয় পরিসংখ্যান পাওয়া দুষ্কর বৈকি। অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, কিছু কিছু অপরাধ হ্রাস পেয়েছে এর প্রভাবে। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে বিদ্যমান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নতুন মাত্রা পেয়েছে সেলফোন সেবা চালু হওয়ায়। এ বিতর্কে না জড়িয়ে পশ্চিমা অনেক বিশেষজ্ঞের মন্তব্য আমলে নেয়া যায়ই যে, সেলফোন একটি সম্ভাবনাময় অপরাধ চুম্বক অর্থাৎ অপরাধ কর্মকাণ্ডকে লক্ষ্যণীয়ভাবে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রয়েছে এর। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে প্রকাশ হলো সেলফোন সংশ্লিষ্ট অপরাধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তেমন উদ্যোগ না থাকার কথা। এ খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। কেননা এতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে হয়রানির শঙ্কা যেমন বাড়ছে গ্রাহকের মনে, অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে থাকছে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির বীজ।

বিদেশী কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, আন্তর্জাতিক কালো বাজারে বিশেষত চোরাই স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই প্রতি বছর ৪০ হাজার এ ধরনের সেট চুরি হয়; যার একাংশ চলে যায় বিদেশে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে চোরাই সেলফোন ব্যবহার অধিক সুবিধাজনক হওয়াটা নব্য দৃষ্ট প্রবণতাটির অন্যতম কারণ। তেমন অপরাধ এ দেশেও সংঘটিত হচ্ছে নিশ্চয়ই। ওয়্যারলেস অ্যাপ্লিকেশন প্রটোকল (ওয়াপ), এসএমএস, অ্যানস্ট্রাকচারড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডাটা (ইউএসএসডি) সেবা মাধ্যমেও বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের নজির রয়েছে। খেয়াল করার মতো বিষয়, কিছু ক্ষেত্রে মাস্কিং পদ্ধতি ব্যবহার করে আকর্ষণীয় অথবা বিশ্বাস হওয়ার মতো নম্বর থেকে বিভিন্ন গ্রাহককে ফোন দিয়ে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয় নি। উল্টো কিছু ক্ষেত্রে বিদেশী থেকে আসা পুরস্কারের লোভ দেখানো ওসব ফোনকলের উৎসই নাকি চিহ্নিত করতে পারে নি অপারেটররা। ফলে আরো কিছু গ্রাহক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধরা পড়ার দিক বিবেচনায় প্রযুক্তি হিসেবে তুলনামূলকভাবে ‘নিরাপদ’ হলো এসএমএস। এখনো একশ্রেণীর ব্যক্তি কর্তৃক মাঝে মধ্যে এর অপব্যবহার দ্বারা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চালাতে দেখা যায়। অথচ এসব রোধে কার্যকর ও সময়যোপযোগী ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না বিটিআরসিকে।

সংস্থাটি একবার ফ্রড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এফএমএস) চালু করতে সেলফোন অপারেটরদের আলাদা নির্দেশনা দেয়ার কথা বলেছিল। সেটি নাকি আজো চূড়ান্ত হয় নি। আবার সেলফোন অপারেটরদের টুজি লাইসেন্স নীতিমালায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেলফোন অপারেটরদের সঙ্গে বিটিআরসি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনলাইন ও অফলাইন যোগাযোগ রক্ষার বিষয়টি। এক্ষেত্রে বিটিআরসির বিলম্বের কারণ কী, তা বোধগম্য নয়। তবে এক্ষেত্রে তাদের অধিক সক্রিয়তাই প্রত্যাশা করেন সবাই। গ্রাহকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সমুন্নত রেখে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কিংবা তেমন কর্মকাণ্ড সংঘটনের ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করা সহজ কাজ নয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংক্রান্ত নীতিমালা প্রয়োগে ক্ষমতা অপব্যবহারের উদাহরণও রয়েছে দেশ-বিদেশ। আবার উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সেলফোন ব্যবহারপূর্বক সংঘটিত অপরাধের মাত্রা বাড়বে বৈ কমবে না। এমন পরিস্থিতিতে বিআরটিসির কাছ থেকে অবিলম্বে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতেই দেখতে চাইবেন সবাই।

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দুবাই সফর

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে দৃষ্টি থাকুক

আরব দেশগুলোর মাঝে সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের। দেশটি আমাদের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজারও বটে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে নীচে ছিল তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এতে সুপরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় ২০১৩ সাল থেকে। ওই বছর তাদের প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ করে। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দেশটিতে আমাদের জনশক্তি রফতানি পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য ছিল বলা যায়। তখন নাকি প্রতি মাসে গড়ে ৩০ হাজার শ্রমিক যেতেন সেখানে। অবশ্য এর পরবর্তী অবস্থা খুবই দুর্ভাগ্যজনক; আজ অবধি সংখ্যাটি ২ হাজার ছাড়ায় নি। এরই মধ্যে গতকালের বণিক বার্তার খবর, চলতি মাসের শেষ দিকে দুবাই সফর করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বলার অপেক্ষা রাখে না, নতুন করে দেশটির শ্রমবাজারে জনশক্তি রফতানি, ভিসা জটিলতা নিরসনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মীমাংসায় উপনীত হওয়াই ওই সফরের লক্ষ্য।

অনেকে মনে করেন, ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০’র ভেনু নির্বাচনের ভোটাভুটি নিয়ে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কিছুটা শৈথিল্য সৃষ্টি হয়েছে। এটি মজবুতকরণে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কলা-কৌশল প্রয়োগে কূটনীতিকদের আরো সতর্কতাই প্রত্যাশা করবেন সবাই। লক্ষ্যণীয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সহযোগিতা চুক্তি হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী সফরের আগেই। কাজটি যেন সুসম্পন্ন হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তাতে সেখানে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত চলমান অচলবস্থা দূর হবে বলে অনেকের ধারণা। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই নাকি আমিরাতে গৃহকর্মী ব্যতীত অন্যান্য শ্রমিকের ভিসা প্রায় বন্ধ রয়েছে। সমস্যাটির সমাধানে এত দীর্ঘ সময় পেরুচ্ছে কেন, তার কারণও খতিয়ে দেখা দরকার। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, আমিরাতের সঙ্গে মূলত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্যই দুবাই যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। একে প্রাধান্য দিয়ে শ্রমবাজারের বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণই কাম্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে শ্রমিকের প্রয়োজন বাড়বে বৈ কমবে না। আর এ সুযোগ নিতে হবে আমাদের। সেজন্য আমিরাতে বাংলাদেশী দ্বারা সংঘটিত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে বিশেষ নির্দেশনাও দেয়া যেতে পারে।

জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন

পর্যাপ্ত প্রচেষ্টা দৃশ্যমান নয়

অভ্যন্তরীণ জলাশয় ও সামুদ্রিক অঞ্চল থেকে মৎস সম্পদ আহরণ করেন এমন মানুষ কম নেই দেশে। মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, আনুমানিক ১৩ লাখ জেলের জীবিকা পুরোপুরি মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীল। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, পুঁজি তো বটেই অধিকাংশ জেলের নিজস্ব জাল ও নৌকা নেই। ফলে অভ্যন্তরীণ জলমহাল ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে দেখা যায় সম্পদশালীরাই তা পাচ্ছেন এবং দরিদ্র-হতদরিদ্র জেলেদের তাদের কাছেই নিম্ন মজুরিতে কাজ করতে হচ্ছে। বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলে এক্ষেত্রে বাড়তি বিপত্তি বলতে হয়, অনেক সময় আবহাওয়া বিবেচনায় না নিয়ে কেবল নিজ লাভের চিন্তায় একশ্রেণীর বৃহৎ মৎস্য ব্যবসায়ী দুর্যোগের মাঝেও জেলেদের সমুদ্রে পাঠান। বলার অপেক্ষা রাখে না, মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতেও দেখা যায়ে এতে। এমন পরিস্থিতিতে জেলের জীবনমান উন্নয়নের প্রশ্ন ওঠে স্বভাবতই। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রকৃত জেলে চিহ্নিত এবং তাদের পরিচয়পত্র প্রদান থেকে শুরু করে সামাজিক নিরাপত্তা জালের আওতায় আনার বর্ধিত উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে। তবু সেগুলো পর্যাপ্ত কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেকের।

ইলিশ সংরক্ষণ ও জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে আরো কী কী করণীয় রয়েছে, সে বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা মিলতে পারে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এ সংক্রান্ত গবেষণা থেকে। বিষয়টি নিয়ে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে; বছরের যে সময়টায় জাটকা মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, তখন জেলেদের অবস্থা কোথায় দাঁড়ায় তার করুণ চিত্রও হয়তো তাদের চোখ এড়ায় নি। উল্লিখিত সময়ে নাকি ৯৯ দশমিক ৫২ শতাংশ জেলেকেই অপেক্ষা করতে হয় ভিজিএফের চালের জন্য! কেউ কেউ বাধ্য হয়ে নামেন জাটকা ধরার মতো অপরাধ কর্মেও। এখান থেকেই জেলেদের সার্বিক পরিস্থিতি অনুমান করা কঠিন হয়। দুঃখজনক হলো, একে তো পর্যাপ্ত কর্মসূচি নেই, তদুপরি যতটুকু রয়েছে সেগুলোর ব্যবহার নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন ও অভিযোগ। অথচ জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে এসব ক্ষেত্রে সুশাসন জোরদার করতেই হবে; পাশাপাশি প্রয়োজনানুসারে বাড়াতে হবে নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি। পিপিআরসি’র গবেষণাপত্রে জেলেদের কল্যাণে নতুন আরেকটি ধারণা উঠে এসেছে। সেটি হলো, ইলিশ রফতানির ওপর কর বসিয়ে আলাদা তহবিল গঠনের মাধ্যমে তা জেলেদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যয় করা। ধারণাটি যাচাই করে দেখতে পারে নীতিনির্ধারকরা।

বাস্তবায়নে অগ্রগতি ও ঘাটতি

শ্রম আইন পুরোপুরি কার্যকর করুন

সাভারের রানা প্লাজায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বর্ধিত উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় গার্মেন্ট শিল্পে শ্রম পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি যে হয়েছে, তা অনস্বীকার্য। কথাটি স্বীকারও করেছে ইউরোপিয়ান কমিশন (ইসি)। তাদের মতে, দুর্ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত গার্মেন্ট শিল্পে উৎসাহব্যঞ্জক অগ্রগতিও রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কিছু ঘাটতিও লক্ষ্যণীয়। সেজন্য তারা জরুরি ভিত্তিতে শ্রম আইনের কার্যকর প্রয়োগ দেখতে চায় বলে খবর গতকালের বণিক বার্তায়। আমাদের গার্মেন্ট পণ্যের একক বৃহত্তম বাজার ইউরোপের কাছ থেকে পাওয়া ওমন মন্তব্য যেন আনন্দের, তেমনি তা অধিক দায়িত্ব পালনের কথাও মনে করিয়ে দেয়। বাংলাদেশের আগামী দশকের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়। আর তা ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি তথা শ্রম পরিবেশ উন্নতকরণ ও শ্রমিকের সুযোগসুবিধা বর্ধিতকরণ ভিন্ন সম্ভব নয় বলা চলে। তাই গার্মেন্ট শিল্পে মানসম্পন্ন শ্রম পরিবেশ বজায় রাখার প্রশ্নটিকে কেবলমাত্র সংকীর্ণ পরিসরে দেখার সুযোগ নেই। বরং আমাদের শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও সরকারের ওপর দায়িত্বের চাপ আগামীতে আরো বাড়বে বলে প্রতীয়মান।

ইসির পর্যবেক্ষণ হলো, সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত গার্মেন্ট খাতে স্বাধীন শ্রম অধিকার চর্চা বৃদ্ধি পেয়েছে; বেড়েছে পেশাগত ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা। তবে শ্রম সংঘ গঠনের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে কিনা কিংবা শ্রম সংঘে আগ্রহীদের হয়রান করা বন্ধ হয়েছে কিনা অথবা সব শ্রমিকের অভিন্ন অধিকার নিশ্চিত হয়েছে কিনা সংশয় রয়েছে। এসব প্রতিটি ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ও দ্রুত পরিবর্তন দৃশ্যমান করে তোলা চাই। পাশাপাশি দৃঢ় করতে হবে কারখানা পরিদর্শন ব্যবস্থা; চূড়ান্ত করতে হবে শ্রম আইন বাস্তবায়নের বিধিমালা। এ অবস্থায় পরিদর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিলম্ব কাম্য হতে পারে না। স্থানীয় শ্রম পরিবেশ ও তা পরিদর্শন ব্যবস্থার আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার বিকল্প আমাদের সামনে নেই বললে চলে। এখনো গার্মেন্টের নির্ভরযোগ্য বিকল্প কোনো শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিতে দেখাচ্ছে না; অদূর ভবিষ্যতে তেমন কিছুর দেখা মিলতে পারে, সে লক্ষণও নেই। তবে ইস্যুটি শুধু গার্মেন্ট ব্যবসা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাপ সামাল দেয়া নয়। শ্রমিক তথা জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে চাইলেও শিল্প-কারখানায় সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে শ্রম আইন পুরোপুরি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এক্ষেত্রে ঘাটতি দূরীকরণে জোর দেয়া প্রয়োজন।

অ্যানিমেশন শিল্পের সম্ভাবনা

বিকাশে চাই সঠিক দিক নির্দেশনা

‘অ্যানিমেশন শিল্পের সম্ভাবনায় হোঁচট’ শিরোনামে যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, তা অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান অ্যানিমেশন পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা চিহ্নিত করতে পেরেছিল। সে অনুযায়ী এক দশকের বেশি সময় আগে উদ্যোগ নিতে শুরু করেন উদ্যোক্তারা। এতে প্রাথমিকভাবে সাফল্যও আসে খানিকটা। কিন্তু এ অ্যানিমেশন শিল্প নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কিছু ভাবার আগেই ক্রমে ব্যবসা হারাতে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন দেশে বেশ কিছু অ্যানিমেশন প্রস্তুতকারী কোম্পানি থাকলেও বাজারে নাকি নেই শুরুর দিককার একটি কোম্পানিও। এদিকে বাংলাদেশের মতো অ্যানিমেশন শিল্প সম্ভাবনাময় একাধিক উন্নয়নশীল দেশের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ওই সব দেশ ২০০৯ সালের পর থেকে এক্ষেত্রে প্রতি বছর প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ২০ শতাংশের বেশি। আন্তর্জাতিক নানা গবেষণা বলছে, প্রায় ৭ শতাংশ করে শিল্পটির বার্ষিক সম্প্রসারণ হচ্ছে; অর্থের হিসাবে যা ২৫০ বিলিয়ন ডলারের কম। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে পারছে না তা অবিলম্বে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কেননা অ্যানিমেশন শিল্পের সম্ভাবনা বিকাশ সংক্রান্ত এ জটিলতা গোটা তথ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতেরও বাস্তবতা বলে কারো কারো অভিমত।

লক্ষ্যণীয়, অ্যানিমেশন শিল্পে বাংলাদেশের ‘বিশাল’ সম্ভাবনা রয়েছে- এ বক্তব্য যথাযথ নয় বলে মনে করেন অনেকে। তবে যতটুকু সম্ভাবনা রয়েছে সেটি ব্যবহার করতে পারলেও বিরাট অর্জন হবে। সেজন্য বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন এবং তাতে সরকারের সহযোগিতা দরকার বৈকি। অ্যানিমেশন উদ্যোক্তারা বহুদিন ধরে এর প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে। বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের বিবেচনার দাবি রাখে। আবার অ্যানিমেশনের মতো সৃজনশীল শিল্পের বিকাশ মেধাসত্ত্ব অধিকার নিশ্চিত না করে সম্ভব নয়। অনেকে জোর দিয়ে বলছেন, অভ্যন্তরীণ বাজার সম্প্রসারিত হলে শিল্পটি শক্তিশালী হবে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বলিউডে স্থানীয় অ্যানিমেশনের প্রবেশ করেছে বৈশ্বিক বাজারে ভারতীয় অ্যানিমেটরদের প্রবেশের অনেক পর। ফলে বাজারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যথেষ্ঠ ভেবেচিন্তে নিতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশ্বব্যাপী অ্যানিমেশন শিল্পের তিনটি ভাগ লক্ষ্য করা যায়- এক. অ্যানিমেশন এন্টারটেইনমেন্ট, দুই. এন্টারটেইনমেন্ট ভিজুয়াল ইফেক্ট এবং তিন. কাস্টম কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট। এর মাঝে উন্নয়নশীল কিছু দেশে শেষোক্তটির প্রবৃদ্ধি বাকি দুটির সমষ্টির কাছাকাছি। শিল্পটির বিকাশে তাই সুপরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হওয়া উচিৎ।

স্বীকৃতিহীন নারীর শ্রম

জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিৎ

শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সংলাপ অনুষ্ঠানে জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদান বিষয়ে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) যে গবেষণা উত্থাপন করেছে, তা নীতিনির্ধারকদের আমলে নেয়া উচিৎ। গতকালের বণিক বার্তাসহ নানা পত্রপত্রিকায় এ সংক্রান্ত যে খবর প্রকাশ হয়েছে তা থেকে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান- দেশে নারীর সিংহভাগ শ্রমই স্বীকৃতিহীন। জানা গেছে, কেবল ২০১৩-১৪ অর্থবছরেই জাতীয় আয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় না নারী কর্তৃক সম্পাদিত এমন কাজের প্রাক্কলিত অংশ জিডিপির আনুমানিক ৭৬ দশমিক ৮ শতাংশ; অর্থের হিসেবে যা ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার সমান। সার্বিক পরিস্থিতি থেকে গবেষকরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, উল্লিখিত কাজের মূল্যমান নারীর মোট আয়ের আড়াই থেকে তিনগুণ অর্থাৎ বাজার বিবেচনায়ও মোট কাজের এক-তৃতীয়াংশের পারিশ্রমিক পাচ্ছেন নারীরা। আরো বড় কথা হলো, এই দে তাদের অদৃশ্য আড়াই-তিনগুণ অবদান বছরের পর বছর রয়ে যাচ্ছে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বাইরে। এ স্থিতাবস্থার নিরসনই কাম্য। কেননা সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য নৈপুণ্য দেখানোর পর নারীর অবদান পায়ে দলে মধ্যম আয়ে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

নারীর এ অবদানের স্বীকৃতি পেতে গবেষণায় একাধিক সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখবেন বলে প্রত্যাশা। আড়াল হয়ে থাকা নারীর ওই জিডিপিতে যুক্ত হলে তা সামগ্রিক অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বৈকি। এতে নারীরা উৎসাহিত হবেন বৃহত্তর অবদান রাখতে। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, অর্থনীতিতে নারীর ভূমিকার প্রকৃত মূল্যায়ন হচ্ছে এ বাস্তবতা বিশেষজ্ঞরা এড়িয়ে যাচ্ছে না। তবে কেমন নীতিকাঠামোর মধ্য দিয়ে যে অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করা যাবে, সে বিষয়ে অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। সেজন্য প্রয়োজনে জাতীয় আয় হিসাব ব্যবস্থায় পরিবর্তনা আনা যেতে পারে। পাশাপাশি বিশেষ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে গৃহস্থালিতে নারীর স্বীকৃতিহীন কাজের ভার লাঘবে। তথ্য মতে, জাতীয় আয়ে অন্তর্ভুক্ত হয় না প্রতিদিন নারীরা এমন কাজ করেন গড়ে ১২ দশমিক ১টি; পুরুষের বেলায় সংখ্যাটি ২ দশমিক ৭। এমনিতে কিছু সাংসারিক ও সামাজিক কারণে নারীরা পরিবারে শ্রম বেশি দিয়ে থাকেন। তবে এর কিছু ক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যেগুলো দূর হলে মূল ধারার উৎপাদনেও নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে বৈ কমবে না। বাড়তি সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে এসব ইস্যুর প্রতি কর্তৃপক্ষের যুক্তিসঙ্গত মনোযোগ দাবিই করবেন সবাই।

পরীক্ষা ছাড়াই সিএফএল বাল্বের চালান ছাড়

কঠোর অবস্থান নিক বন্দর কর্তৃপক্ষ

অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্রমে বাড়ছে কমপ্যাক্ট ফ্লুরেসেন্ট (সিএফএল) বাল্বের চাহিদা। সাধারণ বাল্বের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি দাম হওয়া সত্ত্বেও এটি জনপ্রিয় হওয়ার কারণ মূলত দুটি- শক্তি সাশ্রয়ী ও তুলনামূলকভাবে দীর্ঘস্থায়ী। এর ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিল কমেছে বহু পরিবারে। দেশের সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় তা কোনোই সুফল রাখছে না, এ কথাও বলা যাবে না। তবে সিএফএল বাল্বের একটি নেতিবাচক দিক হলো, এতে ব্যবহার্য পারদ অতিবেগুনী রশ্মি সৃষ্টি করে; যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। আরেকটি বিষয়, সিএফএল বাল্বকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। এক্ষেত্রে পরিবেশগত কিছু ঝুঁকি রয়েছে। ফলে সিএফএল পণ্যের মান নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দিতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে উদ্বেগজনক এক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। সেখানে বলা হয়েছে, বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও ছাড়ের আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত সিএফএল বাল্বের নমুনা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) গবেষণাগারে নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে অত্যন্ত সামান্য। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুল্কায়ন হয় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫৭ কেজি সিএফএল বাল্বের। এর মাঝে নাকি মাত্র পাঁচটি চালান থেকে নমুনা পাঠানো হয় বিএসটিআইয়ে পরীক্ষার জন্য। এদিকে সম্প্রতি বিএসটিআই কর্তৃক একাধিক অভিযানে বাজারে নিম্নমানের সিএফএল পণ্য বিস্তারের প্রমাণ মেলে। এ অবস্থায় মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ওসব পণ্য ব্যবহারে রোধে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

আমদানি নীতি আদেশ ২০১২-১৫ অনুযায়ী, বন্দর থেকে চালান ছাড়ের আগে বিএসটিআই থেকে মানের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে ৪৩টি পণ্যের বেলায়; যার মাঝে অন্যতম হলো সিএফএল বাল্ব। এক পদস্থ রাজস্ব কর্মকর্তা আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, এক্ষেত্রে আমদানিকারকদের অনীহা রয়েছে। কেননা পণ্যের মান পরীক্ষা করতে গিয়ে অনেকটা সময় ব্যয় করে ফেলে বিএসটিআই। এর মাশুল আবার গুনতে হয় আমদানিকারকদের। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থাটির মান নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে হবে যাতে অধিক সময়ক্ষেপণ হ্রাস পায়। পাশাপাশি বাজারের ওপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে নিম্নমানের পণ্য গ্রাহকের হাতে না যায়। এটি কিন্তু গ্রাহক প্রতারণারও ইস্যু। একই সঙ্গে ওই ধরনের পণ্যের প্রবেশ রোধে আইন অনুযায়ী কঠোর অবস্থান নেয়া উচিৎ বন্দর কর্তৃপক্ষের।

জেন্ডার ব্যবধান সূচকে বাংলাদেশের সাফল্য

সমতা আনায়নের বহু পথ এখনো বাকি

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) কর্তৃক প্রকাশ জেন্ডার ব্যবধান সূচকে (গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স বা ট্রিপল জিআই) চলতি বছর বাংলাদেশের অর্জিত যে সাফল্যের কথা বিধৃত হয়েছে বণিক বার্তাসহ গতকালের পত্রপত্রিকায় সেটি নিঃসন্দেহে সুখবর। দেখা যাচ্ছে, উক্ত সূচকে গত বছর যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫তম (১৩৬টি দেশের মধ্যে), এবার ৬৮তম (১৪২টি দেশের মাঝে)। আরো উল্লেখযোগ্য করার মতো বিষয়, এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। তবে আমাদের উচিৎ হবে, আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বরং জেন্ডার সমতা রক্ষায় প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। কেননা, প্রথমবার প্রতিবেদন তৈরিতে অংশ নিয়েই আলোচ্য সূচক তালিকায় ৭তম স্থান অধিকার করে ফেলেছে আফ্রিকার দেশ রোয়ান্ডা। এ দৃষ্টান্ত সামনে রাখলে সন্তুষ্টি কমে বৈ বাড়ে না। আরেকটি বিষয় হলো, সূচকটি জেন্ডার সমতা আনায়নে একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের সাফল্য যেভাবে বলে, নারী ক্ষমতায়নের প্রকৃত চিত্র সেভাবে তুলে ধরে না। অবশ্য সেখান থেক একটি বিষয় স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ জেন্ডার সমতা আনায়নে যে মাত্রায় ব্যবস্থা নিয়েছে তার সাফল্য হার বেশি। তাই জেন্ডার সমতা আনায়নের দীর্ঘ পথে পরিসংখ্যানটিকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নেয়া উচিৎ আমাদের।

প্রতিবেদনটি বলছে, উক্ত সময়ে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ কমলেও সেটি বেড়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায়; উন্নতি দেখা যাচ্ছে নারী স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতেও। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে আমাদের নারীরা পিছিয়েছেন বলে প্রতিবেদনের অভিমত। এ উপসূচকে আমাদের ব্যবধান বৃদ্ধি বড় কিছু নয়। তাছাড়া এক্ষেত্রে কিছু কারিগরি জটিলতা রয়েছে বলেও প্রতীয়মান। তবু কথা হলো, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়িয়ে তুলতে হবে। নইলে ব্যাহত হবে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন। সেজন্য সার্বিকভাবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং দলীয় গণতন্ত্রের চর্চা বৃদ্ধি কাম্য। দেশজ অর্থনীতির অধিকতর বিকাশ এবং নারী নির্যাতনের সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নে সরাসরি যুক্ত। ক’দিন আগে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার ভিত্তিতে প্রস্তুত সহযোগী দৈনিকে প্রকাশ এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, আনুমানিক ৪৭ শতাংশ নারী যৌন হয়রানি এড়ানোর কৌশল হিসেবে নির্দিষ্ট এলাকা এড়িয়ে চলেন; গণপরিবহন ব্যবহার বন্ধই করে দিয়েছেন ১ শতাংশ নারী! এ দুই পরিসংখ্যানই দেশে নারী ক্ষমতায়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। তাই আত্মতুষ্ট না হয়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে নারীকে ক্ষমতায়িত করতে কার্যকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ

উৎকর্ষের উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই

অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ বিবেচনায় ১৮৯টি দেশের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৭৩তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে রয়েছে শ্রীলঙ্কা (৯৯তম) এবং বাংলাদেশের পূর্বে রয়েছে ভারত (১৪২তম)। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, স্কোর আগের তুলনায় বাড়লেও র‍্যাংকিংয়ে পিছিয়েছি আমরা। অনেকে বলছেন, অন্যান্য দেশ বেশি ভালো পারফরম্যান্স দেখানোই এর কারণ। ওই তালিকার ভিত্তি বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ সংস্থা আইএফসির ‘ডুয়িং বিজনেস রিপোর্ট-২০১৫’। গত প্রতিবেদনের তুলনায় এবারেরটিতে নতুন বেশ কয়েকটি মানদণ্ড যুক্ত হয়েছে গবেষণায়। এটিও আমাদের পিছিয়ে পড়ার কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান দেখে আমাদের সন্তুষ্টি লাভের কিছু নেই বলেও প্রতীয়মান। উদীয়মান ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও খুব একটা দুশ্চিন্তা নেই। তবে আলোচ্য প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে ভাবার রয়েছে অনেক কিছু। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্যবসার পরিবেশ নিশ্চিতকরণে আমাদের ক্রমান্নতি তথা উৎকর্ষ দেখা যাচ্ছে না। আগের বছরের তুলনায় ২০১৩-১৪ সালে ব্যবসায় পরিবেশে অধিকতর উন্নতি অর্জনকারী দেশের তালিকায়ও রয়েছে সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে; যেখানে বাংলাদেশের তুলনায় ‘বাজে’ পারফরম্যান্স দেখানো ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোও (১৮৪ তম) রয়েছে। সুখবর হতো তাতে বাংলাদেশের উল্লেখ থাকলে। বলিষ্ঠ নীতি সহায়তা না দিলে এক বছরের মাঝে ব্যবসায়িক পরিবেশে বিরাট উন্নতি প্রত্যাশা করা সমীচিন নয়। কিন্তু এ সময়ের মাঝে কি অন্তত বলার মতো ক্রমান্নতি আমরা প্রত্যাশা করতে পারি না। এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিৎ হবে প্রতিবেদনটিকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে পরিস্থিতি উত্তরণের উদ্যোগ গ্রহণ।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের চাপ হ্রাসের জন্য অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নয়ন জরুরি। জনবহুল এক্ষেত্রে দেশে এমনিতেই কিছু অন্তর্নিহিত দুর্বলতা ছিল। ওদিকে অস্বীকার করা যাবে না, বিগত কয়েক দশকে সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ব্যবসায়িক পরিবেশের বড় উন্নতি ঘটেছে। তবে মূল সমালোচনা হলো, বিশ্বায়িত বাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে আমরা ব্যাপকভাবে সুবিধা নিতে সমর্থ হলেও চিত্রটা প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সঙ্গে ঠিক সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাই সঠিক পথ চিহ্নিত করে জোর প্রচেষ্টা নিতে হবে সরকারকেই। সেজন্য ব্যবসা চালুকরণ আরো সহজ করা দরকার। বর্তমান শাসনামলেও এ বিষয়ে একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবু তার দৃশ্যমান ফল আশানুরূপ নয়। স্থাপন-নির্মাণের অনুমোদন প্রাপ্তি নিয়েও কিছু জটিলতা রয়ে গেছে বলে অভিযোগ। ব্যবসা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি প্রাপ্তির প্রক্রিয়া আগের চেয়ে কতটা সুবিধাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সে কথা সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। আবার বিদ্যু-জ্বালানি পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে আগামি বছর ‘ডুয়িং বিজনেস রিপোর্টে’ তার প্রভাব পড়বে নিশ্চিয়ই। সে কথা বলা যায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর পরিশোধ, ব্যবসা চুক্তি কার্যকরকরণ, সীমান্ত বাণিজ্য প্রভৃতির বেলায়ও। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বলেছেন, রাজস্ব নীতি ও মুদানীতির কার্যকারি বৃদ্ধির জন্য হলেও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন করতে। পাশাপাশি গল্পোচ্ছলে সতর্ক করেছেন এ বলে যে, ১৯৮৬ সালে স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জার উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিধস্ত হওয়ার পেছনে বিরাট কোনো কারিগরি ত্রুটি দায়ী ছিল না; ছিল একটা ছোট নাটের দুর্বলতা। প্রতীকী এ উপদেশটি আমাদের নীতি নির্ধারকরা গ্রহণপূর্বক কাজ করবেন, সে আশাই সবার।

Published in Bonik Barta, September 2014

টেকসই উন্নয়নে সমুদ্র অর্থনীতি

প্রত্যাশানুযায়ী অর্জনে যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন

আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তির পর সমুদ্র অর্থনীতির (ব্লু ইকনোমি) সদ্ব্যবহারে সরকার দ্রুততার সঙ্গে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা উৎসাহব্যঞ্জক। বলা যায়, সে ধারাবাহিকতায়ই সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয় ‘ব্লু ইকনোমি’ বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক কর্মশালা। সেখানে সমুদ্র অর্থনীতিকে উন্নয়নে আগামী দিনের নতুন হাতিয়ার বলে মত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটি কাজে লাগিয়ে দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার যে আহ্বান তিনি জানিয়েছেন তাও পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আমাদের নীতিনির্ধারকরা সমুদ্র অর্থনীতির প্রকৃত সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করতে চাইছেন। সে উদ্দেশ্যেই ওই কর্মশালার আয়োজন। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সমুদ্র অর্থনীতি থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাফল্য অর্জনে পদক্ষেপ নেবেন বলেই সভার প্রত্যাশা।

সেজন্য শুরুতেই আমাদের চাহিদা ও ভারসাম্য রক্ষা করে প্রকৃতির তা পূরণের ক্ষমতার সীমাটি নির্ধারণ করে নেয়া বাঞ্ছনীয়। বর্ধিত সমুদ্রসীমা থেকে খাদ্য উপাদান সংগ্রহ একটি প্রবল সম্ভাবনাময় বাণিজ্য। তার সঙ্গে সমুদ্রের বিভিন্ন ব্লক থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ থাকছে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্ব রয়েছে বাংলাদেশের বন্দর ও সমুদ্র পথের। আবার অপ্রাণিজ নানা খনিজ সম্পদেও বঙ্গোপসাগর ভরপুর বলে মনে করেন অনেকে। সমস্যা হলো, এসব সম্ভাবনা কতটা বাস্তব সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেই আমাদের হাতে। সেটি তৈরিতে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি সমুদ্র অর্থনীতির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা সমুদ্র অর্থনীতির সদ্ব্যবহারের জন্য যে খুবই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন, সে কথা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক কর্মশালাটিতে উল্লেখ করেছেন বক্তারা। তাই ধীরে ধীরে সামগ্রিক উন্নয়নে সমুদ্র অর্থনীতির অবদান বৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। সেজন্য উপযুক্ত মানবসম্পদ গড়ে তোলা চাই। এক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতির ইস্যুটি প্রধানমন্ত্রী নিজেই তুললেন। প্রত্যাশা থাকবে, বিষয়টির ওপর যথাযথভাবে জোর দেয়া হবে এবং এখানে বিদেশী সহায়তার প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করা হবে। কর্মশালায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। সেটি হলো, বর্ধিত সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধান। সে লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ এরই মধ্যে নেয়া হয়েছে। তবু সেটি পর্যাপ্ত নয় বলে কারো কারো ধারণা। এক্ষেত্রে আমাদের নৌবাহিনীকে কেন্দ্রে রেখে বিস্তারিত সমুদ্র নিরাপত্তা পরিকল্পনার কাজ এগিয়ে নেয়ারও বিকল্প কমই আছে বৈকি।

শিশু-কিশোরদের সেলফোন আসক্তি রোধ

প্রয়োজনে আইন প্রণয়নে দৃষ্টি দেয়া হোক

৭৩ শতাংশ টেলিঘনত্বের এ দেশে সেলফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কয়েক কোটি; যার এক উল্লেখযোগ্য অংশ হলো শিশু-কিশোর। গত কয়েক মাসে থ্রিজি সেবার গ্রাহক যে মাত্রায় বেড়েছে, সেখানেও নাকি অপ্রাপ্তবয়স্কদের অবদানই বেশি। এদিকে আইনানুসারে ১৮ বছরের কম বয়সী কারো সেলফোন ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়ার কথা নয়। তা সত্ত্বেও অভিভাবকের সম্মতিপত্র সাপেক্ষে অথবা তথ্য গোপন করে বিভিন্ন সেলফোন অপারেটর সেবা নিচ্ছে তারা। এর নৈরাশ্যজনক প্রভাবের কথা বর্ণনাও হয়েছে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ এক প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সেলফোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার শিশু-কিশোরদের নৈতিকতায় ভাঙন ধরাচ্ছে; বেপথে নিয়ে যাচ্ছে তাদের মানসিকতা। সেলফোনে ঘনিষ্টদেরও মিথ্যা বলা নাকি একটি খুবই স্বাভাবিক প্রবণতা তাদের মাঝে। আবার কুৎসা রটিয়ে কিংবা ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে কাউকে বিব্রত করার প্রবণতাও দেখা যায় অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক সেলফোন ব্যবহারকারীর মাঝে। অতিরিক্ত সেলফোনের ব্যবহার একশ্রেণীর শিশু-কিশোরদের অসামাজিক করে তুলছে। এরা শুধু অভিভাবক নয়, অন্যদের সঙ্গেও অভব্য আচরণ করে থাকে। সেলফোনের ব্যবহার ব্যাপক প্রভাব ফেলছে পড়াশুনায়। দেশি-বিদেশি নানা গবেষণা-জরিপে মিলছে এসব তথ্য। এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে অতিরিক্ত সেলফোন ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীরা অন্যদের তুলনায় গণিতে বিশেষভাবে খারাপ ফল করছে। আরো মারাত্মক হলো, তাদের পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি। এরা ব্যাপকভাবে শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের ছবি দেখে থাকে তাই নয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সংঘটিত অনেক ঘটনাই ইঙ্গি দিচ্ছে একশ্রেণীর শিশু-কিশোর উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে পর্ণোগ্রাফি ব্যবসায় এরই মধ্যে জড়িত থাকতে পারে। লক্ষ্যণীয়, পর্ণোগ্রাফি ও ক্ষতিকর কনটেন্টের বিস্তার রোধে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালানো হয়। প্রশাসনও এ বিষয়ে সর্বদা সজাগ বলেই প্রতীয়মান। তবু অনেকে মনে করেন, নিছক ক্ষতিকর কন্টেন্ট নয়, নতুন প্রজন্মের মাঝে সেলফোন আসক্তি রোধে এবং এ চমৎকার প্রযুক্তিটির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে মনোযোগী হওয়া উচিৎ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)।

অপ্রাপ্তবয়স্কদের কেমন সেলফোন সেবা প্রদান করা উচিৎ তথা এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর সীমারেখা কী হবে সে বিষয়ে অনেক দেশেই উদ্যোগ লক্ষ্যণীয়। বিটিআরসির জন্য সেগুলো সহায়য়াক বলে পরিগণিত হতে পারে। খেয়াল করার মতো বিষয়, সেলফোন প্রযুক্তিতে উৎকর্ষ অর্জন করা দেশগুলো ইদানীং শিশু-কিশোরদের মাঝে এর ব্যবহার হ্রাসের ওপর জোর দিচ্ছে এবং ইন্টারনেট কনটেন্ট ফিল্টার করছে। এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিও এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কী (নীতিমালা প্রভৃতি), সেটি বিটিআরসিকেই নির্ধারণ করতে হবে।

প্রায় ৭৯ শতাংশ খেলাপি ঋণই আদায় অযোগ্য!

এ প্রবণতা দ্রুত রুখতে হবে

২০১২ সাল শেষে স্থানীয় ব্যাংকিং খাতে আদায় অযোগ্য ক্ষতিকর খেলাপি ঋণের পরিমাণ নির্নীত হয় মোট খেলাপি ঋণের আনুমানিক ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ। সংখ্যাটি ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশে পরিণত হয়েছে এর ঠিক পরেরে বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে। এদিকে একই বছর প্রায় ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি নয় বিতরণকৃত মোট ঋণের মাঝে। আর এসব তথ্য মিলেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ২০১৩’তে। বলা বাহুল্য, এ বিপুল পরিমাণ আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ আমাদের ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি বোঝা এবং মারাত্মক হলো, এটি ক্রমে বেড়ে ওঠার প্রবণতাটি। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এও জানা যায়, আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণের বৃহদাংশই আবার সৃষ্টি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয়। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, খেলাপি কেন্দ্রীভূত থাকছে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকে। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী স্পষ্টত সিংহভাগ খেলাপি ঋণ মাত্র ৫টি ব্যাংকের। একে সুখবর হিসেবে ধরে নেয়ার কোনো কারণ নেই। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের বক্তব্য অনুসরণে এমন মন্তব্য করাই যায় যে, উল্লিখিত সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোয় করপোরেট সুশাসনের যে ঘাটতি ছিল, অনিয়মগুলো যে ইঙ্গিতই বহন করছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ব্যাংকিং খাতের মাঝে বিদ্যমান ওই বিপদজনক প্রবণতা রুখতে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জোরালো উদ্যোগই প্রত্যাশা করেন সবাই।

রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকে জালিয়াতি, অনিয়মের ঘটনা উদ্ঘাটনের পর ব্যাংকিং খাতে থেকে বড় ঝুঁকি অপসারণে উদ্যোগ দেখা গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। গভর্নর বলেছেন এ সাফল্যে আত্মতুষ্ট না হতে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিতে তার এ বক্তব্যের ভিত্তিতে তদারক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে আর্থিক ঝুঁকি সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই তার কারণ নির্মূলের বেলায় সতর্ক থাকতে হবে; দেখতে হবে তাতে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম আবার ব্যাহত না হয়। স্ব-উদ্যোগ ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত ভূমিকা হলো পথ নির্দেশনা জোগানো; কেউ আবশ্যকীয় শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। এগুলো নিশ্চিত না হলে একটি শক্তিশালী ও টেকসই ব্যাংকিং খাতের প্রত্যাশা হবে সুদূরপরাহত। এ বিষয়ে তাই সরকারের পর্যাপ্ত মনোযোগই কাম্য।

মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণা

কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে

মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রাহক প্রতারণার যে খবর ছাপা হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, সেটি আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। খুলনা, যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ ও টঙ্গীর (গাজীপুর) একাধিক ঘটনা উল্লেখ করে তাতে বলা হয়েছে, এখনো সক্রিয় কিছু মাল্টিপারপাস বহাল তবিয়তে সর্বনাশ করছে গ্রাহকের। বারবার প্রতারণা সত্ত্বেও গ্রাহকরা কেন ছুটছেন সেসব প্রতিষ্ঠানে, তার কারণও অনুমান করা যায় প্রতিবেদন পাঠ করে। সেটি হলো, তথাকথিত ওসব মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানে অব্যাহত রয়েছে ব্যাংকিং কার্যক্রম; ঋণ প্রদান ও আমানত সংগ্রহ করছে তারা। এদিকে স্থায়ী আমানতের গ্রাহকের সামনে রাখা হচ্ছে উচ্চ সুদের প্রলোভন। সাতক্ষীরার একটি ঘটনায় জানা যায়, এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের মাসিক আড়াই হাজার টাকা সুদ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে গ্রাহকদের আনুমানিক সাড়ে ১২ কোটি টাকা। আবার কিছু মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ঋণ দেয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে। কিছু ক্ষেত্রে নাকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সকালে ১ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে সন্ধ্যায় ১ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করতে হয় ওমন মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠানকে। তাদের ঋণে মাসিক সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি ধার্য হয় বলেও জানা যায়। কথা হলো, গত বছর প্রণীত আইন অনুযায়ী কোনো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ নেই। তার পরও কীভাবে তারা অস্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে, সে কারণ অনুসন্ধান করা দরকার সবার আগে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি কর্তৃক একশ্রেণীর মানুষের প্রতারিত হওয়ার মূল কারণ হলো অতিরিক্ত লোভ। রাতারাতি বড়লোক হওয়ার পথ হিসেবে অনেকেই বেছে নেন এটি। তারা খতিয়েও দেখেন না, যে হারে তারা মুনাফা পেতে চাইছেন সেটি আদৌ বাস্তবসম্মত কিনা। এ সুযোগকে ভালোভাবেই পুঁজি করেছে সুযোগসন্ধানীরা। তবে এখানে প্রশাসনের দায়িত্ব আছে। সমবায় বিভাগের অভিযান পরিচালনা ও মাঝে মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মধ্যে দিয়ে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে গ্রাহক প্রতারণা প্রতিরোধ করা সহজ হবে না। এক্ষেত্রে আসলে অব্যাহত জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালু রাখা দরকার, যে ধরনের উদ্যোগের ঘাটতি দৃষ্টিকটুভাবে লক্ষ্যণীয়। সমবায় বিভাগের দায়িত্ব হলো, লাইসেন্স প্রদানের পূর্বে তারা কাকে লাইসেন্স দিচ্ছেন, সেটি ভালোভাবে যাচাই করা। সুষ্ঠুভাবে নিয়মিত নজরদারি হলে এক্ষেত্রে প্রতারণার ঘটনা অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব বলে কারো কারো ধারণা। বেশিরভাগ সময়ে মাল্টিপারপাস প্রতারককে বিদেশে পালিয়ে যেতে শোনা যায়। কেউ কেউ নাকি লাগাতারভাবে বিভিন্ন এলাকায় ফাঁদ পাতেন। এ বিষয়ে গ্রাহক সতর্কতা অবলম্বনে সহজেই কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে প্রশাসন। বার বার মাল্টিপারপাস প্রতারণা সংঘটিত হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া বা শাস্তি প্রদানে বিলম্ব। বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। প্রতারকদের শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে সমাজে ওই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতেই পারে। সেজন্যই এসব ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। সবাই চাইবেন, এটি সক্রিয় বিবেচনায় রাখুক সরকার।

ই-গর্ভন্যান্স সূচকে বাংলাদেশ

প্রকল্প পর্যালোচনাপূর্বক সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে তৈরি ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স, (ইজিডিআই) ২০১৪-এ দেখা যাচ্ছে, জনগণের চাহিদা পূরণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার পরও ই-গর্ভন্যান্সে বাংলাদেশের অবস্থান তেমন সন্তোষজনক নয়। কিছু ক্ষেত্রে আমরা উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিচারে যেটি যে সামান্য, তা স্পষ্টও হয় গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত খবর পড়ে। ডিজিটাল বাংলাদেশ নিছক একটা স্লোগান নয়। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য যে নায্য ও বিচক্ষণ পরিকল্পনা দরকার হয়, তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশও এটি। ফলে নিছক সমালোচনার খাতিয়ে সমালোচনা নয়, সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ই-গভর্ন্যান্সে আমরা আশানুরূপ পারফরম্যান্স কেন দেখাতে পারলাম না, সেটির কারণ খতিয়ে দেখা জরুরি। আলোচ্য সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো করতে দেখা গেছে শ্রীলঙ্কাকে। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও তারা কীভাবে ওই অবস্থানে পৌঁছল, সে দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতাও মিলিয়ে নিতে হবে।

অনলাইন সেবা, টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো ও মানব সম্পদের সামর্থ্য- এ তিন উপসূচক মিলে নির্ধারণ করে ইজিডিআইয়ে একটি দেশের অবস্থান। অনেকে মনে করেন, ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা, ব্যবহারে অদক্ষতা, পর্যাপ্ত ও সহজলভ্য অবকাঠামোর অভাব (বিদ্যুৎসহ) প্রভৃতি কারণে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পাচ্ছি না। এক্ষেত্রে সুসমন্বিত পরিকল্পনা ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের কথাও তোলা দরকার। লক্ষ্যণীয়, ই-গর্ভন্যান্সে তিনটি সম্পর্ক অধিক গুরুত্বপূর্ণ; এক. গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট (জিটুজি), দুই. গভর্নমেন্ট টি বিজনেস (জিটুবি) ও তিন. গভর্নমেন্ট টু সিটিজেন (জিটুসি)। এক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প অনুসারে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের গাফিলতি থাকতে পারে বলে কারো কারো অভিমত। সেজন্যই সরকারের উচিৎ দ্রুত প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করা। জনগণের অর্থের অপচয় তো আছেই, এক্ষেত্রে সময়ও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরই মধ্যে কর্মসংস্থান জোগানোর চাপ বেড়েছে সরকারের ওপর। আগামীতে তা আরো বাড়বে বলে ধারণা। এদিকে আমাদের বৃহত্তম শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরতে বিলম্ব হওয়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেক্ষেত্রে দ্রুত বিকল্প শ্রমবাজার খুঁজে পাওয়া সহজ হবে না। এমন পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটা উত্তম উপায় হতে পারত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাত। এ বিবেচনা থেকেও চলমান প্রকল্পের বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা হওয়া জরুরি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের বীমা

বাধ্যতামূলক করার বিবেচনা রাখুন

সরকারি-বেসরকারি মিলে দেশের প্রায় শ’খানেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশিরভাগেরই বীমা করা নেই বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। খবরটি দুশ্চিন্তা জাগায় বৈকি। কেননা এর সঙ্গে আর্থিক ও অর্থবহির্ভূত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইস্যু যুক্ত। বলার অপেক্ষা রাখে না, বীমা থাকলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিশেষত কেন্দ্র সংস্কার ব্যয়ে অধিকতর জবাবদিহিতার আওতায় আসত। অনেকে কিন্তু মনেই করেন যে, মূলত এজন্যই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বীমা করানোর দিকে তেমন মনোযোগ দেয়া হয় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। দ্বিতীয় ইস্যু হলো, স্বভাবতই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। আবার সেখানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিগুলো স্পর্শকাতর; সামান্য অবহেলায়ই তা নষ্ট হতে পারে কিংবা দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। কয়েক মাস আগে ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মেঘনাঘাট বিদ্যুকেন্দ্র আগুনে পুড়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। এতে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছে। এমন ঘটনা আরো রয়েছে। অথচ বীমা সুবিধা থাকলে দুর্ঘটনায় পুরোপুরি কিংবা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়েক ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করা যেত। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে স্থানীয় বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ বিপুলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার প্রতিফলন প্রতিভাত হয় বর্ধিত বিদ্যুৎ সরবরাহের মধ্যে দিয়ে। এমন পরিস্থিতি ঝুঁকি হ্রাসের জন্যও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বীমা করানোয় দৃষ্টি দেয়া উচিৎ সরকারের। অনেকে দেশেই এটি কিন্তু আজ খুবই স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া; বরং কিছু দেশে তা বাধ্যতামূলক। আমাদের এখানেও সেটি করা যায় কিনা দেখা দরকার।

লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বীমা সুবিধার বেলায় দু’রকম চিত্র ফুটে উঠছে সরকারি ও বেসরকারি খাতে। পিডিবি বীমা সুবিধা নেয়ার প্রতি তেমন ইচ্ছুক নয় বলেও প্রতীয়মান। কারণ হিসেবে বোর্ডটির চেয়ারম্যান বণিক বার্তার কাছে যে যুক্তি তুলে ধরেছে সেটিও এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই। তার মতে পিডিবির বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেশি এবং সেগুলোয় দুর্ঘটনার রেকর্ড কম। আবার বীমার জন্য নতুন করে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। এসব বিবেচনায়ই নাকি বীমার পরিকল্পনা তাদের নেই আপাতত। এদিকে অনেক বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রই বীমা করার ব্যাপারে উৎসাহী, তবে অনাগ্রহ রয়েছে বীমা কোম্পানির। তাদের ব্যবহৃত মেশিনারির মান নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই। সমস্যা হলো, এদেরই বীমার আওতায় বেশি আনা দরকার বলে কারো কারো ধারণা। আবার তা সরকারি খাতকে এ নিয়ন্ত্রণের বাইরে রেখে নিশ্চিত করা কঠিন। এক্ষেত্রে সরকারের বিচক্ষণ ভূমিকাই প্রত্যাশা করেন সবাই।

মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২

বাস্তবায়নে যেন প্রভাব না ফেলে

পাস হওয়ার দু’বছরের মাথায় কার্যকর হওয়ার আগেই ব্যবসায়ীদের চাপে সরকার মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ সংশোধন করতে যাচ্ছে বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। এখানে উল্লেখ করা দরকার আইনটি ২০১৫ সালে ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এখন বেঁকে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাবনার অন্যতম বিষয় হলো, পুরনো আইনটি তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন আরেকটি আইনের বাস্তবায়ন বাস্তবসম্মত হবে না। অস্বীকার করা যাবে না, সবাই গত ২৩ বছর ধরে মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১-এ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে নতুন আইন বর্তমানেরটি থেকে পুরোপুরি ভিন্ন কিনা, সে নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। কেননা মূল্য সংযোজন কর তথা মূসক ব্যবস্থায় তিন ধরনের রাজস্ব আদায় করা হতো; এক. মূসক বা ভ্যাট, দুই. সম্পূরক শুল্ক বা সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি (এসডি) ও তিন. টার্নওভার ট্যাক্স (টিটি)। ফলে নামে কিছুটা পরিবর্তন এলেও অন্তর্নিহিতভাবে বস্তু একই; যদিও উভয়টি পরিচালনার পথ ও পদ্ধতি আলাদা। এক্ষেত্রে অভ্যস্ততার বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) উচিৎ এটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ দূর করা। সেজন্য ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রভাব বিশ্লেষণের যে আহ্বান জানিয়েছেন সেটিকেও স্বাগত জানানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে নতুন আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এনবিআরের কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তা দূর করতে হবে দ্রুতই যেন সংশোধনীর আহ্বান নতুন আইন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে।

মূল কথা হলো, কেবল এনবিআরের একার পক্ষে নতুন আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় এবং ব্যবসায়ীরা এ প্রক্রিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফলে আইন সংশোধনে ব্যবসায়ীদের আহ্বানের প্রতি সরকারের ইতিবাচক সাড়াকে বুদ্ধিদীপ্তই বলতে হয়। এখন সংশোধনের উদ্যোগ দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার; নতুন আইন কার্যকরে কিছু সময় এখনো বাকি। তবে সেজন্য সর্বাগ্রে নতুন আইনে আপত্তির ইস্যুগুলো চিহ্নিতপূর্বক আলোচনা বসতে হবে ব্যবসায়ীদের। নতুন আইন এনবিআর একা একা প্রণয়ন করে নি। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা থেকে শুরু করে ভোক্তারা পর্যন্ত ছিলেন; বিস্তারিত আলোচনাও নাকি হয়েছে ২০ পর্বে। তার পরও যেহেতু আপত্তি, পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়নের জন্য তাদের উচিৎ চাহিদাগুলো এনবিআরের কাছে প্রেরণ করা। সেটি বিস্তারিত হওয়াও বাঞ্ছনীয়। কেননা ব্যবসায়ীদের কিছু আপতি নাকি বোধগম্য হচ্ছে না অনেকের কাছেই। বড় ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে সেটি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিকাশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। নতুন আইনের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কাঙ্ক্ষিত বিকাশ কীভাবে নিশ্চিত হবে, সে বিষয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে বৈকি। তবে সেটি ওই ধরনের শিল্প বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করবে না বলে কারো কারো ধারণা। উপরন্তু নতুন আইনে ডিসকাউন্ট তথা ছাড়ের মতো ইস্যুতে বিক্রেতার পক্ষে উদার অবস্থান নিয়েছে এনবিআর। বাজার তথা অর্থনীতিতে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে ব্যবসায়ীরা এসব বিষয় বিবেচনায় নেবেন বলেই সবার প্রত্যাশা।

মেট্রোরেলের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদন

নির্দিষ্ট সময়েই সম্পন্ন করুন প্রকল্প

মেট্রোরেল প্রকল্পের ‘অ্যালাইনমেন্ট’ ও ১৬টি স্টেশনের চূড়ান্ত অনুমোদনের খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। মাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি)-৬ নামে পরিচিত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আনুমানিক ২০ কিলোমিটারের এ উড়ালরেল ঘিরে রাজধানীবাসীর স্বপ্ন তো বটেই, দেশবাসীরও আগ্রহের শেষ নেই। বিপুল জনসংখ্যার এ দেশে অনেকের কাছেই যানজট নামক ভোগান্তি থেকে মুক্ত হওয়ার মোক্ষম উপায় হিসেবে কল্পিত হচ্ছে এ মেট্রোরেল। প্রত্যাশানুযায়ী, পথটি সম্পন্ন হলে এক ঘণ্টার কম সময়ে হাজার হাজার যাত্রীকে উত্তরা থেকে পৌঁছানো যাবে মতিঝিল; যা আজকাল ঈদের ছুটিতে ঢাকা ফাঁকা না হলে অকল্পনীয় বটে। তাই এর প্রতি সরকারের অধিক মনোযোগই কাম্য। লক্ষ্যণীয়, আমাদের মেগা প্রজেক্টগুলোর পরিকল্পনা-বাস্তবায়ন সন্তোষজনক নয়। পদ্মা সেতু নির্মাণ দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে; রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের অগ্রগতির খবরও মেলে না খুব একটা; এক্ষেত্রে গভীর সমুদ্র বন্দর বা এলএনজি টার্মিনাল বসানোর পরিকল্পনার কথা না হয় বাদই থাক। ফলে স্বভাবতই আমাদের প্রত্যাশা বাড়ছে মেট্রোরেল ঘিরে। এ অবস্থায় সরকারের উচিৎ হবে, প্রকল্পটি যেন নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে সম্পন্ন হয় তার ওপর জোর দেয়া।

খেয়াল করার মতো বিষয়, মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কয়েক ধাপে। জানা যায়, এর মাঝে সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হলেও জমি অধিগ্রহণের পাশাপাশি ঠিকাদার নিয়োগে চলে যাবে একাধিক বছর। এসব কাজ যত দ্রুত শুরু করা যায় ততই মঙ্গল। রাজধানীর ভেতরে জমি অধিগ্রহণ সুসম্পন্ন করা কঠিন বৈকি। তদুপরি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেগুলো সুখকর নয়। ঠিকদার নিয়োগেও সজাগ থাকতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের একটা বড় ভূমিকা থাকছে। অনিয়ম, কাজে মানে ছাড় প্রভৃতি বিষয়ে তাদের স্পর্শকাতরতা কিন্তু আমলে নিতে হবে আমাদের। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো, স্বভাবতই মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলবে নগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয়ই। বাড্ডা, মগবাজার, ফার্মগেট, সোনারগাঁও হোটেল কিংবা ধানমণ্ডি- প্রতিটি স্থানেই যাত্রী ও বাহনের চলাচল যথাযথ তুলনামূলকভাবে বেশি। ব্যবস্থাপনা থাকায় এগুলোকে যানজটসহ নানা ভোগান্তির অতিরিক্ত উৎসে পরিণত হতে দেখা গেছে সাম্প্রতিককালে। মেট্রোরেল বাস্তবায়নে এর প্রতি নজর রাখা চাই। বড় কথা হলো, যথাসম্ভব স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রেখে দ্রুততার সঙ্গে ও মানসম্মতভাবে সম্পন্ন করতে হবে মেট্রোরেল নির্মাণ।

উদ্ধার-পুনর্দখলের দুষ্টচক্রে বন্দী রেলওয়ের জমি

বলিষ্ঠ রাজনৈতিক অবস্থান প্রয়োজন

দেশজুড়ে রেলওয়ের জমি রয়েছে ৬১ হাজার একরের ওপরে। এর একাংশ ইজারা দেয়া হয়েছে; সেখান থেকে বিপুল অংশ চলে গেছে অবৈধ ভোগ-দখলে। এটি নতুন কোনো চিত্র নয়। তবে বিষয়টিকে ভিন্ন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে লক্ষ্য করার সুযোগ মেলে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের আলোকে। তাতে আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, গত চার বছরে প্রধানত দুর্ঘটনা সংঘটনের প্রেক্ষাপটে অভিযান চালিয়ে ১৮৪ একর জমি উদ্ধার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৮০ একরই নাকি আবার পুনর্দখল হয়ে গেছে গত এক বছরে। উদ্ধারের তুলনায় তীব্র এ পুনর্দখলের খবর সচেতন মানুষের উদ্বেগ না জাগিয়ে পারে না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজারে চলন্ত দুই ট্রেনের মাঝে পড়ে ভাসমান বাজারের কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতা ও পথচারীর মর্মান্তিক মৃত্যু প্রশ্নটি আবার হাজির করেছে সবার সামনে। রেলওয়ের বেদখলকৃত জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে দোকানপাট, বাড়িঘর; বসছে ভাসমান বাজার। আরো মারাত্মক হলো, এসব অবৈধ স্থাপন ঘিরে গড়ে উঠছে মাদক ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর অপরাধ চক্র। এমন পরিস্থিতিতে উচ্ছেদকৃত জমি কীভাবে রেলওয়ের দখলে রাখা যায় তার কার্যকর কৌশল ভাবতে হবে।

লক্ষ্যণীয়, অভিযোগ পেলে তো বটেই এমনিতেও নিজস্ব জমি উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হয় রেলওয়ের পক্ষ থেকে। স্বল্প মেয়াদে এ ধরনের কৌশল সফল হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সেখান থেকে আশানুরূপ ফল মিলছে না; নানা আর্থসামাজিক প্রভাবে উদ্ধারকৃত জমি কিছু দিনের মধ্যেই হয়ে যাচ্ছে পুনর্দখল। সেজন্যই উদ্ধারকৃত জমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশিদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে কিছু প্রকল্প চালুর উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে বলে বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন রেলওয়ের মহাপরিচালক। এটি প্রশংসাযোগ্য পদক্ষেপ সন্দেহ নেই। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়েছে কারো কারো। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন ব্যতীত রেলওয়ের জমি পুনর্দখল করে ব্যবহার সম্ভব নয়। এর সঙ্গে একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীও যুক্ত বলে রয়েছে অভিযোগ। এ দুটি কারণ অপসারণে সরকারকে উদ্যোগী দেখতে চাইবেন সবাই। পাশাপাশি প্রক্রিয়াটির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে কমপক্ষে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোকে। এক্ষেত্রে ২০০৭-০৮ সালের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগানো যেতে পারে। বলিষ্ঠ রাজনৈতিক অবস্থান ভিন্ন দীর্ঘমেয়াদে রেলওয়ের জমির অবৈধ দখল রোধ করা কিন্তু কঠিন হবে।

ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয়

বিনিয়োগ-বাণিজ্য সম্ভাবনার অধিকতর বিকাশ চাই

প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে একটি উপ-আঞ্চলিক জোট গঠনের পর এর সঙ্গে যুক্ত হয় মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান। তখন থেকেই এটি বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেক বলে পরিচিত। শনিবার রাজধানীতে এর স্থায়ী সচিবালয় উদ্বোধন করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের জন্য এমন ঘটনা সম্মানের ও তাৎপর্যপূর্ণ বৈকি। তার একদিকে যুক্ত রয়েছে দেশের ভাবমূর্তি বাড়িয়ে তোলার ইস্যু; অন্য দিকে স্থায়ী সচিবালয়টি এ জোটে বাড়তি কিছু সুবিধা দেবে আমাদের। বড় কথা হলো, বিমসটেককে এখন পর্যন্ত লক্ষ্যণীয়ভাবে কার্যকর করে তোলা যায় নি। সার্কের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ রয়েছে, তার কয়েকটি বিমসটেকের বেলায়ও খাটে। অথচ সার্কের তুলনায় বিমসটেকের সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা বেশি বলেই মনে করেন অনেকে। এখানে প্রতিটি দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ বেশি। কে কোন খাতে নেতৃত্ব দেবে সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পারস্পরিক উন্নয়ন সহায়তামূলক কর্মসূচিতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বাংলাদেশ, পর্যটন, পরিবহন ও যোগাযোগে ভারত, জ্বালানি ও শক্তি খাতে মিয়ানমার, প্রযুক্তিতে শ্রীলঙ্কা এবং মৎসসম্পদ খাতে থাইল্যান্ডের নেতৃত্ব প্রদানের কথা। অনেকেই মনে করেন, এসব প্রতিটি ক্ষেত্রে এতদিন কাজের চেয়ে কথাই হয়েছে বেশি। নইলে নির্দেশনা থাকার পরও এ ধরনের জোট কার্যকর না হওয়ার কারণ থাকতে পারে না। ঢাকায় বিমসটেক সচিবালয় এক্ষেত্রে বিভিন্ন ইস্যুতে জোরালো অবস্থান নিতে অনুপ্রেরণা জোগাবে আমাদের। তবে সবগুলো ইস্যু একসঙ্গে সমানতালে এগিয়ে নেয়া কঠিন। এক্ষেত্রে আমাদেরও অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা প্রয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী কৃষি-জ্বালানি খাতে সহায়তা, মুক্তবাণিজ্য অঞ্চলের ব্যবহার, প্রয়োজনীয় যোগাযোগ অবকাঠামো নিশ্চিতকরণের মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দিয়েছে। এসব প্রতিটি ইস্যুই গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে। তবু স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের উচিৎ বিমসটেকের মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার অধিকতর বিকাশে বাড়তি মনোযোগ প্রদান।

লক্ষ্যণীয়, মূলত দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থার আওতায়ই চলছে বিমসটেক সদস্যদের সিংহভাগ আন্তঃবাণিজ্য। জোটের মাধ্যমে বলার মতো বিনিয়োগের উদ্যোগ দেখা যায় না খুব একটা। অথচ এ বিষয়ক কাঠামো চুক্তি সই হয়েছে সেই ২০০৪ সালে। চুক্তিটি কার্যকর করতে সব দেশের অংশগ্রহণে গঠিত হয় ট্রেড নেগোসিয়েশন কমিটি (এনটিসি)। ২০১২ সাল থেকেই সংশ্লিষ্ট বৈঠকে বিনা শুল্কে পণ্য বাণিজ্য চালুর কথা বলা হচ্ছে। অথচ এক দশক পেরুনোর পর এখন উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বিমসটেকের অবদান কতটুকু? এ মূল্যায়ন দ্রুত হওয়া বাঞ্ছনীয়। সঠিক সময়ে ত্রুটি ও দুর্বলতাগুলো সংশোধন করা না গেলে নিছক কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে এ জোট। সেক্ষেত্রে সংশয়ে পড়ে যাবে এর কার্যকারিতা। খেয়াল করার মতো বিষয়, কমবেশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি রয়েছে প্রায় সব সদস্য দেশেরই। অথচ বৈশ্বিক ফোরামগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তন-সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বিমসটেকের পক্ষে থেকে চাপ প্রয়োগ খুব একটা দেখা যায় না। কেউ কেউ মনে করেন, বাণিজ্য-বিনিয়োগের মতো ইস্যু এড়িয়ে বাকি ক্ষেত্রগুলোয় সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা কঠিন। তাই এর প্রতি এখন সরকারের সুদৃষ্টিই প্রত্যাশিত।

আয়কর মেলা

ভয়ভীতি-হয়রানি দূরীকরণের নির্দেশনা দিন

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে দেশে। তবে মোট রাজস্বে আয়করের মতো প্রত্যক্ষ করের বৃদ্ধি এখনো সার্বিকভাবে সন্তোষজনক নয় বলে অনেকের ধারণা। অথচ রাজস্বে আয়করের অবদান বৃদ্ধিই সফল অর্থনীতির একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে অনুমিত। সেজন্যই ২০০৭ সালের পর থেকে আয়কর আহরণে মৌলিক পরিবর্তন আনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেটি আরো জোরদার হয় পরবর্তী সরকারের অব্যাহত রাজনৈতিক প্রচেষ্টায়। আয়কর আহরণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল রিটার্ন পূরণ ও তা জমাদানে জটিলতা। এরই মধ্যে প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ করে তোলা হয়েছে এবং তা করদাতাদের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে আরো সহজতর করতে এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়। ট্যাক্স ক্যালকুলেটর ও ই-টিন ব্যবস্থা চালুও আয়কর বৃদ্ধিতে সহায়তা জুগিয়েছে সন্দেহ নেই। তবে প্রত্যক্ষভাবে করদাতাদের দৃষ্টি কাড়ছে কয়েক বছর ধরে আয়োজিত আয়কর মেলা। সম্প্রতি সব বিভাগীয় শহরে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা। লক্ষ্যণীয়, গত বছর আয়কর মেলায় রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, অর্জিত হয় তার চেয়ে বেশি। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এবার আনুমানিক দেড় হাজার কোটি টাকা শুধু আয়কর মেলা থেকেই আহরণ করা যাবে বলে অনুমান করেছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। অবশ্য এর সঙ্গে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ আরেকটি খবরের প্রতি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার। সেটি হলো, সোমবার রাজধানীতে দীর্ঘদিনের ও বড় করদাতাদের সম্মানিত করার উদ্দেশ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন- কর আহরণের ক্ষেত্রে হয়রানি ও ভয়ভীতি এখনো আছে। প্রত্যাশা থাকবে, নিছক বলার জন্য বলা নয়- কর আহরণের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে এটিকে কর্মকৌশল হিসেবে বিবেচনা করতে রাজস্ব প্রশাসনকে নির্দেশনা দেবেন তিনি। নিশ্চয়ই তার ইতিবাচক প্রভাব থাকবে আয়কর আহরণে।

খেয়াল করার মতো বিষয়, স্থানীয় অনেক যোগ্য করদাতাই নিয়মিতভাবে আয়কর দেন না। এমনকি সম্প্রতি খোদ এফবিসিসিআই সভাপতি পর্যন্ত বলেছেন, সিংহভাগ ব্যবসায়ী কর দিচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য আয়কর দাতাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে মেলার আয়োজন কোনো কাজেই আসবে না সে কথা বলা যায় না। তবে উদ্যোগটি আরো কার্যকর করতে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। দেশ থেকে আয়কর ফাঁকির পরিমাণও নাকি বেড়েছে বেশ; নানাভাবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় মুদ্রা জমা হচ্ছে কিছু চিহ্নিত বিদেশী চ্যানেলে। এর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক্রিয়তা তো কাম্যই; এক্ষেত্রে এনবিআরের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থাও নিতে হবে যেন করদাতারা আয়কর প্রদানে আগ্রহী হন। একই উদ্দেশ্যে রাজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিতে হবে। অনেক ব্যবসায়ী নেতা অভিযোগ করেছেন, রাজস্ব কর্মকর্তাদের কার্যক্রম কিছু ক্ষেত্র ও স্থানে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এটি অপসারণেও সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। তার সঙ্গে যুগোপযোগী রাখতে হবে অটোমেশন অবকাঠামো। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এনবিআরকে সুসমন্বয় বজায় রেখে চলতে হবে। এসব কর্মসূচি সম্ভাব্য করদাতাদের ভয়ভীতি ও হয়রানি দূর করার সঙ্গে সঙ্গেই এগিয়ে নেয়া বাঞ্ছনীয়।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন

তহবিলের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে সরকার কর্তৃক ৪০০ কোটি টাকার তহবিল ও কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ সম্বন্ধে জানা যায় মঙ্গলবার রাজধানীতে আয়োজিত ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাজেট পরিকল্পনার রোডম্যাপ’ শীর্ষক বৈঠকে। ওই তহবিলের অর্থের ব্যবহার কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সংক্ষিপ্ত নির্দেশনাও মেলে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে। অবশ্য সে অর্থ জোগাড় কীভাবে হবে কিংবা কতদিনে তা হতে পারে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা মেলে না। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১২ পাস হয়েছে অনেক আগেই। তহবিল গঠন এরই অন্তর্ভুক্তি। আইনের বলা হয়, আলোচ্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ব্যয় নির্বাহ হবে তহবিল থেকে। এর সম্ভাব্য উৎসের জন্যও রাখা হয়েছে একাধিক বিস্তৃত ক্ষেত্র। ফলে অন্যান্য তহবিলের নেয় এক্ষেত্রে অর্থ সংগ্রহ তেমন কষ্টদায়ক হবে বলে মনে হয় না। কথা হলো, তহবিলের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হবে কীভাবে? অর্থায়ন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আমাদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। অকার্যকর, অপর্যাপ্ত অথবা অনিয়মের সহকারে তহবিল পরিচালনার অভিযোগ তো কম নেই। এ অবস্থায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলের সদ্ব্যবহার নিয়ে দুশ্চিন্তা না জেগে পারে না। তাই সরকারের উচিৎ এর প্রতি গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ প্রদানপূর্বক তহবিলের অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে যত্নবান হওয়া।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলের সঙ্গে কোনো দাতব্য তহবিলের তুলনা করা যাবে না। সঠিকভাবে সঠিক চ্যানেলে পৌঁছানো গেলে এ অর্থ দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে; তার সুপ্রভাব পড়বে জ্বালানি খাতে। আবার পদক্ষেপ নিতে কিছুটা দেরী হলেও টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান। সুতরাং আরো আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ তবহিল পরিচালনায়। অনেকে প্রস্তাব করেছেন, সেচ ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সোলার প্যানেল স্থাপনের বেলায় ব্যবহারকারীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানে ব্যবহৃত হোক তহবিলের অর্থ। সেচে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আর এর অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে তহবিলের অর্থ সহায়ক হবে নিঃসন্দেহে। লক্ষ্যণীয়, বায়ু বিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি আহরণে আমাদের অভিজ্ঞতা তেমন সুখকর নয়। ওসব ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্পে কিংবা ত্রুটিপূর্ণভাবে যেন উক্ত জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলের ব্যবহার না ঘটে সেদিকে সরকারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।

বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ

বাড়াতে চাই উপযুক্ত পদক্ষেপ

জন্মদিনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দিল্লী সফর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেকে। এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সাক্ষাৎ নিয়ে প্রতিবেশীদের কৌতূহল যেমন রয়েছে, দূর দেশগুলোর আগ্রহও কম নেই এবং সেটাই স্বাভাবিক। বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন ও ভারত কাউকেই অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, কিছু মানুষের শঙ্কা ছিল, সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বেই হয়তো আটকে থাকবে জিনপিংয়ের সফর। সৌভাগ্য যে, কোনো দেশই এ সুযোগকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে দেয় নি; বরং আরো উর্ধ্বে তুলে ধরেছে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থ। আগামী ৫ বছরে ভারতে ভীন সরকার কর্তৃক ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এরই মধ্যে আলোচিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়ও। সেখানে দেখা যাচ্ছে, আগামীতে চলচ্চিত্র থেকে শিল্প পার্ক পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে চীন। বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারতে তাদের এমন বিনিয়োগ অপ্রত্যাশিত নয় মোটেই। তবে খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, দেশটি আমাদেরও বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার এবং তাদের বিনিয়োগ এখানেও কাম্য। অথচ স্থানীয় বাজার চীনা পণ্যে ছেয়ে গেলেও গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে চীনের তেমন বিনিয়োগ উপস্থিতি চোখে পড়ে না। এ থেকে উত্তরণ জরুরি। সেজন্য অবকাঠামো প্রকল্পে ঠিকাদারি থেকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে অনেকাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন অনেকে। লক্ষ্যণীয়, সম্প্রতি চীন সফরকালে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। কৃষিভিত্তিক শিল্প, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি খাতে চীনের বিনিয়োগ আহ্বান করেন তিনি। অবশ্য তার পর থেকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যথেষ্ট পরিবর্তন আসার খবর মেলে না। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের সূত্র ধরে সংশ্লিষ্টরা চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, এমন প্রত্যাশাই এখন সবার।

আমাদের শিল্পনীতি বিনিয়োগবান্ধব নয়, এ কথা বলা যাবে না। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশে কেন সেভাবে চীনের বিনিয়োগ মেলে না, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে বণিক বার্তা গত বছর প্রকাশ করে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। তাতে বলা হয়, মূলত তিনটি কারণে শুধু চীন নয়, অনেক দেশ থেকেই প্রত্যাশিত বিনিয়োগ আসছে না দেশে। সেগুলো হলো- এক. অবকাঠামোগত দুর্বলতা, দুই. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও তিন. বিনিয়োগ সম্ভাবনা সংক্রান্ত তথ্যের অপ্রতুলতা। এসব প্রতিটি প্রতিবন্ধকতা দ্রুত অপসারণ করতে হবে। কোন কোন খাতে ও কীভাবে চীন বাস্তবসম্মতভাবে বিনিয়োগ করতে পারে চিহ্নিতপূর্বক সেটি দেখানো চাই। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে কারো কারো ধারণা। এদিকে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ তো বটেই, স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির স্বার্থেও তা বাড়ানো দরকার। তার সঙ্গে ধরে রাখতে হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীল। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতার তেমন লক্ষণ দেখা না গেলেও তার উপাদানে সমাজে অন্তর্নিহিত রয়েছে। তা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য যেন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় পর্যাপ্ত নয়; আবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর বিকল্প নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সচেষ্ট হতে হবে বৈকি।

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ

জরিমানা আদায় প্রক্রিয়া শক্তিশালী করুন

প্রায় ২০ মাস ধরে পরিবেশ অধিদফতরের জরিমানা আদায় হ্রাস অব্যাহত থাকার যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায় তা অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সেখানে বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থদণ্ড ধার্যের পর ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে আদায় হয় যথাক্রমে ৬৩ দশমিক ৮৯, ৬৮ দশমিক ৯ ও ৮৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ জরিমানা। অতি দ্রুত উন্নতির প্রভাবে কোনো গুপ্ত ঝুঁকি দেখা দিতে পারে- সে ভয়েই কিনা কে জানে ২০১৩ সালে লক্ষ্যণীয় অবনতি ঘটে জরিমানা আদায়ে। সে সময়ে ২৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা জরিমানার বিপরীতে আদায় হয় ১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা; শতকরা হিসাবে যা ৫৫ দশমিক ৯৪। আমাদের প্রতিবেদক আরো জানিয়েছেন, আদায় হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দূষণের অপরাধে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, তার কারণ খতিয়ে দেখার দাবি স্বভাবতই ওঠে বৈকি।

ঢালাও মন্তব্য করা যাবে না, জরিমানা আদায়ে চরম গাফলতি দেখিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটটি মাথায় রাখা দরকার। শুরুতে অভিযোগ পেয়ে অভিযানে নামত পরিবেশ অধিদফতর। সে সময় অনেক শিল্পকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ছিল পরিবেশ রক্ষার প্রতি হয় অসচেতন নয়তো উদাসীন। তখন আবার তাৎক্ষণিকভাবে এবং সব জরিমানা একসঙ্গে আদায়ের ওপর জোর দেয়া হতো। ফলে স্বভাবতই আদায় পরিস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে ভালো। এখন অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানই পরিবেশ আইন মেনে চলছে। তদুপরি বর্তমানে জরিমানা পরিশোধের জন্য প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হচ্ছে বাড়তি সুযোগ। তবু হঠাৎ করে জরিমানা আদায়ের মাত্রা আনুমানিক ৮৭ থেকে ৫৬ শতাংশে নামার যুতসই ব্যাখ্যা তা থেকে মেলে না। অস্বীকার করা যাবে না, অতীতের চেয়ে ইটিপি স্থাপনের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু তার সংখ্যা কত? এখনো দেখা যায়, ১ হাজার ৩৭০টি উপযুক্ত শিল্পের ৫৭৪টিতেই নেই ইটিপি! জরিমানা পরিশোধের সময় বৃদ্ধি নিয়েও কিছু প্রশ্ন রয়েছে অনেকের। প্রথম দিকে দেখা যেত, ভয়ভীতি বা প্রলোভন প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না কর্তৃপক্ষের ওপর। এখন মাঝে মধ্যে তেমন কিছু গুঞ্জন শোনা যায়। পরিবেশ অধিদফতরকে এসব থেকে মুক্ত করা দরকার। একই সঙ্গে তার শক্তি বৃদ্ধি প্রয়োজন। সেজন্য জনবলও বাড়ানো চাই। তাহলে প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশের ভারসাম্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাঝে অধিকতর সমন্বয় আনার সুযোগ পাবে।

জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে শ্রমিক বীমা

প্রচলনে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই

দূর অতীতে জাহাজ গড়া বিষয়ে বাংলার সুনাম ছিল বিশ্বব্যাপী; আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বও কম ছিল না। স্থানীয় জাহাজ শিল্পে নতুন মাত্রা যুক্ত হয় বিংশ শতাব্দীতে এসে- জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প গড়ে ওঠার মাধ্যমে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের পেছনের দিকে অবস্থান হওয়ায় এ ঢেঁকি এক প্রকারে গিলতে বাধ্য হয়েছি বললেও ভুল হবে না। তবু এখানে বিকশিত হয়েছে এবং হচ্ছে শিল্পটি। প্রতি বছর সরকারের আনুমানিক ১৩ কোটি ডলারের রাজস্ব আহরণ হয় তা থেকে। আবার একাধিক সূত্রমতে, প্রায় ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে। ইস্পাতের জন্য আগে আমাদের ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হত আমদানির ওপর। সেটি হ্রাস পেয়েছে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে। সব মিলিয়ে আমাদের অর্থনীতিতে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প অধিকার করেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তবে বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এ শিল্পের অনেক কিছুতে বদল এলেও কয়েকটি কাম্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। সেগুলো হলো, পরিবেশের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি, শ্রমিকের নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে জোরালো পদক্ষেপ। ঝুঁকি বেশি থাকলেও জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে শ্রমিকের বীমা নেই বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। অথচ এক্ষেত্রে খুবই বিপদজনক পরিস্থিতিতে স্বল্প মজুরিতে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। তাছাড়া শ্রম নির্ভর কাজে বীমা বাধ্যতামূলক করে গেজেটও প্রকাশ হয়েছে গত বছর।

এখানেও শ্রমিকদের অভিযোগ রয়েছে, তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক সরঞ্জাম ও সুবিধাদি সরবরাহ করা হয় না। যথারীতি এটি খণ্ডনও করা হয় ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে। এদিকে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে দুর্ঘটনার সংবাদ মাঝে মধ্যেই আসে। যদিও সরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খুব বেশি নয়, অনেকের ধারণা এক্ষেত্রে তথ্য গোপন করা হয় অন্যান্য খাতের চেয়ে বেশি। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প শ্রমিকদের প্রতি নাকি ব্যবস্থাপনা-মালিকদের সহানুভূতিও তুলনামূলকভাবে কম। কথা হলো, শ্রমিকের স্বার্থ তো আর অন্যের সহানুভূতির ওপর শতভাগ ছেড়ে দেয়া যায় না। তাই পরিস্থিতি উন্নয়নে ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকেই। আগেও এ খাতে বীমা সুবিধা চালুর চেষ্টা হয়েছে বলে জানা যায়। তা কেন সফল হতে পারল না, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন করে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে সরকার বীমা সুবিধা প্রচলনের উদ্যোগ নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

জালিয়াতি রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কবার্তা

কঠোর অবস্থান ধরে রাখা চাই

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং খাতে বিশেষত হল-মার্ক ও বিসমিল্লাহ কেলেঙ্কারি দেশজুড়ে আলোচনা হয়েছে। সেসব ঘটনার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও হয়েছে নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। অনেকেই মনে করেন, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দৃশ্যমান অবস্থান ঠিক সন্তোষজনক ছিল না। তবে প্রথমবার বিপর্যয় সংঘটিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক হাত গুটিয়ে বসেছিল সে কথা বলতে পারবেন না কেউ। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে, পুরো ব্যাংকিং খাতে যেন ওই অপকর্মের প্রভাব না পড়ে। অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক বড় জালিয়াতি উদ্ঘাটনের ফলে স্থানীয় ব্যাংকিং খাতের যে ‘বদনাম’ হয় সে কথা শনিবার এক অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রতিধ্বনিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত ওই খবরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন তিনি। তার বক্তব্য অনুসারে, ব্যাংকিং খাতে জালিয়াতির পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকলে প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসানো হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সে ক্ষমতা আছে বলেও মন্তব্য তার। তার কথাকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব প্রতিষ্ঠানের জন্য আগাম সতর্কবার্তা হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কঠোর অবস্থান বজায় রাখবে বলেও প্রত্যাশা।

জনগণের আরো আশা যে, বিপর্যয় ঘটার আগেই সেটি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়ে রাখুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মাঝে অধিক সমন্বয় নিশ্চিতদের যে তাগাদা দিলেন গভর্নর, সেটি কার্যকরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণই কাম্য। লক্ষ্যণীয়, সম্প্রতি একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পর্ষদকে না জনিয়েই এম-ব্যাংকিং (মোবাইল ব্যাংকিং) সেবা চালুর উদ্যোগ নেয়। পরবর্তীতে এজেন্ট নিয়োগের জন্য জামানত নেয়া শুরু করলে সমস্যায় পড়ে তারা। এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনাই কিন্তু ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে; জবাবদিহিতার পথ ক্রমে রুদ্ধ করে দেয়। তাই আগে থেকেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়টি আজ বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনেক দেশের তুলনায়ই দ্রুত সমৃদ্ধি ঘটেছে আমাদের অর্থনীতির। তবে কেউ কেউ মনে করেন, আমরা এর চেয়েও ভালো করতে পারতাম যদি স্থানীয় রাজনীতি আরো স্থিতিশীল, ব্যাংক ব্যবস্থা ও পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করে তোলা যেত। সামগ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাংকিং কার্যক্রমের গুরুত্ব নতুন করে ব্যাখ্যার দরকার নেই। তবে সেটি যে খেয়াল আছে, তা দৃশ্যমান কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে খাত-সংশ্লিষ্টদের বোঝাতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি!

প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক সংযুক্তি বাড়াতে হবে

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আমাদের পারফরম্যান্সকে অনেকে ‘বাংলাদেশ প্যারাডক্স’ হিসেবে উল্লেখ করেন। অনেকে মনে করেন, ওই প্যারাডক্সেই নতুন সংযোজন সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অনেকটা কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি। বলা বাহুল্য, আলোচ্য সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এবং এ হারে নিকট ভবিষ্যতে প্রত্যাশার তুলনায় ব্যাপক হ্রাস ঘটবে বলে মনে হয় না। অথচ আমাদের অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান পরিস্থিতি তেমন ভালো নয়। শ্রমবাজারে আশানুরূপভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না বলে ক’দিন ধরেই নানা খবরাখবর প্রকাশ হয়েছে স্থানীয় মিডিয়ায়। এরই মধ্যে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ এক প্রতিবেদনের শিরোনাম- ‘অর্থনীতিতে উন্নতি শ্রমবাজারে অবনতি’। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৯৯-২০০০ সালে দেশের মোট কর্মসংস্থানের ২৫ শতাংশই জোগান দিয়ে এসেছে প্রাতিষ্ঠানিক খাত। একই সঙ্গে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অংশ ছিল প্রায় ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের তুলনায় আনুপাতিকভাবে বড় ওই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উপস্থিতি অস্বাভাবিক বলা যায় না। তবে দুশ্চিন্তা জাগে তখন, যখন দেখা যায়- ক্রমে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মসংস্থান বাড়ছে এবং কমছে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান। কেননা এ ধরনের ঘটনার অর্থনৈতিক ব্যয় যেমন রয়েছে, সামাজিক ব্যয়ও কম নেই। অথচ আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধরে সেটিই ঘটছে দেশে। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে ৭৮ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়েছে ২০০৫-০৬ সালে; ২০১০ সালেই সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৮৭। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) মনে করে, সেটি বর্তমানে ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ১০ শতাংশ শ্রমজীবিকে এখন স্থান করে দিতে পারছে প্রাতিষ্ঠানিক খাত। স্পষ্টত এর চাপ ক্রমশ বাড়তে থাকবে অর্থনীতির ওপর। আবার দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তেমন প্রেক্ষাপটে কিন্তু ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে উদ্ভূত পরিস্থিতি। এ অবস্থায় সরকারের কাছ থেকে দ্রুত সক্রিয়তা ও উপযুক্ত পদক্ষেপই প্রত্যাশা করেন সবাই।

বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান শক্তিশালী না হওয়ায়ই বেড়েছে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান। স্থানীয় এক বিশেষজ্ঞ বণিক বার্তাকে বলেছেন, এর অন্যতম কারণ নিম্ন উৎপাদনশীল শিল্প। আর এখান থেকে উত্তরণে কাঠামোগত পরিবর্তন আবশ্যক; তার একটা ব্যয়ও আছে এবং কাজটি সহজসাধ্য নয়। আরেকটি খেয়াল করার মতো বিষয় হচ্ছে, তুলনামূলকভাবে আমাদের মতো দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং তা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অসহনীয় উত্তাপ সৃষ্টি না করেই। ফলে স্বল্প মেয়াদে হয়তো এটি তেমন সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে না কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর পরিণতি হতে পারে ভয়ঙ্কর; বিশেষত আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে স্থানীয় শ্রমিক প্রেরণ সংকোচনের সঙ্গে সঙ্গে। ফলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। কারো কারো মতে, আমাদের একটি বড় সমস্যা হলো, দেশে শিক্ষার সঙ্গে শ্রমবাজার সমন্বয়ের উদ্যোগ তেমন নেই। ফলে তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইস্যুটি যত না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি উপযুক্ত পরিকল্পনার ঘাটতি। তাই এর সমাধানও ওই তরফ থেকে আসতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে চাপও অব্যাহত রাখা প্রয়োজন, যাতে পরিস্থিতির দ্রুত অগ্রগতি সাধিত হয়।

ফরওয়ার্ড ফ্রেইট সেবার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

নীতিমালা দরকার সুষ্ঠু বিকাশের স্বার্থেই

মঙ্গলবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যে বিষয়বস্তুর ওপর আলোকপাত হয়েছে তা বিবেচনার দাবি রাখে। তাতে বাংলাদেশে ফরওয়ার্ড ফ্রেইট সেবা সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে আমদানি পণ্য পরিবহনে বছরে ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। কীভাবে তা কার্যকর হবে, সে বিষয়েও ইঙ্গিত মিলেছে। বলা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে ঋণপত্র খোলার আগে আমদানিকারকরা ফ্রেইড ফরওয়ার্ডারদের সনফে দরদাম করে পরিবহন ভাড়া নির্ধারণের সুযোগ নিতে পারেন। লক্ষ্যণীয়, ঋণপত্র খোলার পর পরিবহন ব্যয় বেড়ে যেতে পারে- এমন সম্ভাবনা মেনে নিয়ে রফতানিকারকরা সাধারণত পণ্যমূল্যের ওপর ১০ শতাংশ পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে নেন। এখানে ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার ব্যবসায়ীদের যুক্তি হলো, আমদানিকারকরা শুধু পণ্যমূল্য বুঝিয়ে দেবেন রফতানিকারককে। আমদানিকারকরা ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারদের দায়িত্ব দিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম ব্যয়ে পণ্য বাংলাদেশে পৌঁছে দেবেন। ফরওয়ার্ড ফ্রেইটের ধারণা কিন্তু বিশ্বে নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো অনেক দেশেই চালু রয়েছে এটি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা বার্ষিক ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয়ের যে ধারণা দিয়েছে, সেটিও উড়িয়ে দেয়া যায় না আয়ারল্যান্ডের বিলিয়ন পাউন্ড অভিজ্ঞতা থেকে। ফলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন।

ফরওয়ার্ড ফ্রেইট ব্যবসা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলে অনেকের ধারণা। তবে সেটি কতটুকু কার্যকর, তা অনেকাংশে নির্ভর করছে কার্যবিধি অনুশীলনের ওপর। সেজন্য মানদণ্ড ও নিয়মনীতি প্রণয়ন করা জরুরি। বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ- সে দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখার রয়েছে। বন্দরটির অনেক সম্ভাবনা এখনো অনুদ্ঘাটিত। এদিকে বিশ্বায়নের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেও আগামী কয়েক দশকে বাড়বে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যস্ততা। এর মাঝে নিম্নমানের ফরওয়ার্ড ফ্রেইট ব্যবসার প্রসার ঘটলে তা অনাকাঙ্ক্ষিত হবে বৈকি। তাই কর্তৃপক্ষেরে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সে লক্ষ্যে সবার আগে ফরওয়ার্ড ফ্রেইট ব্যবসার নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। নইলে ব্যবসাটি ভালোভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ নাও পেতে পারে; আর এর অনিয়ন্ত্রিত বিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন আমদানিকারকরা। অন্যদিকে ব্যবসাটির সুষ্ঠু বিকাশ ঘটলে আমাদের আমদানি গতি বৃদ্ধি পাবে বলে অনেকের প্রত্যাশা। তার একটা সুপ্রভাব রফতানি খাতের ওপরও পড়বে নিশ্চয়ই?

শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে লভ্যাংশ দিতে অনাগ্রহ

ব্যবসায়ীদের উৎসাহিতকরণে উদ্যোগ নিন

শ্রম আইন অনুযায়ী ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের নির্দিষ্ট পরিমাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে জমা দেয়ার কথা থাকলেও সিংহভাগ ব্যবসায়ীরই তাতে অনাগ্রহ বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, ওই তালিকায় দেশের নামকরা অনেক প্রতিষ্ঠানই রয়েছে। এক্ষেত্রে এক তরফাভাবে ব্যবসায়ীদের দোষারোপের সুযোগ নেই। কেননা একাধিক নামকরা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে অর্থ জমাদান সংক্রান্ত সরকারি চিঠি তথা নির্দেশনা পান নি। কেউ কেউ আইনটি সম্বন্ধেই ভালোভাবে অবগত নন বলে অনুমেয়। এমন পরিস্থিতি দুঃখজনক বৈকি। আইনে রয়েছে, উপযুক্ত কোম্পানির মালিক প্রতি বছর শেষ হওয়ার কমপক্ষে নয় মাসের মধ্যে আগের বছরে অর্জিত নীট মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ ৮০ অনুপাত ১০ অনুপাত ১০ হিসেবে যথাক্রমে অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদান করবেন। প্রক্রিয়ার সুবিধার্থে যেখানে এ কথাও বলা আছে যে, কোনো মালিক বিধানটি কার্যকর হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে কোম্পানির নীট মুনাফার এক শতাংশ পরিমাণ অর্থ কল্যাণ তহবিলে জমা দিয়ে থাকলে, সেখান থেকে অর্ধেক পরিমাণ অর্থ ট্রাস্টি বোর্ড বাধ্যতামূলকভাবে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে জমা করে দেবেন। তুলনামূলক বিচারে আইনটিকে সহজ বলা যায়। এর বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের তেমন অনাগ্রহ থাকার কথা নয়। তা সত্ত্বেও এমন মনোভাবের কারণ খুঁজে বের করা দরকার। একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, এ বিষয়ে কোম্পানি মালিকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। বিষয়টিকে ঘুরিয়ে অন্যভাবেও দেখা যায় যে, এখন পর্যন্ত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে অর্থ জমাদান প্রসঙ্গে মালিকদের মাঝে সেভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় নি। আবার কারো কারো মতে, ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছায় নিজ মুনাফার ভাগ শ্রমিককে দিয়ে দেবেন- সে অবস্থা বিরাজ করছে না দেশে। এসব কিছুর মধ্যেই সরকার প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে আন্তরিকতা দেখাবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে জমা পড়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭৬ টাকা; তহবিলটির পরিচালনা বোর্ড কিন্তু গঠিত হয় ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে। স্পষ্টত অভ্যন্তরীণ বাজারের সফল কোম্পানিগুলোকে আমলে নিলে জমার পরিমাণ নগণ্যই। অথচ শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে ফাউন্ডেশনটি দ্রুত কার্যকর করা দরকার। লক্ষ্যণীয়, অসুস্থ শ্রমিকের চিকিৎসায় কোম্পানির সহায়তা প্রাপ্তি নিয়ে নানা জটিলতার কথা মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। আবার দুর্ঘটনায় কোনো শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলে কোম্পানির কাছে থেকে পরিবারের আর্থিক সহায়তা পাওয়া নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক সময়েই রয়েছে। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল কার্যকর থাকলে তেমন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাই এড়ানো যেতো বলে কারো কারো অভিমত। এ লক্ষ্যে তাই দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে মালিকদের মাঝে শ্রম আইন বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার। শ্রম আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন না হলে বৈশ্বিক বাজারে স্থিতিশীলভাবে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা কঠিন বটে। এ বিবেচনা থেকেও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল বাস্তবায়নে এগিয়ে আসা উচিৎ ব্যবসায়ীদের।

ডিজিটাল বিভাজন

সুলভ ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ জরুরি

দেশের ইন্টারনেট সেবা এখনো অভিজাত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মাঝে আটকে রয়েছে বলে যে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়, তা ভাবনার বৈকি। এক জরিপ সূত্রে প্রকাশ, মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১১ শতাংশ সক্রিয় ডাটা সেবা গ্রহণকারী (নিয়মিতভাবে ইণ্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরো কম)- খবরটিও কম দুশ্চিন্তার নয়; বিশেষত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগী অনেক দেশেরই যেখানে এ পারফরম্যান্স অপেক্ষাকৃত ভালো এবং যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ডিজিটালাইজ করার স্বপ্ন রয়েছে আমাদের। আরেকটি বিষয় হলো, উচ্চগতির ইন্টারনেট তথা থ্রিজি সেবার মতো জরুরি সেবা অভিজাত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মাঝে আবদ্ধ হয়ে গেলে ডিজিটাল ডিভাইড বা ডিজিটাল বিভাজন তৈরি হয় যার কার্যকর প্রভাব রয়েছে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটেও। ফলে ইস্যুটিকে সতর্ক বার্তা হিসেবে নেয়া উচিৎ সংশ্লিষ্টদের। সাম্প্রতিককালে আমাদের তুলনায় পিছিয়ে থেকেও প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশকে। সেজন্যও এক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে অধিক সক্রিয়তা দেখাতে হবে বাংলাদেশকে।

লক্ষ্যণীয়, এখানে ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টিতে কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা; যার মাঝে প্রথমেই রয়েছে ইন্টারনেট সেবার উচ্চ মূল্য। শুরুর দিকে কেবল-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবায় জোর দেয়া হলেও পরবর্তীতে তা সেলফোন-ভিত্তিক ডাটা সেবার প্রতি ঝুঁকে পড়ে স্বভাবতই। সে উদ্দেশ্যেই থ্রিজি সেবা প্রদানের লাইসেন্স দেয়া হয় বাংলাদেশ পরিচালিত সেলফোন অপারেটরদের। দুঃখজনক বলতে হয়, তাদের পক্ষে এখনো থ্রিজি সেবা সিংহভাগ মানুষের কাছে সুলভ মূল্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয় নি। কেন প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘটছে না, সেটি খতিয়ে দেখা উচিৎ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)। সম্প্রতি খুবই অল্প ব্যয়ে সফলভাবে কৃত্রিম উপগ্রহ মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে ভারত। উদ্ভূত প্রেক্ষাপটেও এখানকার থ্রিজি প্রযুক্তির প্রকৃত ব্যয় একবার ঝালিয়ে নেয়া দরকার বটে। পাশাপাশি দেখতে হবে, ডিজিটাল বিভাজনে কতটা এবং কীভাবে ভূমিকা পালন করছে থ্রিজি প্রযুক্তি সংযুক্ত মোবাইল ফোনসেট। তার সঙ্গে বিদ্যমান প্রতিকূলতা দূরীকরণেও মনোযোগী হওয়া চাই। আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীও এ বিষয়ে অবগত বলে প্রতীয়মান। এখন তার কাছ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই প্রত্যাশা করেন সবাই। অনেকে বলছেন, সচেতনতার অভাবও আমাদের ডিজিটাল বিভাজনের জন্য দায়ী। উদ্বুদ্ধপূর্বক সেলফোন অপারেটরদের বিজ্ঞাপনবাবদ ব্যয়ের একাংশ এক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় কিনা, সেটি খতিয়ে দেখতে পারে বিটিআরসি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদমান মূল্যায়ন

মন্ত্রণালয়ের কাছে আইনের বাস্তবায়নই কাম্য

ইউজিসি থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৯টি। আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এদের প্রকৃত অবদান কতটুকু, তা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। অবশ্য এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, এখানে উচ্চ শিক্ষার চাহিদা ও সরবরাহের মাঝে যে ঘাটতি ছিল অন্তত পরিমাণগত দিক থেকেও তার বিপুলাংশ পূরণ করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ ধরনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বলা যায় অনেকটা নীরবে এরই মধ্যে স্থানীয় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে সামনের সারিতে চলে এসেছে এবং সম্মান অর্জন করছে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি বাদ দিলে, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষাই শিক্ষার্থীর ব্যয় অনুযায়ী মান নিশ্চিত করতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে ব্যাপক। অনেক ক্ষেত্রে আইনের অভাবে এ ধরনের সমস্যার মীমাংসা করা যায় না। সেদিক থেকে আলোচ্য ঘটনাটি খানিকটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। কেননা এক্ষেত্রে আইন থাকলেও তার বাস্তবায়ন ঝুলে আছে কয়েক বছর ধরে। খেয়াল করার মতো বিষয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সনদমান নিশ্চিত করা শুধু দেশের উচ্চ শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি নয়, এর সঙ্গে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সরাসরি যুক্ত।

গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শিক্ষামান পর্যবেক্ষণে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠনের কথা বলা আছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩-এই; অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল অ্যাক্টের ভিত্তিতে গঠিত হবে একটি জাতীয় স্বাধীন ও স্বায়ত্ত্বশাসিত কাউন্সিল। উপযুক্ত মান অর্জনকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাবে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সদস্য পদ আর কাউন্সিল পাঁচ ক্যাটাগরিতে নির্ধারণ করবে তাদের রেটিং। লক্ষ্যণীয়, আজকাল অনেক অভিভাবককেই ভাবনায় পড়তে হয়- সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারা সন্তানকে কোথায় পড়াবেন। কেননা তাদের সাধা ও সাধ্যের সমন্বয় কিছু ক্ষেত্রে ঢাকা পড়ে যায় একশ্রেণীর বেসরকারি বিশবিদ্যালয়ের অসত্য তথ্য কিংবা বিজ্ঞাপনের আড়ালে। ত্রুটিটি রেটিং ব্যবস্থার মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, ইউজিসি তার দায়িত্ব সম্পন্ন করলেও সংশ্লিষ্ট ধারাটির বাস্তবায়ন আটকে রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। নানা অজুহাতে নাকি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে সেটি। এমন পরিস্থিতি বিশেষত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য কাম্য হতে পারে না। অবিলম্বে সেটি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া দরকার। সবাই এ ইস্যুতে মন্ত্রণালয়ের জোরালো পদক্ষেপই প্রত্যাশা করবেন।

অবৈধ পথে মসলা আমদানি

উচ্চশুল্কের হ্রাস প্রয়োজন

সারা বছর দেশজুড়ে মসলার বাজার মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও এ ধরনের পণ্যের দাম স্বভাবতই বেড়ে উঠতে দেখা যায় ঈদের মতো উৎসবে। বাস্তবতা হলো, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মসলা আমদানি করতে হয় আমাদের। তবে এ বাজারকে কেন্দ্র করে কিছু জটিলতা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশ এক প্রতিবেদনের কথা বলে যেতে পারে। সেখানে দেখা যাচ্ছে- খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত জিরা, এলাচ, কিশমিশ, দারুচিনি এমনকি ধনিয়া পর্যন্ত বিভিন্ন মসলা বিলাস দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। তাই অতিরিক্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয় এসব আমদানিতে। অভ্যন্তরীণ বাজারে মসলাগুলোর মাঝে জিরা ও এলাচের চাহিদা বেশি। কেউ এ দুটি পণ্য আমদানি করতে চাইলে নাকি শুল্ক ২৫, রেগুলেটরি ডিউটি ৫, সম্পূরক শুল্ক ২০ ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়করসহ পরিশোধ করতে হয় মোট ৬১ শতাংশ। ফলে স্বাভাবিক কারণেই একশ্রেণীর ব্যবসায়ী উৎসাহিত হন এসব পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে আমদানি করতে। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, এ বাস্তবতার প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে ভোক্তার ব্যয়ে। দ্বিতীয়ত. অবৈধ পথে মসলা আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল রাজস্ব থেকে। তৃতীয়ত. উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সৎ ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ পেতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক।

এক মসলা ব্যবসায়ী আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, আমদানিকৃত মসলার মাত্র এক-দশমাংশের মতো আসছে বৈধ পথে। এতে করে যারা বৈধভাবে মসলা আনছেন তাদের পড়তে হচ্ছে অবৈধ পণ্যের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে। এটি মাথায় রেখে শুরুতেই মসলার অবৈধ আমদানি প্রতিরোধ করা চাই। সেজন্য সীমান্তে টহল বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে চালাতে হবে অভিযান। তবে অনেকে মনে করেন, এক্ষেত্রে অধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ- উচ্চ শুল্ক হ্রাস। কেননা উচ্চ শুল্ক আরোপই একশ্রেণীর ব্যবসায়ীদের অবৈধ উপায় বেছে নিতে প্রলুব্ধ করছে বলে অভিযোগ। দেশে মোট চাহিদা যেখানে ৪০ হাজার টনের কাছাকাছি, সেখানে আনুমানিক ৩৫ হাজার টন জিরা ও এলাচের অবৈধ অনুপ্রবেশ রাজস্ব আহরণের দিক থেকেও ক্ষতিকর বৈকি। অথচ এ বিপুল পরিমাণ মসলা বৈধ পথে এলে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জনের সম্ভাবনা ছিল বলে শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিমত। এ অবস্থায় নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে দ্রুত ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তই প্রত্যাশা করেন ভোক্তারা।

নিষিদ্ধ মৌসুম

ইলিশ আহরণ তদারক করুন

সংশোধিত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট-১৯৫০’এর এক ধারা অনুযায়ী চলতি বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম অক্টোবরের ৫ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত দেশজুড়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চিওট্টগ্রাম, ভোলাসহ ইলিশ প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় নেয়া হবে বিশেষ ব্যবস্থা। সে লক্ষ্যে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। লক্ষ্যণীয়, সারা বছর সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যেই জলাশয়ে ইলিশের আধিক্য চোখে পড়ে। স্বভাবতই এ সময় ইলিশ ধরারা প্রবণতাও বেড়ে উঠতে দেখা যায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ এক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ায় নিষিদ্ধ মাসে ইলিশ আহরণ অনেকটাই কমে উঠেছে বলে অনেকের ধারণা। তবু উক্ত সময়ে ইলিশ আহরণ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে হবে যাতে করে কেউ এ সময়ে মুনাফা বাড়াতে ইলিশ আহরণ করতে না পারেন।

সাম্প্রতিক মৌসুমে বাজারে ইলিশ মিলেছে মন্দ নয়। একই সঙ্গে ইলিশের দামেও লক্ষ্য করা গেছে তার ইতিবাচক প্রভাব। তবু নিষিদ্ধ মৌসুমে দেশের কোনো কোনো স্থানে ইলিশ বিক্রির খবর মেলে। আবার ইলিশ পাচারের আটকের প্রতিবেদন আসে মিডিয়ায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, চলতি বছরেরে আগস্ট পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে পাচারকালে আনুমানিক ৭ হাজার ৫৭৪ কেজি ইলিশ আটক করে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে নাকি এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। আবার স্থল্পথে অধিক নজরদারির কারণে নৌপথে ইলিশ পাচারের নমুনা রয়েছে। স্থানীয় নিষেধাজ্ঞার সুযোগে কেউ যেন এ ধরনের অবৈধ কর্মে লিপ্ত হতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখা জরুরি। এরই মধ্যে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে, পোস্টার-লিফলেট মুদ্রণ ও বিতরণ করে ইলিশ রক্ষার বিষয়ে জেলে ও ভোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। খোলা বাজার থেকে শুরু করে মাছের আড়ত পর্যন্ত নেয়া হয়েছে প্রচারণামূলক কার্যক্রম। সেগুলো সফল হবে এ প্রত্যাশা সবার। তবে শুধু প্রচারের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রেখে নিশ্চিন্তে থাকা যাবে না। প্রশাসঙ্কে সতর্ক রাখতে হবে যেন নিষিদ্ধ সময়ে কেউ ইলিশ আহরণ করতে না পারে।

Published in Bonik Barta, August 2014

ইইউতে উদ্ভিজ্জ পণ্য রফতানি

শঙ্কা দূরীকরণে সরকারের প্রচেষ্টা কাম্য

সদস্য দেশগুলোর বাজারে বাংলাদেশ থেকে রফতানিকৃত সবজি, ফলের মতো উদ্ভিজ্জ পণ্যকে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসমুক্ত রাখার নির্দেশনা আগেই দিয়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ মানদণ্ড বজায় রেখে সেগুলো রফতানির আশ্বাস দেয়া হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও। তবে দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণের পরও এক্ষেত্রে বড় উন্নতি না দেখায় বাংলাদেশ থেকে ইইউ বাজারে উদ্ভিজ্জ পণ্য রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে বলে সম্প্রতি ইইউ’স হেলথ অ্যান্ড কনজুমারস ডিরেক্টরেট জেনারেলের এক পদস্থ কর্মকর্তা চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছে বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে। আর গতকাল এ খবর ছাপা হয়েছে সহযোগী এক দৈনিকে। এটি দুঃসংবাদ বৈকি। সবার প্রত্যাশা, ইস্যুটিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবে সরকার। ইইউ’র পক্ষ থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ সেপ্টেম্বরের পর থেকে নেয়া হলে তাতে অবাক হওয়ায় কিছু থাকবে না। কেননা খাদ্য ও ওষুধের মান ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রশ্নে অতীতে ইউরোপ কর্তৃক কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গেছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও। ফলে এখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের ফল-সবজি রফতানিকে যুক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর সুযোগ নেই।

লক্ষ্যণীয়, এসব ইস্যুতে ইইউ’কে অনেক সময় বেশি স্পর্শকাতর হয়ে উঠতে দেখা যায়। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, যথেষ্ট সময় হাতে রেখেই ইইউ মানদণ্ড অনুযায়ী উদ্ভিজ্জ পণ্য রফতানির অনুরোধ জানানো হয় বাংলাদেশকে। আমাদের পক্ষ থেকেও দেয়া হয় প্রতিশ্রুতি। অথচ এক্ষেত্রে তারা নাকি খেয়াল করেছেন অব্যাহত উদাসীনতা। ক’দিন আগে উল্লিখিত চিঠিটি পাওয়ার পর আরেকবার নতুন করে আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কয়েক ধাপে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সময়ও চাওয়া হয়েছে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। নানা বিবেচনায় বাংলাদেশের এ অনুরোধ ইইউ ফেলবে না বলে মনে করেন কেউ কেউ। তবে এ সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক উন্নতি দেখাতে না পারলে সুযোগটি কাঙ্ক্ষিত সুফল প্রদানে ব্যর্থ হতে পারে বলেও তাদের শঙ্কা। ফলে প্রত্যাশা থাকবে, চিঠিটিকে সতর্কবার্তা ও সংশোধনের সুযোগ হিসেবেই গ্রহণ করবে সরকার। সে অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে দৃশ্যমান প্রচেষ্টাও কাম্য এখন। নির্দিষ্ট কিছু ফল ও সবজি উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে উন্নততর অনুশীলন চর্চার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ইইউ’র পক্ষ থেকে। সেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে স্থানীয় ভোক্তারাও সেখান থেকে উপকৃত হবেন বলেই মনে হয়। তাছাড়া কৃষক-রফতানিকারকদের যে ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে, তাতে ইইউ নির্ধারিত কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়নের সুপ্রভাব পড়বে অভ্যন্তরীণ উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের মাঝেও। কোনো কোনো ফল-সবজি রফতানিকারক বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য প্রদানের অভিযোগ রয়েছে ইইউ’র। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কিন্তু আমাদের আগেই নেয়া উচিৎ ছিল। সরকারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন ছিল, রফতানিযোগ্য কোন কোন উদ্ভিজ্জ পণ্যের চালান প্যাকেজ হওয়ার পর কীট দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। দেরী হলেও এখন দ্রুত সেদিকে সরকার মনোযোগ ফেরাবে বলে প্রত্যাশা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম

মনোযোগ বাড়ান, কর্তৃপক্ষ

সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়ান হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট সেক্টর- এ স্টাডি অন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড অ্যাফিলিয়েটেড কলেজেস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে, দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থীকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের দ্বারস্থ হতে হয়। এখানে গত ক’দশকে বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ ঘটেছে বেশ। তার মান নিয়ে অনেকের অসন্তোষ থাকলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সেবার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সেখানে সন্তানকে পড়ানোর ক্ষমতা রাখেন এমন পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে সমাজে। এত সব কিছু সত্ত্বেও আগামী দু-তিন দশকের মাঝে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের চাহিদা ফুরিয়ে যাবে না। অথচ এর প্রতি কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের মনোযোগ কেমন, সেটি টের পাওয়া যায় গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক খবর পড়লে। এসবের ব্যবস্থাপনা ব্যাপকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত। সারবস্তু খুঁজলে একাডেমিক কার্যক্রম বলতে নাকি আছে শুধু নবীন বরণ, শিক্ষা সফর আর সার্টিফিকেট প্রদান! এ অবস্থা খুবই দুঃখজনক এবং শঙ্কার। ২০২১ সালের মাঝে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে আমাদের। ক’দিন আগে ২০৪১ সালের মধ্যে অগ্রসর দেশে পরিণত হওয়ার আশাবাদও ব্যক্ত করেছেন অনেকে। শুধু উচ্চশিক্ষা বলা যাবে না, শিক্ষা খাতের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে এটি কতটা সম্ভব, সে বিচারের ভার সংশ্লিষ্টদের ওপরই থাকুক।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান বণিক বার্তাকে বলেছেন, সার্বিকভাবেই দেশের উচ্চশিক্ষা চলছে ভারসাম্যহীনভাবে। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের মাঝে দর্শনগত বিভ্রান্তি রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। তার উভয় মন্তব্যই খণ্ডন করা কঠিন। শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ শ্রম বাজারের বিপুল অসঙ্গতি ওই যুক্তির পক্ষেই কথা বলে। তবে এখান থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা দরকার। জ্ঞান, শ্রম বা পুঁজি যে ভিত্তিতেই অর্থনীতির শক্তি বাড়িয়ে তোলা হোক, স্থানীয় শিক্ষা ব্যবস্থার আগাগোড়া কাঠামোগত সংস্কার অপরিহার্য। সেজন্য নীতিগত সহায়তা যেমন জোগাতে হবে আর্থিক বরাদ্দও বাড়ানো চাই শিক্ষা খাতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেভাবে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা হয় না বলে অনেকের আক্ষেপ। অথচ এর সঙ্গে অধিক বরাদ্দপ্রাপ্ত সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিত্রও মিলিয়ে দেখা দরকার। কেউ কেউ মনে করেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের সঙ্গে তাদের পার্থক্য হলো, প্রথমোক্তটিতে সম্ভাবনা বিনষ্ট হয় তুলনামূলকভাবে কম; অন্যটিতে বেশি। কেউ কেউ বলেন, আমাদের শিক্ষা খাতের একটি অভিন্ন বলির পাঁঠা রয়েছে, সেটি হলো শিক্ষকরা। কর্তৃপক্ষ নাকি প্রায়ই শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার বলতে বুঝে থাকেন শিক্ষা ব্যবস্থায় চাপ বাড়ানোকে। অথচ বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, শিক্ষার্থীদের অনীহার পাশাপাশি শিক্ষকদের ওপর অধিক কাজের বোঝাও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজ প্রদত্ত উচ্চশিক্ষার দুরবস্থার জন্য দায়ী। এমন পরিস্থিতিতে আমরা সবাই এদিকে দ্রুত কর্তৃপক্ষের অধিক মনোযোগ প্রত্যাশা করি।

পদ্মায় লঞ্চডুবি

মানবসৃষ্ট দুর্যোগ থেকে রেহাই চাই

সোমবার ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে মাওয়া ঘাটের কাছে পদ্মা নদীতে লঞ্চ ডুবে যাওয়ার মর্মান্তিক ঘটনাটি এরই মধ্যে দেশজুড়ে আলোচিত। লক্ষ্যণীয়, অন্যবারের চেয়ে এবার ঈদ যাত্রায় সড়ক পথে দুর্ঘটনা ঘটেছে কমই। রেল ও নৌপথেও ঘটে নি তেমন ঘটনা। তবে ঈদ পরবর্তী সময়ে ঘটেছে বেশ কয়েকটি সড়ক ও নৌ দুর্ঘটনা। সেগুলোর মাঝে সিরাজগঞ্জে নৌকাডুবির পর মাওয়ায় পদ্মা নদীতে লঞ্চ ডুবির ঘটনাই বৃহত্তর। স্বজনহারাদের সান্ত্বনা দেয়ার মতো ভাষা আমাদের জানা নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের সবাই দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন এটাই এখন কাম্য। পাশাপাশি বিশেষত নৌযান চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপই দেখতে চাইবেন সবাই।

অনেকে যুক্তি দেখাতে পারেন, ঈদের ছুটি শেষে রাজধানী ফেরত যাত্রীদের চাহিদা পূরণ কিংবা অতিরিক্ত মুনাফা হাসিলের জন্যই অস্বাভাবিক যাত্রী তুলেছিল লঞ্চটি। যাদের আবার বিষয়টি তদারক করার কথা ছিল, তারা স্পষ্টত মনোযোগ দেন নি। হতাহতের মাঝে নৌ-পরিবহনমন্ত্রীর তিন ভাগনি ছিলেন বলেও কিন্তু একাধিক গণমাধ্যমে খবর রয়েছে। এদিকে গন্তব্য বেশ দূরে না হলেও লঞ্চটি খরস্রোতা নদীর মাঝে চলাচলের ঠিক উপযোগী ছিল না। এসবের মাঝে নদীর স্রোত বৃদ্ধি ছাড়া বাকি সবগুলোই মানবসৃষ্ট কারণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রায় প্রতি মৌসুমেই লঞ্চ ডুবছে, তদন্ত কমিটি হচ্ছে, সুপারিশ পেশ করা হচ্ছে; পরের মৌসুমে আবার একই কারণে যাত্রী বা মালবাহী নৌযান নিমজ্জিত হচ্ছে কোনো না কোনো নদীতে। শোকের তো বটেই, নদীমাতৃক বাংলাদেশে নিরাপদ নৌ চলাচল নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতা লজ্জারও। এ দুষ্টচক্র থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা দরকার। আর তা সরকারের উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব নয়। মাওয়ায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ পিনাক-৬’র মতো অসংখ্য নৌযান রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ। তার কিছু কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিংবা একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে সারা বছরই চোখে; বেশি ‘পুরনো’ কোনো কোনোটি নামানো হয় কেবল ঈদে। উৎসবের সময়ে হঠাৎ করে বাড়তি যাত্রীর চাপ নতুন কিছু নয়। এরই মধ্যে তার কিছুটা সামলানো হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থায়। তবে সার্বিকভাবে সড়ক, রেল ও নৌ পথে যাত্রী ও পণ্য চলাচল পরিস্থিতি মোটেই সন্তোষজনক নয় এবং এক্ষেত্রে নৌচলাচলের হাল বেশি খারাপ বলেই কারো কারো অভিমত। এ অবস্থা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নৌ পরিবহনে আমাদের সম্ভাবনার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তাছাড়া এক্ষেত্রে বিনিয়োগ সড়ক ও রেল পথের তুলনায় নাকি অনেকটাই ভিন্ন; রক্ষণাবেক্ষণেও তুলনামূলকভাবে সহজ বলে অনেকে মনে করেন। এর মাঝে বছর বছর লঞ্চডুবি আর নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু মেনে নেয়া সত্যই কঠিন। অন্তত মানবসৃষ্ট ত্রুটিজনিত দুর্যোগ থেকে জনগণ কেন রেহাই পাবে না? এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থান কি একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর অতিমুনাফার প্রলোভন থেকে যাত্রীদের সুরক্ষা দিতে পারবে না?

দেশের প্রথম তেলকূপ

দ্রুত খননকাজ শুরু হোক

শেল অয়েল কৈলাসটিলায় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে ১৯৬১ সালে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি কিনে নেয় ওই কোম্পানি। সে সময়ে কূপ-১ গ্যাস স্তরের নীচে সামান্য তেল মজুদ থাকতে পারে বলে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে জানা গিয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে সেখানে কতটুকু তেল মজুদ ছিল তা নিয়ে কিছু তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই ‘অবাণিজ্যিক’ আখ্যা পায় তেলক্ষেত্রটি। এর পর ১৯৮৬ সালে সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের ঠিক নীচেই আবিষ্কার হয় দেশের প্রথম তেলক্ষেত্র হরিপুর। লক্ষ্যণীয়, এর আগে যতগুলো কূপে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে তার প্রায় সবগুলো ছিল গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু এখানে সচেতনভাবে তেল উত্তোলনের উদ্দেশ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। সেদিক থেকে হরিপুরের ৭ নম্বর কূপটি আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের ইতিহাসে এক মাইলফলক বটে। এতে রক্ষিত তেলের মজুদ বিষয়ে মোটামুটি একটা সন্তোষজনক ধারণা পাওয়া পরই তা থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে তেলকূপ খননকাজের উদ্বোধনও করে প্রধানমন্ত্রী। কথা ছিল, ২০১৪ সালের মার্চ থেকে তেল উত্তোলন শুরু হবে। অথচ নির্ধারিত সময়ের অনেকটা পেরিয়ে গেলেও এখনো নাকি কূপ খননের কাজ শুরুই করা যায় নি বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। দেশের প্রথম তেলকূপ খননের কাজে এমন বিলম্ব কারোরই কাম্য নয়। সংশ্লিষ্টরা দ্রুত কাজটি সুসম্পন্নে মনোযোগ দেবে এমনটাই সবার প্রত্যাশা।

কেন জানি, কূপটি খননের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকেই নানা ঝামেলা লেগে আছে। কয়েক দফায় পিছিয়ে কাজটি। জানা যায়, একবার কূপটি খননের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল অখ্যাত এক বিদেশী কোম্পানিকে। অথচ গ্যাস ও তেল খননের মাঝে পদ্ধতিগত বিরাট পার্থক্য নেই। এটা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন কোম্পানিই (বাপেক্স) করতে পারত। তেলকূপ খননের দায়িত্ব সংস্থাটির হাতে পড়ল বটে কিন্তু কিছু পানি ঘোলা হওয়ার পর। মাঝে অর্থায়ন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলেও শোনা গেল কিছুদিন। এর পর বাপেক্স যখন আসলেই দায়িত্বটি পেলো তখন রিগ (খননযন্ত্র) ছিল অন্যত্র। এ রিগ নিয়ে আসতে চলে গেল উল্লেখযোগ্য সময়। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, রিগ নিয়ে সমস্যা এখনো দূর হয় নি। রিগে নাকি কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে এখন। এ ধরনের যন্ত্রপাতিতে সমস্যা দেখা দিতেই পারে। কিন্তু এভাবে একের পর এক সমস্যা অস্বভাবিক মনে হয়েছে অনেকের কাছে। বিষয়টির খতিয়ে দেখে তার সমাধান করা উচিৎ।

বাস্তবতা হলো, হরিপুরের ৭ নং কূপ থেকে আমরা যে পরিমাণ তেল পাব সেটিকে বিরাট প্রাপ্তি বলা যাবে না। ত্রিমাত্রিক জরিপ বলছে সেখানে ৪৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ও ৬৫৮ বিসিএফ গ্যাস মজুদ থাকতে পারে। জরিপের ফলাফল সঠিক হলে কূপটি থেকে প্রতিদিন ৫০০ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা যাবে। কূপ খননে ব্যয় হবে আড়াইশ’ কোটি টাকার মতো; উত্তোলিত তেলের মূল্য হতে পারে কয়েক হাজার কোটি টাকা। হিসাব মতে, হরিপুর তেল খনির আয়ুষ্কাল হতে পারে ২০০ বছর! এ অবস্থায় দৈনিক উত্তোলনযোগ্য তেলের পরিমাণ বাড়ানো যায় কিনা ভালোভাবে যাচাই করা দরকার। জানা যায়, আরেকটি গ্যাসকূপের নীচের স্তরে তেলের স্তর পায় বাপেক্স। সেখানেও তাদের দৈনিক উত্তোলন মাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫০০ ব্যারেল। অথচ কিছুদিন পরেই এটি নেমে আসে ২০০ ব্যারেলে। এক্ষেত্রে তেমনটি হতে দেয়া যাবে না। তবে সবার আগে কূপ থেকে তেল উত্তোলন শুরু করা দরকার।

মাছে আমদানি নির্ভরতা হ্রাসের প্রশ্ন

অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই

ক’বছর আগেও বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ হিমায়িত মৎস সম্পদ রফতানি হত। দেশেও কিছু মাছ আসত মূলত ভারত ও মিয়ানমার থেকে। সে পরিস্থিতি অনেকটাই পরিবর্তিত এখন। গতকালের বণিক বার্তার এক প্রতিবেদন মতে, চিংড়ি ছাড়া অন্যান্য মৎস সম্পদ রফতানির পরিমাণ সাম্প্রতিক বছরগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবে পাওয়া যাচ্ছে মাছ আমদানি বৃদ্ধির চিত্র। বিষয়টি ভাবনা জাগায় বৈকি। কেননা এরই মধ্যে আমাদের আমিষের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপকভাবে; আগামীতে তা আরোপ বাড়বে। বলা বাহুল্য, অভ্যন্তরীণ পরিভোগ বৃদ্ধির কারণেও মাছ রফতানি কমেছে আমাদের। তার সঙ্গে চিংড়ি বাদে অন্য মাছে প্রণোদনা না থাকায়ও রফতানি কমেছে বলে একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন আমাদের প্রতিনিধির কাছে। খেয়াল করার মতো বিষয়, ভারত থেকে মাছ আমদানি চিত্রে মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও এবং অবৈধ বাণিজ্য চালু থাকার পরও নাকি মিয়ানমার থেকে বিশেষত টেকনাফ বন্দর হয়ে কমেছে মাছের আমদানি। অন্যদিকে আমাদের মাছের আমদানি বাড়ছে ওমান, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ থেকে। এ পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের উপযুক্ত মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। নইলে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে তার প্রভাব শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে সেটি বলা মুশকিল। এমন পরিস্থিতিতে সবাই আশা করেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নেবে সরকার।

মাছে আমদানি নির্ভরতা কাটাতে চাইলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেজন্য মাছ চাষে মনোযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। তবে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাষের মাছ উৎপাদনে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান। উদাহরণ হিসেবে মাছের খাবারের দাম বৃদ্ধির কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। সেক্ষেত্রে বিকল্প উৎসগুলোর দিকে নজর দিতে হয়। লক্ষ্যণীয়, আমাদের মিঠা পানির প্রাকৃতিক জলাশয়ে রক্ষিত মাছের ওপর চাপ বাড়ছে ক্রমাগত। এর ওপর আরো বেশি চাপ দেয়া হলে ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ অবস্থায় ভালো বিকল্প উৎস হতে পারে বঙ্গোপসাগর। এখানে থেকে মৎস সম্পদ আহরণে আগে থেকেই পিছিয়ে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে এর বিশাল পরিমাণ অংশ যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকারে। এ অঞ্চলটি মৎস সম্পদে ভরপুর। প্রাকৃতিক ভারসাম্য অটুট রেখেই এখানে থেকে বিপুল পরিমাণ মাছ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করাও সম্ভব বলে মনে করেন কেউ কেউ। এসব ইস্যু কিন্তু কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এর প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়েছে কমই। ওই উদাসীনতা থেকে দ্রুত উত্তরণ প্রয়োজন। গভীর সমুদ্র থেকে মাছ আহরণের মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে কর্তৃপক্ষের উপযুক্ত পদক্ষেপই কাম্য এখন।

দেশী মুদ্রায় আঞ্চলিক বাণিজ্য

ফোকাস থাকুক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে

গত মাসে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের অংশ হিসেবে সার্ক অঞ্চলে দেশীয় মুদ্রার মাধ্যমে বাণিজ্য পরিচালনার প্রস্তাবে সদস্য দেশগুলো একমত হয়েছে বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। সার্ক ব্যাংক গঠনের উদ্দেশ্যেও নাকি তোড়জোড় শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। এজেন্ডাগুলোর সফল বাস্তবায়ন নিঃসন্দেহে প্রত্যেকের জন্য উপকার বয়ে আনবে। তবে এখন পর্যন্ত সার্কের যে অভিজ্ঞতা তাতে করে খুব একটা ভরসা করা যায় না। অনেকের মতে, নিয়মিতভাবে সম্মেলন আয়োজন ও নতুন এজেন্ডা গ্রহণে পারদর্শীতা দেখাতে পারলেও এজেন্ডা বাস্তবায়নে সার্কের অর্জন বলার মতো নয়। এদিকে আঞ্চলিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বও অস্বীকার করা যায় না। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলো, সব কিছু জেনেও দীর্ঘদিন সার্কভুক্ত অঞ্চলে অবহেলিতই থেকেছে কার্যকরভাবে আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টি। সে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটেছে এ কথাও বলা যাবে না। ফলে সার্ক ব্যাংক গঠন আর দেশীয় মুদ্রায় আঞ্চলিক বাণিজ্য পরিচালনার স্বপ্নে বিভোর থাকা যাবে না। বরং এজেন্ডাটিকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি প্রকৃত অর্থেই আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।

দেশীয় মুদ্রায় আঞ্চলিক বাণিজ্য পরিচালনার পক্ষে শক্ত যুক্তি রয়েছে সন্দেহ নেই। এতে করে বাইরের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যাবে খানিকটা হলেও। কেউ কেউ আবার এর স্বপক্ষে নিজস্ব মুদ্রার মাধ্যমে পরিচালিত ভারত ও ভুটানের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন। উদ্যোগটির অর্জনকে সমালোচনার টেবিলে না এনেও বলা যায় ভারতের তুলনায় ভুটানের অর্থনীতি নগণ্যই। দেশটির অর্থনীতিও ভারতের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ফলে স্বভাবতই এক্ষেত্রে সমন্বয়গত জটিলতা ছিল কম। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত, বাংলাদেশ-পাকিস্তান, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা অথবা ভারত-পাকিস্তান অর্থনৈতিক সম্পর্ক জটিল। এমনকি স্থানীয় মুদ্রায় আফগানিস্তান, মালদ্বীপ, নেপালের সঙ্গে অন্য সদস্যদের বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনাও সহজ হবে না। কেউ কেউ মনে করেন, সার্ক যে অনেক ক্ষেত্রেই সফল হতে পারছে না তার অন্যতম কারণ হয় এর নকশাগত ত্রুটি নয়তো পরিচালনাগত দুর্বলতা। সার্ক ব্যাংক পরিকল্পনায় এসব বিষয় মাথায় রাখা দরকার। দেশীয় মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনার বেলায় কাঠামোগত কোনো সংস্কারের প্রয়োজন আছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা চাই। আঞ্চলিক পর্যায়ে বিশেষত বাংলাদেশ-ভারত অনেক বাণিজ্য সম্ভাবনাই এখনো অবিকশিত। দেশীয় মুদ্রায় বাণিজ্য কার্যক্রম চালুর উদ্যোগের পাশাপাশি এর প্রতি সুদৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। লক্ষ্যণীয়, সার্কের বিদ্যমান বাণিজ্যও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়ে তোলা সম্ভব পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহায়তা বাড়িয়ে ও কিছু ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত সংস্কার সাধনের মাধ্যমে। এসবের প্রতি সংশ্লিষ্টরা মনোযোগ বাড়াবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে শ্লথ রফতানি প্রবৃদ্ধি

কথা ও কাজে সঙ্গতি রক্ষা করুন

বর্তমান সরকার প্রকৃতার্থেই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে চায়, এ ইচ্ছার কোনো সমালোচনা চলে না। এ লক্ষ্যে তারা উল্লেখযোগ্য কিছুই করেন নি এমন ঢালাও মন্তব্যও করা যাবে না। এরই মধ্যে একাধিক বড় প্রকল্প হাতে নেয় তারা। সেগুলোয় কয়েকটি বাস্তবায়িত; একাধিক কর্মসূচি এখনো বাস্তবায়নাধীন। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালেই তথ্যপ্রযুক্তি খাত আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হয়। তবে নানা প্রচেষ্টা স্বত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় খাতটিতে শ্লথ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ এক প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরের তুলনায় ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটলেও তা কমে এসেছে ২০১২-১৩ ও ২০১৩-২০১৪ সালের ১১ মাস পর্যন্ত। এটা কৌতূহলোদ্দীপক এজন্য যে, বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি বাজারে সাম্প্রতিক সময়ে চাহিদার উঠানামা দেখা যায় বেশ। তথ্য মতে, কয়েক বছর আন্তর্জাতিক বাজারে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবার চাহিদা বৃদ্ধির পর ২০০৯ সাল থেকে সেটি হ্রাস পেতে থাকে। অর্থাৎ বিশ্ব বাজারে চাহিদা কমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আমাদের রফতানি; আবার চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমেছে সেটি। এমনটি ঘটার কারণ কী, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

খাতসংশ্লিষ্ট এক বিশেষত কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়কেই দায়ী করেছেন। এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, বড় একাধিক প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়নাধীন। মাঝে মধ্যে হাইটেক পার্ক নিয়ে নানা খবর এলেও সেটি চালুর প্রক্রিয়া থেমে আছে বলেই জানা যায়। আবার শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হলেও তাতে সমন্বয় নেই বলে অনেকের ধারণা। এদিকে সুলভে আকর্ষণীয় ইন্টারনেট সেবার বিভিন্ন বিজ্ঞাপন বিভিন্ন স্থানে দৃষ্টিগোচর হলেও প্রকৃত অবস্থা কী তা ব্যবহারকারী মাত্রই ওয়াকিফহাল। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাব এক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা। খাতসংশ্লিষ্ট জনবলের দক্ষতাও আরো বাড়ানো প্রয়োজন। সেজন্য স্থানীয়দের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। প্রতিভাবানদের দেশে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কয়েক মাস আগে নেদারল্যান্ডসের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে মোটামুটি বিস্তৃত গবেষণা করেছিল। তাতে এখানে থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা রফতানি বৃদ্ধির পথে কম উচ্চারিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ আরো কিছু উপাদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো নীতিনির্ধারকদের আমলে নেয়া দরকার। স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের ৬০ শতাংশই নাকি অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী। হতে পারে, সম্প্রতি তা আরো বেড়েছে। রফতানি বাড়াতে এমন প্রবণতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি বটে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে রফতানি নীতি অনুযায়ী একটি বিজনেস কাউন্সিল গঠন হওয়ার কথা। সেটি আদৌ হবে কিনা কে জানে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমাদের সাফল্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সেভাবে প্রচার না হওয়াও এটি বিকাশের অন্যতম অন্তরায় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে উল্লিখিত প্রতিবেদনে। খেয়াল করার মতো বিষয়, এটি মাথায় রেখে সব বাংলাদেশী দূতাবাসকে নির্দেশনাও দেয়া হয়। তবু এক্ষেত্রে পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। এর উত্তরণই কাম্য এখন।

বিদেশী অনেক বিশেষজ্ঞই কয়েক বছর আগেও আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিয়ে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখতেন। সম্ভবত নিজের তো নয়ই তাদের প্রত্যাশাও পূরণ করতে পারছি না আমরা। অথচ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকে সুফল প্রদানের জন্য যা যা প্রয়োজন, সেগুলোয় আমাদের কমতি ছিল না বললেই চলে। তা সত্ত্বেও আমরা আশানুরুপ পারফরম্যান্স দেখাতে পারছি না। এর ভুলত্রুটি নির্ণয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। নইলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ক্রম থেকে আরো পিছিয়ে যাব আমরা।

কয়লা উত্তোলনের সরকারের আগ্রহ?

সার্বিকভাবে বিবেচনার পর সিদ্ধান্ত নিন

নতুন কোন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত তথা সেখান থেকে গ্যাস আহরণ না হলে ২০১৫ সালের পর বাংলাদেশে গ্যাস সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে এরই মধ্যে সতর্ক করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। জানা যায়, এমনিতেই গ্যাসসংকটে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। স্পষ্টত আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি ভারসাম্যে কমতি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি গৃহস্থালির বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে কাজে আসবে বৈকি। কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে পরমাণু শক্তি। কিন্তু বৃহৎ আকারে শক্তি আহরণের বেলায় গ্যাস বা কয়লায় তুলনায় নির্ভরযোগ্য আবিষ্কার হয় নি এখনো। এ অবস্থায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানিপূর্বক সমস্যার সমাধান করা যেতো। কিন্তু নানা বিবেচনায় এর প্রতি বিশেষজ্ঞদের আশানুরুপভাবে ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি হলো কয়লা। লক্ষ্যণীয়, আমাদের ৫টি খনিতে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আগামী ৫০ বছর প্রতিদিন ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। তবে কয়লা উত্তোলন পদ্ধতি নিয়ে এখানে বিতর্ক চালু আছে দীর্ঘদিন। বলা যায়, সেজন্যই গত কয়েক শাসনামলেও সিদ্ধান্ত হয় নি কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে। এরই মধ্যে শনিবার জ্বালানিনিরাপত্তা দিবসের সেমিনারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কয়লা মাটির নীচে রেখে লাভ নেই। আগামীতে কীভাবে জ্বালানি ব্যবহার করা যায়, এখনই সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্তহীনতা সঠিক নেতৃত্বের পরিচায়ক নয়’। তার এ বক্তব্যকে কয়লা উত্তোলন বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের পুনরায় আগ্রহের ইঙ্গিত হিসেবে নিতে চাইবেন অনেকে। তাছাড়া এর যৌক্তিকতা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। এ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কয়লা পেতে পেতে আমাদের বেশ কয়েক বছর লেগে যাবে। আবার যত দেরি হবে ততই বেড়ে যাবে ঠিকাদার তথা বিদেশী কোম্পানিগুলোর দর কষাকষির ক্ষমতা। তবু ইস্যুটি যথেষ্ট জটিল বিধায় এক্ষেত্রে সরকার সার্বিকভাবে বিবেচনার পরই সিদ্ধান্ত নেবে বলে প্রত্যাশা করেন সবাই।

প্রথম জটিলতা হলো, কোন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হবে। অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বড়পুকুরিয়ার মতো খনি অঞ্চল থেকে কয়লা উত্তোলন করা হলে সেটি আশপাশের সামগ্রিক পরিবেশের ওপর একটা বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলতে পারে। আবার উন্মুক্ত পদ্ধতি ছাড়া সেখান থেকে কয়লা উত্তোলন অর্থনৈতিকভাবে যুক্তিযুক্ত নয় বলে কারো কারো ধারণা। নিঃসন্দেহে আগামীর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট মেটানোর প্রস্তুতি আমাদের এখনই নিতে হবে। কিন্তু সেটি যে স্থানীয় অধিবাসীদের সুবিধা বাদ দিয়ে নয়, কয়লা উত্তোলন প্রসঙ্গে এ কথা খোদ ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকেই উল্লেখ করা হয়েছে বারবার। এখন পরিস্থিতির চাপে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হলে, সার্বিক বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া সেটি করা যাবে না কোনোক্রমেই।

যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক

দ্রুত নির্মাণ ও চালু করুন

উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির বৃহত্তর ভূমিকা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে রাজধানী থেকে অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় ১৯৯৯ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। পরবর্তীতে প্রতিটি জেলায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক (এসটিপি) বসানোর চিন্তা-ভাবনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তার ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে যশোর সফরকালে একটি এসটিপি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। সে উদ্দেশ্য কাজও শুরু হয়। পরিকল্পনা ছিল চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝে নির্মাণ সম্পন্ন হবে। অথচ গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত কাজে যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সেটি বলবার মতো নয়। বরং অর্থায়ন, জমি অধিগ্রহণ, নকশা প্রভৃতি জটিলতায় প্রকল্পটি আদৌ চালু হবে কিনা সে নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে অনেকের মাঝে। লক্ষ্যণীয়, পরবর্তী পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের কথা বাদ দিলেও যশোর এসটিপি’র শুধু প্রাথমিক পরিকল্পনাও অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এটিকে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বিকাশের কেন্দ্র হিসাবে দেখানো হয়েছে নকশায়। তার সঙ্গে অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ খাতের সমন্বয় এবং যশোর এসটিপিতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ ছিল সেখানে। সন্দেহ নেই পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি জাতীয় অর্থনীতির পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে শুরু করবে। এ অবস্থায় যশোর এসটিপি নির্মাণের অগ্রগতি হতাশজনক এবং সরকার এর প্রতি যত দ্রুত মনোযোগ দেবে ততই মঙ্গল।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরী হওয়ার মূল কারণ এর পরিবর্ধন। সংশোধিত পরিকল্পনায় উঠে এসেছে ডাটা রিকভারি সাইট (ডিআরএস) বসানো এবং পার্কে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিতকরণের ইস্যুও। এ ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে পরিকল্পনাগত পরিমার্জনেও এতটা দেরী কাম্য হতে পারে না। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশ থেকে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা রফতানিতে শ্লথ গতির খবর শিরোনাম হয়েছিল বণিক বার্তায়। গাজীপুর ও যশোরের মতো হাইটেক পার্ক যত দেরিতে চালু হবে এ ব্যবধান ততই বাড়তে পারে। সেজন্যই এক্ষেত্রে অর্থায়ন জটিলতাসহ অন্যান্য সমস্যা দ্রুত দূর করা দরকার। তথ্যপ্রযুক্তির আন্তর্জাতিক বাজার দ্রুত পরিবর্তনশীল। এটি একদিক থেকে সুযোগ; আবার অন্যদিক থেকে বিরাট চ্যালেঞ্জ। নতুন করে অভিযোগ জানানোর কিছু নেই যে, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও শুরু থেকে এ বিষয়ে যেমন ও যতটা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ছিল, তা নেয়া হয় নি সরকারের পক্ষ থেকে। প্রথমদিকে এক্ষেত্রে এক বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল, ভালোমতো দেখতে ও বুঝতে গিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি। তেমন সমস্যা এখন কমই বলা যায়। তার পরও যশোর হাইটেক পার্ক নির্মাণে বিলম্ব কেন বোধগম্য নয়।

সড়ক নিরাপত্তা

নিশ্চিতকরণের দায়িত্ব সরকারের

কেবল গত ঈদুল ফিতরের আগে-পরেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। সরকারি হিসাবে, এভাবে প্রতিদিন গড়ে নিহত হন কমপক্ষে ৮ জন। বিশ্বব্যাংকের অবশ্য বলে, প্রকৃত সংখ্যাটা কয়েকগুণ বেশি। সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে অর্থনীতিতে। তবে এর বৃহত্তর প্রভাবটা গিয়ে পড়ে ভুক্তভোগী পরিবারেরই। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মাঝে আনুমানিক ৩৭ শতাংশই নাকি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এ থেকে সংশ্লিষ্ট পরিবারের দুর্দশা অনুমান করা কঠিন নয় মোটেই। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত ও সেগুলো দূরীকরণে বিভিন্ন সময়ে সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান গবেষণা করেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, অনেক সময়ই সমাধানগুলো বাস্তবায়নে তেমন উদ্যোগী দেখা যায় না যোগাযোগ মন্ত্রণালয় তথা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) মাঝে। অনেকে বলেন, সওজ সব সময়ই ছোটে বড় প্রকল্পের পেছনে। সেজন্যই অল্প ব্যয়ে সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে তাদের মনোযোগ কম। অন্যদিকে সওজ’র মতে, এমন অভিযোগ ঠিক নয়। নানা জটিলতায় আশানুরুপভাবে সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প তাদের হাতে আসে না। কোনো পক্ষের যুক্তিই একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। ফলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। পাশাপাশি অগ্রাধিকার দিয়ে সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে মনোযোগ বাড়াতে হবে সরকারকে।

দেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে, সমন্বয়গত ঘাটতিও কম নেই। স্বভাবতই নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করতে হয় যোগাযোগ মন্ত্রীকে। এরই মধ্যে তার গৃহীত নানা প্রচেষ্টা মানুষের গোচরীভূত হয়েছে। সেটি অব্যাহত রাখা ও গৃহীত উদ্যোগের গতিবৃদ্ধি প্রয়োজন। লক্ষ্যণীয়, উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহায়তায় পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) পরিচালিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, সড়ক দুর্ঘটনায় ৯০ ভাগ মৃত্যুই ঘটছে ৫৫ কিলোমিটারে! গতকাল সহযোগী এক দৈনিকে বিশেষ প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে এ গবেষণা ঘিরে। এটি কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের একটা ভালো দিকনির্দেশনা হতে পারে। ঘাটতি বাজেটে বরাদ্দ নিয়ে একটা চাপ থাকবেই। কিন্তু বড় একটি সমস্যার সমাধান যদি ব্যয়সাশ্রয়ী হয়, সেটি যথাযোগ্যভাবে আমলে নেয়া দরকার। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কর্তৃপক্ষেরও নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে নিশ্চয়ই। তার সঙ্গে পিপিআরসির গবেষোণাটির সমন্বয় ঘটানো চাই। দেশে এখনো বড় কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে, যেগুলোয় সামান্য অর্থ ব্যয় করে অসংখ্যা মানুষের হতাহতের ঝুঁকি রোধ করা সম্ভব। প্রয়োজনে মহানগরীগুলোয় নাগরিক সুযোগ-সুবিধা যুগোপযোগীকরণের কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে দিয়ে হলেও সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা বাড়ানো যেতে পারে। গুলশান-বনানীতে ওয়াসার পাইপ উন্নতকরণের চেয়ে টাঙ্গাইল-সিরাজগঞ্জে মানুষের মৃত্যু রোধ কি অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়? পাশাপাশি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে সব ধরনের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে; জোর দিতে হবে চালকের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সাধারণভাবে জনসচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।

কঠিন শর্তের ঋণ

বোঝায় পরিণত যেন না হয়

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কড়াকড়ি থাকা সত্ত্বেও সরকার কঠিন শর্তে চীন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া থেকে ১৫৪ কোটি ডলার ঋণ নিচ্ছে বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। জানা যায়, এর মাঝে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ সুদ হারে নেয়া হবে ৯০ কোটি ডলার; ৪৫ কোটি ডলার নেয়া হবে ৬ শতাংশে। প্রথমোক্ত ঋণ ব্যয় হবে জ্বালানি তেল ক্রয়ে; দ্বিতীয়টি জ্বালানি অবকাঠামোয়। কথা হলো, আমাদের মতো দেশের পক্ষে মাঝে মধ্যে কঠিন শর্তে ঋণ নিতেই হয়। এর মাঝে জ্বালানি তেল ক্রয়ে ব্যবহৃত ঋণ বলতে গেলে আমরা নিয়মিতভাবেই নিয়ে আসছি। তবে খুবই সতর্ক থাকা প্রয়োজন, যেন এ ধরনের বিদেশ নির্ভরতা ক্রমে বোঝায় পরিণত না হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ নতুন রেকর্ড গড়েছে। এতে উৎসাহিত হয়ে কেউ যেন বেপরোয়া ঋণ নিতে উৎসাহ না পায়, সেদিকেও রাখতে হবে সজাগ দৃষ্টি।

স্বাধীনতা লাভের সময়টায় বিশ্বের অনেক দেশই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কিত ছিল। সে দুশ্চিন্তা আজ কেটে গেছে বটে। কিন্তু এখন আমাদের অর্থনীতির সামনে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো রূপান্তরের সময়টা ভালোভাবে পার করা। এর মাঝে পরিস্থিতিতে জটিলতা বাড়িয়েছে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন এবং বিশ্বায়নের প্রভাব। এর মাঝে কঠিন শর্তের ঋণ যেন ঝুঁকি বাড়াতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। উল্লিখিত পরিমাণটিও বিশাল নয়। কিন্তু সমস্যা হলো, স্বল্প মেয়াদে বিদেশ থেকে উচ্চ সুদের ঋণ অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। সেটি অর্থনীতির অন্যান্য অংশে সংক্রমিত হওয়ায়ও বিচিত্র নয়। কোনো দেশ অতিমাত্রায় কঠিন শর্তে বিদেশী ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে তার পরিণতি কেমন হতে পারে সে দৃষ্টান্ত নিকট অতীতেই লাতিন আমেরিকাসহ একই অঞ্চলে রয়েছে। তাই জরুরি না হলে সেগুলো পরিহার করাই উত্তম।

আইএমএফ-ও মনে করে আমাদের কঠিন শর্তের ঋণ ব্যবস্থা পদ্ধতিতে বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে। তাদের সে পর্যবেক্ষণ বিদ্যমান পরিস্থিতি উত্তরণে সহায়ক বলে বিবেচিত হতে পারে। সংশ্লিষ্টদের উচিৎ হবে তা আমলে নেয়া। লক্ষ্যণীয়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ নেবার ক্ষেত্রে সরকারি মূল্যায়ন অনেক সময়ই যথাযথ হয় না বলে অভিযোগ। এতে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি নিজেই বিপদে পড়ে যেতে পারে। বৈদেশিক ঋণ গ্রহণে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলেও প্রতীয়মান। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের নানা পর্যায়ে এখনো এ সমস্যাটি রয়ে গেছে; যা অত্যন্ত দুঃখজনক। শুধু গ্রহণ নয়, ঋণের অর্থ ব্যবহারেও দেখা যাচ্ছে সমন্বয়হীনতা। এদিকে ঋণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে উপস্থাপন করার কথা হার্ডটার্ম লোন স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে। অথচ তা নাকি অনুসরণ করাই হয় না! আমাদের আরেকটি বড় দুর্বলতা হলো, কঠিন শর্তে ঋণের হিসাব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত না হওয়া। এর প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয়া প্রয়োজন। নইলে এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে তার গ্রহণযোগ্য মীমাংসা নিশ্চিত করা কঠিন হবে। আবার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকলে যে ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয় তা গ্যারান্টির প্রয়োজনে প্রাথমিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়কে না জানানো থেকে সৃষ্ট জটিলতা থেকে ভিন্ন। এসবের প্রতিটি দুর্বলতা দূরীকরণে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া চাই। কঠিন শর্তে বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার চাহিদা আমাদের সহসাই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। তাই বিদ্যমান পদ্ধতিটি শক্তিশালী করা প্রয়োজন।

সাইবার নিরাপত্তা

বিনিয়োগ দরকার সুনিয়ন্ত্রণের জন্যই

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) উদ্যোগে ২০১২ সালের শুরুতেই জাতীয় কম্পিউটার নিরাপত্তা সমন্বয় হিসেবে গঠিত হয় বিডি-সিএসআইআরটি বা বিডি-সার্ট। সে সময়ে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ার ক্রমবর্ধমান শঙ্কাই এটি গঠনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দেয়। বেশ শক্তিশালী কমিটি ছিল এর। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সাইবার স্পেসে অপপ্রচারমূলক কন্টেন্টের বিস্তার কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে নিষ্প্রভ হতে থাকে বিডি-সার্ট। এখন নাকি আনুমানিক দশ মাস ধরে বন্ধ আছে তাদের ওয়েবসাইটই। সাইটটির নিরাপত্তা পরিস্থিতিও অত্যন্ত নাজুক বলে একাধিক বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান মন্তব্য জানিয়েছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তিনি জানিয়েছেন, ওটি অফিসিয়াল সাইট নয়। আবার এও বলেছেন, সাইটটি বন্ধ নয়, তার উন্নয়নকাজ চলছে! যাহোক, সাইবার স্পেসে ব্যবহারকারীকে নিরাপত্তা প্রদান করা দায়িত্ব যাদের, তাদের নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই যদি দুশ্চিন্তা জোগায়, তবে তা দুঃখজনক বটে। হতে পারে, সাময়িক বিবেচনায় গঠিত বিডি-সার্ট নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণের পর আর তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের সাইবার নিরাপত্তার প্রয়োজন তো কমেনি, বরং দিনকে দিন তা আরো বাড়ছে। নিরাপত্তা বাড়াতে ইন্টারনেট অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে অগ্রসর দেশ কর্তৃক দৃষ্টি দেয়ার খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়ই। এ অবস্থায় একবিংশ শতাব্দীর সাইবার নিরাপত্তার প্রতি সরকার অধিক মনোযোগ দেবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

অনেকে মনে করেন, অপর্যাপ্ত জনবল ও অর্থায়ন ঘাটতিতে নিষ্প্রভ হয়েছে বিডি-সার্টের কার্যক্রম। তাদের কাছে আসা বেশির ভাগ অভিযোগই নাকি ছিল ফেসবুক সংক্রান্ত অর্থাৎ প্রায়শই ব্যক্তিগত। অথচ কারো কারো মতে উচিৎ ছিল, এ ধরনের দায়িত্ব কিছুদিন পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো সেলের হাতে তুলে দিয়ে বিডি-সার্টকে ব্যবসায়িক ও জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষেত্রের উপযোগী করে তোলা। গত ক’বছর বাংলাদেশে অনলাইন লেনদেন বেড়েছে ব্যাপকভাবে। এক্ষেত্রে হঠাৎ হঠাৎ গ্রাহক প্রতারণার খবর মেলে। বড় কথা হলো, এখানে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার জন্য যথেষ্ঠ শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক যেমন নেই, তেমনি অনলাইন ব্যবসা সুষ্ঠুভাবে বিকাশের দিক-নির্দেশনাও পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এভাবে বেশি দূর এগোনোটা বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে কিন্তু। সেজন্য এখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর সাইবার নিরাপত্তায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি ছাড়া সেটি সম্ভব নয়।

জানা যায়, বিডি-সার্টের কার্যক্রম কিছুটা নিস্তেজ হয়েছে- কেননা এরই মধ্যে জাতীয় সি এসআইআরটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এটি সঠিক পথে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হবে এটিই আমাদের কাম্য। তবে এ পথ নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশের জন্য প্রকৃত সাইবার হুমকিগুলো আগে চিহ্নিত করা দরকার। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের সাধারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অতীতের তুলনায় ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়লেও তারা খুব একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইবার হুমকিতে নেই বলে মনে করেন কেউ কেউ। আবার ই-টিকেটিংয়ের মতো কিছু সেবায় অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ সাইবার হুমকি রয়েছে বেশ। হুমকির গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় এগুলো মোকাবেলায় আমাদের সামরিক ও বেসামরিক উভয় প্রশাসনের সহায়তা নিতে পারে বিটিআরসি; সেক্ষেত্রে নিজে নিতে পারে নিয়ন্ত্রক সমন্বয়কের ভূমিকা। তবে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হোক, দ্রুত অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। সপ্তাহখানেক আগে খবর বেরোয়, বৈশ্বিক কয়েক বিলিয়ন ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করেছে একদল হ্যাকার। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা না গেলেও তাতে আমাদের ঝুঁকি কমে না। বরং দেশে ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি ব্যবহার এবং এর দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা উদ্বেগজনক। এমন পরিস্থিতিতে সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে; বিডি-সার্টকে শক্তিশালী করে হোক, বা জাতীয় সিএসইআরটি গঠন করে হোক, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে অনলাইনে।

খোলা বাজারে ওষুধের কাঁচামাল

বিক্রি রোধে প্রশাসনের সক্রিয়তা কাম্য

নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করলে ওষুধের কাঁচামালের কার্যকারিতা হারায়। আবার প্রত্যেক কাঁচামালের প্রত্যাশিত কার্যকারিতা পেতে একেকটিকে সংরক্ষণ করতে হয় ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রায়। ওষুধের রাসায়নিককে অন্যান্য রাসায়নিকের সংস্পর্শে রাখা নিষেধ, বিশেষত শিল্প রাসায়নিকের সঙ্গে। কেননা শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত রাসায়নিক উপকরণ সহজেই ওষুধের রাসায়নিকের সঙ্গে বিক্রিয়া করে ভিন্ন যৌগ তৈরি করতে পারে। তবে শুধু সংরক্ষণ সুবিধার দুর্বলতার জন্য নয়, বড় কথা হলো- আইন অনুযায়ী খোলা বাজারে ওষুধের কাঁচামাল লেনদেন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তবু আমাদের প্রতিনিধি রাজধানীর মিটফোর্ড ঘুরে খোলা বাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রির যে চিত্র তুলে ধরছেন গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তা সত্যই উদ্বেগজনক। অনেক ব্যবসায়ীই নাকি অন্যান্য রাসায়নিকের সঙ্গে রাখছে বিক্রয় নিষিদ্ধ ওসব কাঁচামাল। সেসবের রেট আগে থেকেই নির্ধারিত। তবে যেকেউ চাইলে তা কিনতে পারেন না, শুধুমাত্র চিহ্নিত সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি হয় ওগুলো। প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেবেন তারা। নইলে হয়তো বিভিন্ন অনুমোদনহীন ওষুধ কারখানায় তৈরি হয়ে একটু কম দামে এগুলোই হয়তো বিকোবে গ্রামে-গঞ্জে। দুশ্চিন্তা হলো, অ্যান্টিয়ায়োটিকের মতো জীবনরক্ষাকারী ওষুধের উপাদান যদি মানসম্পন্ন না হয় সেটি ভোক্তার ক্ষতির কারণ হতে পারে।

স্পষ্টতই খুচরা ব্যবসায়ীদের বাজার থেকে ওষুধের কাঁচামাল কেনার সুযোগ নেই। এরা কাঁচামাল কেনেন বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যালস থেকে। জানা যায়, অনেক সময়ই বিভিন্ন ওষুধ তৈরির কাঁচামাল উদ্বৃত্ত থেকে যায়, যেটি ফার্মাসিউটিক্যালসে কর্মরত একশ্রেণীর ব্যক্তির সহায়তায় চলে আসে খোলা বাজারে। এ বিষয়ে ফার্মাসিউটিক্যালসগুলোকে অধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিতে পারে ওষুধ প্রশাসন। পাশাপাশি যারা খোলা বাজারে ওষুধের কাঁচামালের ব্যবসায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ফৌজদারি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়। এক্ষেত্রে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটানো জরুরি। একই সঙ্গে অভিযান চালাতে হবে, যারা ওসব কাঁচামাল বিক্রি করছেন এবং যারা তা ক্রয় তথা ব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান পরিচালনা ছাড়া এ ধরনের অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে সবার প্রত্যাশা।

বেসরকারি হাসপাতালে বিপুল রাজস্ব ছাড়

সেবামূল্যে এর প্রতিফলন নিশ্চিত করুন

‘বিপুল রাজস্ব ছাড়ের সুবিধা পান না রোগীরা’ শিরোনামে গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি এরই মধ্যে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সেখানে রাজধানীর নামকরা এক হাসপাতালের সেবা পরিস্থিতির এক বিশেষ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি বিল সম্পূর্ণ পরিশোধ না করায় এক ব্যক্তির লাশ কয়েকদিন পর্যন্ত আটকে রেখে সমালোচিত হয়ে ওঠে হাসপাতালটি। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যে ধরনের ন্যূনতম আচরণ প্রত্যাশা করে মানুষ, স্পষ্টত সেটিও দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। এদিকে আমাদের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, রোগীর বেলায় কোনো ছাড় না দিলেও হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসছে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি উপকরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিনা শুল্কে আমদানি সুবিধা। এর মধ্যে দিয়ে হাসপাতালটি পাচ্ছে বিপুল রাজস্ব ছাড়। এনবিআরের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে বাড়তি কোনো সুবিধা পাচ্ছে না কেউই। কথা হলো, হাসপাতালটি মাসের পর মাস ওই নির্দিষ্ট সুবিধা নিয়ে গেল অথচ তাদের সেবামূল্যে তার কোনো প্রতিফলন যে নেই, সেটি দেখার কী কেউই ছিল না? কর্তৃপক্ষের এত দেরিতে টনক নড়ে কেন, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। রোগীদের কাছ থেকে নেয়া হাসপাতালটির সেবামূল্যের সঙ্গে আয়কর বিবরণীতে দেয়া তথ্যে অসঙ্গতিও তাদের আগেই খুঁজে পাওয়া উচিৎ ছিল।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উল্লিখিত হাসপাতাল তো বটেই, যেসব বেসরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও উপকরণে বিনা শুল্ক আমদানি সুবিধা ভোগ করছে সেগুলো প্রতিটির ওপর নজরদারি বাড়ানো দরকার। দেখা দরকার, তাদের সেবামূল্যে রাজস্ব ছাড়ের প্রভাব আদৌ রয়েছে কিনা এবং থাকলে সেটি সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা। বিনা শুল্কে দামি যন্ত্রপাতি ও উপকরণ আনার সুবিধা নিশ্চয়ই একশ্রেণীর সুযোগসন্ধানীর মুনাফা বাড়ানোর জন্য দেয়া হয় নি? এসব তো রোগীর ওপর চিকিৎসা ব্যয় লাঘবের জন্য দেয়ার কথা। এ অবস্থায় প্রদত্ত সুবিধাটি পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে কিনা, সেটি দেখা দরকার। সুবিধাটি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নতুন আইন করে রোগীর মাঝে তার অধিক সুফল নিশ্চিত করা যেতে পারে বলেও মনে করেন অনেকে। লক্ষ্যণীয়, গত কয়েক দশকে আমাদের চিকিৎসা ব্যয় বেড়েছে ব্যাপকভাবে অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে সংকুচিত হয়েছে এর পরিধি। সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে এসব ইস্যুর প্রতি সরকারের অধিকতর মনোযোগই প্রত্যাশা করেন সবাই।

পল্লী জনপদ প্রকল্প

প্রত্যাশিত সাফল্য অর্জিত হোক

তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১ শতাংশ কৃষিজমি বিনষ্ট করে তৈরি হচ্ছে ঘরবাড়ি ও কলকারখানা। এর প্রভাব তাৎক্ষণিকভাবে পড়ছে কৃষি উৎপাদনের ওপর। সেটি আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষি ব্যবস্থাপনার সহায়তায় কাটিয়ে ওঠার প্রয়াস লক্ষ্যণীয়। তবে কৃষি জমি হ্রাসের একটা ব্যাপক দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর, নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর যার ক্ষতিপূরণ প্রায় অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামীণ কৃষিজমি রক্ষায় একনেকে গৃহীত ‘পল্লী জনপদ’ প্রকল্প সুসংবাদ বটে। গতকালের বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ক যেসব খবর পরিবেশিত হয়েছে তা থেকে অনুমান করা যায় যে, প্রকল্পটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হলে গ্রামীণ বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর সুফল পাবেন। সবাই এ প্রকল্পের সাফল্যই কামনা করবেন। পাশপাশি স্মরণ করিয়ে দেয়া দরকার, সরকার গৃহীত অনেক সম্ভাবনাময় প্রকল্পের প্রতি সাধারণভাবে মানুষের মনে মধ্য মেয়াদে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হতে দেখা যায়। প্রায়শ দুর্নীতি ও যথেচ্ছ দলীয়করণই তার অন্যতম কারণ বলে প্রতীয়মান। যদিও এক্ষেত্রে আশ্বাস প্রদান করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী, তবু খুবই সতর্ক থাকা দরকার। কেননা এ ধরনের প্রকল্প কার্যকর প্রমাণ হলে সেটি আমাদের দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত করতে পারে এবং তা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সামনে মডেল হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে।

পরীক্ষামূলকভাবে সাত বিভাগে একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলে জানা যায়। প্রাথমিকভাবে টার্গেট করা হয়েছে সেসব অঞ্চল যেখানে কৃষিজমি নষ্ট করে ঘরবাড়ি ও কলকারখানা নির্মাণের প্রবণতা বেশি এবং যেসব অঞ্চলে প্রবাসী আয় তুলনামূলকভাবে বেশি আছে। এ সিদ্ধান্ত বুদ্ধিদীপ্ত বলতেই হবে। কেননা প্রকল্পটিতে ৭০ : ৩০ হিসেবে সরকারি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একে দুর্বলতা হিসেবে দেখতে চাইছেন অনেকে। তারা বলছেন, শতকরা কয়জন গ্রামবাসীর ওই পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে ‘পল্লী জনপদ’ সুবিধা গ্রহণের সামর্থ্য রাখেন? অধিক প্রবাসী আয় গ্রহণকারী গ্রামে প্রকল্প গ্রহণ করা হলে কিন্তু সে ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করা কঠিন। আবার প্রশ্নটিকে উড়িয়েও দেয়া যায় না বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে। প্রকল্প কয়েক বছর চলার পর অনেক কিছুই স্পষ্ট হবে। এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য নিষ্পত্তিতে উপনীত হওয়া জরুরি। নইলে অভিজ্ঞতাটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া কঠিন হবে বৈকি।

আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধ

দাম হ্রাসের সুফল মিলবে না কেন?

আন্তর্জাতিক বাজারে গুঁড়ো দুধের দামে হ্রাস-বৃদ্ধি এবং এখানে আমদানিকৃত পণ্যটির দামে তার প্রতিফলন নিয়ে প্রকাশিত গতকালের বণিক বার্তার প্রতিবেদনটি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। গ্লোবাল ডেইরি ট্রেড যে তথ্য জানাচ্ছে তাতে দেখা যায়, গত বছর বৈশ্বিক পর্যায়ে গুঁড়ো দুধের দাম ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় চড়া। প্রতি টন গুঁড়ো দুধ আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার ডলার দামে বিক্রি হয় ২০১২ সালে। ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর তা পৌঁছে ৫ হাজার ২৪৫ ডলার পর্যন্ত। এর পর থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে গুঁড়ো দুধের দামে ভাটা লক্ষ্যণীয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ভাষ্য অনুযায়ী চলতি বছরও গুঁড়ো দুধের দাম হয়তো কমই থাকবে। কেননা অন্যতম প্রধান উৎপাদনকারী দেশ নিউজিল্যান্ডে দুধের উৎপাদন ও মজুদ উভয় পরিস্থিতি সন্তোষজনক। এদিকে আবার দুধ আমদানি খানিকটা কমেছে রাশিয়া ও চীনে। এ চিত্রের সঙ্গে স্থানীয় বাজার অনেকটাই যেন অসঙ্গতিপূর্ণ। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুধের দাম বৃদ্ধির প্রতিফলন এখনো বিরাজ করছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। কি বহুজাতিক, কি দেশি- গুঁড়ো দুধ উৎপাদনকারী সিংহভাগ কোম্পানির পণ্যেরই দাম কমার লক্ষণ মিলছে। এ পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য।

বিশ্ববাজারে দাম কমলেও এখানে কেন তার প্রতিফলন দেখা যায় না, তার একটা গৎবাঁধা যুক্তি আছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর কাছে। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত বলে, সার্বিক আমদানি চুক্তি হয় বছরভিত্তিতে। ফলে হুট কমে দাম কমানো সম্ভব নয়। আবার বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বাংলাদেশী বাজারের অবস্থানের কারণেও দাম হ্রাসের প্রভাব কিছুটা দেরিতে দেখা দেয়। ফলে প্রবণতাটি দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকলেই কেবল তাদের পক্ষে দাম কমানো সম্ভব। দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এ বিষয়ে সেভাবে মতামত না দিলেও তাদের মনোভাব কমবেশি একই রকম। এসব যুক্তি একেবারে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কথা হলো, দাম বৃদ্ধির বেলায়ও তো একই ঘটনা ঘটার কথা। দাম বৃদ্ধিটা নিশ্চয়ই বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার বাইরের কোন উপাদান ঘটায় না? বার্ষিক চুক্তির বিষয়টিও তো দাম বৃদ্ধির বেলায় প্রযোজ্য হওয়ার কথা। অথচ দেখা যাচ্ছে, দাম কমছে দীর্ঘ সময়ে আর দাম বাড়ছে তার চেয়ে লক্ষ্যণীয়ভাবে দ্রুততার সঙ্গে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের দিকেই তাকিয়ে আছেন ভোক্তারা।

ই-তথ্য সেবাকেন্দ্রের দুরবস্থা

চাই স্থানীয় ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন

দেশজুড়ে ই-তথ্য সেবাকেন্দ্র ছড়িয়ে দেয়াটা একক ভিশনের অংশ ছিল না। ডিজিটাল বাংলাদেশ ও রূপকল্প ২০২১-এর বাস্তবায়ন সুসম্পন্ন করতেই নেয়া হয় এ উদ্যোগ। সে উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের মাঝে হাজারখানেক ইউনিয়নে সম্প্রসারিত হয় ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (ইউআইএসসি)। পরবর্তীতে পৌর তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (পিআইএসসি) চালু হয় সে অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে। তারও বছরখানেক আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ই-তথ্য সেবাকেন্দ্র। সেসব অভিজ্ঞতার কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ার পর ও ইউএনডিপির মতো উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তায় পুরোদমে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে সরকার। এর উদ্দেশ্য বিবিধ। প্রথমত. ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের মাঝে শিক্ষা ও উপদেশমূলক কার্যক্রম। তার আওতায় কৃষি, স্বাস্থ্য, আইন, মানবাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য প্রদান করা হয় আগ্রহীদের। দ্বিতীয়ত. দূরযোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার। এক্ষেত্রে অনলাইনে প্রবাসী স্বজনদের সঙ্গে সহজে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। তৃতীয়ত. ডিজিটাল ক্যামেরা, ফটোকপি মেশিন, স্ক্যানার প্রভৃতি সুবিধা যুগিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাবলম্বী মানুষ তথা উদ্যোক্তাশ্রেণীর বিকাশ ঘটানো; এক্ষেত্রে আবার বিশেষ টার্গেট ছিল প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একজন পুরুষ ও একজন নারী উদ্যোক্তা তৈরি। এসব কারণে স্বভাবতই ই-তথ্য সেবাকেন্দ্র ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন অনেকে। তাদের সে আকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে যায় প্রকল্পটির প্রাথমিক সাফলে। তবে এখন সেটি কী অবস্থায় আছে, তার একটা ইঙ্গিত মেলে গতকাল প্রকাশিত বণিক বার্তার প্রতিবেদন থেকে। ওতে বলা হয়েছে, তৃণমূলের অবস্থাপনায় ই-তথ্য সেবাকেন্দ্র প্রকল্পের দুরবস্থা চলছে এখন। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টির প্রতি সরকারের অধিক মনোযোগই কামনা করবেন সবাই।

কেন প্রকল্পের ওমন হাল, তার বেশ কিছু কারণের দিকে ইঙ্গিত করেছেন আমাদের প্রতিবেদক। স্পষ্টত এখানে স্থানীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নকারীদের দায় তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে বেশি। অনেক সময় নাকি ই-তথ্য সেবাকেন্দ্রের বিভিন্ন ডিজিটাল উপকরণ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিয়ে যান একশ্রেণীর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সচিব কিংবা সদস্য। এক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেয়া উচিৎ সরকারের। যখন থেকে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণের ইস্যু উত্থাপিত হয়েছে, তখন থেকেই ইউনিয়ন পরিষদের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাড়ানো হয়েছে সুযোগসুবিধা। এর পরও নিছক ব্যক্তিগত প্রয়োজনে অন্যায্যভাবে সরকারি যন্ত্রপাতি ভোগদখকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। মাসের পর মাস ই-তথ্য সেবাকেন্দ্রের কম্পিউটার-ফটোকপিয়ার মেরামতে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ নেই কেন, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে বৈকি। আবার স্থানীয় পর্যায়ের এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখার মূল দায়িত্ব কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার। বোঝা যাচ্ছে, এক্ষেত্রে তাদের গাফিলতিও কম নেই। অনেক ই-তথ্য সেবাকেন্দ্রের পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল নেই। কিছু ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি পাঠানো হয়েছে অথচ এলাকায় নেই বিদ্যুৎ। জনসচেতনতার অভাবও ই-তথ্য সেবা কেন্দ্রের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে মনে করেন অনেকে। অথচ প্রচারণায় ব্যয় লক্ষ্যণীয়ভাবে কম। চলতি বছর শুরুর দিকে সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো এক নির্দেশনায় দেখা যাচ্ছে তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের বিলবোর্ডের জন্য ৫ হাজার ও মাইকিং, সিনেমা প্রদর্শন প্রভৃতি প্রচারণামূলক কর্মসূচি পরিচালনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ১ হাজার টাকা। ওই অর্থে ই-তথ্য ও সেবাকেন্দ্র বিষয়ে জনসচেতনতা কতটা বাড়ানো সম্ভব, সে ভার সংশ্লিষ্টদের ওপরই রইল।

ভূমি খতিয়ান সংরক্ষণ প্রক্রিয়া

ডিজিটালাইজেশন দ্রুত সম্পন্ন হোক

এমনিতেই আমাদের ভূমি ব্যবস্থাপনা পরিস্থিতি তেমন সন্তোষজনক নয়। আবার জনসংখ্যার চাপ ও উন্নয়নের চাহিদা মেটাতে গিয়ে দেশে ক্রমেই কমছে মাথাপিছু জমির পরিমাণ। কেউ কেউ দীর্ঘমেয়াদি আরেক সম্ভাব্য বিপদের কথা বলেছেন। সেটি হলো, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে বাংলাদেশের স্থল সীমানার সংকোচন। এসব কারণে স্বভাবতই ভূমি ব্যবস্থাপনা সংস্কারের কথা বলে থাকেন অনেকে। প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল সন্দেহ নেই। সেজন্যই হয়তো এক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এক রকম এড়িয়ে চলা হয়েছে অনেকদিন। তবে কারো কারো মতে, এ ইস্যুতে নীতিনির্ধারকদের মানসিকতায় বড় পরিবর্তন আসে ২০০৮-পরবর্তী আওয়ামী শাসনামলে। ২০১২ সালে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়ন এবং সেগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এটি পর্যায় ভিত্তিতে সম্পন্ন করার কথা; যার প্রথম পর্যায়ে ছিল, বিদ্যমান মৌজা মানচিত্র ও খতিয়ানের ডিজিটালাইজেশন। নতুন করে ব্যাখ্যার দরকার নেই, ৫৫টি জেলার রেকর্ড রুমে রক্ষিত সিএস, এসএ ও আরএস খতিয়ান সংরক্ষণ ও চাহিদা অনুযায়ী তা বিতরণও ছিল এ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। সে লক্ষ্যেই এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় ডেভেলপ করা উন্নত সফটওয়্যারের সহায়তায় কাজটি শুরুও হয় এবং এর বাস্তবায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০১৪ সালের জুন। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি সম্বন্ধে যা জানা গেছে তা হতাশাজনক। ভূমি খতিয়ান সংরক্ষণে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় গতি নেই বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। রেকর্ড রুমে সংরক্ষিত আনুমানিক সাড়ে চার কোটি খতিয়ানের মাঝে এখন পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় সংরক্ষিত হয়েছে নাকি মাত্র ৫৭ লাখ। উদ্ভূত পরিস্থিতিকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করাই শ্রেয়।

প্রকল্প বাস্তবায়নে শ্লথ গতির জন্য দায়ী করা হচ্ছে কয়েকটি কারণকে। তার মাঝে অন্যতম হলো অর্থ সংকট। ডিজিটালাইজেশনের জন্য রেকর্ড রুমের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ, দেশজুড়ে কর্মরত বাস্তবায়নে টিমের সম্মানী, ইন্টারনেট সংযোগ, জাতীয় পর্যায়ে ডাটা এন্ট্রি মনিটরিং প্রভৃতি কাজ সুসম্পন্নের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বরাদ্দ প্রয়োজন এবং অনেক দেশ এ ধরনের কাজে ব্যয়ের ইস্যুকে কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার গুণগত মানের ওপরই ছাড় দিয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো, এটি কি সংশ্লিষ্টরা আগে আমলে নেন নি? নইলে প্রথম সংশোধনী থেকে ব্যয় আনুমানিক ৩৬ কোটি ৮০ লাখ বেড়ে বর্তমানে প্রায় ৯২ কোটি ৭৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা দাঁড়ায় কীভাবে? বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রযুক্তিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। দূর করতে হবে দক্ষ জনবলের সংকট এবং প্রকল্প নকশায় বিদ্যমান ত্রুটিও। অনেকে বলছেন, একশ্রেণীর স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাদের অনিচ্ছা ও কঠোর নজরদারি না হওয়াটাও ভূমি খতিয়ানের ডিজিটাল সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার গতি হ্রাসের জন্য দায়ী। তাই সরকারকে আরো সচেষ্ট থাকতে হবে। প্রকল্পটির সুসম্পন্ন করতে এরই মধ্যে বাড়তি বরাদ্দের পাশাপাশি আরো দু’বছর অর্থাৎ ২০১৬ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেটি বিবেচনায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথায় রাখা দরকার, বাড়তি সময় দিতে দিতে দেশে একাধিক জরুরি প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে গেছে- ভূমি খতিয়ান সংরক্ষণের বেলায় যেন তা ঘটে।

বন্যা পরিস্থিতি

পুনর্বাসনের জন্য যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি কাম্য

শুরুতে দেশের উত্তর ও পূর্ব অংশে সংঘটিত হঠাৎ বন্যা দ্রুতই নেমে যাওয়ার আশা ছিল সংশ্লিষ্টদের। তবে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর বলছে প্রকৃত অবস্থা বোধকরি খানিকটা জটিল। এরই মধ্যে বগুড়া, লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলা জানা যায়। দিনাজপুরের কিছু অঞ্চলে নদীর পানি বাড়লেও নাকি অন্যান্য অংশে পানির নেমে গেছে। সুনামগঞ্জে কয়েক লাখ মানুষের পানি বন্দি হওয়ার খবর রয়েছে। সেখানেও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে আমনের ক্ষেত। সোমবার বাঁধ ভেঙ্গে বালু নদের পানি রাজধানীতে প্রবেশের প্রতিবেদনও এসেছে মিডিয়ায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো, ১৩ থেকে ১৫ আগস্ট জোয়ারের কারণে সৃষ্ট প্লাবন উপকূলীয় অঞ্চলে পানিবন্দি করে ফেলেছে বিপুল সংখ্যক মানুষকে। তীব্র জোয়ারে বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় একদিকে নদী তীরবর্তী এলাকা ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে; অন্যদিকে বসতভিটা ও আবাদি জমি। স্থানীয় এক দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ সেপ্টেম্বরে বড় জোয়ারের ঘটার শঙ্কা জানিয়েছেন এক সংবাদ সম্মেলনে। তার সঙ্গে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতের কথা নয় বাদই থাকুক। এ ত্রিমুখী উপাদান একীভূত হওয়ায় সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতির পূর্বাভাস জানানো জটিল হবে বৈকি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা গত কয়েক দশকে বেড়েছে বেশ। সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর সরকারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে বলেও প্রতীয়মান। তবু বন্যার সময় জনদুর্ভোগ হ্রাসে তাদের অধিকতর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বাড়তি জোর দিতে হবে বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কর্মসূচির ওপরও।

বন্যা বাংলাদেশের জন্য আকস্মিক কোনো দুর্যোগ নয়। প্রতি বছরই কমবেশি এর কবলে পড়তে হয় স্থানীয় জনপদকে। এর প্রকোপ থেকে গবাদিপশু রক্ষা করা সম্ভব হলেও আবাদি জমি যে রক্ষা করা যাবে না, সে নিয়তি মেনেই নেয়া ছাড়া উপায় কি! তাই এখন মনোযোগ নিবদ্ধ করা চাই, বন্যার সময়ে সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণ ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে মানুষ ও অর্থনীতির যথাযথ পুনর্বাসনে। উত্তরাঞ্চলে বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতার খোঁজ এখনো না মিললেও ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে প্রশাসনের পক্ষে থেকে। অবশ্য এক্ষেত্রে নানা অভিযোগ রয়েছে দুর্গতদের। উর্ধ্বতনদের উচিৎ বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেয়া। উপদ্রুত অঞ্চলে মানুষের দুর্ভোগ হ্রাসে কোনো রকম গাফিলতি বা অনিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়। বন্যা-পরবর্তী সময়ে একটি গুরুত্ব ইস্যু হলো, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি। এক্ষেত্রে পানিবাহিত রোগের শঙ্কা তো আছেই, স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করাও বড় দুশ্চিন্তা বৈকি। এমনিতেই সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণে আমাদের সুনাম তেমন নেই। বন্যার পর কিছু ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে উঠতে দেখা যায়। অথচ বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়ক, রেল ও নৌপথ দ্রুত পুনর্বাসন করতে না পারলে বিশেষত স্থানীয় অর্থনীতির স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা কঠিন। বন্যায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেল পথে পণ্য এবং যাত্রী পরিবহন ব্যাহত হলে জাতীয় অর্থনীতিতেও যে মাত্রায়ই হোক- প্রভাব পড়বেই। তাই এসব বিষয়ে আগে থেকে যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে কর্তৃপক্ষকে। সেক্ষেত্রে ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে অধিকতর সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের পূর্বাভাস ব্যবস্থাও উন্নততর করতে হবে।

পর্যটন স্পটে ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি

উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে

একশ্রেণীর পর্যটকের দায়িত্বহীন বিচরণে দেশের প্রায় সব সৌন্দর্যময় স্থানগুলোয় প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঝুঁকিতে পড়ার খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। সেখানে অন্যতম সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়ায় অপরিকল্পিতভাবে খাবারের দোকান বসানো এবং পর্যটক কর্তৃক যত্রতত্র অপচনশীল দ্রব্য ফেলার ঘটনা উল্লেখ করেছেন আমাদের প্রতিবেদক। স্পষ্টত এক্ষেত্রে পর্যটকদের সচেতনতার ঘাটতি তো আছেই, কর্তৃপক্ষের গাফিলতিও কম নেই। মূলত সেজন্যই লাউয়াছড়া শুধু নয়, তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় সব পর্যটন স্পটেই কমবেশি ঘটছে এমন ঘটনা। সেজন্যই হয়তো নির্দেশনা থাকার পরও কোনো রকম ভ্রূক্ষেপ না করে সেন্ট মার্টিনস থেকে প্রবাল সংগ্রহ করছেন একশ্রেণীর পর্যটক; ঘটাচ্ছেন শব্দ দূষণ। স্থান নির্দিষ্টকরণের পরও খেয়ালখুশিমতো পলিথিনের প্যাকেট বা অন্যান্য অপচনশীল পণ্য ফেলছেন তারা। এদিকে আইন ও বিধিমালা প্রয়োগে কর্তৃপক্ষের মাত্রাতিরিক্ত শৈথিল্য দৃশ্যমান। স্পটগুলোয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও অনেক ক্ষেত্রে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সমস্যা হলো, একশ্রেণীর পর্যটকের ওমন দায়িত্বহীন বিচরণে প্রাকৃতিক স্পটগুলোয় ভারসাম্যহীনতা বৃদ্ধির ঝুঁকি রয়েছে। তাই সেগুলোকে আরো বিনষ্টের হাত থেকে সুরক্ষা দিতে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। কর্তৃপক্ষকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেখানে কোন সময়ে কতজন পর্যটক যাবেন, তারা কীভাবে অবস্থান করবেন প্রভৃতি। সচেতনতা বাড়াতে বন বিভাগ, পর্যটন করপোরেশন, ট্যুর অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্টদের কাজে অধিকতর সমন্বয় আনার প্রয়োজনীয়তাও বণিক বার্তার কাছে ব্যক্ত করেছেন অনেকে। সবাই চাইবেন, দেশের মূল্যবান সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ।

অভয়ারণ্যগুলোর মাঝে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের বিচরণে সবচেয়ে বেহাল দশা নাকি সুন্দরবনের। অথচ বাংলাদেশের অস্তিত্বের জন্য বনটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন করে বলার দরকার নেই।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গেলে বেশ কটুভাবেই চোখে পড়ে বর্জ্যের অব্যবস্থাপনা। এসব ত্রুটি দূরীকরণে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিতে দেখা গেলেও তাতে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে সামান্যই। এমনো নয় যে, স্পটের সৌন্দর্য ও ভারসাম্য সুরক্ষায় পর্যটকদের জন্য কোনো আচরণবিধি নেই। সেটি আছে বৈকি; নেই শুধু তার সুষ্ঠু প্রয়োগ। আর সে দুর্বলতায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। পরিস্থিতি উত্তরণে স্থানীয় এক বিশেষজ্ঞ গণসচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন; পাশাপাশি দর্শনার্থীদের চলাফেরা ও স্পটের আশেপাশে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণেও সতর্ক থাকতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

ওএমএসের পণ্য ব্যবসায়ীদের হাতে!

কঠোর ব্যবস্থা নিন জড়িতদের বিরুদ্ধে

ওএমএস মূলত সীমিত আয়ের মানুষের জন্য একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। একেবারে নিম্নআয়ের শুধু নয়, রাজধানীতে একশ্রেণীর মধ্যবিত্ত পরিবারও কমবেশি ওএমএসের চাল বা আটার ওপর নির্ভরশীল। সীমিত আয়ের ওপর নিত্য ব্যয়ের বোঝা খানিকটা লাঘবের এ প্রচেষ্টায় বিপুল অর্থ ভর্তুকিও দিতে হয় সরকারকে। অথচ এ কর্মসূচির প্রকৃত সুফল কারা পাচ্ছেন, সেটি নিয়ে অনেকেই সন্দিহান হয়ে উঠতে পারেন গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন পড়ে। সেখানে বলা হয়েছে, সাধারণ বাজারের তুলনায় ওএমএসে প্রতি কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা কমে। দামের এ ব্যবধানের সুযোগ আর অতিমুনাফার লোভ সামলাতে পারছেন না একশ্রেণীর ডিলার। তাই ওএমএসের অধিকাংশ আটা চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের হাতে। অনিয়মের এ চিত্র শুধু ঢাকার বেলায় প্রযোজ্য নাকি অন্যান্য স্থানে পরিচালিত ওএমএসেও তা বিদ্যমান, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।

আমাদের প্রতিনিধি রাজধানীর একাধিক ওএমএস বিক্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করে নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, দৈনিক ২০ বস্তা আটা প্রতিটি ট্রাকে সরবরাহ করা হলেও ওএমএসে বিক্রি হচ্ছে তার এক-চতুর্থাংশ বা এক-পঞ্চমাংশ। প্রতিদিন সকালে মোটামুটি নিয়মিতভাবে ট্রাক এলেও সেটি চলে যায় দুপুর গড়ানোর আগেই; ওএমএস পণ্য পুরোপুরি বিক্রি না করেই। একটি-দুটি বিক্রয় কেন্দ্র হলে বিষয়টিকে ব্যতিক্রম হিসেবে ধরে নেয়া যেত। কিন্তু সব পণ্য বিক্রি না করেই একশ্রেণীর ডিলারদের মাঝে ট্রাক ছেড়ে দেয়ার এমন প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় প্রায় সব খানে। তাই কর্তৃপক্ষের সক্রিয় হওয়া জরুরি। অবিক্রীত আটা সরকারি গুদামে ফেরত যাচ্ছে নাকি দোকানে দোকানে বাড়তি দামে বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। ওএমএস বিক্রয়কেন্দ্রে চাহিদার তুলনায় অধিক আটা বা চাল দেয়া হচ্ছে কিনা সেটিও পুনর্মূল্যায়ন করা দরকার। তারও আগে জরুরি হলো, কর্মসূচি তদারকির জন্য প্রতিটি ট্রাকে খাদ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে যাদেরকে নিয়োজিত রাখা হয়েছে, তাদের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। এদের ‘সম্মতি’ ছাড়া ডিলারদের পক্ষে ব্যবসায়ীদের কাছে ওএমএস পণ্য বিক্রি করা সহজ হবে না। এরই মধ্যে খাদ্য অধিফতরের মহাপরিচালক অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস ব্যক্ত করেছেন বণিক বার্তার কাছে। কাজে সে প্রতিফলনই দেখতে চাইবেন সবাই।

আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের হার হ্রাস

বাজারে এর প্রতিফলন নিশ্চিত হোক

বর্তমানে দেশে আসা দৈনিক আন্তর্জাতিক কলের পরিমাণ ৬ কোটি মিনিট! সংখ্যাটি দ্রুতই ৯ কোটিতে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজস্বের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস এটি। তবে আগামীতে এটি কমে আসবে লক্ষ্যণীয়ভাবে। কেননা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল হার অর্ধেক হ্রাসের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ খবর প্রকাশও হয়েছে গতকালের মিডিয়ায়। খেয়াল করার মতো বিষয়, আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল থেকে প্রাপ্ত আয় ভাগ হয়ে যায় কয়েক পক্ষের মাঝে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন তার (প্রতি মিনিট ১ দশমিক ৫ সেন্ট হিসেবে ধরে) ৪০ শতাংশ পাবে সরকার; অপারেটরদের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের (আইজিডব্লিউ) ভাগ ২০, ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ অপারেটরের (আইসিএক্স) ১৮ ও মোবাইল-ল্যান্ড লাইন অপারেটরদের ২২ শতাংশ। এক্ষেত্রে আগে সরকারের অংশ ছিল ৫১ দশমিক ৭৫। আর পরিবর্তনের ফলে সরকারকে ছেড়ে দিতে হবে আনুমানিক ১ হাজার ৭৩ কোটি টাকার রাজস্ব। এ বিপুল ত্যাগের উদ্দেশ্য বাজারে অবৈধ ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) প্রদানকারী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কমানো। এখানে গৃহীত সিদ্ধান্তের রাজস্ব সংশ্লিষ্ট যুক্তি শক্ত বৈকি। কিছুদিন আগেও অনুমোদিত ভিওআইপি অপারেটররা আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল ব্যয় ছিল ৩ থেকে ১ দশমিক ৫ সেন্ট; ওদিকে অবৈধ ব্যবসায়ীদের বেলায় একই ব্যয় ছিল ২ থেকে ১ দশমিক ৫ সেন্ট। উভয়ের ব্যবধানের সঙ্গে দৈনিক ৬ কোটি মিনিটের হিসাব করা হলে বিপুল অবৈধ মুনাফার সন্ধান মেলে যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বৈধ অপারেটররা। তদুপরি অবৈধভাবে আসা আন্তর্জাতিক ইনকামিং কলের পরিমাণও কম নয় কিন্তু। এখানে উল্লেখ করা দরকার, বাজার উন্মুক্তকরণের পর বর্তমানে দেশে ২৯টি আইজিডব্লিউ কাজ করছে। সরকারকে শর্তানুযায়ী ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তার মাঝে ৯টি এরই মধ্যে নিষ্ক্রিয়। আরো ৪ থেকে ৫টি আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠানের নাকি লাইসেন্স বাতিলের চিন্তা-ভাবনা করছে বিটিআরসি। এমন পরিস্থিতিতে গৃহীত নতুন সিদ্ধান্ত বৈধ অপারেটরদের ওপর সুপ্রভাব ফেলবে বলে প্রত্যাশিত। তাই এসব দিক বিবেচনায় আন্তর্জাতিক ইনকামিং কল হার হ্রাসের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখতে চাইবেন অনেকে।

কথা হলো, বাজারে এ পদক্ষেপের দৃশ্যমান প্রতিফলন দেখতে চায় গ্রাহক। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা রোধে দেরিতে হলেও ভিএসপি লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। এটি একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত। তবে এ থেকে সুফল অর্জনের বিষয়টি নির্ভর করছে সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ওপর। সরকার ইস্যুটির প্রতি যথাযথভাবে দৃষ্টি দেবে বলেই সবার প্রত্যাশা। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সব পক্ষের মাঝে সুসমন্বয় প্রতিষ্ঠাও জরুরি। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান ভিএসপি ব্যবসায়ীরা। আবার এদের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে অন্যদের। সে সবই সারবস্তুহীন, এ কথা বলা যাবে না। তবে সেসব বিতর্কের বেশিরভাগই সমন্বয়ের ঘাটতির ফলে সৃষ্ট বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাই এ দুর্বলতা অবিলম্বে দূর করা প্রয়োজন।

Published in Bonik Barta, July 2014

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ

সর্ষের ভূত আগে তাড়ান

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একশ্রেণীর ব্যক্তির ত্রিপক্ষীয় আঁতাতে বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা খাতে দুর্নীতি সংঘটনের খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। প্রতিবেদনটির ভিত্তি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক উপস্থাপিত ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা। সম্প্রতি আলোচিত কিছু ইস্যুতে সংস্থাটির একাধিক প্রতিবেদন দেশে আলোড়ন তুলেছে। কোনো কোনো প্রভাবশালী একতরফাভাবে টিআইবি-কে ‘দেখে নেয়া’র ইঙ্গিতও করেছেন। লক্ষ্যণীয়, আলোচ্য প্রতিবেদনে বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা খাতের কিছু ক্ষেত্রে সরকারের শক্তিশালী ভূমিকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তার উদাহরণ হিসেবে আউটার ক্যাম্পাস উচ্ছেদ কিংবা অনুমোদনবিহীন বিষয়বস্তু পাঠদানে গৃহীত নানা জোরালো পদক্ষেপের কথা বলা যায়। কিন্তু এসব অর্জনের চেয়ে বেসরকারি খাতের সুশাসন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো অধিক গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে যৌক্তিক কারণেই। বিশেষত যেখানে অর্থের বিনিয়ময়ে সার্টিফিকেট পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, সেখানে ব্যয় অনুযায়ী শিক্ষার মানের কথা না হয় উহ্যই থাকল- সার্বিক পরিস্থিতিটি কী, তা সহজেই অনুমেয়। এ অবস্থায় উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে দেরী করা চলে না।

বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটিকে অনেকে কৌশলে ঘুরিয়ে শুধু বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে নিয়ে যান। তাতে মূল বিষয় চলে যায় আড়ালে। এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে অনেক সময় নিয়ন্ত্রকদের মাঝেও দেখা যায় ইতস্তত মনোভাব। এটি কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। পারফরম্যান্সের দিক থেকে আমাদের একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুখ্যাতি রয়েছে এবং সার্বিকভাবে উচ্চ শিক্ষার মান বাড়াতে এদের সক্রিয়তার বিকল্প নেই। আবার প্রাথমিকভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেহেতু ব্যবসায়ী উদ্যোগ (টিআইবি’র প্রতিবেদন মতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিংহভাগ উদ্যোক্তাই হচ্ছেন ব্যবসায়ী), মুনাফার প্রতি তাদের ঝোঁক থাকবেই। সমস্যা হলো, তাদের অতি মুনাফার প্রবণতা এবং শিক্ষার মতো একটি খাতে প্রতারণার মাধ্যমে ধন-সম্পত্তি অর্জন। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কীভাবে অতি মুনাফার লোভ থেকে বিরত রাখা যায়, সেটি কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিৎ। বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত আসলে কতটা নিয়ন্ত্রণে আছে, সেটি সংশ্লিষ্টরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে বাইরে থেকে পরিস্থিতি খুব একটা আশাব্যঞ্জক মনে হয় না। বেসরকারি শিক্ষা খাতেরও কিছুটা একই অবস্থা বলে প্রতীয়মান। এদিকে জরুরি ভিত্তিতে নজর দেয়া প্রয়োজন। শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব থাকা উচিৎ সংবিধানের, মুনাফার নয়। সেজন্য সর্ষের ভূত আগে তাড়ানো দরকার। এরই মধ্যে বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা খাতে যে অশুভ ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের খবর মিলল, সেটি যথাযথভাবে চিহ্নিত করা দরকার। তার পর ন্যায্যভাবেই সর্বাগ্রে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে জড়িত নিয়ন্ত্রকদের বিরুদ্ধে। এ ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সহজ হবে বৈকি।

বন্দরে পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট

দ্রুত চালুর উদ্যোগ নেয়া হোক

২০১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট ব্যবস্থা চালুর প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর এখনো তা চালু হচ্ছে না বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। আমাদের প্রতিবেদকের দেয়া তথ্য মতে, বর্তমানে মাত্র ২-৩ শতাংশ আমদানি চালানে ব্যবহার হচ্ছে ব্যবস্থাটি। সাধারণ ব্যবস্থায় বন্দর থেকে কিছু পণ্য খালাস করতে নাকি মাসাধিক কালও চলে যেতে দেখা যায়। অথচ পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট ব্যবস্থা চালু হলে আমদানিকারক কয়েকদিনের মধ্যে চালান নিয়ে যেতে পারতেন। অনেক দেশের বন্দরেই এটি চালু রয়েছে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবাইক গতি বজায় রাখতে। তবে গতির দিকে নজর দিতে গিয়ে এক্ষেত্রে পণ্য খালাস পরবর্তী সময়ে জটিলতা একেবারেই সৃষ্টি হয় না, সে কথাও বলা যাবে না। অবশ্য এতে আগে বড় দুশ্চিন্তা ছিল রাজস্ব ঝুঁকি। কিন্তু আধুনিক কলাকৌশলের প্রয়োগ তাও হ্রাস করেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। এখানে চট্টগ্রাম বন্দরের অভিজ্ঞতাই বলা যেতে পারে। সম্প্রতি পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিটের মাধ্যমে এক ডজনেরও বেশি সংখ্যক শুল্ক জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে বলে জানা যায়। তার মানে ব্যবস্থাটির নির্ভরযোগ্যতা ক্রমে বাড়ছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপও কিন্তু ক্রমবর্ধমান। এ অবস্থায় যত দ্রুত পণ্য খালাস ও তা জাহাজীকরণের সময় কমিয়ে আনা যাবে, ততই লাভ।

রাজস্ব ফাঁকি হ্রাসে গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা গেছে। অবশ্য পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট বিষয়ে তাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে নাকি কোনো নির্দেশনা দেয়া হয় নি। বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার। লক্ষ্যণীয়, সংশ্লিষ্টরা তিনটি ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে শক্তিশালী পোস্ট ক্লিয়ারেন্স ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছেন। এক. ঝুঁকিপ্রবণ দেশ, দুই. ঝুঁকিপ্রবণ পণ্য ও তিন. নির্ভরযোগ্য আমদানিকারক। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ইউরোপ-আমেরিকার মতো কিছু দেশ থেকে পণ্য আমদানি রাজস্ব আহরণের দিকটি বিবেচনায় অধিকতর নিরাপদ। আবার কিছু পণ্যই রয়েছে যেখানে রাজস্ব হারানোর ঝুঁকি কম। অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে যাদের চালানের রেকর্ড তুলনামূলকভাবে ভালো। এখন ব্যবস্থাটি চালু করতে হলে ওই তিন ধরনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে হবে আগে। সেক্ষেত্রে অনিয়মের ঝুঁকি একেবারেই নেই, সে কথা বলা যাবে না। তবে পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিটের জন্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণে কঠোরতা অবলম্বনই শ্রেয়। অনেকের ধারণা, দুর্নীতির সুযোগ কমে আসতে পারে ভয়ে একশ্রেণীর ক্ষমতাবান ব্যক্তি পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট ব্যবস্থা চালুর বিরোধিতা করছেন। অনিয়মের কোনো সুযোগ পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিটে রাখা যাবে না। তাতে ব্যবস্থাটি চালুর অন্যতম লক্ষ্যার্জনই ব্যাহত হবে।

সংকট ছাড়া বর্ধিষ্ণু পেঁয়াজের দাম

উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও এখনো বছরে ৩-৪ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। এটি পূরণ করা হয় মূলত ভারত, চীন ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে। স্থানীয় ও বৈদেশিক সরবরাহ মিলিয়ে এখানে পেঁয়াজের দামের একটা প্যাটার্ন লক্ষ্যণীয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাও বলছে, বাংলাদেশে সাধারণত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত পণ্যটির মজুদ ও সরবরাহ স্বাভাবিক থাকে। মজুদ সংকট সেপ্টেম্বরে শুরু হয়ে চলে ডিসেম্বর পর্যন্ত। স্বভাবতই এর প্রতিফলন দেখা যায় পেঁয়াজের দামে। সে হিসাবে এখন পেঁয়াজ সরবরাহে সংকট থাকার কথা হয়। এ কথা ধরেই সংকট ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির খবর এলো গতকালের বণিক বার্তায়। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতে পণ্যটির রফতানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকসান করে পেঁয়াজ বিক্রির অনুরোধ তাদের করছেন না কেউই। কিন্তু কথা হলো, গত বছরও জুন-জুলাইয়ে একই অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বাড়ে এবং তখনো নাকি একই বাস্তবতা ছিল! এদিকে আমাদের কৃষকের হাতেও এখন পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলে জানা যায়। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণপূর্বক পেঁয়াজের দাম হ্রাসে সরকারের সক্রিয়তাই প্রত্যাশা করেন সবাই।

ভারতীয় প্রান্তে সরবরাহ কমার কারণ কম উৎপাদন। খতিয়ে দেখা দরকার, কেন গত ২-৩ বছরে বাংলাদেশে চাহিদা বৃদ্ধির সময়টায় ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। নাকি উভয় দেশের ‘পিপল টু পিপল’ কিংবা ‘গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্টে’র তুলনায় ‘মৈত্রী-বন্ধুত্ব’ একটু বেশিই এগিয়ে গেছে নিত্যপণ্য ব্যবসায়ীদের মাঝে? অস্বাভাবিক হবে না সেটি ঘটে থাকলে। অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানিতে ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, চীন ও তুরস্কের মতো দেশগুলো থেকে আমদানি বৃদ্ধির জন্য। নিকট অতীতে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণায় কীভাবে বাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেচ্ছিল, এক্ষেত্রে সে উদাহরণও টানছেন তারা। কৌশলটি মন্দ বলা যাবে না। কিন্তু যদি আমদানিকারক ও রফতানিকারক দেশের একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর মাঝে পেঁয়াজের দাম বিষয়ে অশুভ কোনো আঁতাত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কৌশলটি কতদিন সুফল দেবে বলা মুশকিল। আসলে সেজন্য দু’দেশের সরকারি পর্যায় থেকে অস্বাভাবিক দাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় বাজারেও যথাযথভাবে হস্তক্ষেপ করা দরকার। শুধু এটি কেন, প্রায় সব নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির বেলায়ই শোনা যায়, পাইকারে বাজারে খুব একটা বাড়েনি, খুচরা বাজারে বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়ৎ থেকে হেলিকপ্টারে করে দোকানে পেঁয়াজ নিয়ে সার্বিকভাবে দাম বৃদ্ধি ঘটাচ্ছেন কিনা, কে জানে। সবার প্রত্যাশা, এসব বিষয় খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে সরকার।

বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাপনা

গুরুত্ব পাক অধিক উৎপাদনশীল খাত

গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদনও বেড়েছে দেশে। কিছুদিন আগেও যেখানে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল কিংবা বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছিল, তার অনেকটাই কমে গেছে এখন। স্পষ্টত বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়লে তা সম্ভব হতো না। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও বিশেষত বস্ত্র, তৈরি পোশাক ও বিভিন্ন রাসায়নিক শিল্প তার সিংহভাগ চাহিদা ক্যাপটিভ উৎস থেকে মেটাচ্ছে বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। প্রথম কথা হলো, আমাদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধি অত্যন্ত স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বরং বলা যায়, প্রত্যাশা অনুযায়ী সেভাবে বাড়েনি বিদ্যুতের চাহিদা। দ্বিতীয় বিষয় হলো, বাংলাদেশের শিল্প ভিত্তি ক্রমে শক্ত হচ্ছে। আগে যেখানে শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই অনেকে সন্তুষ্ট হতেন, এখন সরবরাহ চাপ বেশি থাকায় তারা অনুভব করছেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ঘাটতি। দেখা যাচ্ছে, শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাহিদার এই যে চাপ, তা শুধু জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করতে না পারার কারণেই ঘটে নি; ঘটেছে স্থানীয় শিল্প-কারখানায় বর্ধিত উৎপাদনের কারণেই। ফলে পুরো প্রেক্ষাপটটিকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যজনক যে, নিরবচ্ছিন্ন তো দূরের কথা, জাতীয় গ্রিডে সংযোগই নাকি পায় নি অনেক কারখানা। এ অবস্থা মোটেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারের উচিৎ, অবিলম্বে বিষয়টি আমলে নেয়া এবং বিদ্যুৎ মহাপপরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করে এর সমাধানে উপনীত হওয়া। সেক্ষেত্রে শিল্পোৎপাদনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাপনাকে তারা যুগোপযোগী করবে বলেও সবার প্রত্যাশা।

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক গবেষণা মতে, স্থানীয় বস্ত্র খাতে স্পিনিং মিলগুলোর মাত্র এক-পঞ্চমাংশ বিদ্যুৎ চাহিদা মিটছে জাতীয় গ্রিড থেকে। উইভিং ও প্রসেসিংয়ে নাকি ক্যাপটিভ উৎস থেকে ৭০ ও জাতীয় গ্রিড থেকে মাত্র ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসছে। বস্ত্র খাত সংশ্লিষ্ট অনেকে তো দাবিই করেন যে, তাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি। তৈরি পোশাকের নিটওয়্যার ও ওভেন কারখানার চিত্রও শোনা যায় কম-বেশি একই রকম। তবে রাসায়নিক কারখানায় অনুপাতটি খানিকটা বেশি। সেখানে ক্যাপটিভ ও জাতীয় গ্রিড বিদ্যুতের অনুপাত হলো ৮০ : ২০। এমন পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে প্রেক্ষাপট চিহ্নিতকরণের পদ উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনেকে মনে করেন, নিজস্ব ক্যাপটিভ উৎসের ওপর শিল্প-কারখানার নির্ভরশীলতা যত বাড়বে, তাদের প্রতিযোগিতাসক্ষমতা ততই কমতে পারে। ক্যাপটিভ উৎস থেকে অধিক হারে বিদ্যুৎ নেয়া হলে উৎপাদন ব্যয়ে তার একটা প্রভাব পড়বে বৈকি। সেটির প্রতিফলন নিঃসন্দেহে থাকবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায়। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান আবার জানিয়েছেন কেউ কেউ। এ অবস্থায় গভীরভাবে বিষয়টির বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। বিতর্কের সুযোগ কম যে, বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেই হবে দ্রুত। তারা দেশের কয়লা না আমদানিকৃত কয়লা-এলএনজি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন, সেটি নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা আরো বিকাশের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। তবে সমস্যা হলো, কয়েক মাসের মধ্যে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা কঠিন বৈকি। সেজন্য সময় প্রয়োজন আর আমাদের দরকার তাৎক্ষণিক সমাধান। তবু আরো দেরী কাম্য নয়। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণে কারগরি অদক্ষতা হ্রাসে দৃষ্টি দিতে হবে। বিদ্যুৎ বিতরণে সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে, শিল্পোৎপাদনে সরবরাহ বৃদ্ধির আরেকটি ভালো উপায় হতে পারে- নিয়মিত ও সুষ্ঠু বিদ্যুৎ-জ্বালানি অডিট।

সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধের অবসান

বর্ধিত অঞ্চলের সদ্ব্যবহার-সুনিয়ন্ত্রণই কাম্য

আনুমানিক ৫ বছরের দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সোমবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের রায় দিয়েছে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা বিষয়ক স্থায়ী সালিসি আদালত (পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশন-পিসিএ)। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পেলো বঙ্গোপসাগরে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রে সার্বভৌম অধিকার। উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের দাবি ছিল ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটারের। অবশ্য যতটুকু সীমানা মিলেছে সেটি ন্যায়সঙ্গত এবং শিরোধার্য (যেহেতু এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই)। বড় কথা হলো, বঙ্গোপসাগরের জলসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই উত্তেজনা সৃষ্টির যে সুযোগ উন্মুক্ত ছিল এতদিন, সেটি এখন বন্ধ হলো। মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি রায়ের সময় আমরা কিছু ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত ও অবাস্তব উচ্ছ্বাস দেখেছি। তার তুলনায় সরকারের পক্ষ থেকেও এবারকার আচরণ ছিল অনেক পরিপক্ক। ন্যায্যতার ভিত্তিতে এভাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে দু’দেশ তথা জনগণই লাভবান হয়েছে, এমন ধারার বক্তব্য শোনা গেছে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। ভারতও বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে বলেই প্রতীয়মান। লক্ষ্যণীয়, বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সুসম্পর্কের মাঝে এখনো বেশ কিছু বিরোধাত্মক উপাদান লুকিয়ে আছে; যেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করছে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্ভাবনার। এখন আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার রায়ের ওপর ভয় করে সেসবের মীমাংসায়ও অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন- পারস্পরিক অধিকতর উন্নয়নের স্বার্থেই।

পিসিএ-র দেয়া রায়ে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের অংশটুকু এখন ভারতের অন্তর্গত। ইস্যুটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে কারো কারো মধ্যে। নতুন করে ব্যাখ্যার দরকার নেই, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধের অন্যতম উৎস ছিল সাতক্ষীরার দক্ষিণে অবস্থিত ওই দ্বীপ। জানা যাচ্ছে, বর্তমানে দ্বীপটি পানিতে বিলীন। এ তথ্য বাংলাদেশ ও ভারত উভয় পক্ষেই স্বীকৃত। এদিকে পিসিএ’র রায়ে আপত্তি তোলার সুযোগ নেই। তাছাড়া যৌক্তিক কারণেই আমরা সমদূরত্বের পরিবর্তে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সালিশ ডেকেছিলাম। খেয়াল করার মতো বিষয়, এ বিরোধ নিষ্পত্তির আগে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে ১০টি ব্লককে নিজেদের বলে দাবি করত ভ্রত। তার সবগুলোই এখন বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি এ কথাও বলা দরকার, ৬টি ব্লকের অংশবিশেষ পেয়েছে ভারত। তবে সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় ভারত ও মিয়ানমারের অংশ থেকে সালিশির মাধ্যমে আমরা যে বিপুল এলাকায় সার্বভৌম অধিকার পেয়েছি তা হারানো অংশের তুলনায় বিরাট বলতে হয়।

কথা হলো, এ প্রাপ্ত অংশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিপুল। এখন দেশের উন্নয়নে তার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সে লক্ষ্য প্রথমেই নতুন অধিকারকৃত অঞ্চলে যতটা দ্রুত সম্ভব সুনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা দরকার। সে লক্ষ্যে আমাদের নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়িয়ে তোলায় মনোযোগ আরো খানিকটা বাড়িয়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন কেউ কেউ; প্রয়োজন কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধিও। অবশ্য সেজন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। আবার আলোচ্য অঞ্চল ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে স্পর্শকাতর। কারো কারো মতে, এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা নেয়া যায় কিনা সেটি দেখা উচিৎ। লক্ষ্যণীয়, আলোচ্য অঞ্চলে আমাদের দুটি বৃহৎ স্বার্থ রয়েছে। এক. সংশ্লিষ্ট রুটে যাত্রী ও পণ্য এবং বর্ধিত অঞ্চলে জীবজ ও খনিজ সম্পদের নিরাপত্তা। দুই. সেগুলোর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিকাশ। ভালো হতো, উভয় ক্ষেত্রে নিজেদের সীমাবদ্ধতা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা গেলে। তবে আপাতত তা কঠিন বলেই মনে হয়। ফলে এক্ষেত্রে উপযুক্ত সহযোগীর সহায়তা নেয়াই ভালো।

পোলট্রি শিল্পের উন্নয়ন

জাতীয় বোর্ড গঠনের প্রস্তাব আমলে নিন

এরই মধ্যে আমিষ চাহিদা পূরণের গুরুত্বপূর্ণ ও মোটামুটি নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় পোলট্রি শিল্প। জানা গেছে, ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে খাতটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ; আরো কয়েক হাজার কোটি টাকা বাড়ানো সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবসায়ীর ধারণা। ফিডের দাম বৃদ্ধি, বার্ড ফ্লুর শঙ্কা, ডিম ও মাংসে পুষ্টিমান ধরে রাখা প্রভৃতি নানা চ্যালেঞ্জের মাঝেও পোলট্রির এ সাফল্য উল্লেখযোগ্য বৈকি। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি কো-অর্ডিনেশন কমিটি (বিপিআইসিসি) আয়োজিত ‘পোলট্রি শিল্প ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা’ শীর্ষক এক গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী বলছেন, এখান থেকে বর্তমানে আসছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ; গার্মেন্টসের পর এটিই দ্বিতীয় বৃহত্তম সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত। এমন পরিস্থিতিতে পোলট্রি শিল্পের উন্নয়নে সরকার যথাযথভাবে দৃষ্টি দেবে, তা-ই সবার প্রত্যাশা।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা পোলট্রি শিল্পের উন্নয়নে গণমাধ্যমকে অধিকতর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। একটি জাতীয় বোর্ড গঠনও তাদের অনেক দিনের দাবি। এ দুটো ইস্যুই অত্যন্ত যৌক্তিক এবং সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। লক্ষ্যণীয়, স্থানীয় পোলট্রি পণ্য রফতানির কথা উঠছে ইদানীং। গত বছর একই সময়ে কিন্তু এ শিল্পে বাঁচাবার জন্য সরকারি সহায়তার আহ্বান করা হয়েছিল। কয়েক মাসে পোলট্রি শিল্প ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, সেটি ধরে নেয়ার চেয়ে এক্ষেত্রে খাতটির প্রকৃতি খানিকটা অস্থিতিশীল অনুমান করাই শ্রেয়। তবে অস্থিতিশীল বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকা চলবে না। কেননা এটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ শিল্প। তাই এর সুষ্ঠু বিকাশে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিৎ। এখানে ব্যবসার সঙ্গে জনকল্যাণও মাথায় রাখতে হবে। অনেক পোলট্রি ব্যবসায়ী বলছেন, পোলট্রি মাংস ও ডিম উৎপাদনে বর্তমানে উদ্বৃত্ত জমেছে; স্থানীয় চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদন করছেন তারা। কিন্তু সমস্যা হলো, রিটার্ন কম। ৬ টাকা ৫০ পয়সা ডিম উৎপাদনে ব্যয়ের পর সেটি বিক্রি করতে হচ্ছে ৭ টাকায়। মাঝে অস্বাভাবিক মাত্রায় পোলট্রি মাংস ও ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবু অনেক ক্রেতার কাছে ওই দামও কিছুটা বেশি বলে মনে হয়। পোলট্রি পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কিন্তু বৃদ্ধি পাচ্ছে কয়েকটি কারণ; যেমন- পোলট্রি ফিড, ওষুধ ও বাচ্চার দাম প্রভৃতি। ফিডের বেলায় অতীতে আমরা ব্যাপকভাবে আমদানি নির্ভর ছিলাম। সেটি ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা যাচ্ছে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই ওসব গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো উপাদানের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি তথা অস্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যায়। ওসব সাময়িক প্রভাব দূরীকরণেও জাতীয় বোর্ড গঠনের প্রস্তাব বিবেচনায় নেয়া উচিৎ। বাজার নিয়ন্ত্রণের সব দায়িত্ব পোলট্রি ব্যবসায়ী বা তাদের সংগঠনের হাতে নিশ্চিন্তে ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। তাদের অনেকে তেমনটি চান না বলেও প্রতীয়মান।

নির্বিচারে তুরাগ দূষণ

প্রশাসনের সক্রিয়তা কাম্য

বুড়িগঙ্গায় এখন আর পানি নেই, আছে শুধু রাসায়নিক- অনেক বিশেষজ্ঞ আক্ষেপ করে বলছেন ইদানীং। নদী দূষণে বিপর্যস্ত শীতলক্ষ্যা। তুরাগের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো বলে মাঝে মধ্যে শোনা যেত। এরই মধ্যে গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে এ নদীর বেহাল দশা। শিল্প কারখানার তো বটেই গৃহস্থালি ও চিকিৎসা বর্জ্য নাকি ফেলা হচ্ছে সেখানে। আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, এ তালিকায় নাম আছে খোদ সিটি করপোরেশনেরও। এমন পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অগ্রহণযোগ্য। লক্ষ্যণীয়, তুরাগের পানিতে দ্রবণীয় অক্সিজেনের মাত্রা ক্রম হ্রাসমান বলে খবর মেলে। সে ধারা অব্যাহত থাকলে বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার মতো দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি বরণ করতে পারে তুরাগকে। এ অবস্থায় তুরাগ বাঁচাতে প্রশাসনিক সক্রিয়তা কাম্য।

আলোচিত এক আইনজীবি বণিক বার্তার কাছে বলেছেন, ঢাকার পার্শ্ববর্তী নদনদী দুষণমুক্ত রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে; যারা বর্জ্য ফেলছে তারা তো অপরাধীই, যারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন না তারাও অপরাধী। কেউ কেউ মনে করেন, ওত জোর না দিয়েও সহজেই তুরাগের দূষণ রোধ করা সম্ভব। সাধারণভাবে তুরাগের দূষণ বুড়িগঙ্গা কিংবা শীতলক্ষ্যার মতো সিরিয়াস নয় বলেই প্রতীয়মান। টঙ্গী রেলওয়ে সেতুর নীচে কাপড় রঙ করার ঘটনা থেকেই তা অনুমেয়। প্রথমত. এখানে জনসচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা দূষণ রোধে যে মাত্রায় প্রতিবাদ-আন্দোলন হয়েছে তুরাগ ঘিরে তা হয় নি স্বভাবতই। এদিকে প্রশাসনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এনজিও প্রতিষ্ঠানেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার। টঙ্গীতে প্রচুর কলকারখানা রয়েছে; তার মাঝে রাসায়নিক শিল্পও রয়েছে। তাদের মাঝে সবগুলোই পরিবেশ সুরক্ষায় উদাসীন, সে কথা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। ফলে কোন কোন কারখানা নিয়মনীতি মানছে আর কারা তা মানছে না, তা চিহ্নিতপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও সেসব যথেষ্ঠ নয় বলে অনেকের মত। বাসাবাড়ির বর্জ্য যেন তুরাগে ফেলা না হয়, সে বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। চিকিৎসা বর্জ্য শিল্প বর্জ্যের চেয়ে কম ক্ষতিকারক নয়। বরং এর মারাত্মক প্রত্যক্ষ ঝুঁকি রয়েছে। ফলে এসবের ব্যবস্থাপনায় অধিকতর মনোযোগ দিতে হবে। সার্বিকভাবে কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণই কাম্য। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হলে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে বলে বিশ্বাস। নদী দূষণ রোধে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী। এও বলেছেন, আস্তে আস্তে তুরাগও দূষণমুক্ত হবে। তার কথার সূত্র ধরেই বলা যায়, বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যার মতো অবস্থা নয় তুরাগের। তাই এক্ষেত্রে দ্রুত দৃশ্যমান উন্নতি সম্ভব বলে কারো কারো ধারণা। সেখানে তার কাছে বাড়তি মনোযোগ প্রত্যাশা করতেই পারে জনগণ।

উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি

কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার ছড়াক দেশজুড়ে

আমাদের খাদ্যনিরাপত্তার ওপর জনসংখ্যার বাড়তি চাপ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এখানে প্রধান সমস্যা হলো, অপর্যাপ্ত জমি। আর উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি বাংলাদেশে রয়েছে নানামুখী চাপে। প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়াতে শিল্পায়ন দ্রুততর হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এ কাঙ্ক্ষিত গতি বৃদ্ধি অনেক সময় সম্ভব হচ্ছে না জমির অভাবে। আবার জমির ওপর ব্যাপক চাপ রয়েছে আবাসনেরও। উভয় চাপে ক্রমে কমছে ফসলি জমি; অথচ বাড়ছে খাদ্যের চাহিদা। এরই মধ্যে গতকালের বণিক বার্তায় খবর রয়েছে, উন্নত প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ২ থেকে ক্ষেত্রেবিশেষে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে কৃষি উৎপাদনশীলতা; পাশাপাশি কমেছে অপচয়। যেকোনো বিচারে এটি আমাদের জন্য সুখবর। উল্লেখ করার মতো বিষয়, বাংলাদেশের এত কৃষি সম্ভাবনা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। তাছাড়া এক্ষেত্রে কিছু না কিছু প্রায়োগিক সম্ভাবনা মাঝে মধ্যেই উদ্ঘাটিত হচ্ছে। তার মানে, কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির আরো সম্ভাবনা থাকতে পারে। স্থানীয় কৃষি খাতের এ নৈপুণ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অব্যাহত প্রচেষ্টা ও কৃষকের নিষ্ঠার অবদান রয়েছে বিরাট। প্রচলিত ভূমিকা রাখার পাশাপাশি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সব রকম প্রস্তুতিও তারা রাখবে এমনটাই সবার প্রত্যাশা।

সার্বিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির বেলায় নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য এরই মধ্যে প্রতিভাত। যেমন- তারতম্য দেখা যাচ্ছে অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে। প্রাণি ও মৎস সম্পদের উৎপাদনশীলতার মাঝেও একটা দাগ নিশ্চয়ই টানা যায়। বিভিন্ন রকমের ধানের মাঝে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পার্থক্য স্পষ্ট। পার্থক্য রয়েছে ধানের সঙ্গে অন্যান্য খাদ্যশস্য এবং সবজির উৎপাদনশীলতায়ও। এ চিত্রটি অস্বাভাবিক, সে কথা মোটেও বলা যাবে না। বরং উৎপাদনশীলতার স্বাভাবিক বৃদ্ধি এমনটা হওয়াই বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন অনেকে। একই সঙ্গে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির চড়াই উৎরাই আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে, কোথায় দুর্বলতা রয়েছে কিংবা কোথায় আরো বেশি উন্নতি করা সম্ভব নয়। মৎস সম্পদের উৎপাদনশীলতায় যে বৃদ্ধি লক্ষ্যা করা গেলো, তাতে অনেকের সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক যে, এক্ষেত্রে আরো উন্নতি সম্ভব নয়। অথচ দেশে আমিষের চাহিদা কিন্তু আগামীতে আরো বাড়বে। অর্থাৎ সে অবস্থায় আমাদের বেশি করে দৃষ্টি দিতে হবে প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রতি। মাত্র কয়েক দশকের মাঝে আমাদের কৃষি প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। সে সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে বলা যাবে না। বরং যথাযথভাবে তা সম্প্রসারণের সুযোগ অতীতের চেয়ে বেড়েছে বৈকি। তবে অনেকের অভিযোগ, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার কিছু স্থানে ঘনীভূত; আবার কিছু স্থানে অপর্যাপ্ত। লক্ষ্যণীয়, জাতীয় গ্রিডের সংযোগহীন বিদ্যুৎ বঞ্চিত অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে ইদানীং। আবার উৎপাদনশীলতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রার বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের যেমন প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার, সেখানে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ অবস্থায় অর্জিত সাফল্যে সন্তুষ্ট না থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কৃষি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বাড়তি মনোযোগ দেবে, সে প্রত্যাশা সবার।

ক্যাটাগরি-১-এ উন্নয়ন

প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুক বেবিচক

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটি (এফএএ) আমাদের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে, তাও প্রায় ৫ বছর আগে; ২০০৯ সালে। ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হতে হলে কী করতে হবে, সেটি অজানা ছিল না। তবু নানা কারণে পদক্ষেপগুলো নিতে নিতে চলে গেল দীর্ঘ সময়। এরই মধ্যে বেবিচকের মান ক্যাটাগরি-১-এ উন্নয়ন হচ্ছে বলে খবর এলো গতকালের বণিক বার্তায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এফএএ’র প্রায় সব নির্দেশনাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে; বেবিচকের জনবল কাঠামো বাদে। অনেকের প্রত্যাশা, আগামী মার্চের মধ্যেই নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ঔদাসীন্য দেখানোর সুযোগ নেই। কেননা নির্দেশিত জনবল কাঠামো বাস্তবায়ন বিরাট জটিল ইস্যু না হলেও, গত কয়েক বছরে বেবিচকের ক্যাটাগরি-১’এ উন্নয়নে অন্যতম বাধা হিসেবে দেখা গেছে দুর্বল জনবল কাঠামোকে। ফলে প্রত্যাশা থাকবে, ক্যাটগরি-১-এ উন্নীত হয়ে গেছে সে আত্মতৃপ্তিতে মগ্ন না থেকে বাকি প্রক্রিয়া সুসম্পন্নে জোর দেবে বেবিচক। নইলে ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালু করা যাবে না; বেশি সমস্যা হবে ইউরোপমুখী ফ্লাইটগুলোয়। আর ওই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকলে বিমান ব্যবসা ঘিরে আমাদের যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটিও বিনষ্ট হবে বৈকি।

ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর বেলায় আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনের সঙ্গে নির্দিষ্ট একটি চূড়ান্ত চুক্তি সই। ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) এয়ার সার্ভিসেস নেগসিয়েশন কনফারেন্সে খসড়া চুক্তি ও ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রেস্র সঙ্গে মুক্ত বিমান চলাচল বিষয়ক সমঝোতা চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রেও ক্যাটাগরি-১’এ উন্নীত হওয়াটা প্রাসঙ্গিক। খেয়াল করার মতো বিষয় হলো, এফএএ নির্দেশিত বেবিচকের নতুন অর্গানোগ্রামের কিন্তু ‘অবিরাম ব্যয়’ রয়েছে; শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিলেই তো হবে না, তাদের নিয়মিত বেতন-ভাতাও যোগাতে হবে। ১৯৮৫ সালের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বেবিচক গঠিত হয় চেয়ারম্যানসহ ৩ হাজার ৭১৬টি পদ সহযোগে। এদিকে খসড়া জনবল কাঠামোয় ১৩ হাজার ৭৭৬ জন কর্মকর্তার চাহিদা দেয়া হয়েছিল। সেটি কাটছাঁট করে ১০ হাজারের নীচে নামিয়ে আনা কঠিন হবে। আবার নতুন জনবল কাঠামোর অন্তত আশানুরূপ বাস্তবায়ন না হলে ক্যাটাগরি-১’এ উন্নীত হওয়া কঠিন। বিষয়টি যথেষ্ঠ গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিৎ। বিমান পরিবহন ব্যবসায় বাংলাদেশের বেশ সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ। দ্রুত ক্যাটাগরি-১’এ বেবিচকের মানোন্নয়ন না হলে নষ্ট হবে তার অনেকটাই। এ অবস্থায় নতুন জনবল কাঠামোর মতো জটিল ইস্যুকে সুব্যবস্থাপনায় এনেই ঘোষিত সময়ের মাঝে বেবিচক ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হবে বলে সবার প্রত্যাশা।

নিয়মবহির্ভূত আমানত সংগ্রহে জীবন বীমা কোম্পানি

জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করুন

বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো যেকোনো দেশের আর্থিক খাতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানে আর্থিক খাতের সম্প্রসারণ সীমাবদ্ধ হওয়ার কারণেই কি কে জানে, সম্ভাবনা অনুযায়ী বীমা সুবিধার সদ্ব্যবহার হচ্ছে না। এক্ষেত্রে একশ্রেণীর বীমা ব্যবসায়ী তো বটেই, কর্তৃপক্ষের সুনিয়ন্ত্রণের ঘাটতিও কম দায়ী নয়। এক্ষেত্রে বেশি করে চোখে পড়ে যে বিষয়টা সেটি হলো, প্রথমত. বীমা সম্বন্ধে মানুষের অজ্ঞতা এবং দ্বিতীয়ত. বীমা কোম্পানির প্রতি জনগণের ঘাটতির অভাব। সেজন্য একশ্রেণীর বীমা কোম্পানি কর্তৃক সংঘটিত অপকর্মও কম দায়ী নয়। গ্রাহকের প্রাপ্য যথাসময়ে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে না কিংবা হলেও তা আংশিকভাবে অথবা নিজের অধিকার বুঝে পেতেও অনিয়মের আশ্রয় নিতে হচ্ছে গ্রাহককে, বীমা কোম্পানি সংক্রান্ত এ ধরনের অভিযোগ আজো রয়েছে। এবং মাত্রাটি বীমা খাতের সুষ্ঠু বিকাশের পথে অন্তরায় বৈকি। এরই মধ্যে গতকালের বণিক বার্তার খবর, নিয়ম বহির্ভূতভাবে আমানত সংগ্রহে নেমে পড়েছে একাধিক জীবন বীমা কোম্পানি। ডিপিএস সুপার গোল্ড, সুপার সিলভার প্রভৃতি নামে ছাড়া হচ্ছে ডিপিএস সেবা। কথা হলো, ওই বীমা কোম্পানিগুলো এমন ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদনের অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া কেউ দিতেও পারবে না এ অনুমতি। তাছাড়া কোনো বীমা কোম্পানি যদি নতুন কোনো সেবা চালুও করতে চায়, তাদের অনুমতি চাইতে হবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে। কোনো প্রকার অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই যারা ডিপিএস সেবা চালু করল শুরুতেই তাদের বিরুদ্ধে আইডিআরএ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলে প্রত্যাশা। জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে বীমা খাতের যথাযথ বিকাশ ব্যাহত হবে নিশ্চয়ই! কিছু জীবন বীমা কোম্পানি ঋণ দিচ্ছে বলেও শোনা যায় ইদানীং। যে যুক্তিতেই হক, এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এদিকে কিছু ক্ষেত্রে এখনো একশ্রেণীর বীমা কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনার তোয়াক্কা করে না বলে অনেকের অভিযোগ। লক্ষ্যণীয়, স্থানীয় বীমা খাত নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিমত্তা ঠিক অর্জন করতে পারে নি আইডিআরএ। আর ওই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে কীভাবে বীমা খাতের সাফল্যকে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ ও সহায়তা যোগাতে হবে সরকারকেই।

একাধিক জীবন বীমা কোম্পানির কিস্তিযুক্ত বা কিস্তিহীন এবং বিভিন্ন মেয়াদি নিয়ম বহির্ভূত আমানত সংগ্রহের খবর রয়েছে আমাদের প্রতিবেদকের কাছে। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার ফলটাও স্পষ্টই। গ্রামে এমনকি শহরে সীমিত আয়ের মানুষকে ডিপিএস সেবা প্রদানের নামে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা কিন্তু কম নেই। উপযুক্ত জবাবদিহি না থাকায় এক্ষেত্রে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। এমন পরিস্থিতি আর চলতে দেয় যায় না। তাই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবনপূর্বক কর্তৃপক্ষ দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

এনামেল পেইন্টে মাত্রাতিরিক্ত সিসা

প্রতিরোধে উদ্যোগী হোক প্রশাসন

স্থানীয় বাজারে বিক্রি হওয়া একশ্রেণীর এনামেল পেইন্টে সহনীয় মাত্রা চেয়ে বেশি হারে সিসা ব্যবহারের যে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায় তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেননা মানবদেহের ওপর এ ধাতুটির রয়েছে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব। বিষক্রিয়া সাধনে সক্ষম কিছু ধাতু পাকস্থলীতে গিয়ে বিরূপ প্রভাব ফেলতে শুরু করে। কিন্তু সিসা পাকস্থলি বা ফুসফুস অর্থাৎ খাবার বা নিঃশ্বাস গ্রহণ যেভাবেই শরীরে প্রবেশ করুক, দীর্ঘদিন অবস্থান করলে তা বিভিন্ন অঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখায়। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, সিসার ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে সব বয়সীদের ওপর। একাধিক গবেষণা বলছে, বাচ্চাদের শিক্ষণের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সেজন্য বায়ুদূষণ তো আছেই, গবেষকরা বেশি দায়ী করছেন বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত সিসাযুক্ত রঙকেই। ধারণা করা হয়, অকাল গর্ভপাতের অন্যতম কারণও এটি। পেটে ব্যথা সৃষ্টির পাশাপাশি বিশেষত মধ্যবয়সীদের আঙুল দুর্বল করে দিতে পারে অতিরিক্ত সিসার সংস্পর্শ। লক্ষ্যণীয়, সেজন্যই রঙে সিসার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধে জোর দিয়েছে অনেক দেশ। নানা বিবেচনায় আমাদের একটি সহনীয় মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর কোনো লঙ্ঘন কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং কেউ যেন তা ঘটাতে না পারে সে উদ্দেশ্যে প্রশাসনিক উদ্যোগই দেখতে চাইবেন সবাই।

আমাদের বাজারে একাধিক বহুজাতিক ও স্থানীয় এনামেল পেইন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের সবাই রঙে মাত্রাতিরিক্ত সিসা ব্যবহার করছে এমনটি নয়। একটি প্রতিষ্ঠান নিজেরাই স্বীকার করেছে, গত কয়েক বছর ধরে তারা সিসামুক্ত রঙ ব্যবহার করছে। রঙে সিসা বেশি ব্যবহৃত হয় কেন, তার কারণ কিন্তু সহজবোধ্য। প্রথমত. সিসার ব্যবহার রঙকে উজ্জ্বল ও টেকসই করে। দ্বিতীয়ত. এর দাম কম। ড্রায়ারে সিসা ব্যবহৃত হলে সে রঙ শুকিয়ে যায় অপেক্ষাকৃত দ্রুতভাবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয় তো আছেই, একশ্রেণীর কোম্পানির অবাধ সিসা ব্যবহার কিন্তু বাজারে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশও বিনষ্ট করবে। এ অবস্থায় যেসব প্রতিষ্ঠান রঙে সিসা ব্যবহার করছে না তাদের উৎসাহিত এবং যারা মাত্রাতিরিক্ত সিসা ব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রশাসনকে সরকার বিশেষ নির্দেশনা দেবে বলেও সবার প্রত্যাশা। অভ্যন্তরীণ বাজারে নাকি সিসামুক্ত ও সিসাযুক্ত দু’ধরনের ড্রায়ারই পাওয়া যায়। এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে প্রশাসন। সেক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন অবশ্য রয়েছে, স্থানীয় ও ছোট রঙ উৎপাদনকারী কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে। এ নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনাপূর্বক গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নেয়াই হবে যুক্তিযুক্ত। শুধুমাত্র স্থানীয় ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের বাড়তি সুবিধার জন্য জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করা চলে না। তাছাড়া সিসামুক্ত রঙ বিক্রি করে ব্যবসা সম্প্রসারণের নজিরও তো রেখেছে স্থানীয় একাধিক প্রতিষ্ঠান। সেটিও আমলে নেয়া দরকার।

বেসরকারি পাটকলের বেহাল দশা

নীতিনির্ধারকদের কি একেবারেই দায় নেই?

খুলনা ফুলবাড়ি গেট এলাকার মহসেন জুট মিলস লিমিটেড চূড়ান্তভাবে বন্ধ হওয়ার খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। চলতি মূলধন ও কাঁচা পাটের অভাবে কর্মীদের বেতন-মজুরি দিতে না পারায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এক দাফতরিক আদেশের মাধ্যমে ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে লে-অফ ঘোষণা করে। বৃহস্পতিবার লে-অফ শেষে কর্মীরা কাজে যোগ দিতে এলে নিরাপত্তারক্ষীরা বন্ধের নোটিস দেখান তাদের। সেখানকার কয়েক শ’ কর্মী কর্মসংস্থান হারালেন এতে। তদুপরি ঈদের ঠিক আগে এভাবে চাকুরি হারানোর বাড়তি অসুবিধা তো আছেই। আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর অবস্থা তেমন একটা আশাব্যঞ্জক নয়। অনেকের প্রত্যাশা ছিল, পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে গেলে হয়তো লাভের মুখ দেখবে। এখন দেখা যাচ্ছে, তাও দুরাশা। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সব পাটকলের প্রকৃত সমস্যা নির্ণয় ও তার সমাধান প্রদান নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈকি। পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, এবার তারা বুঝুক- এক্ষেত্রে তেমন মনোভাব তাদের কাছে কাম্য নয় মোটেই।

জানা যাচ্ছে, স্বাধীনতা লাভের সময় আমাদের পাটকলের সংখ্যা ছিল ৭৭টি। সেগুলো পরিচালিত হতো বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতায়। পরবর্তী সময়ে বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) নেতৃত্বে চলে আসে দেড়শ’র কাছাকাছি পাটকল। বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) আওতায়ও পরিচালিত হয় কিছু পাটকল। লক্ষ্যণীয়, মাঝে কয়েক দশক বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের দামে ভাটা পড়ে মূলত বিকল্প পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়। ওই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গেছে এখন। পাটের বিকল্প তন্তুর কাঁচামালের দামও আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে বলেই জানা যায়। এদিকে পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবেও পাটের কদর আগের চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশী একদল বিজ্ঞানী কর্তৃক পাটের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারও আমাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা। কেউই বলবেন না, পাটের প্রতি অবহেলা দেখাচ্ছে কিংবা দেখিয়েছে বর্তমান সরকার। বরং শিল্পনীতি ২০১০-এ পাট খাতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন পাটনীতিও রয়েছে আমাদের। প্যাকেজিং প্রডাক্ট অ্যাক্ট, ২০১০ অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এর ব্যবহার। এত কিছু সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত্বের পর বেসরকারি পাটকল বন্ধের খবর অত্যন্ত দুঃখজনক। ওই পরিস্থিতি উত্তরণে নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে উপযুক্ত নির্দেশনা ও সহায়তাই প্রত্যাশা করেন সবাই।

মহসেন জুট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, মূলত কয়েকটি কারণে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তার মাঝে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা হ্রাস, উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে বিক্রয়মূল্য কম, ব্যাংক ঋণ না পাওয়ার মতো ইস্যুগুলো এখানে প্রণিধানযোগ্য। বিদেশে বাংলাদেশী পাট ও পাটজাত পণ্যের বাজার সংকোচনের কারণ হিসেবে অনেক সময় ভারতের আগ্রাসী প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে বাস্তবতা হলো বেশিরভাগ পাটজাত পণ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতাসক্ষমতা তুলনামূলকভাবে ভারতের চেয়ে বেশি। ফলে আমাদের আত্মানুসন্ধানই শ্রেয়। স্থানীয় পাটকলগুলোর সার্বিক প্রতিযোগিতাসক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম কারণ কিন্তু পুরনো যন্ত্রপাতি। সেগুলোর অধিকাংশই অর্থনৈতিক মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেলেও নাকি তা প্রতিস্থাপনের জন্য ব্যাংক ঋণ খুব একটা পাওয়া যায় না। আবার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তেমনটি নেই। অর্থাৎ সুযোগের বৈষম্য থাকায়ও বাজারে মার খাচ্ছে এগুলো। আরেকটি বড় কারণ, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের ঘাটতি। সেক্ষেত্রে সমস্যা হলো, দক্ষ জনশক্তি পাটকলে আকরড়ষোণ করতে চাইলে প্রতিযোগিতামূলক বেতন নির্ধারণ করতে হবে। অথচ প্রতিষ্ঠান লোকসান দেয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এমন ধাঁধাঁ থেকে উদ্ধার পেতে, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সচেষ্ট হওয়া দরকার। তবে সর্বাগ্রে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে নীতিনির্ধারকদেরই।

উড্ডয়ন নিরাপত্তা

কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে বেবিচককেই

ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজ নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে গিয়ে স্থানীয় এক বেসরকারি এয়ারলাইনস কর্তৃক ক্রমাগত দুর্ঘটনা সৃষ্টির খবর এরই মধ্যে প্রকাশ হয়েছে নানা পত্রপত্রিকায়। এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়ও। আলোচ্য এয়ারলাইনসের বড় দুর্ঘটনার মাঝে রয়েছে চট্টগ্রাম যাওয়ার মাঝে আকাশেই ইঞ্জিন বিকল, যশোর-ঢাকা রুটে চলাচলের সময় ককপিটের জানালা ভেঙ্গে পাইলট ও ফার্স্ট অফিসার মারাত্মকভাবে আহত, রানওয়েতে চাকা নষ্ট হওয়ায় ওমানের মাস্কটাট বিমানবন্দরে ঘণ্টা চারেক আটক এবং গত রোববার কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের সময় নোজ হুইল আটকানো প্রভৃতি। রোববারের ঘটনায় প্রায় ২২ ঘণ্টা ব্যাহত হয় কক্সবাজার বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। তাতে পাইলট ও ক্রুসহ যাত্রীদের চূড়ান্ত ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। কথা হলো, বিশেষত গত দুই দশকের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বাংলাদেশীদের মাঝে এমনকি অভ্যন্তরীণ রুটেও বিমানে চড়ার সামর্থ্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখানে প্রতি বছরই বিমানের যাত্রী বাড়ছে বিধায় নতুন নতুন এয়ারলাইনসের আগমনও লক্ষ্যণীয়। কিন্তু এভাবে যদি যাত্রীর নিরাপত্তার তোয়াক্কা না করে কোনো এয়ারলাইনস ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে, পুরো এয়ারলাইনস ব্যবসার তার একটা মন্দ প্রভাব থাকবে। বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলে তার দায় এড়াতে পারবে না নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তথা সরকারও। তাছাড়া আলোচ্য এয়ারলাইনসের প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। এমন পরিস্থিতি সবাই প্রত্যাশা করেন, আমাদের আকাশসীমায় উড্ডয়ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা নিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

আলোচ্য এয়ারলাইনস নাকি উড্ডয়নের আগে উড়োজাহাজ ভালোভাবে পরীক্ষা করে না। অথচ এটি বিমান নিরাপত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সেখানে লজিস্টিক স্বল্পতা ও ইঞ্জিনিয়ার ঘাটতির কথাও শোনা যায়। গুরুতর হলো, উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ করছে না স্থানীয় এয়ারলাইনসটি। বেবিচকের কাছে কোম্পানিটি এখনো দেনাদার। কারিগরি ত্রুটি সারানোর নির্দেশনা এখনো যথাযথভাবে পালন করে নি তারা। এমনকি নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত বৈমানিকেরা ওসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে নাকি ব্যবস্থাপনাগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয় অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে। এদিকে বেবিচকের কাছে বকেয়া অর্থ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি ছাড়ের প্রত্যাশা করছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। এটি রোধ করতে হবে। শুধু এয়ারলাইনস বলে নয়, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে ওভাবে ভর্তুকি দেয়া হলে অন্যরাও সে দাবি তুলতে পারে বৈকি। তারা বরং প্রতিষ্ঠানটিকে লাভজনক করে তোলার বিষয়ে সুপরামর্শ ও পথনির্দেশ জোগাতে পারে। আলোচ্য ইস্যুতে বেবিচকের কাছে বিচক্ষণ ভূমিকাই প্রত্যাশিত। এয়ারলাইনসটির যাত্রী সেবার মান নিম্ন বলে অভিযোগ; ব্যবসাও যে ব্যাপকভাবে ভালো হচ্ছে, তা নয়। তবে সময়ে এসবেরই উন্নতি ঘটানো সম্ভব। ফলে পাইলট ও যাত্রীর নিরাপত্তা, নিজের ভাবমূর্তি ও দেশে এয়ারলাইনস ব্যবসার সম্ভাবনা-অসুবিধাগুলো যথাসম্ভব ভেবেই এক্ষেত্রে অবস্থান নেয়া উচিৎ বেবিচকের।

ওমান থেকে শ্রমিক ফেরত আসার শঙ্কা

সরকারের কার্যকর উদ্যোগই প্রত্যাশিত

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার সংকোচনের পর গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যের একক বৃহত্তম বাজার হিসেবে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক নাকি গিয়েছেন ওমানেই। জানা যায়, বর্তমানে আমাদের ৫ লক্ষাধিক শ্রমিক রয়েছে সেখানে। এটি সুখবর বটে। তবে দুশ্চিন্তাদায়ক খবর হলো, ওমানে ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন জটিলতায় অবৈধ হয়ে দেশে ফিরে আসার আতঙ্কে থাকা শ্রমিকদের নিয়ে প্রকাশিত গতকাল বণিক বার্তার প্রতিবেদনটি। এরই মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আমাদের কর্মহীন প্রবৃদ্ধি ঘটছে বলে একাধিক বিশেষজ্ঞ মত ব্যক্ত করেছে। এক্ষেত্রে আমাদের অন্যতম সুযোগ ছিল বহিঃস্থ শ্রমবাজারে কর্মসংস্থানের সরবরাহ বৃদ্ধি। এখন দেখা যাচ্ছে, সেখানেও তেমন সুবিধা করে ওঠা যাচ্ছে না। এ প্রবণতা মধ্য মেয়াদে অব্যাহত থাকলেও কিন্তু সেটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এদিকে আমাদের রফতানি খাত এখনো ব্যাপকভাবে গার্মেন্ট পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘদিন ধরে নতুন বাজার ও পণ্য অনুসন্ধানের সাড়াশব্দ মিললেও এর ফল আশাব্যঞ্জক নয় বলে মনে করেন নিন্দুকেরা। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের বিদ্যমান বৈদেশিক শ্রমবাজারগুলোকে কোনো ক্রমেই হাতছাড়া হয়ে দেয়া চলবে না। এখানে সরকারের কার্যকর ভূমিকাই প্রত্যাশিত সবার।

নির্মাণ ও পরিচ্ছন্নতা খাতে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত নতুন বাংলাদেশী শ্রমিককে ভিসা দেয়া হবে না, সে সিদ্ধান্ত আগেই জানিয়েছিল ওমান। অবৈধ বিদেশী শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বভাবতই নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে। সে কারণেই হয়তো অন্যান্য খাতেও শ্রমিক নিচ্ছে না দেশটি। এরই মধ্যে নিয়োগদাতারা ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন না করায় কয়েক মাসের মধ্যে দেশে ফিরতে হয়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিককে। এদিকে যাদের দেশে ফিরছেন, নির্যাতনের শিকার হওয়া তথা দীর্ঘদিন কারাভোগের অভিযোগ করেছেন তাদের অনেকে। কেউ কেউ নাকি বৈধতার কাগজপত্র থাকার পরও হয়রান হচ্ছেন পুলিশ দ্বারা। এ অবস্থায় আমরা কূটনৈতিক তৎপরতা দেখতে চাই। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে অনেকে মনে করেন, ক্রমে অধিকসংখ্যক শ্রমিক দেশে ফিরে আসলে সেটি অর্থনীতি ও সমাজের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া ওমানে আমাদের বরং আরো শ্রমিক রফতানির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাই সরকারকে দ্রুতই যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এর আগে ওমানে শ্রমিক রফতানি হ্রাসের সময় কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হলেও সেটি কাঙ্ক্ষিত সুফল দেয় নি। ইদানীং কর্মরত একশ্রেণীর কূটনীতিকের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন খোদ সাবেক কূটনীতিকরাই। এ দুর্বলতা অপসারণে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া উপযুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি তাদের এ উপলব্ধিও থাকতে হবে যে, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

টেলিযোগাযোগ সেবায় গ্রাহকের স্বার্থ

শক্ত অবস্থান নিতে হবে নিয়ন্ত্রককে

অপারেটরদের দেয়া সেবার মান ও গ্রাহকের স্বার্থ সুরক্ষার করার উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশের মতো এখানেও জাতীয় টেলিযোগাযোগ গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গত বছর জানুয়ারিতে এর খসড়াও প্রকাশ করে সংস্থাটি। এর মধ্যে দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। তবু দেখা মেলে নি চূড়ান্ত নীতিমালার। কথা ছিল, খাতসংশ্লিষ্টদের মতামত নিয়ে এটি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা ছিল। সেটি সম্ভব হয় নি বলে প্রকাশ হয়েছে গতকাল বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে। এ বিষয়ে অবিলম্বে অগ্রগতি প্রত্যাশা করেন সবাই। খাতটির সুষ্ঠু ও অধিকতর বিকাশের জন্যও তা প্রয়োজন। আলোচিত থ্রিজি সেবা আশানুরূপভাবে জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না বলে অনেকের অভিযোগ। গ্রাহক স্বার্থের প্রতি অপারেটরদের মনোযোগের ঘাটতি তার একটা বড় কারণ বলে মনে করেন কেউ কেউ। জানার উপায় নেই, গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষা নীতিমালা অনুমোদনে বিটিআরসির ওপর একশ্রেণীর অপারেটর কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চাপ রয়েছে কিনা। ইস্যুটিতে অপারেটররা কিন্তু অপরিহার্য পক্ষ। ফলে তাদের বাদ রেখে গ্রাহক স্বার্থ নীতিমালার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। ফলে পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা জরুরি। ব্যবসার বিকাশ ও গ্রাহক স্বার্থ মাথায় রেখে আলোচ্য ইস্যুতে বিটিআরসি শক্ত অবস্থান নেবে, এম প্রত্যাশাই করেন সবাই।

বিটিআরসি কর্তৃক নজরদারি বৃদ্ধি বা খসড়াটি প্রণয়নের পর থেকে অপারেটরদের গ্রাহক সেবায় প্রভূত উন্নত হয়েছে বলা যাবে না। লক্ষ্যণীয়, খসড়া রচনা শুরু আগে গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষার জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে অপারেটরদের ওপর অব্যাহত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়ার পর বিধিবদ্ধ নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। খসড়ার কিছু ধারা নিয়ে অনেকের মাঝে বিরূপ মনোভাবের কথা জানা যায়। তবু অস্বীকার করা যাবে না, বিদ্যমান খসড়াটি অনুমোদন পেলেও তা গ্রাহকের মনে ভরসা জোগাবে। তাছাড়া সেটি তো মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হচ্ছে আরো ব্যবসা ও ব্যবসা বান্ধব করে তোলার উদ্দেশ্যেই। এ অবস্থায় ইস্যুটি বিটিআরসির টেবিলেই থেমে থাকুক এমনটা গ্রহণযোগ্য নয় মোটেই। গ্রাহক স্বার্থ নীতিমালায় দ্রুত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ও তা অনুমোদনের ওপর জোর দেয়া দরকার এজন্যও যে, এখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয়টিও যুক্ত। খসড়া অনুযায়ী, গ্রাহকের তথ্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষের হাতে তুলে দিতে পারবে না অপারেটর। মারাত্মক ক্ষতিকর প্রোগ্রাম থেকে গ্রাহককে সুরক্ষা প্রদানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় টেলিযোগাযোগ গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষা নীতিমালা এমন এক বিস্তৃত ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, নিরাপত্তাও যার অংশ। এ অবস্থায় খসড়াটি যত দ্রুত অনুমোদনের পথে এগিয়ে যাবে ততই মঙ্গল।

মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়ামযুক্ত ফিড

পুরোপুরি বন্ধে প্রশাসনিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন

রাজধানীর হাজারীবাগে মুরগির খাবার তৈরির একাধিক কারখানায় ক্রোমিয়ামযুক্ত ট্যানারি বর্জ্য ব্যবহারের প্রমাণ মেলার পর র‍্যাবের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক সেগুলো সিলগালা করার খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। সম্প্রতি এমন ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে বললে ভুল হবে না। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখা উচিৎ। ট্যানারি বর্জ্য মিশিয়ে পোলট্রি ফিড তৈরি করে এমন কারখানার কম নেই। এখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কারণেই বোধহয় চোখে পড়ছে বেশি। তাই এটি অব্যাহত রাখতে হবে যেন খাবারে ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি অন্তত সহনীয় পর্যায়ে থাকে। এরই মধ্যে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণের বড় উৎসে দাঁড়িয়ে গেছে পোলট্রি শিল্প। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা সেসব বিদেশে রফতানি করার চিন্তাভাবনাও পেশ করেছেন। অথচ উচ্চ মাত্রায় ক্রোমিয়াম পাওয়া গেলে সেটি ইউরোপ-আমেরিকার বাজার তো দূরে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশেই ডিম বা মুরগি পাঠানো দুষ্কর হবে। আমাদের আমিষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো চাষের মাছ। ক্রোমিয়ামযুক্ত ঐ ফিড কিন্তু কেবল মুরগিকেই খাওয়ানো হয় না। তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মাছের খামারেও যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত ক্রোমিয়ামাযুক্ত ফিড মাছ-মাংস দুভাবেই জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, যদি দ্রুত সেটি নিয়ন্ত্রণে না আসে।

উচ্চ মাত্রায় ক্রোমিয়াম মুরগির রক্ত, মাংস, হাড় ও গিলা-কলিজায় জমা হয়। উচ্চ তাপেও নষ্ট হয় না বিধায় এটি প্রায় সরাসরি মানবদেহে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানবদেহের প্রতি কেজিতে দশমিক ০৫ থেকে দশমিক ২ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি স্বাভাবিক ধরা হয়। এদিকে হাজারীবাগের কিছু ফিড কারখানায় প্রতি কেজি ঝুট চামড়ায় ক্রোমিয়ামের উপস্থিতি পাওয়া গেছে ১৪ গ্রামও। তা থেকে অনুমান করা হয়, ওসব পোলট্রি ফিডে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ পর্যন্ত বেশি ক্রোমিয়াম রয়েছে। দীর্ঘ ব্যবহারে ক্রোমিয়াম মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে। এক্ষেত্রে কিছু বিশেষ ঝুঁকিও রয়েছে। জিন বিন্যাসে ক্রোমিয়াম প্রভাব ফেলে বলে অনেক বিশেষজ্ঞের ধারণা। অর্থাৎ সাধারণ ভোক্তাদের জেনেটিক রোগব্যাধিতেও নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে উচ্চ মাত্রায় ক্রোমিয়াম গ্রহণ করা মুরগির মাংস-ডিম বা মাছ। এর প্রভাব যে চাষের হাঁস-মুরগি ও মাছের ওপর পড়ছে না, সে কথা কে বলবে। তবে সব পোলট্রি বা ফিশ ফিডে কিন্তু এ ধরনের ‘মাল্টি-ভিটামিন’ মেশানো হয় না। কিছু কারখানা একেবারে শুরু থেকেই তা পরিহার করে আসছে। সেগুলোকে নীতিগত সহায়তা জোগানো যেতে পারে। আবার অনেক ফিড কারখানা মালিক জানেনও না, চামড়ায় উচ্চ মাত্রায় ক্রোমিয়াম রয়েছে এবং সেটি মারাত্মক ক্ষতিকর। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন সব পক্ষের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফিডে উচ্চ মাত্রার ক্রোমিয়াম ব্যবহার পুরোপুরি রোধে অভিযান অব্যাহত রাখবে এমনটিই সবার প্রত্যাশা।

জ্বালানি তেল আমদানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা

ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারেরই দায়িত্ব

২০১০ সালের আগে এশিয়ার জ্বালানি পণ্যের বাজারে এক প্রকার অনিয়মিত বিক্রেতা ছিল বাংলাদেশ। সুযোগমতো সীমিত পরিমাণে হলেও জ্বালানি বিক্রি করতাম আমরা। এখন তা বিক্রির প্রশ্নই আসে না। বরং আমাদের জ্বালানি চাহিদা যে মাত্রায় বাড়ছে, তাতে আগামীতে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি পণ্যের আমদানি বাড়াতে হবে বলেই প্রতীয়মান। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখা উচিৎ। বর্ধিত জ্বালানি বিনোদনে ব্যয় হচ্ছে, এর চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে অর্থনীতির অন্তর্নিহিত চাপেই। তবে জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক চালু রয়েছে দেশে। ইস্যুটি জটিল বিধায় দ্রুত এর সহজ সমাধান প্রত্যাশা করেন না অনেকে। তেমনই এক ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা, কোন জ্বালানির ব্যবহার কতটুকু হলে বা বাড়লে তার সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এ বিষয়ে সবাই মোটামুটি একমত পোষণ যে, যেহেতু জ্বালানি হিসেবে তেলের ব্যবহার ব্যয়বহুল (এবং পরিবেশের অধিক দূষণকারী), জ্বালানি মিশ্রণে এর পরিমাণ সুবিবেচনাপ্রসূত হওয়া প্রয়োজন। লক্ষ্যণীয়, দেশে মূলত বিভিন্ন ভাড়াভিত্তিক ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হওয়ায় জ্বালানি তেলের ওপর চাপ বাড়ে- বর্ধিত বিদ্যুৎ চাহিদা এবং তার বিপরীতে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকারের বিলম্বের কারণে। এরই মধ্যে মঙ্গলবার একাধিক গণমাধ্যমে খবর রয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রথমার্ধের তুলনায় আনুমানিক ২০ শতাংশ অতিরিক্ত জ্বালানি তেল আমদানির পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। অতিরিক্ত যে তেল আমদানি করার কথা শোনা যাচ্ছে, তা উচ্চ সালফারযুক্ত; বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া এর সামান্য ব্যবহার রয়েছে জাহাজের জ্বালানি হিসেবে। এমন পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত তেল আমদানির খবরে, বিদ্যুৎ মূল্যের ওপর তার সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করতেই হবে। সাম্প্রতিক সময়ে অল্প ব্যবধানে কয়েকবার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এখন অর্থনীতির ওপর যে অতিরিক্ত তেল আমদানির বিরূপ চাপ সুখকর হবে না, তা সহজেই অনুমেয়। আর তা সুনিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও সরকারের ওপরই বর্তায়।

অতিরিক্ত তেল আমদানির পরিকল্পনা অহেতুক জনগণের ওপর বোঝা- এ কথা বলা যাবে না। আমাদের চাহিদা তো বেড়েছেই, আবার ক’দিন আগে একটি কূপ থেকে আশানুরূপ গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা কমে গেছে। হতে পারে, এ বিবেচনা থেকেই অতিরিক্ত তেল আমদানির কথা ভাবছে বিপিসি। সেক্ষেত্রে উপায় না থাকলেও তেল আমদানি বৃদ্ধির বিকল্প থাকবে না। তবে এ বর্ধিত ব্যয়ের বোঝা যেন অর্থনীতিতে বিপরীত প্রতিক্রিয়া ফেলতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। কূপ থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে এলে বর্ধিত তেল আমদানির চাপ হ্রাস পাবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। তাই উদ্ভূত ব্যয় মধ্য মেয়াদে সমন্বয় করা যায় কিনা দেখতে হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, বর্তমানে সীমিত মাত্রায় তেল আমদানির সুযোগ রয়েছে ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রেরও। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে। লক্ষ্যণীয়, গত বছর এশিয়ার বাজার থেকে আমরা যে দামে তেল কিনেছি, অতিরিক্ত আমদানি করা হলে সেখানে দামে উল্লেখযোগ্য ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। এমনিতেই এশিয়ায় তেলের দাম গত বছরের তুলনায় খানিকটা নিম্নগামী। একাধিক দেশের বিদ্যুতের দামেও সেটির প্রভাব পড়েছে বলে জানা যায়। অনস্বীকার্য যে, দীর্ঘদিন ভর্তুকির সঙ্গে জ্বালানি তেলের দামে সমন্বয় হয় নি দেশে। ফলে হঠাৎই বিদ্যুতের দাম কিছুটা বেশিই বেড়েছিল। সে প্রেক্ষাপট তো এখন আর নেই। তাই সরকার বিদ্যুতের দাম জনগণ তথা অর্থনীতির সঙ্গে সহনীয় রাখায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এমনটাই সবার প্রত্যাশা।

Published in Bonik Barta, June 2014

চট্টগ্রাম ইপিজেডে সিইটিপি কার্যকরকরণ

কারখানা পরিচালকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে

পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ২০১১ সালে চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) স্থাপন করা হয় কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট (সিইটিপি)। পরের বছর বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় আনুমানিক অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্প। অথচ এখন পর্যন্ত সিপিজেডে অবস্থিত ২১৪টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে মাত্র ৮০টি ইটিপিতে যুক্ত হয়েছে বলে জানা যায়। এতে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে কারখানা থেকে নির্গত তরল বর্জ্য। সেটি গিয়ে মিশছে কর্ণফুলী নদী তথা বঙ্গোপসাগরে। বর্ষায় নর্দমা উপচে শিল্প বর্জ্য মারাত্মকভাবে প্রবেশ করছে লোকালয়ে। এমন পরিস্থিতিতে সিইটিপিকে কার্যকর করে তুলতে হবে শুধু সরকারি বিনিয়োগের অর্থ অন্তত উশুলের জন্যই শুধু নয়, পরিবেশ সুরক্ষা ও জনদুর্দশার দিকটি মাথায় রেখেও। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দ্রুত সক্রিয় হবেন বলেই সবার প্রত্যাশা।

কেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোম্পানি এখনো সিইটিপিতে যুক্ত হচ্ছে না সে বিষয়ে একাধিক যুক্তি রয়েছে। আমাদের প্রতিবেদককে সিইপিজেডেরই একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেছেন, নির্মাণ শেষে চালু করা হলেও সিইটিপি পুরোপুরি কাজ করতে পারছে না। আবার জোয়ারের সময় পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে বিপুল বর্জ্য ঢুকে পড়ছে সিইপিজেডে। প্রকল্প থেকে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না সেজন্যও। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার। এক্ষেত্রে কারিগরি বা নকশাগত কোনো ত্রুটি বা দুর্বলতা থাকলে দ্রুত তা মেরামতের উদ্যোগ নিতে হবে। মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলগুলোর মাঝে বহির্বিশ্বে সিইপিজেডের সুনাম রয়েছে বেশ। এদিকে পরিবেশ সুরক্ষার ইস্যুটি ক্রমেই বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ অবস্থায় পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা এড়াতে পারেন না কারখানা পরিচালকরা। অনেকে মনে করেন, সিইটিপি পরিচালন ব্যয় বেশি হওয়ায়ই সিইটিপি সংযোগ নিচ্ছেন না তারা। প্রথম কথা হলো, সিইটিপির পরিচালন ব্যয় নিয়ে আপত্তি থাকলে তাদের উচিৎ বিষয়টি সিইপিজেড কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা এবং আলোচনাপূর্বক একটা সমাধানে আসা। সেক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় ব্যয় অধিক মনে হলে সরকারের কাছ থেকে কিছু ছাড়ের দাবিও তোলা যেতো। তেমন উদ্যোগ না নিয়ে চুপ মেরে বসে থেকে কারখানা পরিচালকরা এখন যেটি করছেন সেটি মোটেই কাম্য নয়। ব্যবসায়ী সমাজের কাছ থেকে আরো দায়িত্বশীল আচরণই কামনা করেন জনগণ। দ্বিতীয় বিষয় হলো, পরিচালন ব্যয় তথা এর লাভক্ষতির হিসাব কষেই নির্মাণ করা হয় সিইটিপি। মুনাফা দূরে ঠেলে কেবল দূষণেই ভর্তুকি দিয়ে যাবে, আজ পর্যন্ত তেমন কোনো কারখানা স্থাপিত হয়েছে বা স্থাপনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলেও জানা যায় না। তার পরও যদি সিইপিজেডে কেউ সিইটিপি সংযোগ নেয়ায় ক্রমাগত অনিচ্ছা দেখায়, কর্তৃপক্ষের উচিৎ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শক্ত অবস্থান নেয়া।

ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব নয়

দেশে প্রতি বছর ৩২ কোটি টন ই-বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে কম্পিউটার, সেলফোন, এয়ারকন্ডিশনার, রেফ্রিজারেটর, টিউবলাইট, এনার্জি সেভিং বাল্ব প্রভৃতি পণ্য থেকে। এটা বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন (বিইএমএমএ) থেকে পাওয়া তথ্য। উদ্বেগজনক হলো, এর মাত্র এক-চতুর্থাংশের কিছু বেশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য হচ্ছে; বাকি অংশের ধ্বংসও নাকি হচ্ছে যেনতেনভাবে। আরো দুশ্চিন্তা জাগে যখন জানা যায়, শুধু ঢাকাতেই প্রতিদিন উৎপন্ন হচ্ছে আনুমানিক ৫০০ টন ই-বর্জ্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা না গেলে এসব ই-বর্জ্য জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলেও সবার প্রত্যাশা।

প্রতিটি ই-বর্জ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে; কয়েকটিতে থাকে তেজস্ক্রিয় পদার্থও। সেজন্যই ই-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা গতানুগতিক কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে ভিন্ন। অনেক দেশে এ ধরনের পণ্য আলাদাভাবে সংগ্রহের জন্য ভোক্তা সচেতনতা বাড়ানো হয় এবং কিছু প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করা হয়। বর্জ্যটি সঠিকভাবে সংগ্রহের জন্য এখানেও তেমন ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতোই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো, ব্যবসা ও পরিবেশের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখা। উৎপাদিত ই-বর্জ্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো মিলে ব্যবস্থাপনা করবে নাকি এক্ষেত্রে সিংহভাগ দায়িত্ব থাকবে সরকারের ওপর- তার কোনো সরল উত্তর নেই। তাই এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজতে হবে। লক্ষ্যণীয়, ই-বর্জ্যের প্রভাব ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব যদি স্থানীয়ভাবে কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যের উৎপাদন কিংবা আমদানির বেলায় অন্তত নিজস্ব মানদণ্ড নির্ধারণ ও তার বাস্তবায়ন করা যায়। সুলভ অনেক ইলেকট্রনিক পণ্যই স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় যা বিপুল পরিমাণে ই-বর্জ্য তৈরি করে থাকে। এ বিষয়ে ভোক্তা সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগও নেয়া প্রয়োজন। ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনবোধে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা নিতে পারে সরকার। কেননা ই-বর্জ্যের সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না হলে তা প্রথমত. অপচয় ঘটাবে এবং দ্বিতীয়ত. উল্টো পরিবেশ দূষণ বাড়িয়েও ফেলতে পারে। সেজন্যব নতুন আইন প্রণয়নের কথা অনেকে বলছেন বটে। কিন্তু আদৌ সেটির কতটা প্রয়োজন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কারো কারো। তারা মনে করেন, বিদ্যমান আইনেই বা এর কিছু পরিমার্জন-পরিবর্ধন এনে ই-বর্জ্যের সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব।

রাশিয়ায় হিমায়িত চিংড়ি রফতানি পুনরায় চালু

মান ধরে রেখে হোক বাজার সম্প্রসারণ

জানা গেছে, বাংলাদেশ ছাড়া থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো একাধিক দেশ থেকে চিংড়ি আমদানি করে রাশিয়া। তবু এখানকার চিংড়ির প্রতি বাড়তি আকর্ষণ ছিল তাদের- চাষ পদ্ধতি, স্বাদ প্রভৃতি কারণে। সেজন্যই বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি রফতানির সিদ্ধান্ত নেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তবে কিছু দিন যেতে না যেতে সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানি বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয় দেশটিতে। আমাদের হিমায়িত চিংড়ির জন্য রাশিয়া একটি সম্ভাবনাময় বাজার। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা নেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে। তারই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ায় আবারো স্থানীয় হিমায়িত চিংড়ি রফতানির চালু হওয়ার খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। এটি নিঃসন্দেহে সুখবর। তবে এক্ষেত্রে যেমনই মনে হোক, চ্যালেঞ্জ কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। মতস্য অধিদফতর রাশিয়ার ভেটেরনারি কর্তৃপক্ষের মাঝে সমঝোতা চুক্তি সই হয়ে গেছে। রফতানিকারক আগ্রহ দেখালে আমদানিকারক পরিদর্শনপূর্বক সম্মতিপত্র গ্রহণ করবেন। মতস্য অধিদফতর নিশ্চিত করবে চালানের মান। তার মানে, এবার পণ্যের মানে কোনো সমস্যা দেখা দিলে রুশ ব্যবসায়ীরা সরাসরি মতস্য অধিদফতরের প্রতি অভিযোগ তুলতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে একই জটিলতা দেখা দিলে তা মেটানো দুষ্কর হবে। তাই সতর্ক থাকা দরকার।

ইউরোপ-আমেরিকার মানদণ্ডে চিংড়ি রফতানি করছি, রুশ মানদণ্ড কোন ছার- এমন মনোভাব কিন্তু রয়েছে একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর। এটি সযত্নে পরিত্যাগ করা প্রয়োজন। আমাদের নিজেদের প্রতি খুব একটা খেয়াল নেই বলে, অন্যরাও তাই- এটা ধরে নেয়াও আহাম্মকি বৈকি। এখানে অভিযোগ উঠলে অনেকে যেমন শীতের দেশ-গরমের দেশ প্রভৃতি নানা অর্থহীন বক্তব্য দেন- সেসব থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। রাশিয়া ধরে বেঁধে বাংলাদেশের কাছ থেকে চিংড়ি মাছ আদায় করছে না। অর্থের বিনিময়ে স্বভাবতই পণ্যের মান নিশ্চিত করতে চাইবে তারা। এক্ষেত্রে একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাকেও দেখা যায় দুর্বলতা দূরীকরণের পরিবর্তে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পক্ষে সাফাই গাইছেন। শুধু আমলা-ব্যবসায়ী অবৈধ যোগসাজশে তা ঘটচভহে, এ কথা মনে করার কারণ নেই। বরং এক্ষেত্রে দেশীয় ব্যবসায়ীদের প্রতি আমলাদের সহজাত সহানুভূতি থাকা খুবই স্বাভাবিক। কথা হলো, ব্যবসায়ীরা অনিয়মের আশ্রয় নিলেও তাদের সমর্থন দেয়া হবে কিনা? রাশিয়ায় কয়েক মাস টানা চিংড়ি রফতানি হয়েছে। এর পরই অভিযোগ আসতে শুরু করল কেন? উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনতেই কী রাশিয়ার মানদণ্ড অনুযায়ী পণ্য প্রক্রিয়াজাত করেন নি সংশ্লিষ্টরা? এসব প্রশ্নের সদুত্তুর পেতে হবে কর্তৃপক্ষকে। কেননা মূল দায়িত্ব যেহেতু মতস্য অধিদফতর নিয়েছে, রুশ কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহিও তাদেরই করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে সঠিক পথে চলার অভ্যাস গড়ে দেয়ার দায়িত্বও অন্য কারো নয়।

নতুন ভবনের অনুমোদনে ইটিপি

সর্বাধিক জোর দেয়া হোক বাস্তবায়নে

মুখে পরিবেশের প্রতি টান যত, কাজে তা এখানে কমই দেখা যায়। অবশ্য বাস্তবতা এর অন্যতম বড় কারণ। অন্তত ভৌগলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা বিচারে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিবেচনায় এ দেশে দূষণ ঘটা স্বাভাবিকও বটে। অস্বাভাবিক হলো, দূষণ রোধে আমাদের উদ্যোগের অভাব। পরিবেশ দূষণ রোধে আলোচনা-সমালোচনা কম হচ্ছে না, এক্ষেত্রে নতুন নতুন করণীয়ও পত্রপত্রিকায় উঠে আসছে একের পর এক। অথচ কাজে অগ্রগতি নেই। নানাভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের পর আজো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় শিল্প-কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট (ইটিপি) কার্যকর করা যায় নি। বোধকরি পরিবেশের ভারসাম্যের দিকে দৃষ্টি রেখে ব্যবসা কীভাবে বাড়ানো যায় সেটি আমরা ঠিক অনুধাবন করতে পারছি না কিংবা পারলেও চুপ মেরে আছি। দুটোই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। তবু দেশের অনেকেই কিন্তু আন্তরিকভাবে চান পরিস্থিতির উন্নয়ন হোক। এরই মধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর দেয়া এক বক্তব্য তাদের প্রত্যাশা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ইটিপি স্থাপন ছাড়া রাজধানীতে নতুন কোনো বাড়ি বা বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন দেবে না সরকার। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারলে অবশ্যই তিনি জনগণের অকুণ্ঠ সাধুবাদ পাবেন। তবে সে লক্ষণ এখনো স্পষ্ট নয়। উল্টো তিনি রাজধানীর ভবনগুলোয় ইটিপি স্থাপনের পেছনে দুর্গন্ধকে যেভাবে ভিত্তি করতে চেয়েছেন সেটি তেমন জোরালো নয়। তাছাড়া জমির মারাত্মক অপ্রতুলতায় ঢাকায় কয়েক সেন্টিমিটার স্থানের জন্য যেখানে বাড়িওয়ালারা অহরহ কোর্ট-কাচারিতে দৌড়ায় সেখানে কয়েক প্রতিবেশী মিলে একটি ইটিপি স্থাপনের পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত তা প্রশ্নের দাবি রাখে। তবু মন্ত্রীর বক্তব্যে ধন্যবাদ দেয়া প্রয়োজন। যেমনই তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছেন, জনগণের সেটিও কম বড় পাওয়া নয়।

রাজধানীর দূষণ নিরসনে নীতিনির্ধারকদের জরুরিভিত্তিতে মনোযোগ দেয়া দরকার। ভারতবর্ষ শাসনের দায়িত্ব নেয়ার প্রাক্কালে ব্রিটিশরা যথার্থই অনুধাবন করেছিল, ঔপনিবেশিক শাসকের পক্ষে ভিন দেশ শাসনের জন্য কেন্দ্রীকৃত ব্যবস্থাই উত্তম। পাকিস্তানি উপনিবেশের সময় এর কেন পরিবর্তন করা হয় নি, সেটিও বোধগম্য। শুধু মেনে নিতে কষ্ট নয়, স্বাধীনতা লাভের চার দশক পেরিয়ে যাওয়ার পর আজো উন্নয়ন বহুলাংশে রাজধানীমুখী, এমনকি বিভাগকেন্দ্রিকও নয়। এতে করে একদিকে দেশব্যাপী সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায় নি, অন্যদিকে চাপের পর চাপে ঢাকা হয়েছে জর্জরিত। এক্ষেত্রে বাঙালি অসহিষ্ণু জাতি, এ কথার প্রমাণ মেলে না। প্রমাণ মেলে আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দুর্বলতার। এর দায় রাষ্ট্রযন্ত্র এড়াতে পারেন না। কিছু ক্ষেত্রে ইচ্ছার অভাব তো ছিলই, রাজধানীর বাসোপযোগিতা নিশ্চিতে পরিকল্পনাগত দুর্বলতাও কম নেই। এক্ষেত্রে আরেকটি ঘাটতি, নাগরিক সচেতনতার অভাব। রাজধানীবাসীর গড় দায়িত্বশীলতা নির্ণয়ের জন্য বিরাট জরিপ চালানোর দরকার নেই, অলিগলিতে দু’মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলেও সেটি টের পাওয়া যায়। এমন প্রেক্ষপটে নতুন ভবন নির্মাণে ইটিপি স্থাপন নিশ্চিত করাটা এক বিপুল কর্মভার। তাই এখন থেকেই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। দেশে বহু প্রকল্প সময়মতো চালু হতে পারে না শুধু আইনের অভাবে। এ সুযোগে ইচ্ছাকৃত কালক্ষেপণও লক্ষ্যণীয়। বিষয়টি যেন এক্ষেত্রে না ঘটে, তার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। গতকালের বণিক বার্তায় খবর রয়েছে, এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্সে (ইপিআই) বাংলাদেশের অবস্থান এখনো তলানিতে। এর মাঝে বাতাস, পানি সম্পদ এবং পানি ও স্যানিটেশনে আমাদের অবস্থান দুশ্চিন্তা জাগানিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ ও অপর্যাপ্ত বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত ফল আসছে না। নতুন ভবনে ইটিপি স্থাপনের বেলায় এমনটি ঘটুক তা নিশ্চয় কেউ চাইবেন না।

চামড়া কারখানা সাভারে স্থানান্তরের প্রশ্ন

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে বিলম্ব নয়

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস, ৭ দিনব্যাপী পরিবেশ মেলা ও ৩ মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০১৪’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর হাজারীবাগ ট্যানারি দ্রুত সাভারে স্থানান্তরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের যে তাগাদা দিয়েছেন, তা দেশে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে ইতিবাচক ধারণারই জন্ম দেয়। প্রত্যাশা থাকবে, এ নির্দেশ বাস্তবায়নে দেরি করবেন না সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে আলোচ্য জোনে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি বর্জ্য পরিশোধন প্লান্টের (ইটিপি) কাজও এগিয়ে চলেছে বলে জানা যায়। সরকার যে শতভাগ কারখানায় ইটিপি চালু এবং তা কার্যকরের বিষয়ে সতর্ক সে কথা পুনর্ব্যক্ত করেলেন প্রধানমন্ত্রী। একেও সুলক্ষণ হিসেবে ধরে নেবেন সবাই। একই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, বিষয়টি যেন কথার কথায় পরিণত না হয়। পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের উপায় ও কলাকৌশল নিয়ে উন্নত বিশ্বেও অনেক বিতর্ক চালু আছে। স্থানীয় একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর মাঝে সেসব মাঝে মাঝে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতেও দেখা যায়। এক্ষেত্রে ট্যানারি শিল্পের উদাহরণটি আদর্শ হিসেবে মানেন কেউ কেউ। অথচ প্রসঙ্গ উত্থাপনের সময় অনেকেই ভুলে যান, উন্নত বিশ্বে পরিবেশ দূষণ রোধ সংক্রান্ত জটিলতাটি পর্যায়ের দিক থেকে অনেকাংশেই আমাদের চেয়ে কয়েক ধাপ ওপরে। আর আমরা এখনো হিমশিম খাচ্ছি দূষণ প্রতিরোধের প্রাথমিক কলাকৌশল বাস্তবায়ন করতে গিয়েই। ফলে এক্ষেত্রে নির্দেশনা মান্যে গাফলি দেখালে চলবে না।

গার্মেন্টসের বেলায় আমরা দেখেছি, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে চাপ বৃদ্ধির পরই কেবল স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পরিবেশ উন্নয়নে দৃষ্টি দেন। অথচ এ কাজটিই তাদের নিজ উদ্যোগে সম্পন্ন করার কথা ছিল। ট্যানারির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে বলে অনেকের অভিমত। একবার বলা হয়েছিল ২০১৪ সালের মধ্যে হাজারীবাগের সিংহভাগ ট্যানারি সাভারে চলে আসবে। এখন শোনা যাচ্ছে ২০১৫ সালের কথা। লক্ষ্যণীয়, ২০১৫ সালের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ইটিপি নির্মাণ শেষ হবে। কিন্তু এ সময়ের মাঝে যদি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কারখানা সাভারে না যায়, ইটিপির সুষ্ঠু পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ তো আছেই, পরিবেশ দূষণ রোধে আরেকটি ভরসার জায়গা হলো, ইউরোপের অনেক ক্রেতা ইদানীং নাকি পরিবেশের প্রতি উদাসীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য কিনতে চাইছেন না। এক্ষেত্রে অলিখিত আল্টিমেটাম রয়েছে বলেও জানা যায়। এমন প্রেক্ষাপটে সাভারে যেতে ট্যানারিগুলো নিজেই উৎসাহ দেখাবে বলে মনে হয়। এর পরও একাধিক ট্যানারি ব্যবসায়ী সাভারে কারখানা স্থানান্তরের অন্যতম জটিলতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থায়নকে। সেক্ষেত্রে দাবিকৃত অর্থ আসলেই প্রয়োজন কিনা এবং প্রয়োজন হলে কীভাবে ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা দেয়া যায় সেসব বিষয় আগে থেকেই ভেবে রাখা উচিৎ। অনেক হয়েছে, এখন আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে দেরি নয়।

রেমিট্যান্স পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তা

প্রবাহ বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

গত অর্থবছরের ১২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে চলতি অর্থবছরের (২০১৩-১৪) এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসী আয় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে বলে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। শুধু বৈদেশিক আয় হ্রাস নয়, বিষয়টি কয়েক দিক থেকেই আমাদের জন্য দুশ্চিন্তাদায়ক। কেননা প্রবাসী আয়ের ওপর স্থানীয় অর্থনীতির বিপুল নির্ভরশীলতা রয়েছে। ফলে এক্ষেত্রে সামান্য ওঠানামাও ব্যাপক পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারে। আবার ২০১১ সালে যেমন বিশ্বজুড়ে ‘বসন্তে’র প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল, ২০১২-১৩ অর্থবছরে তার প্রভাব অনেকটাই কমে আসে; তুলনামূলকভাবে আরো শান্তির বছর হলো ২০১৩-১৪ বছর। অথচ এর মধ্যেও বাংলাদেশমুখী রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমেছে। হতে পারে, অভ্যন্তরীণ গোলযোগপূর্ণ রাজনৈতিক আবহাওয়ায় খুব বিদেশ থেকে অর্থ পাঠানোয় তেমন আস্থা পান নি প্রবাসীরা। এর মাঝে একাধিক বড় সামাজিক উৎসব পার হয়েছে, হুন্ডির মাধ্যমেও কিছু অর্থ নিশ্চয়ই এসেছে বিদেশ থেকে। তবু সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে রেমিট্যান্স প্রবাহের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে বলে প্রতীয়মান। স্বভাবতই বিষয়টি অর্থমন্ত্রীকে ভাবাচ্ছে বলে তিনি কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি, নতুন শ্রম উইং খোলা ও দক্ষ উন্নয়ন তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছেন বলে গতকালের বণিক বার্তার খবরে প্রকাশ। প্রত্যাশা থাকবে, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ধরে সংশ্লিষ্টরা রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।

সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের বৈধ করতে গিয়ে নাকি সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে। বাস্তবতাও এমনটি হয়ে থাকলে, বলতে হয়- এক্ষেত্রে সময়োচিত পদক্ষেপে নেয়া গেলে ব্যয় সাশ্রয় হতো। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, এমনকি বৃহত্তম শ্রম বাজারের প্রতি আমাদের কূটনীতিকদের নজর কেমন! সন্দেহ নেই, শ্রমবাজার সম্প্রসারণে যে মাত্রায়ই হোক সাফল্য রয়েছে আমাদের। প্রচলিত বাজার সম্প্রসারণ ও সম্ভাবনাময় বাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কূটনৈতিক সক্রিয়তা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। যেখানে স্থিতিশীল বাজার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে গিয়েই হিমশিম খায় তারা, সেখানে অত্যন্ত গতিশীল ও আধুনিক আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে তারা কতটা সুবিধা করে উঠতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তদুপরি এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিতে পারে। জিটুজি পদ্ধতিতে শ্রমিক রফতানি বেড়ে উঠলে তার নেতিবাচক চাপ পড়বে বেসরকারি খাতের ওপর। এদিকে স্পষ্টই বেসরকারি খাতে রয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠার দুর্বলতা। তবু এর বিকল্প ব্যাপকভাবে সরকারি খাতে শ্রমিক রফতানি হতে পারে না। বরং বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে শ্রমিক রফতানি বাড়ানোর জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে বাস্তবায়নের রেকর্ড ভালো নয়, পরিকল্পনাগত দুর্বলতাও স্পষ্ট। এ পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত মনোযোগ বাড়ানো দরকার। কোনো কারণে মধ্য মেয়াদেও যদি রেমিট্যান্স প্রবাহ লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে যায়, সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সেটি কিন্তু তীব্র প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর

অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনুক

কুনমিংয়ের এক কনফারেন্স সেন্টারে চায়না-সাউথ এশিয়া বিজনেস ফোরামের ভাষণে জাতীয় সমৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে চীনকে গুরুপূর্ণ অংশীদার হিসেবে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। সবাই চাইবেন, এতে সাড়া দেবে চীন। দেশটি আমাদের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার এবং তার আয়তন ক্রমাগতভাবেই বড় হচ্ছে। ইদানীং স্থানীয় অবকাঠামো নির্মাণেও বাড়ছে তাদের উপস্থিতি। মান বজায় রেখে ব্যয় সাশ্রয়ী হলে এ নিয়ে অভিযোগের কিছু নেই। তবু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নিজ প্রয়োজন, সক্ষমতা ও অন্যের দেবার ক্ষমতা ও আগ্রহ বিবেচনায় নিয়েই অগ্রসর হওয়া উচিৎ। অতীতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের ভূমিকা নিয়ে অপরিপক্ক উচ্ছ্বাস যেমন দেখা গেছে; তেমনি এক সময় দেশটির প্রতি উপেক্ষাও কম দেখানো হয় নি। জনগণ আশাবাদী হতে চাইবেন এটি দেখে যে, অতীতে দ্বিপক্ষীয় অনেক সিদ্ধান্তই রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া হলেও ক্রমেই অর্থনীতি হয়ে পড়ছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এর ধারাবাবিকতা বজায় রাখতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়েও বাস্তবসম্মত চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। অর্থনীতিক দিক থেকেও সহজবোধ্য কারণে চীনের কাছে ভারতের চেয়ে অধিক গুরুত্ব পাব না আমরা। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবার পর নরেন্দ্র মোদি কোন দেশ সফর করবেন, সে বিষয়ে ঢাকা থেকেও আবদার তোলা হয়েছে বলে শোনা যায়। লক্ষ্যণীয়, লি কেকিয়াং চীনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে যান ভারতে। এক্ষেত্রে ভারত কী করে সে আগ্রহ নিশ্চয়ই রয়েছে তাদের। বিষয়টি ভারতের মাথায় নেই সেটিও ভাবা ভুল হবে না। স্পষ্টত অর্থনৈতিক ইস্যুতেও গুরুত্বের এমন বিভেদ রয়েছে। সেটি বুঝেই আমাদের কূটনৈতিকদের অগ্রসর হওয়া দরকার। চীনা নেতৃত্বের দূরদৃষ্টির প্রশংসা শোনা গেল আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে। এর কিছু প্রতিফলন তো নিজেদের মাঝেও থাকা দরকার।

সফরকালে কয়েকটি বড় প্রকল্পে চীনের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ; যার মাঝে পটুয়াখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাজশাহীতে পানি বিশোধন কেন্দ্র, কর্ণফুলি নদীর নীচ দিয়ে বহুলেন টানেল, রামু-ঘুনধুম ডুয়েল গজ রেললাইন স্থাপন প্রভৃতি। মনে হয়, এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনোভাবই দেখাবে দেশটি। তবে খাতা-কলমে তুলনামূলক বিশ্লেষণপূর্বক পরিষ্কার বুঝ থাকা দরকার, ঠিক কোথায় কোথায় চীনের সহায়তা চাই আমরা। নইলে একসঙ্গে অনেকখানে সহায়তা চাওয়ায় আসলে প্রতিটি বিষয়েরই গুরুত্ব কমে যায় খানিকটা। চলতি সফরে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ নিয়ে নাকি সিরিয়াস আলোচনা হতে পারে। এ বিষয়ে চীনেরও আগ্রহ রয়েছে স্বভাবতই। তবে কেউ কেউ মনে করেন, অভ্যন্তরীণ নানা অবকাঠামোর পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাসের মতো খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা চাওয়া যেতে পারে। দেশটির কিন্তু এ বিষয়ে দক্ষতা ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞান রয়েছে বলে প্রতীয়মান।

টিকেট ব্লক

বিধি প্রয়োগে কঠোর হোন

কোটা পদ্ধতি সারা বিশ্বেই চালু রয়েছে কমবেশি। অপেক্ষাকৃত নাজুকদের সহায়তা জোগানোর এ পদ্ধতির উপকার রয়েছে বিধায় কোথাও এর বিলোপের কথা শোনা যায় না সেভাবে। তবে আমাদের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। এখানে অভিযোগের সঙ্গে কোটার প্রসঙ্গ উঠলেই কোটা বাতিলের দাবি ওঠে। তার কারণটা স্পষ্টত কোটার চেয়ে বেশি কোটার ব্যবহার। এ দেশে একশ্রেণীর ক্ষমতাবান (হোক তিনি সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী বা রাজনৈতিক নেতাকর্মী) কর্তৃক কোটার যথেচ্ছ অপব্যবহার দেখা যায় প্রায় সর্বত্রই- চাকরিতে নিয়োগ থেকে শুরু করে রেলের টিকেট পর্যন্ত। রেলের টিকেট কীভাবে একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দখলে চলে যায়, সেটি নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। তাতে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। জানা যাচ্ছে, ২৭টি আন্তঃনগর ট্রেনে দৈনিক প্রায় ১৩ হাজার আসনের মাঝে ৬৫ শতাংশ টিকেট কাউন্টার থেকে বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ। লক্ষ্যণীয়, এক অর্থে ট্রেনের টিকেটে কোটা বেশি নয়, মাত্র ১০ শতাংশ- ভিআইপি ও রেলওয়ে স্টাফ মিলিয়ে। টিকেটের ২৫ শতাংশের মতো বিক্রি হয় অনলাইনে। নিঃসন্দেহে সাধারণ যাত্রীরাই এর ক্রেতা। তবু উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ টিকেট ব্লক। আত্মীয়-স্বজন অথবা অনুরোধ পূরণে অধিকাংশ সময়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টিকেট ব্লক করে রাখা হয় একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা ও রেলওয়ে স্টাফের অনুরোধে। কর্তাদের চালুকৃত এ অনুশীলনের বিকাশ ঘটিয়েছেন একশ্রেণীর কর্মচারী। তারা বিষয়টিকে নিয়মিত চর্চায় নিয়ে এসেছেন, ব্লকপূর্বক টিকেট কালোবাজারির মাধ্যমে। রেলওয়ে স্টাফরা টিকেটের কালোবাজারকে ছিন্নমূল বলে অভিহিত করে এলেও নানা গবেষণা-নিরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, একশ্রেণীর রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ‘আশীর্বাদ’ না থাকলে এহেন কর্ম সম্পাদন করা সম্ভব নয়। এমন ব্যাধির আশু প্রতিকার কাম্য। সেজন্য ওষুধ তথা বিধির ঘাটতি নেই। ফলে সবাই চাইবেন এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থান দেখতে।

বিধান রয়েছে, কোটায় বরাদ্দকৃত টিকেট নির্ধারিত সময়ের মাঝে বিক্রি না হলে সেটি উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এ নিয়ম নাকি মানা হয় না। তার প্রতি যথাযথ দৃষ্টিপাত প্রয়োজন। কালোবাজারি রোধে প্রাথমিক অবস্থায় টিকেটে যাত্রীর বয়স ও লিঙ্গভেদ এবং পরবর্তী সময়ে নাম যুক্ত করা হবে বলে জানা যায়। একই উদ্দেশ্যে অগ্রিম টিকেট প্রদানের সময় ১০ দিনের পরিবর্তে যাত্রার আগের ৫ দিন করা হতে পারে। এ দুটি অভিজ্ঞতা খতিয়ে দেখে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি রোধের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা দরকার। আর টিকেট ব্লকের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। নইলে একশ্রেণীর ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত এ ধরনের ছোট-খাট কিন্তু ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী অনিয়মের অবসান ঘটানো কঠিন।

পাওয়ারকার থেকে তেল পাচার

জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে

বিভিন্ন স্টপেজে বিশেষ পাইপের মাধ্যমে মজবুত পলিথিন ব্যাগে ভরে আন্তঃনগর ট্রেন থেকে তেল পাচার নতুন কোনো ঘটনা নয়। শুরুতে এমন অভিযোগ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রায়ই অস্বীকার করে এলেও দেরিতে তাদের টনক নড়ে। এক পর্যায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয় গত সংসদের সংশ্লিষ্ট স্থায়ী কমিটি। ক্রমে প্রতীয়মান হয় যে, বিষয়টিকে যতটা তুচ্ছ ভাবা হয়েছিল প্রকৃত অবস্থা মোটেও তেমন নয়। বরং এক্ষেত্রে একাধিক সক্রিয় চক্র জড়িত যাদের ক্ষমতা রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং তার বাইরে। বছরখানেক আগে বণিক বার্তায় প্রকাশ এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যতটুকু তেল চুরি হয়ে যায় তা বিক্রি থেকে কমপক্ষে ১০-১৫ শতাংশ বখরা পান একশ্রেণীর ট্রেন চালক। এটি তাদেরই ভাষ্য। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত সংখ্যাটি কত, তা জড়িতরা ভালো বলতে পারবেন। পরবর্তী পর্যায়ে এর লাভের অংশ পান চোর, বিক্রেতা এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের একশ্রেণীর সদস্য। এরা নাকি এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন যে খোদ রেল কর্তৃপক্ষের অনেকে তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পর্যন্ত সাহস পান না। বলা যায় তারই ধারাবাহিকতায় গতকালের পত্রিকায় আরেকটি খবর ছাপা হয়েছে। আমাদের হিলি প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, দিনাজপুর পার্বতীপুর সেকশনে আন্তঃনগর ট্রেনের পাওয়ারকার থেকে কৌশলে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ ডিজেল পাচার হচ্ছে। এক্ষেত্রে সন্দেহভাজনরা অবশ্য পুরনো ‘টেকনিকে’ যান নি। তারা নিয়মিতভাবে কিন্তু অল্প অল্প করে তেল ‘চুরি’ করে সুবিধামতো সময়ে পাচার করে দিচ্ছেন কিছু নির্দিষ্ট স্টেশনে। স্বভাবতই এতে ট্রেনে তেলের চাহিদা গেছে বেড়ে। যথারীতি রাজনীতির ময়দানের মতোই কিছু কৌতুককর যুক্তি শুনতে হচ্ছে। একদল বলছেন, ট্রেন দেরি হয় বলে ডিজেল বেশি লাগছে। আরেকদল বলছেন, ট্যাংকে ছিদ্র থাকায় তেল রাখা হচ্ছে ব্যারেলে। তৃতীয় দল দোষ দিয়েছেন ড্রাইভারদের। আরো মজার বিষয়, তেল চুরির ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণের কারণেই কিনা কে জানে, খুব বেশি দূরে গিয়ে সেভাবে তেল বিক্রি হচ্ছে না। বরং অনেক সময় খাওয়ার গাড়ির পরিচালকদের কাছেই বিক্রি হচ্ছে সেটি!

জনগণের অর্থের এমন অপচয়ের দ্রুত অবসান কাম্য। সেজন্য তদন্তপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সেজন্য জড়িত রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আশু ব্যবস্থা নেয়া দরকার। পাশাপাশি ভেঙ্গে দিতে হবে তেল বিক্রেতা চক্র। বছরখানেক আগে রেলওয়ের চুরি যাওয়া তেল যাতে অন্যত্র ব্যবহার হতে না পারে সেজন্য এক্ষেত্রে বিশেষ রঙ ব্যবহারের জন্য আহ্বান জানানো হয় বিপিসির প্রতি। বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখা যায় নি তেমন। প্রত্যাশা থাকবে, এসব সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে রেলের তেল পাচার ঠেকাতে অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ।

ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ গমন

প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিন

চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিতকরণ ও গ্রেফতারে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিল মালয়েশিয়া সরকার। তাতে কয়েকশ’ বাংলাদেশী ধরাও পড়েন। এ ধরনের অভিযান সাধারণত কয়েক মাস বা বছর পর পর চালানো হয়ে থাকে। ওতে উৎসাহিত হয়েই কিনা কে জানে, সম্প্রতি অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টার খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তাসহ পত্রপত্রিকায়। জানা গেছে, পাচারকারীদের সঙ্গে ট্রলারে চড়ে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মধ্য দিয়ে কয়েকশ বাংলাদেশীকে উদ্ধার করা হয়েছে যাদের মাঝে একাধিক পাচারকারীও রয়েছেন। যাত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ২০ দিন ধরে তাদের সাগরে রেখে দেন পাচারকারীরা। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ কয়েকজন পাচারকারীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লে আরেকটি নৌযান থেকে তাদের গুলি করা হয়। তাতে ৫ জনের প্রাণহানির পাশাপাশি অর্ধশতাধিক ব্যক্তির আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধারকারীদের একজন আবার বলছেন, বিকল হয়ে নৌযানটি মিয়ানমারের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করাতেই হয়েছে গুলিবর্ষণ। খেয়াল করার মতো বিষয়, কিছুদিন আগেও এভাবে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যেতে বেশি দেখা যেতো রোহিঙ্গাদের। সাম্প্রতিক ঘটনায় যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের সিংহভাগই চট্টগ্রাম অঞ্চলের নন; বরং যশোর, বগুড়া প্রভৃতি জেলা থেকে আগত। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশ গমন বিষয়ে যথাযথভাবে সারা দেশে জনসচেতনতা তো বাড়াতেই হবে, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ শ্রম বাজারে অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোযোগ বৃদ্ধি প্রয়োজন। সরকারের দায়িত্ব বিদেশে জনশক্তি রফতানি নয়, বরং গ্রহণযোগ্য উপায়ে যেন জনশক্তি রফতানি হতে পারে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা। বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেছেন বৈকি। তবু এক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

লক্ষ্যণীয়, দীর্ঘ সময় জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকার পর ক’বছর আগে বর্তমান শাসক দলের আগের শাসনামলে জিটুজি পদ্ধতিতে সরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো পুনরায় শুরু হয়। মনে রাখা দরকার, স্থানীয় একশ্রেণীর রিক্রুটিং এজেন্সির নানা অপচর্চায় অতিষ্ঠ হয়েই মূলত মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানি স্থগিত করে। পরবর্তী সময়ে এর সঙ্গে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের ইস্যুটি যে খানিকটা হলেও যুক্ত হয় সে কথাও বলতে হবে। যাহোক, সরকারের সক্রিয়তায় আমাদের অন্যতম বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানো আবার চালু করা গেছে। শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে ব্যয় সাশ্রয়ী উপায়ে ও যেভাবে জনশক্তি রফতানি করা যাচ্ছে, সেটিও অনেকের নজর কেড়েছে। সমস্যা হলো, জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া গমন সংকুচিত হয়ে পড়েছে এবং সেটি মোটেই অস্বাভাবিক নয়। সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে আমাদের ভাগ সম্প্রসারণ করা যাবে কিনা, তার কিছু অংশ আমাদের ওপর নির্ভর করে। যেমন- সম্ভাবনাময় শ্রম বাজার অনুসন্ধান। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা যে উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নিয়েছেন সেগুলোকে একজন পাশ্চাত্য পণ্ডিতের অনুকরণে ‘এ ভেরি লিটল বেটার দ্যান ননসেন্স’ ভিন্ন অন্য কিছু হিসেবে অভিহিত করতে রাজি নন কেউ কেউ। বাকি অংশ যেমন- সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারের অভিবাসন নীতি প্রভৃতির ওপর আমাদের কোনো হাত নেই। এমন পরিস্থিতিতে বৈদেশিক বাজারে যতটুকু সুযোগ রয়েছে সেটি ব্যবহার করতে হবে। একই সঙ্গে দৃষ্টি দিতে হবে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে। মানুষ হঠাৎ করে বেপরোয়া হয় না। এক্ষেত্রে তার জন্য সুযোগ না রেখে কেবল জনসচেতনতা বাড়িয়ে আশানুরূপ ফল মিলবে না। কর্তৃপক্ষের বিষয়টি মাথায় আছে নিশ্চয়ই।

ফলন পার্থক্য হ্রাসে

উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম জোরদার করুন

বাড়তি জনসংখ্যার অধিক খাদ্য চাহিদা মেটানোর প্রশ্ন তো আছেই, কৃষি জমির ওপর শিল্পায়নের চাপও কিন্তু কম নেই দেশে। বলার অপেক্ষা রাখে না, পর্যাপ্ত জমির অভাবে এখানে আবাসনের জন্যও অনেক ক্ষেত্রে কমছে কৃষি জমি। মূলত এ দুটি অর্থাৎ আবাসন ও শিল্পায়নের ব্যাপক চাপ এখনো রয়েছে কৃষি উৎপাদনের ওপর। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দেয়া গেছে উন্নততর পদ্ধতি ব্যবহারপূর্বক বর্ধিত কৃষি উৎপাদনের সহায়তায়। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অব্যাহত প্রচেষ্টা ধন্যবাদযোগ্য। এখন থেকে কৃষিতে ভারসাম্যপূর্ণভাবে অধিক উৎপাদন নিশ্চিতকরণে দৃষ্টি দেয়া উচিৎ তাদের, প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা মোটামুটি অর্জিত হয়েছে- এটা ধরে নিয়ে। এরই মধ্যে ফলন পার্থক্য হ্রাসের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির এক নতুন খবর রয়েছে শুক্রবারের বণিক বার্তায়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণার ভিত্তিতে আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, কৃষি জমিতে শুধু ফলন পার্থক্য হ্রাস করা গেলেও বিপুলভাবে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। গবেষণাটি ২৫ জেলার ৭৫টি উপজেলায় আমন ও বোরো ধানে ৩ বছর মেয়াদি এক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হয়। নমুনা অনুযায়ী এর গুরুত্ব অস্বীকারের উপায় নেই। বরং সবাই চাইবেন, এ ধরনের গবেষণা অন্যান্য ফসলের বেলায়ও চালানো হোক এবং বিষয়টিকে দ্রুত আমলে নিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে তার প্রতিফলন ঘটাবে কর্তৃপক্ষ।

গবেষণায় উঠে এসেছে, অনেক সময় মৌসুমভিত্তিক উচ্চ ফলনশীল ধান জাত নির্বাচন এবং সঠিক সময়ে বীজ বপন ও চারা রোপণ করতে পারেন না কৃষক। তদুপরি সমস্যা রয়েছে সুষম সার প্রয়োগ ও পানি ব্যবস্থাপনা, আগাছা, রোগবালাই ও পোকা দমন এবং ৮০ শতাংশ পরিপক্কতায় ফসল কাটার সঠিক সময় এবং মাত্রা নির্ধারণ নিয়েও। সহজে অনুমেয়, এমন প্রবণতা শুধু আমন আর বোরো নয় কৃষির সর্বত্রই বিদ্যমান। এদিকে ব্রির পরিচালক জানাচ্ছেন, ফলন ঘাটতি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা গেলে ১ কোটি টন বাড়তি খাদ্য উৎপাদন সম্ভব। সামগ্রিকভাবে ব্যবধানটি কমিয়ে আনা গেলে কৃষি পণ্য উৎপাদনে বিরাট পরিবর্তন ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। তাই যথাযথভাবে গবেষণা চালানো দরকার, সব ধরনের ফসলে ফলন ব্যবধান কতটা রয়েছে, সেটি হ্রাস পেলে লাভ কেমন হবে সেবং সেজন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কৃষিতে অধিকতর গবেষণার পাশাপাশি কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম জোরদার করা দরকার। সে লক্ষ্যে প্রদর্শনী আয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে; দরকার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাড়ানোও। সঠিকভাবে সচেতনতা বাড়ানো গেলে আমাদের কৃষকরা কাঙ্ক্ষিত ফল এনে দেবে বলে ভরসা রেখেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। কৃষি মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেবে বলেও তাদের বিশ্বাস।

রুট জটিলতায় অনিশ্চিত অর্থায়ন

সমন্বয়ের অভাব দূর হোক

মূলত রাজধানীবাসীর জন্য যানজটমুক্ত, দ্রুত ও নিরাপদ পরিবহন সেবা জোগাতেই গুরুত্ব বাড়তে থাকে ২০ বছর মেয়াদি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি)। এর আওতায় রাখা হয়েছে তিনটি বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণ। এরই মধ্যে ক্লিন এয়ার সাসটেইনেবল এনভারনমেন্ট (কেস) প্রকল্পের আওতায় ২০১০ সালে পরিকল্পিত বিআরটি-১-এর সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করেছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। তাতে ব্যয় কেমন হতে পারে, অর্থায়ন কারা সরবরাহ করতে পারেন- সে বিষয়েও পরিকল্পনা এগিয়েছে বিশদভাবে। সমস্যা হলো, বিআরটি-১ এর রুট নিয়ে বড় জটিলতা সৃষ্টির খবর রয়েছে গতকালের। রুটটি মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের সঙ্গে স্পষ্টত সাংঘর্ষিক। লক্ষ্যণীয়, প্রস্তাবিত রুটে দেখা যাচ্ছে বিমানবন্দর সড়ক থেকে মহাখালী, সাতরাস্তা, মগবাজার, মৌচাক, গুলিস্তান হয়ে সদরঘাট যাবে বিআরটি-১। মাঝে হাতিরঝিলেও এর একটা স্টপেজ থাকার কথা পরিকল্পনা মোতাবেক। এটি নির্মাণ করতে গেলে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নকশায় পরিবর্তনা আনা প্রয়োজন। সেখানে সমস্যা হলো, ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ চলছে এবং সেটি নির্মাণ হচ্ছে বিদেশী সহায়তায়। তার মানে, এখানে পরিবর্তনা আনতে চাইলে দাতাদের অনুমতি লাগবে। এমনিতেই ভূগর্ভস্থ পরিষেবা সংযোগ লাইন থাকায় ফ্লাইওভারটির নকশায় আংশিক পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানা যায়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা নকশায় আরো কতটা পরিবর্তন আনতে দেবেন, সেটিও এক বড় প্রশ্ন। সাতরাস্তা থেকে মৌচাকে সড়ক বেশ সংকুচিত। সেখানে বিআরটি-১-কে পৃথক লেন দেয়া সম্ভব নয়। চার লেনের ফ্লাইওভারেও একে যুক্ত করা কঠিন বৈকি, বাকি থাকে বিকল্প রুট। সেক্ষেত্রে বিমানবন্দর সড়ক থেকে মহাখালী আসার পর রুটটি নিয়ে যেতে হবে বিজয় সরণি, ফার্মগেট, শাহবাগ, গুলিস্তান হয়ে সদরঘাট পর্যন্ত। এদিকে ফার্মগেট থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রয়েছে মেট্রোরেলের রুট। ফলে এখানে বিআরটি-১ যুক্ত করা হলে সংকুচিত সড়কের ওপর পড়বে বাড়তি চাপ। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত জটিলতার নিসরনই কাম্য। নইলে প্রথমত বিশ্বব্যাংকসহ দাতাদের আর্থিক সহায়তা কাঙ্ক্ষিত সময়ে মিলবে না। আমাদের প্রতিবেদক এক্ষেত্রে ঋণ প্রাপ্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার খবর দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত. যত সময় যাবে, ততই বাড়বে বিআরটি নির্মাণের ব্যয়। উভয় পরিস্থিতিই মারাত্মক যানজটে ভুগতে থাকা রাজধানীবাসীর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়।

শুধু নগর পরিকল্পনা কেন, আমাদের এ মানসিক দৈন্যের দেখা মেলে অন্যান্য ক্ষেত্রেও। সব পরিকল্পনায় সমন্বয়গত দুর্বলতা একবারে কাটিয়ে ওঠার প্রত্যাশা করা বাস্তবসম্মত নয়। তাই অগ্রাধিকার নির্ধারণপূর্বক এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজধানীরবাসীর প্রত্যাশা থাকবে, বিআরটি রুট জটিলতা নিরসনে দ্রুত মনোযোগ দেবে কর্তৃপক্ষ। বস্তুত যথা সময়ে এসটিপির বাস্তবায়ন না হলে বিপুল চাপ পড়তে পারে রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থার ওপর।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা

সুলভে বিস্তৃত হোক সর্বত্র

জানা যায়, দেশে মোবাইল আর্থিক সেবা চালু হয়েছে ২০১০ সালে। বাজারে চাহিদা থাকায় মোটামুটি কম সময়েই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে কার্যক্রমটি। এতে স্বভাবতই মোবাইল ব্যাংকিং চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার আবেদন জানায় স্থানীয় ব্যাংকগুলো। তার মাঝে ২৮টি ব্যাংক অনুমোদন পেলেও এখন পর্যন্ত ২০টির অধিক সংখ্যক ব্যাংক নাকি মোবাইল আর্থিক সেবা চালু করতে আগ্রহী নয়। কেন নয়, তার একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় গতকালের বণিক বার্তায় প্রকাশ প্রতিবেদন থেকে। তাতে বলা হয়েছে, সেলফোন সেবা যেহেতু মোবাইল আর্থিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনার মূল অবকাঠামো, সেহেতু সুযোগটি নিতে চাইছেন একশ্রেণীর সেলফোন অপারেটর। এক্ষেত্রে মুনাফা ভাগাভাগি নিয়ে নীতিমালা না থাকায়ও ইচ্ছামতো মাশুল আদায় করছে অপারেটররা। আমাদের প্রতিবেদকের দেয়া তথ্যমতে, নামকরা এক অপারেটরের সঙ্গে আনস্ট্রাকচারড সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস ডাটা (ইউএসএসডি) ব্যবহার বিষয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের ৭ শতাংশ মাশুল আদায়ের শর্তে চুক্তি হয়, যেখানে একই অপারেটর একই সেবা প্রদানের জন্য আরেকটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে ৮ শতাংশে! শুধু তাই নয়, ৩০ শতাংশ মাশুলেও নাকি চুক্তি করেছে কোনো কোনো। এতে গ্রাহক প্রান্তে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণে বাড়তি ব্যয়ের দুশ্চিন্তা তো থাকছেই, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মাঝে দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ বজায় রাখার ইস্যুটিও অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। এমন অভিযোগ কিন্তু শোনা যায় যে, বাজারে শুরু দিকের একাধিক খেলোয়াড় এখন পরোক্ষভাবে মাশুল বৃদ্ধির জন্য অপারেটরদের দিয়ে চাপ দিচ্ছেন যাতে নতুনরা এসে তাদের লাভের ভাগ কমিয়ে দিতে না পারে। এমন পরিস্থিতিতে চলমান জটিলতা নিরসনে দ্বিধা করা চলে না।

লক্ষ্যণীয়, মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয়তা অর্জনের প্রাথমিক পর্যায়ে কার্যক্রমটিতে শক্তভাবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) যুক্ত রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানানো হয় বণিক বার্তার সম্পাদকীয়তে। যথাসময়ে সেদিকে মনোযোগ দেয়া গেলে আজ হয়তো সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সেলফোন অপারেটর সংগঠন অ্যামটবের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের ভাবনা ভাবতে হতো না কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। স্পষ্টত অন্তত নীতি নির্ধারণে দূরদর্শীতার বিকল্প নেই; বিচক্ষণতাও এখানে অপরিহার্য। সবাই প্রত্যাশা করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার সময় উভয় গুণেরই প্রমাণ দেবে। সব ব্যাংকের সঙ্গে অপারেটরদের চার্জের হার একই হতে হবে- এটিও এখানে কেন্দ্রীয় বিষয় নয়। মূল বিষয় হলো, সেলফোন অপারেটরদের ব্যবসা ডাটা সেবা দেয়া, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নয়। অপারেটরের কাছ থেকে ইউএসএসডি ডাটা নিয়ে ব্যবহার করবে না ফেলে রাখবে সেটি ব্যাংকের বিষয়। এটি তাদের বাড়তি মুনাফা অর্জনের সুযোগ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না।

বাড়ছে কক্সবাজারের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নই প্রত্যাশিত

আমাদের অন্যতম পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বর্ধিষ্ণু অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে বণিক বার্তার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের শেষ পর্ব প্রকাশ হয়েছে গতকাল। এতে গৃহীত একাধিক ইতিবাচক প্রকল্প বা কর্মসূচি ও বাস্তবায়নে নানা দুর্বলতাও উঠে এসেছে সমানভাবে। সুখবর যে, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর ও মহেশখালীতে কয়েক হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান সরকারের। ফলে কক্সবাজারের অর্থনীতি আর শুধু পর্যটন, চিংড়ি বা লবণ চাষের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল থাকছে না। স্থানীয় পর্যায়ে এভাবে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করাটা টেকসই উন্নয়নের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। বস্তুত কক্সবাজার ব্যবহারপূর্বক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধির বড় কৌশলগত সুযোগ রয়েছে; যার সিংহভাগই দীর্ঘ সময় উদ্ঘাটনের প্রচেষ্টা নেয়া হয় নি কিংবা হলেও যেনতেনভাবে হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনায় সমন্বয়ের অভাবও কম নেই। আমরা সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর চাইছি অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে খুব একটা তাড়া নেই যেন। এ ধরনের সতর্কতা অর্থনীতির স্বার্থেও কাটিয়ে ওঠা উচিৎ সরকারের। এক কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে তাদের যেসব পরিকল্পনা রয়েছে, সেগুলোর প্রশংসা করতে হবে। পাশাপাশি এও স্মরণ রাখা দরকার, যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল দিতে সক্ষম হবে না প্রকল্পগুলো।

পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ সেটিকে আমলে নিয়েছে বলেও ধারণা। সেজন্য বোধহয় ইদানীং দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধি দল বিদেশে গেলেই তারা পর্যটন শিল্পের নানা দিক তুলে ধরছেন। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও জরদার করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে শুধু তট হয় সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে কক্সবাজার জুড়ে, বিশেষত যেখানে পর্যটকরা সাধারণত যান বা যেতে উৎসাহিত হবেন এমন সব স্থানে। পর্যটনকে কেন্দ্রে রেখেই কক্সবাজারের উন্নয়নে দৃষ্টি দিতে হবে। এ লক্ষ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে দ্রুত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করা দরকার। প্রকল্পটি সঠিক ছিল কিনা, সে বিতর্ক এখন অর্থহীন। সরকার যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের কাছ থেকে আশানুরূপ কাজই তাই দেখতে চাইবে জনগণ। আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, এরই মধ্যে দখলদারদের হাতে চলে গেছে বিমানবন্দরের আনুমানিক ৩০ শতাংশ জমি। একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরের আশেপাশে বিভিন্ন স্থাপনা রাখার যে নিয়ম মেনে চলা হয় তারও নাকি ব্যত্যয় ঘটছে সেখানে। ভবনের উচ্চতার প্রতি খেয়াল নেই অনেক বাসিন্দার। আবার অর্থ ব্যয় করতে হবে বলে বিশেষ বাতিও স্থাপন করছেন না তারা। বড় কথা হলো, এক্ষেত্রে প্রশাসনিক উদ্যোগ প্রয়োজনের তুলনায় কমই। আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে মোটামুটি একই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে স্থানীয় হোটেল-মোটেলের বর্জ্য পরিশোধনের বেলায়ও। অন্যান্য খাতের মতো এখানেও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী হয়তো চাইছেন, কষ্টকর উদ্যোগগুলো সরকার নিক, তারা শুধু মুনাফা তুলে নেবেন। তাদের এ ধরনের প্রবণতা থেকে ফিরিয়ে এনে সুষ্ঠুভাবে কক্সবাজারের সার্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিকাশের পথ করে দিতে হবে সরকারকে।

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল

জটিলতা-সমন্বয়হীনতা দূর হোক

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) চালু নিয়ে ‘১৫ বছরের দীর্ঘসূত্রতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। জানা যায়, আলোচনা পর্যায়ে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থায়নের কথা ভাবা হলেও পরবর্তী সময়ে প্রেক্ষাপট বিচার-বিশ্লেষণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এনসিটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিকল্পনা মতে, সেখানে প্রাথমিকভাবে আনুমানিক দেড় হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে; কনটেইনার হ্যান্ডল করা যাবে বার্ষিক ১৫ লাখের বেশি এবং গোটা কার্যক্রম থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকা আয় করবে। এনসিটি চালুর জন্য যে স্থাপনা নির্মাণের দরকার ছিল, কয়েক মাস বেশি ব্যয় হলেও তা এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। তবে সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানো হলেও এনসিটি চালু না হওয়ায় পশ্চাৎ সুবিধা অবকাঠামো নির্মাণ পুরোপুরি কবে সম্পন্ন হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। এদিকে নাকি স্থগিত করা হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি। অর্থাৎ দ্রুতই উদ্ভূত জটিলতা নিরসনের লক্ষণ নেই। কেন বিপুল ব্যয়ের পরও এন সিটি চালু করা যাচ্ছে না, অনেকের ভাষ্যমতে এর কারণ রহস্যজনক।

এনসিটি চালু না হওয়ায় সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল রাজস্ব থেকে। ১ লাখ ৬৭ হাজার বর্গমিটারের ইয়ার্ড ও ৩৩ কেভি সাবস্টেশন সুবিধা কাজে আসছে না। এটিও এক ধরনের অপচয় বৈকি। কারো কারো অনুমান, এনসিটি পরিচালনায় অপারেটর নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাঝে কোথাও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। নইলে ৭৭ বার সিদ্ধান্ত বদল সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ঝামেলা মিটে যাওয়াই ছিল স্বাভাবিক। জানা যায়, মূল প্রস্তাবনায় দেশি অপারেটরদের দায়িত্ব দেয়ার উল্লেখ থাকলেও ২০০১ সালে তা বিদেশী অপারেটরদের দিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য ২০১২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্বারা এনসিটি পরিচালনার পক্ষে মত দেয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। সমন্বয়ের ঘাটতি না থাকলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া কঠিন। এখন নাকি দরপত্রের শর্ত ও তা স্থগিত বিষয়ে একের পর এক মামলা করছে ঠিকাদার। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এ ইস্যুতে ঘনিষ্ঠ অবস্থান বজায় রাখলে সে সুযোগও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পেতো না বলে কারো কারো অভিমত। কথা হলো, এ জটিলতা আর বেশি দূর এগোতে দেয়া উচিৎ হবে না। সবাই প্রত্যাশা করেন, প্রতিবন্ধকতা দূরপূর্বক এনসিটি দ্রুত চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে সরকার।

আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে একে অন্যের মতের তোয়াক্কা না করার প্রবণতা সুবিদিত। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাঝেও হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায় দুর্দমনীয় অহংবোধ; যা অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তির জেদকেই বেশি তুলে ধরে। এক্ষেত্রে তেমন কিছু ঘটে থাকলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেই উদ্যোগ নিতে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষেরও এক্ষেত্রে নিজস্ব উপলব্ধি দরকার। মাথায় রাখতে হবে, স্থানীয় অর্থনীতির সেবা তো আছেই, আন্তর্জাতিক অন্যান্য বন্দরের সঙ্গেও চট্টগ্রামের প্রতিযোগিতা আগামীতে বাড়বে বৈ কমবে না। ফলে এক্ষেত্রে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় যেটি বন্দরের দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা হ্রাস করে। এমনিতেই তাদের ওপর কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের বড় চাপ রয়েছে; পোতাশ্রয়ের নাব্যতা বৃদ্ধির চাপও ক্রমে বাড়ছে। সেক্ষেত্রে এনসিটি যত দেরিতে চালু হবে, ততই পিছিয়ে যাবে চট্টগ্রাম বন্দর। আবার বন্দর কর্তৃপক্ষকেও খেয়াল রাখতে হবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বের বিষয়টি। হতে পারে কারিগরিসহ নানা ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের মানসিকতার সঙ্গে অনেক সময় তাল মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু তাতে অসহিষ্ণুতা না দেখিয়ে সমঝোতার পথে এগোনোই শ্রেয়।

অর্থ পাচার অনুসন্ধান

সক্রিয়তা বাড়াতে হবে দুদকের

সুইস ব্যাংকগুলোয় গত এক বছরে বাংলাদেশীদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে ওঠার খবর রয়েছে পত্রপত্রিকায়। জানা যায়, বর্তমানে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আমাদের অর্থনীতির আকারের তুলনায় সংখ্যাটি অত্যন্ত নগণ্য বললে ভুল হবে না। আবার এর মাঝে অনেকের বৈধ অর্থও আছে। ফলে পুরোটিকে অভিহিত করা যায় না ‘পাচারের অর্থ’ হিসেবে। তবে ‘অতিধনীদে’র বাদ দিলে এ পরিমাণ অর্থে গোলমালের খবর কিন্তু এখনো মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত অনেকের মাথা গুলিয়ে তোলে। তদুপরি, জানা এ পরিমাণের বাইরেও নিশ্চয়ই বাংলাদেশীদের অর্থ রয়েছে সুইস ব্যাংকগুলোয়। এছাড়া ওই হিসাবে মূল্যবান বস্তুর উল্লেখ নেই, সেটিও এক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। কথা হলো, এসব ঘটনা আমাদের স্পষ্ট দেখিয়েছে দিচ্ছে- দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। এরই মধ্যে গতকালের বণিক বার্তার খবর- গত তিন বছরে যে কয়টি অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), তার সিংহভাগই রয়ে গেছে অনিষ্পন্ন। আলোচ্য সময়ে সংস্থাটি হাত গুটিয়ে বসে ছিল সে কথা মোটেও বলা যাবে না। বরং তথ্য বলছে, ক্রমে অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ বেড়েছে তাদের। তবু আক্ষেপের বিষয়, সংস্থাটি মানুষের আশানুরূপ যথেষ্ট কার্যকারিতা দেখাতে পারছে না। এমন পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতিই কাম্য।

লক্ষ্যণীয়, অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানে একাধিক বড় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে দুদকের সামনে। অনেকের কাছে ‘নিছক অজুহাত’ মনে হলেও বাস্তবতা এড়ানো যাবে না, সংস্থাটিতে পর্যাপ্ত জনবলের ঘাটতি রয়েছে; অভাব রয়েছে চলমান প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি অনুসন্ধানের মতো প্রয়োজনীয় দক্ষতারও। অবশ্য মন্দের ভালো, সাম্প্রতিক সময়ে জনবলের দক্ষতা বাড়াতে একাধিক উদ্যোগ নেয়া হয় বলে প্রতীয়মান। এক্ষেত্রে চাহিদা অনুসারে লোকবল বৃদ্ধির প্রতি সুদৃষ্টি রাখা উচিৎ। তবে জনবল ও তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না, দুর্নীতি দমনে সরকার জোর সদিচ্ছা না দেখালে। বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হয়েছে এক সময়। তবে অন্যান্য দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অর্থ পাচারকে এক করে দেখলে হবে না। এটি বিশেষ ইস্যু। মানুষ স্বভাবত নিজ দেশ থেকে অর্থ গোপনে অন্যত্র নিয়ে যেতে চায় না তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে অথবা অত্যন্ত অসদুপায়ে তা অর্জিত না হলে। আমাদের দেশে উভয় কারণকেই উৎসাহ জোগায় অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তার ওপর রয়েছে নীতি নির্ধারণের অদূরদর্শীতা। পাচারকৃত অর্থ কৌশলে ফিরিয়ে এনে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে ব্যবহার হচ্ছে এমন দৃষ্টান্তও কিন্তু রয়েছে অনেক। এখানে তেমন পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না বা হচ্ছে না কেন সেটি বোধগম্য নয়। অথচ অর্থ পাচারের প্রশ্নে মধ্যপন্থী অথচ কঠোর অবস্থান কিন্তু সহজেই নিতে পারে দুদক।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গৃহীত উদ্যোগ-কর্মসূচি

অর্থনীতিতে সুফল দৃশ্যমান করুন

২০০৮ সালে বৈশ্বিক আর্থিক সংকট দেখা দেয়ার পর থেকে টেকসই উন্নয়নের প্রতি আগ্রহ ব্যাপকভাবে বাড়ে অগ্রসর দেশগুলোর। বলা যায়, সে প্রেক্ষাপটেই নিজ নিজ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতি নতুন করে বর্ধিত মনোযোগ দেয়া শুরু করে তারা। টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে যদি খানিকটা দূরেও রাখা যায় উন্নয়নশীল বিশ্বের অর্থনীতিতে খাতটির রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। এর প্রতি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ব্রিকস-ভুক্ত দেশগুলোর অধিকতর দৃষ্টি তারই ইঙ্গিত দেয়। উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ভূমিকা বাড়াতে বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। একেবারে শুরু থেকেই এ বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে তারা। ফলে মাঝে মধ্যেই সরকার গৃহীত নতুন উদ্যোগ বা কর্মসূচির খবরাখবর আসে গণমাধ্যমগুলোয়। তার মাঝে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) প্রকাশিত গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলোজি, ২০১৪’ প্রতিবেদন অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এগোতে পারছে না বাংলাদেশ। এ বছর ১৪৮টি দেশের মাঝে আমাদের অবস্থান ১১৯তম; ১৪৪টি দেশের মধ্যে তা ১১৪তম ছিল গত বছর। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রকাশ হচ্ছে ওই প্রতিবেদন। এর নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সের (এনআরআই) বিশেষ প্রভাব রয়েছে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মাঝে। নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও সেখানে বাংলাদেশের উন্নতি না ঘটাটা দুশ্চিন্তাদায়ক বৈকি। কেননা এ থেকে বোঝা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকারি প্রচেষ্টার প্রভাব আশানুরূপভাবে পড়ছে না অর্থনীতিতে।

ডব্লিউইএফ এনআরআই প্রস্তুত করে একাধিক উপসূচকের ভিত্তিতে। প্রতিটি উপসূচক আবার নির্ভর করে বিভিন্ন স্তম্ভের ওপর। দেখা যাচ্ছে, পরিবেশ উপসূচকে বাংলাদেশ ১২৮তম অবস্থানে ছিল ২০১৩ সালে। চলতি বছর এটি পিছিয়েছে চার ধাপ। ‘রাজনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণ পরিবেশ’ এবং ‘ব্যবসা ও উদ্ভাবনী পরিবেশ’ দুটি স্তম্ভ আবার নির্দেশ করে পরিবেশ উপসূচক। উভয় ক্ষেত্রেই পিছিয়েছি আমরা। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণ পরিবেশের অজুহাত দেয়াও কঠিন। কেননা এখন পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। ফলে ২০১৩’র চেয়েও এক্ষেত্রে ২০১৪ পিছিয়ে যাবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যবসা ও উদ্ভাবনী পরিবেশ বজায় রাখার সমস্যা আগেও ছিল; এখনো আছে। এখানে মেধা পাচার হচ্ছে নাকি দেশ মেধা ধরে রাখতে পারছে না সে বিতর্ক অপ্রাসঙ্গিক নয়। অনেকের মতে, সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক স্থানে না বসানোয়ই ক্রমে সমস্যা সংকটে রূপ নিচ্ছে। লক্ষ্যণীয়, গত কয়েক বছরের থ্রিজি প্রযুক্তি প্রচলনসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন বড় পদক্ষেপ নেয় সরকার। বাস্তবতা হলো, ভোক্তা পর্যায়ে এখনো তেমন জনপ্রিয় নয় থ্রিজি। এদিকে অর্থনীতিতে তথ্যপ্রযুক্তির সুপ্রভাব অধিক মাত্রায় ছড়িয়ে দিতে এন্ড টু এন্ড জোরালো সংযোগের ওপর ইদানীং জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে আমাদের দুর্বল অবস্থানকে পরিকল্পনা ও সুনিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা হিসেবে অভিহিত করতে চান কেউ কেউ।

অনেক রাজনীতিক বর্তমানে সামাজিক গণমাধ্যমে সক্রিয় হলেও সার্বিকভাবে তাদের নিজেদের পক্ষে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত নীতি সঠিকভাবে নির্ধারণ করা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে সংশয় থাকা স্বাভাবিক। অনুমান করা যায়, এ বিষয়ে তারা ব্যাপকভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর নির্ভরশীল; মাঝে মাঝে বাজারের চাহিদা বুঝে উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের পরামর্শও আমলে নেন তারা। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কী, তা সাম্প্রতিক কালে প্রশাসন কর্তৃক ফরমালিনবিরোধী অভিযান থেকে আন্দাজ করা যায়। কাঁচা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু সরকারি কর্মকর্তা একশ্রেণীর ব্যবসায়ীকে চটিয়ে ফেলেছেন- যা অদক্ষতা ও দুর্বল পরিকল্পনা নির্দেশ করে। এদিকে পরোক্ষভাবে ওই শ্রেণীভুক্ত ফল ব্যবসায়ী নিয়েছেন ভোক্তাবিরোধী অবস্থান, যেটি অত্যন্ত অসদাচরণ। ব্যতিক্রম সবখানেই আছে। তবু গড়পড়তা সব খানে অবস্থা একই বলে অনেকের অভিমত। তথ্যপ্রযুক্তি খাত নিশ্চয়ই তার বাইরে নয়। এমন পরিস্থিতিতে দুর্বলতা কাটিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গৃহীত উদ্যোগের প্রভাব অর্থনীতিতে দৃশ্যমান করা হবে, সরকারের কাছে এমনটিই সবার প্রত্যাশা।

বিইএফের সম্মেলন

বিশেষজ্ঞ মতামত গুরুত্বের সঙ্গে নিন

‘ভিশন ২০৩০ : ফ্রেমওয়ার্ক ফর ইকোনমিক পলিসি মেকিং অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি ফরমুলেশন ইন এ প্লুরালিস্টিক ডেমোক্রেসি’ স্লোগান সামনে রেখে গতকাল রাজধানীতে সম্পন্ন হলো অর্থনীতিবিদদের নতুন সংগঠন বাংলাদেশ ইকনোমিস্টস ফোরামের (বিইএফ) সম্মেলন। পরস্পর আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বে সক্ষমতা অনুযায়ী নিজ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিকাশের করণীয় নির্ধারণে মানসম্পন্ন ও বাস্তবসম্মত আলোচনার বিকল্প নেই। তাই এমন উদ্যোগ যেখানেই বা যারাই নিন, কর্তৃপক্ষের উচিৎ হবে বিশেষজ্ঞ মত বাছাইপূর্বক সেগুলো আমলে নেয়া। এ ধরনের সংস্কৃতি আমাদের নেই বললেই চলে। সম্প্রতি বাজেট আলোচনার সময়ও তা দেখা গেছে। বিশেষজ্ঞ মতামতে রাজনৈতিক রঙ কারো কাম্য নয় তবু দেশে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানেরই মাঝে প্রকাশ্য কিংবা গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। সেটি থাকতে পারে। তা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞ মতের গুরুত্ব অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশের অর্থনীতির চলমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মতের মাঝে সমন্বয় ঘটানো জরুরিও বটে।

লক্ষ্যণীয়, বিইএফের আলোচনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোই আলোচনায় এসেছে বলে প্রতীয়মান। আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত সাফল্য লাভের জন্য বাংলাদেশকে অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলোর ব্যাপারে সতর্কবাণীও উচ্চারণ করেছেন বক্তারা। প্রত্যাশা থাকবে, নীতি নির্ধারকরা ইস্যুগুলোর সুরাহায় দ্রুত উদ্যোগী হবে। নাজুক ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের জন্য এক বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে করণীয় সম্পন্নের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিও আকর্ষণ করা চাই। খতিয়ে দেখা দরকার, গ্রামীণ উন্নয়নের ধীর গতি কেন? বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও ভূমির প্রাপ্যতা নতুন কোন সমস্যা নয়। দুর্ভাগায়জনক হলো, এখনো সেগুলোর গ্রহণযোগ্য বা টেকসই সমাধান মিলছে না। আগামী দশকের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলেও সেটি অর্জন সম্ভব। তবে ওই প্রাক্কলিত সময়ে, বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে মধ্য আয়ের ফাঁদে যেন আমাদের অর্থনীতি না পড়ে যায়। এরই মধ্যে যেসব দেশ ওই ফাঁদে পড়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা এ শিক্ষা দেয়া যে- আগেভাগেই এসব বিষয়ে পরিষ্কার চিন্তা-ভাবনা রাখা দরকার। অনেককে সার্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেলেও, এক্ষেত্রে পুরোপুরি চিন্তামুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ছাড়াই প্রবৃদ্ধি; যে ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক দেশে পরিলক্ষিত হয়েছে। কথা হলো, আগামীতে নীতি নির্ধারকদের ওপর কর্মসংস্থান বৃদ্ধির চাপ বাড়বে বৈ কমবে না। এর আবার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দু’ধরনেরই ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বৈশ্বিক শ্রম বাজারে কাজের সুযোগ থাকায় আপাতত চাপটি সেভাবে অনুভূত না হলেও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রেখে সঠিক পথ বেছে নিতে হবে। সেজন্য উপযুক্ত ও দূরদর্শী মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন।

বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সড়ক-মহাসড়ক

সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা চাই

কয়েকদিনের অতিবর্ষণে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা বেহাল হয়েছে স্বভাবতই। গতকালের বণিক বার্তায় এর একটা সংক্ষিপ্ত চিত্র মেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে। জানা যায়, দেশজুড়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) আওতায় থাকা প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়কের মাঝে আনুমানিক ২ হাজার কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সম্প্রতি। তার মাঝে রয়েছে একাধিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুট। উদাহরণ হিসেবে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ বা ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের কথা বলা যায়। ভারী বর্ষণে কিছু স্থানে এসব সড়ক-মহাসড়কের কার্পেটিং ও খোয়া উঠে গেছে। অনেক স্থানে থেকে আসছে সড়কের মাঝে ছোট-বড় গর্ত হওয়ার খবর, যা যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। নেত্রকোনা-ঈশ্বরগঞ্জ সড়কের কয়েক কিলোমিটারের ইটই নাকি উঠে গেছে টানা বর্ষণে; পাশাপাশি বৃষ্টিতে সড়ক সংশ্লিষ্ট মাটি ধুয়ে যাওয়ার ঘটনা তো আছেই। কিছু ক্ষেত্রে আবার পরিস্থিতি খানিকটা জটিল হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন বা রক্ষণাবেক্ষণ চলতে থাকায়। এখন বর্ষা মৌসুম, সামনে রমজান ও ঈদ। আশাব্যঞ্জক খবর হলো, বিষয়টি যোগাযোগমন্ত্রীর দৃষ্টি এড়ায় নি। সেজন্যই দ্রুত সড়ক-মহাসড়কগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ তাৎক্ষণিকভাবে ইটের খোয়া দিয়ে ভরাট ও রোদ উঠলে কার্পেটিং সম্পন্নের নির্দেশও নাকি পেয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাড়তি চাপ সৃষ্টির আগেই এক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় তৎপরতা দেখাতে হবে সংশ্লিষ্টদের। সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেয়া না হলে, চলমান প্রেক্ষাপটে শুধু এক-দুজনের পক্ষে বিরাট উন্নতি করা সম্ভব নয় কিন্তু।

সড়ক পথ ব্যবহারে রক্ষণাবেক্ষণের এ ঝামেলা বাংলাদেশের জন্য একেবারেই অনন্য নয়। তবে আমাদের জন্য বিশেষ চ্যালেঞ্জ রয়েছে একাধিক; ভারী বর্ষণ যার মাঝে অন্যতম। এ প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ মেটানোর কোনোই উপায় নেই সে কথা বলা যাবে না। তবে এক্ষেত্রে মনুষ্যসৃষ্ট সহজ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলেও কিন্তু লক্ষ্যণীয় পরিবর্তন আনা সম্ভব। সেটি হলো, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি, দুর্বলতা ও অনিয়ম সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা অনুসারে অনেক দেশই সড়কের আয়ুষ্কাল ধরে ১০ থেকে ৪০ বছর। আমাদের এখানে ওই ন্যূনতম মানদণ্ডটি পেরুনোও বড় সাফল্য বলে ধরে নেন অনেকে। এখানে সড়ক-মহাসড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অতিরিক্ত ওজনবাহী যানের অব্যাহত ব্যবহারে। চাহিদার চাপে এটি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তার চেয়ে বড় কথা, এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো পদক্ষেপই দৃশ্যমান হচ্ছে না। তার পর রয়েছে সময় নির্ধারণ। নানা তরফ থেকে বারবার বলা সত্ত্বেও যথারীতি বহু সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন শুরু হয়েছে বর্ষায়। এর ওপর সার্বিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে মান নিশ্চিত করারা দুর্বলতা তো আছেই। জনগণ প্রদত্ত বিপুল অর্থের অপচয় রোধে এসব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়টির ওপর জোর দেবে, এটিই সবার প্রত্যাশা।

ড. মুস্তফা কে মুজেরি অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক। ১৯৭০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক পর্বের পড়াশুনা সম্পন্নের পর একই বিষয়ে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য যান কানাডার ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটিতে। তার কর্মজীবন বেশ বিচিত্র। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। সেন্টার অন ইন্ট্রিগেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (সিরডাপ) গবেষণা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন একটা সময়। চাকুরি করেছেন কম্বোডিয়াতে ইউএনডিপির পোভার্টি মনিটরিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস অ্যাডভাইজার হিসেবেও। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে চলে আসেন বিআইডিএসে। সম্প্রতি বাজেট, বিনিয়োগ, জ্বালানি খাত, রাজস্ব আহরণ প্রভৃতি বিষয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে তার কথা হয়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এম মুসা

পিপিপিতে মেগাপ্রকল্প

পরিকল্পনা হোক সমন্বিত ও বাস্তবায়নযোগ্য

পরিকল্পনা সুষ্ঠু না হওয়ায় সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় পরিকল্পিত একাধিক মেগাপ্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন নিয়ে সংশয়ের খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। আমাদের দেশে অনেক প্রকল্প পরিকল্পনার উদ্দেশ্যই সমালোচিত হয়। এক্ষেত্রে কিন্তু সে ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করা কঠিন। ঢাকা-কুমিল্লা এলিভেটেড রেলপথ (কর্ড লাইন) চালু হলে যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে পণ্য বা যাত্রীবাহী ট্রেনের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। গাজীপুরে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ হলে কমলাপুরের ওপর চাপ কমবে এবং তাতে পণ্য পরিবহনে দক্ষতা বাড়বে বলেও প্রত্যাশা করা যায়। অন্যদিকে যমুনা নদীর ওপর রেলের জন্য স্বতন্ত্র সেতু হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ আরো মসৃণ হবে। আর তার একটা প্রভাব অর্থনীতিতে থাকবেই। স্পষ্টত প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ কম। তবে এগুলো কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেটি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হওয়া দরকার।

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বেসরকারি খাত মুনাফা চালিত হওয়ায় তাদের যমুনা নদীর ওপর স্বতন্ত্র রেলসেতুর মতো প্রকল্পে আগ্রহী করে তোলা কঠিন। আর যদিওবা করা যায় সেক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের ওপর যে মাত্রায় রাজস্ব চাপ বাড়বে তাতে ওই প্রকল্প কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাছাড়া সরকার নিছক নিজ বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্য তো আর প্রকল্পগুলো নিচ্ছে। ওসব মেগাপ্রকল্পের লক্ষ্যই হলো, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা প্রদান যাতে বেসরকারি খাত বিকাশের সুযোগ পায়। তবু এখন পর্যন্ত মেগাপ্রকল্পে অন্তত আমাদের পিপিপির অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। একাধিক প্রকল্পে দরপত্র পরবর্তী সময়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তিন বছরেও শুরু হয় ওই ধরনের প্রথম পিপিপি প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। মাঝে এক প্রকল্পের জটিলতা নিরসনে জিটুজি মডেলের আওতায় তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে সেখানেও আশানুরূপ ফল মেলে নি। এ অবস্থায় বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট অনেকে বৈদেশিক সহায়তায় মেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কথা ভাবছেন বলে জানা যায়। তবু এক্ষেত্রে প্রকল্প বাছাই করা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কক্সবাজারকে আকর্ষণীয় পর্যটন নগর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা পিপিপির সহায়তায় সম্পন্ন হতেই পারে। মুনাফা অর্জনের সুযোগ থাকায় এতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা আগ্রহী হবেন বলেই মনে হয়। এর বিপরীতে অনেকে মনে করেন, ঢাকা-কুমিল্লা কর্ডলাইনের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন সহযোগীদের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা কার্যকর হবে। পিপিপির মাধ্যমে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের বেলায় আমাদের সামনে প্রতিবেশী ভারতের উদাহরণ রয়েছে। বিশ্লেষণপূর্বক সেটি এখানে কাজে লাগাতে হবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ ও পদায়নে যোগ্যতার অধিক গুরুত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এটি ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনাগত দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা অত্যন্ত কঠিন।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যয় হ্রাসের প্রশ্ন

প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করুক ভারত

শুল্ক, অশুল্ক ও অবকাঠামো বাধায় বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য বার্ষিক প্রায় ১০০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। ভারতভিত্তিক থিংক ট্যাংক কনজিউমার ইউনিটি অ্যান্ড ট্রাস্ট সোসাইটির (কাটস) ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ট্রেড পোটেনশিয়ালিটিঃ অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অব ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন ইস্যুজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি খবরটিতে দেখা যাচ্ছে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাণিজ্য ক্ষতি বাংলাদেশেরই বেশি। কেননা কাটসের মতে, বাণিজ্য সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের যেখানে সাশ্রয় হবে বার্ষিক ৮৩ কোটি ডলারের কাছাকাছি; ভারতের সাশ্রয় হবে ১৪ কোটি ডলারের বেশি। তাই এর প্রতি আমাদের নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সন্দেহ নেই, এক্ষেত্রে যে বাণিজ্য ক্ষতি হচ্ছে চোখ বুজে তা অগ্রাহ্য করতে পারে ভারত। কিন্তু তাদের একটি বিষয় খেয়াল রাখা দরকার, ভারত এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ‘বিশেষ বাজার’ হয়ে উঠতে পারে নি। সেটি আমাদের একশ্রেণীর নীতিনির্ধারক এবং আমলাদের অযোগ্যতা ও ক্ষীণদৃষ্টির জন্য হতে পারে। পশ্চিম পানে একশ্রেণীর ভারতীয় নীতিনির্ধারক ও আমলাদের অপলক উর্ধ্বনেত্রের জন্যও ঘটে থাকতে পারে তা। তবে ভারতের জন্য কিন্তু বাংলাদেশ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, জাতীয় নিরাপত্তাসহ নানা কারণে। সেসব বিষয় বিবেচনায় রেখে আলোচ্য বাণিজ্য ক্ষতির প্রতি তাদেরও মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বড় অভিন্ন বাজার রয়েছে; ভাষাগত সঙ্গতিও এক্ষেত্রে বিরাট সুবিধা। অথচ বৈশ্বিক আমদানিতে ভারতের অংশ মোটামুটি অক্ষুণ্ণ রেখেই নাকি দেশটির সঙ্গে বাড়ছে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি। এটি হ্রাস করা প্রয়োজন। এরই মধ্যে ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে যথাযথভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার।

লক্ষ্যণীয়, বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্ভাবনা বিকাশে অন্তরায় কী কী তা সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়। এখন একে একে সেগুলো চিহ্নিতপূর্বক উভয়ে মিলে অপসারণ করা চাই। সে লক্ষ্যে নির্ভরযোগ্য পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দু’দেশকেই জোর দিতে হবে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, স্যাটেলাইট চ্যানেলে গিয়ে তথা কে বিদেশে চ্যানেল দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করছে আর কে তা পারছে না- সেখানেই আটকে থাকছে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ইস্যু। এটি অগ্রাহ্য করার মতো নয় অবশ্যই। তবু তিলকে তাল বানানোর অপচেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তাতে মূল ইস্যুগুলো আড়ালে চলে যেতে পারে। এরই মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের নানা পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন ধরনের বৈঠকের কথাবার্তা শোনা যায়। বিদ্যমান নিয়মনীতি সংস্কার ও সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়িয়ে তা নিশ্চিত করা যায় কিনা, সেটি দেখা দরকার আগে। গেলে, নতুন করে জটিলতা বাড়িয়ে লাভ কি?

কাটস সুপারিশ করেছে, উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, নমনীয় আমদানি-রফতানি ঋণপত্র, দ্বিপক্ষীয় মোটরযান চুক্তি, আধুনিক পরিবহন পার্কিং প্রভৃতি সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ক্ষতি অনেকাংশে কমানো যাবে। রেলসেবা, উপকূলীয়, নৌযান, নতুন সীমান্ত হাট স্থাপন, সীমান্তের ১৫০ গজের মাঝে উন্নয়ন কার্যক্রম অনুমোদন, বিএসটিআই ও বিআইএসের মাঝে চুক্তির মতো বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট ইস্যু কিন্তু আছে ভারতের। এছাড়া তৈরি পোশাকের ওপর থেকে কাউন্টারভেইলিং ডিউটি তুলে নেয়া, পেট্রাপোলের অফিস সময় পরিবর্তসহ অনেক বিষয়ে সময়ে সময়ে নয়াদিল্লীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ঢাকা। প্রথম কথা হলো, এক্ষেত্রে স্বচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে আমাদের। দ্বিতীয়ত. এসব প্রতিবন্ধকতা ও জটিলতা যৌথভাবে দূরীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে দ্রুত।

উৎপাদনে সাফল্য

বাজারজাতকরণে বিড়ম্বনা দূর করতে হবে

এক দশক আগেও যেখানে বাংলাদেশে ৫০ হাজার টনের বেশি আলু উৎপাদন হতো না, এখন সেটি ১ কোটি টনের কাছাকাছি বলে খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। ২০১১-১২ অর্থবছরের তথ্য বিশ্লেষণপূর্বক জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলছে, আলোচ্য সময়ে এ দেশে আলু উৎপাদন হয়েছে আনুমানিক ৮২ লাখ ১০ হাজার টন; যা বিশ্বে আলু উৎপাদনকারী শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশকে। তালিকায় আমাদের অবস্থান অষ্টম। সুখবর হলো, তালিকাভুক্ত অন্যান্য দেশের অবস্থান এক্ষেত্রে মোটেই অপ্রত্যাশাতি নয়; যতটা আশাব্যঞ্জক আমাদের সাফল্য। বর্ধিত আলু উৎপাদন বিষয়ে এখানকার অনেকেই বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। তাদের মতে, আলুর মাত্রাতিরিক্ত উৎপাদন হ্রাসে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিৎ। তাদের যুক্তি পুরোপুরি ভিত্তিহীন সে কথা বলা যাবে না। উদ্বৃত্ত আলু নিয়ে বিপাকে পড়া কৃষকের অসহায়ত্ব নিশ্চয়ই তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু কথা হলো, সেজন্য কি আলু উৎপাদনে জড় কমিয়ে দেয়া কম হবে? কেউ কেউই কিন্তু মনে করেন, দেশে আলুর বর্তমান উৎপাদন টেকসই করা দরকার। একে স্রেফ খাদ্যশস্য থেকে অর্থকরী ফসলে উন্নীত করতে হবে। আলুর বর্ধিত উৎপাদনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। সবাই প্রত্যাশা করেন, এবার তার টেকসই বাজারজাতকরণে দৃষ্টি দেবেন সংশ্লিষ্টরা।

সার্বিকভাবে আলু উৎপাদন স্থিতিশীল রাখতে জাতোন্নয়ন বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে গবেষণা প্রয়োজন। কোন জাতের আলু, কী প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে সহজে রফতানি হতে পারে, সেটিও খতিয়ে দেখা চাই। আলু রফতানি বাড়ানো না গেলে বর্ধিত আলু বিপাকে ফেলতে পারে কৃষককে। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ চাহিদা সর্বোচ্চ কতটা বাড়ানো যেতে পারে, তা বিশ্লেষণ করতে হবে। মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন মোটেই সহজ হবে না। তবু অভ্যন্তরীণ পরিভোগ বৃদ্ধি মানে আলুর বাজারজাতকরণ নিয়ে কিছু দুশ্চিন্তা কমে যাওয়া, যা এ মুহূর্তের এক বড় চ্যালেঞ্জ। হিমাগারের সংখ্যা কিংবা এর ধারণক্ষমতা বাড়িয়েও অভ্যন্তরীণ চাহিদা মধ্য মেয়াদে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সহজলভ্যতা। এটি আমাদের জন্য এক ধাঁধাঁও বটে। কয়লা-এলএনজি-তেল আমদানি করে আমাদের বিদ্যুৎ ঘাটতি হয়তো মেটানো যাবে। কিন্তু তাতে আবার উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে উদ্বৃত্ত আলুর। সেক্ষেত্রে বিকল্প উপায় থাকে- আলু প্রক্রিয়াজতকরণ শিল্পের বিস্তার ঘটানো। এদিকে দৃষ্টি দিতেই হবে সংশ্লিষ্টদের। কেননা, কখনো কোনো কারণে আলুর বৈশ্বিক বাজারে সমস্যা দেখা দিলে এ পথে এগোনো ছাড়া পথ থাকবে না হয়তো। আবার সবজি আলুর চেয়ে প্রক্রিয়াজাত আলু পণ্য রফতানি অর্থনৈতিকভাবে অধিকতর সুফলদায়ক। সর্বোপরি আলু উৎপাদনে অর্জিত সাফল্য যেন অন্তত কৃষকের বিড়ম্বনার কারণ না হয়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

পদ্মা সেতু

সুষ্ঠু হোক নির্মাণ

‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্র’মূলক অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সরকারের সুদীর্ঘ লড়াইয়ের পর কিছু দিন আগে দরপত্র ডেকে পদ্মা সেতু নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয় চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিএমবিইসি) লিমিটেডকে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মাঝে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি থাকতে পারে। কেননা বহু কাঠখড় পেরিয়ে তবেই এখানে আসতে হয়েছে তাদের। নানা তরফ থেকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার প্রস্তাব এসেছে। সব কিছু যাচাইয়ের পর সিএমবিইসিকেই বেছে নেয় তারা। এ পছন্দ কতটা যৌক্তিক ছিল, এখন তার বিশ্লেষণ করা অযৌক্তিক। যাদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্প গৃহীত হলো, সে জনগণ সিএমবিইসি দ্বারা পদ্মা সেতু নির্মাণকে কীভাবে নিয়েছেন তার জবাব সহসাই মিলছে না। এক্ষেত্রে তাদের মাঝে আপাতত নীরবতা লক্ষ্যণীয়। যাহোক, যেহেতু সিএমবিইসিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সবাই চাইবেন সুষ্ঠুভাবে কাজটি সম্পন্ন হোক; এর সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় থাকুক। অথচ গতকালের বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, পরামর্শক ছাড়াই নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে কিনা। জানা যায়, জমি হস্তান্তরের পর সিএমবিইসি এখন মাটির গুণাগুণ পরীক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে কিন্তু এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কার কাছে জমা দেয়া হবে, নির্মাণসামগ্রীর মান কে যাচাই করবে প্রভৃতি নিশ্চিত নয়; কাজগুলো নির্মাণ তত্ত্বাবধান পরামর্শক (সিএসসি), ব্যবস্থাপনা পরামর্শক ও প্যানেল অব এক্সপার্টের করার কথা।

নির্মাণে সিএমবিইসি’র সুনাম থাকতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নিশ্চয় নয় যে, পরামর্শক ছাড়াই এত বড় একটা কাজ সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। আমাদের পক্ষ থেকে যারা কাজটি তদারক করছেন তাদের উচিৎ এসব বিষয়ে সজাগ থাকা। চীনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো পানির মতো আচরণ করে বলে অনেকের অভিযোগ। তার মানে, স্থানীয় প্রশাসন কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করলে তাদের কাজের মান ভালো হয়, আবার তদারকদের মাঝে অনিয়মের প্রবণতা থাকলে সুযোগ নিতে নাকি তারা দেরী করে না। সে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে চীনের কিছু উদ্যোগের ওপর বিশ্বব্যাংকের মতো পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর এক ধরনের চাপকে ইতিবাচকভাবেই দেখে থাকেন কেউ কেউ। বিষয়টি সরকারের মাথায় রাখা দরকার। অনেকের দৃষ্টিতে, সরকার এক রকম জেদ ধরেই বিশ্বব্যাংককে কাজটি দেয় নি। এর মধ্যে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, পদ্মা সেতুর ব্যয় চূড়ান্তভাবে পরিশোধ করতে হবে জনগণকেই। সেক্ষেত্রে অর্থের অপচয় রোধ ও মানসম্পন্ন ব্যয় নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের অধিক মনোযোগ প্রত্যাশা করেন সবাই।

নতুন সেবা প্রচলনে ব্যাংকের অনাগ্রহ

সঠিকভাবে প্রণোদিত করুন

বেশি হারে সঞ্চিতি সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়ার পরও বর্তমানে আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থায় নাকি বিপুল পরিমাণ অর্থ অলস পড়ে আছে। অনেক বিশেষজ্ঞই বলছেন, এক্ষেত্রে সম্পদ ব্যবস্থাপনা, রেমিট্যান্স, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই), কৃষিসহ বেশ কিছু খাত কেন্দ্র করে নতুন সেবা চালুর সম্ভাবনা আছে। তবে বছর দুয়েক আগেও যেখানে নতুন নতুন সেবার প্রতি ঝুঁকতে দেখা যেতো এদের; এখন তেমন নয়। বরং নতুন সেবা প্রচলনে তাদের অনাগ্রহের খবর রয়েছে গতকালের বণিক বার্তায়। কেন এ মনোভাব? আমাদের প্রতিবেদক এর কয়েকটি বড় কারণ তুলে ধরেছেন। তার মাঝে অন্যতম হলো, ব্যাংকে জমাকৃত বিপুল আমানত। স্বভাবতই ব্যাংক আমানত সংগ্রহে নতুন নতুন সেবা চালুর প্রতি দৃষ্টি দেবে না, যদি না তার ঋণ প্রদানে যথেষ্ট চাপ অনুভূত হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচলিত ঋণ সেবায়ও নাকি গ্রাহক মিলছে না আশানুরূপভাবে। পাশাপাশি কিছু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে নতুন ঋণ নীতিমালার প্রভাবে। এসব প্রতিটি কারণই বাস্তবাত হতে পারে। তবে এ প্রেক্ষাপটে স্প্রেডের পরিমাণটাও একবার ঝালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে নিয়ন্ত্রকরা। নির্দিষ্ট শর্ত বা পরিস্থিতিতে মানুষের ঋণ নেয়ার চাহিদা কমতে পারে। কিন্তু আমাদের চলমান বাস্তবতায় তা কতটা সত্য, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। স্পষ্টত বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান সৃজন প্রক্রিয়া সংকুচিত হয়ে পড়ছে বা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ছে না। এ বিষয়ে আবার সরকারের তরফ থেকে তেমন সক্রিয়তা দৃশ্যমান নয়। কিন্তু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণের চাহিদা এখনো আগের মতোই অথচ পর্যাপ্ত ঋণের যোগান নেই বলে মনে করেন কেউ কেউ। এ অবস্থায় নতুন সেবায় স্থানীয় ব্যাংকিং খাতের অরুচি দেখা দিলো কেন, সঠিকভাবে তার বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন।

নতুন একাধিক ব্যাংকের আগমনের প্রাক্কালে অনেকে সতর্ক করেছিলেন, সেগুলো বাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। সম্ভাবনাটি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আবার আমাদের অর্থনীতির গতিপথ অবলোকন করলে ওই যুক্তি ততটা শক্তিশালী হয় না। স্থানীয় ব্যাংকগুলোর বার্ষিক পারফরম্যান্সেও ওই ধরনের ইঙ্গিত নেই। তার পরও নতুন সেবা প্রচলনে অসুবিধা ঠিক কোথায়, সেটি নির্ণয় করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। কেননা, অসাবধানতাবশত কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমানতকারীকে তো খেসারত দিতেই হবে, চূড়ান্তভাবে এর বেশিরভাগ দায় চাপানো হতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর; অন্তত অনেক দেশের অভিজ্ঞতা তাই বলে। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সম্ভাব্য উদ্যোক্তাশ্রেণীর বিকাশের স্বার্থেও কাজটি করা দরকার। লক্ষ্যণীয়, আমাদের বিকাশমান তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অনেক উদ্যোগই বেড়ে উঠতে পারছে না যথাযথ ও পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধার অভাবে। সেজন্যও নতুন সেবা প্রচলনে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ ফিরিয়ে আনা দরকার।